সপ্তম পরিচ্ছেদ
রাসবিহারী বলিলেন, আমরাই নোটিশ দিয়েছি, আবার আমরাই যদি তাকে রদ করতে যাই, আর পাঁচজন প্রজার কাছে সেটা কি-রকম দেখাবে, একবার ভেবে দেখ দিকি মা।
বিজয়া কহিল, এই মর্মে একখানা চিঠি লিখে কেন তার কাছে পাঠিয়ে দিন না। আমার নিশ্চয় বোধ হচ্ছে, তিনি শুধু অপমানের ভয়েই এখানে আসতে সাহস করেন না।
রাসবিহারী জিজ্ঞাসা করিলেন, অপমান কিসের?
বিজয়া বলিল, তিনি নিশ্চয় ভেবেছেন, তাঁর প্রার্থনা আমরা মঞ্জুর করব না।
রাসবিহারী বিদ্রূপের ভাবে কহিলেন, মহা মানী লোক দেখচি! তাই অপমানটা ঘাড়ে নিয়ে আমাদের যেচে তাঁকে থাকতে দিতে হবে?
বিজয়া কাতর হইয়া কহিল, তাতেও দোষ নেই কাকাবাবু! অযাচিত দয়া করার মধ্যে কোন লজ্জা নেই।
রাসবিহারী কহিলেন, ভাল, লজ্জা নাহয় নেই; কিন্তু আমরা যে সমাজ-প্রতিষ্ঠার সংকল্প করেচি, তার কি হবে বল দেখি?
বিজয়া বলিল, তার অন্য কোন ব্যবস্থাও আমরা করতে পারব।
রাসবিহারী মনে মনে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া প্রকাশ্যে একটু হাসিয়া বলিলেন, তোমার বাবা যথেষ্ট টাকা রেখে গেছেন, তুমি অন্য ব্যবস্থাও করতে পার সে আমি বুঝলুম; কিন্তু কথাটা আমাকে বুঝিয়ে দাও দেখি মা, যাকে আজ পর্যন্ত কখনো চোখেও দেখনি, আমাদের সকলের অনুরোধ এড়িয়ে তার জন্যেই বা তোমার অত ব্যথা কেন? ভগবানের করুণায় তোমার আরও পাঁচজন প্রজা আছে, আরও দশজন খাতক আছে; তাদের সকলের জন্যেই কি এই ব্যবস্থা করতে পারবে, না, পারলেই তাতে মঙ্গল হবে—সে জবাব আমাকে দাও দেখি বিজয়া?
বিজয়া কহিল, আপনাকে ত বলেচি, এটা বাবার অনুরোধ। তা ছাড়া আমি শুনেচি—
কি শুনেচ?
বিদ্রূপের ভয়ে তাহার চিকিৎসা সম্বন্ধে তত্ত্বানুসন্ধানের কথাটা বিজয়া কহিল না, শুধু বলিল, আমি শুনেচি, তিনি ‘একঘরে’। গৃহহীন করলে আত্মীয়-কুটুম্ব কারও বাড়িতেই তাঁর আশ্রয় পাবার পথ নেই। তা ছাড়া, ‘গৃহহীন’ কথাটা মনে করলেই আমার ভারি কষ্ট হয় কাকাবাবু।
রাসবিহারী কণ্ঠস্বর করুণায় গদ্গদ করিয়া বলিলেন, তোমার এইটুকু বয়সে যদি এই কষ্ট হয়, আমার এতখানি বয়সে সে কষ্ট কতবড় হতে পারে, একটু ভেবে দেখ দেখি? আর আমার দীর্ঘ জীবনে এই কি প্রথম অপ্রিয় কর্তব্যের সুমুখে দাঁড়িয়েছি বিজয়া? না, তা নয়! কর্তব্য চিরদিনই আমার কর্তব্য! তার কাছে হৃদয়-বৃত্তির কোন দাবি-দাওয়া নেই। বনমালী যে কঠোর দায়িত্ব আমার উপরে ন্যস্ত করে গেছেন, সে ভার আমাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বহন করতেই হবে—তাতে যত দুঃখ-কষ্টই না আমাকে ভোগ করতে হোক।
হয় আমাকে সমস্ত দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দাও, নইলে কিছুতেই তোমার এ অসঙ্গত অনুরোধ আমি রাখতে পারব না।
বিজয়া অধোমুখে নীরবে বসিয়া রহিল। পিতার অপরাধে তাহার নিরপরাধ পুত্রকে গৃহ-ছাড়া করার সঙ্কল্প ,তাহার অন্তরের মধ্যে যে বেদনা দিতে লাগিল, বয়সের অনুপাত কষিয়া এই বৃদ্ধ যে তাহার অষ্টগুণ অধিক ব্যথা সহ্য করিয়াও কর্তব্যপালনে বদ্ধপরিকর হইয়াছেন, তাহা সে মনের মধ্যেও ঠিকমত গ্রহণ করিতে পারিল না—বরঞ্চ এ যেন শুধু একজন নিরুপায় হতভাগ্যের প্রতি প্রবলের একান্ত হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতার মতই তাহাকে বাজিতে লাগিল। কিন্তু জোর করিয়া নিজের ইচ্ছা পরিচালন করিবার সাহসও তাহার নাই। অথচ ইহাও তাহার অগোচর ছিল না যে, পল্লীগ্রামে সমারোহপূর্বক ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠার খ্যাতিলাভের উচ্চাকাঙ্ক্ষাতেই বৃদ্ধ পিতার পশ্চাতে দাঁড়াইয়া বিলাসবিহারী এই জিদ এবং জবরদস্তি করিতেছে।
রাসবিহারী আর কিছু বলিলেন না। বিজয়াও খানিকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া নীরবে সম্মতি দিল বটে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তাহার পরদুঃখকাতর স্নেহকোমল নারীচিত্ত এই বৃদ্ধের প্রতি অশ্রদ্ধা ও তাহার পুত্রের প্রতি বিতৃষ্ণায় ভরিয়া উঠিল।
রাসবিহারী বিষয়ী লোক; এ কথা তাঁহার অবিদিত ছিল না যে, যে মালিক, তাহাকে তর্কের বেলায় ষোল আনা পরাজয় করিয়া আদায়ের বেলায় আট আনার বেশী লোভ করিতে নাই। কারণ সে পাওনা শেষ পর্যন্ত পাকা হয় না। সুতরাং দাক্ষিণ্য-প্রকাশের দ্বারা লাভবান হইবার যদি কোন সময় থাকে ত সে এই! বিজয়ার মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, মা, তোমার জিনিস তুমি দান করবে, আমি বাদ সাধব কেন? আমি শুধু এই দেখাতে চেয়েছিলুম যে, বিলাস যা করতে চেয়েছিল তা স্বার্থের জন্যও নয়, রাগের জন্যেও নয়, শুধু কর্তব্য বলেই চেয়েছিল। একদিন আমার বিষয়, তোমার বাবার বিষয়—সব এক হয়েই তোমাদের দুজনের হাতে পড়বে; সেদিন বুদ্ধি দেবার জন্যে এ বুড়োকেও খুঁজে পাবে না। সেদিন তোমাদের উভয়ের মতের অমিল না হয়, সেদিন তোমার স্বামীর প্রত্যেক কাজটিকে যাতে অভ্রান্ত বলে শ্রদ্ধা করতে পার, বিশ্বাস করতে পার—কেবল এই আমি চেয়েছি। নইলে দান করতে, দয়া করতে সেও জানে, আমিও জানি। কিন্তু সে দান অপাত্রে হলে যে কিছুতে চলবে না, এই শুধু তোমার কাছে আমার প্রমাণ করা। এখন বুঝলে মা, কেন আমরা জগদীশের ছেলেকে একবিন্দু দয়া করতে চাইনি এবং কেন সে দয়া একবারে অসম্ভব? বলিয়া বৃদ্ধ সস্নেহ-হাস্যে বিজয়ার মুখের প্রতি চাহিয়া রহিলেন। এই পরম সারগর্ভ ও অকাট্য যুক্তিযুক্ত উপদেশাবলীর বিরুদ্ধে তর্ক করা চলে না—বিজয়া নীরবেই বসিয়া রহিল। রাসবিহারী পুনশ্চ কহিলেন, এখন বুঝলে মা বিজয়া, বিলাস ছেলেমানুষ হলেও কতদূর পর্যন্ত ভবিষ্যৎ ভেবে কাজ করে! ঐ যে তোমাকে বললুম, আমি ত এই কাজেই চুল পাকালুম, কিন্তু জমিদারি-কাজে ওর চাল বুঝতে আমাকে মাঝে মাঝে স্তম্ভিত হয়ে চিন্তা করতে হয়।
বিজয়া শুধু ঘাড় নাড়িয়া সায় দিল, কথা কহিল না।
সাড়ে-চারটে বাজে বলিয়া রাসবিহারী লাঠিটা হাতে করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, এই সমাজ প্রতিষ্ঠার চিন্তায় বিলাস যে কি রকম উতলা হয়ে উঠেছে, তা প্রকাশ করে বলা যায় না। তার ধ্যান-জ্ঞান-ধারণা সমস্তই হয়েছে এখন ওই। এখন ঈশ্বরের চরণে কেবল প্রার্থনা আমার এই, যেন সে শুভদিনটি আমি চোখে দেখে যেতে পারি। বলিয়া তিনি দুই হাত যুক্ত করিয়া ব্রহ্মের উদ্দেশে বার বার নমস্কার করিলেন। দ্বারের কাছে আসিয়া তিনি সহসা দাঁড়াইয়া বলিয়া উঠিলেন, ছোকরা একবার আমার কাছে এলেও নাহয় যা হোক একটা বিবেচনা করার চেষ্টা করতুম; কিন্তু তাও ত কখনও—অতি হতভাগা, অতি হতভাগা! বাপের স্বভাব একেবারে ষোলকলায় পেয়েছে দেখতে পাচ্চি—বলিতে বলিতে তিনি বাহির হইয়া গেলেন।
সেইখানে একভাবে বসিয়া বিজয়া কি যে ভাবিতে লাগিল, তাহার ঠিকানা নাই। অকস্মাৎ বাহিরের দিকে নজর পড়ায় যাই দেখিল, বেলা পড়িয়া আসিতেছে, অমনি নদীতীরের অস্বাস্থ্যকর বাতাস তাহাকে সজোরে টান দিয়া যেন আসন ছাড়িয়া তুলিয়া দিল, এবং আজিও সে বৃদ্ধ দরোয়ানজীকে ডাকিয়া লইয়া বায়ুসেবনের ছলে বাহির হইয়া পড়িল।
ঠিক সেইখানে বসিয়া আজিও সেই লোকটি মাছ ধরিতেছিল। অনেকটা দূর হইতে বিজয়া তাহা দেখিতে পাইলেও কাছাকাছি আসিয়া যেন দেখিতেই পায় নাই , এমনভাবে চলিয়া যাইতেছিল, সহসা কানাই সিং পিছন হইতে ডাক দিয়া উঠিল, সেলাম বাবুজী, শিকার মিলা?
কথাটা কানে যাইবামাএই তাহার মূল পর্যন্ত বিজয়ার আরক্ত হইয়া উঠিল । যাঁহারা মনে করেন যথার্থ বন্ধুত্বের জন্য অনেকদিন এবং অনেক কথাবার্তা হওয়া চাই-ই, তাঁহাদের এইখানে স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন যে, না, তাহা অত্যাবশ্যক নহে। বিজয়া ফিরিয়া দাঁড়াইতেই লোকটি ছিপ রাখিয়া দিয়া নমস্কার করিয়া কাছে আসিয়া দাঁড়াইল, এবং সহাস্যে কহিল, হাঁ দেশের প্রতি আপনার সত্যিকার টান আছে বটে। এমন কি, তার ম্যালেরিয়াটা পর্যন্ত না নিলে আপনার চলছে না দেখছি।
বিজয়া হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করিল, আপনার নেওয়া হয়ে গেছে বোধ হয়? কিন্তু দেখে ত তা মনে হয় না।
লোকটি বলিল, ডাক্তারদের একটু সবুর করে নিতে হয়। অমন তাড়াতাড়ি—
কথাটা শেষ না হইতেই বিজয়া প্রশ্ন করিল, আপনি ডাক্তার নাকি?
লোকটি অপ্রতিভ হইয়া সহসা উত্তর দিতে পারিল না। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলাইয়া লইয়া পরিহাসের ভঙ্গীতে কহিল, তা বৈ কি! একজন কতবড় ডাক্তারের প্রতিবেশী আমরা! সবাইকে দিয়ে-থুয়ে তবে ত আমাদের—কি বলেন?
বিজয়া তৎক্ষণাৎ কোন কথাই বলিল না; ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া পরে কহিল, শুধু প্রতিবেশী নয়, তিনি যে আপনার একজন বন্ধু, সে আমি অনুমান করেছিলুম। আমার কথা তাঁকে গল্প করেছেন নাকি?
লোকটা হাসিয়া কহিল, আপনি তাকে একটা অপদার্থ হতভাগা মনে করেন, এ ত পুরোনো গল্প—সবাই করে। এ আর নূতন করে বলবার দরকার কি? তবে একদিন হয়ত সে আপনার সঙ্গে দেখা করতে যাবে।
বিজয়া মনে মনে অতিশয় লজ্জিত হইয়া কহিল, আমার সঙ্গে দেখা করায় তাঁর লাভ কি? কিন্তু তাঁর সম্বন্ধে ত আমি এ রকম কথা আপনাকে বলিনি।
না বলে থাকলেও বলাই ত উচিত ছিল।
উচিত ছিল কেন?
যার বাড়ি-ঘরদোর বিকিয়ে যায়, তাকে সবাই হতভাগ্য বলে। আমরাও বলি। সুমুখে না পারি, আড়ালেও ত আমরা বলতে পারি।
বিজয়া হাসিতে লাগিল, কহিল, আপনি ত তাঁর খুব ভাল বন্ধু!
লোকটি ঘাড় নাড়িয়া বলিল, সে ঠিক। এমন কি, তার হয়ে আমি নিজেই আপনাকে ধরতুম, যদি না জানতুম, আপনি সদুদ্দেশ্যেই তার বাড়িখানি গ্রহণ করচেন।
বিজয়া একটিবার মাত্র মুখ তুলিয়া চাহিল, কিন্তু এ সম্বন্ধে কোন কথা কহিল না।
কথায় কথায় আজ তাহারা আরও একটু অধিক দূর পর্যন্ত অগ্রসর হইয়া গিয়াছিল। দেখা গেল, ও-পারে একদল লোক সার বাঁধিয়া নরেন্দ্রবাবুর বাটীর দিকে চলিয়াছে। তাহার মধ্যে পঞ্চাশ হইতে পনর পর্যন্ত সকল বয়সের লোকই ছিল। লোকটি দেখাইয়া কহিল, ওরা কোথায় যাচ্ছে জানেন? নরেনবাবুর ইস্কুলে পড়তে।
বিজয়া আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তিনি এ ব্যবসাও করেন নাকি? কিন্তু যতদূর বুঝতে পারছি, বিনা পয়সায়—ঠিক না?
লোকটি হাসিমুখে কহিল, তাকে ঠিক চিনেচেন। অপদার্থ লোকের কোথাও আত্মগোপন করা চলে না। পরে অপেক্ষাকৃত গম্ভীর হইয়া কহিল, নরেন বলে, আমাদের দেশে সত্যিকার চাষী নেই। চাষ করা পৈতৃক পেশা; তাই সময়ে-অসময়ে জমিতে দু’বার লাঙ্গল দিয়ে, বীজ ছড়িয়ে আকাশের পানে হাঁ করে চেয়ে বসে থাকে। একে চাষ করা বলে না, লটারির খেলা বলে! কোন্ জমিতে কখন সার দিতে হয়, কাকে সার বলে, কাকে সত্যিকার চাষ করা বলে—এ-সব জানেই না। বিলাত থাকতে ডাক্তারি পড়ার সঙ্গে এ বিদ্যেটাও সে শিখে এসেছিল। ভাল কথা, একদিন যাবেন তার ইস্কুল দেখতে? মাঠের মাঝখানে গাছের তলায় বাপ-ব্যাটা-ঠাকুদ্দায় মিলে যেখানে পাঠশালা বসে, সেখানে?
যাইবার জন্য বিজয়া তৎক্ষণাৎ উদ্যত হইয়া উঠিল, কিন্তু পরক্ষণেই কৌতূহল দমন করিয়া শুধু কহিল, না থাক । জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা, অতবড় বাড়ি থাকতে তিনি গাছতলায় পাঠশালা বসান কেন?
লোকটি বলিল, এ-সব শিক্ষা ত শুধু কেবল মুখের কথায় বই মুখস্থ করিয়ে দেওয়া যায় না! তাদের হাতেনাতে চাষ করিয়ে দেখাতে হয় যে, এ জিনিসটা রীতিমত শিখে করলে দু-গুণো, এমন কি চার-পাঁচ-গুণো ফসলও পাওয়া যায়। তার জন্যে মাঠ দরকার, চাষ করা দরকার। কপাল ঠুকে মেঘের পানে চেয়ে হাত পেতে বসে থাকা দরকার নয়। এখন বুঝলেন, কেন তার পাঠশালা গাছতলায় বসে?
একবার যদি তার ইস্কুলের মাঠের ফসল দেখেন, আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে, তা নিশ্চয়ই বলতে পারি। এখনো ত বেলা আছে—আজই চলুন না—ঐ ত দেখা যাচ্চে।
বিজয়ার মুখের ভাব ক্রমশঃ গম্ভীর এবং কঠিন হইয়া আসিতেছিল; কহিল, না, আজ থাক।
লোকটি সহজেই বলিল, তবে থাক। চলুন, খানিকটা আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি— বলিয়া সঙ্গে সঙ্গে চলিতে লাগিল। মিনিট পাঁচ-ছয় বিজয়া একটা কথাও কহিল না, ভিতরে ভিতরে কেমন যেন তাহার লজ্জা করিতে লাগিল—অথচ লজ্জার হেতুও সে ভাবিয়া পাইল না। লোকটি পুনরায় কথা কহিল, বলিল, আপনি ধর্মের জন্যই যখন তার বাড়িটা নিচ্চেন—এই ক’ বিঘে জমি যখন ভাল কাজেই লাগছে, তখন এটা ত আপনি অনায়াসেই ছেড়ে দিতে পারেন? বলিয়া সে মৃদু মৃদু হাসিতে লাগিল।
কিন্তু প্রত্যুত্তরে বিজয়া গম্ভীর হইয়া কহিল, এই অনুরোধ করবার জন্যে তাঁর তরফ থেকে আপনার কোন অধিকার আছে? বলিয়া আড়চোখে চাহিয়া দেখিল, লোকটির হাসিমুখের কোন ব্যতিক্রম ঘটিল না।
সে বলিল, এ অধিকার দেবার ওপর নির্ভর করে না, নেবার ওপর নির্ভর করে। যা ভাল কাজ, তার অধিকার মানুষ সঙ্গে সঙ্গেই ভগবানের কাছে পায়—মানুষের কাছে হাত পেতে নিতে হয় না। যে অনুগ্রহ প্রার্থনা করার জন্যে আপনি মনে মনে বিরক্ত হলেন, পেলে কারা পেতো জানেন? দেশের নিরন্ন কৃষকেরা। আমাদের শাস্ত্রে আছে, দরিদ্র ভগবানের একটা বিশেষ মূর্তি। তাঁর সেবার অধিকার ত সকলেরই আছে। সে অধিকার নরেনের কাছে চাইতে যাব কেন বলুন? বলিয়া সে হাসিতে লাগিল।
বিজয়া চলিতে চলিতে বলিল, কিন্তু আপনার বন্ধু ত শুধু এই জন্যেই এখানে বসে থাকতে পারবেন না?
লোকটি কহিল, না। কিন্তু তিনি হয়ত আমার ওপরে এ ভার দিয়ে যেতে পারেন।
বিজয়ার ওষ্ঠাধরে একটা চাপা হাসি খেলা করিয়া গেল; কিন্তু অত্যন্ত গম্ভীর স্বরে বলিল, সে আমি অনুমান করেছিলুম।
লোকটি বলিল, করবারই কথা কিনা। এ সকল কাজ আগে ছিল দেশের ভূস্বামীর। তাদের ব্রহ্মোত্তর দিতে হত। এখন সে দায় নেই বটে, কিন্তু তার জের মেটেনি। তাই দু-চার বিঘে কেউ ঠকিয়ে নেবার চেষ্টা করলেই তারা পূর্ব-সংস্কারবশে টের পান। বলিয়া সে আবার হাসিতে লাগিল।
বিজয়া নিজেও এ হাসিতে যোগ দিতে গেল, কিন্তু পারিল না। এই সরল পরিহাস তাহার অন্তরের কোথায় গিয়া যেন বিঁধিয়া রহিল। কিছুক্ষণ নিঃশব্দে চলিয়া হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিল, আপনি নিজেও ত আপনার বন্ধুকে আশ্রয় দিতে পারেন?
কিন্তু আমি ত এখানে থাকিনে। বোধ হয়, এক সপ্তাহ পরেই চলে যাবো।
বিজয়া অন্তরের মধ্যে যেন চমকাইয়া উঠিল; কহিল, কিন্তু বাড়ি যখন এখানে তখন নিশ্চয়ই ঘন ঘন যাতায়াত করতে হয়।
লোকটি মাথা নাড়িয়া বলিল, না, আর বোধ হয় আমাকে আসতে হবে না।
বিজয়ার বুকের মধ্যে তোলপাড় করিতে লাগিল। সে মনে মনে বুঝিল, এ সম্বন্ধে অযথা প্রশ্ন করা আর কোনমতেই উচিত হইবে না; কিন্তু কিছুতেই কৌতূহল দমন করিতে পারিল না। ধীরে ধীরে কহিল, এখানে বাড়ির লোকের ভার নেবার লোক আপনার নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু—
লোকটি হাসিয়া বলিল, না, সে রকম লোক কেউ নেই।
তা হলে আপনার বাপ-মা—
আমার বাপ-মা, ভাই-বোন কেউ নেই—এই যে, আপনার বাড়ির সুমুখে এসে পড়া গেছে। নমস্কার, আমি চললুম—বলিয়া সে থমকিয়া দাঁড়াইল।
বিজয়া আর তাহার মুখের পানে চাহিতে পারিল না; কিন্তু মৃদুকণ্ঠে কহিল, ভেতরে আসবেন না ?
না, ফিরে যেতে আমার অন্ধকার হয়ে যাবে, নমস্কার।
বিজয়া হাত তুলিয়া প্রতি-নমস্কার করিয়া অত্যন্ত সঙ্কোচের সহিত ধীরে ধীরে বলিল, আপনার বন্ধুকে একবার রাসবিহারীবাবুর কাছে যেতে বলতে পারেন না?
লোকটি বিস্মিত হইয়া বলিল, তাঁর কাছে কেন?
তিনিই বাবার সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি দেখেন কিনা!
সে আমি জানি। কিন্তু তাঁর কাছে যেতে কেন বলছেন?
বিজয়া এ প্রশ্নের আর কোন উত্তর দিতে পারিল না। লোকটি ক্ষণকাল স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া বোধ করি প্রতীক্ষা করিল। পরে কহিল, আমার ফিরতে রাত হয়ে যাবে—আমি আসি, বলিয়া দ্রুতপদে প্রস্থান করিল।
অষ্টম পরিচ্ছেদ
বিজয়াদের বাটী-সংলগ্ন উদ্যানের এই দিকের অংশটা খুব বড়। সুদীর্ঘ আম-কাঁঠাল গাছের তলায় তখন অন্ধকার ঘন হইয়া আসিতেছিল, বুড়া দরোয়ান কহিল, মাইজী, একটু ঘুরে সদর রাস্তা-দিয়ে গেলে ভাল হতো না?
এ সকল দিকে দৃষ্টিপাত করিবার মত মনের অবস্থা বিজয়ার ছিল না, সে শুধু একটা ‘না’ বলিয়াই তাড়াতাড়ি অন্ধকার বাগানের ভিতর দিয়া বাটীর দিকে অগ্রসর হইয়া গেল। যে দুইটা কথা তাহার মনকে সর্বাপেক্ষা অধিক আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছিল, তাহার একটা এই যে, এত কথাবার্তার মধ্যেও শুধু নারীর পক্ষে ভদ্ররীতি-বিগর্হিত বলিয়াই ইহার নামটা পর্যন্ত জানা হইল না। দ্বিতীয়টি এই যে, দু’দিন পরে ইনি কোথায় চলিয়া যাইবেন—প্রশ্নটা শতবার মুখে আসিয়া পড়িলেও, শতবারেই কেবল লজ্জাতেই মুখে বাধিল। ইঁহার সম্বন্ধে একটা বিষয় প্রথম হইতেই বিজয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিল যে, ইনি যেই হোন যথেষ্ট সুশিক্ষিত, এবং পল্লীগ্রাম জন্মস্থান হইলেও অনাত্মীয় ভদ্রমহিলার সহিত অসঙ্কোচে আলাপ করিবার শিক্ষা এবং অভ্যাস ইঁহার আছে। ব্রাহ্মসমাজভুক্ত না হইয়াও এ শিক্ষা যে তিনি কি করিয়া কোথায় পাইলেন, ভাবিতে ভাবিতে বাড়িতে পা দিতেই, পরেশের মা আসিয়া জানাইল যে, বহুক্ষণ পর্যন্ত বিলাসবাবু বাহিরের বসিবার ঘরে অপেক্ষা করিতেছেন। শুনিবামাত্রই তাহার মন ক্লান্তি ও বিরক্তিতে ভরিয়া উঠিল। এই লোকটি সেই যে সেদিন রাগ করিয়া গিয়াছিল, আর আসে নাই, কিন্তু আজ যে-কারণেই আসিয়া থাক, যে লোকটির চিন্তায় তাহার অন্তঃকরণ পরিপূর্ণ হইয়াছিল, তাহার কিছুই না জানিয়াও, উভয়ের মধ্যে অকস্মাৎ ব্যবধান সৃষ্টি না করিয়া বিজয়া পারিল না। শ্রান্তকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, আমি বাড়ি এসেছি—তাঁকে জানান হয়েছে পরেশের মা?
পরেশের মা কহিল, না দিদিমণি, আমি এক্ষুনি পরেশকে খবর দিতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
তিনি চা খাবেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল?
ও মা, তা আর হয়নি? তিনি যে বলেছিলেন, তুমি ফিরে এলেই একসঙ্গে হবে।
বিলাসবাবুই যে এ বাটীর ভবিষ্যৎ কর্তৃপক্ষ, এ সংবাদ আত্মীয়-পরিজন কাহারও অবিদিত ছিল না, এবং সেই হিসাবে আদর-যত্নেরও ত্রুটি হইত না। বিজয়া আর কোন কথা না বলিয়া উপরে তাহার ঘরে চলিয়া গেল। প্রায় মিনিট-কুড়ি পরে সে নীচে আসিয়া খোলা দরজার বাহির হইতে দেখিতে পাইল, বিলাস বাতির সম্মুখে টেবিলের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া কি কতকগুলা কাগজপত্র দেখিতেছে। তাহার পদশব্দে সে মুখ তুলিয়া ক্ষুদ্র একটি নমস্কার করিয়া একেবারেই গম্ভীর হইয়া উঠিল। কহিল, তুমি নিশ্চয় ভেবেচ আমি রাগ করে এতদিন আসিনি। যদিও রাগ আমি করিনি, কিন্তু করলেও যে সেটা আমার পক্ষে কিছুমাত্র অন্যায় হতো না, সে আজ আমি তোমার কাছে প্রমাণ করবো।
বিলাস এতদিন পর্যন্ত বিজয়াকে ‘আপনি’ বলিয়া ডাকিত। আজিকার এই আকস্মিক ‘তুমি’ সম্বোধনের কারণ কিছুমাত্র উপলব্ধি করিতে না পারিলেও, যে বিজয়া আনন্দে উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল না, তাহা তাহার মুখ দেখিয়া অনুমান করা কঠিন নয়। কিন্তু সে কোন কথা না কহিয়া ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকিয়া অনতিদূরে একটা চৌকি টানিয়া লইয়া উপবেশন করিল। বিলাস সেদিকে ভ্রুক্ষেপ মাত্র না করিয়া কহিল, আমি সমস্ত ঠিকঠাক করে এইমাত্র কলকাতা থেকে আসচি, এখন পর্যন্ত বাবার সঙ্গেও দেখা করতে পারিনি। তুমি স্বচ্ছন্দে চুপ করে থাকতে পার, কিন্তু আমি ত পারিনে! আমার দায়িত্ব-বোধ আছে—একটা বিরাট কার্য মাথায় নিয়ে আমি কিছুতে স্থির থাকতে পারিনে। আমাদের ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা এই বড়দিনের ছুটিতেই হবে—সমস্ত স্থির করে এলুম; এমন কি, নিমন্ত্রণ করা পর্যন্ত বাকী রেখে আসিনি। উঃ—কাল সকাল থেকে কি ঘোরাটাই না আমাকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে! যাক—ওদিকের সম্বন্ধে একরকম নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। কারা কারা আসবেন, তাও এই কাগজখানায় আমি টুকে এনেচি—একবার পড়ে দেখ, বলিয়া বিলাস আত্মপ্রসাদের প্রচণ্ড নিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া সুমুখের কাগজখানা বিজয়ার দিকে ঠেলিয়া দিয়া চৌকিতে হেলান দিয়া বসিল।
তথাপি বিজয়া কথা কহিল না—নিমন্ত্রিতদিগের সম্বন্ধেও লেশমাত্র কৌতূহল প্রকাশ করিল না; যেমন বসিয়া ছিল, ঠিক তেমনি বসিয়া রহিল। এতক্ষণ পরে বিলাসবিহারী বিজয়ার নীরবতা সম্বন্ধে ঈষৎ সচেতন হইয়া কহিল, ব্যাপার কি! এমন চুপচাপ যে?
বিজয়া ধীরে ধীরে কহিল, আমি ভাবচি, আপনি যে নিমন্ত্রণ করে এলেন, এখন তাঁদের কি বলা যায়?
তার মানে?
মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে আমি এখনো কিছু স্থির করে উঠতে পারিনি।
বিলাস সটান সোজা হইয়া বসিয়া কিছুক্ষণ তীব্র দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, তার মানে কি? তুমি কি ভেবেছ, এই ছুটির মধ্যে না করতে পারলে আর শীঘ্র করা যাবে? তাঁরা ত কেউ তোমার—ইয়ে নন যে, তোমার যখন সুবিধে হবে, তখনই তাঁরা এসে হাজির হবেন? মনস্থির হয়নি তার অর্থ কি শুনি?
রাগে তাহার চোখ-দুটা যেন জ্বলিতে লাগিল। বিজয়া অধোমুখে বহুক্ষণ নিঃশব্দে বসিয়া থাকিয়া আস্তে আস্তে বলিল, আমি ভেবে দেখলুম, এখানে এই নিয়ে সমারোহ করবার দরকার নেই।
বিলাস দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া বলিল, সমারোহ! সমারোহ করতে হবে এমন কথা ত আমি বলিনি! বরঞ্চ যা স্বভাবতঃই শান্ত, গম্ভীর—তার কাজ নিঃশব্দে সমাধা করবার মত জ্ঞান আমার আছে। তোমাকে সেজন্য চিন্তিত হতে হবে না।
বিজয়া তেমনি মৃদুকণ্ঠে কহিল, এখানে ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করার কোন সার্থকতা নেই। সে হবে না।
বিলাস প্রথমটা এমনি স্তম্ভিত হইয়া গেল যে, তাহার মুখ দিয়া সহসা কথা বাহির হইল না। পরে কহিল, আমি জানতে চাই, তুমি যথার্থ ব্রাহ্মমহিলা কিনা।
বিজয়া তীব্র আঘাতে যেন চমকিয়া মুখ তুলিয়া চাহিল, কিন্তু চক্ষের পলকে আপনাকে সংযত করিয়া লইয়া শুধু বলিল, আপনি বাড়ি থেকে শান্ত হয়ে ফিরে এলে তার পরে কথা হবে—এখন থাক। বলিয়াই উঠিবার উপক্রম করিল। কিন্তু ভৃত্য চায়ের সরঞ্জাম লইয়া প্রবেশ করিতেছে দেখিয়া সে পুনরায় বসিয়া পড়িল। বিলাস সেদিকে দৃক্পাতমাত্র করিল না। ব্রাহ্মসমাজভুক্ত হইয়াও সে নিজের ব্যবহার সুসংযত বা ভদ্র করিতে শিখে নাই—সে চাকরটার সম্মুখেই উদ্ধতকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, আমরা তোমার সংস্রব একেবারে পরিত্যাগ করতে পারি জানো?
বিজয়া নীরবে চা প্রস্তুত করিতে লাগিল, কোন উত্তর দিল না। ভৃত্য প্রস্থান করিলে ধীরে ধীরে কহিল, সে আলোচনা আমি কাকাবাবুর সঙ্গে করবো—আপনার সঙ্গে নয়। বলিয়া একবাটি চা তাহার দিকে অগ্রসর করিয়া দিল।
বিলাস তাহা স্পর্শ না করিয়া সে কথারই পুনরুক্তি করিয়া বলিল, আমরা তোমার সংস্পর্শ ত্যাগ করলে কি হয় জানো?
বিজয়া বলিল, না। কিন্তু সে যাই হোক না, আপনার দায়িত্ববোধ যখন এত বেশী, তখন আমার অনিচ্ছায় যাঁদের নিমন্ত্রণ করে অপদস্থ করবার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁদের ভার নিজেই বহন করুন, আমাকে অংশ নিতে অনুরোধ করবেন না।
বিলাস দুই চক্ষু প্রদীপ্ত করিয়া হাঁকিয়া কহিল, আমি কাজের লোক—কাজই ভালবাসি, খেলা ভালবাসি নে—তা মনে রেখ বিজয়া।
বিজয়া স্বাভাবিক শান্তস্বরে জবাব দিল, আচ্ছা, সে আমি ভুলব না।
ইহার মধ্যে যেটুকু শ্লেষ ছিল, তাহা বিলাসবিহারীকে একেবারে উন্মত্ত করিয়া দিল। সে প্রায় চীৎকার করিয়াই বলিয়া উঠিল, আচ্ছা যাতে না ভোলো, সে আমি দেখব।
বিজয়া ইহার জবাব দিল না, মুখ নীচু করিয়া নিঃশব্দে চায়ের বাটির মধ্যে চামচাটা ডুবাইয়া নাড়িতে লাগিল। তাহাকে মৌন দেখিয়া বিলাস নিজেও ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া আপনাকে কথঞ্চিৎ সংযত করিয়া প্রশ্ন করিল, আচ্ছা, এত বড় বাড়ি তবে কি কাজে লাগবে শুনি? এ ত আর শুধু শুধু ফেলে রাখা যেতে পারবে না।
এবার বিজয়া মুখ তুলিয়া চাহিল, এবং অবিচলিত দৃঢ়তার সহিত কহিল, না। কিন্তু এ বাড়ি যে নিতেই হবে, সে ত এখনো স্থির হয়নি।
জবাব শুনিয়া বিলাস ক্রোধে আত্মবিস্মৃত হইয়া গেল। মাটিতে সজোরে পা ঠুকিয়া পুনরায় চেঁচাইয়া বলিল, হয়েছে, একশ বার স্থির হয়েছে। আমি সমাজের মান্য ব্যক্তিদের আহ্বান করে এনে অপমান করতে পারব না—এ বাড়ি আমাদের চাই-ই। এ আমি কোরে তবে ছাড়বো—এই তোমাকে আজ আমি জানিয়ে গেলুম। বলিয়া প্রত্যুত্তরের জন্য অপেক্ষামাত্র না করিয়া দ্রুতবেগে বাহির হইয়া গেল।