দিনাবসান

বাঁশি যখন থামবে ঘরে,
                 নিববে দীপের শিখা,
           এই জনমের লীলার ‘পরে
                 পড়বে যবনিকা,
           সেদিন যেন কবির তরে
           ভিড় না জমে সভার ঘরে,
           হয় না যেন উচ্চস্বরে
                 শোকের সমারোহ।
           সভাপতি থাকুন বাসায়,
           কাটান বেলা তাসে পাশায়,
           নাই-বা হল নানা ভাষায়
                 আহা উহু ওহো।
           নাই ঘনাল দল-বেদলের
                 কোলাহলের মোহ।
           আমি জানি মনে-মনে
                 সেঁউতি যূথী জবা
           আনবে ডেকে ক্ষণে ক্ষণে
                 কবির স্মৃতিসভা।
           বর্ষা-শরৎ-বসন্তেরি
           প্রাঙ্গণেতে আমায় ঘেরি
           যেথায় বীণা যেথায় ভেরি
                 বেজেছে উৎসবে,
           সেথায় আমার আসন-‘পরে
           স্নিগ্ধশ্যামল সমাদরে
           আলিপনায় স্তরে স্তরে
                 আঁকন আঁকা হবে।
           আমার মৌন করবে পূর্ণ
                 পাখির কলরবে।
           জানি আমি এই বারতা
                 রইবে অরণ্যেতে —
           ওদের সুরে কবির কথা
                 দিয়েছিলেম গেঁথে।
           ফাগুনহাওয়ায় শ্রাবণধারে
           এই বারতাই বারে বারে
           দিক্‌বালাদের দ্বারে দ্বারে
                 উঠবে হঠাৎ বাজি।
           কভু করুণ সন্ধ্যামেঘে,
           কভু অরুণ-আলোক লেগে,
           এই বারতা উঠবে জেগে
                 রঙিন বেশে সাজি।
           স্মরণসভার আসন আমার
                 সোনায় দেবে মাজি।
           আমার স্মৃতি থাক্‌-না গাঁথা
                 আমার গীতি-মাঝে
           যেখানে ওই ঝাউয়ের পাতা
                 মর্মরিয়া বাজে।
           যেখানে ওই শিউলিতলে
           ক্ষণহাসির শিশির জ্বলে,
           ছায়া যেথায় ঘুমে ঢলে
                 কিরণকলামালী;
           যেথায় আমার কাজের বেলা
           কাজের বেশে করে খেলা,
           যেথায় কাজের অবহেলা
                 নিভৃতে দীপ জ্বালি
           নানা রঙের স্বপন দিয়ে
                 ভরে রূপের ডালি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *