দামাস্কাসের উগ্র সূর্য
গ্রীষ্মের মাসগুলোয় দুপুরের সূর্য বড়ই নির্দয়ভাবে কিরণ ঢালতে থাকে আমাদের শহরের নতুন না আর পুরোনো বাড়ির শীর্ষে, মসজিদের সাদা চুড়োয় আর মৌচাকের মতো গম্বুজগুলোয়। জীবনের চাঞ্চল্য একেবারেই উবে যায় শহরের বুক থেকে, খাঁ-খাঁ করে পথঘাট। দামাস্কাসের পুরোনো অঞ্চলের ছাদ-ঢাকা সঙ্কীর্ণ রাস্তায় অলসভাবে গাধাগুলোকে টানতে টানতে নিয়ে যায় শুধু কয়েকজন ফেজ টুপি-পা বেদুইন। এমনকী সাদা গমগমে হট্টগোলে ভরা বাজারগুলো, যেখানে টাকাকড়ির ভাবনা-চিন্তা ছাড়া আর কিছুই স্থান পায় না, সেই বাজারগুলোও ঝিমিয়ে পড়ে। সারাদিন ধরে আগুন বর্ষণে ক্লান্ত তপনদেব যতক্ষণ না পশ্চিমে হেলে পড়ে, ততক্ষণে তলিয়ে থাকে সুপ্তির নিতলে।
কিন্তু এই ঝিমুনির অবসরেই তৎপর হয়ে ওঠার সুযোগ পায় দু-ধরনের অপরাধী : যে প্রকৃতির মানুষ শহরের কর্মবিরতি আর বিশ্রামক্ষণের সুযোগ নিয়ে খুন-জখম রাহাজানি আর হরেক রকম অপকর্মে মেতে ওঠে, তারা, এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে একটি অমানুষ তস্কর–আগুন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দামাস্কাস শহরের বুকে নির্বিবাদে লুঠতরাজ চালিয়েছে এই অমানুষ অপরাধীটি এবং দু-দুবার জমির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল এত বড় শহরটাকে।
কোনও রকম তঞ্চকতা না করে সবিনয়ে জানাচ্ছি, প্রথম অপরাধীর জন্যে যতখানি হুঁশিয়ার দামাস্কাসের পুলিশ বাহিনী, ঠিক ততখানিই দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রেও।
জুলাইয়ের সেই দিনটিতে প্রথম যে খবরটি এসে পৌঁছাল পুলিশ হেড কোয়ার্টারে তা হল একটি আগুন লাগার খবর। শৌখিন শহরতলী সৌকসারুজার একটা বাড়িতে অগ্নিদেবের তাণ্ডব নৃত্য দেখা গেছে। চিরাচরিতভাবে নিজেদের মধ্যেই বলাবলি করতে লাগলাম আগুনের উৎস সম্বন্ধে। আগুন লাগতে পারে দামাস্কাসের আগুন অভিশাপের জন্যে অথবা নেহাতই অসাবধান হওয়ার ফলে। কিন্তু ক্রিমিনাল ইনভেসটিগেশন ডিভিশনের চিফ হিসাবে ফোনের জবাব দিতে গিয়েই শুনলাম একটা উত্তেজিত কণ্ঠস্বর। সৌরুজা থেকে একজন পুলিশম্যান বলছে–চিফ, এ শুধু আগুন নয়, আরো কিছু। ফটকের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি উঠোনের উপর পড়ে রয়েছে একটা মেয়ের দেহ। ধোঁয়ার জন্যে আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।
প্রথম রিপোর্ট পাওয়ার পর যে ঠিকানাটা টুকে রেখেছিলাম, তার ওপর এবার চোখ পড়তেই চিনতে পারলাম বাড়িটাকে। সেকেলে আমলের যে ধরনের জমজমাট আরব্য ভবনগুলো দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে দামাস্কাসের বুক থেকে, এ প্রাসাদটি তাদেরই অন্যতম। উঁচু-উঁচু পাঁচিলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কতবার জালিকাটা ফটকের মধ্যে দিয়ে দেখেছি ভেতরকার শান্ত সুন্দর শুচিময় উঠোনটিকে। প্রাসাদটাকে বেষ্টন করে থাকত প্রাঙ্গণটা। বহু শতাব্দী আগে সোনা আর রেশম দিয়ে বোনা মূল্যবান বস্ত্রের জন্য যখন দিকে দিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল আমাদের এই শহরটির তখন এক ধনবান ব্রোকেড ব্যবসায়ী প্রাসাদটা তৈরি করেছিলেন। কি লজ্জার কথা! এতদিন পর গৌরবময় অতীতের এত চমৎকার নিদর্শনটাকেই কিনা গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে সর্বভুক আগুনের দেবতা। কিন্তু এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে যে মৃত্যুও জড়িয়ে পড়েছে, তা মনে পড়তেই রোমান্টিক রোমন্থনকে নির্বাসন দিলাম মন থেকে।
অকুস্থলে পৌঁছেও করবার বিশেষ কিছু ছিল না। কেন না, তখনও আগুনকে বাগে আনতেই ব্যস্ত দমকলবাহিনী। ফটকের বাইরে দেখি কাতারে কাতারে লোক দাঁড়িয়ে গেছে। কয়েকজন বললে বটে কে যেন আর্তস্বরে চেঁচিয়ে উঠে সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু পুঞ্জ পুঞ্জ ধোঁয়ার মেঘ ভেদ করে কিছুই করা সম্ভব হয়নি ওদের পক্ষে।
যে মুহূর্তে সম্ভব হল প্রাঙ্গণে পা দেওয়ার, আর একটা মুহূর্তও বাজে সময় নষ্ট করলাম না। ভেতরে গিয়ে দেখলাম পরমাসুন্দরী এক অষ্টাদশী তন্বী মেয়ের দেহ। যদিও বিস্তর ঝুল আর ভুষোয় মলিন হয়ে গিয়েছিল তার মুখশ্রী, যদিও পলকহীন বিস্ফারিত কালো চোখের মণি দুটো স্থির হয়েছিল নীল আকাশের পানে–তবুও এক নজরে বোঝা গেল বাস্তবিকই এরকম আলোকসুন্দর কান্তি বড় একটা দেখা যায় না। পরনে দামাস্কাসের পোশাক। টুকটুকে লাল রঙের রেশম। নরম। নমনীয়। মণিবদ্ধ আর গলায় সযত্ন খচিত বাহারি জড়োয়া অলংকার। কিন্তু তার ফ্যাকাশে নিরক্ত গলায় যে জিনিসটি নেকলেসের মতো অত সুন্দর ছিল না, তা হচ্ছে একটা দগদগে কুৎসিত ক্ষতচিহ্ন। এবং এই ক্ষতই নিভিয়ে দিয়েছে মেয়েটির জীবনের প্রদীপ।
নিষ্প্রাণ দেহটার পাশে নতজানু হয়ে বসে পড়েছিলাম। অবাক হয়ে গেছিলাম আমার অনুভূতিপ্রবণতা দেখে। বছরের পর বছর খুন-জখম হিংসা-জিঘাংসা নিয়ে নাড়াচাড়া করে এসেও এখনও আমার কোমল অনুভূতির ধারগুলো দেখলাম ভোতা হয়ে যায়নি। আচম্বিতে একটা চিৎকার শুনলাম। শব্দটা এল রান্নাঘর থেকে। তখনও গ-গ করে ধোঁয়া বেরুচ্ছিল ঘরটা থেকে। চটপট এগিয়ে দেখি আরও একটা মহিলার লাশের পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে দমকলবাহিনীর দুজন লোক। যদিও আগুনের নিষ্ঠুর জিহ্বাস্পর্শে হতভাগিনীর দেহের খানিকটা অংশ পুড়ে গিয়েছিল, তবুও উঠোনের মরা মেয়েটির চাইতে এই মহিলার বয়স যে অনেক বেশি তা বুঝতে মোটেই বেগ পেতে হল না আমাকে। আরও বুঝলাম, জীবিতকালে অল্পবয়েসি মেয়েটির চাইতেও অনেক বেশি চটকদার ছিল মহিলাটির তনুশ্রী। সযত্নে প্রসাধন করা কঁচা-পাকা চুলের মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছিল একটা বিশ্রী আঘাত-চিহ্ন। এবং সে আঘাত হানা হয়েছে যে অত্যন্ত গুরুভার একটা হাতিয়ার দিয়ে, তা অতি সহজেই বুঝতে পারলাম আমি।
একলা আগুনকেই অভিশাপ দিচ্ছিলাম সবাই মিলে। এবার দু-একটা নৃশংস খুনের তদন্তের গুরুদায়িত্ব এসে পড়ল কাঁধে।
বাইরের জনতাকে এতক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করছিল আমাদের গোয়েন্দারা। তাইতেই জানা গেল জমকালো এই ভবনটার বর্তমান বাসিন্দা ছিল পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ডাকাতি ডিভিশনের চিফ ক্লার্ক, তার বউ আর মেয়ে। পুলিশের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র বেরিয়ে পড়তেই সম্ভবপর একটা মোটিভের অঙ্কুর দেখা গেল আমার মধ্যে। প্রতিহিংসার জন্যেই কি তবে এই হনন-পন্থা? প্রতিহিংসা পাগল কোনও বিকৃত মগজই কি তাহলে পুলিশ বাহিনীরই একজনের দেনা-পাওয়া মিটিয়ে দিয়ে গেল এই ভাবে?
হেড কোয়ার্টারে একটা ফোন করতেই তৎক্ষণাৎ অকুস্থলে হাজির হলেন পুলিশ কমিশনার, করোনার, বিচার সম্পর্কীয় সাক্ষ্য প্রমাণদির অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং নরহত্যা স্কোয়াডের হোমরাচোমরারা। সবাই মিলে একসঙ্গে শুরু করলাম তাল তাল বাষ্পে ভরা প্রাসাদের ভেতরে চুলচেরা অনুসন্ধান পর্ব।
দেখে শুনে বেশ বোঝা গেল খুনের সব চিহ্ন মুছে দেওয়ার জন্যেই আগুনের সাহায্য নিয়েছিল খুনি। নিখুঁত হয়েছিল তার পরিকল্পনা। আগুনের শিখা যেটুকু নষ্ট করতে পারেনি ফায়ার ব্রিগেডের কেমিক্যালস আর জলেই তার দফারফা হয়ে গেছে।
মিনিট পনেরো ধরে জলে-ভেজা রাবিশ খোঁজার পর শেষকালে রান্নাঘরে একটা সূত্র পাওয়া গেল। মাংস থেঁতো করে কুব্বি বানানোর জন্যে আমরা আরবীয়রা, যে ধরনের কাঠের হাতুড়ি ব্যবহার করি, সেই রকম একটা হাতুড়ি পেলাম আমরা। হাতুড়িটার ওজন পাউন্ড সাতেকের কম তো নয়ই। মেঝের ওপর যে জায়গায় তা পড়েছিল, তা দেখেই মনে হল বর্ষীয়সী মহিলার মাথায় ওই মারাত্মক আঘাত হানার পরেই হাতুড়িটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল খুনিটা। আধপোড়া হাতুড়িটা হাতে নিয়ে মনটা কীরকম যেন হয়ে গেল। ভাবলাম আর কি আমি সুস্বাদু কুব্বি দিয়ে তারিয়ে তারিয়ে ভাত খেতে পারব? আমার রন্ধন পটিয়সী বউয়ের এটা আবার স্পেশাল খানা। মনের পর্দায় চকিতে ভেসে গেল কটি কথা–যে জিনিস দিয়ে এমন মুখরোচক খানা বানানো যায়, তা দিয়ে প্রয়োজন হলে নরহত্যাও করা যায় একইরকম পরিপাটিভাবে।
অনুসন্ধানে ঢিলে পড়ল না এতটুকুও। হাতুড়িটা যেখানে পাওয়া গেছিল, তার কাছেই পড়ে থাকতে দেখলাম একটা কাঁচের টুকরো। করাতের মতো এবড়ো-খেবড়ো হলেও রীতিমতো ধারাল কাঁচটা। আয়না ভেঙে যাওয়ায় টুকরোটা পড়েছিল মেঝের ওপর। আগুনের তাপেও ভেঙে পড়তে পারে আয়নাটা। অথবা, উঠোনে পড়ে থাকা তরুণী মেয়েটির জীবনের সরু সুতো কাটবার জন্যেও এই অভিনব ছুরিটাকে বানিয়ে নিয়েছিল হত্যাকারী।
খোঁড়াখুঁড়িতে বাধা পড়ল। করোনার তর রিপোর্ট দিলেন আমাকে। মাথায় চোট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছিল বর্ষীয়সী মহিলাটি। কিন্তু তার দেহটা যেভাবে পড়ে আছে, তা দেখে মনে হয় তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রান্নাঘরের ভেতরে। তরুণী মেয়েটার গলা কাটবার আগে যে তাকে গলা টিপে মারা হয়েছিল, তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। আর তার পরেই হতভাগিনীর লাশটাকে ফেলে দেওয়া হয় প্রাঙ্গণে।
দুই নারীর অঙ্গেই ছিল উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মহার্ঘ অলংকারাদি। তাই লুঠতরাজ করার মোটিভ নিয়ে যে খুন করা হয়নি, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হলাম আমরা। পোশাক এবং দেহে ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্ন ছিল না। তাই, যৌনবাসনার পরিতৃপ্তির জন্যে যে এই জঘন্য খুনখারাপি–এমন সম্ভাবনাকেও বাতিল করতে হল।
তদন্ত পর্ব এই পর্যন্ত আসার পরই ভদ্রমহিলার স্বামীর অনুপস্থিতিটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলাম আমি। সে ভদ্রলোক কোথায়? এতক্ষণেও বউ আর মেয়ের এই শোচনীয় পরিণতি তার কানে পৌঁছয়নি, এমন কি হতে পারে? আমার তো তা বিশ্বাস হল না। খবর পাওয়া মাত্রই তো দুরন্ত আরব ঘোড়ার পিঠে চড়ে এতক্ষণে তার পৌঁছে যাওয়ার কথা অকুস্থলে। ব্যাপার তো সুবিধের মনে হচ্ছে না।
ঘড়ি দেখছি, এমন সময়ে একজন ডিটেকটিভ জানালে নিপাত্তা স্বামী মহাপ্রভু নাকি অফিসেই কাজ করছিলেন। দুঃসংবাদটা শোনামাত্র অজ্ঞান হয়ে গেছেন ভদ্রলোক। খবরটা শুনে তার এতক্ষণ পর্যন্ত অদৃশ্য থাকার একটা যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পেলেও স্থির করলাম, ভদ্রলোক এখানে এসে পৌঁছোনোর পর থেকেই এ দৃশ্যের প্রতিক্রিয়া তাঁর ওপর কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তা সজাগ চোখে লক্ষ্য রাখতে হবে।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফটকের সামনে জমায়েত লোকের ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল একটা ট্যাক্সি। ভেতর থেকে রক্তহীন ফ্যাকাশে মুখে নামলেন এক ভদ্রলোক। তখনও ঠকঠক করে কঁপছিলেন আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন তিনি।
নামার সঙ্গে সঙ্গে হিস্টিরিয়া রুগির মতো প্রথমেই আর্ত সুরে চেঁচিয়ে উঠলেন উনি–আমার খুকি সে কোথায়?
কোন খুকি? শুধোই আমি। খুকি বলতে যদি তরুণী মেয়েটাকে বোঝান তো দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে–
না। না। মারিহা মারা গেছে, আমি জানি। কিন্তু ইয়ামিন, আমার বাচ্চা মেয়েটা, সে কোথায়?
এবার স্তম্ভিত হওয়ার পালা আমার। খুনের সংখ্যা কি তাহলে সবশুদ্ধ তিন? এমনও হতে পারে, চোখের সামনে মা আর দিদিকে খুন হতে দেখেছে বাচ্চা মেয়েটি। তারপর গায়েব করা হয়েছে তাকে। সম্ভবত এ খুনের একমাত্র মোটিভ কিডন্যাপ করাই। সে যাই হোক, নৃশংস খুনের সমাধানের আগে আমাদের জানার দরকার নিপাত্তা বাচ্চাটির পরিণতি এবং এই চিন্তাই প্রবল হয়ে উঠল আমাদের মগজে।
শোকবিহ্বল ভদ্রলোককে নার্ভ নিরুত্তেজ করার দাওয়াই খাইয়ে দিলাম এক ডোজ। অল্পক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাটির চেহারার নিখুঁত বিবরণ পাওয়া গেল তার কাছ থেকে। বয়স তার সাড়ে তিন বছর। লম্বা লম্বা কালো চুল আঁটো করে বাঁধা। ধূসর চোখ। আধো-আধো স্বরে কথা বলার দরুন সব কথা বোঝা মুশকিল। পরনে কী ধরনের পোশাক ছিল, তা বলা সম্ভব হল না তার পক্ষে।
রাস্তার ভিড়ের মধ্যে হাঁটা শুরু করলাম আমি। ওদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো কিছু কিছু বলার আছে। দেওয়ার মতো উপদেশও আছে বিস্তর। কিন্তু সবকিছু শোনার পর মূল্যবান কিছু পাওয়া গেল বলে মনে হল না আমার। বাড়ির মধ্যে কাউকে ঢুকতে বা বেরুতে কেউই দেখেনি। আগেই শুনেছিলাম, একটা আর্ত চিৎকার এদের কানে ভেসে এসেছিল। এই চিৎকার ছাড়া আর কোনওরকম সন্দেহজনক শব্দ কেউই শুনতে পায়নি। শহরতলীর এই অংশটাই যারা বাস করে, আইনের প্রতি অনুরাগ তাদের প্রত্যেকেরই আছে এবং সেই মার্জিত রুচি শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদের একজনের মনেও খটকা লাগতে পারে এরকম সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়েনি।
সবই বুঝলাম। কিন্তু এসব সত্ত্বেও দু-দুটো খুন হয়ে গেছে আজই। খুনের সংখ্যা দুই কেন, তিন হওয়াটাও অসম্ভব কিছু না। ভাবলাম দীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠে মানব সভ্যতা। ভাবলাম কবে সেইদিন আসবে যেদিন তা হনন আর জিঘাংসার বহু ঊর্ধ্বে উঠে যেতে পারবে? ঋষিতুল্য ঐতিহাসিকরা গৌরবতিলক পরিয়েছেন দামাস্কাসের সুমহান ঐতিহ্যললাটে এই তথ্য জানিয়ে যে দামাস্কাসই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শহর যেখানে সর্বপ্রথম গড়ে উঠেছিল মানুষের জনপদ। গৌরবময় এই দামাস্কাস শহরে অন্তত এই ধরনের পৈশাচিক খুনজখম যেন আর না হয়। আমাদেরও জ্ঞানের সীমা আরও ছড়িয়ে পড়া দরকার। রক্তক্ষরণ না করে, বর্বর প্রবৃত্তিকে সমূলে বিনষ্ট করে কীভাবে বাঁচার মতো বাঁচতে হয় তা আমাদের এখনও জানা দরকার। আমরা এখনও তা শিখিনি এবং চারপাশের কাণ্ডকারখানা থেকেই তা বোঝা যায় হাড়ে হাড়ে।
ভাবালুতা আর রোমন্থনের ফলে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিলাম আমি। এবং অসহিষ্ণুতা এমনই একটা মনের গঠন যাকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনও পুলিশম্যানেরই উচিত নয়। যেভাবেই হোক, বাচ্চাটাকে খুঁজে বের করতেই হবে। রহস্যের চাবিকাঠি সম্ভবত সে-ই। সারা দেশ জুড়ে তল্লাসি চালিয়ে কচি মেয়েটার হদিশ বার করার নির্দেশনামা বেরিয়ে গেল চারিদিকে। সজাগ হয়ে গেল প্রতিটি পুলিশ স্টেশন, রোড পেট্রল, ট্রাফিক অফিসার আর রেডিও স্টেশন। আর, হেড কোয়ার্টারে গোল হয়ে বসে নতুন খবরের প্রতীক্ষায় রইলাম আমরা।
অসহ্য শ্বাসরোধী সাসপেন্সে ভরা দু-দুটো ঘণ্টা কেটে গেল। কিন্তু একটা সূত্রও এসে পৌঁছোল আমাদের হাতে। প্রতিটি সেকেন্ড অতীত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিল তিল করে বৃদ্ধি পাচ্ছে হত্যাকারীর সুযোগ আর সুবিধে-বৃদ্ধি পাচ্ছে বাচ্চাটির বিপদাশঙ্কা, অবশ্য তখনও যদি জীবিত থাকে সে।
যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছি, ভাবছি, কোনও সূত্র আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে কিনা, ঠিক এমনি সময়ে রেডিও-রুম থেকে খবর পাওয়া গেল আমাদের বর্ণনামাফিক একটা খুকিকে দামাস্কাকের প্রাচীন অঞ্চলের শহরতলীতে একলা ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। মক্কা রোডে পাওয়া গেছে তাকে।
তল্লাশি পর্ব শেষ হয়ে গেল, এমন কথা বিশ্বাস করতে মন চাইল না আমার। কিন্তু বাচ্চাটাকে নিয়ে আসার পর দেখা গেল বাস্তবিকই হারিয়ে যাওয়া খুকির চেহারার বর্ণনার সঙ্গে হুবহু মিলে যায় তার চেহারা। বাঁ বাহুর ওপর বাঁধা ছোট্ট পাতলা সোনার তাবিজটার ওপর আরবীয় ভাষায় তার নামও খোদাই করা ছিল। কিন্তু সাক্ষী হিসেবে খুদে ইয়ামিনকে কোনও কাজেই লাগানো গেল না। শ্রান্তি, ভয়, অশ্রু আর আধো আধো স্বরে কথা বলা–এই সবকিছুর ব্যুহ ভেদ করে সে যে কোথায় ছিল এবং কার সঙ্গে ছিল, তা জানা একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল আমাদের পক্ষে। ওর বিড়বিড় বকুনির মধ্যে বারবার এই একই শব্দ আউড়ে চলেছিল সে। শব্দটার অর্থ আমার মামা।
হুকুম চলে গেল এই মামা লোকটিকে খুঁজে পেতে আনার জন্যে। তাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
যে খবরের কাগজে অফিসে মামা কাজ করত, সেখান থেকে রিপোর্ট পাওয়া গেল, খুনের দিন সকালে অফিসেই কাজ করেছে সে। তারপর সে বাইরে যেতে চায় এবং অনুমতি পাওয়ার পর অফিস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে সে। অফিস ত্যাগ করার পর তার গতিবিধি সম্পর্কে কোনও খবরই আর পেলাম না আমরা।
অপরাধ-বিশেষজ্ঞ মহলে একটা খুব চালু কথা আছে ও খুনি সব সময়েই ফিরে আসে খুনের দৃশ্যে। বহু পুরোনো এবং প্রায় সকলেরই জানা উক্তিটির মধ্যে কিছু মনোবৈজ্ঞানিক সত্য আছে। অপরাধ-ইতিহাসের পাতায় পাতায় ঠাসা আছে এরকম বিস্তর কেস যা পড়লেই দেখা যাবে কৌতূহল চরিতার্থ করার জন্যে ফেলে যাওয়া প্রমাণাদি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যে, বিকৃত বাসনার পরিতৃপ্তির জন্যে, এমনকী অকুস্থলে এসে সুতীব্র অনুতাপের মধ্যে মনে শান্তিলাভের জন্যেও খুনের দৃশ্যে বারবার ফিরে আসে খুনিরা।
আর তাই, চারজন ডিটেকটিভ নিয়ে একটা দল তৈরি করলাম। ধোঁয়ায় মলিন প্রাসাদের আশপাশেই মোতায়েন হল এরা। বেশি সময় অপেক্ষা করতে হল না। অচিরেই ওদের একজন খবর দিলে প্রাসাদটার আশেপাশেই সন্দেহজনকভাবে ঘুরঘুর করছে অদ্ভুত প্রকৃতির একটা লোক।
এইভাবে রিপোর্ট পেশ করছিল অফিসারটি–শোকাবহ এই ঘটনা সম্বন্ধে লোকে কি বলাবলি করছে–তা শোনার নিবিড় আগ্রহ দেখা গেছে এই লোকটার হাবেভাবে। বিভিন্ন লোকের কাছে গিয়ে সে জিগ্যেস করে ঘটনা সম্বন্ধে তাদের মতামত কী। কিন্তু শুধু শুনেই যায় নিজের অভিমত একদম প্রকাশ করে না।
আমরা তিনজন খুকিকে নিয়ে রওনা হলাম প্রাসাদ অভিমুখে। গাড়ির দরজা খুলতে না খুলতেই–বাচ্চাটা লাফিয়ে নেমে পড়ল ফুটপাতের ওপর এবং পরক্ষণেই তিরবেগে দৌড়ে গিয়ে মামা, বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল যার প্রসারিত বাহুযুগলের মধ্যে, সেই লোকটিকে নিয়েই পুঞ্জিভূত হয়ে উঠেছিল আমাদের সন্দেহের রাশি। সনাক্তকরণ যা হল, তা চমৎকার। আর কিছু দরকার নেই। লোকটাকে গ্রেপ্তার করে হেড কোয়ার্টারে নিলে এলাম সওয়াল জবাবের জন্যে।
সন্দেহভাজন ব্যক্তিটির নাম আবদুল ওহাব সাক্কা আমিনি। বয়স তিরিশের এদিকে। খুকির মায়ের ভাই সে অর্থাৎ চিফ ক্লার্কের সম্বন্ধী। সওয়াল জবাবের সময়ে তার কথাবার্তায় সুগভীর আত্মপ্রত্যয় লক্ষ্য করলাম। আগাগোড়া একই কথা বল বারবার বলে গেল সে। তার বোন নাকি তাকে টেলিফোন করেছিল। দারুণ গরম পড়েছিল, তাই সে তাকে জিগ্যেস করে ছোট্ট ইয়ামিনকে বরদা নদীর ধারে বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যাবে কিনা। বাচ্চাটাকে দারুণ ভালোবাসে তার মামা, নিজের মেয়ের মতোই, তাই এ প্রস্তাব শুনে বিলক্ষণ উল্লসিত হয়েছিল মাতুল মহাপ্রভু। খুকিকে নেওয়ার জন্যে বাড়িতে এলে অস্বাভাবিক কিছুই নাকি চোখে পড়েনি তার। কোনও আগন্তুককে ও দেখেনি। প্রাঙ্গণে বসে তার বোন সেলাই করছিল। তার শান্ত সুন্দর প্রকৃতিতে কোনওরকম বৈলক্ষণ্যও লক্ষ্য করেনি সে।
এ কাহিনি যে সত্য, তা বলবৎ করতে পারে, সুনিশ্চিত করতে পারে, এমন কোনও লোককে হাজির করতে পারবে কি সে?
একটু ভেবে ও বললে–হ্যাঁ, পারবো। আমাদেরই কাগজের একজন রিপোর্টারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। নাম তার হামিন। একসঙ্গে বরফ-কুচো দেওয়া শরবও খেয়েছিলাম আমরা।
রিপোর্টারকে ফোন করার পরেই প্রথম শক্ পেল আমিনি। বরফকুচো দেওয়া শরবৎ খাওয়া তো দুরের কথা, গত কদিনের মধ্যে সহকর্মীর টিকিও নাকি দেখেনি সে-সাফ জবাব দিয়ে দিলে রিপোর্টার ভদ্রলোক। একটু ভেবে নিয়ে আমিনি চটপট বুঝিয়ে দিলে তার অস্বীকার করার মূল কারণটা–একটা গণিকালয় চালায় হামিন। তাই পুলিশের কোনও ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চায় না ও।
বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে সমানে প্রশ্ন করে যেতে লাগলাম ওকে। উত্তর দেওয়ার সময়ে চোখ-মুখের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে লাগলাম তীক্ষ্ণ চোখে। আর, তখনই, আচমকা আমার চোখ পড়ল বাঁ-হাতের ওপর। টেবিলের কিনারাটা বাঁ-হাত দিয়ে চেপে ধরেছিল ও। বুড়ো আঙুলের নখের নীচে একটা লালচে দাগ দেখতে পেলাম আমি।
ভাবলাম, এ দাগ রক্তের না-ও হতে পারে। খুব সম্ভব কাজ করার সময় ছাপাখানার লাল কালি উঠে এসেছে ওর নখের ওপর। নখের ওপর খানিকটা ধুলোও লেগেছিল। মনের কন্দর থেকে উঠে এল হুঁশিয়ার থাকার হুকুমনামা। এই সূত্র বা অন্য কোনও সূত্রই উপেক্ষা করলে চলবে না।
ল্যাবরেটরিতে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধুলোর মধ্যে রক্ত পাওয়া গেল। খবরটা মামার কানে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একেবারেই ভেঙে পড়ল বেচারি আর তার পরেই কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুনতে পেলাম তার অপরাধ কাহিনি।
খবরের কাগজের অফিস থেকে যে মাইনে আমি পাই, তা দিয়ে আমার চলে না। আমার ভালো লাগে ভালো খাবার, প্রচুর মদ, সুন্দরী মেয়ে আর জুয়োর টেবিলের উত্তেজনা। আমার ফ্যামিলি যখন যথেষ্ট বিত্তবান, তখন এভাবে মাটিতে মুখ রগড়ে জীবনধারণ করা আমার পোষায় না। আমার সম্মানের হানি ঘটে তাতে।
আমার বোনের অন্তরে দয়ামায়া ছিল প্রচুর। প্রায় তার সঙ্গে দেখা করতাম আমি। আমার টাকার দরকার হলেই মুক্ত হস্তে সব সময়ে আমাকে দেদার টাকা দিত সে। গতরাতে ভাগ্যের চাকা ঘোরে আমার প্রতিকূলে, আজ সকালে পথের ভিখিরি হয়ে গেলাম আমি। তাই এসেছিলাম বোনের কাছে। ফটকের কাছে খেলা করছিল ইয়ামিন। উঠোনে সেলাইয়ের কল নিয়ে বসেছিল আমার বোন। মামুলি কুশল বিনিময় করার পর আমি সরাসরি এসে পড়লাম আমার কথায়। আমার অর্থের দরকার এবং তা এখুনি দিতে হবে। ও বললে–আজকে তো বাড়িতে টাকাকড়ি নেই, ভাইয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি চাপ দিতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটল ওর। বলল–ঘ্যানঘ্যান কোরো না। বললাম তো হাতে টাকা নেই।
তখনই একটা শয়তানি মতলব উঁকি মারল আমার মগজে। একতলায় রাখা কাবার্ডে যে জড়োয়া গহনা আছে, সেগুলো পকেটস্থ করলে কেমন হয়? বললাম–বহিন, তোমার জড়োয়া গয়নাগুলো আমাকে দিয়ে দাও, বলেই–বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম আমি।
মুহূর্তের মধ্যে বুঝলাম, বড় বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। চিৎকার করে উঠল আমার বোন– নেমকহারাম কুকুর কোথাকার। তোমার ওই নোংরা আমোদের জন্যে আমার মায়ের গয়নাগুলোকে এবার ভাগে লাগাতে চাও। অনেক বছর তোমাকে আড়াল করে রেখেছিলাম আমি। কিন্তু আর না। আজ রাতেই আমার স্বামীকে বলব তোমার এই জঘন্য আচরণের কথা। এখন দূর হও এখান। থেকে–আর কোনও দিন এমুখো হোয়ো না।
ওর ক্রোধ আমার রক্তে আগুন লাগিয়ে দিলে। প্রচণ্ড রাগে যেন উন্মাদ হয়ে গেলাম আমি। ক্ষিপ্তের মতো ধেয়ে গিয়ে রান্নাঘরের মধ্যে সবার আগে চোখ পড়ল একটা জিনিস–একটা কুব্বি হাতুড়ি। এক ঝটকায় হাতে তুলে নিলাম হাতুড়িটা। দরজার সামনেই মুখোমুখি হয়ে গেলাম ওর সঙ্গে এবং সজোরে হাতুড়ির একটা মোক্ষম ঘা মারলাম ওর মাথায়। ও লুটিয়ে পড়তেই লাশটা টানতে টানতে নিয়ে এলাম রান্নাঘরের ভিতরে।
আমার বড় ভাগ্নি মারিহা চিৎকার শুনেই বারান্দায় দৌড়ে এসেছিল। এসেই দেখেছিল মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে তার মা। আর্তস্বরে চিৎকার করে উঠল ও সাহায্যের জন্যে। ওকেও এবার থামানো দরকার। দৌড়ে ওর ঘরে ঢুকে গলা টিপে মারবার চেষ্টা করলাম আমি। কিন্তু দেখলাম, কাজটা খুব সহজ নয়। শেষ পর্যন্ত দমবন্ধ করে ওকে মারতে পেরেছিলাম কিনা, সে সম্বন্ধেও নিশ্চিত নই। আমি। তখনি আয়নাটা ভেঙে ফেলে কাঁচের টুকরো তুলে নিয়ে ওর গলার শিরাটা কেটে দু-ফাঁক করে দিলাম।
রাগ পড়ে আসতেই মাথা সাফ হয়ে গেল। এবার আমার দুষ্কর্ম ঢেকেঢুকে প্রমাণাদি বিনষ্ট করে সটকান দেওয়ার বাসনাই প্রবল হয়ে উঠল মগজের মধ্যে। সারা বাড়িটার স্প্রে করে তেল ছড়িয়ে দিলাম। তারপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে লম্বা দিলাম। যাওয়ার আগে অবশ্য কাবার্ড থেকে জড়োয়া গয়নাগুলো আত্মসাৎ করতে ভুলিনি।
তিরবেগে বেরিয়ে আসার সময়ে প্রবেশপথের কাছে দেখলাম ইয়ামিন খেলা করছে আপন মনে। ওকে কোলে তুলে নিলাম। শক্ত করে চেপে ধরলাম বুকের ওপর–উদ্দেশ্য ছিল রক্তের দাগ ওকে দিয়ে ঢেকে রাখা। রাস্তায় গাড়িতে উঠতে উঠতে ওকে বললাম, আমরা বেড়াতে যাচ্ছি।
গাড়ির মধ্যে তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি আমাকে। কয়েকজন যাত্রী ইয়ামিনের সঙ্গে খেলা জুড়ে দিলে, হাসিঠাট্টাও বাদ গেল না। বাড়ি পৌঁছেই জামাকাপড় পালটে ফেললাম। তারপর রাস্তায় অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ইয়ামিনকে খেলতে দিয়ে ফিরে এলাম বোনের বাড়িতে ব্যাপার কতদূর গড়িয়েছে তা দেখতে। তারপর তো আপনারা জানেনই।
আর তাই, খুনি সবসময়ে ফিরে আসে খুনের দৃশ্যে–এই আপ্তবাক্য অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে জোড়া খুন আবিষ্কার হওয়ার বারো ঘন্টার মধ্যে সমাধান করে ফেললাম কেসটার। যে চাবিকাঠি দিয়ে রহস্য ভেদ করলাম তা কিন্তু পুরোপুরি মনোবৈজ্ঞানিক।
যেরকম চটপট কেসের সমাধান হয়ে গেল, ঠিক সেইরকম চটপট সাঙ্গ হল দণ্ডবিধান পর্ব। এক হপ্তা পরেই ভবিষ্যতের হবু খুনিদের চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্যে দামাস্কাসের প্রধান পার্কে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে লাগল আবদুল ওহাব সাকা আমিনির নিষ্প্রাণ দেহ। * ইব্রাহিম গাজী (দামাস্কাস, সিরিয়া) রচিত কাহিনি অবলম্বনে।