থরের দানব রাজ্যে যাত্রা

থরের দানব রাজ্যে যাত্রা

থিয়ালফি আর রক্সভা তাদের বাবা ইগিল আর তাদের মায়ের সাথে বনের ধারে বাস করত। তাদের খামারের পরেই ছিল দৈত্য, দানব আর নেকড়েদের বাস। থিয়ালফি প্রায়ই বিপদের মূখে পড়ত আর তাকে দৌড়ে পালাতে হতো। সে খুব দ্রুত দৌড়াতে পারত। কোনো মানুষ বা অন্য কোনোকিছু তাকে দৌড়ে হারাতে পারত না। বনের ধারে বাস করার কারণে তারা প্রতিনিয়িত নানান বিচিত্র আর অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হতো।

কিন্তু এরচেয়ে বেশি বিচিত্র ঘটনা এর আগে তারা কখনো দেখেনি- যেদিন এসগার্ড থেকে দুই দেবতা ভাই, থর আর লোকি একটা রথে চেপে তাদের এলাকায় পৌঁছাল, রথটি টেনে নিয়ে আসছিল দুই বিশাল ছাগল, স্নারলার আর গ্রাইন্ডার। দুই দেবতা ভাই রাতের জন্য থাকা আর খাওয়ার ইচ্ছে জ্ঞাপন করল। “তোমাদের খাওয়ানোর মতো খাবার আমাদের কাছে নেই,” ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে রক্সভা বলল। “আমাদের শাকসবজি আছে, কিন্তু লম্বা আর কষ্টকর শীত চলছে, আমাদের কাছে কোনো মুরগি অবশিষ্ট নেই।”

থর অসন্তুষ্টিতে গজরাল। সে তার ছুরি বের করল আর ছাগল দুটিকে জবাই করল। সে ছাগল দুটির চামড়া ছাড়িয়ে নিল আর আগুনের ওপর রাখা রান্নার পাত্রে রাখল। রক্সভা আর তার মা শাকসবজি কেটে রান্নার পাত্রে ফেলল।

লোকি থিয়ালফিকে একপাশে ডেকে নিল। লোকির সবুজ চোখ, কাটা ঠোঁট আর হাসি দেখে থিয়ালফি ভয় পেয়ে গিয়েছিল। লোকি বলল, “শোনো, এই ছাগলগুলোর হাড়ের মজ্জা খুবই পুষ্টিকর, যেটা একজন তরুণের খাওয়া উচিত। কিন্তু থর সবসময় সেগুলো নিজের জন্য রেখে দেয়, এটা মোটেই ঠিক না। যদি তুমি থরের মতো শক্তিশালী হতে চাও, তোমার ছাগলের হাড়ের মজ্জা খাওয়া উচিত।” যখন খাবার প্রস্তুত হলো, থর একটা গোটা ছাগল নিজের জন্য রেখে দিল আর বাকি ছাগলটা বাকি পাঁচজনের খাওয়ার জন্য রাখল। সে মাটিতে ছাগলের চামড়াটি বিছাল আর মাংস খেয়ে হাড়গুলো চামড়ার ওপর ফেলতে লাগল।

“খাওয়ার পর হাড়গুলো অন্য চামড়ার ওপর রাখো,” সে তাদের বলল, “কেউ কোনো হাড় ভাঙবে না, শুধু মাংস খাবে।”

তোমার কি মনে হয়, তুমি দ্রুত খেতে পারো? লোকির খাওয়া তোমার দেখা উচিত। এক মুহূর্ত আগে যদি তার সামনে খাবার রাখা হয়, পরমুহূর্তে তাকে তার হাতের উলটো পিঠ দিয়ে মুখ মুছতে দেখা যায়, সে এত দ্রুত খেতে পারত।

বাকিরা অবশ্য আস্তে ধীরেই খেলো। লোকির বলা কথা থিয়ালফি ভুলল না, থর যখন একবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য টেবিল ত্যাগ করল, থিয়ালফি তার ছুরি নিয়ে ছাগলের একটা পায়ের হাড় নিয়ে সেটাকে চিরে ফেলল আর ভিতরের মজ্জা খেয়ে নিল। সে ভাঙা হাড়টি নিয়ে ছাগলের চামড়ার ওপরে রাখল আর অন্যান্য ভালো হাড় দিয়ে সেটিকে ঢেকে রাখল।

রাতের বেলা সবাই ঘুমুতে গেল।

সকাল বেলায় থর হাড়গুলোকে জড়ো করে ছাগলের চামড়া দিয়ে ঢেকে দিল। সে তার হাতুড়ি মিওলনির হাতে নিল আর মাথার ওপর উঁচু করে ধরল আর বলল, “স্নারলার, বেঁচে ওঠো।” একটা বজ্রের আলোক ঝলকানি হলো- সারলার নড়েচড়ে উঠল, ম্যাম্যা করে ডাকল আর ঘাস খেতে শুরু করল। থর আবার বলল, “গ্রাইন্ডার, বেঁচে ওঠো।” গ্রাইন্ডারও বেঁচে উঠল কিন্তু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল, সে উচ্চস্বরে চিৎকার করতে লাগল যেন সে অনেক ব্যথা পাচ্ছে।

“গ্রাইন্ডারের পিছনের পা ভেঙে গেছে,” বলল থর। “কাপড় আর কাঠের টুকরো আনো।”

সে কাঠের টুকরো আর কাপড় দিয়ে ছাগলটির পা বেঁধে দিল। কাজ শেষ করে সে পরিবারটির দিকে ফিরে তাকাল। থিয়ালফির মনে হলো থরের চোখ লাল হয়ে গেছে, এমন ভয়ানক জ্বলন্ত লাল চোখ সে কখনো দেখেনি। থর তার হাতুড়িটি শক্ত করে তার হাতে ধরে ছিল।

এখানে কেউ একজন ছাগলের হাড়টি ভেঙেছে,” বজ্রের মতো গর্জন করে থর বলল, “আমি তোমাদের খাবার দিলাম, তোমাদের শুধু একটি কাজ করতে নিষেধ করলাম, আর তোমরা সেটাই করলে!”

“কাজটা আমি করেছি,” বলল থিয়ালফি। “আমিই হাড়টা ভেঙেছি।”

লোকি তার চোখমুখ গম্ভীর করে রাখার চেষ্টা করল, কিন্তু তার মুখের কোণে একটা মুচকি হাসি দেখা যাচ্ছিল।

থর তার হাতুড়ি নাড়াল। “আমি এই গোটা খামার ধ্বংস করে দেব,” সে বিড়বিড় করে বলল, শুনে ইগিল ভয় পেয়ে গেল আর তার স্ত্রী কাঁদতে শুরু করে দিল। তখন থর বলল, “আমাকে বল, কেন আমি এক্ষুনি সমস্ত কিছু ভেঙে চুরমার করে দেব না?”

ইগিল কিছু বলল না, কিন্তু থিয়ালফি উঠে দাঁড়াল। সে বলল, “আমার বাবা কিছুই করেননি, তিনি জানতেন না আমি অপরাধটা করেছি। আমাকে শাস্তি দিন,

আমার বাবাকে নয়। আমাকে দেখুন, আমি খুবই দ্রুত দৌড়াতে পারি। আমার পিতামাতাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনার ক্রীতদাস হয়ে থাকব।”

তার বোন রুক্সভা উঠে দাঁড়াল। “সে আমাকে একা ফেলে যেতে পারবে না, “ বলল সে। “আমার ভাইকে নিতে চাইলে আমাকেও সাথে নিতে হবে।”

থর কয়েক মুহূর্ত ভাবল। তারপর বলল, “ঠিক আছে, রুক্সভা। এখন কিছুদিন তুমি এখানেই থাকো আর যতদিন না গ্রাইন্ডারের পা ভালো হয়, তুমি সারলার আর গ্রাইন্ডারের যত্ন করো। আমরা যখন ফিরে আসব, তোমাদের তিনজনকেই সাথে করে নিয়ে যাব।” সে থিয়ালফির দিকে ফিরল। “তুমি আমার আর লোকির সাথে চলো। আমরা উটগার্ড যাব।”

খামারের পরেই ছিল জনহীন জঙ্গল, থর- লোকি আর থিয়ালফি পূর্বদিকে যাত্রা করল, যতুনহাইমের দিকে, সেদিকে আছে দানবদের রাজ্য আর সমুদ্র।

তারা যতই পূর্বে যেতে লাগল, ঠান্ডা বাড়তে লাগল। বরফ শীতল বাতাস বইতে লাগল, আর ঠান্ডায় তাদের হাড়ে কাঁপন ধরে গেল। সূর্যাস্তের কিছু পূর্বে, তখনো পর্যাপ্ত আলো রয়েছে, তারা রাতে থাকার জন্য একটা আশ্রয়ের সন্ধান করতে লাগল। থর আর থিয়ালফি কিছুই খুঁজে পেল না। লোকি একটু বেশিদূরে চলে গিয়েছিল। সে যখন ফিরে আসল, তাকে কিছুটা বিভ্রান্ত লাগছিল। “ওইদিকে একটা বিচিত্র ধরনের বাড়ি আছে” বলল সে।

“কেমন বিচিত্র?” জানতে চাইল থর।

“বাড়িটাতে শুধুমাত্র একটা কক্ষ আছে, কোনো জানালা নেই। দরজার জায়গাটা অনেক বড় কিন্তু কোনো দরজা নেই। এটা একটা বিরাট গুহার মতো দেখতে।” ঠান্ডা বাতাসে তাদের হাত পা অবশ হয়ে আসছিল, আর শীতল হাওয়া তাদের গালে সুঁইয়ের মতো বিঁধছিল। থর বলল, “চলো, জায়গাটা দেখে আসি।”

বাড়িটা এত বড় যে, একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যাচ্ছিল না। “ওই পাশে দৈত্য দানো বা ভয়ংকর কোনো পশু থাকতে পারে,” বলল থর। “আমরা দরজার কাছেই থাকব।”

তারা সেটাই করল। লোকি যেমন বলেছিল, বাড়িটা ছিল ঠিক সেরকম। বিশাল বাড়ি, একটা মাত্র বিরাট হলো, এর পাশে একটা লম্বাটে রুম। তারা প্রবেশমুখের কাছে আগুন জ্বালাল আর ঘুমিয়ে পড়ল। তারা ঘণ্টাখানেক মাত্র ঘুমিয়েছে, একটা গোলযোগের শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে গেল।

“কী হয়েছে?” জানতে চাইল থিয়ালফি।

“ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি?” বলল থর। মাটি কাঁপছিল। কিছু একটা গর্জন করছিল। এটা কি আগ্নেয়গিরির শব্দ ছিল, নাকি হিমবাহ ধস নাকি শত শত ক্রুদ্ধ ভালুকের গর্জন ছিল, তারা কিছুই বুঝতে পারছিল না।

“আমার মনে হয় না,” বলল লোকি। “চল আমরা পাশের রুমটিতে চলে যাই, নিরাপত্তার খাতিরে।”

লোকি আর থিয়ালফি পাশের রুমটিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। কম্পন-গর্জন সকাল পর্যন্ত চলল। থর প্রবেশমুখে তার হাতুড়ি হাতে সারারাত পাহারায় থাকল। রাত যতই পার হতে লাগল, যে এমন কম্পন আর গর্জন করছে, তাকে আক্রমণ করার জন্য থর ততই অস্থির হতে লাগল। সকালে পূর্বদিকে আলো ফুটতেই থর তার সঙ্গীদের না জাগিয়েই শব্দের উৎসের সন্ধানে বনের মধ্যে রওনা হলো।

সে যতই শব্দের কাছাকাছি গেল, বুঝতে পারল, শব্দ আসলে এক ধরনের না, কয়েকটা শব্দ ক্রমানুসারে হচ্ছে। প্রথমে একটা গর্জনের মতো শব্দ, তারপর একটা গুনগুন গুঞ্জন, তারপর একটা শীষের মতো শব্দ, শীষের শব্দটা এত তীব্র যে, থরের মনে হলো, তার মাথা আর দাঁত ব্যথা করে উঠছে।

থর পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে নিচের দিকে তাকাল।

নিচের গোটা উপত্যকাজুড়ে এক বিশাল দানব শুয়ে ছিল, এত বড় দানব থর জীবনে কখনো দেখেনি। তার চুল আর দাড়ি ছিল কয়লার চেয়ে কালো, তার চামড়া তুষারের চেয়েও শুভ্র। দানবটির চোখ দুটি বন্ধ ছিল আর সে পুরোমাত্রায় নাক ডাকছিল। এটা সেই গর্জন-গুঞ্জন-শিসের আওয়াজ যেটা থর বহুদূর থেকে শুনতে পাচ্ছিল। যতবার দানবটি নাক ডাকছিল, নিচের মাটি কেঁপে উঠছিল রাতে তারা এই কম্পনকেই ভূমিকম্প মনে করেছিল। দানবটি এতই বড় ছিল যে, থরকে তার তুলনায় একটা পিঁপড়া বা গুবরে পোকার মতো ছোট লাগছিল।

থর তার শক্তির উৎস কোমরবন্ধনী শক্ত করে বেঁধে নিয়ে নিজের শক্তি দ্বিগুণ করে নিল, যাতে বিরাট দানবের সাথে যুদ্ধে সে পর্যাপ্ত শক্তি পায়।

থর দেখল, দানবটি চোখ খুলল, তার বরফশীতল নীল চোখ। তাকে দেখে মনে হলো না, সে থরকে দেখে মোটেই ভয় পেয়েছে।

“হ্যালো,” বলল থর।

“শুভ সকাল,” বলল কালো চুলের বিশাল দানবটি, থরের মনে হলো, বরফধসের শব্দ হলো। “সবাই আমাকে ক্রিমির বলে ডাকে। ক্রিমির মানে হলো ‘বিরাট লোক’। তারা এটা মজা করেই ডাকে কারণ আমার মতো ক্ষুদ্র লোককে বিরাট লোক বলার কোনো অর্থ নেই।” দানবটি এদিক ওদিক তাকাল। “আমার হাতমোজাটি কোথায় গেল? আমার দুটি মোজাই ছিল, কিন্তু গতরাতে একটা কোথায় যেন পড়ে গেছে।” সে তার হাত উঠাল, তার ডান হাতে চামড়ার বিশাল একটা হাতমোজা ছিল, অন্য হাতটি ছিল খালি। “এই যে পেয়ে গেছি।”

থর যে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল, দানব সেই পাহাড়ের অপর পাশে হাত বাড়িয়ে কিছু একটা তুলে নিল, যেটা অবশ্যই অপর হাতমোজাটিই ছিল।

‘মোজার ভিতরে কিছু একটা আছে বলে মনে হচ্ছে,” বলল দানব, সে মোজাটি ঝাঁকাল। থর তার পূর্ব রাতের বাসাটি চিনতে পারল, যখন দেখল থিয়ালফি আর লোকি মোজার খোলা মুখের ভিতর থেকে বরফের ওপর এসে পড়ল।

স্ক্রিমির তার বাম হাতের হাতমোজাটি পড়ে নিল আর খুশিমনে তার মোজা পরা হাতের দিকে তাকাল। “আমরা একসাথে যাত্রা করতে পারি,” বলল দানব, “যদি তোমরা রাজি থাকো।”

থর লোকির দিকে তাকাল আর লোকি থরের দিকে তাকাল, তারপর দুজনেই যুবক থিয়ালফির দিকে তাকাল। থিয়ালফি কাঁধ ঝাঁকাল। “আমি পারব,” বলল সে।

“ঠিক আছে, আমরা একসাথেই যাত্রা করব,” চিৎকার করে বলল থর।

তারা দানবের সাথে একসাথে সকালের নাশতা সারল। দানবটি তার রসদের থলে থেকে একের পর এক গরু আর ভেড়া বের করে পেটে চালান করে দিতে লাগল, বাকি তিনজন তার তুলনায় সামান্যই খেলো। খাওয়া শেষ হলে ক্রিমির বলল, “আমি তোমাদের রসদ আমার থলের ভিতর নিয়ে নিচ্ছি, তোমাদের আর সেগুলো বহন করতে হবে না। রাতে যখন আমরা থামব, সবাই আবার একসাথে খাব।” সে তাদের খাবারগুলো নিজের থলেতে রাখল, থলের মুখ বাঁধল আর পূর্ব দিকে হাঁটতে শুরু করল।

লোকি আর থর দানবের পিছনে পিছনে দেবতাদের গতিতে ছুটিতে লাগল, থিয়লফি এত গতিতে দৌড়াল যে, এত দ্রুত কোনো মানুষ কখনো দৌড়ায়নি। কিন্তু তারপরও কয়েক ঘণ্টা দৌড়ানোর পর থিয়ালফির মনে হলো সে আর তাল মিলাতে পারছে না, কখনো দানবটিকে দূরের অন্য আর কয়টা পাহাড়ের মতো মনে হচ্ছিল, সেটার মাথা মেঘের মধ্যে ঢুকে আছে।

তারা অবশেষে ক্রিমিরকে ধরতে পারল যখন সে সন্ধ্যে বেলায় থামল।

দানব তাদের রাতে থাকার জন্য একটা বিশাল ওক গাছের নিচে থেমেছিল। সে গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে আরাম করে বসল। “আমার ক্ষিধে নেই,” সে তাদের বলল। “আমার জন্য চিন্তা করো না। আমি এখন ঘুমাব। তোমাদের রসদ গাছের ওপারে আমার থলের ভিতর আছে। শুভরাত্রি।”

দানব সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ল আর নাক ডাকতে শুরু করল। পরিচিত গর্জন- গুঞ্জন-শিসের শব্দে গাছপালা কেঁপে কেঁপে উঠতে শুরু করলে থিয়ালফি দানবের রসদের থলে বেয়ে উপরে উঠল। থলের ওপর থেকে সে থর আর লোকিকে ডেকে বলল, “আমি এই থলের মুখে বাঁধা দড়ি খুলতে পারছি না। এটা খুবই শক্ত। মনে হচ্ছে রশিটা লোহার তৈরি।”

“আমি লোহা বাঁকাতে পারি,” বলল থর। সে রসদের থলের ওপর লাফিয়ে উঠল আর রশি ধরে টানতে লাগল।

“কী হলো?” জানতে চাইল লোকি।

থর গজরাল, আর রশি ধরে টানল, রশি টানল আর গজরাল। তারপর সে তার কাঁধ ঝাঁকাল। “আমার মনে হচ্ছে, আজ রাতে আমাদের কপালে খাবার নেই, * বলল সে। “যতক্ষণ না পর্যন্ত এই দানব আমাদের তার থলের মুখ খুলে দেয়।” সে দানবটির দিকে তাকাল। সে তার হাতুড়ি মিওলনিরের দিকে তাকাল। সে থলের ওপর থেকে নেমে এসে স্ক্রিমিরের মাথার ওপর গিয়ে উঠল। সে তার হাতুড়ি তুলল আর সেটা দিয়ে স্ক্রিমিরের কপালে আঘাত করল।

ক্রিমির ঘুমের মধ্যে তার এক চোখ খুলল। “মনে হচ্ছে, আমার মাথায় একটা পাতা পড়েছে,” বলল সে। “তোমরা সবাই খেয়েছ? ঘুমের জন্য তৈরি? আচ্ছা, শুভরাত্রি।” বলে সে কাত হয়ে শুল, চোখ বন্ধ করল আর আবার নাক ডাকতে শুরু করল।

লোকি আর থিয়ালফি শব্দের গোলযোগ সত্ত্বেও ঘুমিয়ে পড়ল, কিন্তু থরের ঘুম এলো না। সে ক্ষুধার্ত ছিল, তার অনেক রাগ হতে লাগল, সে দানবটিকে মোটেই বিশ্বাস করতে পারছিল না, সে ঘুমাতে পারল না। মধ্যরাত পেরিয়ে গেল, ক্ষুধার্ত থর দানবের নাক ডাকা আর সহ্য করতে পারল না। সে আবারো দানবের মাথার ওপর উঠল। সে দানবের দুই ভ্রুর মাঝখানে অবস্থান নিল।

থর তার হাতে থুথু ফেলল। সে তার বেল্ট শক্ত করে বাঁধল। সে মিওলনির মাথার ওপর তুলে ধরল আর সমস্ত শক্তি দিয়ে হাতুড়ি চালাল। সে নিশ্চিত ছিল, হাতুড়ি দানবের মাথার খুলি ভেদ করে যাবে।

অন্ধকারে দানবের কালো চোখ দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, সেগুলো খুলে গেছে।

“ওহ্,” বলল বিশাল দানব। “থর, তুমি ওখানে! আমি ভাবলাম গাছ থেকে একটা ওক ফল বুঝি আমার মাথায় পড়ল। রাতের কয় প্রহর হলো?”

“এখন মধ্যরাত,” বলল থর।

“ঠিক আছে, সকালে কথা হবে,” দানবের নাক ডাকায় আবারো ভূমি কেঁপে উঠতে লাগল আর গাছের মাথা নড়তে লাগল।

ভোর হয়ে এলো, তখনো আলো ভালো করে ফুটেনি, থর তখনো জাগ্রত, ক্ষুধার্ত আর রাগে অন্ধ, সিদ্ধান্ত নিল শেষবারের মতো হাতুড়ির আরেকটা আঘাতে দানবের নাক ডাকা চিরতরে বন্ধ করবে। এবার সে কপালের উঁচু স্থানে তাক করল আর তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আবার আঘাত করল।

এত শক্তিতে আঘাত সে জীবনেও করেনি। চতুর্দিকের পাহাড় থেকে আঘাতের প্রতিধ্বনি হতে থাকল।

“মনে হলো, আমার মাথায় বুঝি একটা পাখির বাসা বা গাছের ডাল খসে পড়েছে,” বলল দানব। সে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল, তারপর দাঁড়িয়ে গেল। “আমার ঘুম শেষ। যাত্রার সময় হয়েছে। তোমরা কি উটগার্ড যাচ্ছ? সেখানে তারা তোমাদের অনেক খাতির করবে। সেখানে তোমারা বিরাট ভোজ আর পানীয় পাবে, তারপর কুস্তি, দৌড় প্রতিযোগিতা আর শক্তির খেলাও পাবে। সোজা পূর্বদিকে চলে যাও, একেবারে নাক বরাবর, যেখানে আকাশ ফরসা হয়ে আসবে, বুঝবে উটগার্ড পৌঁছে গেছ। আমি এখান থেকে উত্তরে যাব।”

সে তাদের একটা ফোকলা দাঁত বের করে একটা হাসি দিল, হাসিটি বোকা বোকা হাসি বলেই মনে হতো, যদি না তার তার চোখ দুটিতে ধারালো আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকত।

তারপর দানব তাদের দিকে ঝুঁকে এলো আর মুখের পাশে হাত রেখে ফিসফিস করল, যেন সে তার কথাটা আর কাউকে শুনতে দিতে চায় না, কিন্তু তার ফিসিফিসের শব্দেই বাকি তিনজনের কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো।

“আমি তোমাদের কিছু কথা শুনে ফেলেছি। তোমরা বলছিলে, আমি নাকি বিশাল বড় দানব। তোমরা যদি কখনো উত্তরে যাও, তাহলে বুঝবে আসল ‘বিরাট দানব’ কীরকম দেখতে। তারা আসলেই অনেক বড় আর বিশাল। তাদের তুলনায় আমি একটা চিংড়িতুল্য।”

ক্রিমির আবার হাসল আর উত্তরের পথে রওয়ানা হয়ে গেল, তার পায়ের আঘাতে মাটি কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল।

থর, লোকি আর থিয়ালফি যতুনহাইমের মধ্য দিয়ে পথ চলতে লাগল, কয়েকদিন ধরে তারা সূর্যোদয়ের দিকে এগিয়ে চলল।

একসময় তারা একটা দুর্গ দেখতে পেল। প্রথম দেখায় সেটাকে একটা স্বাভাবিক আকারের দুর্গ মনে হচ্ছিল আর অনেক কাছেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু যতই তারা সেটার দিকে দ্রুতগতিতে হেঁটে গেল, এটা মোটেই আকারে বড় হলো না বা কাছে এলো না। হাঁটতে হাঁটতে কয়েকদিন পেরিয়ে গেলে তারা অনুধাবন করল, দুর্গটা কত বড় আর কত দূরে।

“এটাই কি উটগার্ড?” জানতে চাইল থিয়ালফি।

লোকিকে অনেকটা সিরিয়াস দেখাল, সে জবাব দিল, “হ্যাঁ, এটাই উটগার্ড। এটাই আমার পরিবারের জন্মভূমি।”

“তুমি কখনো এখানে আসোনি?”

“কখনো না।”

তারা দুর্গের তোরণের দিকে এগিয়ে গেল, সেখানে কোনো লোকজন দেখা যাচ্ছিল না। ভিতরে একটা ভোজসভা চলছে, শব্দ শুনেই তারা বুঝতে পারছিল। দুর্গের তোরণটা ছিল অনেক অনেক উঁচু, দরজাটি ছিল লোহার খিলান দেওয়া, যেটা অপ্রত্যাশিত কোনো দানবকে দূরে রাখবে।

থর চিৎকার করে ডাকল, কিন্তু জবাব দেবার জন্য আশেপাশে কেউ ছিল না। “আমরা কি ভিতরে যাব?” থর লোকি আর থিয়ালফিকে জিজ্ঞেস করল।

তারা লোহার দরজার ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকে গেল। তারা প্রাসাদের আঙিনা পেরিয়ে হলরুমে ঢুকে পড়ল। হলরুমের ভিতর বড় গাছের চেয়েও উঁচু উঁচু আসন পাতা ছিল, যেখানে বিশাল বিশাল দানবেরা বসে ছিল। থর দৃঢ় পায়ে সামনে এগিয়ে গেল। থিয়ালফি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সে থরের পাশাপাশি হেঁটে গেল, লোকি তাদের দুজনের পিছন পিছন গেল।

তারা দানবদের রাজাকে দেখতে পাচ্ছিল, উঁচু সিংহাসনে বসা, হলের একবারে শেষ প্রান্তে। তারা শেষপ্রান্তে সিংহাসনের সামনে গেল আর মাথা নিচু করে সম্মান প্রদর্শন করল।

“হে ভগবান, আমার রাজ্যে বাচ্চারা হামলা করেছে। না, আমার বোধহয় ভুল হচ্ছে। তুমি তো মনে হচ্ছে বিখ্যাত এসির দেবতা থর। এর মানে হলো তুমি অবশ্যই লাউফির ছেলে লোকি। আমি তোমার মাকে চিনতাম। আর এটা কে? হ্যালো ছোট্ট মানুষ। আমি উটগার্ডালোকি, উটগার্ডের লোকি। আর তুমি?”

“আমি থিয়ালফি,” বলল থিয়ালফি, “আমি থরের ভৃত্য।”

“তোমাদের সবাইকে উটগার্ডে স্বাগতম,” বলল উটগার্ডালোকি। “তোমরা দুনিয়ার সবচেয়ে চমৎকার স্থানে এসেছ। যারা অসাধারণ সব কর্মকাণ্ড করতে পারে, তাদের এখানে স্বাগতম। তোমরা কি তেমন বিশেষ কিছু করতে পারো? তুমি কিছু পারো, ছোট্ট মানুষ? তোমরা এমন কিছু পারো, যেটা কেউ পারে না?”

“আমি অন্য যে কারো চেয়ে দ্রুত খেতে পারি,” বলল লোকি।

“খুবই চমৎকার। আমার এক ভৃত্য আছে, আশ্চর্যজনকভাবে, তার নামও লোগি। তুমি কি তার সাথে একটা খাওয়া প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে চাও?” লোকি কাঁধ ঝাঁকাল, তাকে মোটেই উদ্বিগ্ন মনে হলো না।

উটগার্ডালোকি তালি বাজাল, আর লোকেরা একটা লম্বা কাঠের পাত্র নিয়ে এলো। সেখানে থরে থরে সাজানো ছিল নানা পদের আগুনে পোড়া পশুপ্রাণী, রাজহাঁস আর ষাঁড় আর ভেড়া, ছাগল আর খরগোশ আর হরিণ। যখন সে আবার হাততালি দিল, লোকি খেতে শুরু করল। সে পাত্রের একপ্রান্ত থেকে খাওয়া শুরু করে আরেক প্রান্তের দিকে এগুতে লাগল।

সে খুব মনোযোগ সহকারে খেল, একমনে খেলো যেন তার জীবনের একটাই উদ্দেশ্য, কত দ্রুত খাওয়া যায়। সে এত দ্রুত খাচ্ছিল, তার হাত আর মুখ দেখা যাচ্ছিল না।

লোকি আর লোগি খেতে খেতে পাত্রের মাঝে এসে মিলিত হলো।

উটগার্ডালোকি তার সিংহাসন থেকে নিচে তাকাল। “হুম,” বলল সে, “ দেখা যাচ্ছে, তোমরা দুজনেই সমান গতিতে খেয়েছ। কিন্তু লোগি পশুপাখির হাড়ও চিবিয়ে খেয়েছে, আর হ্যাঁ, সে মনে হচ্ছে কাঠের পাত্রটাও খেয়ে ফেলেছে। লোকি সবটা মাংস খেয়েছে, কিন্তু সে একটাও হাড় খায়নি, আর কাঠের ট্রে তো স্পর্শও করেনি। তাই এই রাউন্ডে বিজয়ী হয়েছে লোগি।”

উটগার্ডালোকি থিয়ালফির দিকে তাকাল। “তুমি,” বলল সে। “তুমি কী করতে পারো?”

থিয়ালফি কাঁধ ঝাঁকাল। তার জানামতে সে সবচেয়ে দ্রুতগামী মানুষ। সে দৌড়ে পালানো খরগোসকে পিছনে ফেলতে পারে। উড়ন্ত পাখির চেয়েও দ্রুত ধাবিত হতে পারে। সে বলল, “আমি দৌড়াতে পারি।”

“তাহলে,” বলল উটগার্ডালোকি। “তোমার জন্য দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন হবে।”

তারা প্রাসাদ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। প্রাসাদের পাশেই ছিল একটা লম্বা মাঠ, দৌড়ানোর জন্য একেবারে উপযুক্ত। সেখানে কয়েকজন দানব মাঠের পাশে অপেক্ষা করছিল, তারা হাত ঘসে আর ফুঁ দিয়ে হাত উত্তপ্ত করছিল।

“তুমি এখনো বালক, থিয়ালফি,” বলল উটগার্ডালোকি। “আমি তোমাকে বড়দের সাথে দৌড়াতে বলব না। আমাদের ছোট্ট হুগি কোথায়?”

এক দানব শিশু সামনে এগিয়ে এলো, সে এতই ছোট ছিল যে, তাকে দেখতে থর আর লোকির সমান দেখাচ্ছিল। শিশুটি উটগার্ভালোকির দিকে তাকাল। সে কিছুই বলল না, শুধু হাসল। থিয়ালফির মনে হলো, শিশুটিকে ডাকার আগে সে ওই স্থানে ছিল না, কিন্তু এখন আছে।

হুগি আর থিয়ালফি দৌড় শুরুর প্রান্তে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সংকেতের অপেক্ষায় থাকল।

“দৌড় শুরু করো,” বজ্রকণ্ঠে চিৎকার করে জানাল উটগার্ডালোকি আর দুই বালক দৌড়াতে শুরু করল। থিয়ালফি এত দ্রুত দৌড়াল, এত জোরে সে জীবনে কখনো দৌড়ায়নি। কিন্তু সে দেখল, হুগি তাকে পেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেল, আর সে মাঠের মাঝামাঝি থাকতেই মাঠের অপর প্রান্তে পৌঁছে দৌড় শেষ করে ফেলেছে। উটগার্ডালোকি ঘোষণা করল, “হুগি বিজয়ী হয়েছে।”

একথা বলে সে থিয়ালফির পাশে হাঁটু গেড়ে বসল। “তুমি যদি হুগিকে হারানোর আশা করো, তোমাকে আরো দ্রুত দৌড়াতে হবে,” বলল দানব রাজা। “তারপরও, আমি কোনো মানুষকে এত দ্রুত দৌড়াতে আগে কখনো দেখিনি। আরো জোরে দৌড়াও, থিয়ালফি।”

থিয়ালফি আবার আরেকবার হুগির পাশাপাশি দৌড় শুরু করার জন্য দাড়াল। থিয়ালফি হাঁপাচ্ছিল, আর তার বুক ধড়ফড় করছিল। সে জানে সে কত দ্রুত দৌড়েছে, তবুও হুগিকে খুবই স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। সে এমনকি জোরে জোরে শ্বাসও নিচ্ছিল না। দানব শিশুটি থিয়ালফির দিকে তাকাল আর হাসল। হুগিকে দেখলে উটগার্ডালোকির কথা মনে আসে, থিয়ালফি ভাবল, হুগি উটগার্ডালোকির ছেলে কি না!

“দৌড়াও,” চিৎকার ভেসে এলো।

তারা আবার দৌড়াতে শুরু করল।

তারা আবার দৌড়াল। থিয়ালফি এত দ্রুত দৌড়াল, এত দ্রুত সে কখনো দৌড়ায়নি, তার মনে হচ্ছিল দুনিয়াতে শুধু সে আর হুগি আছে। তারপরও পুরো সময় হুগি থিয়ালফি থেকে এগিয়ে থাকল। হুগি যখন শেষ প্রান্তে পৌঁছাল, থিয়ালফি তখনো পাঁচ কি দশ সেকেন্ড দূরে।

থিয়ালফি জানত, সে এবার জয়ের খুব কাছাকাছি ছিল, সে জানত, পরেরবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলে সে জিততে পারবে।

“চল, আমরা আরেকবার দৌড়াই”, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল সে।

“ঠিক আছে,” বলল উটগার্ডালোকি। “তুমি আবার দৌড়াতে পারো। তুমি খুবই দ্রুতগামী, কিন্তু তুমি জিতবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। তারপরও আমরা আরেকটা শেষ প্রতিযোগিতা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।”

হুগি শুরুর প্রান্তে গিয়ে দাঁড়াল। থিয়ালফি তার পাশে দাঁড়াল। সে হুগিকে একবার নিশ্বাস ফেলতেও শুনল না।

“শুভকামনা,” বলল থিয়ালফি।

এবার,” বলল হুগি, থিয়ালফির মনে হলো কথাগুলো তার মাথার ভিতর হচ্ছে, “তুমি আমাকে আসলেই দৌড়াতে দেখবে।”

“দৌড়াও!” চিৎকার করল উটগার্ডালোকি।

থিয়ালফি এত দ্রুত দৌড়াল, কোনো জীবিত মানুষ এত দ্রুত কখনো দৌড়ায়নি। সে আকাশ থেকে ঝাঁপ দেওয়া ঈগলের গতিতে দৌড়াল, ঝড়ের বায়ুর বেগে দৌড়াল, সে থিয়ালফির মতো দৌড়াল আর কেউ কখনো থিয়ালফির মতো দৌড়াতে পারেনি, আগেও পারেনি, কখনো পারবেও না।

কিন্তু হুগি সহজেই থিয়ালফি থেকে এগিয়ে থাকল, আগের চেয়ে আরো দ্রুত তার গতি। থিয়ালফি মাঠের অর্ধেক পার না হতেই হুগি শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেল আর আবার ফিরে আসতে শুরু করল।

“যথেষ্ট হয়েছে”, ঘোষণা করল উটগার্ডালোকি।

তারা সবাই হলরুমে ফিরে গেল। দানবদের পূর্বের চেয়ে উৎফুল্ল আর আর আর নিশ্চিন্ত দেখাল।

“আহ”, বলল উটগার্ডালোকি, “এই দুজনের পরাজয় অনেকটা বোধগম্য। কিন্তু এখন আমরা এমন কিছু দেখব, যেটা সবাইকে চমৎকৃত করবে। এবার বজ্রের দেবতা, সবচেয়ে শক্তিশালী থরের পালা। থর, যার কর্মের কথা গল্প-গানে নয় দুনিয়ায় প্রসিদ্ধ। দেবতা ও মরনশীল মানুষেরা তোমার অসম্ভব সব কাজের গল্প করে। তুমি কি আমাদের দেখাবে তুমি আসলে কী করতে পারো?”

থর তার দিকে তাকাল। “প্রথমত: আমি পান করতে পারি,” বলল থর। “এমন কোনো পানীয় নেই যেটা আমি শেষ করতে পারব না।”

“অবশ্যই”, বলল উটগার্ডালোকি। “কে কোথায় আছ? আমার স্পেশাল পানীয় শিংটা নিয়ে এসো।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা লম্বা শিং নিয়ে আসা হলো, যেটায় পানীয় ভর্তি ছিল। থরের দেখা এটা সবচেয়ে বড় পানীয় শিং, কিন্তু থর মোটেও চিন্তিত হলো না। সে হলো থর, এমন কোনো পানীয় শিং নেই, যেটা সে পান করে শেষ করতে পারবে না। শিং-এর ওপর নানান কারুকাজ করা ছিল, আর মুখের কাছটায় রূপা দিয়ে বাঁধানো ছিল।

“এটা এই দুর্গের পানীয় শিং,” বলল উটগার্ডালোকি। “আমরা সবাই এটা খালি করেছি। আমাদের মধ্যে শক্তিশালীরা এটা এক চুমুকেই শেষ করে ফেলে। আমি স্বীকার করি, কারো কারো এটা শেষ করতে দুই চুমুকও দিতে হয়েছে। কিন্তু আমি গর্বের সাথে বলতে পারি, আমাদের মধ্যে এমন দুর্বল কেউ নেই যার এটা শেষ করতে তিন চুমুক লেগেছে।”

এটা ছিল অনেক লম্বা একটা শিং, কিন্তু থর হলো থর, সে শিংটি মুখের কাছে তুলল আর পান করতে শুরু করল। দানবদের পানীয় ছিল ঠান্ডা আর লোনা, কিন্তু সে পান করে গেল, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার নিশ্বাস শেষ হয়ে এলো।

সে আশা করেছিল, শিংটি খালি হয়ে গেছে, কিন্তু এটা প্রায় পুরোটাই ভর্তি অবস্থায় ছিল, তার পান শুরু করার সময়ের মতোই ভর্তি দেখাচ্ছিল।

“আমি মনে করেছিলাম, তুমি এরচেয়ে ভালো পান করতে পারো,” বলল উটগার্ডালোকি, “তারপরও আমি জানি তুমি দ্বিতীয়বারে এটা শেষ করতে পারবে।”

থর বড় করে শ্বাস নিল, শিং-এ মুখ রাখল, বড় চুমুক দিয়ে পান করতে শুরু করল। সে জানত তাকে এবার শিংটি খালি করতেই হবে কিন্তু যখন সে শিংটি ঠোঁট থেকে নামাল, পানীয় কেবলমাত্র এক বুড়ো আঙুল সমান কমেছে।

দানবরা থরের দিকে তাকাল আর বিদ্রূপ করতে শুরু করল। কিন্তু থর তাদের দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকাতেই তারা চুপ করে গেল।

“আহ,” বলল উটগার্ডালোকি। “তাহলে মহা শক্তিশালী থরের গল্প শুধুই গালগল্প। যাই হোক, আমরা তোমাকে শিং-এ আরেকবার চুমুক দিতে দেব, যাতে তুমি সেটা খালি করতে পারো। এটাতে অবশ্য তেমন পানীয় আর বোধহয় নেই।”

থর শিংটি তার ঠোঁটের কাছে তুলল, আর চুমুক দিল আর পান করল। সে দীর্ঘ সময় ধরে পান করল, পান করল দেবতাদের মতো, এত বড় চুমুক দিল যে লোকি আর থিয়লফি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।

কিন্তু যখন সে যখন শিংটি নামাল, শিং-এর পানীয় মাত্র আর কয়েক আঙুল পরিমাণ কমেছে।

“আমি আর পান করতে পারব না,” বলল থর, “আমার মনে হচ্ছে না, এতে সামান্য পানীয় আছে।”

“এবার শক্তি পরীক্ষার পালা। তুমি কি একটা বিড়ালকে তুলতে পারবে?” জিজ্ঞেস করল উটগার্ডালোকি।

“এটা কেমন কথা? আমি অবশ্যই একটা বিড়ালকে তুলতে পারব,” জবাব দিল থর।

“ভাল কথা,” বলল উটগার্ডালোকি। “আমরা সবাই দেখেছি, তোমাকে যত শক্তিশালী মনে করা হয়, ততটা শক্তিশালী তুমি নও। উটগার্ডের যুবকরা আমার পোষা বিড়ালটা তুলে তাদের শক্তি পরীক্ষা করে। এখন, তোমাকে আমি সাবধান করতে চাই, তুমি এখানকার যে কারো চাইতে আকারে ছোট আর আমার বিড়ালটি একটি দানবাকৃতির বিড়াল। আমি বুঝি, তুমি তাকে তুলতে পারবে না।”

“আমি তোমার বিড়ালকে তুলতে পারব,” বলল ধর।

সে সম্ভবত আগুনের পাশে ঘুমাচ্ছে,” বলল উটগার্ডালোকি। “চল তার কাছে যাই।”

বিড়ালটি ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু যখন তারা ঘরে ঢুকল, সে জেগে উঠল আর লাফিয়ে রুমের মাঝখানে এলো। বিড়ালটি ছিল ধূসর বর্ণের, আকারে একটা মানুষের সমান বড়। কিন্তু থর ছিল যেকোনো মানুষের চেয়ে শক্তিশালী। সে বিড়ালটির পেটের কাছে ধরে তাকে তুলতে গেল, তার উদ্দেশ্য বিড়ালটিকে মাথার ওপর তুলে ধরা। অনেক চেষ্টা করেও থর বিড়ালের পাগুলো মাটি থেকে তুলতে পারল না।

থর বিড়াল তোলার এই সামান্য খেলায় পরাজিত হতে রাজি নয়। সে তার সর্বশক্তি দিয়ে বিড়ালটিকে তুলতে চেষ্টা করল, একসময় বিড়ালের একটা পা মাটি থেকে উপরে তুলতে পারল।

থর, থিয়ালফি আর লোকি একটা শব্দ শুনতে পেল। মনে হলো, অনেক দূরে কোথাও পাহাড় ভাঙার শব্দ হলো, মনে হলো পাহাড় ব্যথায় গর্জন করে উঠেছে।

“যথেষ্ট হয়েছে,” বলল উটগার্ডালোকি। “তুমি আমার পোষা বিড়ালকে তুলতে পারনি, এটা তোমার দোষ নয়। এটা অনেক বড় একটা বিড়াল আর তুমি খুবই ছোট একটা জীব, এখানকার সবার চেয়ে ছোট,” মুচকি হেসে বলল সে। “খুবই ছোট জীব? আমি তোমাদের যে কারো সাথে কুস্তি করতে পারি।”

“এতক্ষণ যা দেখলাম,” বলল উটগার্ডালোকি, “আমি যদি কোনো সত্যিকারের দানবের সাথে তোমাকে কুস্তি করতে দেই, নিমন্ত্রণকারী হিসেবে আমি মস্ত ভুল করব। তুমি ব্যথা পেতে পারো। আর আমার মনে হয়, আমার কোনো লোকই এমন কারো সাথে কুস্তি করতে রাজি হবে না, যে আমার পানীয় শিং পান করে শেষ করতে পারে না, এমনকি আমার পোষা বেড়ালকেও তুলতে পারে না। কিন্তু আমি তোমাকে বলছি, আমরা কী করতে পারি। তুমি যদি কুস্তি করতে চাও, আমি তোমাকে আমার বৃদ্ধ দাই মায়ের সাথে কুস্তি করতে দিতে পারি।”

“তোমার দাই মা?” থর খুব বিস্মিত হলো।

“তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন সত্যি। কিন্তু তিনি আমাকে কুস্তি করতে শিখিয়েছেন, অনেক দিন আগে। কিন্তু আমার মনে হয়, তিনি কিছুই ভুলেননি। তিনি বয়সের ভারে ছোট হয়ে গিয়েছেন, মনে হয় তোমার সাইজেই দেখতে হবেন। তিনি বাচ্চাদের সাথে খেলতে পছন্দ করেন।” তারপর থরের মুখের ভাব দেখে আবার বলল, “উনার নাম এলি, আর আমি তাকে তোমার চেয়ে শক্তিশালী মানুষদেরও হারাতে দেখেছি। সুতরাং বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ো না, থর।”

“আমি তোমার পুরুষদের সাথে কুস্তি করতে পছন্দ করতাম,” বলল থর। “কিন্তু আমি তোমার বৃদ্ধ দাই মায়ের সাথে কুস্তি করতে রাজি আছি।”

তারা বৃদ্ধা দাইকে ডেকে পাঠাল। বৃদ্ধা যখন এলো, থর দেখল, দুর্বল, ধূসর, আর কুঁচকানো চামড়ার একজন মহিলা, মনে হচ্ছিল হালকা বাতাসেই তিনি পড়ে যাবেন। দেখে মনে হচ্ছিল, বৃদ্ধা এককালে দানবাকৃতিরই ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে আকারে থরের চেয়ে কিছু বড়। তার মাথার চুল হালকা হয়ে এসেছে। মহিলার বয়স আসলে কত, ভাবল থর। এত বৃদ্ধ কোনো মানুষ এর আগে সে কখনো দেখেনি। সে তাকে কিছুতেই আহত করতে চায় না।

তারা একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়াল। যে প্রথম অন্য জনকে মাটিতে ফেলতে পারবে, সে জয়ী হবে। থর বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিল, টানল, তাকে নাড়াতে চেষ্টা করল, কিন্তু বৃদ্ধা যেন পাথরের তৈরি, একচুলও নাড়ানো গেল না। পুরোটা সময় বৃদ্ধা তার রংহীন ঘোলাটে চোখে থরকে দেখল, কিন্তু কিছুই বলল না।

তারপর বৃদ্ধা হাত বাড়িয়ে আলতো করে থরের পা স্পর্শ করল। বৃদ্ধা পা স্পর্শ করতে থরের মনে হতে লাগল, তার পায়ে কোনো শক্তি নেই। সে বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিল, কিন্তু বৃদ্ধা তাকে দুহাত দিয়ে ধরল আর মাটির দিকে টানল। থর সর্বশক্তিতে বাধা দিল, কিন্তু কোনো ফল হলো না, কিছুক্ষণের মধ্যেই সে নিজেকে এক হাঁটু গেড়ে থাকতে দেখতে পেল।

‘থাম,” বলল উটগার্ডালোকি। “যথেষ্ট হয়েছে, মহান থর, আমরা তোমার সম্পর্কে অনেক দেখলাম। তুমি এমনকি আমার বৃদ্ধা দাইমাকেও হারাতে পারো না। আমি মনে করি না, আমার কোনো লোক তোমার সাথে আর কুস্তি করবে।”

থর লোকির দিকে তাকাল আর দুজনে থিয়ালফির দিকে তাকাল। তারা আগুনের পাশে বসল আর দানবেরা তাদের আপ্যায়ন করল। খাবার ছিল সুস্বাদু, আর পানীয় ছিল দানবদের পানীয় শিং এর পানীয়ের চেয়ে কম লবণাক্ত কিন্তু তিনজনই অনেক কম কথা বলল, অন্য সময় ভোজ হলে তারা হয়তো অনেক কথাই বলত।

ভোজের অন্যরাও অনেকটা চুপ ছিল, অতিথিদের পরাজয়ে তারাও অস্বস্তিতে ছিল।

তারা ভোরে উটগার্ডের দুর্গ ত্যাগ করে রওয়ানা হলো। রাজা উটগার্ডালোকি নিজেই তাদের বিদায় দিতে সাথে আসছিল।

“তাহলে,” বলল উটগার্ডালোকি, “আমার প্রাসাদে তোমাদের সময় কেমন কাটল?”

তারা বিষণ্ন মুখে তার দিকে তাকাল।

“তেমন ভালো কাটেনি,” বলল থর। “আমি নিজেকে শক্তিশালী ভেবে সবসময় গর্ব করতাম, এখন আমার নিজেকে খুব দুর্বল মনে হচ্ছে।”

“আমি ভাবতাম, আমি খুব দ্রুত দৌড়াতে পারি,” বলল থিয়ালফি।

“আর আমি কখনো খাবার খাওয়া প্রতিযোগিতায় হারিনি,” বলল লোকি।

তারা দুর্গের প্রবেশপথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।

তোমরা কি জানো?” বলল দানব, “তোমরা মোটেই দুর্বল নও। তোমরা আসলে কী করতে পারো, সেটা যদি আমি আগে জানতাম, তাহলে কখনোই তোমাদের আমার বাড়িতে আমন্ত্রণ করতাম না। আর তোমাদের যাতে কখনো আমার বাড়িতে না দেখা যায়, সেটা আমি নিশ্চিত করব। দেখো, আমি তোমাদের সবাইকে ধোঁকা দিয়েছি, জাদু দিয়ে।”

তারা তিনজনই দানবের দিকে তাকাল, দানব নিচে তাদের দিকে তাকিয়ে হাসল। “তোমাদের স্ক্রিমিরের কথা মনে আছে?” জানতে চাইল সে।

“সেই বিশাল দানব? অবশ্যই।”

“সেটা আমিই ছিলাম। নিজেকে বিশাল দেখাতে আমি জাদুমন্ত্র ব্যবহার করেছিলাম। আমার রসদের থলের মুখ যে রশি দিয়ে বাঁধা ছিল, সেটা ছিল লোহার রশি, যেটা একমাত্র জাদু দ্বারাই খোলা যায়। থর, যখন তুমি আমাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিলে আর আমি ঘুমের ভান করে পড়েছিলাম, আমি জানতাম, তোমার হাতুড়ির হালকা একটা আঘাতেই আমার মৃত্যু হবে। তাই আমি জাদু দিয়ে একটা পাহাড়কে অদৃশ্যভাবে তোমার হাতুড়ি আর আমার মাথার মাঝে স্থাপন করেছিলাম। ওদিকে দেখো।”

অনেক দূরে একটা পাহাড় দেখা গেল, ঘোড়ার জিনের মতো তার আকার, যার মাঝ বরাবর উপত্যকা চলে গেছে। তিনটি চারকোনাকৃতির উপত্যকা দেখা যাচ্ছিল, তিন নম্বরটি অন্য দুটির চেয়ে গভীর।

“এই পাহাড়টাই আমি ব্যবহার করেছিলাম, বলল উটগার্ডালোকি। “উপত্যকাগুলো তোমার হাতুড়ির আঘাত।”

থর কিছুই বলল না। কিন্তু তার ঠোঁট পাতলা হয়ে এলো, নাক ফুঁসতে লাগল, আর তার লাল দাড়ি দাঁড়িয়ে গেল।

লোকি বলল, “কাল রাতের কথা বলো। সেখানেও কি জাদু করেছিলে?”

“অবশ্যই। তুমি কখনো দাবানল দেখেছ? যেটা পাহাড়ের ওপর থেকে সবকিছু গ্রাস করে উপত্যকার দিকে এগিয়ে আসে? তুমি মনে করো, তুমি অনেক দ্রুত খেতে পারো? তুমি কখনোই লোগির মতো দ্রুত খেতে পারবে না, কারণ সে আগুনের তৈরি, তাই সে খাবার আর কাঠের পাত্র সবই পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি তোমার মতো এত দ্রুত খেতে কাউকেই আগে দেখিনি।”

লোকির সবুজ চোখ রাগে জ্বলে উঠল, তবে নিজে বোকা হওয়ার অপমান সত্ত্বেও সে ভালো একটা জাদুর মুখে পড়েছিল ভেবে মনে মনে প্রশংসাও করল।

উটগার্ডালোকি থিয়ালফির দিকে ফিরল। “তুমি কত দ্রুত ভাবতে পারো, বালক?” জানতে চাইল সে, “তুমি কি দৌড়ানোর চেয়ে দ্রুতবেগে ভাবতে পারো?”

“অবশ্যই” বলল থিয়ালফি। “আমি যেকোনো কাজের চেয়ে দ্রুত ভাবতে পারি।”

“এজন্য আমি তোমাকে হুগির সাথে দৌড়াতে দিয়েছিলাম, যে আসলে ছিল ‘ভাবনা”। তুমি কখনোই ভাবনার চেয়ে দ্রুত দৌড়াতে পারবে না, তুমি যতই দ্রুতগামী হও না কেন। আর আমরা তোমার মতো দৌড়াতে এর আগে কখনো দেখিনি, এমনকি তুমিও ভাবনার আগে ছুটতে পারবে না।”

থিয়ালফি কিছুই বলল না। সে কিছু একটা বলতে চাইল, চাইল প্রতিবাদ করতে, কিন্তু থর মৃদু গর্জন করল, “আর আমি? আমি গতরাতে আসলে কী করেছি?”

উটগার্ডালোকি এবার আর হাসল না, “তুমি তো অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে দিয়েছ,” বলল সে। “তুমি মোটেই বুঝতে পারনি, কিন্তু পানীয় শিং এর শেষ মাথা সমুদ্রের গভীর অংশে যুক্ত ছিল। তুমি এত পান করেছ, সমুদ্রের পানি কমে গিয়েছিল আর বিরাট ঢেউ উঠেছিল। তোমার জন্যই, থর, সমুদ্রে চিরকাল ঢেউ উঠবে। আমি আস্বস্ত হয়েছিলাম, যখন তুমি আর চতুর্থ চুমুক দাওনি, শেষ চুমুকে তুমি হয়তো সমুদ্র খালি করে ফেলতে।”

“তুমি যে বিড়ালটা তুলতে গিয়েছিলে, সেটা কোনো বিড়াল ছিল না। সেটা ছিল জরমুনগুন্ডার, মিডগার্ডের সর্প, সেটা পৃথিবীর চতুর্দিক ঘিরে আছে। মিডগার্ডের সর্পকে তোলা অসম্ভব, তারপরও তুমি সেটা করেছ, তুমি এটার একটা প্যাঁচ আলগা করে দিয়েছ, যখন তুমি তার একটা পা মাটি থেকে তুলে ফেলেছ। তুমি কি একটা গুরুগম্ভীর শব্দ শুনেছ? ওটা ছিল গোটা পৃথিবীটা নড়ে ওঠার শব্দ।”

“আর সে বৃদ্ধা মহিলা?” জানতে চাইল থর, “তোমার সেই বৃদ্ধা দাই? সে আসলে কে?” সে মৃদুস্বরে কথা বলছিল, কিন্তু সে তার হাতুড়ির হাতল শক্ত করে ধরে ছিল।

“সে ছিল আসলে এলি, ‘বার্ধক্য। বার্ধক্যকে কেউ হারাতে পারে না, কারণ একসময় সে আমাদের সবাইকেই ধরে, আমাদের দুর্বল করে দেয় আর মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দেয়। তুমি বার্ধক্যের সাথে কুস্তি করেছ, থর, আর আমরা অবাক হয়ে দেখেছি, তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে, এমনকি যখন সে তোমার ওপর জোর খাটাল, তুমি শুধু এক হাঁটু গেড়েছ। কাল রাতের মতো এমন কিছু আমরা কখনো দেখিনি, কখনো না।”

“এখন যখন আমরা তোমার শক্তিমত্তা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি, আমরা জানি আমরা তোমাদের উটগার্ডে পৌঁছাতে দিয়ে কতটা বোকামি করেছি। আমি আমার দুর্গ ভবিষ্যতে রক্ষা করতে চাই, আর এটাকে রক্ষা করার সর্বোত্তম পন্থা হলো, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন উটগার্ডকে আর কখনো খুঁজে না পায়, এই ব্যবস্থা করা, যা কিছুই ঘটুক তোমাদের কেউ আর কখনো যাতে এখানে ফেরত না আসে সেটা নিশ্চিত করা।”

থর তার হাতুড়ি মাথার ওপর তুলল, কিন্তু হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করার আগেই উটগার্ডালোকি অদৃশ্য হয়ে গেল।

“দেখো, দেখো,” চিৎকার করল থিয়ালফি।

বিশাল দুর্গটি ততক্ষণে তাদের চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে, উটগার্ভালোকির রাজ্যের কোনো নাম নিশানা আর নেই। তিন অভিযাত্রী একটা বিরাণভূমিতে দাঁড়িয়ে ছিল, আশেপাশে কোনো জনপ্রাণী দেখা যাচ্ছিল না।

“চল, বাড়ি ফিরি,” বলল লোকি। তারপর সে বলল, “এটা খুবই চমৎকার ছিল। অসাধারণ জাদু দেখলাম। আমার মনে হয়, আজ আমরা সবাই কিছু না কিছু শিখেছি।”

“আমি আমার বোনকে বলব, আমি ভাবনার সাথে দৌড়েছি,” বলল থিয়ালফি “আমি রুক্সভাকে বলব, আমি ভালোই দৌড়েছি।

কিন্তু থর কিছুই বলল না। সে শুধু আগের রাতের কথা ভাবছিল, ভাবছিল বার্ধক্যের সাথে কুস্তি করার কথা আর মিডগার্ডের সর্পের কথা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *