উপন্যাস
গল্প
নাটিকা

দধীচি, পোকা ও বিশ্বকর্মা

দধীচি, পোকা ও বিশ্বকর্মা

আপাতত গভীর অরণ্যে ধ্যানে বসে আছি। বেশ মন দিয়েই ধ্যান করছি। শুধু কতকগুলো পোকা উড়ে উড়ে ক্রমাগত নাকে মুখে এসে পড়ছে আর এমন বিশ্রী লাগছে যে কী বলব! নাকে ঢুকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে, কানের ভেতর ঢুকে ওই গভীর গহুরটার ভেতরে কোনও জটিল রহস্য আছে কিনা সেটাও বোঝবার চেষ্টা করছে। একবার ঢোক গিলতে গিয়ে ডজনখানিক খেয়েও ফেলেছি। খেতে বেশ মৌরি মৌরি লাগল—কিন্তু যা বিকট গন্ধ! বমি করতে পারতাম, কিন্তু ধ্যান করতে বসলে তো আর বমি করা যায় না। তাড়াব—সে-উপায়ও নেই, কারণ এখন আমি সমাধিস্থ—একেবারে নিবাত-নিষ্কম্প হয়েই থাকতে হবে আমাকে।

আমি গোড়াতেই বুঝেছিলাম এরকম হবে। হাবুলকেও বলেছিলাম কথাটা। কিন্তু সে তখন ইন্দ্ৰত্ব লাভ করে কৈলাসে শিবের কাছে যাওয়ার কথা ভাবছে, আমলই দিলে না। বললে, যাঃ যাঃ, এসব ওসব ফ্যাচফ্যাঁচ করিসনি। অরণ্যে পোকা থাকেই এবং নাকে মুখেও তারা পড়ে। চুপচাপ বরদাস্ত করে যানইলে মহর্ষি হবি কেমন করে?

তা বটে। তবে একটা জিনিস বুঝেছি মহর্ষিদের মেজাজ অমন ভীমরুলের চাকের মতো কেন, আর কথায় কথায়ই তাঁরা অমন তেড়ে ব্রহ্মশাপ ঝাড়েন কেন! আরে বাপু, ধৈর্যের একটা সীমা তো আছে মানুষের। নাকে মুখে অমন পোকার উপদ্রব হলে শান্তনুর মতো শান্ত মানুষও যে দুর্বাসা হতে বাধ্য, এ ব্যাপারে আমার আর তিলমাত্রও সন্দেহ নেই।

আচ্ছা জ্বালাতনেই পড়া গেল বাস্তবিক। সত্যি বলছি, আমি প্যালারাম বাঁড়ুজ্যে, পালাজ্বরে ভুগি আর বাসকপাতার রস খাই, আমার কী দায়টা পড়েছে মহর্ষি-টহর্ষির মতো গোলমেলে ব্যাপারে পা বাড়িয়ে? পটলডাঙার গলিতে থাকি, পটোল দিয়ে শিংমাছের ঝোল আর আতপ চালের ভাত আমার বরাদ্দ, একমুঠো চানাচুর খেয়েছি কি পেটের গোলমালে আমার পটল তুলবার, জো! এ-হেন আমি—একেবারে গোরুর মতো বেচারা লোক, আমিই শেষে পড়ে গেলাম ছহাত লম্বা আর বিয়াল্লিশ ইঞ্চি বুক-ওলা টেনিদার পাল্লায়।

আর টেনিদার পাল্লায় পড়া মানে যে কী, যারা পড়োনিউহু, ভাবতেই পারবে না। গড়ের মাঠের গোরা থেকে চোরাবাজারের চালিয়াত দোকানদার পর্যন্ত ঠেঙিয়ে একেবারে রপ্ত। হাত তুললেই মনে হবে রদ্দা মারলে, দাঁত বার করলেই বোধ হবে কামড়ে দিলে বোধ হয়। এই ভৈরব ভয়ঙ্কর লোকের খপ্পরে পড়েই আমাকে এখন মহর্ষি হয়ে ধ্যান করতে হচ্ছে।

কী আর করি! বসে আছি তো বসেই আছি। অরণ্যের ভেতরে একটা ফুটো—সেখান দিয়ে দেখছি হতভাগ্য হাবুলের নাক বেরিয়ে আছে। পোকার কামড়ে জেরবার হয়ে ভাবছি। ওই নাকেই একটা ধাঁ করে ঘুষি বসাব কিনা, এমন সময় শিষ্য দধিমুখের প্রবেশ।

দধিমুখ বললে, প্রভু আছে নিবেদন।

বললাম, কহ বৎস, শুনিব নিশ্চয়।

দধিমুখ বললে, কালি নিশিশেষে

দেখিলাম আশ্চর্য স্বপন।
দেখিলাম প্রভু যেন দেবদেহ ধরি
আরোহিয়া অগ্নিময় রথে,
চলেছেন মহাব্যোমে ছায়াপথ করি বিদারণ!
সত্ৰাসে কহিনু কাঁদি–
ওয়াকওয়াক্ থুঃ।

আর কী, পোকা! থু থু করে দধিমুখ সেটা আমার গায়েই ঝেড়ে দিলে, শিষ্যের আস্পর্ধাখানা দ্যাখো একবার। রাগে আমার শরীর জ্বলে গেল,—টিকি খাড়া হয়ে উঠল ব্রহ্মতেজে। কিন্তু শিষ্যকে শাপ দিলেই তো সব মাটি। মনে মনে ভাবলাম, দাঁড়াও চাঁদ, তোমাকেও শায়েস্তা করতে হচ্ছে।

হেসে বললাম, আছে, আছে রহস্য অদ্ভুত।

নিরেট মগজ তব সহজে তো বুঝিবে না সেটা,
কাছে এসো কহি কানে কানে।

দধিমুখ হাঁ করে তাকিয়ে রইল। আমার মুখ থেকে যা আশা করছিল তা শুনতে পায়নি কী যে করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। দধিমুখ অসহায়ভাবে একবার চারদিকে তাকাল।

আমি বললাম, দাঁড়াইয়া কেন?

কাছে এসো, মুখ আনো কানের নিকটে,
তবে তো জানিবে সেই অদ্ভুত বারতা।
এসো বৎস–
বালক, আরও কাছে আয়–কাছে আয় না—

দধিমুখের বয়স অল্প—একেবারে আনাড়ি। ইতস্তত করে, যেই আমার কানের কাছে মুখ আনা, অমনি আমি পালটা জবাব দিলাম। মস্ত একটা হাঁ করলাম, সঙ্গে সঙ্গেই এক ঝাঁক পোকা পড়ল মুখের ভেতর। আর পত্রপাঠ সেগুলো থুথু শব্দে ফেরত গেল দধিমুখের গালে, নাকে, মুখে, কপালে। শিষ্যকে গুরুর স্নেহাশিস!

দধিমুখ অ্যাঁ-অ্যাঁ করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ঝড়াং করে ড্রপ সিন। খট করে বাঁশটা আমার নাকে পড়ল, তারপর সোজা নীচে। সিন শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় অঙ্ক সমাপ্ত।

তক্ষুনি স্টেজের ভেতর ছুটে এল ইন্দ্রবেশী হাবুল আর বিশ্বকর্মবেশী টেনিদা। টেনিদা বললে, এটা কী হল—অ্যাাঁ? এর মানেটা কী, শুনি?

আমি বিদ্রোহ করে বললাম, কিসের মানে?

টেনিদা দাঁত খিচিয়ে উঠল : প্লে-টা তুই মাটি করবি হতভাগা? কেন ওভাবে থুতু দিলি ক্যাবলার মুখে? একদম বরবাদ হয়ে গেল সিনটা। কী রকম হাসছে অডিয়ান্স—তা দেখছিস?

আমি বললাম, ক্যাবলাই তো থুতু দিয়েছে আগে।

টেনিদা বললে, হুম। দুটোর মাথাই একসঙ্গে ঠুকে দেব এক জোড়া বেলের মতো। যাক যা হয়ে গেছে সে তো গেছেই। এখন পরের সিনগুলোকে ভালো করে ম্যানেজ করা চাই–বুঝলি? যদি একটু বেয়াড়াপনা করিস তো একটা চাঁটির চোটে নাক একেবারে নাসিকে পাঠিয়ে দেব।

আমি বললাম, তুমি তো বলেই খালাস। কিন্তু স্টেজে হাঁ করে বসে ওই পোকা হজম করবে কে, সেটা শুনি?

টেনিদা হুঙ্কার করল, তুই করবি। আলবাত তোকেই করতে হবে। থিয়েটার করতে পারবি আর পোকা খেতে পারবি না? দরকার হলে মশা খেতে হবে, মাছি খেতে হবে–

হাবুল যোগ দিয়ে বললে, ইঁদুর খেতে হবে, বাদুড় খেতে হবে–

টেনিদা বললে, মাদুর খেতে হবে, এমন কি খাট-পালং খাওয়াও আশ্চর্য নয়। হুঁ হুঁ বাবা, এর নাম থিয়েটার।

–থিয়েটার করতে গেলে ওসব খেতে হয় নাকি?—আমি ক্ষীণ প্রতিবাদ জানালাম।

—হয় হয়। তুই এ-সবের কী বুঝিস র‍্যা—অ্যাাঁ? দানীবাবুর নাম শুনেছিস, দানীবাবু? তিনি যখন সীতার ভূমিকায় প্লে করতেন, তখন মনুমেন্ট খেয়ে নামতেন, সেটা জানিস?

—মনুমেন্ট খেয়ে!

—হ্যাঁ হ্যাঁ—মনুমেন্ট খেয়ে। যাঃ—যাঃ ক্যাঁচম্যাচ করিসনি। এক্ষুনি সিন উঠবে—কেটে পড়—নিজের পার্ট মুখস্থ করগে।

বেগুন-খেতে কাক-তাড়ানো কেলে হাঁড়ির মতো মুখ করে আমি স্টেজের একধারে এসে বসলাম। মনুমেন্ট খাওয়া! চালিয়াতির আর জায়গা পাওনি-মানুষে কখনও মনুমেন্ট খেতে পারে। কিন্তু প্রতিবাদ করলেই চাঁটি, তাই অমন বোম্বাই চালখানাও হজম করে গেছি।

থিয়েটার করতে এলেই পোকা খেতে হবে! কেন রে বাপু, তোমাদের সঙ্গে থিয়েটার না করতে পারলে তো আমার আর শিঙিমাছের ঝোল হজম হচ্ছিল না কিনা! আমি প্যালারাম বাঁড়ুজ্যে, আমার পেটজোড়া পিলে—দায় পড়েছিল আমার একমুখ কুটকুটে দাড়ি নিয়ে দধীচি সাজতে! যত সব জোচ্চোরের পাল্লায় পড়ে পড়ে এখন আমার এই হাঁড়ির হাল।

দিব্যি বসেছিলাম চাটুজ্যেদের রোয়াকে—ওরা উঠনে হাত-পা নেড়ে রিহার্সেল দিচ্ছিল। কিন্তু দধীচি সাজবার ছেলে পাওয়া যাচ্ছিল না। টেনিদা তার ভাঁটার মতো চোখ পাকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে এসে খপ করে আমার কাঁধটা ধরে ফেলল : অ্যাই পাওয়া গেছে।

আমি বললাম, অ্যাঁ-অ্যাঁ—

টেনিদা বাঘাটে গলায় বললে, অ্যাঁ-অ্যাঁ নয়, হ্যাঁ হ্যাঁ। দিব্যি মুনি-ঋষির মতো চেহারা তোর, বেশ অহিংস ছাগল ছাগল ভাব। গালে ছাগলের মতো দাড়ি লাগিয়ে দেব,যা মানাবে, আঃ! দেখাবে একেবারে রায়বাড়ির কেশোবুড়োটার মতো।

আপাতত এই তার পরিণতি।

এ-অঙ্কে আমার পার্ট নেই, তাই স্টেজের অন্ধকার একটা কোনায় ঝিম মেরে বসে আছি। দাড়িটা হাতে খুলে নিয়েছি, আর মশা তাড়াচ্ছি প্রাণপণে। নাঃ—এ অসম্ভব। আবার স্টেজে গেলেই ধ্যানে বসতে হবে এবং ধ্যানে বসা মানেই পোকা। আর কী মারাত্মক সে পোকা।

কী করা যায়?

রাগে হাড়-পিত্তি জ্বলছে। দয়া করে পার্ট করছি এই ঢের, তার ওপর আবার অপমান। এমন করে শাসানো। চাঁটি হাঁকড়ে নাক নাসিকে উড়িয়ে দেবে। ইস, শখখানা দ্যাখো একবার। না হয় তোমার আছেই পিরামিডের মতো উঁচু একটা অতিকায় নাক, আর আমার নাকটা না হয় চীনেম্যানদের মতো থ্যাবড়া, তাই বলে নাক নিয়ে অপমান। আচ্ছা, দাঁড়াও, দাঁড়াও। এই খাঁদা নাককেই–মৈনাকের মতো উঁচু করে তোমার ভরাড়ুবি করে ছাড়ব।

কিন্তু কী করা যায় বাস্তবিক?

ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছি না, ও-দিকে স্টেজে তখন দারুণ বক্তৃতা দিচ্ছে টেনিদা। এমন এক-একটা লাফ মারছে যে চাটুজ্যেদের ছারপোকা-ভরা পুরনো তক্তপোশটা একেবারে মড়মড় করে উঠছে। থিয়েটার করছে না হাই-জাম্প দিচ্ছে বোঝা মুস্কিল।

স্টেজ-ম্যানেজার হাবুল পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। বললে, এই প্যালা, অমন ভূতের মতো অন্ধকারে বসে আছিস যে?

বললাম, একটু চা খাওয়া না ভাই হাবুল, গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

হাবুল নাকটা কুঁচকে বললে, নেঃ নেঃ, অত চা খায় না। যা পার্ট করছিস, আবার চা!

অ্যাডিং ইনসাল্ট টু ইনজুরিঅ্যাঁ। আমি অন্ধকারে দাঁত বের করে হাবুলকে ভেংচে দিলাম, হাবুল দেখতে পেলে না।

চম্পট দেব নাকি দাড়িকাড়ি নিয়ে? সোজা চলে যাব বাড়িতে? দধীচির সিনে যখন দেখবে আমি বেমালুম হাওয়া—তখন টের পাবে মজাটা কাকে বলে। উহু—তাতে সুবিধে হবে না। তারপর কাল সকালে আমায় বাঁচায় কে? পটলডাঙার বিখ্যাত টেনিদার বিখ্যাত চাঁটিতে স্রেট পটল তুলে বসতে হবে।

না-না, ওসব নয়। সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। এমন জব্দ করে দেব যে কিল খেয়ে কিলটি সোনামুখ করে গিলে নিতে হবে। টেনিদার বত্রিশ পাটি দাঁতের সঙ্গে আর একটি দাঁত গজিয়ে দেব—যার নাম আক্কেল দাঁত। আর সেই সঙ্গে টেনিদার ধামাধরা ওই স্টেজ-ম্যানেজার শ্রীমান হাবুল সেনকেও টেরটি পাইয়ে দিতে হচ্ছে।

ভগবানকে ডেকে বললাম, প্রভু, আলো দাও—এ অন্ধকারে পথ দেখাও! এবং প্রভু আলো দিলেন।

হাবুলকে বললাম, ভাই, পাঁচ মিনিটের জন্যে একটু বাড়ি থেকে আসছি।

হাবুল আঁতকে বললে, কেন?

—এই পেটটা একটু কেমন কেমন—

হাবুল বললে, সেরেছে। যত সব পেটরোগা নিয়ে কারবার—শেষটায় ডোবাবে বোধ হচ্ছে। একটু পরেই যে তোর পার্ট রে।

আমি বললাম, না, না, এক্ষুনি আসছি।

মনে মনে বললাম, পেট কার কেমন একটু পরেই দেখা যাবে এখন। মনুমেন্ট খাইয়ে পার্ট করাতে চাও—দেখি আরও কত গুরুপাক জিনিস হজম করতে পারো।

ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমি ফিরলাম। ডাক্তার ছোটকাকার ওষুধের আলমারিটা হাতড়াতে বেশি সময় লাগেনি—একেবারে মোক্ষম ওষুধটি নিয়ে এসেছি। হিসেব করে দেখেছি আমার পার্ট আসতে আরও প্রায় ঘণ্টাখানেক দেরি—এর মধ্যেই কাজ হয়ে যাবে।

চায়ের বড় কেটলিটা যেখানে উনানের ওপর ফুটছে, সেখানে গেলাম। তখন কেটলির দিকে কারও মন নেই, সবাই উইংসে ঝুঁকে পড়ে প্লে দেখছে। টেনিদা লাফাচ্ছে ভীমসেনের মতো—আর সে কী ঘন ঘন ক্ল্যাপ। দাঁড়াও দাঁড়াওকত ক্ল্যাপ চাও দেখব।

পিরামিডের মতো নাক উঁচু করে বিজয়-গৌরবে ফিরে এল টেনিদা। একগাল হাসি ছড়িয়ে বললে, কেমন পার্ট হল রে হাবুল?

হাবুল কৃতার্থভাবে বললে, চমৎকার, চমৎকার। তুমি ছাড়া এমন পার্ট আর কে করতে পারত? অডিয়ান্স বলছে, শাবাশ, শাবাশ!

অডিয়ান্স কেন শাবাশ শাবাশ বলছে আমি জানি। তারা বুঝতেই পারেনি যে ওটা ভীমের না বিশ্বকর্মার পার্ট। কিন্তু আসল পার্ট করতে আর একটুখানি দেরি আছে—আমি মনে মনে বললাম।

স্টেজ কাঁপিয়ে টেনিদা হুঙ্কার ছাড়লে, চা—ওরে চা আন—

হাবুল উৰ্বশ্বাসে ছুটল।

 

আবার ড্রপ উঠেছে। দধীচির ভূমিকায় আমি ধ্যানস্থ হয়ে বসে পোকা খাচ্ছি। শিষ্য দধিমুখ এবার দূরে দাঁড়িয়ে আছে—আগের অভিজ্ঞতাটা ভোলেনি।

বিশ্বকর্মা আর ইন্দ্রের প্রবেশ। টেনিদা আর হাবুল।

হাবুল বললে, প্রভু, গুরুদেব,
আসিয়াছি শিবের আদেশে।
তব অস্থি দিয়া।
যেই বজ্র হইবে নির্মাণ—

টেনিদা বললে,

দেখাইব বিশ্বকর্মা যশ।
হেন অস্ত্র তুলিব গড়িয়া,
ঘোরনাদে কাঁপাইবে সসাগরা ব্রহ্মাণ্ড বিশাল
দীপ্ততেজে দগ্ধ হবে স্থাবর-জঙ্গম,–

তারপরেই স্বগতোক্তি করলে, উঃ, জোর কামড় মেরেছে পেটে মাইরি!

হাবুল চাপা গলায় বললে, আমারও পেটটা যেন কেমন গোলাচ্ছে রে!

আড়চোখে আমি একবার তাকিয়ে দেখলাম মাত্র। মনুমেন্ট খেয়ে হজম করতে পারো, দেখিই না হজমের জোর কত! আমি বললাম, তিষ্ঠ, তিষ্ঠ—

আগে করি ইষ্ট নাম ধ্যান–
ধ্যান ভঙ্গ যতক্ষণ নাহি হয়,
চুপচাপ থাকো ততক্ষণ।
তারপরে তনুত্যাগ করিব নিশ্চয়।

আমি ধ্যানে বসলাম। সহজে এধ্যান ভাঙছে না। পোকার উপদ্রব লেগেই আছে—তা থাক। আমি কষ্ট না করলে টেনিদা আর হাবুলের কেষ্ট মিলবে না। গরম চায়ের সঙ্গে কড়া পার্গেটিভ—এখনই কী হয়েছে!

টেনিদা মুখ বাঁকা করলে, শিগগির ধ্যান শেষ কর মাইরি। জোর পেট কামড়াচ্ছে রে!

আমি বললাম, চুপ। ধ্যান ভঙ্গ করিয়ো না

ব্ৰহ্মশাপ লাগিবে তা হলে—

ধ্যান কি সত্যি সত্যিই করছি নাকি! আরে ধ্যাৎ! আমি আড়চোখে দেখছি টেনিদার মুখ ফ্যাকাশে মেরে গেছে। হাবুলের অবস্থাও তথৈবচ। ভগবান করুণাময়।

টেনিদা কাতরস্বরে বললে, ওরে প্যালা, গেলাম যে। দোহাই তোর, শিগগির ধ্যান শেষ কর—তোর পায়ে পড়ছি প্যালা–

হাবুল বললে, ওরে, আমারও যে প্রাণ যায়–

আমি একেবারে নট-নড়নচড়ন। সামলাও এখন। মুনি-ঋষির ধ্যান-দেহত্যাগের ব্যাপার—এ কী সহজে ভাঙবার জিনিস!

–বাপস গেলাম—এক লক্ষে টেনিদা অদৃশ্য। একেবারে সোজা অন্ধকার আমতলার দিকে। পেছনে পেছনে হাবুল।

আর থিয়েটার?

সে কথা বলে আর কী হবে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *