তুমি যে আমার
এই নিবন্ধের নাম ‘তুমি যে আমার’ না হয়ে ‘আমি যে তোমার’ হলেও কোনও আপত্তির কারণ ছিল না। বলাবাহুল্য, এই কাহিনীমালার উপজীব্য দাম্পত্য জীবন।
সবাই জানেন, ভুক্তভোগীরা ভাল করেই জানেন যে বড়ই বিপজ্জনক এই বিষয় এবং সেই জন্যে অনেকেই আমার দুঃসাহসের তারিফ করেন সেকথা আমার জানা আছে।
এই দুঃসাহসিক গল্পকথা শুরু করা যাক দুটো নৈশ কাহিনী দিয়ে। দুটি কাহিনীই প্রায় একরকম, শুধু শেষের দিকে একটু ব্যতিক্রম।
মধ্যরাত অনেকক্ষণ পার হয়ে গেছে। মহানগরীর নির্জন রাস্তায় এক ব্যক্তি ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ, যেমন হয়, তার পথ আটকিয়ে দাঁড়াল এক মূর্তিমান পুলিশ। তারপর সেই পুলিশ লোকটিকে কর্কশ কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল, ‘ও হে, এই এত রাতে কোথায় যাচ্ছ।’ সহসা পুলিশ দেখে লোকটি একটু চমকিয়ে গিয়েছিল। অল্প পরে ধাতস্থ হয়ে সে পুলিশকে জানাল, ‘জমাদারসাহেব, একটা বক্তৃতা শুনতে যাচ্ছি।’
জমাদারসাহেব ঘাগু লোক, এত সহজে ছাড়বার লোক তিনি নন। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়ারকি নাকি? এত রাতে বক্তৃতা হবে কোথায়?’
লোকটি জবাব দিল, ‘হুজুর, আমার বাড়িতে।’ জমাদার সাহেব ধমকিয়ে উঠলেন, ‘তোমার আবার কীসের বক্তৃতা? কে বক্তৃতা করবে?’
লোকটি করজোড়ে বলল, ‘হুজুর আমার স্ত্রী বক্তৃতা করবেন। বিশ্বাস না হয় তো দয়া করে আমার সঙ্গে চলুন। প্রতিদিনই এ রকম হয়, দেরি করে বাড়ি ফেরার বিষয়ে প্রতি রাতেই আমার স্ত্রী এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা বক্তৃতা করেন।’
পরের কাহিনীটি এই একই। ওই মধ্যরাত, মহানগরীর নির্জন রাজপথে একাকী পথিক জমাদারসাহেবের মুখোমুখি। তবে এই গল্পের জমাদারসাহেব অল্প কিছুক্ষণ আগে গাঁজাপার্কে বসে কয়েক ছিলিম গাঁজা টেনে এসেছেন, ফলত, তাঁর মন এখন কিছুটা বায়বীয়, তাঁর হৃদয় বেশ আপ্লুত। তিনি মধ্যরজনীর পথিককে বিশাল আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে সস্নেহে বললেন, ‘বাবা, এত রাতে রাস্তায় ঘুরছ, ঘরে কি তোমার বউ নেই? সে যে রাগ করবে।’
নৈশ পথিক বললেন, ‘স্যার ঠিকই ধরেছেন, আমি বিয়ে করিনি, ঘরে আমার বউ নেই৷’জমাদার সাহেব অতঃপর পথিককে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন, ঝরঝর করে তাঁর চোখের জলের ফোঁটা হতভাগ্য নৈশভ্রমণকারীর চোখ মুখ গাল মাথা ভিজিয়ে দিল। সেই সঙ্গে ফ্যাঁসফেঁসে গেঁজেল কণ্ঠে জমাদার সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বাবা তুমি যদি বিয়ে না করে থাক, ঘরে যদি তোমার বউ না থাকে, তবে কীসের দুঃখে তুমি এত রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছ ?’
অতঃপর এক হতভাগ্য স্বামীর কথা বলি। বেচারার নতুন বিয়ে হয়েছে। নবপরিণীতা পত্নী খুব আহ্লাদ করে এই প্রথম মাংস রান্না করেছে।
স্বামীর থালায় মাংস তুলে দিয়ে নবীনা স্ত্রী সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করল, ‘ওগো, একটু চেখে বলো তো এই মাংসটা কেমন রান্না করেছি।’ তারপর একটু থেমে বলল, ‘জানো আজ আমি প্রথম মাংস রান্না করলাম।
একটু মুখে দিয়ে স্বামীর কেমন খটকা লাগল, কেমন অদ্ভুত একটা স্বাদ, স্ত্রীকে সে কথা জানাতে স্ত্রী বলল, ‘ও কিছু নয় বার্নল দিয়েছি কি না তাই।’ স্বামী স্তম্ভিত হয়ে বলল, ‘বার্নল দিয়ে মাংস রান্না করেছ?’ স্ত্রী বলল, ‘মাংসটা একটু পুড়ে গিয়েছিল কিনা তাই বার্নল লাগিয়ে দিলাম।’ অবশেষে এই নিবন্ধে লিপিবদ্ধ করা উচিত হবে কিনা এই ভেবে এতক্ষণে এই ঘটনাটা লিখছি। দয়া করে কেউ অবিশ্বাস কোরো না, বড় সত্য ঘটনা। আমার অফিসেই ঘটেছিল।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার ব্যাপারে কর্মচারীদের একটি নমিনেশন ফর্ম দিতে হয়, যাতে লিখতে হয় যে এই ব্যক্তিকে আমি মনোনয়ন করলাম আমার অবর্তমানে, (অর্থাৎ মৃত্যু হলে) ইনি এই টাকাটা পাবেন। তারপরে লিখতে হয় যাঁকে মনোময়ন করা হল তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক কী।
সবাই এসব ক্ষেত্রে স্ত্রী কিংবা পুত্রকে মনোনয়ন করেন, অবিবাহিতরা মাকে মনোনয়ন করেন। নির্দিষ্ট ফর্মে প্রথমে নিজের নাম, তারপরে মনোনীতজনের নাম এবং তাঁর সঙ্গে কী সম্পর্ক অর্থাৎ স্ত্রী, পুত্র বা মা লেখা হয়।
এইরকম একটি ফর্মে একবার দেখেছিলাম এক ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীকে মনোনীত করেছেন, স্ত্রীর নাম ঠিকই লিখেছেন কিন্তু ঠিক তার পরের ঘরে সম্পর্কের জায়গায় লিখেছেন, ‘খুব খারাপ সম্পর্ক, মোটেই বনিবনা নেই।’ একথা তিনি বুঝে লিখেছিলেন, নাকি না বুঝে সেটা কিন্তু জানতে পারিনি।
পুনশ্চ: স্থূলাঙ্গিনী স্ত্রীকে ডাক্তারখানা থেকে ফিরে এসে বললেন, ‘ওগো রোগা হওয়ার ট্যাবলেট তো তুমি অনেক খেলে, কিন্তু কিছুতেই তো কিছু হল না। এবার তোমাকে ডাক্তারবাবু এই ট্যাবলেটগুলো দিয়েছেন, এগুলো কিন্তু খাওয়ার জন্যে নয়।’ এই বলে স্বামী পঁচিশটা গোল আকারের ট্যাবলেটের একটা শিশি স্ত্রীর হাতে দিলেন। স্ত্রী বললেন, ‘তা হলে এই ট্যাবলেটগুলো কী কাজে লাগবে?’ স্বামী বললেন, ‘ডাক্তারবাবু বলেছেন, দিনে তিনবার এই ট্যাবলেটগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে দিতে, তারপর সেগুলো গুনে গুনে কুড়িয়ে শিশিতে তুলে নেবে। দ্যাখো এতে যদি রোগা হওয়া যায়।’