দাঙ্গাবাজ ইহুদিদের অপকর্মের চিত্র

দাঙ্গাবাজ ইহুদিদের অপকর্মের চিত্র

১৮৯৭ সালের জায়োনিস্ট সম্মেলনে Theodor Herz1 যে খসড়ালিপি উপস্থাপন করেন, তার দেড় যুগ পার না হতেই পৃথিবীতে একটি বিশ্বযুদ্ধ আঘাত হানে।

১৯০৩ সালে কিশিনেভে বসবাসরত ইহুদিদের সঙ্গে জ্যান্টাইলদের দাঙ্গা বাধে। ফলে সেখানে বহু ইহুদি নিহত হয়। ক্ষতিপূরণস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার উগান্ডায় তাদের একটি উপনিবেশ স্থাপনের প্রস্তাব দেন। Dr. Herzl এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।

কেন এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হলো, তা নিয়ে তাদের মহলে প্রচণ্ড হইচই পড়ে যায়। কারণ, তাদের লক্ষ্য জেরুজালেম। অন্য কোনো ভূমির কথা তারা ভাবতেই পারে না। ইতঃপূর্বে তাদের আর্জেন্টিনায় উপনিবেশ স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও তারা একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাহলে উগান্ডা প্রস্তাবে Dr. Herzl রাজি হলেন কেন? এর কিছুদিন পর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। তখনও কেউ বুঝতে পারেনি, এই রক্তাক্ত যুদ্ধের উদ্দেশ্য কি! তবে যুদ্ধের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তাদের আর উগান্ডায় যেতে হয়নি; বরং তারা জেরুজালেমকেই চূড়ান্ত ভূমিরূপে ফিরে পেয়েছে।

প্রশ্ন জাগে, তারা কি এই যুদ্ধের কথা আগেই অনুমান করতে পেরেছিল? এই প্রশ্নের উত্তর তাদেরই একটি উৎস থেকে উপস্থাপন করা হবে। ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ American Jewish News-এর প্রধান মুখপাত্র, Litman Rosenthal পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘When Prophet Speak’ শিরোনামে একটি কলাম প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি বহু বছর আগেই বেলফোর ঘোষণার পূর্ববাণী করেছিলেন। তিনি হলেন Max Nordau। তিনি ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রভাবশালী এক জায়োনিস্ট আন্দোলনকারী। Litman ছিলেন Nordau-এর ঘনিষ্ঠ সহচর। কলামটিতে ষষ্ঠ জায়োনিস্ট সম্মেলনে Nordau সাহেবের দেওয়া একটি বক্তৃতা উপস্থাপন করা হয়, যেখানে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ইজরাইল পুনঃপ্রতিষ্ঠার ভবিষ্যদ্বাণী করেন। কলামটি নিচে উপস্থাপন করা হলো :

‘WHEN PROPHET SPEAK

By Litman Rosenthal

দিনটি ছিল শনিবার। ষষ্ঠ জায়োনিস্ট সম্মেলন সমাপ্ত হওয়ার পরদিন। সম্মেলনটি ১৯০৩ সালের আগস্ট মাসে বাসেলে অনুষ্ঠিত হয়। Dr. Herzl টেলিফোনে আমাকে তার সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন।

হোটেলে প্রবেশ মাত্রই তার মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। কুশলাদি বিনিময়ের পর তিনি রাশিয়ায় জায়োনিস্ট আন্দোলনের খবর জানতে চাইলেন।

প্রশ্ন করলাম—”আপনি কেবল রাশিয়ার খবর জানতে চাচ্ছেন কেন?”

জবাবে তিনি বললেন—”কারণ, আমার ছেলের কাছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এর ওপর ইহুদিদের অনেক স্বার্থ নির্ভর করছে।”“

সম্মেলনে ব্রিটিশ সরকারের প্রস্তাবিত পশ্চিম আফ্রিকার উগান্ডাকে তাদের উপনিবেশ তৈরি করা নিয়ে আলোচনা হয়। (Herzl ও তার প্রতিনিধিগণ ব্রিটিশ সরকারের এই প্রস্তাবনায় রাজি হন— Jewish Encyclopedia, Vol. 12, Page 678)। তবে প্যালেস্টাইনকে বিসর্জন দিয়ে নয়; বরং প্যালেস্টাইনকে ফিরে পাওয়ার ধাপ হিসেবেই একে গ্রহণ করা হয়। এটি ছিল Herzl ও Rosenthal-এর আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। Herzl বলেন—”আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং তা অর্জনের পদ্ধতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।”

এবার সম্মেলনে Dr. Nordau কী বলেছেন এবং কোন সৌভাগ্যবশত তাতে যোগ দিয়েছিলাম, সেই গল্প নিচে উল্লেখ করা হলো :

“সেবার এক ব্যবসায়িক সফরে ফ্রান্সে গিয়েছিলাম। লিওনস যাওয়ার পথে কিছু সময়ের জন্য প্যারিসে যাত্রা বিরতি করি। প্রতিবারের মতো সেবারও জায়োনিস্ট বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করি। এক বন্ধু বলল, আজ সন্ধ্যায় Dr. Nordau ষষ্ঠ জায়োনিস্ট সম্মেলনে বক্তৃতা দেবেন। তার বক্তৃতা শুনতে ব্যবসায়িক সফরটি দীর্ঘায়িত করলাম। সন্ধ্যার মধ্যেই সম্মেলন কক্ষে হাজির হলাম। কক্ষটি ততক্ষণে জনসমাগমে গিজগিজ করছিল। তিনি সম্মেলন কক্ষে পৌঁছা মাত্রই সবাই দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা জানাল। কোনো রকম দৃষ্টিপাত না করে তিনি সরাসরি বক্তৃতা মঞ্চে চলে গেলেন। এরপর বলা শুরু করলেন—

জানি, আপনারা সবাই একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে ব্যাকুল হয়ে আছেন। প্রশ্নটি হলো—কীভাবে আমি ও Herzl ব্রিটেনের প্রস্তাবিত উগান্ডা প্রস্তাবনায় রাজি হলাম? কেনই-বা প্যলেস্টাইন ইস্যু থেকে সরে এলাম এবং আমাদের সহস্র বছরের পরিকল্পনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলাম? এর জবাবে আপনাদের বলতে চাই, উগান্ডা প্রস্তাবনায় রাজি হওয়ার পেছনে অনেকগুলো যৌক্তিক কারণ রয়েছে। আসলে Herzl সাহেবকে এই প্রস্তাবনায় রাজি হওয়ার জন্য আমিই অনুরোধ করি। কেন এমনটা করেছি তা বলার আগে আপনাদের একটি গল্প শোনাতে চাই।

আমি এমন একটি সময়ের কথা বলতে যাচ্ছি, যা আপনাদের অনেকেই জানেন না। তখন ইউরোপের ক্ষমতাধর শক্তিগুলো সেভাস্টোপল দুর্গ দখল করতে নৌ-বহর পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল। তখনও স্বাধীন ইতালির জন্ম হয়নি। সার্ডিনিয়ার একটি ছোটো শাসনাঞ্চল হিসেবে এটি পরিচিত ছিল, কিন্তু তখন এর ওপর অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল। সার্ডিনিয়াবাসী স্বাধীন ইতালি প্রতিষ্ঠায় ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। এর পেছনে যে কয়জন মহান নেতার পরিচয় পাওয়া যায়, তারা হলেন—Garibaldi, Mazzini ও Cavour।

ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলো সার্ডিনিয়াকে সেভাস্টোপল আক্রমণের আমন্ত্ৰণ জানায়। প্রথমাবস্থায় সেভাস্টোপল ইস্যুতে সার্ডিনিয়া অস্বীকৃতি জানায়। বিশেষ করে Garibaldi ও Mazzini এই যুদ্ধে জাহাজ পাঠাতে রাজি হয়নি। তারা বলে—আমাদের পরিকল্পনা ইতালি প্রতিষ্ঠা নিয়ে। সেভাস্টোপলে গিয়ে আমরা কী করব? সেখানে তো আমাদের কোনো কাজ নেই। আমাদের সব শক্তি ও ক্ষমতা শুধু ইতালি প্রতিষ্ঠার পেছনে ব্যয় করা উচিত।

কিন্তু Cavour ছিলেন ব্যতিক্রমী ও দূরদর্শী একজন নেতা। তিনি বলেন—আমাদের উচিত ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেভাস্টোপল আক্রমণ করা। আসলে Hartam নামে তার একজন ব্যক্তিগত সচিব ছিল, যিনি জাতিতে ইহুদি। তিনি কেবল তার ব্যক্তিগত সচিবই ছিলেন না; খুব কাছের বন্ধুও ছিলেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে Cavour সাহেবকে পরামর্শ দিতেন। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সার্ডিনিয়ার অনেকেই Cavour-কে বিশ্বাসঘাতক বলে ডাকতে শুরু করে। অনেকে তার ব্যক্তিগত সচিবকে অভিযুক্তের কাঠগড়ায় নিয়ে আসে। প্রশ্ন করা হয়—বিশ্বাসঘাতকের মতো এমন বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কী?

তিনি বলেন—যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আমাদের এত যুদ্ধ, ত্যাগ-তিতিক্ষা, তার মূলে রয়েছে স্বাধীন ইতালি প্রতিষ্ঠার দৃঢ় বাসনা। এজন্য আমরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। মায়েরা তাদের সন্তানদের বিসর্জন দিয়েছে। আমাদের সব আত্মত্যাগ তখনই পবিত্র বলে গণ্য হবে, যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।

তিনি খুব ভালো করেই জানতেন, সেভাস্টোপল যুদ্ধের পর একটি শান্তি আলোচনা হবে। সেখানে যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী প্রতিটি দেশ আসন গ্রহণ করবে। সার্ডিনিয়ার হয়তো সেভাস্টোপল নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই, কিন্তু এই যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শান্তি আলোচনার অংশীদার হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। যখন সবাই যুদ্ধের মুনাফা ভাগ-বটোয়ারা নিয়ে দাবি তুলবে, তখন আমরা স্বাধীন ইতালির দাবি করব। এভাবে Cavour উপস্থিত নীতিনির্ধারকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন সেভাস্টোপল আক্রমণ করা হবে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রথম ধাপ।

পুরো কক্ষ এতক্ষণ Nordau সাহেবের বাণী মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামলে সবাই হাততালি দিতে শুরু করে। সবাইকে থামার নির্দেশ দিয়ে তিনি আবারও বলতে শুরু করলেন—

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ব্রিটেন কিশিনেভ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সহমর্মিতাস্বরূপ আমাদের উগান্ডা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা জানি উগান্ডা আফ্রিকাতে, আর জায়োনিজমও কখনো আফ্রিকার জন্য তৈরি হয়নি। Herzl সাহেব খুব ভালো করেই জানেন, রাজনৈতিক পরাশক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কোনো বিকল্প হতে পারে না। এমতাবস্থায় ব্রিটেনকে হাতছাড়া করা উচিত হবে না। আমরা একটি মহাবিপ্লবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। খুব দ্রুত এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে, যার দরুন আবারও একটি শান্তি আলোচনার আয়োজন করা হবে। সেখানে পৃথিবীর বড়ো বড়ো দেশের প্রতিনিধিরা হাজির হবে। আমরা পুনরায় ষষ্ঠ জায়োনিস্ট সম্মেলনের বিষয়াবলি উপস্থাপন করব। ব্রিটেন পূর্বের ন্যায় আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এখন উগান্ডাবিষয়ক প্রশ্নে সার্ডিনিয়াকে অনুকরণ করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাতে পারি। আর তা হচ্ছে—Herzl, জায়োনিস্ট সম্মেলন, ইংল্যান্ডের উগান্ডা প্রস্তাবনা, ভবিষ্যৎ বিশ্বযুদ্ধ (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ), যুদ্ধপরবর্তী শান্তি আলোচনা এবং সবশেষে ব্রিটেনের সহায়তায় প্যালেস্টাইনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।”

শেষ কিছু শব্দ আমাদের কানে বর্জ্যের ন্যায় আঘাত করে। আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনি, একজন মানুষ কীভাবে ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তার এই জ্বালাময়ী বক্তৃতা প্যালেস্টাইন পুনরুদ্ধার বিষয়ে জায়োনিস্টদের সকল সংশয় মুহূর্তেই উড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। সবার আবেগ-উৎকণ্ঠাকে তিনি আরও কিছু সময়ের জন্য ধৈর্যে পরিণত করতে সক্ষম হন। এরপর আমরা সবাই তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টির জন্য দিনক্ষণ গণনা শুরু করলাম।’

পাঠকদের অবাক লাগতে পারে, Litman Rosenthal-কে কীভাবে এমন একটি কলাম লেখার জন্য অনুমতি দেওয়া হলো! আসলে বেলফোর ঘোষণার পূর্বে এই কলামটি প্রকাশিত হয়নি। ইহুদিদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—তারা ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিষয় জনসম্মুখে আসতে দেবে না, যতক্ষণ না তার উদ্দেশ্য পুরোপুরি অর্জিত হয়। এ বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে বেলফোর ঘোষণার অনেক পরে। ১৯০৩ সালের কর্মসূচিতে স্থান পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো—

১ . ভবিষ্যৎ বিশ্বযুদ্ধ

২. শান্তি আলোচনা

৩. নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন।

একই উদাহরণ পাওয়া যায় জার সাম্রাজ্যের পতনের সময়ও। প্রথমে বলা হয় Nicholas Romanovitch-সহ তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের যারা হত্যা করে, তারা ছিল সোভিয়েত ডেপুটি; কিন্তু অনুসন্ধানের পর পরিষ্কার হয়—হত্যাকারী পাঁচজনই ছিল ইহুদি। তারা সোভিয়েত ডেপুটি ছদ্মবেশে Nicholas পরিবারকে হত্যা করে। এর পেছনে ছিল আমেরিকান জায়োনিস্টদের বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ।

অবশেষে সেই দিনটি চলে আসে, যখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় রাজপরিবারের সদস্য Archduke Franz Ferdinand সস্ত্রীক আততায়ীর হাতে নিহত হন। দিনটি ছিল ২৮ জুন, ১৯১৪। সেদিন তিনি সস্ত্রীক বসনিয়ার রাজধানী সারাজেভো ভ্রমণ করছিলেন। অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, সার্ব-বসনিয়ার জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘ব্লাক হ্যান্ডসদের’ দ্বারা এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।

২৩ জুলাই এই জাতীয়তাবাদ সন্ত্রাসী সদস্যদের আটক করার জন্য অস্ট্রিয়া সরকার সার্বদের ওপর সামরিক চাপ বৃদ্ধি করে। ঠিক তার পরদিন সার্বরা রাশিয়ানদের নিকট সামরিক সাহায্যের আবেদন করে। রাশিয়া বিনা বাক্যে সেই আবেদনে সাড়া দেয়। ২৮ জুলাই অস্ট্রিয়া সার্বদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধ ঘোষণা করে, যা এক অর্থে রাশিয়ানদের ওপরেও যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর। এরপর অস্ট্রিয়ার সমর্থনে পাশে এসে দাঁড়ায় জার্মানি ও অটোম্যান। অন্যদিকে রাশিয়ার পক্ষে দাঁড়ায় ব্রিটেন ও ফ্রান্স।

Nordau সাহেবের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী যুদ্ধ ঠিক সময়ই শুরু হয়। আর যুদ্ধের ফলাফল কী হবে, তা তারা ভালো করেই জানত। কারণ, কার ভান্ডারে কতটুকু রসদ মজুত আছে, সে হিসাব তারা আগেই কষে রেখেছিল। প্রতিটি দেশের প্রশাসনিক বিভাগে তাদের যথেষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি ছিল। তাদের অতি প্রাচীন একটি সংস্কৃতি হচ্ছে—তারা নিরপেক্ষতার ছুতো ধরে যুদ্ধের উভয় পক্ষকে ঋণ ও রসদ সরবরাহ করত এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে কাঙ্ক্ষিত একটি পক্ষের রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দিত। এতে তাদের ভান্ডারে যেমন মুনাফা আসত, তেমনি কাঙ্ক্ষিত পক্ষটিও যুদ্ধে জয়লাভ করত।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর তারা অপেক্ষা করতে লাগল, কখন মিত্রশক্তির রসদ ফুরিয়ে যাবে। ব্রিটেনের জাহাজগুলো জার্মানির বিরুদ্ধে এমনিতেই প্রতিরোধ গড়তে পারছিল না।

তার ওপর রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ায় তারা মাঝপথে যুদ্ধ থেকে সরে পরে। অসহায় হয়ে যায় ব্রিটেন ও ফ্রান্স।

তাদের অসহায়ত্বের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা পড়ে, যখন ইহুদি ব্যাংকাররা ১৯১৬ সাল থেকে সকল প্রকার ঋণ প্রদান বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন পর ফ্রান্সের অভ্যন্তরে সামরিক বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ে। এর দরুন তারাও যুদ্ধ থেকে সরে পড়ে। বাকি থাকে শুধু ব্রিটেন। তারা যে একাকী এই যুদ্ধে কখনো জিততে পারবে না, তা জায়োনিস্টরা বেশ ভালো করেই জানত। সেই মুহূর্তে ব্রিটেনের জন্য সামরিক শক্তিতে পুষ্ট কোনো মিত্রশক্তির আবশ্যকতা দেখা দেয়। আর এই সুযোগ যে ইহুদিদের সামনে আসবে, তা তারা যুদ্ধের আগ থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। তাই তারা এতদিন ওত পেতে অতি গোপনে নতুন একটি সামরিক বাহিনী তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আর তা-ই হলো আজকের আমেরিকা।

এই কাজের পুরো দায়িত্ব অর্পিত হয় Bernard M. Baruch-এর ওপর। তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এ দেশটিকে রণ শক্তিতে এতটা পারদর্শী করে তোলেন যে, যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মাথায় তারা জার্মানিকে সমূলে পরাজিত করে। ব্রিটেনের হাতে তুলে দেয় বিজয় মুকুট। এরপর ব্রিটেনও তাদের প্রতিশ্রুতিস্বরূপ, যুদ্ধ জয়ের বিনিময় হিসেবে জায়োনিস্টদের হাতে তুলে দেয় প্যালেস্টাইনের চাবি।

Mr. Baruch ১৮৭০ সালে দক্ষিণ ক্যরোলিনাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম Simon Baruch। যুদ্ধ চলাকালে আমেরিকার ৩৫১-৩৫৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান তিনি একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। সে সময় তার মতো ক্ষমতাধর ব্যক্তি আমেরিকায় দ্বিতীয় কেউ ছিল না; এমনকী খোদ প্রেসিডেন্ট সাহেবও নন। যে কোম্পানির ওপর একবার তার চোখ পড়ত, তা দখল করেই ছাড়তেন। যেমন : Liggett & Meyers Tobacco Company, Selby Smelter, Tacoma Smelter ইত্যাদি। তিনি মেক্সিকোতে বিশাল রাবার বাগান গড়ে তোলেন, যেখান থেকে বিভিন্ন স্থানে কাঁচামাল সরবরাহ করা হতো। আয়রন, ইস্পাত ও কপার শিল্পের বাজারগুলোও তার দখলে ছিল।

১৯১২ সালে Woodrow Wilson-এর নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেন। তখন থেকে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সত্যিকারার্থে এটা কোনো সম্পর্ক ছিল না। বলা চলে, প্রেসিডেন্ট সাহেব তার হাতে বন্দি হয়ে পড়েন। মূলত এ দেশে যারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়, তাদের সবাই জায়োনিস্টদের পুতুলে পরিণত হয়। এ কথা কেন বলছি, তা পরবর্তী একটি অধ্যায়ে পরিষ্কার করব। যাহোক, এই সুযোগে Mr. Baruch সে সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বনে যান। তিনি যা বলেতেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব তা-ই করতেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কাঁচামাল, রসদ, সেনাবাহিনী ও শ্রমবাজারের মতো পাঁচটি বড়ো বড়ো প্রশাসনিক দপ্তর তিনি একাই চালাতেন।

যেহেতু আমেরিকা যুদ্ধে অংশ নেবে, তাই একটি সু-সংগঠিত সেনাবাহিনী গড়ে তোলা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই যুদ্ধকে ভয় পায় বলে এত দ্রুত সেনাবাহিনী গড়ে তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। Mr. Baruch প্রভোস্ট মার্শালকে কিছু উপায় বাতলে দেন। প্রথমে নির্ধারণ করেন, এই বাহিনীতে কোন কোন শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে নেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমেরিকার বেশ কিছু শিল্প সংগঠন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কলমের এক খোঁচায় তাদের অবৈধ বলে আইন জারি করা হয়। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাতারাতি বেকার হয়ে পড়ে। এটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে একজন বেকারকে যে কাজেরই সুযোগ দেওয়া হবে, তাতেই সে রাজি হবে। অন্তত নিজ পরিবারের জন্য হলেও রাজি হবে; ঠিক তা-ই ঘটল। এরপর যখন সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, বেকাররা দলে দলে সেখানে প্রবেশ করতে শুরু করে। এভাবেই তৈরি হয় যুদ্ধকালীন আমেরিকার সেনাবাহিনী।

বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ Mr. Baruch প্রেসিডেন্ট সাহেবের থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের একটি বাজেট পাশ করান, যার পুরোটাই ছিল সাধারণ জনগণের ট্যাক্স ও বন্ড ক্রয়ের অর্থ। এত অর্থের বাজেট করেও যুদ্ধ শেষে অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের বোনাস দেওয়া তো দূরের কথা, প্রাপ্য মজুরিটুকুও সামরিক বিভাগ মেটাতে পারেনি। তাহলে এত অর্থ গেল কোথায়? যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই দেখা যায়—নিউইয়র্কের ইহুদিদের আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে। সে সময় এই শহরের ৭০ শতাংশ মিলিয়নিয়ার ছিল এই জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা।

সাধারণ মানুষ তাদের দুঃখ-দুর্দশার দরুন প্রেসিডেন্টকে দোষারোপ করতে শুরু করে। কারণ, তার নির্দেশেই সেই শিল্প সংগঠনলো বন্ধ এবং সাধারণ মানুষ যুদ্ধে নিহত হয়েছে, অথচ তারা প্রাপ্য মজুরি পায়নি। ফলে চারদিকে ডেমোক্রেটবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, Woodrow Wilson ছিলেন এই দলের সদস্য। বোঝাই যাচ্ছিল—এরপর যিনি ক্ষমতায় আসবেন, তিনি অবশ্যই রিপাবলিকান কোনো প্রার্থী হবেন। এবার ইহুদিরা তাদের স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী রিপাবলিকানদের পিছে অর্থ বিনিয়োগ শুরু করে। বিনিয়োগ সফলও হয়। ১৯২১ সালে ক্ষমতায় আসে রিপাবলিকান প্রার্থী Warren G. Harding ।

ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় ইহুদিদের নানা অপকর্মের চিত্র

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে বলকান দেশগুলোতে সাধারণ মানুষ যখন ক্ষুধা-দরিদ্রতায় হাহাকার করছিল, তখন আমেরিকা থেকে বেশ কয়েকটি ত্রাণবাহী জাহাজ সেখানে পাঠানো হয়। ত্রাণ বিতরণকালীন অভিজ্ঞতা নিয়ে জাহাজকর্মীদের মুখ হতে পাওয়া একটি অভিজ্ঞতার গল্প নিচে তুলে ধরা হলো—

‘যুদ্ধপরবর্তী শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে আমাদের জাহাজগুলো প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে লিবাও বন্দরে হাজির হয়। চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের জাহাজটি ছোটো একটি স্রোতধারার সামনে নোঙর ফেলে ত্রাণ হস্তান্তর শুরু করে। এত এত মানুষ খাবারের জন্য হাহাকার করছিল যে, সুষ্ঠভাবে ত্রাণ বিলি করা অসম্ভব হয়। যখনই তাদের সামনে নতুন একটি আটার ব্যাগ খোলা হচ্ছিল, মানুষ যেন তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পরছিল। যেটুকু আটা মাটিতে পড়ছিল, সেটুকুর জন্যও মানুষের কাকুতি-মিনতির শেষ ছিল না। ক্ষুধার্ত মানুষরা ধুলো-ময়লা মাখা আটাগুলো পর্যন্ত তাদের পাত্রে ভর্তি করে রাখছিল। আলু বিতরণ শুরু হলে তো মারামারি বেধে যায়। আলুর খোসা পানিতে ছুড়ে মারলে ক্ষুধার্ত মানুষরা তাদের ধাতব পাত্র দড়িতে বেঁধে সেগুলো তুলে আনতে শুরু করে। সাদা বর্ণের শুকনো মানুষগুলো খাবারের জন্য সারাদিন উন্মাদের মতো বড়ো বড়ো চোখ করে দাঁড়িয়ে ছিল।

‘এর মধ্যে দেখা যায় ডজনখানেক ইহুদির কিছু কুৎসিত দৃশ্য। সবাই যখন খাবারের জন্য লাফালাফি করছে, তখন ভালো কাপড় পরা তাদের একদল সদস্যকে দেখা যায়, যাদের মাথায় ছিল সদ্য ক্রয় করা চকচকে টুপি, হাতে ছিল দামি ঘড়ি এবং পায়ে ছিল দামি জুতা; যেমনটা শহরের সম্পদশালী মানুষদের ব্যবহার করতে দেখা যায়। তাদের আচরণ দেখে মনে হয়, এই জাহাজটি যেন তাদের জন্য সিগারেট নিয়ে এসছে! তারা আমাদের পাঁচ পাউন্ডের নোট দেখিয়ে বলছে, এক কাটুন সিগারেট হবে অথবা একটি স্বর্ণের ঘড়ির বিনিময়ে নতুন কিছু সাবান হবে? দেখে মনেই হয় না, তারা রাশিয়াতে কোনো রকম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে।’

খ্রিষ্ট যুগের সূচনা হতে আজ পর্যন্ত যত ঐতিহাসিক যুদ্ধ-বিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রধান কারণ হিসেবে কেন যেন শুধু খ্রিষ্টানদেরই অভিযুক্ত করা হয়। সর্বত্র প্রমাণ করার জোড় প্রচেষ্টা চলছে—খ্রিষ্টবাদ ঐতিহাসিকভাবেই সন্ত্রাসী চেতনায় বিশ্বাসী এবং তারাই পৃথিবীর অধিকাংশ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মূল হোতা! এ প্রসঙ্গে Rev. M. Malbert, 1921 সালের এপ্রিলে Hebrew Christian Alliance Quarterly থেকে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘Persecution Is Not the Monopoly of Christian and Is Contrary to Its Principles।’ প্রবন্ধটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলো—

‘অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাদের সব অপবাদের বিরুদ্ধে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে হবে। গত কয়েক হাজার বছরের সকল দাঙ্গা-সংঘাতের দায়ী হিসেবে পৃথিবীবাসী শুধু আমাদেরকেই অভিযুক্ত করেছে। কিন্তু পৃথিবীর প্রথম ধর্মীয় যুদ্ধের সূত্রপাত, ইহুদিদের হাতেই হলেও তারা এই বিষয়টি কখনোই স্বীকার করতে রাজি নয়। সময়ের পরিক্রমায় তারাই নিজেদের যুদ্ধবাজ জাতিতে পরিণত করেছে।

খ্রিষ্টপূর্ব ১২০ সালে Simon-এর পুত্র John Hyrcanus ছিলেন মাক্কাবিয়ান পরিবারের শেষ ভাই। নিজেদের ধর্ম রক্ষার্থে তিনি সিরিয়ান সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি জেরিজিন পর্বতের ওপর নির্মিত সামারিটান টেম্পল একেবারে ধ্বংস করে দেন। পরে ইডুমিয়ান রাজ্য দখল করেন এবং বন্দিদের ওপর দুটি পথ চাপিয়ে দেন। যথা : হয় ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করো, নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যাও। তিনি জোড়পূর্বক একদল যুদ্ধবন্দির ওপর এই ধর্ম চাপিয়ে দেন।’

…John Hyrcanus-এর তৃতীয় পুত্র King Alexander ছিলেন মাক্কাবিয়ান রাজা। একজন পুরহিত হওয়ার পরও তিনি পরকালে বিশ্বাস করতেন না। এজন্য ফেরাসিস গোত্র তাকে কখনো সহ্য করত না। খ্রিষ্টপূর্ব ৯৫ সালে ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুক্কাতে তিনি প্রতিবারের মতো নিজের পৌরহিত্য জাহির করছিলেন (ইহুদি ক্যালেন্ডারে ৭ম মাসের ১৫ তম দিনকে শুক্কাত বলা হয়)। পূজার বেদিতে পানি না ঢেলে তিনি নিজ পায়ে ঢালতে শুরু করেন। বুঝতে পারলেন, এই কাজে সবাই চটে গেছে এবং তার জীবন হুমকির মুখে। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি সৈন্যবাহিনীকে দ্রুত হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন, আর তারা সেখানে উপস্থিত থাকা ৬ হাজার মানুষকে হত্যা করে।

তবে ফেরাসিসদের প্রতিশোধ ছিল আরও ভয়ংকর। পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে তিনি তাদের দলনেতাকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব করেন, কিন্তু কেউ এই শান্তি আলোচনায় বসেনি; বরং সবাই তার মৃত্যুদণ্ডের দাবি তোলে। তারা নিজ দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সিরিয়ান রাজা Eucaerus-কে প্যালেস্টাইন দখলের জন্য উসকে দেয় এবং তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। রাজা Eucaerus প্রায় ৪৩০০০ সৈন্য নিয়ে মাক্কাবিয়ান সাম্রাজ্য জিহিদিয়া আক্রমণ করে। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় Alexander পরাজিত হয় এবং ইফ্রয়িম পর্বতে আশ্রয় নেয়। পরে সিরিয়ান রাজাও ফেরাসিসদের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করে। তাদের একটি প্রতিশ্রুতিও পূরণ করা হয়নি। বিবেকের তাড়নায় দংশিত হয়ে তাদের প্রায় ৬ হাজার সদস্য আবারও Alexander-এর কাছে ফিরে যায় এবং সাম্রাজ্য ফিরে পেতে আবারও যুদ্ধ করে। এই যুদ্ধে তারা সিরিয়ানরা পরাজিত হয়। এরপরও রাজা সাহেবের বিরুদ্ধে তাদের অনেকের পূর্ব অসন্তোষের রেশ থেকে যায়।

…ইহুদিরা অধার্মিকতা বা নাস্তিকতা একদম সহ্য করতে পারে না। তাদের চোখে অন্য ধর্মের প্রত্যেকেই নাস্তিক। একমাত্র তারাই আস্তিকতার ধর্মে বিশ্বাসী। তারা আশেপাশের প্রতিটি শহরকে এই ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে। যে শহরগুলো ইহুদি ধর্ম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়, সেগুলো ধ্বংস করে দেয়। তৎকালীন সেনহাড্রিনের সদস্য Simon ben Shetach তার শাসনামলে ৮০ জন নারীকে জাদুচর্চার অভিযোগে ডাইনি বলে ক্রুশে ঝুলিয়ে হত্যা করে।

…হিল্লেল ও শাম্মাই হলো খ্রিষ্টপূর্ব বছরগুলোতে তাদের বড়ো দুটি বিদ্যাপীঠ। ধর্মীয় নিয়মনীতিতে মতপার্থক্যের দরুন তাদের মধ্যে রক্তাক্ত যুদ্ধ প্রায় লেগেই থাকত। যীশুকে ক্রুশে ঝুলিয়ে হত্যা করাও ছিল তাদের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ। তারা বিশ্বাস করে—ঈশ্বরের নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো খ্রিষ্টান হত্যা!

রাবাই Tarpon একবার বলেছিলেন, গস্পেল ও এপোস্টলের প্রতিটি বাক্য সৃষ্টিকর্তার নাম উল্লেখপূর্বক পুড়িয়ে ফেলা উচিত। তিনি আরও বলেন, খ্রিষ্টধর্ম পেগানিজমের চেয়েও বিপজ্জনক। প্রয়োজনে তিনি পেগানদের টেম্পলে আশ্রয় নেবেন, কিন্তু ক্যাথলিকদের সংস্পর্শে যাবেন না। Bar-Kosibah তাদের এক ভণ্ড পয়গম্বর, যিনি তার শাসনামলে প্রচুর খ্রিষ্টানকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেন। রাজা Justinian-এর শাসনামলে তারা কৈসরিয়ার আশেপাশে বসবাসরত খ্রিষ্টানদের হত্যা এবং তাদের গির্জাগুলো ধ্বংস করে। গভর্নর Stephanus যখন দাঙ্গা হামলার শিকার খ্রিষ্টানদের রক্ষার প্রচেষ্টা করেন, তখন ইহুদিরা তাকেও হত্যা করে। ৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে তারা অ্যান্টিও আক্রমণ এবং সেখানে বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ধারালো তলোয়ার দিয়ে নির্বিচারে হত্যা করে। রাজা Sinaite-এর শরীর দড়িতে বেঁধে অ্যান্টিওকের রাস্তায় টেনেহিচড়ে হত্যা করে।

৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের রাজা ইহুদিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্যালেস্টাইন আক্রমণ করে এবং সেখানে থাকা খ্রিষ্টানদের গণহত্যায় মেতে ওঠে। তখন প্রায় নব্বই হাজার অধিবাসী জেরুজালেম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে বাইজ্যান্টাইন রাজা Heraclius পুনরায় প্যালেস্টাইন দখল করেন। যখন তার সৈন্যবাহিনী রোমান সাম্রাজ্য পাড়ি দিয়ে জেরুজালেম যাচ্ছিল, তখন এক সম্পদশালী ইহুদি তাকে নৈশ্যভোজের আমন্ত্রণ করে, যার নাম ছিল Benjamin ।

তিনি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি পারস্যের রাজাকে জেরুজালেম দখলের জন্য উসকে দেন। রাজা Heraclius জিজ্ঞেস করেন—’কেন তুমি নিজ ভূমির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে জেরুজালেমকে পারস্যের হাতে তুলে দিলে?’ জবাবে তিনি বলেন—’কারণ, সেখানে থাকা খ্রিষ্টানদের আমরা সহ্য করতে পারি না। এমনকী তারা মুসলিমদের নবি মুহাম্মাদের ওপরও কম অত্যাচার করেনি। তারা আরব নেতাদের মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর অনুসারীদের ছত্রভঙ্গ করার বহু প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এর মাধ্যমে যীশুর একটি ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণতা পায়—তিনি নিপীড়িত ও নির্যাতিত হয়েছেন, কিন্তু সত্য বাণী প্রচারে পিছপা হননি।

এই প্রবন্ধ এখানেই শেষ নয়। কেউ যদি নিজ দায়িত্বে প্রবন্ধটি সম্পূর্ণ পাঠ করেন, তবে রক্তচোষা ইহুদি জাতির আরও অনেক ইতিহাস জানতে পারবেন। যখন তাদের ধর্ম পুনর্গঠন নিয়ে বিভিন্ন রাবাইদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল, তখন রাবাই Isaac M. Wise-কে হুমকি দিয়ে রাবাই Lilienthal বলেন—’আপনি যদি নিজেকে খ্রিষ্টান বলে মনে করেন, তবে ক্রশবিদ্ধ হতে প্রস্তুত হোন।’ (Isaac Meyer Wise, p. 92 )

যারা Gibbson-এর লেখা Rise and Fall of the Roman Empire বইটি পড়েছেন, তারা ১ম খণ্ডের ১৬ তম অধ্যায়ে তাদের নির্মমতার আরও অনেক প্রমাণ পাবেন। ইতিহাস প্রমাণ করে—যারা আজ অবধি ধর্মকে ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তারা হলো ইহুদি। বইটির বিশেষ একটি অনুচ্ছেদ নিচে তুলে ধরা হলো—

‘সম্রাট Nero Claudius-এর রাজত্ব থেকে Antonius Pius-এর রাজত্বকাল পর্যন্ত রোমানদের কর্তৃত্ব ইহুদিদের অস্থির করে তোলে। যার দরুন তাদের সাথে প্রতিনিয়ত ছোটোখাটো দাঙ্গা লেগেই থাকত। মিশর, সাইপ্রাস ও সাইরিনের শহুরগুলোতে তারা যে নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের জন্ম দিয়েছে, তা মানব ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যে রাজ্য তাদের আশ্রয় দিয়েছে, সেই রাজ্যের সাথেও ইহুদিরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত মনোভাবের দরুন তারা কেবল রোমান সাম্রাজ্যেরই নয়; বরং গোটা মানবজাতির শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

ইহুদিরা তাদের সেই অন্ধবিশ্বাস আজ অবধি জিইয়ে রেখেছে, একদিন মহা প্রতিক্ষিত মসিহ হাজির হবেন। তিনি বিশ্ব সাম্রাজ্য তাদের হাতে তুলে দিয়ে এবং চারদিকে স্বর্গীয় আবহ তৈরি করবেন।’

তাদের উদ্দেশ্য প্যালেস্টাইন। বিংশ শতাব্দীতে অসংখ্য আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠে ‘বেলফোর ঘোষণা’। যে দশ সদস্যের বোর্ড থেকে এই ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়, তাদের সাতজনই ছিল অ্যাভানজেলিক খ্রিষ্টান; যাদের সঙ্গে বিশেষ এই জাতিগোষ্ঠীটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্যালেস্টাইনে আরব উৎখাত বহু আগেই শুরু হয়েছে, কিন্তু ইহুদিদের জন্য এখনও তা নিরাপদ ভূমিতে পরিণত হয়নি। তাদের কৌশল ও চাপের মুখে ব্রিটেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফেঁসে গিয়েছিল। শুধু কি প্যালেস্টাইন? আরব, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে ২৫০-৩০০ বছরের যে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসন, তা নিয়েও ইহুদিদের কম পরিকল্পনা ছিল না।

রণক্ষেত্র ইহুদিদের অর্থ উপার্জনের আদর্শ শস্যক্ষেত্র

পূর্বের একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, যুদ্ধ ইহুদিদের নিকট অমিত সম্পদ উপার্জনের আদর্শ শস্যক্ষেত্র। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে যতগুলো যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে, প্রতিটির পেছনেই এই জাতিগোষ্ঠীটির বড়ো অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। শুধু তা- ই নয়, যুদ্ধের উভয় পক্ষকেই প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রসদ (খাদ্যশস্য, জামা-কাপড়, অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামাদি) সরবরাহ করে ইহুদিরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছে।

বিষয়টি নিয়ে ১৯১৩ সালে Werner Sombart একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন, যার নাম The Jews and Modern Capitalism। বইটির ৫০ থেকে ৫৩ নম্বর পৃষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ বিশেষ নিচে তুলে ধরা হলো—

‘ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপ-আমেরিকার প্রতিটি সৈন্যদলের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও রসদ সরবরাহের মূল কাজটি করত ইহুদিরা। এই বাণিজ্য যেন তাদের একচেটিয়া সম্পদে পরিণত হয়। ইহুদিরা ছিল যেকোনো রাজার নিকট ঋণ লাভের প্রধানতম উৎস। এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যার সব এখানে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে একটি পথ দেখিয়ে দিতে পারি, যা অনুসরণ করে যেকোনো উৎসাহী পাঠক নিজেদের গবেষণা চালিয়ে নিতে পারবেন।

১৪৯২ সালের আগ পর্যন্ত ইহুদিদের বড়ো একটি অংশ স্পেনে বাস করত। তখন স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীগুলোতে ইহুদিরা প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের কাজ করত। সে গল্প এখানে আনতে চাচ্ছি না; বরং সেখান থেকে গল্প শুরু করব, যেখান থেকে ইংল্যান্ড-ইহুদি সম্পর্ক জোরদার হতে শুরু করেছে।

সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে তারা বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর প্রধানতম রসদ সরবরাহকারী গোষ্ঠী হিসেবে চারদিকে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করে। Antonio Fernandez Carvajal হলেন এমন একজন ইহুদি, যিনি কমনওয়েলথ সৈন্যবাহিনীর জন্য রসদ সরবরাহের বিশেষ দায়িত্ব পান। তিনি ১৬৩০ থেকে ১৬৩৫ এর মাঝামাঝি সময়ে লন্ডনে বসবাস শুরু করেন এবং খুব অল্প সময়ে মাঝেই নিজেকে সম্পদশালী বণিকে পরিণত করেন।

১৬৪৯ সালে তাকে ইংল্যান্ড সামরিক বাহিনীর প্রধান খাদ্য-রসদ সরবরাহকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এ কাজে তার সহকারী হিসেবে একই জাতিগোষ্ঠীর আরও চারজন সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সময় তিনি বাৎসরিক ১,০০,০০০ পাউন্ড সমমূল্যের রৌপ্য বাহিরের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতেন। ১৬৮৯ সালে William III রাজা হিসেবে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করেন। সে সময় তার সামরিক বাহিনীর জন্য প্রধান রসদ সরবরাহকারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন Sir Solomon Medina। তিনি ছিলেন জন্মসূত্রে একজন আরব ইহুদি।

সপ্তদশ শতাব্দীতে স্পেনের সাথে ইংল্যান্ডের যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই ফ্রান্সের সাথে নতুনভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফ্রান্সের রাজা Louis XIV-এর সামরিক বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের কাজ করত স্ট্রসবার্গের (Strasbourg) ইহুদিরা। Jacob Worms ছিলেন রাজা Louis XIV-এর ডান হাত, যার পরামর্শ ছাড়া তিনি এক কদমও চলতেন না। যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি Maurice বলেন, ইহুদি রসদ সরবরাহকারীদের দক্ষতার দরুন তিনি সামরিক বাহিনীকে যে রূপে সুসজ্জিত করেছেন, ইতঃপূর্বে কখনো তা করা সম্ভব হয়নি। Louis বংশের শেষ দুই রাজার আমলে প্রধান রসদ সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেছেন Cerf Beer। ১৭২৭ সালে মেটজ (Metz) শহরের ইহুদিরা মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে সেখানকার সামরিক বাহিনীর জন্য ৫,০০০ হাজার নতুন ঘোড়া সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে Abraham Gardis নির্মাণ করেন তার বিখ্যাত কোষাগার “House of Gardis”। তা ছাড়া কুইবেক প্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি নির্মাণ করেন আরও অনেক কোষাগার; যেখান থেকে ফরাসি বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সময়ে রসদ সরবরাহ করা হতো।

নেপোলিয়নের প্রতিটি যুদ্ধের ইতিহাস যদি ভালোভাবে অধ্যয়ন করা হয়, তবে সেখানেও উভয় দলে একই রসদ সরবরাহকারীর উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যাবে।

দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চালিয়ে যাওয়ার দরুন উক্ত শতাব্দীতে পুরো ফ্রান্সজুড়ে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে। প্যারিস শহরের নগরপাল ইহুদিদের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছিল, যেন এই দুর্ভিক্ষ থেকে তাদের রক্ষা করা হয়। সেখানকার সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করত, একমাত্র ইহুদিদের পক্ষেই এই মহামারি সময়ে খাদ্যাভাব মেটানো সম্ভব। একইভাবে, ১৭২০ সালে ড্রেসডেন শহরে দুর্ভিক্ষ শুরু হলে Jonas Meyer প্ৰায় ৪০ হাজার বুসেল সমপরিমাণ খাদ্যশস্য সরবরাহ করে শহরটিকে রক্ষা করে। ( ১ বুসেল = ১৫.৪২ কেজি প্ৰায়।)’

জার্মানির ইতিহাস খুব ভালো করে অধ্যয়ন করলে সেখানেও অনেক ইহুদির পরিচয় পাওয়া যাবে, যারা বিভিন্ন সময়ে একচেটিয়াভাবে সেখানকার সামরিক বাহিনীতে রসদ সরবরাহের কাজ করত। যেমন : ১৫৩৭ সালে হেলবারস্টেড শহরের জার্মান সেনা ক্যাম্পে এই কাজের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন Isace Meyer। খাদ্য- অস্ত্রসহ শত্রু পক্ষের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি সেখানকার সেনা অফিসারদের নিকট সরবরাহ করতেন।

এরপর আসে Joselman von Rosheim-এর নাম, যিনি জার্মান সরকারকে খাদ্য, অস্ত্র ও তথ্য রসদের পাশাপাশি অর্থ ঋণ দিয়ে সাহায্য করতেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫৫৮ সালে তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

১৫৫৬ সালে বোহেমিয়ান প্রদেশের ইহুদিরা স্থানীয় সেনা-ক্যাম্পগুলোতে সামরিক পোশাক ও কম্বল সরবরাহের বিষয়টি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করত। ষোড়শ শতাব্দীতে Lazarus নামে আরও এক বিখ্যাত বোহেমিয়ান ইহুদির নাম শোনা যায়, যে নিজ দায়িত্বে শত্রুপক্ষের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জার্মান সেনাবাহিনীর নিকট সরবরাহ করত। এর দরুন তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, যা কাজে লাগিয়ে সেও রসদ সরবরাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে।

সেক্সনি রাজ্যে এই কাজটি করত Samuel Julius। তা ছাড়া বিভিন্ন যুদ্ধে কামান ও গান পাউডার সরবরাহের কাজ করত Leimann Gompertz ও Solomon Elias ।

অস্ট্রিয়ার সামরিক বাহিনীতেও প্রধান রসদ সরবরাহকারী হিসেবে এমন অসংখ্য ইহুদির পরিচয় খুঁজে পাওয়া যাবে। রাজা Leopold-এর শাসনামলে ইহুদিরা ভিয়েনাতে আশ্ৰয় গ্রহণ করে এবং রাতারাতি সেখানকার সামরিক বাহিনীতে রসদ সরবরাহের কাজটি নিজেদের করে নেয়। এমন কিছু বিখ্যাত ইহুদির নাম হলো – Oppenheimers, Wertheimers Mayer Herschel ।

মধ্যযুগীয় যুদ্ধ থেকে শুরু করে আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত পৃথিবীতে যতগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে এমন একটি উদাহরণও খুঁজে পাওয়া যাবে না—যেখানে বিশেষ এই জাতিগোষ্ঠীটির অংশগ্রহণ ছিল না। যুদ্ধে তো বহু রাষ্ট্রই অংশগ্রহণ করে। মিত্ররাষ্ট্রকে বাঁচাতে বহু দেশের সামরিক বাহিনী রণক্ষেত্রে যোগদান করে। তারা সম্মুখ সমরে নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করে এবং দেশ ও জাতীয়তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে নিজেদের সবটুকু উজার করে দেয়। কিন্তু ইহুদিদের ক্ষেত্রে এই প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ঠিকই, তবে রণক্ষেত্রে নয়। তারা প্রতিটি যুদ্ধকে অর্থ উপার্জনের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। উপরন্তু অর্থের প্রতি নিজেদের লোলুপ বাসনা চরিতার্থ করতে ইহুদিরা বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পারস্পরিক যুদ্ধে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। স্বাধীনতাপরবর্তী আমেরিকায় যে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তাতেও ছিল ইহুদিদের বর্ণণাতীত কূটবুদ্ধি ও ষড়যন্ত্রের দৌরাত্ম্য।

বহু শতাব্দী পূর্বে, ইউরোপজুড়ে যে রক্তক্ষয়ী ধর্মীয় সংঘাতের সূত্রপাত, তার পরিসমাপ্তি আজও ঘটেনি। রক্তের সমুদ্র শুকিয়ে তাতে নতুন রক্ত ঝরেছে, কিন্তু পরিবর্তন আসেনি সাধারণ মানুষের জীবন প্রবাহে। পরিবর্তন এসেছে শুধু ইহুদিদের সম্পদ ও প্রাচুর্যতায়। কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের রিপোর্টগুলো ভালোভাবে অনুসন্ধান করলে এমন অনেক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যাবে, যেখানে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীতে রসদ সরবরাহ করে ইহুদিরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। তেলের ড্রাম, কম্বল, রাইফেল, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি খুব পরিচিত কিছু রসদের নাম, যা তারা নিয়মিত সরবরাহ করত। ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের সাথে আমেরিকানদের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলেছিল, সেখানেও ছিল এই রসদ ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য অধিপত্য।

এ প্রসঙ্গে প্রথমে যে ব্যক্তির নাম চলে আসে, তিনি হলেন Moses Franks। একসময় তিনি ইংল্যান্ডে থাকতেন এবং ব্রিটিশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুর আগ পর্যন্ত তিনি আমেরিকায় অবস্থিত ব্রিটিশ সেনা- ক্যাম্পগুলোতে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের সিংহভাগ আঞ্জাম দিতেন। তা ছাড়া কুইবেক, মন্ট্রেল, মেসাচ্যুসেট, নিউইয়র্ক ও ইলয়নসের ক্যাম্পগুলোতে তিনি ছিলেন প্রধান রসদ সরবরাহকারী।

Jacob Franks তখন নিউইয়র্কে বাস করতেন। মূলত Moses Franks-এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে তার আমেরিকায় আগমন। তিনিও ব্রিটিশ সেনা-ক্যাম্পগুলোতে রসদ সরবরাহের কাজ করতেন। বলে রাখা উচিত, স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর পূর্ব হতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাথে ফ্রাঙ্ক পরিবারের ছিল বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাই এই যুদ্ধের প্রারম্ভিক পর্যায়ে তারা ব্রিটিশ সেনা-ক্যাম্পগুলোতে রসদ সরবরাহ করত। যেহেতু ইহুদিরা কখনো এক পাত্রে সব ডিম রাখতে রাজি নয়, তাই কিছুদিন পর যুদ্ধের মোড় ঘুরে যেতে শুরু করলে তাদেরই আরেকটি অংশ আমেরিকানদের জন্য রসদ সরবরাহ করতে শুরু করে।

David Franks হলেন তাদের একজন। তিনি ছিলেন Jacob Franks-এর পুত্র। শুরুর দিকে তিনি পেনসিলভানিয়ার ব্রিটিশ সেনা-ক্যাম্পগুলোতে রসদ সরবরাহের কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে আমেরিকার সেনাবাহিনীতে অর্থ ও রসদ সরবরাহের কাজ শুরু করেন। অসম্ভব ধনী হওয়ার দরুন তিনি আমেরিকার রাজনীতি ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন। এই স্বাধীনতাযুদ্ধে মহান যে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে উচ্চারিত হয়, তাদের অনেকেই ছিল বিশেষ এই ব্যক্তির শাগরেদ।

মন্ট্রেল শহরে এই পরিবারের এমন আরেকজন সদস্যের নাম জানা যায়, যিনি আমেরিকানদের পক্ষে রসদ সরবরাহ করেতন, তিনি হলেন – David Solesbury Franks। তিনি ছিলেন Moses Franks-এর পৌত্র। রসদ বাণিজ্যে তিনি এতটা দক্ষ ছিলেন যে, কীভাবে সামরিক শক্তিতে দুর্বল একটি জাতির ভাগ্য রাতারাতি পালটে দেওয়া যায়, তা তিনি ভালো করে জানতেন। এজন্য তাকে একটি উপাধি দেওয়া হয় ‘A Blooded Buck’ ।

এ ছাড়াও ফ্রাঙ্কস পরিবারের আরও অনেক সদস্যের নাম এই স্বাধীনতাযুদ্ধে জাড়িয়ে আছে, যা উল্লেখ করে এই আলোচনা দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছি না। পরবর্তী সময়ে আমেরিকা হয়ে উঠে ইহুদিদের আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্য বিস্তারের দুর্গক্ষেত্র। তবে Bernard M. Baruch প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক শক্তিতে পরিপূর্ণ আমেরিকান সেনাবাহিনী গঠনের মধ্য দিয়ে এই দুর্গের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সেই থেকে এই বাহিনী কেবল ইহুদিদেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে পথে কাজ করে যাচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *