দাউ দাউ আগুন
কাঠকয়লার আগুন
1 of 2

দাউদাউ আগুন – ২

দুই

বনবিহারী হতভম্ব হয়ে গেলেন। মেয়েটি যে কথা বলতে পারে না তা এতক্ষণ তিনি বুঝতেই পারেননি। জঙ্গলে, গাড়িতে যখনই ও যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠেছে তখন তিনি সেটাকে গর্ভযন্ত্রণার প্রকাশ বলেই মনে করেছেন। ওঁরা দ্রুত ভেতরে গেলেন।

মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে। বালিশে মাথা রেখে এলিয়ে পড়ে আছে এখন। পাশের বেবিকটে শিশু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

বনবিহারী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘শিশু কেমন আছে?’

‘ভালো আছে।’ নার্স বলল, ‘কিন্তু ছেলেটা কখনও মায়ের কথা শুনতে পাবে না।’

খেয়াল হল বনবিহারীর। শিশুর লিঙ্গ নিয়ে এতক্ষণ মাথা ঘামাননি। শিশুটি ছেলে শুনে তাঁর একটু স্বস্তি হল। এই দেশের মেয়েরা মা-বাবার স্নেহে বড় হয়েও অধিকাংশই যে নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করে তার খবর তিনি রাখেন। এর বাবা কে তা জানা নেই। মা বোবা তাই জানার উপায়ও নেই। মেয়ে হলে এর জন্যে কি অপেক্ষা করে থাকত তা ঈশ্বর জানেন।

বনবিহারী মেয়েটির কাছে গেলেন। কপালে হাত রাখলেন। মেয়েটার চোখের পাতা নড়ল। পাশে দাঁড়ানো ডাক্তার নার্সকে প্রশ্ন করলেন, ‘ইনজেকশনটা দিয়েছেন?’

‘হ্যাঁ।’

ডাক্তার বনবিহারীকে আশ্বস্ত করলেন, ‘ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ইনি কথা বলার জায়গায় ফিরে আসবেন। এখন ওকে ঘুমাতে দেওয়া যাক।’

বনবিহারী অবাক হলেন, ‘আপনি বলছেন ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ও কথা বলবে?’

সম্বিত ফিরে পেলেন ডাক্তার। বললেন, ‘ওহো, সরি। এক্সট্রিমলি সরি।’

হাসপাতালের খাতায় লেখা হল, প্রসূতির নাম—অজানা। ঠিকানা—অজানা। অভিভাবকের নাম, ডাক্তার বনবিহারী রায়, নাথুয়া, জেলা জলপাইগুড়ি। নার্স জানিয়েছে মেয়েটির পরনের পোশাকের পকেটে কোনও কাগজ পাওয়া যায়নি। গলায় কোনও অলঙ্কার ছিল না।

হাসপাতালের লোকজনের পরামর্শে ডাক্তার বনবিহারী রায় থানায় যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালেন। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা একটা মেয়েকে তিনি প্রসবের জন্যে হাসপাতালে ভরতি করেছেন, এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। পুলিশকে একথাই জানিয়ে রাখা ভালো।

হাসপাতালের বাইরে এসে রিকশার কথা ভাবলেন তিনি। সারারাত জেগে থাকায় এখন শরীরটা বেশ কাহিল লাগছে। মুখ ধুয়ে এককাপ চা আর বিস্কুটও খাওয়া দরকার। সত্যি কথা বলতে কাল দুপুরের পর তো আর পেটে কিছু পড়েনি। কালীচরণের কথা শুনে রাতের খাওয়া শেষ করে বেরুনোই উচিত ছিল।

‘এখন ফিরবেন?’

প্রশ্নটা শুনে মুখ তুলে তাকালেন তিনি। বললেন, ‘ও শম্ভু!’ তারপরেই খেয়াল হল তাঁর, ‘কিন্তু তুমি এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’

‘আপনি তো ফিরে যাবেন!’

‘যাব। কিন্তু কখন যাব তা জানি না। পালবাবুর অসুবিধে হবে তুমি এখানে থাকলে। আর হ্যাঁ, ওঁকে বলো, বাচ্চা হয়েছে, ছেলে।’ হাসলেন বনবিহারী।

শম্ভু এক গাল হাসল, ‘সেটা শুনেছি। কিন্তু ডাক্তারবাবু আপনি ফিরে যাবেন কি করে?’

‘কেন? বাসেই ফিরব।’

‘সারারাত জেগেছেন, তার ওপর বয়স তো হয়েছে। বাসে ফেরা ঠিক হবে? দাঁড়ান, আর একটু বেলা হোক, আমি বাবুকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করি ওঁর গাড়ি দরকার কিনা!’ শম্ভু বলল, ‘আপনি চা খাবেন ডাক্তারবাবু?’

‘চা? আমি যে বাসিমুখে আছি। তাছাড়া থানায় যেতে হবে এখনই।’

‘যাবেন। আগে ওই চায়ের দোকানে চলুন।’ শম্ভু পা বাড়াল।

চায়ের দোকানেই জল পাওয়া গেল। তাই দিয়ে মুখ ধুয়ে একটু ঠান্ডা হলেন তিনি। দোকানগুলোর পেছনে খেলার মাঠ। এই ভোরে সেখানে কেউ নেই। দোকানদারকে টয়লেটের কথা বলতে সে মাঠ দেখিয়ে দিয়ে বলল, ‘ছোট হলে ওখানে যান।’

বনবিহারী হাসলেন, ‘বড় হলে?

‘হাসপাতালে যান।’

ফিরে এসে গরম চায়ে চুমুক দিলেন বনবিহারী। শম্ভু জানাল সে একটু আগে চা খেয়েছে এখানে। দ্বিতীয়বার চুমুক দিয়ে নাক টানলেন বনবিহারী, ‘বাঃ! মনে হচ্ছে কাছাকাছি মিষ্টির দোকান আছে।’

শম্ভু বলল, ‘হ্যাঁ। দুটো দোকান পরে। মিষ্টি খাবেন?’

‘না না। তবে জিলিপি, মানে গরম ভাজা হলে,’ পকেটে হাত ঢোকালেন তিনি। এই জামা পরেই গতকাল চেম্বার থেকে ফিরেছিলেন। রাত্রে বেরুবার সময় এটাই পরে বেরিয়েছেন। পাঁচটা টাকা বের করে এগিয়ে ধরলেন তিনি, ‘দেখো তো।’

‘ক’টা আনব?’

‘এতে যটা দেয়!’

শম্ভু অবাক হল। তারপর চলে গেল। চায়ের দোকানের গায়ে বেঞ্চিতে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রাস্তা দেখলেন বনবিহারী। এখন ছায়া ছায়া ভোর। একটা রিকশা সওয়ারি নিয়ে ছুটে গেল। দুজন প্রৌঢ় কাপড়ের জুতো পরে মর্নিং ওয়াকের ভঙ্গিতে হাঁটছেন। তিনি ফিরে গেলে ওরা নিশ্চয়ই খোঁজ নিতে আসবে। ঠিকঠাক প্রসব হয়েছে এবং ছেলেকে নিয়ে মেয়েটি ভালো আছে শুনলে খুশি হবে। তখনই মেয়েটার নামধাম জেনে নেবেন তিনি। সেটাই লেখা হবে হাসপাতালের খাতায়। নইলে পরে খুব অসুবিধে হবে। বার্থ সার্টিফিকেট পেতে ওটা খুব জরুরি।

শম্ভু ফিরে এল দশটা জিলিপি নিয়ে। টাটকা রস ওদের গায়ে মাখামাখি। হাত বাড়িয়ে ঠোঙা নিয়ে বনবিহারী বললেন, ‘তুমি নাও।’

মাথা নাড়ল শম্ভু। ‘না। মিষ্টি খাই না।’

‘কেন?’

‘আপনি নিষেধ করেছেন।’

মনে পড়ে গেল বনবিহারীর। বছর খানেক আগে লক্ষণ দেখে রিপোর্ট ছাড়াই তিনি চেম্বারে বসে নিষেধ করেছিলেন পালবাবুর ড্রাইভারকে মিষ্টি খেতে। মাথা নাড়লেন। তারপর জিলিপিতে দাঁত বসালেন। অপূর্ব। রস গলা দিয়ে নামছে আর তাঁর ক্লান্তি মুছিয়ে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে দশটা জিলিপি শেষ হয়ে গেল। অন্যমনস্ক হয়ে হাত বাড়িয়ে বুঝলেন ঠোঙা খালি হয়ে গেছে।

শম্ভু খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল। এমন তন্ময় হয়ে খেতে সে কাউকে দেখেনি। চা-ওয়ালাও হাসিমুখে তাকিয়েছিল। শম্ভু জিজ্ঞাসা করল, ‘ডাক্তারবাবু আবার এনে দেব। খাবেন?’

সম্বিত ফিরল বনবিহারীর। একটু লজ্জাও পেলেন। মাথা নেড়ে বললেন, ‘না না। আর না। আসলে গরম জিলিপি পেলে আমি সংযম হারিয়ে ফেলি।’

থানার সামনে গাড়ি থেকে নেমে বনবিহারী শম্ভুকে বললেন, পালবাবুকে ফোন করে অনুমতি নিতে। বললেন, ‘মেয়েটিকে গাড়ি ছাড়া নিয়ে আসা যেত না, কিন্তু আমি তো স্বচ্ছন্দে বাসে ফিরে যেতে পারি। ওঁকে বলবে, আমি সেটাই চাইছি।’

থানার ভেতরটা ফাঁকা। দারোগা বা সাব ইন্সপেক্টরদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। যদিও এখন সকাল হয়েছে তাই বলে থানাকে এমন খুলে রেখে ওঁরা কোথায় চলে গেলেন! দারোগাবাবুর ঘরের সামনে একটা বেঞ্চিতে তিনি বসতেই গেঞ্জি আর খাকি হাফপ্যান্টপরা একটি সেপাই পাশের দরজা থেকে বেরিয়ে এল, ‘কি চাই?’

‘দারোগাবাবুর সঙ্গে দেখা করব।’

‘কোত্থেকে আসছেন?’

‘নাথুয়া। আমি ওখানে ডাক্তারি করি।’

‘অ। কখন দেখা পাবেন জানি না। কারণ, উনি ফোর্স নিয়ে নাথুয়ার কাছাকাছি গিয়েছেন। সঙ্গে এস পি সাহেবও আছেন।’ লোকটি মাথা নাড়ল, ‘এখানে বসে না থেকে বরং ঘুরে আসুন।’

‘কখন গেছেন?’

‘এই, ভোর চারটে নাগাদ।’

না। পথে কোনও পুলিশের গাড়ি তিনি দেখতে পাননি। ফোর্স নিয়ে গিয়েছেন যখন তখন নিশ্চয়ই একাধিক গাড়ি ছিল।

‘আমার তো এখানে ঘোরাঘুরির জায়গা নেই, এখানেই বসে থাকি।’

‘থাকুন। ন’টার আগে ওঁর দেখা পাবেন না। তারপর রাত থাকতে-থাকতে উঠতে হয়েছিল যখন তখন এসেই কিছুক্ষণ বিছানায় না গিয়ে পারবেন না। আর মাস পাঁচেক পরে রিটায়ার করবেন। বয়স হয়েছে তো!’ লোকটা হাসল।

‘খুব জরুরি কাজে গিয়েছেন বুঝি?’

‘জরুরি? একেবারে আর্জেন্ট। এস পি সাহেব খবর পেয়েই ওঁকে ঘুম থেকে তুলেছেন। লোকাল থানার ওপর নির্ভর না করে এখান থেকে অপারেশন চালিয়েছেন। আপনি নাথুয়ায় থাকেন, আপনি জানতেন আপনাদের পাশের খুঁটিমারি জঙ্গলে উগ্রপন্থীরা শেল্টার নিয়েছে?’

‘আগে জানতাম না।’

‘লুকিয়ে ছিল ওরা। অর্ডার হয়েছে জীবন্ত ধরা না দিলে মেরে ফেলা হবে। আমাদের এদিকে ওরা এর আগে আসেনি। মেরে ফেললে আর কোনও দল এদিকে পা বাড়াবে না।’

কথাগুলো বলে লোকটি চলে গেল। হঠাৎ কেমন শীত-শীত করতে লাগল বনবিহারীর। তাঁর বুঝতে অসুবিধে হল না কাল রাত্রে যারা তাঁকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়েছিল তাদের শিকার করতেই দারোগাবাবু সদলে গিয়েছেন। ওরা যদি পালিয়ে যায় তাহলে একটা সুবিধে পাওয়া যাবে। পরে কখনও না কখনও ওদের কেউ এলে মেয়েটির পরিচয় জানা যাবে। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলে মা আর শিশুকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। সেক্ষেত্রে তিনি ছেলেদের বলতে পারবেন ওদের নিয়ে যেতে। আর যদি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ওরা মরে যায় তাহলে সর্বনাশ হবে। কোনওদিন মেয়েটির পরিচয় পাওয়া যাবে না। অবশ্য যদি ও লিখতে পারে তাহলে বাঁচোয়া। তারপরেই ভাবনাটা মাথায় ঢুকল।

ধরা যাক, ওদের কেউ পালাতে পেরেছে। সে যদি ভাবে বনবিহারী ডাক্তারের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ এসেছিল, এটা ভাবা অস্বাভাবিক নয়। তাহলে নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকবে না। প্রতিশোধ নেবেই। ঘামতে লাগলেন বনবিহারী।

এখন সকাল সাতটা। ন’টা পর্যন্ত শম্ভুকে বসিয়ে রাখার কোনও মানে হয় না। তিনি উঠে বাইরে আসতেই শম্ভুকে দেখতে পেলেন। শম্ভু থানায় ঢুকছে। কাছে এসে শম্ভু বলল, ‘বাবুর কোনও তাড়া নেই। বললেন, আপনাকে নিয়ে ফিরতে।’

‘ও।’

‘একটা ভয়ঙ্কর খবর শুনলাম। বাবু বললেন আজ ভোরে খুঁটিমারির জঙ্গলে পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন উগ্রপন্থীর যুদ্ধ হয়েছে। উগ্রপন্থীরা কেউ পালাতে পারেনি। সবাই পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে। পুলিশ দুটো সাইকেল আর ওদের ডেডবডি নিয়ে থানায় গিয়েছে। খুব ভিড় হয়েছে থানার সামনে।’ শম্ভু বলতেই চোখ বন্ধ করলেন বনবিহারী। সেটা লক্ষ করে শম্ভু একটু কিন্তু কিন্তু করল, ‘একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?’

‘বল?’

‘আপনি কি ওদের চিনতেন?’

‘না।’

‘তাহলে, মানে, এখন ভাবছি, যেখানে ওরা মেয়েটাকে আমাদের গাড়িতে তুলে দিল সেখানে তো অতরাত্রে কেউ যায় না। তাছাড়া যদিও অন্ধকার ছিল, ওদের পরিষ্কার দেখিনি, কিন্তু মনে হয়েছিল ওরা নাথুয়ার কেউ নয়।’ শম্ভু বলল।

‘তখন জিজ্ঞাসা করোনি কেন?

‘ড্রাইভারি করতে হলে মালিকদের ব্যাপারে কৌতূহল দেখানো অন্যায়। কিন্তু এই খবরটা পাওয়ার পর না জিজ্ঞাসা করে পারলাম না।’

খুব সংক্ষেপে বনবিহারী শম্ভুকে ঘটনাটা জানালেন। বললেন, ‘মেয়েটি বেঁচে গেছে, মা হয়েছে, তাই পুলিশকে সব জানাতে এখানে এসেছি। আমি ওর নাম জানি না, ও কথা বলতে পারে না।’

শম্ভু খুব উত্তেজিত গলায় বলতে গিয়েও গলা নামাল, ‘আপনি আর এখানে দাঁড়াবেন না, তাড়াতাড়ি চলুন।’

‘কেন?’ একটু অবাক হলেন বনবিহারী।

‘পুলিশ যদি জানতে পারে আপনি উগ্রপন্থীদের কথামতো ওদের একটা মেয়েকে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভরতি করে প্রাণে বাঁচিয়েছেন তাহলে আপনাকে সন্দেহ করবে। হয়তো আপনাকে জেলে পুরবে। আপনার সেরকম কিছু হলে আমরা বিপদে পড়ে যাব। আপনি বয়স্ক মানুষ, আমার চেয়ে অনেক জ্ঞানী, আপনাকে জেলে ঢোকালে হেলথ সেন্টার দূরের কথা, বিনা চিকিৎসায় আমরা মারা পড়ব।’

‘তুমি খামোকা ভয় পাচ্ছ শম্ভু। আমি যা করেছি তা একেবারেই মানবিকতার খাতিরে করেছি। ডাক্তার হয়ে আমি কাউকে বিনাচিকিৎকিসায় মরে যেতে দিতে পারি না। ওরা আমাকে সত্যিকথা বলে নিয়ে যায়নি। ভয় দেখিয়েছি, সত্যিকথা, কিন্তু মেয়েটি যদি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে না যেত তাহলে আমি কিছুতেই ওকে নিয়ে আসতাম না। তাছাড়া হাসপাতালের খাতায় অভিভাবক হিসেবে আমার নাম লেখা হয়েছে। পুলিশ ওর কথা জানতে পারলে আমার কাছে পৌঁছে যাবে। এই ব্যাপারটা লুকিয়েছি বলে আমাকে অভিযুক্ত করবে।’ বনবিহারী বললেন,

শম্ভু একটু ভাবল। তারপর বলল, ‘চলুন।’

‘কোথায়?’

‘হাসপাতালে।’

‘কেন?’ বনবিহারী ওর মতলব বুঝতে পারলেন না।

শম্ভু প্রায় জোর করেই তাঁকে গাড়িতে তুলল। বনবিহারী একটু অসন্তুষ্ট হওয়াতে সে বলল ‘ডাক্তারবাবু, এই জীবনে কোনও পুণ্য কাজ করেছি বলে মনে পড়ে না। আজ হঠাৎ মনে হল একটা সুযোগ এসেছে। করে ফেলি, আপত্তি করবেন না।’

কথাটার মানে অবোধ্য হয়ে থাকল বনবিহারীর কাছে।

হাসপাতাল চত্বরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বনবিহারীকে সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে শম্ভু ঢুকে গেল ভেতরে।

মেয়েটিকে যখন হাসপাতালের কর্মীরা স্ট্রেচারে শুইয়ে ভেতরে নিয়ে গিয়েছিল তখন শম্ভু ছিল নির্লিপ্ত। একপাশে দাঁড়িয়ে দেখেছিল। একবারও ভেতরে যায়নি। বনবিহারী বেরিয়ে আসা পর্যন্ত সে বাইরেই থেকেছে। ও ফিরে এসে না বলা পর্যন্ত ওকে নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই।

গতরাত্রে জঙ্গলে যে ছেলেটি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিল তার মুখ মনে এল হঠাৎ। আধা অন্ধকারে স্পষ্ট বোঝা যায়নি বটে, কিন্তু কথাবার্তা বেশ পরিষ্কার বলেছিল। বকে যাওয়া মস্তান মোটেই, নয়, শিক্ষা আছে বোঝা গিয়েছিল। সেই ছেলেটা এবং ওর সহযোগীরা এখন পৃথিবীতে বেঁচে নেই। কেন ওরা এভাবে জেনেবুঝে আত্মহত্যা করছে? ওরা বিপ্লব করতে চায়, দেশের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক চেহারা বদলে দিতে চায়। খুব ভালো কথা। কিন্তু দেশ তো ওদের মতো কয়েকশো দলের নয়। কোটি কোটি মানুষ মনে করে কিছু অসুবিধে থাকা সত্ত্বেও এই সিস্টেমটার সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নেওয়া যায় তখন ওরা কাদের নিয়ে বিপ্লব করবে? পৃথিবীর ইতিহাস বলছে দেশের বেশিরভাব মানুষ যখন অত্যাচারিত, নিষ্পেষিত এবং সরকারি নীতির ফলে প্রায় অভুক্ত তখনই বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যায়। প্রকৃত নেতা এসে নেতৃত্ব দিলে একে একে সবাই প্রাথমিক সঙ্কোচ কাটিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শোষকের বিরুদ্ধে। বিপ্লব তরান্বিত হয়। কিন্তু এখন এই ভারতবর্ষের মানুষের অবস্থান সেরকম নয়। ভোটের মাধ্যমে তারা শোষকদলকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। বেঁচে থাকার ন্যুনতম উপকরণ থেকে তারা বঞ্চিত নয়। অন্তত নব্বুই শতাংশ এই পর্যায়ে পড়ে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়ে যদি এইসব তরুণেরা বিপ্লবের ডাক দেয় তাহলে সাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। এরাও সেটা জানে। জেনেও সাঁইত্রিশ-আটত্রিশ বছর ধরে একই ভুল করে চলেছে।

শম্ভু ফিরে এল আধঘণ্টা পরে। মুখে হাসি।

বলল, ‘হয়ে গেল।’

‘কি হয়ে গেল?’ বনবিহারী তাকালেন।

‘নামটা দিয়ে দিলাম। কুন্তী পাল।’ গাড়িতে উঠে বসল শম্ভু।

‘তার মানে? এই নাম তুমি জানলে কোত্থেকে?’ বনবিহারী হতভম্ব।

‘আমি কি করে জানব? মাথায় চলে এল।’

ব্যাপারটা খুলে বলো তো?’

‘আমি ভেতরে গিয়ে বললাম আমার বোনকে কাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। ওর বাচ্চা যে-কোনওদিন হওয়ার কথা। ভোরবেলায় শুনলাম ওকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে হাসপাতালে এনেছেন আমাদের এলাকার ডাক্তারবাবু। বলামাত্র হইচই পড়ে গেল। একটা লোক বলল, ওঃ বাঁচালেন ভাই। নইলে পুলিশকে জানাতে হত। তারপর একটা খাতা খুলে জিজ্ঞাসা করল, আপনার বোনের নাম কি? তখনই মাথায় নামটা এসে গেল। বললাম, কুন্তী পাল। স্বামীর নাম? পানু পাল। ভগ্নিপতি কলকাতায় ড্রাইভারি করে। ঠিকানা? আমার ঠিকানা দিয়ে দিলাম! আপনি? কুন্তী পালের দাদা, শম্ভু সেন। সব লিখেটিখে বলল, এখানে সই করুন। করে দিলাম। তারপর আগের লাইনটা ভালো করে কেটে দিয়ে বলল, ‘যে ডাক্তারবাবু ভরতি করিয়েছিলেন তিনি নাম জানেন না বলে পেশেন্টের নামের জায়গায় আননোন লিখেছিলাম ওঁকেই গার্জেন করা হয়েছিল। এখন আর দরকার নেই তাই কেটে দিলাম।’

জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমার বোন কেমন আছে?’

‘আরে! আপনি মামা হয়েছেন। ভাগনে হয়েছে। দুজনেই ভালো আছে। ভিজিটিং আওয়ার্সে এসে দেখবেন। আচ্ছা, আপনার বোন বোবা, বিয়ে দিলেন কি করে? বললাম, ‘ভগ্নিপতিও কথা বলতে পারে না। তাই—।’

‘আচ্ছা! অদ্ভুত মিল তো!’

আমি তবু একবার দেখার কথা বলেছিলাম। বলল, ‘সকাল দশটার পর আসবেন। আর তখন এই অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা, এই শ’পাঁচেক জমা দেবেন। আমরা হয়তো পরশু আপনার বোনভাগনেকে ছেড়ে দেব।’

কথাগুলো বলে হাসল শম্ভু, ‘বলুন ডাক্তারবাবু, আমি কি কাজটা অন্যায় করলাম?’

কি বলবেন প্রথমে বুঝতে পারলেন না বনবিহারী। শম্ভু তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিল। বনবিহারী শেষ পযন্ত বললেন, ‘তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে শম্ভু?’

‘না ডাক্তারবাবু।’

‘চেনো না জানো না এমন একটা বোবা মেয়েকে নিজের বোন বলে স্বীকার করে এলে? এর পরে ওকে তো তোমার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখতে হবে। পারবে?’

‘আমার বাড়ি? আমার তো কোনও বাড়ি নেই, মালিকের ওখানে থাকি।’

‘চমৎকার! ঠিকানা কি দিয়েছ?’

‘আমার নাম, নাথুয়া, জেলা জলপাইগুড়ি।’

‘তাহলে ওকে নিয়ে যাবে তখন পালবাবু মেনে নেবেন?’

চোখ বন্ধ করল শম্ভু, ‘এটা ভাবিনি।’

‘ধরো, পুলিশ খোঁজ নিয়ে দেখল মেয়েটা তোমার বোন নয়। তখন?’

‘না না, পুলিশকে হাসপাতাল আর জানাবে না।’

‘যদি পুলিশ অন্য সুত্রে জানতে পারে?’

‘আমি এটা ভাবিনি ডাক্তারবাবু।’

‘তুমি তাহলে আগ বাড়িয়ে করলে কেন?’

‘ওই যে, আপনাকে যদি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, বিনা দোষে জেলে ঢোকায়? নাম-ঠিকানা পেলে তো এসব কিছু হবে না।’

বনবিহারী আর কথা বাড়ালেন না। মনে মনে তিনি শম্ভুকে অনেক বড় মাপের মানুষ বলে শ্রদ্ধাশীল হলেন।

দশটায় শম্ভুকে নিয়ে মা এবং ছেলেকে দেখতে গেলেন বনবিহারী। এখন নতুন নার্স এসেছে। বনবিহারীকে সে জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনারা কে হন?’

শম্ভু বলল, ‘আমার বোন।’

‘এগুলো এনে দিন। সঙ্গে কোনও জামাকাপড় দেননি কেন? যা পরে এসেছিল সেসব নষ্ট হয়ে গেছে। জামাকাপড়ও এনে দেবেন।’ লিস্ট ধরিয়ে নার্স চলে গেল।

শম্ভু ততক্ষণে বাচ্চাটার কাছে পৌঁছে গেছে। বনবিহারী লিস্ট হাতে দাঁড়িয়ে দেখলেন শম্ভু ঝুঁকে পড়েছে শিশুর ওপর। তারপর বলল, ‘একমাথা চুল হয়েছে। কিন্তু কথা বলবে তো?’

‘অবশ্যই।’ বনবিহারী জোর দিয়ে বললেন।

‘খুব সুন্দর হয়েছে বাচ্চা।’

বনবিহারী মেয়েটির দিকে তাকালেন। পাশ ফিরে শুয়ে আছে, চোখ বন্ধ।

কাছে গিয়ে কপালে আঙুল রাখতেই মেয়েটি চোখ খুলল।

বনবিহারী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এখন কষ্ট হচ্ছে না তো?’

মেয়েটি ধীরে মাথা নেড়ে না বলল।

‘তোমার বাচ্চাকে দেখেছ?’

আবার মাথ নেড়ে হ্যাঁ বলল মেয়েটি।

‘খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে।’

মেয়েটির ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠল। তারপরেই চোখ জলে ভরে গেল।

‘কেঁদো না। এখন তোমার কোনও ভয় নেই।’ বনবিহারী আবার কপালে হাত রাখলেন। শম্ভু পাশে এসে দাঁড়াল, ‘ডাক্তারবাবুকে চিনতে পারছ।’

মেয়েটি একবার শম্ভুকে আর একবার বনবিহারীর মুখের দিকে তাকাল।

বনবিহারী হাসলেন, ‘তোমাকে জঙ্গলের ভেতরে ভাঙা ঘরে দেখতে গিয়েছিলাম।’

সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ হয়ে গেল। স্বস্তির ছাপ ফুটল মুখে। মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল সে।

মধ্যরাতে জঙ্গলে যে ছেলেটি তাঁকে টাকা দিয়েছিল মেয়েটির চিকিৎসার জন্যে সে এখন পৃথিবীতে নেই। সেই টাকায় যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেওয়া হল। কুন্তী পালের নামে হাসপাতালে টাকা জমা দিয়ে শম্ভু যখন বনবিহারীকে নিয়ে নাথুয়াতে ফিরে এল তখন দুপুর। এতক্ষণে তীব্র ক্লান্তি শরীরে জেঁকে বসেছে। বাড়ি গিয়ে স্নান-খাওয়া শেষ করে ঘণ্টা দুয়েক না ঘুমালে হচ্ছে না। শম্ভু কথা শুনল না, তাঁকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।

গাড়ি থেকে নেমে অবাক হলেন বনবিহারী। জনা আটেক লোক তাঁর বাড়ির বারান্দায় বসেছিল। তাঁকে দেখে উঠে দাঁড়াল। এদের বেশির ভাগকেই অল্পবিস্তর চেনেন তিনি। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা এখানে?’

উত্তরটা দিল কালীচরণ। বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে গলা তুলে বলল, ‘হয়েছে তো? ডাক্তারবাবু ডাক্তারবাবু করে হেদিয়ে মরছিলেন। তিনি এসে গেছেন। এখন দয়া করে তাঁকে স্নান-খাওয়া-বিশ্রাম করতে একটু সময় দিন।’

সুবল নামে মধ্যবয়স্ক একটি লোক হাতজোড়া করে বলল, ‘সেই সকাল থেকে আমরা গঞ্জের চেম্বারের সামনে বসেছিলাম। দরজা খোলেনি এমন তো কখনও হয়নি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আমরা আপনার বাড়িতে এসে শুনলাম আপনি কাল রাত থেকেই নেই।’

‘হ্যাঁ। একজন পেশেন্টের মরা-বাঁচার ব্যাপার ছিল।’ বনবিহারী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তা কি হয়েছে তোমার?’

‘পা ফুলছে। বমি বমি ভাব। পেটে ব্যথা হচ্ছে।’ সুবল বলল।

‘মদ্যপান কমিয়েছ?’

‘হ্যাঁ ডাক্তারবাবু। আগে যা খেতাম এখন তার অর্ধেক।’

‘ওটা পুরো বন্ধ করতে হবে। না করলে কোনও ওষুধ কাজ করবে না। মদ চালিয়ে গেলে বড়জোর ছয় কি আট মাস। দেখি পা দেখি!’

সুবল পা দেখাল। মাথা নাড়লেন বনবিহারী, ‘সন্ধেবেলায় চেম্বারে এসো।’

সুবলকে বনবিহারী দেখছেন দেখে বাকিরা উৎসাহিত হল নিজেদের অসুখের কথা জানাতে। কিন্তু কালীচরণ তাদের বাধ্য করল চলে যেতে। বলে দিল, ‘সন্ধের পরে চেম্বারে যাবেন।’

স্নান শেষ করে খেতে বসে বনবিহারী কালীচরণের মুখে খবরটা শুনে চমকে উঠলেন। কালীচরণ জানাল, ভোরের একটু আগে সেই ছেলেদের একজন সাইকেলে চেপে এসে ডাকাডাকি করেছিল। ঘুম থেকে উঠে কালীচরণ ভেবেছিল বনবিহারী ফিরে এসেছেন। দরজা খুলতে সে মধ্যরাতের ছেলেদের একজনকে দেখতে পেয়েছিল। ছেলেটি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘ডাক্তারবাবু ফিরে এসেছেন?’ কালীচরণ না বলতে সে আর দাঁড়ায়নি। তখন থেকে দুশ্চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল তার। ওদের রুগি দেখতে গিয়েছিলেন বাবু, ওরাই এসে খোঁজ করছে ফিরেছেন কিনা! তাহলে কোথায় গেলেন? বেলা হল। একবার সে ভেবেছিল গঞ্জে গিয়ে সবাইকে ঘটনাটা বলে। তো এর মধ্যে এই সব রুগিগুলো এখানে এসে জুটল। এদের ফেলে বাড়ি ছেড়ে বেরুনো যাচ্ছিল না বলে আর কাউকে বলা হয়নি। তবে সন্ধের মধ্যে বাবু না ফিরলে লোক জড়ো করে থানায় যেত সে।

চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়লেন বনবিহারী। কালীচরণের একটা গুণ না বললে গায়ে পড়ে খুঁচিয়ে জানতে চায় না কিছু। তিনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন তার জবাবদিহি তাই দিতে হল না তাঁকে। কিন্তু এটা কি শুনলেন? যারা কাল রাত্রে তাঁকে সাইকেলে বসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তাদের একজন আজ ভোরে খবর নিতে এসেছিল? ভোর বলতে কখন? কালীচরণ সময়টা গুলিয়ে ফেলেনি তো! ভোরের সময় পুলিশ হামলা চালিয়ে ওদের সবাইকে মেরে ফেলেছে। তাহলে ছেলেটি নিশ্চয়ই তার আগে এসে খোঁজ নিয়ে ফিরে গিয়ে মারা পড়েছে। আর যদি পুলিশের অ্যাকশন নেওয়ার সময় ছেলেটি জঙ্গলের বাইরে চলে এসে থাকে তাঁর কাছে আসার জন্যে? তাহলে নিশ্চয়ই বেঁচে আছে সে।

কিন্তু ছেলেটি কেন তিনি বাড়িতে ফিরেছেন কিনা সেই খোঁজ নিতে আসবে? ওরা তো দেখেছে মেয়েটিকে গাড়িতে তুলে তিনি সদরের হাসপাতালে গিয়েছেন। অতদূরে গিয়ে ভোরের মধ্যে তিনি ফিরে আসবেন এটা ওরা ভাবল কি করে? নাকি ওদের বিশ্বাস হয়নি? মেয়েটিকে গাড়িতে সদরে পাঠিয়ে নিজে বাড়িতে ফিরে গেছেন বলে ভেবেছিল?

এই সব চিন্তা ঘুমকে দূরে সরিয়ে দিল এখন।

সন্ধেবেলায় চেম্বারে এলেন বনবিহারী। আজ বেশ ভিড়। রুগিরা আজ ভোরে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছেন। কেউ বলছেন চারজন, কেউ পাঁচজন মারা গিয়েছে বলে দাবি করছেন। সেই সঙ্গে একটা বিপদের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এই অঞ্চলে উগ্রপন্থীদের অস্তিত্ব ছিল না। এই ঘটনার পর পুলিশ বাড়ির অল্পবয়সি ছেলেদের টানাহ্যাঁচড়া করবে।

রাত দশটার সময় ভিড় যখন একটু হালকা তখন পালবাবু এলেন হেঁটে। একটু একলা পেয়ে বনবিহারীকে বললেন, ‘শম্ভু আমাকে সব বলেছে। মেয়েটিকে তো হাসপাতাল ছেড়ে দেবে, তখন ওর কি ব্যবস্থা হবে?’

‘আমি এখনও ভেবে পাইনি।’ বনবিহারী বললেন।

‘শম্ভু আমার বাড়িতে থাকে। ওকে আমার বাড়িতে তোলা যাবে না।’

‘সে তো ঠিক কথা।’

‘তবে আপনাকে ধন্যবাদ, ঠিক সময়ে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন। প্রসব না করতে পেরে ওরা মারা যেত কিনা জানি না তবে পুলিশের গুলিতে নিশ্চয়ই মারা যেত। পেটে যে শিশু ছিল সেই বেচারা তো কোনও দোষ করেনি। হাসপাতাল থেকে যদি ওদের না নিয়ে আসা হয় তাহলে পুলিশ শম্ভুর খোঁজে হাজির হবে। তখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়বেই। তাই, ডাক্তার, অমি বলি কি, ওদের আপনার বাড়িতে কিছুদিন রাখুন।’ পালবাবু কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *