৫
রামীধোপানি ঘাটে নৌকায় রাত্রিরাস করে পরদিন ভোর-ভোর পদব্রজে রওনা দিলেন। আপাতত গন্তব্যস্থল দিনেমারদের ফ্রেডরিক নগর। তারকেশ্বর থেকে প্রায় বারো ক্রোশ পূর্বদিকে। সড়ক বা পথ বলতে কিছু নাই। মাঝে মাঝে বনপথ, কখনো বা ধানক্ষেতের দিগন্ত-অনুসারী প্রান্তরের মাঝখান দিয়ে বিসর্পিল গতিতে আলপথ। দিগভ্রান্ত হবার আশঙ্কা নাই। লক্ষ্য বরাবর পূর্বাভিমুখী। পথে বড় নদীও নাই। বারো-চৌদ্দ ক্রোশ পথ একদিনে পাড়ি দেওয়া যাবে না, বিশেষ রূপেন্দ্র ‘পথি নারী বিবর্জিতা’ শ্লোকের নির্দেশ মানেননি। তা হোক, অসুবিধা নাই কিছু। পথে পড়বে দুটি বর্ধিষ্ণু জনপদ : হরিপাল ও সিংহপুর। মোট দূরত্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পথ পাড়ি দিলে। স্থির করেছেন, দৈনিক প্রায় চার ক্রোশ পথ অতিক্রম করবেন। হরিপাল এবং সিংহপুরে এক এক রাত্রি অতিবাহিত করে তৃতীয় দিনে উপনীত হবেন ফ্রেডরিক নগরে। বস্তুত ঐ ফেরঙ্গ-জনপদটিও তাঁর লক্ষ্যস্থল নয়, তিনি যাবেন রাধাবল্লভপুরে ঐ ফেরঙ্গ-শহরের উপকণ্ঠে।
চিহ্নিত পথরেখা যেমন নাই তেমনি চিহ্নহারা আলপথে বিপদও কিছু নাই। পথে মাঝে হয়তো কিছু জঙ্গল পড়বে, কিন্তু হিংস্র শ্বাপদের আশঙ্কা নাই। ‘আর চোর-ডাকাতের উপদ্রবও নাই।
রূপেন্দ্র তাঁর সহধর্মিণীর হাত ধরে যে চিহ্নহারা পথে যাত্রা করলেন সেই পথেই আজ বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসে শত শত তীর্থযাত্রী। তাদের সম্বল বাঁকে ফুলের মালা, ঘটে গঙ্গাজল, কপালে শ্বেদবিন্দু, আর মুখে ধর্মবিশ্বাসের লোকায়তধ্বনি : ভোলেবাবা পার করে গা!
তারকেশ্বর ত্যাগ করে গাছ-গাছালির অন্তরাল অতিক্রম করে ফাঁকা মাঠে পড়েই নজর হল সামনের দিকে একদল যাত্রী। প্রায় আধক্রোশ দূরে। তারাও চলেছে পূর্বাভিমুখে। বোধ করি একই লক্ষ্যমুখে। এতদূর থেকে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, তবে দলে পনের-বিশজন পুরুষ-স্ত্রী : কিছু অল্পবয়সীও আছে। পুরুষদের অনেকের কাঁধে বাঁক। তাতে মালপত্র। দুটি মালবাহী অশ্বতরও আছে। অনুমান হয়—ওরা সদলবলে চলেছে নূতন আশ্রয়ের সন্ধানে—পশ্চিম থেকে পুবে—বোধকরি ভাগীরথীর পূর্বপারে। বর্গীর হাঙ্গামা শুরু হওয়ার পর থেকে এ দৃশ্য পৌনঃপুনিকতায় ক্লান্তিকর।
ব্যবধান ক্রমে কমে আসছে। সম্মুখবর্তী দলে আছে বৃদ্ধ ও শিশু; পুরুষেরা মালবাহী। এতক্ষণে বোঝা যাচ্ছে ওরা বাউল। কিন্তু বাউলদের মতো পুরুষেরা প্রকৃতিদত্ত শ্মশ্রু ও ওষ্ঠলোম রাখেনি, যদিও মাথার চুল উঁচু করে চুড়ো বেঁধেছে—যাকে বাউলেরা বলে ‘ধৰ্ম্মিল্ল’ অনেকের ঊর্ধ্বাঙ্গে খেঙ্কা, কাঁধে ঝুলি, হাতে লাঠি। তাদের সঙ্গিনীদের চুলও চুড়ো করে বাঁধা কারও বা পরনে গিরিমাটিতে ছোপানো শাড়ি।
দ্বিপ্রহরে দূর থেকে নজর হল দলটি একটি দীর্ঘিকার পাড়ে জমিয়ে বসেছে, প্রকাণ্ড একট বটগাছের ছায়ায়। রূপেন্দ্র বললেন, মনে হচ্ছে ওরাও গঙ্গার দিকে চলেছে, তীর্থযাত্রী। চল গিয়ে আলাপ করা যাক। অজানা পথে বড় দলে একসাথে যাওয়াই সুবিধাজনক
আপত্তি জানালো মঞ্জরী, না! দেখছ না, ওরা ফলারের আয়োজন করছে। এখন আমর গিয়ে উপস্থিত হলে ওরা বিব্রত হবে। ঐ তো কাছেই গ্রাম। আমরা বরং সেদিকেই এগিয়ে যাই। গাঁয়ে হয় তো দোকানে কিছু খাবার কিনতে পাওয়া যাবে। একই দিকে গেলে পথে আবার নিশ্চয় দেখা হবে।
কথা ঠিক। দলপতি বৃক্ষতলে একটি কিলিঞ্জকে এলিয়ে পড়েছেন—শরকাঠির মাদুর আর কি। ওরা পোঁটলা-পুঁটলি খুলে মধ্যাহ্ন-আহারের আয়োজনে ব্যস্ত। চক্ষুলজ্জা এড়াতে সেদিবে দৃষ্টি না দিয়ে ওঁরা দলটিকে অতিক্রম করে যেতে চাইলেন; কিন্তু তাতেও নিস্তার নেই। হঠাৎ একটি মেয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে এগিয়ে আসে। বাধ্য হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হল। মেয়েটির বয়স রূপেন্দ্ররই কাছাকাছি, হয়তো কিছু কম—রীতিমতো সুন্দরী, সুঠাম শরীর, মেদবর্জিত, নাকে রসকলি, ধম্মিল্লর চারপাশে একটা রঞ্জনফুলের মালা জড়ানো। গেরুয়া রঙের শাটিকা, ঊর্ধ্বাঙ্গে ঘননিবদ্ধ কঞ্চলিকা। কাছাকাছি এসে সে যুক্তকরে দণ্ডবৎ হল রূপেন্দ্রর সম্মুখে, কিন্তু প্রশ্ন করল তাঁর সঙ্গিনীকে, তুমি কুসুম না?
মঞ্জরীও থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। বলে, হ্যাঁ, কিন্তু আপনাকে তো …
যুবতী সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তার ডাগর চোখদুটি মেলে রূপেন্দ্রর দিকে অকুণ্ঠিত দৃষ্টিতে তাকায়। বলে, আপনিই তাহলে সেই ধন্বন্তরি?
রূপেন্দ্র বলেন, আমার নাম শ্রী রূপেন্দ্রনাথ দেবশর্মা …
দেখ্-না-দেখ্ মেয়েটি পথের উপরেই সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করল। রূপেন্দ্র বিব্রত; কিন্তু বিড়ম্বনার তখনো বাকি। পরমুহূর্তেই মেয়েটি উঠে দাঁড়ায় আর অনায়াসে রূপেন্দ্রর দক্ষিণ মণিবন্ধ চেপে ধরে বলে, এমন আড়াল দিয়ে পালিয়ে গেলে তো চলবে না। আপনি আমার বোনাই! এস কুসুম—কর্তামশায়ের সঙ্গে আলাপ করবে—
গোটা দলটাই উন্মুখ আগ্রহে লক্ষ্য করছে। দলপতিও উঠে বসেছেন। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। বেশবাস অন্য সকলেরই মতো, শুধু ঊর্ধ্বাঙ্গে পিরানের পরিবর্তে ‘চিন্ত-কন্থা’—অর্থাৎ নানারঙের কার্পাসখণ্ড /শেলাই করে বানানো আলখাল্লা ধরনের একটি পোশাক—বোধকরি দলপতির শনাক্তিচিহ্ন।
মেয়েটি বললে, কর্তামশাই! এই দেখুন, কাদের ধরে এনেছি। এ হচ্ছে আমার বোন—রূপনগরের সেই রাইরানী, আর ইনি সেই সোঞাই গাঁয়ের ধন্বন্তরি!
দলপতি উৎফুল্ল হয়ে সাদর অভ্যর্থনা করেন, কী সৌভাগ্য আমাদের! আসুন, বসুন। অগত্যা বসতে হল। মেয়েটি এতক্ষণে কুসুমমঞ্জরীকে বলে, তুমি আমাকে চিনবে না। আমিও রূপনগরের মেয়ে। তোমাকে বারে বারে দেখেছি। তোমাদের কথা আমার সব জানা। কোথায় চলেছ তোমরা?
প্রত্যুত্তর করলেন রূপেন্দ্র, দলপতির দিকে ফিরে। বলেন, আপাতত চলেছি হরিপাল। সেখান থেকে সিঙ্গুর হয়ে গঙ্গাতীরে, ত্রিবেণী।
বাঃ! বাঃ! আমরাও তাই। তাহলে এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন হয়? বিশ্রাম করুন। সেবা করুন। তারপর এক সঙ্গে রওনা দেওয়া যাবে। সন্ধ্যার পূর্বেই হরিপালে পৌঁছে যাব।
রূপেন্দ্র বলেন, এ তো আনন্দের কথা। তবে একটি শর্ত আছে গোঁসাইজী, তীর্থের পথে প্রতিগ্রহ গ্রহণ করতে নেই। আপনি যদি স্বীকৃত হন …
হাত তুলে বৃদ্ধ ওঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, তিন-চার দিন একসাথে চলতে হবে। বেশ তো, এর পর না হয় তাই হবে। কিন্তু প্রথমবার ও কথা ওঠে না। আপনি অতিথি! আমাদের ব্রাহ্মণ সেবার পুণ্যফল থেকেই বা কেন বঞ্চিত করেন? আর আয়োজন আমাদের সামান্যই—কাঁচা ফলার। দ্বিতীয়ত আমি ‘গোসাই’ নই…
–বাউল সম্প্রদায়ের দলপতিকে ‘গোঁসাইজী’ সম্বোধন করাই তো প্ৰথা,…
–তা ঠিক। তবে আমরা বাউল নই, আউল।
–বাউল নন, আউল! উভয়ের কী পার্থক্য?
—ব্যাকুলতা আর আকুলতার মধ্যে যা। ওঁরা ‘অচিন পাখির’ সন্ধানে ব্যাকুল, আর আমরা ‘মনের মানুষের’ সন্ধানে আকুল। তা সেসব তত্ত্বকথা পরে হবে, আপাতত ঐ দীঘিতে হাত-মুখ ধুয়ে আসুন।
আয়োজন সত্যই সামান্য—সিক্ত চিপিটক, ইক্ষুগুড়, কদলী এবং খুরমো।
আহারান্তে সামান্য বিশ্রাম। সেই অবকাশে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা গেল।
ঐ মেয়েটি—রাধারানী—এ দলে আছে মাত্র কয়েক মাস। রূপনগরেরই মেয়ে। বন্দিনী ছিল মোহন্ত মহারাজের কুঞ্জে। চার পাঁচ বছর। প্রাক্তন রাইরানী! বর্গীরা যখন রূপনগর বিধ্বস্ত করে তখন সে প্রাণভয়ে অজয়ে ঝাঁপ দেয়। অনেক ঘাটে জল খেয়ে এখন এই দলে এসে মিশেছে। তারও সংসারে ফিরে যাবার পথ নেই—অবশ্য সংসার বলতে কিছু আছে কি না, তাও জানে না মেয়েটি।
এঁরা ‘বাউল’ নন, ‘আউল’। এই সম্প্রদায়ের কথাও কিছু শোনা গেল।
এ মতের—অন্তত এই দলের—আদি প্রবক্তার নাম : আউলেচাঁদ।
নদীয়ার উলা-গ্রামে—ঐ যার নাম পরবর্তীকালে হয়েছিল বীরনগর—সেখানেই সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ পাদে আউলেচাদের আবির্ভাব। তাঁর পিতামাতার পরিচয় জানা যায় না। পরম্পরায় জনশ্রুতি ১৬১৬ শকে (1694 খ্রীঃ) ফাল্গুন মাসের প্রথম শুক্রবার তাঁকে আবিষ্কার করেন উলাগ্রামের এক বারুজীবী—নিজের পর্ণক্ষেত্রে। অজ্ঞাতকুলশীলটিকে পুত্রস্নেহে পালন করতে থাকেন। ঐ বারুজীবীর নাম -মহাদেব। দ্বাদশ বৎসর বয়সে আউলেচাদ ঐ পালক পিতার গৃহত্যাগ করেন, কিছুদিন এক গন্ধবণিকের গৃহে অবস্থান করেন। পরে এক ভূস্বামীর ভদ্রাসনে কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত করেন। কিন্তু সংসারে আবদ্ধ থাকার জন্য তিনি ধরা-ধামে আসেননি। পুনরায় গৃহত্যাগ। বঙ্গদেশের নানা অঞ্চল পরিভ্রমণ করে সাঁইত্রিশ বৎসর বয়সে বেজরা গ্রামে প্রকট হন। অনতিবিলম্বে তাঁর বাইশজন শিষ্য হয়। তার মধ্যে হটু ঘোষ, কৃষ্ণদাস হরি ঘোষ, রায়পাল প্রভৃতি প্রধান। ঐ বাইশজন শিষ্য নিয়ে স্থান থেকে স্থানান্তরে পরিভ্রমণ করতেন। নিম্নাঙ্গে কৌপীন, ঊর্ধ্বাঙ্গে খেল্কা—আউলেচাঁদ একটি সহজ সরল ধর্মমত প্রচার করে গিয়েছেন। তাঁর মতে হিন্দু, মুসলমান, ম্লেচ্ছ সবাই সমান—সকলের অন্নই গ্রহণ করতেন নির্বিবাদে। তাঁর সম্বন্ধে প্রচলিত গান :
“এ ভাবের মানুষ কোথা হতে এলো?
এর নাইকো রোষ, সদাই তোষ, মুখে সত্য কথা বলো।
এর সঙ্গে বাইশজন, সবার একটি মন,
জয়কর্তা বলি, বাহু তুলি, করে প্রেমে ঢলোঢল।
এ যে হাবা দেওয়ায়, মরা বাঁচায়, এর হুকুমে গঙ্গা শুকালো।।
এ ভাবের মানুষ কোথা থেকে এলো?”
আউলেচাঁদ দেহ রাখেন আমাদের কাহিনীকালের অনেক পরে, ১৬৯১ শকে (1770 খ্রীঃ); কিন্তু তাঁর জীবিতকালেই আদিম শিষ্যদলের এক একজন এক-এক মতের প্রতিষ্ঠা করে ভিন্ন ভিন্ন দল গঠন করেন। কেউ কেউ অবশ্য গৃহাশ্রমেও প্রত্যাবর্তন করেন। আউলেচাদের দেহাবসানের পর ঘোষপাড়ার সদোপ রামশরণ পাল যে দলটি গড়েন তাই পরবর্তীকালে সবচেয়ে প্রতিষ্ঠা পায়। সে দলের নাম : কর্তাভজা।
এই সম্প্রদায়ে গুরুকে বলা হয় ‘মহাশয়’ আর শিষ্যের নাম ‘বরাতি’। আউলেচাঁদ হচ্ছেন ‘আদি-মহাশয়’। তাঁর প্রত্যক্ষ শিষ্য—যিনি আমাদের কাহিনীবর্ণিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর নামটা জানা যায় না; কারণ দলে তাঁর নাম ‘প্রথম মহাশয়’। রূপেন্দ্রকে যিনি আপ্যায়ন করে বসালেন তিনি তাঁরই প্রত্যক্ষ শিষ্য—‘দ্বিতীয় মহাশয় সংক্ষেপে এখন ‘কর্তামশাই”।
রূপেন্দ্র এঁদের ধর্মমত এবং আচরণবিধি বিষয়ে কৌতূহল দেখালে কর্তামশাই করজোড়ে বললেন, “আপন ভজন-কথা, না কহিবে যথা তথা, আপনাকে হইবে আপনি সাবধান।“
রূপেন্দ্র লজ্জিত হয়ে বলেন, মার্জনা করবেন। সত্যই তো, আমি বহিরাগত; আমার কৌতূহলী হওয়া ঠিক হয়নি।
কর্তামশাই রূপেন্দ্রর হাতদুটি ধরে বলেছিলেন, না—না—না! আপনাকে বলব। সব কথা খুলে বলব। বিশেষ হেতুতে। তবে এখন নয়। সুযোগ মতো।
রূপেন্দ্র জানতে চান, নবদ্বীপে আরও কয়েকটি সাধক-সম্প্রদায়কে দেখেছি, যাঁদের দেখলে বাইরে থেকে মনে হয় তাঁরা বাউল—কিন্তু তাঁরা বলেছিলেন যে, তাঁরা বাউল নন। কেউ দরবেশ, কেউ ন্যাড়া। তাঁরাও কি আউলেচাদের শিষ্য?
কর্তামশাই বললেন, না, না। সাধক-সম্প্রদায়ের মধ্যে নানান সূক্ষ্ম প্রভেদ আছে। ‘আউল’ শব্দটা সহজবোধ্য বলে আমি সেই পরিচয়ই আপনাকে দিয়েছি। বাস্তবে আমরা ‘আউল’ও নই—তার একটি বিশেষ শাখা—যার নাম ‘সহজিয়া’ বা ‘সহজী’। এই মতটি সদ্যপ্রসূত। আপনি যাঁদের কথা বললেন, তাঁরা আউলেচাদের প্রবর্তিত সাধক সম্প্রদায়ভুক্ত নন। ‘দরবেশ’ অথবা ‘সাঁই’ সম্প্রদায়ের প্রবর্তক প্রভুপাদ সনাতন গোস্বামী। তারা নামে ‘উদাসীন’ হলেও প্রত্যেকের এক-একজন প্রকৃতি-সাধিকা থাকে। তবে তারাও হিন্দু-মুসলমানের ফারাক মানে না। বলে, “ক্যা হিন্দু, ক্যা মুসলমান। মিজুলকে কর সাঁইজীকা নাম।” আর ঐ ন্যাড়া সম্প্রদায়ও আউলেচাদ প্রবর্তিত নয়। তার আদি গুরু হচ্ছেন—প্রভু নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্র। শোনা যায়, প্রভু নিত্যানন্দ তাঁকে স্বমত-বহির্ভূত দেখে ত্যাজ্যপুত্র করেন। আর বীরভদ্র এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। এঁরাও বাউলদের মতো বিশ্বাস করেন, মানবদেহের মধ্যেই শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের অধিষ্ঠান। কিশোরীসাধন ও প্রকৃতিভজনের পথেই পরমাত্মাকে পাওয়া যায়! রূপেন্দ্রের দুরন্ত কৌতূহল হচ্ছিল জানতে—ও বিষয়ে ‘কর্তামশাই” কী সিদ্ধান্তে এসেছেন—ঐ প্রকৃতি-পুরুষ তত্ত্ব বিষয়ে। দলে জনা দশেক পুরুষ এবং প্রায় সাত জন রমণী—কিশোরী থেকে প্রৌঢ়া। দলপতির সাধনসঙ্গিনী আছে বলে মনে হল না—অন্তত বয়সের দিক বিচার করে। এরা কি ‘উদাসীন’? ইন্দ্রিয়-সংযম করে থাকেন? ‘সহজী’ নামটিরই বা তাৎপর্য কী? কিন্তু সে বিষয়ে কোনও কৌতূহল দেখালেন না।