দাবিদার – ৩৫

পঁয়ত্রিশ

‘ওর শরীর থেকে অনেক রক্ত পড়েছে,’ আপত্তির সুরে বলল কেউ। পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে এল যেন তার কথা।

‘তাতে আমার কিছু আসে-যায় না,’ খেঁকিয়ে উঠল আরেকটা কণ্ঠ। ‘জাগাও ওকে।’

চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করল জন। চোখের উপর যেন কয়েক মন বোঝা। মেলতে পারছে না। আবছা বুঝতে পারছে, ওকে নিয়েই তর্ক হচ্ছে। তবে সেদিকে মনোযোগ দিল না জন। ভীষণ ব্যথা করছে কাঁধ, পুরো অসাড় হয়ে আছে শরীর।

‘আবারও বলছি,’ বলে উঠল প্রথম কণ্ঠটি। ‘ওদের দলের কেউ নয় ও। হামলা হওয়ার আগে কেউ গুলি করে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিল। না হলে এতক্ষণে আমরা সবাই মরে ভূত হয়ে যেতাম। আমার ধারণা, ও-ই করেছে গুলিটা। কারণ, একমাত্র ওর মুখেই মুখোশ ছিল না, আর গুলিও করেনি আমাদেরকে। উল্টো ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।’

ঘোঁত-ঘোঁত করে উঠল অপর কণ্ঠটি। ‘বিশ্বাস করি না। একে চিরতরে বিদায় না করলে রেঞ্জে কোনও দিনই শান্তি ফিরবে না।’ জনকে ধরে জোরে-জোরে, নিষ্ঠুরের মত ঝাঁকাতে শুরু করল সে।

কাঁধের ব্যথাটা মুহূর্তে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। ভয়াবহ ব্যথার ঢেউ জাগিয়ে তুলল ওকে। চিৎকার দিয়ে চোখ মেলে চাইল জন।

সকাল হয়ে গেছে। ধূসর সকাল।

ওর দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে বার্ট অ্যান্ড্রিউ। খ্যাক-খ্যাক করে হাসল সে। জনের পাশে উবু হয়ে বসেছে। খুশিতে চকচক করছে চোখ। ‘শেষ পর্যন্ত পরাজয় মেনে নিতেই হলো, তা-ই না? অনেক ভুগিয়েছ আমাদের; গরু চুরি করেছ, পুড়িয়ে দিয়েছ রানশ, হত্যা করেছ আমার লোককে, আর যখনই তোমাকে ধরার চেষ্টা করেছি, পিছলে — গেছ। অবশেষে ধরা খেতেই হলো, চান্দু।’ একটু বিরতি দিল, শার্টের পকেট থেকে বের করল সিগারেট বানানোর সরঞ্জাম। ‘তোমার দলের সবাই মরে পড়ে আছে এখানে। তোমারও এখানে জায়গা হবে।’

সিধে হলো সে। পিটারের সরু কাঁধ চাপড়ে দিল। ‘ওরা বলছে, তুমি নাকি বিলি বনির মতই দু’হাতে সমান অস্ত্র চালিয়েছ।’

এক মুহূর্তের জন্য তোষামোদটুকু উপভোগ করল পিটার। গর্বের ভাব ফুটল ওর চোখে। পরক্ষণে সিরিয়াস হয়ে উঠল চেহারা। বার্টের কাছ থেকে এক কদম সরে গেল। ‘যেমনটা ভেবেছিলাম, তা হয়নি। ওটা…ওটা একটা চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল।’

‘আরে, দূর! যা হওয়ার, হয়ে গেছে। ও নিয়ে এখন কে ভাবে! তোমার এ লড়াইয়ের সুনাম গোটা কলোরাডোয় ছড়িয়ে পড়বে। তারা যখন শুনবে, তুমিই জন উইলিয়ামসকে খতম করেছ, সুনাম আরও বাড়বে তোমার। বন্দুকবাজ হিসেবে নাম কামানোর যে স্বপ্ন এতদিন ধরে দেখে আসছ, এবারে তা পূরণ হবে। বিখ্যাত হয়ে যাবে তুমি।’

বিস্ময়ে চোখ গোল্লা-গোল্লা হয়ে গেল পিটারের। ঝুলে পড়ল চোয়াল। ‘আমি?’

‘কাউকে-না-কাউকে তো কাজটা করতেই হবে,’ নিরাসক্ত গলায় বলল বার্ট। ‘আমার তো আর নাম কামানোর শখ নেই।’ কাঁধ ঝাঁকাল সে। ‘সুযোগটা নেবে না কেন?’

কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল পিটার।

‘শোনো,’ ধমকে উঠল বার্ট। ‘তুমি নিশ্চয় এখনও ভাবছ না যে, বুড়ো মরিসের ছেলে ও, আর ওর দাবি ন্যায্য? ভুয়া লোক ও। আমার শরীরে যেমন মরিস উইলিয়ামসের রক্ত নেই, ওরও তা-ই।’

ধীরে ঘুরে দাঁড়াল পিটার। তাকাল জনের দিকে। ‘কিন্তু ওর চোখ অবিকল আমার মত,’ মৃদু গলায় বলল। ‘আর ওই চিঠিটা-ওটা তো বাবার হাতের লেখা।’

‘হিজিবিজি অক্ষরের ওই চিঠি কে লিখে দিয়েছে, কে জানে,’ পিটারকে ভর্ৎসনা করল বার্ট। ‘বললাম না, ও একটা ভুয়া! আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে বড় দাঁও মারতে চেয়েছিল। না পেরে শেষে নিজের আসল চেহারাটা দেখিয়ে দিয়েছে। আরে, ও যদি সত্যি মরিস উইলিয়ামসের ছেলে হত, বাবা তা হলে সে কথা আমাদেরকে বলেনি কেন? কেন সে ব্যাপারটা গোপন করেছিল?’

‘মা কেমন ছিল, জানোই তো,’ বলল পিটার, ‘সে যদি জানত, বাবা আগেও একবার বিয়ে করেছে, তা হলে আত্মহত্যা করত।’

‘ও একটা চোর, পিটার! একটা খুনে নেকড়ে!’ কর্কশ গলায় বলল বার্ট। ‘ওর গা থেকে ছাল ছাড়িয়ে ঝুলিয়ে দেয়া উচিত গোলাঘরের দরজায়!’

তর্ক করছে ওরা, আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে লাগল জনের মাথাটা। টের পেল, একটু-একটু করে শক্তিও ফিরে পাচ্ছে শরীরে।

ধস্তাধস্তি করে উঠে বসল জন।

সঙ্গে সঙ্গে তার দিকে বন্দুক তাক করল বার্ট।

‘এক হাতে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা থাকলে কী হবে? এখনও সাপের মতই বিপজ্জনক ও,’ বার্ট বলল, ‘একদমই চোখ সরানো যাবে না ওর উপর থেকে।

চারপাশে তাকাল জন।

সার্কেল ইউ ক্যাম্প।

ওয়্যাগনের পাশে বসে আছে ও। সমতল ভূমিতে দেখতে পেল গরুগুলো। ঘাস খাচ্ছে। স্যাডল বাঁধছে কয়েকজন রাইডার। রাঁধুনি দূরে তার চুলা নিয়ে ব্যস্ত।

সে, বার্ট আর পিটার ওদের শ্রবণসীমা থেকে দূরে।

‘যাক গে,’ আবার বলল বার্ট। ‘উঠে যখন বসতে পেরেছে, ঘোড়ায়ও চড়তে পারবে।’ পিটারের দিকে তাকিয়ে হাসল। ‘চলো। ব্যাটা কোনও বদ মতলব করার আগেই ব্যাপারটা চুকিয়ে ফেলি।

‘না,’ রাজি হলো না পিটার। ‘ওর ট্রায়াল হবে। সম্পত্তির বিষয়টা আদালতে ফয়সালা হওয়া দরকার। ড্যাম ইট, বার্ট নিজেদের ইচ্ছা মত আমরা সব কিছু করতে পারি না।’ জনের দিকে তাকাল ও। কণ্ঠে ফুটল তিক্ততা: ‘তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে, আর রাসলিং করবে না। গত রাতে আমরা দু’জন যোগ্য লোক হারিয়েছি।’

‘ফোর্ড আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে,’ কাঁপা গলায় বলল জন। ‘আমি তোমাদেরকে সাবধান করে দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পাহাড়ে যাও। মৃত একজন রাসলারকে পাবে ওখানে। ওরা তোমাদেরকে হামলা করার সময় লোকটাকে খুন করি আমি।’

এখনও থমথম করছে পিটারের চেহারা। ‘কিন্তু তুমিই বা ওখানে কী করছিলে? তোমার না এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা? গরুর পালের উপর নজর রাখছিলে? কী মতলবে?’

এক মুহূর্ত চুপ করে রইল জন। তারপর ওর চোখ ঘুরে গেল বার্টের দিকে। ‘আমি ওকে খুন করতে এসেছিলাম।’

‘আবার?’

হুঙ্কার ছাড়ল বার্ট: ‘দেখলে? কত বড় বদমাশ! নাহ, শুধু- শুধুই সময় নষ্ট করছি আমরা। কাজটা তুমি করতে না চাইলে আমিই করব।’ জনের শার্টের কলার চেপে ধরল সে। ‘ওঠ, হারামজাদা!’ এক ঝটকায় দাঁড় করিয়ে দিল।

ব্যথায় কাতরে উঠল জন। বনবন করে ঘুরতে লাগল পৃথিবীটা।

ভারসাম্যের জন্য ওয়্যাগনের গায়ে হেলান দিল সে, কথা বলার শক্তি নেই।

‘লেক্সি?’ বোমা ফাটার মত আওয়াজ বেরোল বার্টের মুখ দিয়ে। ‘তিনটা ঘোড়া নিয়ে এসো এখানে। জলদি!’ পিটারের দিকে ফিরল। ‘আর বকর-বকর করার দরকার নেই। ও কী বলল, নিজের কানেই তো শুনলে!’

হাত দিয়ে মুখ ঘষল পিটার। এক মুহূর্তের জন্য চোখের উপর হাত রাখল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ফোঁস করে। ‘ঠিকই বলেছ তুমি। বোকার মত কাজ করেছি এতদিন।’ রাগে গনগন করছে ওর মুখটা। নিষ্ঠুর আর নির্দয় লাগছে দেখতে। তাকাল জনের দিকে। ‘আগেই খতম করে দেয়া উচিত ছিল তোমাকে।’

ঘোড়া এসে গেছে।

লাগাম ধরল বার্ট। ‘লেক্সি, আমরা এই হারামজাদাকে নিয়ে শহরে যাচ্ছি, মার্শালের অফিসে।’ বিশ্রী হাসল সে। ‘তবে তুমি যদি কোনও গুলির শব্দ শুনতে পাও, চমকে উঠো না যেন।’

পাঞ্চার লেক্সিও দাঁত বের করে হাসল। ঘুরে, লম্বা কদমে চলল আগুনের দিকে।

বন্দুকের নল দিয়ে জনের গায়ে খোঁচা মারল বার্ট। ‘উঠে পড়ো।’

ওয়্যাগনের চাকার গায়ে হেলান দিয়ে আছে জন, ব্যথায় কুকুরের মত হাঁপাচ্ছে।

‘ব্যাটা মনে হচ্ছে নিজে থেকে ঘোড়ায় উঠতে পারবে না,’ নিজের ঘোড়ায় চেপে বলল বার্ট। ‘ওকে একটু ঘোড়ার পিঠে তুলে দাও তো, পিটার।’

জনের কাছে চলে এল পিটার। নিষ্ঠুরের মত গলাধাক্কা দিয়ে তুলল ওকে ঘোড়ার পিঠে।

বুঝতে পারছে জন, পিটার যদি ওকে নিজ হাতে গুলি করে না-ও মারে, বার্টকে বাধা দেবে না।

মাথা ঝাঁকি দিল জন। কোনও কিছুই সুস্থির ভাবে চিন্তা করতে পারছে না। ব্যথাটা যদি একটু কমত…চোখে রীতিমত আঁধার দেখছে।

চলতে শুরু করল ঘোড়া।

ওটার প্রতিটা কদমে ঝাঁকি লেগে নতুন ব্যথার তীব্র ঢেউ ছড়িয়ে পড়তে লাগল জনের শরীরে। কাঁধের ব্যাণ্ডেজটা ভেজা আর উষ্ণ লাগল। ক্ষত থেকে ফের রক্ত ঝরতে শুরু করেছে।

কোনও মতে ঘোড়ার গলা জড়িয়ে উবু হয়ে রইল জন। পাইনের বনে ঢুকল ওরা।

ঘোড়া থামাল বার্ট। ‘এখানেই কাজটা সেরে ফেলব। নামাও ওকে।’

জন টের পেল, ওকে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামানো হচ্ছে। পা জোড়া মাটির স্পর্শ পেল।

বড় একটা পাইন গাছের কাণ্ডে হেলান দিয়ে হাঁপাতে লাগল জন। ব্যথা একটু কমেছে, মনে হচ্ছে। মাথা তুলল, বহু কষ্টে চাইল চোখ মেলে।

ওর সামনে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে বার্ট।

বাঁ দিকে পিটার, সামান্য দূরে।

শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করল জন। ‘দাঁড়াও!’ গলা দিয়ে কোলা ব্যাঙের আওয়াজ বেরিয়ে এল ওর।

‘আরে, কীসের দাঁড়ানো!’ হ্যামার ধরে টানল বার্ট।

‘দাঁড়াও, বার্ট,’ বলল পিটার, ‘কী বলতে চাইছে, শুনি।’

‘ওর কোনও কথা শুনতে চাই না আমি।’ দাঁতে দাঁত ঘষল বার্ট। তবে ট্রিগার টানার আগেই এক লাফে ওর বন্দুকের সামনে এসে দাঁড়াল পিটার।

বলল, ‘কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে একটা মিনিট নষ্ট হলে!’

‘সামনে থেকে সরো!’ গর্জে উঠল বার্ট।

‘বার্ট খুন করেছে মরিস উইলিয়ামসকে!’ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল জন।

‘কী?’ ঘুরল পিটার, এখনও আড়াল করে রেখেছে জনকে। ‘কী বললে তুমি?’

‘ডাক্তার মিলারকে জিজ্ঞেস করো…এজন্যই ওকে খুন করতে চাইছিলাম আমি…মরফিন ইনজেক্ট করে মেরে ফেলেছে মরিসকে…ডাক্তার মিলার জানে এ কথা… জুলিয়াও জানে…’

বিস্মিত চোখে জনের দিকে তাকিয়ে আছে পিটার। পাঁই করে ঘুরল। ‘ও এসব কী বলছে, বার্ট?’ গর্জে উঠল চাপা গলায়।

নাক সিটকাল বার্ট। ‘মিথ্যা কথা। মরিস হার্টফেল করে মরেছে।’

‘ডাহা মিথ্যা!’ হুঙ্কার ছাড়ল জন। বার্টের প্রতি ওর প্রবল ঘৃণা শারীরিক ব্যথা আর দুর্বলতাকে ছাপিয়ে গেল। ‘… বাবা ওকে আমার কথা বলেছিল…আমি যেন তার সাথে দেখা করতে না পারি, সম্পত্তির ভাগ না পাই, সেজন্য তাকে হত্যা করেছে বার্ট। নইলে বাবার আরও দুই-তিন মাস বেঁচে থাকার কথা…বার্ট ভয় পাচ্ছিল, আমি হয়তো তার আগেই চলে আসব…’

‘যথেষ্ট হয়েছে!’ গর্জে উঠল বার্ট। ‘শেষবারের মত বলছি, পিটার সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।’

‘না!’ ধারাল গলায় বলল পিটার। ‘এখানে কোনও খুনোখুনি হবে না! আগে আমি ডাক্তার মিলারের সাথে কথা বলব। …বন্দুক নামাও, বার্ট!’

‘বললেই হলো!’ বার্টের মুখ রাগে লাল। ‘হ্যাঁ! আমিই মরিসের শরীরে মরফিনের ওভারডোজ দিয়েছিলাম। সেটা ওকে শারীরিক কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য। পা ভাঙা ঘোড়াকে যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচাতে গুলি করে মেরে ফেলা হয় না? আমিও তা-ই করেছি। তা ছাড়া, সে তো মারা যেতই! না হয় কয়েক দিন আগেই মরেছে!’

‘বার্ট!’ বিস্ময় ও বেদনায় ফিসফিসে শোনাল পিটারের কণ্ঠ।

বার্টের চেহারা এখন আর চেনা যায় না। ঘৃণার একটা মুখোশ পরে আছে যেন সে। মুখটা বেঁকে গেছে। চকচক করছে দু’চোখ। ‘আমি কি এতই বোকা যে, একটা জোকার এসে সম্পত্তি দাবি করে বসল, আর আমিও ‘এসো, ভাই, এসো’ বলে দিয়ে দিলাম? …সরে যাও, পিটার। নইলে খোদার কসম, তোমাকেও গুলি করে উড়িয়ে দেব। মুভ!’

বজ্রাহতের মত জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল পিটার, অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে আছে সৎ-ভাইয়ের দিকে।

আচমকাই ক্রোধ আর শোকের তীব্র চিৎকার বেরিয়ে এল তার গলা চিরে।

গুলি করল পিটার।

এত দ্রুত কাউকে ড্র করতে দেখেনি জন। পিটারের হাতে যেন ভোজবাজির মত উদয় হলো পিস্তলটা।

ট্রিগার টিপে দিয়েছে বার্ট, পিটারের অস্ত্রও আগুন ঝরাল।

দুটো গুলির আওয়াজ প্রায় একই সময়ে শোনা গেলেও মিস করেছে বার্ট। ওর গুলি গিয়ে বিঁধল পাইনের শরীরে।

কিন্তু মিস করেনি পিটার।

পেট চেপে ধরে, হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল বার্ট। মুখটা ব্যথায় বিকৃত। আবার বন্দুক তোলার চেষ্টা করল পিটারের দিকে। ‘…জাহান্নামে যাও…তোমরা দু’জনেই…’ ঘড়ঘড়ে গলায় বলল সে। ‘সার্কেল ইউ একা আমার…শুধু আমার…’

পিটারের চোখে পানি। দ্বিতীয় এবং শেষ গুলিটা করল।

হঠাৎ গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে পিস্তলটা ছুঁড়ে মারল পাইনের বনে। তারপর কোমরে ঝোলানো অন্য পিস্তলটাও।

হাউমাউ করে কেঁদে উঠল পিটার

ছত্রিশ

সার্কেল ইউ-র হোম রানশের চারপাশে বন্দুকের গুলির মত দুমদাম শব্দ হচ্ছে।

না, গুলি করছে না কেউ; হাতুড়ির আওয়াজ ওটা। রানশের পুরানো বাড়িটার অদূরেই নতুন একটা বাড়ি তৈরি করছে কাঠমিস্ত্রিরা।

জুলিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে বাড়ি তৈরি দেখছে জন।

নতুন তক্তায় রোদ পড়ে চকচক করছে।

উপত্যকার দিকে তাকাল সে।

হাতুড়ির শব্দ ছাড়া আর সব আশ্চর্য সুনসান। সূর্যালোকিত ও শান্তিময়।

ইতিমধ্যে ওরা বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছে

সুখের সময় এখন। কিন্তু পিটারের চিন্তা জনকে সুখী করতে পারছে না।

সেদিনের পর থেকে অনেকটাই বদলে গেছে পিটার। ভাইকে হত্যা করার অনুশোচনায় জর্জরিত।

ওর ছিন্নভিন্ন আবেগগুলো আবার জোড়া লাগাতে হবে।

কিন্তু কীভাবে?

নানা ভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে জন।

‘এত চিন্তা কোরো না তো,’ বলেছে জুলিয়া জনকে। ‘দেখবে, সব ঠিক হয়ে যাবে।’

কিন্তু জুলিয়ার কথায় ভরসা পায়নি জন।

উপত্যকায় চোখ বুলাতে বুলাতে আরও একবার নিজের উদ্বেগের কথা বলল ও জুলিয়াকে।

‘তুমি আসলে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করো,’ অনুযোগ করল জুলিয়া।

‘হয়তো-বা।’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল জন। হঠাৎ সচেতন হয়ে উঠল ঘোড়ার খুরের শব্দে।

সমতল ভূমি থেকে হোম রানশের দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে দুই ঘোড়সওয়ার।

চোখ কুঁচকে সেদিকে তাকাল জন।

পাশাপাশি ছুটতে ছুটতে রানশের উঠোনে ঢুকে পড়ল দুই রাইডার।

ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরল পিটার।

পিছনের দু’পায়ে ভর করে চিঁহিহি করে ডেকে উঠল তার ঘোড়াটা।

‘টাই হয়েছে!’ চেঁচাল সে।

জনের বুকের ভিতরটা ছলকে উঠল। এই প্রথম পিটারের কণ্ঠে উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া পেল সে। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই প্রথম হাসতে দেখছে ওকে।

হো-হো করে, প্রাণ খুলে হাসছে ওর ভাই।

হাসছে ম্যাগিও। ‘সাইড স্যাডলে না চড়লে তোমাকে আমি হারিয়ে দিতাম!’

‘আচ্ছা? কাল দেখা যাবে তা হলে!’ মুচকি হাসল পিটার। নেমে পড়ল ঘোড়ার পিঠ থেকে। ম্যাগির ঘোড়ার সামনে এসে মেয়েটার কোমর ধরে আলতো করে নামিয়ে আনল জমিনে।

এক মুহূর্তের জন্য হাসি থেমে গেল ওদের। দু’জন দু’জনের দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর আবার নির্মল হাসিতে উদ্ভাসিত হলো দুটি তরুণ মুখ।

জন আর জুলিয়ার উপস্থিতি বিস্মৃত হয়ে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ল ওরা, যেন পৃথিবীর সেরা জোকটি শুনেছে।

জনের জামার আস্তিন ধরে টান দিল জুলিয়া। ‘দেখলে তো? বলেছিলাম না, তোমার ভাইয়ের জন্য আমার বোনই সঠিক ওষুধ? …চলো, যাই। ওরা একটু একা থাকুক।’

***  

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *