তেতলার লাল কামরা

তেতলার লাল কামরা

সে-স্বপ্ন তিন বার দেখেছি জীবনে।

প্রথম বার যখন দেখি, বয়স আমার আট বছর মাত্র। মা-বাবার সঙ্গে বসে ডিনার খাওয়ার অধিকার তখনও পাইনি। আমাদের নিজের ঘরেই খাবার আসে দিনে চার বার, আয়া সিমসন সামনে বসে খাইয়ে দেয়। ছিমছাম মানুষটি মিসেস সিমসন, আমাদেরও রাখে ছিমছাম পরিচ্ছন্ন করে। শিক্ষয়িত্রী আছেন একজন, তিন দফায় ছয় ঘণ্টা তিনি পড়ান আমাদের এই তিন ভাই-বোনকে। দিনের বাকি আঠারো ঘণ্টা আমরা থাকি আয়া সিমসনের হেফাজতে।

যত্নও বেশ করে। ওদিক দিয়ে খুঁত ধরবার উপায় নেই। আমাদের তো নেই-ই, অমন যে খুঁতখুঁতে মা আমাদের, তাঁরও না। ‘এটা করলে না কেন মার্থা’— এ অনুযোগ তাঁর জিভের ডগায় এসেও গলার ভিতর ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে অনেক সময়। বলবার আগেই মা দেখতে পেয়েছেন যে, সেই কাজটিই মার্থা এইমাত্র সমাধা করে এল, বা এখনও করছে বসে বসে।

গল্প ফেঁদেছিলাম একটা স্বপ্নের কথা দিয়ে। এসে পড়লাম আয়া সিমসনের কথায়। তাতে কিন্তু কেউ যেন মনে না-করেন যে, গুছিয়ে গল্প বলার বিদ্যে আমার নেই। অনেকেরই থাকে না তা, এটা ঠিক। কিন্তু আমি যে সে-দলের নই, তা এক্ষুনি বুঝতে পারবেন সবাই।

বলছিলাম, মিসেস সিমসন খাওয়ার সময় বসে থাকে আমাদের সামনে। আমার প্লেটে পুডিং একটু বেশিই তুলে দেয়, জানে যে ও-জিনিসটা আমার খুব প্রিয়। ছয় বছরের বোন আগাথার স্যান্ডউইচগুলো কুচিয়ে সরু করে দেয় ওই সিমসনই, নিজে কেটে নেওয়ার ক্ষমতা এখনও আগাথার হয়নি। বাকি রইল দশ বছরের দিদি এথেনা। এতক্ষণ তার কথা বাকি রেখেছি শুধু এই কারণে যে, আয়া সিমসনকে সে মোটেই আস্কারা দিতে রাজি নয়। ‘তুমি থামো তো মার্থা’— বলে কথায় কথায় সে ধমকে ওঠে বেচারি আয়াকে।

যাহোক, ডিনারের এক ঘণ্টা পরেই আমরা শুয়ে পড়ি। আর শোবার আগের এই এক ঘণ্টা গল্প শুনি সিমসনের কাছে। আগাথা আর আমি তো গিলি ওর গল্পগুলি, এমন যে এথেনা কোনো ব্যাপারেই যে আমল দেয় না আয়াকে, সেও গল্প শোনার বেলায় মার্থা নিলসনের একান্ত অনুগত বনে যায়।

হ্যাঁ, স্বপ্নের কথাটা তাহলে বলি এবার—

সেদিন মার্থা সিমসন এক অচিনদেশের রাজপুত্তুরের গল্প বলছিল। রাজপুত্তুর নানা দেশ বেড়িয়ে বেড়াচ্ছে। দুধের মতো সাদা তার ঘোড়া, রক্তের মতো লাল একগোছা পালক তার মাথার মুকুটে দুলছে-হেলছে-উড়ছে হাওয়ায়। কোমরে ইয়া লম্বা তরোয়াল, হাতে ইয়া লম্বা বল্লম। চলেছে রাজপুত্তুর টগবগ টগবগ—

সন্ধ্যে হয়ে আসছে দেখে সে এক কেল্লায় অতিথি হল। বনের ধারে পুরোনো কেল্লা, লোকজন তাতে কম। কেল্লাদারের সঙ্গে রাজপুত্তুরের দেখা হল না, সে নাকি যুদ্ধে গিয়েছে কোথায়। অতিথির আদরযত্ন যা করবার, সব কিছুই করল কেল্লাদারের স্ত্রী। খাওয়া-দাওয়া, গল্পস্বল্প, সবশেষে কেল্লার বুড়ো চারণের ভাঙা গলায় বীর রসাশ্রিত গান। তাও যখন সাঙ্গ হল, দুর্গস্বামিনী একটা দাসীকে ডেকে বললেন, ‘একটা আলো দেখিয়ে রাজপুত্তুরকে তুমি শোবার ঘরে পৌঁছে দিয়ে এসো। তেতলার লাল কামরায় ওঁর জন্য বিছানা করা হয়েছে।’

দাসী আগে আগে চলেছে মোমবাতি হাতে নিয়ে। সিঁড়িতে হাওয়ার বেশ দাপট, আলোটা কাঁপছে, দপদপ করছে, নিবেও যেতে চাইছে এক-এক বার। দু-ধারে এবড়োখেবড়ো দেয়ালে নানারকম ছায়ার ভূত-নাচন, তারই মধ্যে সিঁড়ির ধাপে ধাপে খটখট শব্দ উঠছে রাজপুত্তুরের লোহা-বাঁধানো জুতোর। অনেক অনেক ধাপ সিঁড়ি— রাজপুত্তুর উঠেই চলেছেন— উঠেই চলেছেন—

মার্থা সিমসনের গল্পের এই পর্যন্তই শুনতে পেয়েছিলাম আমি। শেষপর্যন্ত সে-গল্প কেমন দাঁড়িয়েছিল, আদৌ শেষ হয়েছিল কিনা গল্পটা, কিছুই জানতে পারিনি। কারণ আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওই গল্পটাই স্বপ্ন দেখেছিলাম সে রাত্রে— সেই হল প্রথম বার।

ওই গল্পটাই। তবে হুবহু ও-রকম নয়। রাজপুত্রটা আর রাজপুত্র থাকেনি স্বপ্নে। সেটা পরিণত হয়েছে জোসেফ রেমিংটন নামক এক অষ্টমবর্ষীয় বালকে। যার বড়ো বোনের নাম এথেনা আর ছোটো বোনের নাম আগাথা। আরও কিছু অদলবদল হয়েছে বই কী! সে সব ক্রমশ বলছি।

স্বপ্ন দেখলাম যেন আমি জোসেফ রেমিংটন বেড়াতে বেরিয়েছি সুটকেস হাতে নিয়ে। সাদা ঘোড়ায় আমি সওয়ার হইনি। অমনি বাসে চেপে পেরিয়ে যাচ্ছি শহর-গ্রাম-পাহাড়-প্রান্তর। মাথায় লাল পালক নেই, আমার পশমি ক্যাপে লাল পালক মানাবে না বলেই পরিনি বোধ হয়।

বয়স? বাসে চেপে চলতে চলতে সন্দেহ হচ্ছে— দেহের বয়স আমার এই আট বছরই রয়ে গিয়েছে, তা নইলে গার্ড আমাকে মাস্টার মাস্টার করবে কেন বার বার? মাস্টার তো ছোটো ছেলেদেরই বলা হয়! তা সে যাক, বাইরে থেকে আট বছরের খোকা বলে লোকে ভাবে যদি আমাকে, তার আমি করছিই বা কী, আর তাতে আমার এলো-গেলোই বা কী। মনে মনে আমি ঠিক জানছি, ঘোড়ায় চড়ে সেই রাজপুত্তুর দুনিয়া চক্কোর দেবার জন্য বেরিয়েছিল যে বয়সে, আজ আমার বয়স তার থেকে একটা দিনও কম নয়।

বল্লম তলোয়ার নেই, বলছ? নেই— তাতে হয়েছে কী? ওসব আজকাল কোন কর্মেই বা লাগে? আগেকার দিনে দৈত্যদানব থাকত দেশে, রাজকন্যাদের ধরে ধরে নিয়ে যেত, উদ্ধার করবার জন্য রাজপুত্তুরদের তরোয়াল-বল্লম রাখতেই হত সঙ্গে। আজ কি দৈত্যদানব আছে নাকি কোথাও? ঝাড়ে-বংশে নিপাত হয়েছে ওরা। যদিই কেউ কোথাও থেকে থাকে ঘাপটি মেরে, খবর পাওয়ামাত্র থানায় ফোন করে দাও। তরোয়াল-বল্লম তো সামান্য কথা! কামান-বন্দুকও যদি দরকার হয়, তাই নিয়ে ছুটবে পুলিশ দৈত্যদের দৈত্যগিরি ঠান্ডা করে দেবার জন্য।

অতএব আমি চলেছি, গল্পের রাজপুত্তুরের সমান বয়সি তরুণ জোসেফ রেমিংটন। আট বছরের একটা দুগ্ধপোষ্য বালকের ছদ্মবেশে, সুটকেস হাতে ঝুলিয়ে, পশমি ক্যাপ মাথায়, চলেছি দুনিয়াটা এক চক্কোর ঘুরে আসবার জন্য। অমনিবাস থেকে নেমে কখন পায়ে হাঁটতে শুরু করেছি, পিচ-বাঁধানো চওড়া রাজপথ থেকে নেমে কখন মেঠো পথ ধরে ধরে অস্ত-সূর্যের লাল দরজার কাছে বরাবর এসে পড়েছি, খেয়ালই করিনি কিছু।

খেয়াল হল সমুখে মস্ত-বড়ো এক ভাঙা বাড়ি দেখে।

না, গল্পের সে কেল্লা নয়, এটা একটা আটপৌরে বাড়ি, যেমন বাড়ি আমাদের লন্ডন শহরেও হাজার হাজার দেখা যায়। তফাত শুধু এই যে, বাড়িটা বিলকুল ভাঙা, অমন ভাঙা বাড়ি লন্ডনে দেখলে সরকারি লোকেরা তক্ষুনি দৌড়ে আসবে গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবার জন্য।

তফাত আরও আছে। এর চারদিকে এমন ঘন বন—

না, চারদিকেই বন নয়, বলা যেতে পারে, সাড়ে তিনদিকে বন। একটা কোণ ফাঁকা ছিল বলেই আমি এ-বাড়ির সামনে এসে পড়তে পেরেছি।

হ্যাঁ, সাড়ে তিন দিকে বন, এমন ঘন বন যে এই ভর সন্ধ্যে বেলায় তার ভিতরে ঢুকে পড়তে মনটা যেন চাইছেই না আমার। বারে বারে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছি ভাঙা বাড়িটার দিকে। সারাদিনের পর্যটনে দেহটা ক্লান্ত হয়েছে বই কী, আটবছরের শিশুরই দেহ তো! তার উপরে আর কত ধকল সইবে? ও-বাড়িতে রাতটা কাটালে দোষ কী? বন থেকে অবিশ্যি হরিণ মারে ও-বাড়ির লোকেরা, এক প্লেট মৃগমাংস উদরস্থ করে রাত্রিটা ওখানে ঘুমিয়ে নেওয়া যায় যদি, কোনো পর্যটক রাজপুত্র সেটাকে প্রথাবিরুদ্ধ বলতে পারবে না।

একটা কথা আপনারা ভালো করে বুঝুন। খিদেই পাক, আর রাত্তিরই আসুক, ও-বাড়িতে আমি যেচে অতিথি হতে যেতাম না কদাচ, যদি-না আমার সমুখে বেধে যেত ওই অজগর অরণ্য। পথে যখন বেরিয়েছি, তখন পথই সম্বল। রাত যখন হবে, ঘুম যখন পাবে, সুটকেসটি মাথায় দিয়ে পথেই শুয়ে পড়ব, এ নাহলে আর অ্যাডভেঞ্চার কী? এ-বাড়িতে ঢুকে পড়বার কথা যে মনে হচ্ছিল, সে শুধু সমুখে পথ আর ছিল না বলেই। বন! বন! আর বন! ওর মধ্যে চলার মতো পথ পাব কোথায়?

অগত্যা আমি ভাঙা বাড়ির মরচে-ধরা কড়া ধরে জোরে জোরে নাড়া দিলাম কয়েক বার। কড়াতে মরচে দেখেই আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে আসছিল, এ-বাড়িতে কী লোক আছে? বাইরের পৃথিবী থেকে লোকে আসে কি এখানে কোনোদিন? আসত যদি, কড়ায় তাদের হাত পড়ত যদি, এত মরচে কি কখনো জমতে পারত ওতে?

যাহোক, ভাবনা অকারণ। দরজা আস্তে আস্তে খুলে গেল। আর আমি চমকে উঠলাম। দরজা যে খুলেছে, সে আর কেউ নয়, আমার আয়া মার্থা সিমসন।

কিন্তু কী আশ্চর্য! মার্থাকে এমন বুড়ো দেখাচ্ছে কেন?

আর তার চেয়েও আরও বেশি আশ্চর্য, মার্থা সিমসন, আমাদের এতদিনকার পুরোনো আয়া মিসেস সিমসন চিনতেই পারছে না আমাকে।

চিনতে সে পারল না দেখে খুবই রেগে গিয়েছিলাম আমি। হয়তো তাকে, অভদ্র, অকৃতজ্ঞ ইত্যাদি বলে যাচ্ছেতাই অপমান করে আমি চলেই আসতাম সে-বাড়ির সম্মুখ থেকে, কিন্তু সেটা পেরে উঠলাম না, রাত্রি একেবারে আসন্ন বলে।

আগে আগে মিসেস সিমসন, আমি তার পিছনে। কথা সেও কইছে না, আমিও সুযোগ পাচ্ছি না কইবার। ভাবছি, সুযোগ পাবই একসময়। কোথাও থিতু হয়ে বসতে পারলেই পাব! না-বসতে দিয়ে তো পারবে না আর!

এরকম পুরোনো বাড়িতে যেমন হয়, ভিতরে ঢুকেই বিশাল হলঘর। তার চার দেয়ালেই অগুন্তি দরজা। এক এক দরজা দিয়ে এক এক মহলে যাওয়ার পথ। আমি চট করে গুনে ফেলেছি, দরজার সংখ্যা দশটা। এক এক মহলে যদি তিন-চারখানা করেও ঘর থাকে কম-সে কম, এ-বাড়ির নীচের তলাতেই ত্রিশ-চল্লিশখানা ঘর রয়েছে। তারও উপরে রয়েছে দোতলা, তেতলা। উঃ, কত ঘর! কত ঘর! একটা পলটন বাস করত নিশ্চয় এখানে।

ওই দশটা দরজারই ভিতরে একটা পেরিয়ে গেলাম আমরা— আগে আগে সিমসন, তার পেছনে আমি। একখানা ঘরে এলাম। তার কোণ দিয়ে সরু সিঁড়ি, উঠে গিয়েছে উপরে। আর তার মাঝখানে খাবারের টেবিল। টেবিলটা দশ-বারো জন বসবার মতো, কিন্তু খাওয়ার লোক তো আমি একাই দেখছি।

টেবিলের দিকেই চোখ ছিল, সেটা সিমসনের দিকে ফেরাতে গিয়েই অবাক। কোথায় সিমসন? না-বলে কয়ে সে হাওয়া হয়ে গিয়েছে। আবার টেবিলের পানে তাকাতেই আরও অবাক, এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কে এসে টেবিলে একজনের মতো খাবার রেখে গিয়েছে।

রাগ খুবই হচ্ছিল, এদের আদবকায়দার ইতরোমি দেখে। অতিথির সঙ্গে কথা কয় না, কেমন ধারা লোক এরা? বিশেষ করে ওই মার্থা সিমসন? আজ এত বছর ধরে যাদের চাকরি করে এলি, তাদের সঙ্গে এইরকম পুতুলনাচের অভিনয়?

কিন্তু রাগ যতই হোক, খিধে পেয়েছিল তার চেয়ে বেশি। মনের রাগ মনেই রেখে প্লেটের ঢাকনা খুলে ফেললাম। বাঃ, বাঃ, যা ভেবেছিলাম, তাই দেখছি। এক প্লেট হরিণের মাংস। কিন্তু কী আশ্চর্য! তার সঙ্গে আর কিছুই না, এক টুকরো রুটিও না।

যাহোক আমি খেলাম। আর খাওয়া শেষ হতে-না-হতেই মিসেস সিমসনকে দেখা গেল দোরগোড়ায়, সে যেন ডেকে বলছে কাকে, ‘একটা আলো নিয়ে তুমি জোসেফকে শোবার ঘরে পৌঁছে দিয়ে এসো। তেতলার লাল কামরায় ওর জন্য বিছানা করা হয়েছে—’

তেতলার লাল কামরা? কথাটা আগেই যেন শুনেছি কোথায়? মনে পড়ছে না, কিন্তু সে কথা থাকুক, নীচের-তলায় এবং দো-তলায় এক-শো ঘর থাকতে তেতলায় কেন? ওই সিঁড়ি দিয়ে তেতলায় ওঠা সহজ? সরু সরু ধাপ, চলটা-ওঠা, ছোটো-বড়ো গর্তে-ভরা—

কিন্তু অতিথি আমি, শোবার ঘর নিয়ে ঝগড়া করা চলে না। আর ঝগড়া করাই বা কার সঙ্গে? মিসেস সিমসন আবার হাওয়া দিয়েছে, তার জায়গায় দেখা দিয়েছে এক দাসী, হাতে তার মোমবাতি, সে পথ দেখাবার জন্য প্রস্তুত।

দাসী আগে আগে চলেছে মোমবাতি হাতে নিয়ে। সিঁড়িতে হাওয়ার বেশ দাপট, আলোটা কাঁপছে, দপদপ করছে, নিবেও যেতে চাইছে এক একবার। দু-ধারে এবড়োখেবড়ো দেয়ালে নানারকম ছায়ার ভূত-নাচন। তারই মধ্যে সিঁড়ির ধাপে ধাপে মশমশ শব্দ উঠছে আমার ফ্লেক্সের জুতোর। অনেক-অনেক ধাপ সিঁড়ি। উঠেই চলেছি— উঠেই চলেছি—

ব্যাস, আর না— স্বপ্ন ভেঙে গেল।

এই আমার প্রথম বারের স্বপ্ন।

দ্বিতীয় বার এই স্বপ্নই দেখেছিলাম একেবারে পনেরো বছর পরে।

এই পনেরো বছরে পরিবর্তন এসেছে অনেক। মিসেস সিমসন চলে গিয়েছে। আমার বয়স যখন বছর বারো, গিয়েছে তখনই। আমরা তাড়াইনি। নিজের খুশিতেই চলে গেল। কী একটা কথা শুনেছিলাম, বরাত নাকি খুলে গিয়েছে তার। বিয়ের পরেই স্বামী আমেরিকায় চলে যায় কী জানি কীসের ব্যাবসা করার জন্য। সেখানে বেশ দু-পয়সা জমিয়ে নিয়ে স্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছে সেখানেই।

যাক মিসেস সিমসন, আয়ার আর দরকারও ছিল না আমাদের। ছোটো বোন আগাথার বয়সই দশ তখন, আয়া দিয়ে আমরা করব কী? ওর বরাত খুলেছে, ভালোই। সুখে থাকুক। আমরা আস্তে আস্তে ভুলে গেলাম ওর কথা।

ভুলেই গিয়েছিলাম, আচমকা মনে পড়ল এগারো বছর পরে। আমি তখন এয়ারফোর্সের কাজ শিখছি। আছি মালয় দেশে। সেইখানে ওই স্বপ্নটাই দেখলাম দ্বিতীয় বার।

একদিন প্লেন চালাচ্ছে ও’নীল, আমি তার পাশেই বসে আছি শিক্ষানবিশ হিসেবে। আরোহী আমরা এই দুইজনই।

প্লেন বিগড়ে গেল দৈবাৎ। ও’নীল পাকা পাইলট, জ্বলন্ত প্লেনটাকে সময় থাকতে নামিয়ে ফেলল এক তেপান্তর মাঠে। সময় থাকতে বলছি এইজন্য যে, প্লেন যদিও ছাই হয়ে গেল, আমরা দু-জন প্রাণে বেঁচে গেলাম! হাতে-পায়ে চোট লেগেছিল বই কী, তবে মারাত্মক কিছু নয়, দুইদিন সেই মাঠে পড়ে থাকবার পরে হাঁটাচলার শক্তি ফিরে পেলাম আবার।

হাঁটছি, ও’নীল আর আমি। জ্বলন্ত প্লেন থেকে খাবার জল যেটুকু টেনে বার করেছিলাম, তা ফুরিয়ে গিয়েছে এই দুইদিনে। আজ বেলা দুটো এখন, পেটে কিছু যায়নি। মাথা ঘুরছে, পাও টলছে। ও’নীল বলল, ‘একটু না-বসে আর পারছি না হে!’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে। ওই ঝোপটার ভিতরে ছায়া আছে, যদিও ছায়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপ থাকাও সম্ভব।’

‘প্লেনের আগুনে মরিনি, এখন কি সাপের কামড়ে মরব?’— এই বলে ও’নীল ঝোপে ঢুকে সটান শুয়ে পড়ল। বলা বাহুল্য, আমিও পিছনে পড়ে রইলাম না!

শোবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম, ঘুমের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন। পনেরো বছর আগের সেই স্বপ্ন। এবারকার ভূমিকায় অবশ্য সাপ ছিল গোটা দুই, কারণ ঘুমের অব্যবহিত আগে সাপের কথাই আলোচনা করছিলাম ও’নীলে আমাতে মিলে।

একেবারে জোড়া শঙ্খচূড় হঠাৎ যেন মাটি ফুঁড়ে উঠল ঝোপের ভিতরে। তাদের তাড়ায় ও’নীল পালাল একদিকে, আমি অন্য একদিকে। তাড়া করেই চলেছে সাপ, আমরাও ক্রমাগত পালাচ্ছি। অবশেষে ও’নীলকে আর দেখতে পেলাম না।

বহু দূরের এক রবার বাগানে আমাকে ঢুকিয়ে দিয়ে সাপ যেন নিরস্ত হল, বোধ হয় ফিরে চলল তার সাথির কাছে। আমি কিন্তু আমার সাথির সন্ধানে আর ফিরলাম না, কারণ একে আমার আর হাঁটার শক্তি ছিল না, তায় ফিরে গিয়ে ও’নীলকে আগের জায়গায় দেখতে পাব না বলেই ধারণা আমার। উলটো দিকে ছুটতে ছুটতে সে কোথায় গিয়ে পড়েছে, তার ঠিক কী!

রবার বাগানেই আমি এদিক-ওদিক ঘুরছি ধুঁকতে ধুঁকতে, এমন সময় পেল্লায় এক ভাঙা বাড়ি পড়ল সামনে। তারপরে পনেরো বছর আগেকার সেই স্বপ্নের পুনরাবৃত্তি। দরজায় কড়া নাড়া, মিসেস সিমসনের আবির্ভাব, এবারেও তার মুখ বুড়ির মতো, সেই নির্বাক অভিনয়। ভোজনের পরে সেই কণ্ঠস্বর, ‘আলো ধরে মিস্টার রেমিংটনকে তেতলার লাল কামড়ায় পৌঁছে দাও’— তারপরে সেই চলটা-ওঠা সরু সিঁড়ি, দুইধারে এবড়োখেবড়ো দেয়াল—

আর সেই সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতেই স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া। দেখি ও’নীল আমার পাশেই ঘুমুচ্ছে তখনও।

তৃতীয় বারের স্বপ্ন এই হালের ব্যাপার, এবারেও এগারো বছরের ব্যবধানে। রয়েছি লন্ডনে, এয়ার ফোর্স দপ্তরেই কাজ করছি। একটুখানি দোস্তি হয়েছে হ্যারি শেরিডানের সঙ্গে। সুবাদ এই যে এক অফিসে চাকরি করি, আর বয়সও দু-জনের সমান। সে এসে বলল, তার বিবাহবার্ষিকী পরশু দিন, ডিনারে বন্ধুবান্ধবরা অনেকেই আসবেন, আমারও যাওয়া চাই। থাকে ওরা শহরতলি নেলসন ভিলে, রাত্রে ওখানেই থাকতে হবে, কারণ ডিনারের পরেও নাচটাচ আছে। আমি বললাম, ‘তথাস্তু।’

আর সেই রাত্রেই দেখলাম স্বপ্ন। নেলসন ভিল শহরতলিতে যাইনি কখনো, ও-নামের শহরতলি যে আছে একটা, তাও জানা ছিল না। স্বপ্নে দেখলাম, নামেই ওটা শহরতলি, বাস্তবে অজ পাড়াগাঁ। ইলেকট্রিক রেডিয়ো টেলিফোন— এসব আছে, কোন গ্রামেই বা না-আছে আজকাল? কিন্তু রাস্তাঘাট সেকেলে, বাড়িঘরও বেশিরভাগ তাই।

ঠিকানা মিলিয়ে মিলিয়ে যে বাড়িতে পৌঁছোলাম, সে এক পেল্লাই ভাঙা বাড়ি, তার কড়া নাড়তেই দোর খুলে দিল মিসেস সিমসন। তারপর, খাওয়া-দাওয়ার পরে—

এবারে বাড়ি ফাঁকা নয়, অনেকগুলি অতিথি। তবু তাদের মধ্যে থেকে আমাকেই বেছে নিয়ে তেতলার লাল কামরায় পাঠালে সিমসন বুড়ি। সেই সরু সরু চলটা-ওঠা সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে দাসীর পিছনে পিছনে আমি উঠছি যখন, স্বপ্ন ভেঙে গেল। রেগেমেগে নিজের গালে ঠাস ঠাস করে চড়াতে লাগলাম এ-ছাই স্বপ্ন কি সারাজীবন জ্বালাবে আমায়?

কিন্তু স্বপ্ন দেখেছি বলে তো আর নিমন্ত্রণ বাতিল করতে পারি না! যথাসময়ে সেজেগুজে রওনা হলাম নেলসন ভিল। জায়গাটার চেহারা দেখেই ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল আমার। স্বপ্ন মিথ্যে! স্বপ্ন মিথ্যে! দিব্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহরতলি, জঙ্গল-টঙ্গল তেমন কিছু না। রাস্তাঘাট আলোয়-আলোয় ঝলমল! ভগবান রক্ষে করেছেন, স্বপ্ন মিথ্যে হয়েছে।

বাড়িটা অবশ্য— হাঁ বাড়িটা, ভাঙা নয় অবশ্য, কিন্তু স্বপ্নে কয়েক বার যেরকম বাড়ি দেখা গিয়েছে, তার আদল কিছু আছে যেন বাড়িটাতে। হালফিল রং-চং করা হয়েছে, তা যদি না-করা হত, আদলটা আরও কত বেশি প্রকট হতে পারত, ভাবতে গিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম।

দোরগোড়ায় অভ্যর্থনা করল— মিসেস সিমসন নয়। ভগবান রক্ষে করুন, অভ্যর্থনা করল স্বয়ং হ্যারি শেরিডান, স্বপ্ন আবারও মিথ্যে হল। জয় ভগবান।

মিসেস শেরিডানের সঙ্গে আলাপ হল, উপহার যা এনেছিলাম, তার জন্য ধন্যবাদ পেলাম প্রচুর। দিব্যি সুন্দরী তরুণী বউ হ্যারির। সপ্রতিভ হাসিখুশি। আমার কিন্তু কেবলই মনে হচ্ছে, মিসেসের মুখখানা আমি দেখেছি আগে। কোথায় দেখেছি, তা কিছুতেই মনে করতে পারছি না। ডিনারের আনন্দ, বল-নাচের হুল্লোড়— সবকিছুর ভিতরে ওই মনে না-করতে পারার অস্বস্তি ক্রমাগত খোঁচাতে থাকল আমাকে।

অনেক রাত পর্যন্ত চলল নাচ। নিমন্ত্রিতেরা থাকবেন সবাই আজ রাতটা। বাড়িটা বড়ো, কয়েকটা ফ্ল্যাটে ভাগ করেছে মালিকেরা। শেরিডানেরা একটা ফ্ল্যাট নিয়ে রয়েছে, তার মধ্যে এইসব অতিথির জায়গা হবে কোথায়?

না, এর মধ্যে জায়গা হবে না, তা জানে শেরিডানেরা! তাই আরও দুটো ফ্ল্যাট এক রাতের জন্য চেয়ে নিয়েছে মালিকের কাছে। খালি ছিল দু-দুটো।

আমায় কিন্তু নিজেদের ফ্ল্যাটেই রাখবে। এক অফিসের লোক, আমার খাতির বেশি তো হবেই! অন্য অতিথিদের যার যার ঘরে পৌঁছে দেবার পর মিসেস শেরিডান স্বামীকে হুকুম করলেন, ‘আলো দেখিয়ে তুমি মিস্টার রেমিংটনকে তেতলার লাল কামরায় পৌঁছে দিয়ে এসো। ওঁর বিছানা ওখানেই করা হয়েছে।’

আমি বজ্রাহত! এবারে আর স্বপ্ন নয়। জোরে জোরে চিমটি কাটতে লাগলাম গালে-গলায়-বাহুতে। লাগছে তো! প্রচণ্ডভাবে লাগছে! স্বপ্ন নয় তাহলে। এবার আর স্বপ্ন নয়।

তবে চলটা-ওঠা সরু সরু সিঁড়ি বেয়ে বা এবড়োখেবড়ো দেয়ালে এলোমেলো ছায়ার ভূত-নাচন দেখতে দেখতে তেতলায় উঠতে হল না— এটাও বাঁচোয়া একটা। সিঁড়ি ভালো, দেয়াল তো ভালো।

দাসী আমায় পৌঁছে দিল ঘরে। একটিমাত্র ঘর তেতলায়। ভালো ঘর, বড়ো ঘর। আর হালেই লাল রং করা। অনুমান করা যায়, বাড়িতে সম্মানিত অতিথি এলে তার রাত্রিবাসের জন্যই এ-ঘর আলাদা করে রাখা হয়েছে। আসবাব বিছানা সব দামি।

আলগা মোম একটা নয়, মোমদানিই হাতে করে এনেছিল দাসী। টেবিলে সেইটি বসিয়ে রেখে দাসী শুভরাত্রি জানিয়ে বিদায় নিল। আমি শোবার জন্য তৈরি হলাম। পোশাক ছাড়তে ছাড়তে ঘরখানা পর্যবেক্ষণ করছি। দেয়ালে ছবি রয়েছে, কয়েক খানাই রয়েছে। একখানা তো দেখছি খুব বড়ো ছবি। দামি ফ্রেমে বাঁধানো। কী ছবি? কৌতূহল হল দেখবার। মোমদানিটা উঁচু করে ধরলাম ছবির সামনে।

সঙ্গেসঙ্গে একঝলক বিদ্যুৎ বয়ে গেল আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত। ভালো করে দেখবার জন্য আমি চেয়ারখানা টেনে নিলাম ছবির কাছে। তার ওপরে দাঁড়িয়ে আবারও আলো উঁচু করে ধরলাম।

মিসেস সিমসন নির্ঘাৎ মিসেস সিমসন!

আয়া সিমসনকে যে চেহারায় আমাদের শৈশবে দেখতাম, সিমসনের সে চেহারা এ নয়। এ চেহারা বুড়ি সিমসনের। সে চেহারার সঙ্গেও পরিচয় আমার হয়েছে কয়েক বার। স্বপ্নে যখনই মিসেস সিমসনকে দেখেছি, বুড়ির চেহারাতেই দেখেছি তাকে।

চেয়ারের উপরেই দাঁড়িয়ে আছি। হাঁ করে তাকিয়ে আছি ছবির দিকে। ছবির চোখে— এ কি আমার চোখের ভুল? কিন্তু আমার তো মনে হয়, ছবির চোখ বিজয়োল্লাসে জ্বলজ্বল করছে। সে দৃষ্টি যেন বলছে, ‘তাহলে এতদিন পরে পেয়েছি তোকে। অনেক দিন ঘোরাচ্ছিস তুই—’

কিন্তু এসব কী? আমি কি পুরুষমানুষ নয় নাকি? ভয় পাচ্ছি কী বলে? কাকে ভয় পাচ্ছি? একটা ছবিকে? হাসির কথা নয়?

হ্যাঁ, কতকগুলো আশ্চর্য যোগাযোগ ঘটে গিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। অনেক অনেক বছর ধরেই ঘটে এসেছে। কিন্তু আকস্মিক যোগাযোগ ছাড়া আর কী হতে পারে তা? যিশু কহো! ভয় তো নয়ই, ভাববার কিছু নেই এতে।

সিমসনের ছবি এখানে কেন এল? এই প্রশ্নেরও একটা জবাব যেন মাথায় আসছে। হ্যারির বউ মিসেস সিমসনের মেয়ে হতে পারে। আমাদের বাড়ি থেকে মার্থা আমেরিকায় গিয়েছিল স্বামীর কাছে। তারপর তার মেয়ে হতে পারে, যদি হয়ে থাকে, তার বয়স মিসেস শেরিডানের সমানই হওয়ার কথা। মেয়েই হয় যদি, তার বাড়িতে তার মায়ের ছবি থাকার বাধা কী?

নিশ্চয় মেয়ে। সেইজন্যই মিসেস শেরিডানকে দেখে আমার মনে হয়েছিল, ভদ্রমহিলাকে আগে দেখেছি কোথাও। ধারণাটা খানিকটা ভুল, খানিকটা খাঁটি। দেখেছিলাম ঠিকই ওরকম চেহারা আগে। তবে যে-চেহারা বাইশ বছর আগেকার আয়া সিমসনের। মিসেস শেরিডানের এই যৌবনের চেহারা যখন আয়া সিমসনের ছিল, তখনকার।

যাক, এইভাবে নিজের মনকে ঠান্ডা করে নিয়ে শয্যাগ্রহণ করলাম আমি। রাত অনেক হয়েছে। এইবার না ঘুমোলে নয়। আলো নিমিয়ে দিলাম। ঘুমুই।

ঘুমিয়ে পড়েছিলামও।

হঠাৎ জেগে উঠলাম দারুণ যন্ত্রণায়। আমায় চেপে ধরে কোনো হিংস্র জন্তু যেন দাঁত বসিয়ে দিয়েছে আমার গলায়! গলার ভিতর বসে যাচ্ছে গোটা দাঁতের পাটি!

পরিত্রাহি চিৎকার করে আমি জন্তুটাকে ঝেড়ে ফেলবার জন্য প্রাণপণে ঝটাপটি শুরু করলাম। রীতিমতো বলবান পুরুষ আমি, তবু আততায়ীর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব হল না আমার পক্ষে। বেশ টের পেলাম, রক্তে ভিজে যাচ্ছে বিছানা। ভয় হল, গলাটা দুই টুকরো হয়ে যাবে ওই দাঁতের কামড়ে।

ভয়ে যন্ত্রণায় গোঙাতে গোঙাতে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ছি, এমন সময়ে দুপদাপ শব্দ সিঁড়িতে, হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ল হ্যারি শেরিডান আলো হাতে নিয়ে। ‘কী? কী? কী? জোসেফ, হল কী?’— ক্রমাগত চিৎকার করছে হ্যারি, আর আমার উপর থেকে টেনে তুলবার চেষ্টা করছে আমার আততায়ীকে।

পরের দিন জ্ঞান হলে শুনলাম, সে আততায়ী আর কেউ নয়, একখানা ছবি। মিসেস সিমসনের ছবিখানা। কিন্তু—

ছবি ছিঁড়ে পড়া আশ্চর্য নয়। কিন্তু ছবির দাঁত যদি জ্যান্ত মানুষে গলা কামড়ে প্রায় দুই টুকরো করে ফেলে সেটাকে আশচর্য বলে স্বীকার না-করা মুশকিল। ছবির দাঁতে-ঠোঁটে রক্ত সপসপ করছে তখনও।

হাসপাতালে আমাকে কাটাতে হল প্রায় তিন মাস।

যখন সুস্থ হয়ে ফিরলাম হাসপাতাল থেকে, হ্যারিকে চেপে ধরলাম আমি, ‘তোমার শাশুড়ির শেষ জীবনের ইতিহাস আমায় বলতেই হবে। তুমি না-জানতে পারো তা, কিন্তু তোমার বউ নিশ্চয়ই জানে—’

হ্যারি মুখ নীচু করে ধরা গলায় বললে, ‘সে জানে। আমাকেও বলেছে ইদানীং। আমেরিকায় গিয়েছিল তো শাশুড়ি। আদিম ইন্ডিয়ানদের ভিতর পিশাচের পূজারি আছে এক সম্প্রদায়! তারা জ্যান্ত থাকতেও রক্ত খায়, মরে যাবার পরেও পিশাচ হয়ে রক্তপানের সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। তাদের চ্যালা হয়েছিল বুড়িটা।’

বুঝলাম। কেন পিশাচী আমার রক্তপান করল, বুঝলাম সেইটুকুই। কিন্তু বুঝলাম না অন্য একটা কথা। আমেরিকায় যাওয়ার আগেই সে যে তেতলার লাল কামরার কথা শুনিয়েছিল আমাকে, সেটা কী করে সম্ভব হল?

আমি বা হ্যারি-হ্যারির বউ কেউ আমরা সমাধান করতে পারিনি এ সমস্যার।

ছবিখানা? পুড়িয়ে ফেলেছি হ্যারি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *