দাঁত
ছোটাচ্চুর অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে ফারিহাপু জিজ্ঞেস করল, “ব্যস্ত?”
ছোটাচ্চু মাথা তুলে ফারিহাপুকে দেখে হাসি হাসি মুখে বলল, “হ্যাঁ, ব্যস্ত। কিন্তু তাতে তোমার কী আসে-যায়? এসো।”
ফারিহাপু বলল, “না তোমার কাজের ক্ষতি করতে চাই না। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই!”
“আমার কাজের কোনো ক্ষতি হবে না—আমার কোনো কাজ নাই যেটা সময়ের ওপর নির্ভর করে!”
“তাহলে ভালো।” বলে ফারিহাপু ছোটাচ্চুর টেবিলের সামনে একটা চেয়ারে বসে বলল, “তোমাকে তাহলে একটা খবর দিয়ে যাই।”
ছোটাচ্চু মুখের হাসিটা আরো একটু চওড়া করে বলল, “কী খবর?”
“আমাকে দেখতে আসছে।”
ছোটাচ্চু ঠিক বুঝতে পারল না, জিজ্ঞেস করল, “কে তোমাকে দেখতে আসছে?”
ফারিহাপু বলল, “মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে ছেলে পার্টি মেয়েদের দেখতে আসে জানো না?”
ছোটাচ্চু তখনও বুঝতে পারল না, জিজ্ঞেস করল, “কোন ছেলে পার্টি কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য দেখতে আসছে?”
ফারিহাপু এবারে খোলাসা করে বলল, “গুগলে চাকরি করে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আমাকে বিয়ে করতে চায়, সেই জন্য আমাকে দেখতে আসছে।“
ছোটাচ্চু এবারে বুঝতে পারল, তখন তার মুখ হাঁ হয়ে গেল এবং তোতলাতে তোতলাতে বলল, “গু-গু-গু-”
ফারিহাপু হি হি করে হেসে বলল, “গুগল।”
ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, গুগল—গুগলে চাকির করে?”
“হ্যাঁ।“
“তো-তো-তোমাকে বিয়ে করতে চায়?”
“হ্যাঁ।”
“তাই তোমাকে দেখতে চায়?”
“হ্যাঁ।”
“তাই তো-তো-তোমাকে দেখবে?”
“হ্যাঁ।”
ছোটাচ্চু কী বলবে বুঝতে পারল না। খানিকক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, “তুমি রাজি হয়েছো?”
“একজন মানুষ আমাকে দেখতে চাইলে আমি রাজি হব না? লুকিয়ে থাকব?”
ছোটাচ্চু বলল, “না—মানে—ইয়ে—
ফারিহাপু জিজ্ঞেস করল, “কিয়ে?”
“মানে বলছিলাম— “কী বলছিলে?”
“মানে, তোমাকে কোনখানে দেখবে?”
“একটা কাফেতে। কাফে কিশলয়।”
“তোমাকে দেখতে চাইল আর তুমি রাজি হয়ে গেলে?”
“সমস্যা আছে?”
“না মানে ইয়ে—” ছোটাচ্চু শুকনো মুখে ঢোক গিলল। খানিকক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল, “কখন দেখবে?”
“বলেছে পাঁচটার সময়।”
ছোটাচ্চু ঘড়ি দেখল, এখন দুপুর দুইটা। আরো তিন ঘণ্টা পর। ছোটাচ্চু এবারে একটু ভালো করে ফারিহাপুকে দেখল। আগে লক্ষ করেনি এখন লক্ষ করে দেখল ফারিহাপু একটু সেজে এসেছে। ছোটাচ্চু তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপর বলল, “যদি গুগলের ইঞ্জিনিয়ার তোমাকে পছন্দ করে তখন কী হবে?”
ফারিহাপু বলল, “জানি না। পছন্দ করলে তখন সেটা নিয়ে মাথা ঘামাব।” ছোটাচ্চু কী বলবে বুঝতে পারল না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, পাঁচটা বাজতে তো দেরি আছে, এখন কী করবে?”
ফারিহাপু বলল, “আমার আসলে একটা ডেন্টিস্টের অ্যাপয়ন্টমেন্ট আছে।”
“ডেনটিস্টের অ্যাপয়ন্টমেন্ট? মানে তোমার দাঁত ব্যথা?”
ফারিহাপু মাথা নাড়ল, “না, দাঁত ব্যথা নাই। দাঁতের কাজ আছে।”
“দাঁতের কাজ? কী কাজ?”
“এই তো—” বলে ফারিহাপু উঠে দাঁড়াল। বলল, “যাই, দেরি না হয়ে যায।”
ফারিহাপু বের হয়ে যাওয়ার পর ছোটাচ্চু কেমন জানি ফাঁকা দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।
* * *
ডেনটিস্ট মেয়েটি ফারিহার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, দুইজন সেই স্কুল থেকে একসাথে লেখাপড়া করেছে। ফারিহাকে দেখে খুশি হয়ে বলল, “এসেছিস?”
“আসব না কেন? তোর সাথে রীতিমতো অ্যাপয়নমেন্ট করেছি, আর আমি আসব না?”
ডেন্টিস্ট মেয়েটি বলল, “তুই সত্যিই এই পাগলামি করবি?”
“পাগলামি কেন হবে?”
ডেনটিস্ট মেয়েটি বলল, “আমি জন্মেও শুনি নাই কেউ শখ করে তার ক্যানাইন টুথকে ড্রাকুলার মতো করে ফেলে!”
ফারিহা বলল, “আমি তো সারা জীবনের জন্য করছি না, কিছুক্ষণের জন্য করছি। তুই আমার দুইটা ড্রাকুলার দাঁত বানিয়ে দিবি, আমি গুগলের ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কফি খেয়ে আসার পর তুই দাঁত দুইটা খুলে নরমাল করে দিবি!”
“কেন তুই একটা হাবাগোবা ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে তামাশা করছিস?”
“কেন করব না? এই ইঞ্জিনিয়ার খুব ভালো করে শাহরিয়ারের কথা জানে—তার পরেও আমার পিছনে লেগে আছে। এদের ধারণা তার আমেরিকান পাসপোর্ট, গুগলের চাকরি—এই সব দেখে আমি শাহরিয়ারকে ছেড়ে তার গলায় ঝুলে পড়ব। এদের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার।”
ডেনটিস্ট মেয়েটা বলল, “সোজাসুজি না করে দিলেই পারিস! তোর মুখে ড্রাকুলার দাঁত বানাতে চাইছিস কেন?”
ফারিহা বলল, “তুই করে দিবি কি না বল?”
ডেনটিস্ট মেয়েটা হি হি করে হাসল, বলল, “তোকে না করে দিয়ে উপায় আছে? সারা জীবন তোর যন্ত্রণায় আমাদের জীবন শেষ— ভবেছিলাম বড় হওয়ার পর তোর মাথা ঠান্ডা হবে! এখন মনে হচ্ছে পাগলামি আরো বেড়েছে। আয়—চেয়ারে বস।”
ফারিহা ভয়ে ভয়ে বলল, “ব্যথা দিবি না তো?”
“না। ইচ্ছা করে ব্যথা দিবো না।” ডেন্টিস্ট মেয়েটি হাতে গ্লাভস পরতে পরতে বলল, “নে, হাঁ কর।”
ফারিহা মুখ হাঁ করল।
* * *
ঘণ্টাখানেক পর ফারিহা আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেল। এমনিতে বোঝা যায় না, যদি মুখ খুলে একটুখানি হাসে তাহলে দুই পাশ থেকে দুইটা ভয়ংকর ড্রাকুলার দাঁত বের হয়ে আসে। তাকে তখন দেখতে মোটেই মানুষের মতো দেখায় না—ভয়ংকর প্রেতের মতো দেখায়।
ফারিহা ভয়ে ভয়ে তার ডেন্টিস্ট বন্ধুকে বলল, “আমার এই দাঁত আবার খুলে দিতে পারবি তো?”
ডেন্টিস্ট বন্ধুর হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে যায়, বলল, “হ্যাঁ, পারব।”
“দাঁত খোলার জন্য তুই তোর চেম্বারে থাকবি তো?”
“হ্যাঁ থাকব। তোর দাঁত ঠিক না করে আমি বাসায় যাব না।”
“আমাকে ছুঁয়ে কথা দে তুই যাবি না।”
ডেন্টিস্ট বন্ধু ফারিহাকে ছুঁয়ে বলল, “এই যে তোকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি তোর ড্রাকুলার দাঁত খুলে তোকে স্বাভাবিক না বানিয়ে আমি বাসায় যাব না। তা ছাড়া কফি হাউসে হাবাগোবা ইঞ্জিনিয়ার তোকে দেখে কী করল আমার সেইটা শুনতে হবে না?”
ফারিহা তখন ডেন্টিস্টের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর বলল, “দেখি এখন ইঞ্জিনিয়ারের আমাকে পছন্দ হয় কি না।”
* * *
ফারিহা কাফে কিশলয়ের একটা ফাঁকা টেবিলে দেওয়ালের দিকে মুখ করে বসল। কাফের অন্যরা যেন তাকে দেখতে না পারে সেই জন্য এইভাবে বসেছে। ওয়েটার আসার পর সে নিজের জন্য একটা কফির অর্ডার দিলো, তারপর কী ভেবে গুগল ইঞ্জিনিয়ারের জন্য আরেকটা কফিও অর্ডার দিলো। সে চেষ্টা করল নিজের মুখ ঢেকে কথাবার্তা বলতে, কেউ যেন তার ড্রাকুলার দাঁত দেখতে না পারে।
ফারিহা তার কফিতে কয়েকটা চুমুক দেওয়ার পর হঠাৎ লক্ষ করল চকচকে চেহারার নাদুসনুদুস একজন মানুষ এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। ফারিহাকে দেখে চিকচিকে মানুষটা লম্বা লম্বা পা ফেলে তার দিকে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি ফারিহা?”
ফারিহা মুখ বন্ধ রেখেই মাথা নাড়াল। মানুষটা তখন তেলতেলে একটা হাসি দিয়ে সামনে বসে গেল। ফারিহার সাথে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আমি নাইমুল। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। গুগল।”
ফারিহা মুখ বন্ধ রেখেই মুখটা হাসি হাসি করে মাথা নাড়ল, কোনো কথা বলল না। কথা বললেই মুখ খুলতে হবে, সে এখনই মুখটা খুলতে চাইছে না। ফারিহা গুগল ইঞ্জিনিয়ারের কফির মগটা তার দিকে ঠেলে দিলো। মানুষটা খুশি খুশি মুখে কফির মগটা হাতে নেয়, একটু ঘ্রাণ নিয়ে বলল, “ফ্যান্টাস্টিক! এই দেশে কফি পাওয়া যায় আমি জানতাম না। আমাদের গুগল অফিসে চা, কফি, স্ন্যাক—সব ফ্রি!”
ফারিহা মুখ না খুলেই ফ্রি চা-কফি নিয়ে যতটুকু সম্ভব মুগ্ধ হওয়া যায় ততটুকু মুগ্ধ হওয়ার ভান করল।
মানুষটা কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল, “গুড কফি।”
তারপর ফারিহার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছেন, সে জন্য অনেক ধন্যবাদ।”
ফারিহা মাথা নাড়ল। গুগল ইঞ্জিনিয়ার বলল, “আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার সাথে দেখা করতে রাজি হবে না”—তারপর সব দাঁত বের করে খ্যাকখ্যাক করে হাসতে লাগল। ফারিহা লক্ষ করল এতক্ষণ আপনি করে কথা বলছিল, এখন হঠাৎ করে মানুষটা তুমি করে কথা বলতে শুরু করেছে। ভাবখানা দুইজন যেন কতদিনের পরিচিত। ফারিহার একটু মেজাজ গরম হলো, বুঝতে পারল তার ড্রাকুলার দাঁত বের করার সময় হয়েছে।
গুগল ইঞ্জিনিয়ার বলল, “আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি। তুমি এখনও কোনো কথা বলো নাই। তোমার গলার স্বরটাও শুনতে পাই নাই।”
ফারিহা প্রথমবার মুখ খুলল, সবগুলো দাঁত বের করে হিসহিস শব্দ করে বলল, “আমার গলার স্বর যত কম শুনবে তত ভালো।”
ফারিহা তার ড্রাকুলার দাঁত বের করে হি হি করে হাসল আর সেটা দেখে গুগল ইঞ্জিনিয়ার একটা আর্তচিৎকার করে উঠল। তার হাতের গরম কফির কাপ ছলকে সেখান থেকে কফি তার শার্টের বুকে এবং কোলের ওপর পড়ল। সেটার জন্য সে আরো একবার চিৎকার করল। গুগল ইঞ্জিনিয়ার চোখ বিস্ফারিত করে ফারিহার দিকে তাকিয়ে থাকে। হাচড়পাচড় করে সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।
অবস্থাটা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে ফারিহা তার জিভ বের করে ঠোঁট চেটে মুখটা বন্ধ করে মিষ্টি করে হাসল। সেটা দেখে গুগল ইঞ্জিনিয়ার মনে হয় আরো ভয় পেয়ে গেল। হাতের কফিটা টেবিলে রেখে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে মুখ হাঁ করে ফারিহার দিকে তাকিয়ে থাকে। তোতলাতে তোতলাতে বলল, “আ-আ-আ-আপনার দাঁ-দাঁ-দাঁ—“
ফারিহা হাসল, বলল, “কী হয়েছে আমার দাঁতের?”
“না—না—মানে ইয়ে—” মানুষটা উঠে দাঁড়াল, বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি যাই। থ্যাঙ্কু আসার জন্য, থ্যাঙ্কু- ফারিহা বলল, “কফিটা শেষ করে যান।”
মানুষটা তড়াক করে লাফ দিয়ে দাঁড়াল। তারপর বলল, “না না—কফি খেতে হবে না—” তারপর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রায় লাফিয়ে বের হয়ে গেল।
আশেপাশের টেবিলের অনেকেই একটু অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়েছিল। তারা কেউই ফারিহার দাঁত দেখতে পায়নি, তাই ঠিক বুঝতে পারছিল না কী হয়েছে। কিছুই হয়নি এ রকম ভাব করে ফারিহা তার কফি মগে চুমুক দেয়। সে মনে মনে যে রকম হবে ভেবেছিল, তার থেকে অনেক বেশি মজা হয়েছে।
* * *
টুনি ছোটাচ্চুর সামনের চেয়ারে বসে আছে। যে ঘটনা আগে কোনোদিন ঘটে নাই আজকে সেটাই ঘটেছে। ছোটাচ্চু নিজে টুনিকে ডেকে পাঠিয়েছে খুবই জরুরি একটা বিষয় আলোচনা করার জন্য। টুনি খুবই অবাক হয়েছে- তার সাথে ছোটাচ্চুর কী নিয়ে আলাপ থাকতে পারে?
টুনি বেশ খানিকটা দুশ্চিন্তা নিয়ে ছোটাচ্চুর সামনে বসে আছে। ছোটাচ্চু এখনও কিছু বলা শুরু করে নাই—টুনি অনুমান করতে পারছে ছোটাচ্চু কীভাবে শুরু করবে সেটা বুঝতে পারছে না। টুনি কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করে ধৈর্য ধরে বসে আছে।
ছোটাচ্চু কিছুক্ষণ তার মাথা চুলকাল, তারপর ঘাড় চুলকাল, তারপর বগলের নিচে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে পিঠের দিকে কোনো একটা জায়গা চুলকানোর চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়ে ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “তোকে ডেকে আনা মনে হয় ঠিক হয় নাই।”
টুনি ভুরু কুঁচকে বলল, “কেন ঠিক হয় নাই?”
ছোটাচ্চু বলল, “আমি যেটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি সেটা আসলে বাচ্চা মেয়েদের বিষয় না। সেটা বড় মেয়েদের না-হয় মহিলাদের বিষয়।”
টুনি বলল, “কিন্তু যখন আমাকে ডেকে এনেছো এখন বলে ফেলো— দেখি কী বিষয়।“
“বিষয়টা তোদের ফারিহাপুকে নিয়ে—”
টুনি চোখ বড় বড় করে বলল, “ফারিহাপুকে নিয়ে? কী করেছে ফারিহাপু?” ছোটাচ্চু গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল, “তুই তো জানিস তোর ফারিহাপু আর আমি মানে ইয়ে—”
টুনি মাথা নাড়াল, বলল, “জানি। তুমি আর ফারিহাপু ইয়ে— “কিন্তু আজকে তাকে একটা ছেলে পার্টি দেখতে আসছে।”
টুনি এবারে চোখ বড় বড় করে বলল, “সত্যি?”
“হ্যাঁ।”
ছোটাচ্চু বলল, “ছেলে পার্টি তো ফারিহাকে দেখতে চাইতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে—”
“কী সমস্যা?”
“ফারিহা কেন ছেলে পার্টির সাথে দেখা করতে রাজি হয়ে গেল। ছেলে গুগলের ইঞ্জিনিয়ার হলেই ফারিহার তার সাথে দেখা করতে হবে? হ্যাঁ?” ছোটাচ্চু কেমন জানি রেগে উঠল
টুনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল, “ছোটাচ্চু, তোমার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই—”
ছোটাচ্চু আরো রেগে উঠে বলল, “কে বলল আমি দুশ্চিন্তা করছি?”
টুনি বলল, “ছোটাচ্চু তুমি ফারিহাপুর ওপর ভরসা রাখো—”
টুনি কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ করে ছোটাচ্চুর চোয়াল ঝুলে পড়ল, তার অফিসের দরজায় ফারিহাপু দাঁড়িয়ে আছে।
ছোটাচ্চু দাঁড়িয়ে গেল, বলল, “ফারিহা, তুমি?”
ফারিহাপু কোনো কথা না বলে মাথা নাড়ল। ছোটাচ্চু বলল, “দরজায় দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিতরে আসো।”
ফারিহাপু ভিতরে ঢুকল।
ছোটাচ্চু বলল, “বসো।”
ফারিহাপু মাথা নেড়ে জানাল, সে বসবে না।
ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল, “গুগলের ইঞ্জিনিয়ার তোমাকে দেখেছে?”
ফারিহাপু মাথা নেড়ে জানাল, সে দেখেছে।
ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল, “তোমাকে পছন্দ করেছে?”
ফারিহাপু মাথা নেড়ে জানাল তাকে পছন্দ করে নাই। টুনি এতক্ষণ ছোটাচ্চুর কথা আর ফারিহাপুর মাথা নাড়ানাড়ি দেখছিল। এবারে ফারিহাপুর দিকে তাকিয়ে বলল, “ফারিহাপু, তুমি কোনো কথা না বলে খালি মাথা নাড়ছো কেন?”
ফারিহাপু এবারে তার ভয়ংকর ড্রাকুলার দাঁত বের করে হাসার ভান করে বলল, “তার কারণ আমি কথা বললে তোমার ছোটাচ্চু আমাকে দেখে পালিয়ে যেতে পারে—গুগল ইঞ্জিনিয়ার যেভাবে পালিয়েছে!”
ফারিহাপুর দাঁত দেখে ছোটাচ্চু চিৎকার করে বলল, “সর্বনাশ! তোমার দাঁতের এই অবস্থা কেন? এ রকম হয়েছে কীভাবে?”
ফারিহাপু বলল, “আমার ডেন্টিস্ট বন্ধু করে দিয়েছে।”
“কী সর্বনাশ!”
“আমার ডেন্টিস্ট বন্ধু অপেক্ষা করছে, যাই ঠিক করিয়ে আনি!”
টুনি আনন্দে হাততালি দিয়ে বলল, “কয়েক দিন থাকুক ফারিহাপু–প্লিজ!”
“উঁহু।” ফারিহাপু বলল, “এইভাবে বাসায় গেলে আম্মু আমাকে খুন করে ফেলবে।”
ফারিহাপু তার দাঁত বের করে ছোটাচ্চুকে শেষবার ভয় দেখিয়ে বের হয়ে গেল। ছোটাচ্চু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “তুই দেখেছিস? ফারিহার কাণ্ডটা দেখেছিস? কারো মাথা খারাপ না হলে কেউ এ রকম করে?”
টুনি বলল, “ফারিহাপু হচ্ছে বেস্ট! আর কেউ ফারিহাপুর মতো নাই!”
ছোটাচ্চু দাঁত বের করে আনন্দে হাসতে হাসতে বলল, “বুঝেছিস? ফারিহাকে দেখতে এসেছে সে জন্য কেমন শিক্ষা দিলো দেখেছিস? দেখেছিস?”
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ, দেখেছি। কিন্তু তার মানে বুঝেছো?”
“কী? তার মানে কী?”
“তার মানে হচ্ছে এখন অন্য কোনো ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার-বিজনেসম্যান ফারিহাপুকে দেখতে আসার আগে—তোমার দেখতে যেতে হবে। আমাদের সবাইকে নিয়ে। বুঝেছো?”
ছোটাচ্চুর বুঝতে একটু সময় লাগল। যখন বুঝতে পারল তখন বোকার মতো একটু মাথা নাড়ল।
টুনি বলল, “আমরা সবাই কিন্তু শাড়ি পরে যাব। বুঝেছো?”
ছোটাচ্চু আবার মাথা নাড়ল।