তিন
শেষ রাতে বৃষ্টি নামল। সচরাচর এই সময় বৃষ্টি হয় না। বনবিহারী গভীর ঘুমে তলিয়ে ছিলেন। ভেতরের দরজায় শব্দ যখন জোরালো হল তখন চেতনায় ফিরলেন। শোঁ-শোঁ আওয়াজ আর বৃষ্টির শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড়, সেই সঙ্গে দরজায় কেউ ধাক্কা দিচ্ছে বুঝতে পারলেন।
আলো জ্বেলে দরজা খুলতেই কালীচরণ হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে ছুটে গেল জানলা বন্ধ করতে। ঘরের ওদিকটায় তখন জল থই-থই করছে।
লজ্জিত গলায় বনবিহারী বললেন, ‘বৃষ্টি কখন এল! বুঝতে পারিনি।’
জানলা বন্ধ করে কালীচরণ বলল, ‘ঘরে ঢেউ খেলছে। থাক। কাল সকালে মুছব। দিনরাত খাটলে মানুষ মড়ার মতো ঘুমোবেই। কাকে দোষ দেব!’
আলো নেভাল কালীচরণ, ‘সকাল হতে ঢের বাকি। এখনও অনেক সময় ঘুমোনো যাবে।’ দরজা ভেজিয়ে সে চলে গেল।
কিন্তু ঘুম এল না বনবিহারীর। বাইরে তুমুল বৃষ্টি পড়ছে। হঠাৎ তাঁর মনে হল এরকম বৃষ্টি যদি দুদিন আগে পড়ত তাহলে জঙ্গলের মধ্যে ওরা কি করত? যে ভাঙা ঘরে মেয়েটি শুয়ে কাতরাচ্ছিল সেটা নিশ্চয়ই ভেসে গেছে এতক্ষণে, তখনও যেত। নির্ঘাত অসুখে পড়ে যেত মেয়েটি। ছেলেগুলোও ভিজে একসা হয়ে যেত। মাথার ওপর যত বড় গাছই থাকুক না কেন এই জল তারা আড়াল করতে পারত না।
কিন্তু কেন? যেচে এত কষ্ট কেন ওরা করতে যায়?
খবরের কাগজে এদের কথা প্রায়ই লেখা হয়। গোটা দেশ জুড়ে পুলিশের সঙ্গে এদের সংঘর্ষ চলছে। শুধু ছেলেরাই নয় মেয়েরাও নাকি দেশে বিপ্লব করতে চায়। তারা এই দেশের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক চেহারা বদলে দিতে বদ্ধপরিকর। মেদিনীপুরের কোনও কোনও এলাকা দখল করে নিয়েছিল ওরা। কিন্তু বেশিদিন সেটা সম্ভব হয়নি। সংগঠিত পুলিশবাহিনীর সঙ্গে সাধারণ অস্ত্র নিয়ে যে যুদ্ধ করে জেতা যায় না তা কি ওরা জানত না? পড়াশুনা করা ভালো ছেলেরা যে বাস্তববুদ্ধিহীন তা ভাবতে অসুবিধে হয়।
বাস্তববুদ্ধি কি শম্ভুর আছে? কথাবার্তা না বলে হুট করে হাসপাতালের খাতায় বাচ্চার মামা বলে নিজের নাম বসিয়ে দিল? হ্যাঁ, এতে আপাতত ঝামেলা থেকে বাঁচা গেল। কিন্তু তারপরে? বাচ্চার মা কথা বলতে না পারলেও ওর মন কি শম্ভুকে বাচ্চার মামা বলে মেনে নেবে? ওর মুখ, পোশাক দেখে বোঝা যায় বিত্তহীন পরিবারের মেয়ে নয় এবং শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। হয়তো পুলিশ যাদের গুলি করে মেরেছে তাদের একজনের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। এই মেয়ে কিছুতেই শম্ভুর মতো ড্রাইভারকে ভাই হিসেবে মেনে নেওয়ার অভিনয় করবে না।
একটু বেলা বাড়ল কিন্তু রোদ ওঠা দূরের কথা, বৃষ্টি পড়ে চলেছে সমানে। আর একটু অপেক্ষা করে ছাতি নিয়েই বেরুতে হবে। যে ছেলেটি তাঁর চেম্বার খুলে পরিষ্কার করে যায় সে দরজা হাট করে খুলে রাখবে। বৃষ্টি মাথায় করেও তো কিছু পেশেন্ট হাজির হয়ে যাবে।
জলখাবার এনেছিল কালীচরণ। ‘আজ আর রুগি দেখতে যাওয়ার দরকার নেই। কোনও পাগলও এই বৃষ্টিতে বাইরে পা বাড়াবে না।’
‘একবার যাওয়া তো দরকার।’
‘না। তেমন গরজ পড়লে লোকে বাড়িতে এসে দেখিয়ে যাবে। অনেকদিন বাড়িতে খিচুরি খাননি, আজ খাবেন?’ কালীচরণ জিজ্ঞাসা করল।
ঠিক তখনই একটা গাড়ি ধীরে ধীরে বনবিহারীর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। বারান্দায় বেরিয়ে এলেন বনবিহারী। গাড়ির দরজা খুলে ছাতি মাথায় বেরিয়ে এল শম্ভু, ‘নমস্কার ডাক্তারবাবু।’
‘কি খবর শম্ভু?’ দেখে অস্বস্তি হল বনবিহারীর।
‘বাবু আপনার সঙ্গে দেখা করতে বললেন।’ শম্ভু মুখ নামাল।
বনবিহারী কথা না বলে আড়চোখে কালীচরণের দিকে তাকালেন। প্রচণ্ড কৌতূহল নিয়ে সে কান খাড়া করে রয়েছে।
বনবিহারী বললেন, ‘কালী, শম্ভুকে এক কাপ চা এনে দাও।’
‘না না। চা খাব না।’ শম্ভু মাথা নাড়ল।
‘তা কি হয়! সকালে এসেছ, তার ওপর বৃষ্টি পড়ছে। যাও কালী।’
বনবিহারী বুঝলেন কালীচরণ বাধ্য হল ভেতরে যেতে।
শম্ভু যেন স্বস্তি পেল, ‘ফোন এসেছিল। বাবু ধরেছিলেন।’
‘কোত্থেকে?’
‘হাসপাতাল থেকে।’
‘নাম্বার পেল কি করে?’
‘আমিই দিয়েছিলাম। বলছে মা আর বাচ্চা ভালো আছে। আজ ছেড়ে দেবে। নিয়ে আসতে বলেছে। বাবু আপনার কাছে পাঠালেন।’ শম্ভু মুখ নামাল।
‘কি ঝামেলায় পড়লে বলো তো!’
‘কি করব? নইলে আপনাকে পুলিশ—! কথা শেষ করল না শম্ভু।
‘তা নিয়ে এসে কোথায় তুলবে?’
‘বাবু বললেন আপনার সঙ্গে পরামর্শ করতে।
বনবিহারী ভেতরে চলে গেলেন। বলরাম পাল যে তাঁকেই দায়িত্ব নিতে বলবেন এতে কোনও অবাক হওয়ার ব্যাপার নেই। তিনিই তো শেষ রাতে ওঁর ঘুম ভাঙিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ আকাশ ফুঁড়ে যদি মা আর সদ্যজাত শিশুকে এখানে আনা হয় তাহলে তো লোক কৌতূহলী হবেই। আর জায়গা বলতে এই বাড়ি। এক্ষেত্রে কালীচরণকে আগে সব বলা দরকার। হঠাৎ মন বদলালেন বনবিহারী। যা হওয়ার হোক, থানায় গিয়ে সব বলবেন তিনি। ডাক্তার হিসেবে কোনও অন্যায় করেননি যখন তখন তাঁর বিবেক পরিস্কার। মেয়েটিকে হাসপাতালে ভরতি করিয়ে বাচ্চা হওয়ার পর গঞ্জে ফিরে এসে জানতে পারেন সে উগ্রপন্থীদের সঙ্গে ছিল। জানার পর থানায় এসেছেন, পুলিশ এখন যা করার তা করুক।
গাড়িতে উঠে বনবিহারী শম্ভুকে বললেন, ‘থানায় চলো।’
‘থানা? কেন?’
‘আমি সব কথা পুলিশকে বলতে চাই।’
‘কিন্তু।’
‘আর কোনও কিন্তু নয় শম্ভু।’
‘আমার কি হবে?’ ঠোঁট কামড়াল শম্ভু।
‘তোমার আবার কি হবে? হলে আমার হবে।’
‘হাসপাতালের খাতায় অভিভাবকের নামের জায়গায় আমার নাম লেখা হয়ে গেছে। পুলিশ নিশ্চয়ই মিথ্যাটা ধরে ফেলবে। ব্যস, আমাকেও জেলে ঢোকাবে তখন। আমার কথা একটু ভাবুন।’ ভেঙে পড়ল শম্ভু।
কথাটা ঠিক এটা তাঁর মাথায় আসেনি। তাঁকে চিন্তা করতে দেখে শম্ভু গাড়ি চালু করল। বৃষ্টি পড়ছে সামনে। সদরের রাস্তা ধরল শম্ভু।
সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বনবিহারী জানেন, মিথ্যে কখনও গোপনে রাখা যাবে না। সেটা একদিন না একদিন ঠিক প্রকাশ পাবেই। সেদিন তিনি কি জবাব দেবেন? আবার এটাও ঠিক মেয়েটিকে বাঁচাতে হাসপাতালে ভরতি করার সময়ে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাকে সামাল দিতে শম্ভু আগ বাড়িয়ে যে কাজটা করেছিল তা না করলে তাঁকে পুলিশ ছেড়ে কথা বলত না।
ক্রমশ রাস্তাটা শেষ করে তিস্তা ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি শহরে ঢুকল। এখন বৃষ্টি একটু ধরলেও আকাশে মেঘ থম ধরে আছে। গাড়ি হাসপাতালের সামনে থামলে শম্ভু বলল, ‘যা বলার তা আপনি বললে ভালো হয়। আমি কি বলতে কি বলে ফেলব।’
‘ঠিক আছে। চলো।’
ভরতি করার দিন যে লোকটি ছিল তাকে আজও দেখা গেল। লোকটি অনুযোগ করল। কেন ভরতি করার পর পেশেন্টকে দেখতে কেউ আসেনি।
শম্ভুই আগ বাড়িয়ে বলল যে দূরত্ব এত যে রোজ না এসে একদিন অন্তর আসবে বলে ভেবেছিল। তাকে দিয়ে সইসাবুদ করিয়ে টাকাপয়সা জমা নিয়ে রিলিজ অর্ডার দিয়ে দিল লোকটা। এখানে-ওখানে ঘুরে। তারপর বলল, ‘ছেলেকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন, মিষ্টি খেতে দিয়ে যান কিছু।’
জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ছেলেটি যে টাকা দিয়েছিল তার অবশিষ্টাংশ শম্ভুর হাতে দিয়ে বনবিহারী মেটারনিটি ওয়ার্ডে চলে এলেন। আজকে নতুন নার্স। কাগজপত্র দেখে বলল, ‘আপনি বাইরে অপেক্ষা করুন। নিয়ে আসছি।’
হেঁটে আসতে পারবে?’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। এখন একদম নর্মাল। ও হ্যাঁ, আপনারা বেবির যাবতীয় জিনিস নিশ্চয়ই কিনে রেখেছেন, শুনেছি বাইরে থাকেন। তাই জিজ্ঞাসা করছি।’ নার্স বলল।
‘না তো। কি কি জিনিস?’
‘প্রথমেই অয়েল ক্লথ। বেবির বিছানা।’ হাসল মেয়েটি, দোকানে গেলেই ওরা সব গুছিয়ে দিয়ে দেবে।’
‘তাহলেন ওগুলো কিনে এনে ওকে নিয়ে যাব?’
‘সঙ্গে কি গাড়ি আছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাহলে যাওয়ার পথে কিনে নেবেন।’ চলে গেল সে ভেতরে।
একটু পরেই নার্সটি ফিরে এল তোয়ালেতে জড়ানো শিশুকে কোলে নিয়ে। পেছনে মেয়েটি। এরকম অভিনব পোশাকে কোনও মাকে দ্যাখেননি বনবিহারী। ওর পরনে সেই জঙ্গলে থাকার পোশাক যা ওকে কিছুতেই মা মা চেহারা দিচ্ছে না।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেমন আছ?’
মেয়েটি অবাক হয়ে একটু তাকিয়ে আলতো হেসে মাথা নাড়ল।
‘আপনি নিন।’ নার্স বনবিহারীর হাতে শিশুকে তুলে দিল।
বনবিহারী দেখলেন। একমাথা পশমের মতো চুল। লালচে মুখ, চোখ বন্ধ। একটু পা নাড়ল ঘুমের ঘোরে। সঙ্গে সঙ্গে শিহরিত হলেন বনবিহারী। এ এক অনির্বচনীয় স্পর্শ যা তিনি জীবনে কখনও পাননি।
সন্তর্পণে শিশুকে কোলে নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলেন শম্ভু গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। বনবিহারী মেয়েটিকে ইশারা করলেন পেছনের সিটে উঠে বসতে। মেয়েটি উঠলে শিশুকে তার কোলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে শম্ভুর পাশে উঠে বসলেন। ‘একটা বাচ্চাদের জিনিসপত্রের দোকানে চলো। বাচ্চার জন্যে কয়েকটা জিনিস কিনতে হবে। ওর মায়ের জন্যেওই দুটো পোশাক দরকার।’
বনবিহারীর সঙ্গে যা ছিল তাতে শিশুর মিটে গেলেও মায়ের জন্যে পোশাক কেনা সম্ভব হচ্ছিল না। শম্ভু পরামর্শ দিল, ‘ডাক্তারবাবু, শাড়ি না কিনে সালোয়ার কামিজ নিন, বোধহয় সস্তা হবে। ওই মেয়েটা শাড়ি পরতে পারে কিনা কে জানে।’
বাহান্ন টাকা কম পড়েছে দুটো সালোয়ার কামিজ কেনার পর, অতএব একটা বাদ দিতে হয়। কিন্তু দোকানদার বললেন, ‘সঙ্কোচ করবেন না। নিয়ে যান। পরে দাম পাঠিয়ে দেবেন।’
বনবিহারী অস্বস্তিতে পড়লেন, ‘তা কি করে হয়। আপনি আমাকে চেনেন না। টাকাটা যদি না দিই তাহলে আপনার ক্ষতি হয়ে যাবে।’
‘এই যে আমার ক্ষতির কথা ভাবছেন, এটাই আপনার পরিচয়।’ দোকানদার হাসলেন, ‘আপনি অনুগ্রহ করে নিয়ে যান ডাক্তারবাবু।’
‘আপনি আমাকে চেনেন?’ বনবিহারী অবাক হলেন।
‘আমার এক আত্মীয় আপনাদের ওখানে থাকেন। দু-একবার গিয়েছি।’
‘ঠিক আছে। আমি শিগগির টাকাটা পাঠিয়ে দেব।’
‘তাড়া নেই কিছু।’
গাড়িতে বসেছিল মেয়েটি। এখন শিশু তার কোলে নেই। পাশের সিটে তোয়ালে মোড়া। শিশুটি শুয়ে আছে। জিনিসপত্রগুলো ডিকিতে রেখে কাপড় চোপড়ের প্যাকেট মেয়েটির হাতে তুলে দিয়ে শম্ভুর পাশে উঠে বসলেন বনবিহারী। শম্ভু গাড়ি চালাল।
তিস্তা ব্রিজ পার হওয়ার পর বনবিহারী ঘুরে বসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার কি কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে?’
মেয়েটি একটু ভেবে মাথা নাড়ল, না।
‘দেখো, তোমার নাম আমরা জানি না। হাসপাতালে একটা নাম দরকার হয় বলে দেওয়া হয়েছে। তুমি নিশ্চয়ই লেখাপড়া করেছ। নামটা লিখে দাও।’ পকেট থেকে একটা কাগজ আর কলম। বের করে এগিয়ে ধরলেন বনবিহারী।
একটু ইতস্তত করে মেয়েটি সে দুটো নিল। একটু ভাবল তারপর লিখে ফেরত দিল। সাগ্রহে কাগজটার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন বনবিহারী, ‘এটা তো আমাদের দেওয়া নাম। তোমার আসল নাম কি? কুন্তী নামটা আমারই দিয়েছি।’
মেয়েটি উত্তর না দিয়ে বাইরে তাকাল।
আবার সোজা হয়ে বসলেন বনবিহারী। মেয়েটি নিজের পরিচয় গুপ্ত রাখতে চায়। ও যাদের সঙ্গে ছিল তারাই হয়তো ওকে এই শিক্ষা দিয়েছে। ওর কাছে অজানা মানুষ মানেই বিপদের কারণ হওয়া স্বাভাবিক। হঠাৎ তাঁর মনে হল নিজের সন্তান সম্পর্কেও নির্মোহ হতে পারে। একটু সুস্থ হলেই যে সন্তানকে ত্যাগ করে চলে যাবে না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। যে জীবন ও যাপন করছিল সেখানে সন্তান গর্ভে আসা একটা দুর্ঘটনা ছাড়া কিছু নয়। জন্ম দেওয়ার পর তার মায়া কাটানো ওর পক্ষে হয়তো সম্ভব। তিনি আবার ঘুরে বসলেন, ‘শোনো। তোমাকে হাসপাতালে ভরতি না করলে তুমি মারা যেতে। তোমার সঙ্গীরা আমাকে অনুরোধ করেছিল হাসপাতালে ভরতি করতে। সমস্যা হল, হাসপাতালের নিয়মকানুন না মেনে ভরতি করা যায় না। ওরা নাম-ঠিকানা চায়। প্রসবের ব্যাপার হলে স্বামীর নাম জানতে চায়। তোমার তখন কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা যা মনে এসেছিল তাই বলে নিয়মের ঝামেলা এড়াতে পেরেছি। এই ছেলেটি যে আমাদের গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে আমি একজন সাধারণ ড্রাইভার বলেই এতকাল মনে করতাম। কিন্তু সে তার বিরাট মনের পরিচয় দিয়ে হাসপাতালের খাতায় নিজেকে তোমার ভাই বলে পরিচয় দিয়েছে। ওর কাছে তোমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।’
মেয়েটি শম্ভুর দিকে একবার তাকিয়ে ঠোঁট মোচড়াল। শম্ভু সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল, তার চোখে পড়ল না। এখন বৃষ্টি হচ্ছে না কিন্তু যে-কোনও মুহূর্তে নেমে আসতে পারে। বনবিহারী বললেন, ‘ওকে ওভাবে শুইয়ে রেখো না। কোলে তুলে নাও। এইসময় শিশু উত্তাপ চায়।’
মেয়েটি শিশুর দিকে তাকাল। তারপর অদ্ভুত শব্দ করে উঠে নীচের তোয়ালে দেখাল। বনবিহারী বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি হয়েছে?’
কিছু বলতে চাইছে মেয়েটি কিন্তু গোঙানি ছাড়া কোনও শব্দ পরিষ্কার হচ্ছে না।
বনবিহারী শম্ভুকে বললেন, গাড়িটাকে দাঁড় করাতে। তারপর দরজা খুলে নীচে নেমে পেছনের দরজা খুললেন। শিশু অসাড়ে ঘুমোচ্ছে। ওপরের তোয়ালে সরিয়ে নীচেরটায় হাত দিতে বুঝলেন সেটা ভিজে রয়েছে। মেয়েটা নিজের প্যান্ট দেখাল। সেখানেও শিশুর প্রসাবের দাগ রয়েছে। সদ্য কেনা তোয়ালে না কেচে ব্যবহার করার বিরোধী বনবিহারী। নীচের তোয়ালের যে অংশ ভিজে গিয়েছিল সেই অংশ বাইরে রেখে শুকনো অংশে শিশুটিকে শুইয়ে তোয়ালে চাপা দিলেন তিনি। তারপর নিজেই পেছনের সিটে উঠে বসে ওকে কোলে তুলে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা হাসল। যেন স্বস্তি পেল।
শম্ভু গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, ‘মা হওয়া কি মুখের কথা!’
বনবিহারী ধ্মক দিলেন, ‘থামো তো! এগুলো মা-মাসিরা সামলায়। ওকে দোষ দিচ্ছ কেন? ওর কোনও অভিজ্ঞতা আছে?’
ক্রমশ গঞ্জ এসে গেল। শম্ভু জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনার বাড়িতে যাব তো?
‘এছাড়া অন্য কোনও জায়গায় কথা মনে করতে পারছ?’
‘না—মানে—!’
‘তাহলে জিজ্ঞাসা করছ কেন?’
খানিক বাদেই শম্ভু বনবিহারীর বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে নীচে নামল। গাড়ির আওয়াজে দরজা খুলে বেরিয়ে এল কালীচরণ। শম্ভু পেছনের দরজা খুলে দিতে শিশুকে কোলে নিয়ে বনবিহারী নীচে নেমেই কালীচরণের বিস্মিত মুখ দেখতে পেয়ে ধমকে উঠলেন, ‘হাঁ করে দেখছ কি? তাড়াতাড়ি আমার পাশের ঘরের খাটে একটা বিছানা তৈরি করো। আর হ্যাঁ, ডিকিতে এর বিছানাপত্র আছে। এগুলো ওই বিছানার ওপর অয়েল ক্লথ পেতে সাজিয়ে দাও। তোয়ালে চাদর দেওয়ার দরকার নেই। ওগুলো ফুটিয়ে নিতে হবে আগে। তুমি আমার কাচা তোয়ালে দুটো বের করে বিছানায় দিয়ে দাও।’
কালীচরণ ঢোঁক গিলল, ‘এটি কে?’
‘এখনও নামকরণ হয়নি। সবে জন্মেছে তো।’ তারপর গাড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই যে, নেমে এসো। এসে আমাকে ধন্য করো।’
ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে এল মেয়েটি।
বনবিহারী বললেন, ‘ওর নাম কুন্তী। এর মা।’
কালীচরণ অদ্ভুত চোখে কুন্তীকে দেখে দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। বনবিহারী বললেন, ‘দেখলে! বললাম জিনিসপত্রগুলো নামাতে!’
‘আপনি ভেতরে যান। আমি দিয়ে আসছি।’ শম্ভু বলল।
বনবিহারী কুন্তীকে বললেন, ‘এসো। এটা আমার বাড়ি।’
ওরা বারান্দায় উঠতেই শাঁখের আওয়াজ কানে এল। এই ভর দুপুরে শাঁথ বাজছে বাড়িতে। মায়ের আমলের ঠাকুরের আসন এখনও বাড়িতে আছে বটে, কালীচরণ তার সামনে জল-বাতাসা দেয়। কিন্তু কখনও শাঁখ বাজায় বলে বনবিহারীর জানা নেই।
শাঁখের শব্দ থামল। বনবিহারী ভেতরে যাবেন বলে পা বাড়াচ্ছিলেন, শম্ভু জিনিসপত্র ঘরে রেখে বলল, ‘আমি তাহলে চলি। বাবুকে নিয়ে ফালাকটায় যেতে হবে।’
‘তুমি চলে যাবে?’ বনবিহারী হঠাৎ অসহায় বোধ করলেন।
‘আমার কি এখানে কোনও কাজ আছে?’ শম্ভু জিজ্ঞাসা করল।
‘একটা দায়িত্ব তো নিয়েছ।’
‘সেটা তো সত্যি নয়। না নিলে মুশকিল হত, তাই!’ শম্ভু যোগ করল, ‘যদি বলেন, ডিউটি শেষ করে একবার খবর নিয়ে যাব।’
মাথা নাড়লেন বনবিহারী। শম্ভু বেরিয়ে গেল। গাড়ির আওয়াজও মিলিয়ে গেল। কালীচরণ এবার ভেতরের দরজায়, ‘আসুন, নিয়ে আসুন।’
‘তুমি শাঁখ বাজাচ্ছিলে?’
‘হ্যাঁ। জন্মেই নতুন মানুষ ঘরে এলে শাঁখ বাজিয়ে পাপ দূর করতে হয়।’
‘এ বাড়িতে পাপ ছিল?’
‘আমিই তো আস্ত পাপ। নইলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে পড়ে থাকি!’
‘বড্ড বাজে বকো তুমি।’ বনবিহারী এগোলেন। এবং তখনই এঃ এঃ বলে দাঁড়িয়ে পড়লেন। কালীচরণ জিজ্ঞাসা করল, ‘কি হল?’
‘পাঞ্জাবি ভিজিয়ে দিয়েছে আমার। এ ব্যাটার পেটে এত জল জমে কি করে? একটু আগে গাড়িতে তোয়ালে ভিজিয়েছিল। ধরো তো একে।’ কালীচরণকে বললেন বনবিহারী।
‘উরে ব্বাবা! আমি পারব না। আমার হাতে পড়লে হাড় ভেঙে যাবে ওর নয়তো মাটিতে পড়ে আছাড় খাবে।’ এক পা পিছিয়ে গেল কালীচরণ।
কুন্তীর দিকে তাকালেন বনবিহারী। সে তখন দেওয়ালে টাঙানো নেতাজীর ছবির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এদিকে কি হচ্ছে তা জানার আগ্রহই নেই।
অয়েল ক্লথ বের করে তার ওপর তোয়ালে চাপিয়ে সুন্দর করে বিছানা করে দিল কালীচরণ। সিক্ত অবস্থায় শিশুকে নিয়ে দাঁড়ানো বনবিহারী বললেন, ‘আঃ, ওপাশের দেওয়াল ঘেঁষে বিছানা কর, নইলে খাট থেকে নীচে পড়ে যাবে।’
‘আগে নড়াচড়া করুক, হামা দিতে শিখুক তারপর তো খাটের ধারে আসবে। আপনি তো কোনওদিন বাচ্চা মানুষ করেননি। দিন, শুইয়ে দিন।’ কালীচরণ সরে দাঁড়াল।
সন্তর্পণে শিশুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার শরীরের ওপর একটা মোটা চাদর টেনে দিয়ে বনবিহারী বললেন, ‘ওসব কিছু করিনি ঠিকই কিন্তু কিরকম শুইয়ে দিলাম দেখলে, ওর একটুও লাগল না। চোখ পিট-পিট করছে। খুব ভালো ছেলে। কান্নাকাটি নেই।’
বলামাত্র শিশু মুখ ঘোরাল। হাঁ করল। তারপরেই কেঁদে উঠল।
বনবিহারী বললেন, ‘বাঃ। ও দেখছি আমার কথা শুনেই কাঁদছে?’
‘আজ্ঞে না। বেচারার খিদে পেয়েছে।’
‘খিদে? কি খেতে দেব? ও হ্যাঁ, দুধ! ল্যাক্টোজেন কিনেছি। তাই পাতলা করে গুলে দিতে হবে। কিন্তু তার আগে ফিডিং বটল, নিপল ভালো করে গরম জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। তাড়াতাড়ি করো, আহা বেচারা।’ ঝুঁকে পড়লেন বনবিহারী, বাচ্চার পেটের ওপরের চাদরে আলতো হাত রেখে বললেন, ‘কেঁদো না, কেঁদো না।’ অনুভবে স্পর্শ পেয়ে শিশু কান্না থামিয়ে ঠোঁট চাটতে লাগল।
‘আপনি উঠুন। ঘরের বাইরে চলুন।’ কালীচরণ শক্ত গলায় বলল।
‘তুমি যাও। ওগুলো জলদি ফুটিয়ে আনো।’
‘আঃ। আপনার মাথায় কি কিছু ঢোকে না? এই সময় মায়ের বুকের দুধ ওদের একমাত্র খাদ্য তা ভুলে গেলেন?’ কালীচরণ খিঁচিয়ে উঠল।
প্রায় ছিটকে খাট থেকে নেমে গেলেন বনবিহারী, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো। ও কোথায়? ওকে ডাকো, তাড়াতাড়ি।’
কালীচরণ পাশের ঘরে গিয়ে দেখল কুন্তী তখনও ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে বলল, ‘ও ঘরে যাও মা, ডাক্তারবাবু ডাকছেন।’
কুন্তীর কপালে ভাঁজ পড়ল। সে নড়ল না।
‘বাচ্চাটা তোমার অথচ তুমি বুঝতে পারছ না ও অনেকক্ষণ না খেয়ে আছে? এখন ওদের ঘনঘন খিদে পাবে। যেটুকু খাওয়ার তা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বে। এসো’ কালীচরণ বিড়বিড় করল, ‘এই পোশাকের মা আমি জীবনে দেখিনি।’
ওকে অনুসরণ করে কুন্তী পাশের ঘরে ঢুকল।
কালীচরণ জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি জামাকাপড় ছাড়বে?’
বনবিহারী বললেন, ‘কালী, ও কথা বলতে পারে না।’
‘অ্যাঁ। সে কি!’ কালীচরণ আঁতকে উঠল।
‘তবে বুঝতে পারে। ওর নাম কুন্তী।’
‘তাহলে কি হবে?’
‘আমি এ ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। যা বোঝাবার তুমি ওকে বুঝিয়ে দাও। ও আমাদের মেয়ের চেয়েও ছোট।’ বনবিহারী বেরিয়ে গেলেন।
এইসময় আবার বৃষ্টি নামল। তেড়ে। বসার ঘরের চেয়ারে বসে বনবিহারীর খেয়াল হল চেম্বারে যাওয়া হয়নি। পেশেন্টরা নিশ্চয়ই খুব বিপদে পড়েছে। ছাতা নিয়ে গেলে এখনও দু-একজনের উপকার করা যেতে পারে। কিন্তু তাঁর খুব খিদে পাচ্ছিল। সেই সকাল থেকে ঘুরতে হয়েছে। এখন মধ্য দুপুর।
এইসময় কালীচরণ এল, ‘উটকো ঝামেলাটাকে কি করে পেলেন?’
‘ঝামেলা আবার কি? একটা বাচ্চা বাড়িতে থাকবে, কাঁদবে হাসবে, এই মরা বাড়িটা প্রাণ ফিরে পাবে। আমি আর কতক্ষণ থাকি, দেখবে তোমারই মন ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু তার আগে আমাকে কিছু খেতে দাও। আর হ্যাঁ, ওকেও দিও। ও বেচারা অনেকক্ষণ খায়নি।’ বনবিহারী বললেন।
‘দিচ্ছি। কিন্তু ওদের আনলেন কোত্থেকে?’
‘হাসপাতাল থেকে।’ বনবিহারী বললেন, ‘সেই যে মাঝরাতে কয়েকটা ছেলে আমাকে সাইকেলে বসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পেশেন্ট দেখতে, গিয়ে দেখেছিলাম যাকে এই সেই মেয়ে। আমিই ওকে হাসপাতালে ভরতি করিয়ে দিয়েছিলাম। এখানকার কোনও ধাই যদি ডেলিভারি করাতে চাইত তাহলে দুটোই মারা যেত। কিন্তু তুমি এখন এসব নিয়ে কোনও কথা বলবে না।’
কালীচরণ আর দাঁড়াল না। কিন্তু একটু বাদেই ফিরে এসে বনবিহারীর শরীরে জলের ছিটে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। বনবিহারী বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এসব কি? অ্যাঁ?’
‘হাসপাতাল আর শ্মশান থেকে এলে গায়ে গঙ্গাজল দিতে হয়। এটা আপনার মা আমাকে শিখিয়েছিলেন।’ কালীচরণ চলে গেল।
কালীচরণের বুদ্ধি আছে। এই ভরা বর্ষায় সে খিচুড়ি, আলুভাজা আর ওমলেট বানিয়ে রেখেছিল। তাই খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করে কালীচরণের কাছে জানতে পারলেন যে সে কুন্তীকে একটা সালোয়ার কামিজের সেট বের করে দিয়ে এসেছে। বনবিহারী বললেন, ‘অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। এখন যেন স্নান না করে।’
‘এখন স্নান করবে কি? আগে আঁতুর কাটুক, নাপিত এসে নখ কেটে দিয়ে যাক।’
‘ওকে ব্বাবা! তুমি দেখছি বিস্তর জানো।’ বনবিহারী খাওয়া শেষ করলেন।
‘সবই আপনার মায়ের কাছ থেকে শেখা।’ কালীচরণ বলল, ‘কিন্তু কয়েকটা সমস্যা হয়ে গেল, তার সমাধান কীভাবে হবে?’
‘কীরকম?’
‘পাঁচজনকে কী বলবেন? মেয়েটা কে? ওর বাচ্চার বাপ কোথায়?’
‘হাসপাতালের খাতায় শম্ভু নিজেকে ওর ভাই বলে লিখেছে।’
‘কেন?’
‘নইলে পুলিশ—। বলেই থেমে গেলেন বনবিহারী ‘অনেক ঝামেলা হত।’
‘কিন্তু শম্ভু তো মেয়েটার ভাই নয়। ও অনেক বড় ঘরের মেয়ে।’
‘কি করে বুঝলে?’
‘বোঝা যায়।’
‘তাহলে পাঁচজনকে বলে দিও আমার দূর সম্পর্কের মা-বাপ মরা ভাগ্নী। স্বামী বিদেশে বলে এখানে নিয়ে এসেছি।’
বনবিহারী উঠলেন।
‘বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না।’
‘কেন?’
‘মেয়েটার মাথায় সিঁদুর নেই। বিয়ে হলে থাকত।’
‘হু।’ চিন্তায় পড়লেন বনবিহারী।
‘তাছাড়া ওর নাম কি? আপনি কুন্তী বললেন। কে বলল আপনাকে?’
‘কেউ বলেনি। আমরাই নামটা দিয়েছি।’
‘বাচ্চাটা বড় হলে বাপের নাম জানতে চাইলে কী বলবেন? পানু পাল বলে একজন কেউ ওর বাপ বললে কুন্তী মেনে নেবে?’
‘না নেওয়াই স্বাভাবিক।’
‘তাছাড়া মেয়েটার মা-বাবা নিশ্চয়ই এসব জানে না। আমি বলি কি তাদের খুঁজে বের করে ওকে পাঠিয়ে দিন।’
‘কি করে খুঁজব? ও কথা বলে না। লিখলে সত্যি কথা লিখবে না।’
কালীচরণ মাথা নাড়ল, ‘একটা কথা বলব? মেয়েটা নিজেকে বাচ্চাটার মা বলে যেন ভাবতে পারছে না। বুকের দুধ খাওয়াতে কি বিরক্ত হল। ও তো ওই জঙ্গলে ছেলেদের সঙ্গে ছিল যারা আপনাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাদের সবাইকে তো পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছে। তাহলে যার সঙ্গে ওর সম্পর্ক হয়েছিল সে-ও তে বেঁচে নেই।’ কালীচরণ চাপা গলায় বলল।
‘আমরা জানি না। কিন্তু ওর বন্ধুদের যে পুলিশ মেরে ফেলেছে একথা ওকে জানানোর দরকার নেই। কথাটা মনে রেখো।’ বনবিহারী হাত ধুতে এগোলেন।