দিশি-বিলিতি পুলিশের বৃত্তান্ত
পুলিশ বৃত্তান্ত সহজে শেষ হওয়ার নয়। ভেবেছিলাম যা লিখেছি তাই যথেষ্ট। কিন্তু হঠাৎ পরশুদিন সন্ধেবেলা শ্যামবাজারে পাঁচ মাথার মোড়ে হঠাৎ একটা ম্যাটাডোর ট্রাকের পেছনে লেখা দেখলাম—
‘আমি সমুদ্র তুমি ঢেউ
আমি কুত্তা তুমি ঘেউ
আমি পুলিশ তুমি ফেউ।’
এখানে ফেউ অর্থে স্পাই বা পুলিশের গুপ্তচর। নকশাল আমলে বিপ্লবীরা যাদের ‘খোচড়’ বলতেন। ‘খোচড়’ সন্দেহে বহু পরিচিত, অপরিচিত নিরীহ ব্যক্তিকে বীরপুরুষেরা হত্যা করেছিলেন। তার দায়ভার বহু পরিবারকে এখনও বহন করতে হচ্ছে।
এই হালকা রচনায় সেই মর্মান্তিক দিনগুলিকে ডেকে আনা উচিত হবে না। শুধু আমার একটা কথা মনে আছে যে প্রথমে নির্বিচার সন্ত্রাস, পুলিশ দেখলেই মারো, জোতদার দেখলেই মারো— এ রকম ছিল না। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে যেতে আমাকে সুনীল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দেখিয়েছিল রেললাইনের পাশের দেয়ালে আলকাতরার অক্ষরে বড় বড় করে লেখা—
‘পুলিশ তুমি যতই মারো
মাইনে তোমার একশো বারো।’
এই স্লোগানে নিশ্চয় পুলিশের প্রতি কিঞ্চিৎ সমবেদনাও ছিল।
যাইহোক, আর মারামারি নয়। এবার হাসাহাসি।
অবশ্য পুলিশ নিয়ে হাসাহাসিও কম বিপজ্জনক নয়। সম্প্রতি শোনা তিনটি গল্প বলছি।
প্রথম গল্পটি খুবই বিশ্বাসযোগ্য।
এক গুণ্ডাকে ধরতে গিয়ে পর্যুদস্ত হয়ে ফিরে এসেছে সেপাই। দারোগার প্রায় সামনেই ঘটনাটা ঘটেছে। সেপাইটি হাঁফাতে হাঁফাতে ফিরে আসায় দারোগা ধমকাতে লাগলেন, ‘তুমি কী? এতদিন পুলিশে চাকরি করছ, ওই লোকটাকে ধরতে পারলে না।’ সেপাই বলল, ‘না স্যার। পালিয়ে গেল। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারবে না।’ দারোগা বললেন, ‘কেন?’ সেপাইটি বলল, ‘আমি ওর হাতের ছাপ রেখে দিয়েছি।’ দারোগা অবাক হয়ে বললেন, ‘হাতের ছাপ কখন রাখলে?’ ‘এই দেখুন স্যার, এই দেখুন আমার গালে। যা একটা থাপ্পড় কষিয়েছে।’ সেপাই তার বাঁ গালটা দারোগাকে দেখাল।
এর পরের গল্পটি বিলিতি। বিলেতের এক শহরে কুকুরের খুব উৎপাত। পুরসভা নির্দেশ জারি করেছে, সব কুকুরের লাইসেন্স লাগবে। পুলিশকে অনুরোধ করেছে লাইসেন্সহীন কুকুরের মালিকদের ধরতে।
একদিন সন্ধেবেলা এক ব্যক্তি তার কুকুরটিকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। কুকুরটি তার পিছু পিছু যাচ্ছে। পুলিশ কিছুক্ষণ তাকে অনুসরণ করল। তারপর যখন বুঝল কুকুরটি সত্যি লোকটির সঙ্গে সঙ্গে থাকছে, পিছু পিছু যাচ্ছে তখন পুলিশ বলল, ‘এটা কি তোমার পোষা কুকুর?’
লোকটি বলল, ‘না। এটা যে আমার পোষা কুকুর, তা তুমি বুঝছ কী করে?’ পুলিশ বলল, ‘ও তো তোমার পিছু পিছু আসছে।’ তখন লোকটি বলল, ‘তুমিও তো আমার পিছু পিছ আসছ। তুমি কি আমার পোষা পুলিশ?’
এর পরে একটি ঘরোয়া গল্প।
দারোগাবাবুর পকেট থেকে স্ত্রী পঞ্চাশ টাকা চুরি করেছে। ব্যাপারটা ধরে ফেলে দারোগাবাবু স্ত্রীকে বললেন, ‘আমি পুলিশের লোক, তোমাকে ছাড়ব না, তোমাকে হাজতে দেব।’
স্ত্রী ঘুষখোর দারোগা স্বামীর হাতে একটা দশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘তোমার ভাগ দিয়ে দিলাম, আর কথা বাড়িও না।’