৬
সাইফুল বলল, দেখো শান্তা, বুঝতে পারছি যে তুমি ঠিক সুস্থবোধ করছ না, কিন্তু তোমার সঙ্গে আমার কথা হওয়াটা খুব জরুরী। এসো, স্পষ্ট করে, সরাসরি আলোচনা করি, কেমন?
এত ভূমিকারও দরকার নেই, আর এত আড়ষ্ট বোধ করারও প্রয়োজন নেই, বলল শান্তা। নিজেকে আমি সামলে নিয়েছি, এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ।
তাহলে তো খুব ভাল। শোনো, এইমাত্র তোমার হাসান ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তিনি আমাকে সব কথাই বলেছেন।
তা সম্ভব নয়, জবাব দিল শান্তা। হাসান ভাই ওই মেয়েটাকে ঝর্ণা আপা বলে চালাবার চেষ্টা করছেন, তাই না? হেসে উঠল সে।
মুখ শুকিয়ে গেল সাইফুলের। কিন্তু শান্তা, উনি তো তোমার ঝর্ণা আপাই!
কি করে বুঝলেন আপনি? ঝর্ণা আপাকে আপনি তো ভাল করে চিনবেনই না।
যে-কোন মানুষের পরিচয় অনেক ভাবে প্রমাণ করা যায় শান্তা। তোমার ঝর্ণা আপার সঙ্গেও কাল কথা হয়েছে আমার। তিনি প্রমাণ করতে রাজি আছেন।
ওরা খুব চালাক-দুজনেই। চিন্তা-ভাবনা করে নিশ্চয়ই কিছু বুদ্ধি বের করেছে।
কি আশ্চর্য! কেন তোমার মনে হচ্ছে ভদ্রলোক খুনী?
আমি…আমি কি তা-ই বলেছি? শান্তার মুখে কথা বেঁধে গেল,
চেহারায় হতভম্ব ভাব। – না বললে কি হবে, অর্থটা তো তাই দাঁড়ায়। অন্য এক মহিলাকে নিজের স্ত্রী বলে চালাবার চেষ্টা তিনি কখন করবেন? যখন তোমার ঝর্ণা আপাকে হাজির করতে পারবেন না, যখন তিনি জানেন তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন।
হ্যাঁ, কোন সন্দেহ নেই, ঝর্ণা আপা মারা গেছে। নিজের কপালে হাত বুলাল শান্তা, যেন চিন্তা করতে কষ্ট হচ্ছে তার। আমি হাসান ভাইয়ের অপরাধের কথা ফাঁস করতে চাইনি, সাইফুল ভাই। আমি তার সঙ্গে বেঈমানী করব না বলে কথা দিয়েছি। তবে আপনাকে বলায় কোন ক্ষতি হয়নি। আমি জানি, আপনি কাউকে বিলবেন না।
তুমি ভুল জানো, শান্তা। তোমার হাসান ভাইয়ের ওপর আমার কোন সহানুভূতি নেই। তিনি আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, বলেছেন তোমাকে নাকি আমি তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারব না। কেউ যদি মিথ্যে অপবাদের শিকার হয় তাহলে আলাদা কথা, অবশ্যই আমি তার পাশে দাঁড়াব। কিন্তু কেউ যদি খুনী হয় তাকে আমি জেল খাটিয়ে ছাড়ব, মনে রেখো।
সাইফুল ভাই, না! চিৎকার করে উঠল শান্তা।
তুমি কি তাকে ভালবাসো, শান্তা? ভয় পেয়োনা বা সংকোচ করো না, সত্যি কথা বলো। আমার কাছে তুমি কোনভাবে ঋণী নও। আমাকে তুমি কোন প্রতিশ্রুতি দাওনি। যা সত্যি তাই বলো। বাসো?
অন্য প্রসঙ্গে বলতে শুরু করল শান্তা, তমা, হাসান ভাইয়ের উপন্যাসের নায়িকা, মামুনকে ভালবাসত। হাসান ভাই তমাকে আমার মত করে দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু বইটার শেষ দিকটায় তমার আচরণ আমার ভাল লাগেনি। আমি তার মত নই, কোন দিন তার মত হব না। সে একটা বোকা মেয়ে..গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করল। শুধু বাস্তবের মুখোমুখি হতে পারবে না ভেবে। আমি তার মত দুর্বল নই, আমার সাহস আরও অনেক বেশি। আমি ঠাণ্ডা মাথায় সব চিন্তা করতে পারছি, আমার মরারও কোন ইচ্ছে। নেই।
তোমার এত কথার মানে কি এই যে খুনী বলে মনে করা সত্ত্বেও হাসান সাহেবকে তুমি ভালবাসো?
খুনটা হাসান ভাই ইচ্ছা করে করেননি। আমি জানি, ব্যাপারটা স্রেফ দুর্ঘটনা ছিল। যা ঘটে গেছে তার জন্যে আমি তাকে দায়ী করি না, সাইফুল ভাই। শুধু দুঃখ এই যে তিনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। আর সবাইকে বোকা বানাচ্ছেন বানান, কিন্তু আমাকে কেন বোকা বানাতে চাইবেন!.
এ তোমার এক ধরনের অশুভ গর্ব, অন্যায় অহংকার, কঠিন সুরে বলল সাইফুল।
চোখ মিট মিট করে তার দিকে তাকিয়ে থাকল শান্তা, ভাব দেখে মনে হলো দিশেহারা বোধ করছে সে।
কিংবা হয়তো তুমি সাংঘাতিক ভীতু, আরও নির্দয় হলো সাইফুল। একটা কাউয়ার্ড।
পরম স্বস্তির সঙ্গে সে লক্ষ করল, রাগে জ্বলে উঠল শান্তার চোখ দুটো। কিসের জন্যে আপনি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছেন? কি করেছি আমি?
শান্তা রেগে যাওয়ায় মনে মনে খুশি হলো সাইফুল। তার জানা আছে রাগ হলো সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। বলা যায় শক ট্রিটমেন্ট-এর আশ্রয় নিচ্ছে সে, কল্পনার জগৎ থেকে শান্তাকে বাস্তব জগতে ফিরিয়ে আনার জন্যে। কি করেছ শুনবে? তুমি আসলে নিজের বিবেককে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছ। বিবাহিত এক লোকের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছ নিজেকে, এটা তুমি দুর্বল সুরে স্বীকার করছ। তারপর, এখন চেষ্টা করছ একটা অজুহাত খাড়া করতে। কারণ আরেক মহিলার স্বামীকে ফাদে ফেলে ভাগিয়ে আনছ, এটা ভাবতে পারছ না। সেজন্যেই, নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকার জন্যে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিশ্বাস করতে চাইছ যে তোমার ঝর্ণা আপা মারা গেছেন। তোমার অহংকারেও আঘাত লেগেছে, কারণ তোমার ধারণা ওই ভদ্রলোক তোমাকে পুরোপরি ভালবাসেন না যেটুকু ভালবাসেন তা-ও তোমাকে উপন্যাসের ওই মেয়েটার মডেল মনে করে। ভদ্রলোককে তো ভাল বলিই না, তোমাকেও ভাল বলার মত তেমন কিছু দেখছি না।
শান্তার চোখে পানি এসে গেল। আপনি যে এত নিষ্ঠুর হতে পারেন আমার জানা ছিল না!
কারণ আমি তোমাকে একটা বিবর থেকে বের করে আনতে চাইছি। সত্যের মুখোমুখি হও, শান্তা। তোমার হাসান ভাই প্রথম থেকেই জানতেন যে তার স্ত্রী বেঁচে আছেন, অন্তত তিনি তার কোন ক্ষতি করেননি। প্রতিবেশীরা তাঁকে রাগিয়ে দেয়ায়, তার মনে লেখক সুলভ শয়তানি কাজ করায়, স্ত্রীকে খুঁজে বের করার কোন চেষ্টা তিনি করেননি। বরং প্রতিবেশী আর পুলিশকে আরও সন্দিহান করে তুলেছেন। আবার একই সঙ্গে তোমাকে বুঝতে দিয়েছেন যে গুরুতর কোন অপরাধ ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। প্রথম দিকে তুমি বুঝতে পারোনি ঠিক কি বিশ্বাস করা উচিত। আমার ধারণা, তাঁর চরিত্রে কিছু গুণ আছে, কিছু জাদু আছে, সেগুলোর সাহায্যে উনি তোমাকে সম্মােহিত করে ফেলেন। একথা ঠিক যে ওদের দুজনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তুমি কি করবে সেটা তোমার ব্যাপার। ভুলে যেয়ো না ঝর্ণা আপা তোমার খালাতো বোন, তার ডিভোর্স করা স্বামীর সঙ্গে তোমার মা তোমার বিয়েতে রাজি হবে কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে। তবে তুমি সাবালিকা, কারও বাধা তুমি না শুনলেও পারো।
কিন্তু উনি…কিন্তু আমি…আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন না যে কাজটা আমরা অন্যায় করেছি?
হেসে উঠল সাইফুল। কেন আমি তা ভাবতে যাব। কেউ তা ভাববে না। আমরা সভ্য মানুষ, শান্তা, যুগটা আধুনিক। যে-কেউ যে-কাউকে ভালবাসতে পারে, সেটাকে অন্যায় বলে মনে করার দিন এখন কি আর আছে! তোমার ঝর্ণা আপা ডিভোর্স দিলেই হাসান সাহেবকে বিয়ে করতে পারো তুমি।
আবার সেই পুরানো প্রসঙ্গে ফিরে এল শান্তা, ওই মেয়েলোকটা ঝর্ণা আপা নয়।
ভেজানো দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল ঝর্ণা, থমথম করছে তার চেহারা। তুমি ভাই যথেষ্ট করেছ, কিন্তু পাজি মেয়েটা কারও কথা শুনবে না। তুমি বাইরে যাও, আমি একবার শেষ চেষ্টা করে দেখি।
মাথা নিচু করে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল সাইফুল। সে চলে যেতে ঝর্ণা বলল, স্কুলে খবর পাঠিয়েছি, খালাম্মা আসছেন। তিনি যদি আমাকে ঝর্ণা বলে মেনে নেন, তখন তুই কি বলবি? মাথা নাড়ল শান্তা। আমি জানি তুমি ঝর্ণা নও।
তোর সঙ্গে দেখছি খোদা নেমে এলেও পারবে না। হাল ছেড়ে দেয়ার সুরে বলল ঝর্ণা। আমি আর কি করতে পারি!
অন্তত একটা কাজ করতে পারো। মুখের ব্যাণ্ডেজ খুলে ফেলো।
শান্তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল ঝর্ণা। কিছুক্ষণ পর বলল, ব্যাণ্ডেজ খুললেই বা কি, ওটার ভেতর স্ট্র্যাপ ছাড়াও আরও কি সব যেন আছে। সব যদি খুলতে হয় দাগগুলো চিরকালের জন্যে থেকে যাবে আমার মুখে। তুই কি তাই চাস?
শান্তা বলল, তুমি সত্যি ঝর্ণা আপা হলে চাইতাম না।
হাতের মুঠো খুলে দেখাল ঝর্ণা। কি এনেছি দেখ। তার হাতের মুঠোয় ছোট্ট একটা কঁচি দেখা গেল। জানি আমার চেহারা না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করবি না তুই, তাই তৈরি হয়েই এসেছি। ব্যাণ্ডেজটা খুললে আমার সাংঘাতিক একটা ক্ষতি হয়ে যাবে, কিন্তু তোর ভুল না ভাঙলে ক্ষতিটা হবে আরও অনেক বড়। কথা বলার মধ্যেই কাঁচি দিয়ে কেটে ব্যাণ্ডেজের প্যাচ খুলতে শুরু করেছে সে।
সেদিকে অপলক তাকিয়ে রয়েছে শান্তা, ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসির রেখা।
খুব ব্যথা পাব রে, শান্ত সুরে বলল ঝর্ণা। বিশেষ করে স্ট্র্যাপগুলো খোলার সময় জান বেরিয়ে যাবে। ক্লিনিকে বা হাসপাতালে সম্ভবত ব্যথামুক্ত কোন পদ্ধতি আছে। তার কপালের একটা পাশে শুধু ব্যাণ্ডেজ নেই। কপালটাই তোকে আগে দেখাই। সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি ডানদিকের গালে, ওদিকের স্ট্র্যাপ খুলতে হলে আমি বোধহয় অজ্ঞান হয়ে যাব। কপাল থেকে ছাড়িয়ে নেয়া ব্যাণ্ডেজ তার কাঁধে স্থূপ হয়ে উঠছে। ব্যথায় কুঁচকে উঠল চেহারা, উহ-আহ করছে। ব্যাণ্ডেজ খোলার পর টান দিয়ে কপাল থেকে তুলে ফেলল প্লাস্টার, তারপর ভুরুর ওপর থেকে। ঝর্ণার কপালটা চওড়া। কপালের ওপরে চুলের যে রেখা, সেই রেখার ঠিক মাঝখানটা ছোট্ট গুলতি আকৃতির। তারপর ভুরু থেকে প্লাস্টার তোলা হলো। জোড়া ভুরু তার। তার এই ভুরুর সৌন্দর্য নিয়ে এক সময় কত আলোচনা করেছে শান্তা।
হঠাৎ সে আর্ত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল, না! ঝর্ণা আপা, না!
দাঁতে দাঁত চেপে রয়েছে ঝর্ণা, ব্যথায় কথা বলতে কষ্ট হলো, শুরু যখন করেছি, সবটাই দেখ তুই…।
না! আঁতকে উঠে ঝর্ণার হাতটা খপ করে চেপে ধরল শান্তা। আমি একটা শয়তান মেয়ে, আমার মাথায় ভূত চেপেছিল… আমাকে মারো তুমি…! ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল, ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝর্ণার বুকে।
ফোঁপানোর মত শব্দ করে দুজন একসঙ্গে নিঃশ্বাস ফেলছে ওরা। ঠাণ্ডা সুরে, যদিও শান্তাকে বাঁ হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, জিজ্ঞেস করল ঝর্ণা, এখন তুই বিশ্বাস করিস তো?
আপা, আমার মুখটা তুমি খামচে দিচ্ছ না কেন? টেনে ছিড়ে ফেলছ না কেন আমার চুল? বিশ্বাস করি…আপা, এখন আমার মনে হচ্ছে অনেক আগে থেকেই আমি জানতাম যে তুমিই…।
তোর মনের একটা অংশ জানত, নরম সুরে বলল ঝর্ণা। শোন, অস্থির হবি না। আসলে কারুরই কোন ক্ষতি হয়নি। আমার কথা তুই ভুলে যাস, ভাই। আমি চাই সুখী হতোরা…।
কি বলতে চাইছ? ঝট করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল শান্তা।
আমাদের তো ছাড়াছাড়ি হয়েই যাচ্ছে, বলল ঝর্ণা। তবে, মনে রাখিস, সেজন্যে তুই দায়ী না। দায়ী আমি, হাসানকে সুখী করতে পারিনি। এক অর্থে তোকে সে বিয়ে করলে আমি খুশিই হব রে শান্তা। তুই খুব লক্ষ্মী মেয়ে, বিয়েটা হলে মনে মনে অন্তত এটুকু জেনে সান্ত্বনা পাব যে হাসান ভাল একটা মেয়ের হাতে পড়েছে…।
ঝর্ণার মুখে হাতচাপা দিল শান্তা। ফের যদি এ-কথা মুখে আনো, আমি কিন্তু বিষ খাব।
শোন, শান্তা, হাসাঁন বাইরে দাঁড়িয়ে আছে…।
তুমি শোনো, ঝর্ণা আপা! আমাকে যদি সারাজীবন কুমারীও থাকতে হয়, তবু হাসান ভাইকে বিয়ে করব না। এতদিন তাঁকে আমি ভালও বেসেছি ঘৃণাও করেছি, কিন্তু এখন শুধুই ঘৃণা করি। উনি অত্যন্ত স্বার্থপর মানুষ, এই ঘটনাটাকে পুঁজি করে একদিন হয়তো নাটকীয় একটা উপন্যাস লিখে ফেলবেন। তুমি হয়তো বোঝানি আপা, তার কাছে গোটা ব্যাপারটাই ছিল একটা নিষ্ঠুর এক্সপেরিমেন্ট। এখন আমার আরও মনে হচ্ছে, উনি অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনও বটে। জেনেশুনে কিভাবে উনি এত বড় ঝুঁকি নিতে দিলেন তোমাকে? এখনও তো তোমাদের ছাড়াছাড়ি হয়নি, তোমার ওপর তার কি এতটুকু মায়া নেই?
না রে, তা নয়, বলল ঝর্ণা। সে আমাকে বাধা দিতে কম করেনি। কিন্তু আমি দেখলাম ভুলটা ভাঙাতে না পারলে তুই হয়তো পাগলই হয়ে যাবি। সত্যি আমার খুব ভয় করছিল। ভাবলাম, আমার চেহারা বড় না বোন বড়।
আমাকে তাঁর মারা উচিত ছিল, চোখ-মুখ লাল করে বলল শান্তা। দুএকটা চড়-চাপড় খেলে ঠিকই আমার চোখ খুলে যেত। গোটা দুনিয়ায় তাঁর মত স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক মানুষ আর বোধহয় একটাও নেই। আপা, তুমি তাকে বলে দিয়ো, আমি তার চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। তিনি যেন আমার সঙ্গে দেখা না করেন। আর আপা, তুমি আমাকে মাফ করে দিয়ো…।
পাগলামি করিস না তো। চোখে পানি, ঝুকে শান্তাকে চুমো খেলো ঝর্ণা।
সাত দিন আগেই মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শান্তা, কুষ্টিয়ায় মামা-মামীর কাছে বেড়াতে যাবে। সম্ভব হলে সেখানে থেকেই আবার পড়াশোনা শুরু করবে সে।
রওনা হবার জন্যে তৈরি হচ্ছে, ফানুনী ইসলাম আরেকবার সাইফুলের প্রসঙ্গটা তুললেন, কাজটা কি ঠিক হচ্ছে, শান্তা? ছেলেটার সঙ্গে একবার অন্তত দেখা করে যাবি না?
না, মা, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বিষন্ন সুরে বলল শান্তা। তার কাছে আমার আর কোন মূল্য নেই। এত কিছু ঘটে যাবার পর বলতে পারো তার সামনে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াব আমি? শুধু শুধু তাকে বিব্রত করে কি লাভ!
না, আমি বলতে চাইছি, সে হয়তো কিছু মনে করেনি…।
চলেই যখন যাচ্ছি, নিজেকে আর কোন লোভের ফঁাদে ফেলতে চাই না, মা। আয়েশা বেগমের দিকে তাকাল শান্তা। আন্টি, দেখুন না পাড়ার কোন ছেলে-ছোকরাকে পান কিনা, একটা রিকশা ডেকে আনুক।
আয়েশা বেগম কামরা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। ফাল্গনী ইসলাম বললেন, দাঁড়া, কাসুন্দির বয়েমটা তোর সুটকেসে ভরে দিই…, বলতে বলতে তিনিও বেরিয়ে গেলেন। আর ঠিক তখনই আরেক দরজায় দেখা গেল সাইফুলকে।
পরস্পরের দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকল ওরা। তারপর সাইফুলই প্রথম কথা বলল, অনেক দিন পর তোমাকে দেখে ভাল লাগছে। কেমন আছ, শান্তা?
সত্যি কি তাই? মন গলায় বলল শান্তা। কিন্তু গত সাতদিনে একবারও তো আপনাকে এ-বাড়িতে দেখা যায়নি।
আসিনি ভয়ে। আমি এলে তুমি কি খুশি হতে, শান্তা? মনে হচ্ছিল, যে আচরণ তোমার সঙ্গে করেছি, এখানে আসার আমার কোন অধিকার নেই আর। তবে আসিনি বলাটা ভুল হচ্ছে। দুতিন দিন এসেছি, খালাম্মার মুখে শুনে গেছি কেমন আছ তুমি। তোমার সঙ্গে দেখা করিনি ভয়ে…।
মা তো আমাকে কিছু বলেনি!
আমিই বারণ করেছিলাম। মনে হচ্ছিল, তোমাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। খালাম্মাকে আমি এ-ও বলে গিয়েছিলাম, হাসান সাহেবও যেন তোমাকে বিরক্ত না করেন।
চেষ্টা করেননি তা নয়, তবে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করিনি, বলল শান্তা। তাকে আমি আর কোনদিনই দেখতে চাই না।
এই তো বুদ্ধিমতীর মত কথা বলছ। আমার মন বলছে, ওরা দুজন সম্ভবত পরস্পরের সঙ্গে আবার অ্যাডজাস্ট করে নেবেন। দুজনই ওরা শিক্ষিত মানুষ, পরস্পরকে বোঝেন।
আমিও তাই চাই, বলল শান্তা। সেই ছোটবেলা থেকে ঝর্ণা আপাকে ভালবাসি আমি। তারপর ইদানীং যা ঘটে গেল, তার প্রতি আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব।
শান্তার মুখে চোখ বুলিয়ে হাসল সাইফুল। তার চোখে আজকের মত সুন্দর কখনোই লাগেনি শান্তাকে। আমাকে তুমি বসতে বলবে না? ব্যস্ত হয়ে উঠল শান্তা। ছি-ছি, আমি যে কি! আসুন, সাইফুল ভাই, বসুন…যদিও আয়েশা আন্টি রিকশা আনতে গেছেন…।
কোথাও যাচ্ছ তুমি, শান্তার কাপড়চোপড়ের ওপর চোখ বুলাল সাইফুল।
সাইফুল একটা চেয়ার টেনে বসার পর শান্তা বলল, হ্যাঁ, কুষ্টিয়ায়, মামার ওখানে। ভাবছি ওখানে থেকেই আবার পড়াশোনা শুরু করব।
সত্যি পড়াশোনা শুরু করবে? তাহলে তো খুবই ভাল কথা, বলল সাইফুল। কিন্তু যাবার আগে বলে যাবে না, আমাকে তুমি ক্ষমা করেছ কিনা?
আপনি আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন, বলল শান্তা। ক্ষমা চাওয়ার কথা আমার, আপনার নয়। সাইফুলের দিকে তাকাতে পারল না সে।
সেদিন যা বলেছি, আসলে তা আমি বোঝাতে চাইনি, শান্তা। তখন সত্যি তোমার শক ট্রিটমেন্ট দরকার ছিল।
জানি, এখন সব বুঝতে পারি, বলল শান্তা। সাইফুল ভাই, আপনি নিজেকে দায়ী করলে আমার অপরাধের মাত্রা আরও বরং বাড়বে।
কিন্তু তুমি চলে যাচ্ছ কেন? মানে, সত্যি কি তোমার যেতে মন ইছে?
হ্যাঁ। এখানে আমার জন্যে আর কিছু নেই।‘
কথাটা সত্যি নয়, শান্তা।
মানে?
এখানে তোমার জন্যে ভালবাসা আছে, আর তুমি তা জানোও, বলল সাইফুল।
সাইফুলের দিকে যেন অনন্তকাল ধরে তাকিয়ে আছে শান্তা। তারপর সে বলল, তারমানে এখনও আমাকে চান আপনি?
না চাওয়ার কোন কারণ ঘটেছে বলে তো আমার অন্তত জানা নই।
আমি ভেবেছিলাম, ব্যাপারটা শেষ হয়ে গেছে, নিচু গলায় লল শান্তা। মা বলছিল, আপনার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছি আমি। তাছাড়া, এমনও নয় যে হাসান ভাই আমাকে স্পর্শ করেননি। একবার তিনি আমার হাত ধরে টান দিয়েছিলেন।
আরেকবার তিনি আমার কপালে…আমার কপালে…।
চেয়ার ছেড়ে উঠে এল সাইফুল। এমন বোকা মেয়ে তো জীবনে দেখিনি! চুপ, একদম চুপ! আমি খুব ভাল করেই জানি, তোমার জন্যে গোটা ব্যাপারটাই ছিল একটা দুঃস্বপ্নের মত। তোমার হাসান ভাই কি করেছে, শুনতে আমার ভাল লাগার কথা নয়, কারণ ওই কাজ করা উচিত ছিল আমার। সেটা অবশ্য আমি পুষিয়ে নিতে পারব…, বলে শান্তার একটা হাত ধরে মৃদু টান দিল সাইফুল। কথা দাও, শান্তা, কোথাও তুমি যাবে না?
কিন্তু সাইফুল ভাই…।
আমি একটা সুযোগ চাই, শান্তা। আমাকে প্রমাণ করতে দাও, তোমার মত মেয়েকে একা শুধু আমার মত একটা ছেলে সুখী করতে পারে।
দরজায় আয়েশা বেগমকে দেখা গেল। শান্তা, তোর রিকশা।
সাইফুলের দিকে একদৃষ্টে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আয়েশা বেগমের দিকে ফিরল শান্তা। আন্টি, মার কাছ থেকে দুটো টাকা নিয়ে রিকশাঅলাকে বিদায় করে দিন। আমি কোথাও যাচ্ছি না।
এতদিন পর সত্যি আজ আমার নার্ভাস লাগছে, বলল ঝর্ণা। ডেসিং খোলর পর যদি দেখা যায় কুৎসিত হয়ে গেছে চেহারাটা?
ডাক্তার সাহেব বলেছেন, ভয় বার কোন কারণ নেই, মনে করিয়ে দিল হাসান।
তা বলেছেন বটে, তবে আশ্বাস দেয়াই তার অভ্যাস। নিশ্চিতভাবে তিনিও কিছু জানেন না।
মানতে পারলাম না। আশ্বাস দেন তিনি সারাজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। তাছাড়া, কোলকাতার সার্জেন ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলার পর তোমাকে ভরসা দিয়েছেন তিনি।
দেখা যাক, স্নান গলায় বলল ঝর্ণা, টেবিল থেকে তুলে নিল চায়ের কাপটা।
শোনো, ঝর্ণা, বলল হাসান। তোমার ব্যাণ্ডেজ খোলার আগে কথাটা বলতে চাই। আমি চাই না আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাক।
চাও না? চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রাখল ঝর্ণা, তার হাতটা একটু একটু কাঁপছে।
মানে তুমি যদি মুক্তি না চাও আর কি।
আমি তো তা কোনদিন চাইনি, সহজ সুরে বলল ঝর্ণা। এমনকি যখন আমি ভাবতাম আশরাফ বেঁচে আছে কিনা তখনও চাইনি। সন্দেহটা মনে জাগায় আমার শুধু মনে হত তোমার সঙ্গে বিয়েটা ঠিক বৈধ নয়।
তখনও তুমি আমাকে মায়া করতে, আমি জানতাম, স্বীকার করল হাসান। তবে আমি যেমন পাগলের মত ভালবাসতাম, তুমি তেমন বাসতে না। তারপর থেকে আমার ওপর যে-টুকু মায়া তোমার ছিল সে-টুকুও নষ্ট করার জন্যে যা যা দরকার সবই করেছি আমি।
এ তোমার ভুল ধারণা। তুমি যা-ই করে থাকো, তার প্রভাব আমার ও অত প্রবল হয়নি। তোমার আচরণ বরং আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে আমাকে তোমার দরকার, তোমার দেখাশোনা করার জন্যে। এত কিছু ঘটে যাবার পরও গত কয়েকটা হপ্তা একসঙ্গে খুব ভালই তো কাটল আমাদের সময়। আমার একটা ভয় ছিল। শান্তার বিয়ে হয়ে গেছে শুনে তোমার না আবার কি প্রতিক্রিয়া হয়। অন্য কিছু ভেব না, আমার ভয় হচ্ছিল তুমি না আবার ভেবে বসো সাইফুল শান্তাকে সুখী করতে পারবে না। কিন্তু দেখলাম, তুমি খুব শান্তভাবেই ব্যাপারটা মেনে নিলে।
খবরটা পেয়ে আসলে অসম্ভব হালকা লাগছিল নিজেকে, মনে হলো কঠিন একটা সমস্যা আপনাআপনি সমাধান হয়ে গেছে। বিয়েটা প্রমাণ করল, শান্তার সত্যি কোন ক্ষতি আমার দ্বারা হয়নি,
আমি ওর জীবনটা নষ্ট করে দিইনি।
তোমাকে বলা হয়নি, ওদের বিয়েতে আমি গিয়েছিলাম, বলল ঝর্ণা। আমার কাছে টাকা ছিল না, তোমার কাছ থেকে চাইতেও সংকোচ হচ্ছিল, তাই…তাই আমি আমার একটা চেইন প্রেজেন্ট করেছি ওকে। তুমি কিছু মনে করলে? ওটা গত বছর তুমি আমাকে কিনে দিয়েছিলে..।
কিছুই মনে করিনি। ঝর্ণার একটা হাত ধরল হাসান। তবে এসো, আপাতত ওদের কথা ভুলে যাই আমরা। ঝর্ণা, তুমি ভাল করেই জানো আমি কি বলতে চাইছি। আমি বলতে চাইছি, দেখতে তুমি কুৎসিত হলেও আমার কিছু আসে যায় না। যদিও তোমার কথা চিন্তা করে আমি চাই, আগের চেহারা যেন ফিরে পাও তুমি। আমার আসলে তোমাকে দরকার, তোমার চেহারাটা নয়। জানি আমার বোকামির কোন শেষ নেই, তবে কথা দিচ্ছি এখন থেকে সাবধান হব। তুমি কি থাকবে আমার সঙ্গে?
আমি তো তোমার সঙ্গেই আছি, হাসান। জিজ্ঞেস করো, চলে যাব কিনা?
মুহূর্তের জন্যে হলেও হকচকিয়ে গেল হাসান, তারপর হাসল সে, জিজ্ঞেস করল, তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও, ঝর্ণা?
কোথায় যাব গো? তুমি ছাড়া কে আছে আমার?
আর কাজী মহসীন অভিনয় করার যে প্রস্তাবটা দিয়েছে। তোমাকে, তার কি হবে?
তুমি যদি না চাও, করব না। সত্যি কথা বলতে কি, ঢাকা ছেড়ে কোথাও আমার যেতে ইচ্ছে করে না। মানে বলতে চাইছি কোলকাতায়ও যেতে ইচ্ছে করে না, এখানেও থাকতে ইচ্ছে করে না। বিশেষ করে এই জায়গাটার ওপর থেকে মন আমার একেবারেই উঠে গেছে।
আমারও.। আমরা তাহলে ঢাকাতেই থাকব, কি বলো? শোনো, সত্যি আমি চাই আবার তুমি অভিনয় করো। তবে নিজের দেশে সুযোগ থাকতে বিদেশে কেন? আর পুরোপুরি পেশাদার হয়ে যাও, এও আমি চাইব না। ভাল লাগলে করবে। আসলে সুখী একটা সংসার দরকার আমাদের, আর বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চা না থাকলে সুখ জিনিসটা পরিপূর্ণ হয় না। আমাকে তুমি কথা দাও, ঝর্ণা-রাগ করে কোনদিন আর চলে যাবে না।
যাব না, যদি এমনকি…।
জীবনে কোনদিন আর তোমার গায়ে হাত তুলব না, যতই আমাকে তুমি রাগিয়ে দাও।
শাস্তিটা আমার পাওনাই হয়েছিল, বলল ঝর্ণা। কিন্তু অপমানটা খুব লেগেছিল আমার। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে আমার গায়ে হাত তুলছ তুমি। অমন হেসো না
তো, কসাইটা!
এবার হো হো করে হেসে উঠল হাসান, এক মুহূর্ত পর অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার সঙ্গে হাসতে লাগল ঝর্ণা। সত্যি আমি দুঃখিত, ঝর্ণা। মাফ চাই। শোনো, ব্যাপারটা ঝুলিয়ে রেখে লাভ নেই, চলো এখুনি গিয়ে ব্যাণ্ডেজ খোলার জন্যে ডাক্তার সাহেবকে বলি। আচ্ছা, বউকে চুমো না খেয়ে একটা মানুষ কতদিন থাকতে পারে?
এক ঘণ্টা পর, একটা ক্লিনিকে, ডাক্তারের চেম্বারে বসে থাকতে দেখা গেল ওদেরকে। আয়নায় চোখ রেখে নিজেকে দেখছে ঝর্ণা। তার দিকে সকৌতুকে তাকিয়ে রয়েছে হাসান ও ডাক্তার তরফদার।
আরে, কি সুন্দর আমি!
চিরকালই তাই ছিলে, বলল হাসান। নিজেও তা ভাল করে জানো।
কিন্তু হাসান, আমি ভুলে গিয়েছিলাম। সত্যি বলছি, আগে কি রকম দেখতে ছিলাম মনে করতে পারছি না। মুখটা সত্যি সুন্দর, তাই না? কেন বলো তো, সম্পূর্ণ নতুন আর অচেনা মনে হচ্ছে কেন? দেখো না, চোখ দুটো কি বড় বড়। কোনদিন ভুরু প্লাক করিনি বলে খুশি লাগছে আমার। আর চোখের পাতাগুলো খেয়াল করো, সিকি ইঞ্চির চেয়ে বেশি লম্বা। আর নাকটা? এমন খাড়া নাক কারও দেখেছ, হাসান?
দেখেছি, বলল হাসান। শুধু তোমার। ডাক্তার তরফদার হাসছেন, হাসছে হাসানও।
তারপর ডাক্তার সাহেব বললেন, নাকের পাশের দাগগুলো আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে, আপাতত পাউডার ব্যবহার করলে চাপা পড়ে যাবে, তবে এক সময় ওগুলো আর থাকবে না। আপনার কপালের দাগটা একটু বেশি গভীর, কারণটা হলো সময়ের আগে ড্রেসিং খুলে ফেলেছিলেন আপনি, তবে ওটাও একটু দেরিতে মিলিয়ে যাবে।
যতদিন না যায়, চুল নামিয়ে ওটা ঢেকে রাখব, হাসিমুখে বলল ঝর্ণা। সব মিলিয়ে, আগের চেয়ে আমার মুখের বয়স কমে গেছে, কারও মায়া এসে গেছে চেহারায়। নাকের মাথায় যে তিলগুলো ছিল তার একটাও এখন নেই। হাসান, বাড়ি নিয়ে চলো আমাকে। iজ সারাটা দিন আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে থাকব।
চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসছে ওরা, ডাক্তার সাহেব তৃপ্তিভরা চোখে তাকিয়ে আছেন। মনে মনে ভাবছেন, খুব সুখী দম্পতি ওঁরা, পরস্পরকে সাংঘাতিক ভালবাসেন।
আমাকে তোমার পছন্দ হয়? তোবড়ানো ফিয়াটে চড়ে শহর থেকে বাড়ি ফিরছে ওরা। মানে আমার এই নতুন চেহারা?
তোমাকে আমার চেহারার জন্যে সুন্দর লাগছে না, সত্যি কথাই বলল হাসান, সুন্দর লাগছে এখন তোমাকে সুখী একটা মেয়ে দেখাচ্ছে বলে। ঝর্ণা, আমরা দুজনেই আসলে ভাগ্যবান। যতটুকু আমাদের প্রাপ্য তারচেয়ে অনেক বেশি পাচ্ছি।
জানি গো, জানি, স্বামীর কাঁধে মাথা রাখল ঝর্ণা। আমি তা কোনদিন ভুলব না।