তীর্থের পথে – ৪

ঠিকই আন্দাজ করেছিলেন নগেন্দ্রনাথ। সন্ধ্যারাত্রে রওনা হয়ে ভোর-ভোর ওঁরা এসে পৌঁছালেন ভারামলপুরের রামীধোপানির ঘাটে। ইট-পাথরে বোঝাই মহাজনী নৌকা মাঝি-মাল্লা ছাড়া যাত্রী ওঁরা মাত্র দুজনই। নৌকা যে ঘাটে ভিড়ল সেখানে জনমানব নেই। তখনও ভাল করে সকাল হয়নি। গাছ-গাছালিতে পাখ-পাখালির কলরব। গাছ, গাছ আর গাছ, একখানা খড়োঘরও নজরে পড়ে না। এ অঞ্চলে যে মনুষ্যবসতি আছে তারই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। পশ্চিমা মাঝি বললে, শিউজীকী দর্শন করনেকে লিয়ে যাইবন তো, ঠাকুর মোশা? বহ্ সড়ক পাকড়কে সিধা যাইয়ে। নজদিগই হ্যয়।

সড়ক কোথায়? ওড়কলমি, শেয়ালকাঁটা আর কচুঝোপের মাঝখান দিয়ে একটা পায়ে-চলা পথ। দুটি মানুষ পাশাপাশি হাঁটতে পারে না। আগুপিছু চলতে হয়। দুপাশে নাম-না-জানা হাজার গাছ। মাঝে-মাঝে কিছু-কিছু চেনা গাছ: বাবলা, পালতে মাদার, ছাতিম, পাকুড়। আগাছায় ভরা। সকালের রোদ এখনো সে বনভূমির কপালে সোনার জিওনকাঠি ছোঁয়ায়নি। ঘুম-কাতুরে বনানীর শীতের ঘুম এখনও ভাঙেনি। মাঝে মাঝে কুয়াশার গলাবন্ধ জড়ানো তার গলায়।

মঞ্জরী সভয়ে জিজ্ঞাসা করে, মানুষজনের বাস আছে তো এখানে?

প্রশ্নটা সে মাঝিকে করেনি, করেছিল রূপেন্দ্রনাথকে; কিন্তু বুড্‌ঢামাঝি শুনে ফেলেছে। সেই জবাব দিল, ডরিয়ে মৎ মা-জী, ইখানে চৌর-ডাকাত ইয়া শের না আছে।

তারপর রূপেন্দ্রনাথের দিকে ফিরে বললে, আপকো সামান হিয়া রহনে দিজিয়ে। বে-ফিক রহিয়ে সমানকা বারে-মে। যাইয়ে, দর্শন তো কর্ লিজিয়ে পহিলে।

বুঝিয়ে বলল, সব মাল ‘ঢোলাই’ করতে, অর্থাৎ নৌকা থেকে নামিয়ে ঘাটে থাক দিয়ে সাজাতে ওদের একটি বেলা যাবে। তার ভিতর একজন যাবে গো-গাড়ি যোগাড় করতে। উটি-বখৎ গো-গাড়ির সারি বাবার থানে চলতে শুরু করবে।

সহধর্মিণীর হাত ধরে রূপেন্দ্রনাথ হিম-হিম ঘাটে নামলেন। বনপথ ধরে এগিয়ে চলেন। পাঁচকদম এগিয়েই প্রবেশ করলেন, যাকে বলে নিবিড়-অরণ্যে। শুধু গাছ আর গাছ। এবার বড় বড় গাছ। তবে কুমারী মেয়ের সিঁথির মতো বনপথের নিশানাটা বজায় আছে। জনবসতি নিশ্চয় আছে, এই বনপথই তো তার প্রমাণ। পথচলতি মানুষের নিত্যমার্জনা না থাকলে বনলক্ষ্মীর এই সিঁথিটি বজায় থাকত না। পাগলের উস্কো-খুস্কো চুলের মতো সে চিহ্নটি হারিয়ে যেত।

অদ্ভুত একটা গন্ধ—আরণ্যক-সৌরভ। গাছ-গাছালির। ডালে-ডালে অসংখ্য পাখির কিচকিচানি। ডালে মৌচাক। মৌমাছির একটানা ভোঁ-ওও! ফাল্গুন মাস। প্রকৃতিতে এখন মিলনের মহোৎসব। মাঝে একজোড়া ধূসর রঙের খরগোশ আগাছা জঙ্গল ভেদ করে ছুটে বেরিয়ে এল বনপথে। ওঁদের দুজনাকে দেখে হঠাৎ ভ্যাবাচাকা। তার পরেই ছুট-ছুট-ছুট।

ক্রোশখানেক পথ পাড়ি দেবার পর গাছের দৌরাত্ম্য কমে এল। একটু যেন ফাঁকা ফাঁকা—বড় বড় উলুঘাসের বন। তারপর বাঁক ঘুরতেই দেখা গেল দুচারটি খড়ো চালা। জনবসতির লক্ষণ। দূর থেকেই নজরে পড়ল, কোন কোন গৃহস্থ বাড়ির ভিতর থেকে ধোয়া কুণ্ডলী বেরিয়ে এসেছে। এই সাত-সকালে কুয়াশার সঙ্গে জট পাকিয়ে ফেলেছে।

ছোট্ট একটি ঝিমন্ত গ্রাম। সবই খড়ো চালা। উলুখড়ের। বাঙলা-চালা। মানে, ছাদের ছাউনি ধনুকের আকারে নক্শা রচনা করেছে বাঁশ বা নারকেল খুঁটির মাথায়। দু-একটি গরু নজরে পড়ল। গো-গাড়ির ভাঙা চাকা। বিচালির গাদা।

মেঠো দাওয়ায় নাকে-গামছা, উদাম-গা একজন প্রৌঢ় মানুষ ঝাঁটা বুলাচ্ছিল। ওঁদের আসতে দেখে ঝাঁটাগাছ নামিয়ে টান-টান হয়ে দাঁড়ায়। অবাক মানে। এ জাতীয় বেগানা লোক দেখতে অভ্যস্ত নয় মনে হল।

রূপেন্দ্রনাথ বলেন, বাবার থান আর কতদূরে?

মুণ্ডিতমস্তক আর শিখাতেই পরিচয়। প্রৌঢ় লোকটা ঝুঁকে পড়ে বললে, পেন্নাম ঠাউরমশাই, কোত্থেকে আসা হচ্ছে?

—বর্ধমান। বাবার থান কতদূরে বলতে পারেন? এখানে সম্প্রতি যে অনাদি শিবলিঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছে.

—প্রৌঢ় ওঁর ভ্রম সংশোধন করে দেয়, ‘অনাদি’ লয় বাবা, তাঁর নাম তারকেশ্বর। তা সেই তাঁরে দেখতি বধ্যমান থিকে আসিছেন। এ তো বড় আজব কতা!

রূপেন্দ্র বলেন, অনাদি শিবলিঙ্গ নয়? ভাস্কর নির্মিত?

গলকণ্ঠটা বারকতক ওঠা-নামা করল। যুক্তকরে নির্বাক দাঁড়িয়ে রইল কয়েকটা মুহূর্ত। শেষে বললে, মুই মুখ্যু গোয়ালার পো—নেতাই ঘোষ, আজ্ঞে। আপনকার কতা মুই বুঝতে লারছি ঠাকুরমশা! তা ভেঁড়িয়ে কেন মা? অনেকটা পথ এয়েছেন, বসেন।

দাওয়ার সামনেই একটা বাঁশের মাচা। ভরাট বাঁশের ছয়-খুঁটির উপর তলতা-বাঁশের ঘননিবদ্ধ সারি। প্রৌঢ় তার গামছাটা দিয়ে সেটা মুছে দিল। ধুলো ছিল না, কিন্তু হিমে ভিজে-ভিজে ছিল।

দুজনেই বসলেন। কথাটা সত্যি। রূপেন্দ্র অভ্যস্ত হলেও মঞ্জরীর পক্ষে একটু জিরিয়ে নিতে পারলে মন্দ হয় না। রূপেন্দ্র বলেন, আপনি এটাকে ‘আজব কথা’ বললেন কেন? তীর্থদর্শনে কি ভিনদেশের মানুষজন আসে না?

—হক্কতা! আসে! নিয্যস আসে। কিন্তুক এই ভার্মালপুর কি তীর্থস্তান আজ্ঞে? এ মুকুন্দ-খুড়োর এক নিপাট খ্যাপামি! দিব্যি সংসারি মনিষ্যি, তিনজোড়া দুধেল গাই, দিনে আধমনটাক দুধ হতেন—দ্যাখ্ -না -দ্যাখ্ বদ্দ পাগল হই গেল!

–কার কথা বলছেন? মুকুন্দ কে?

–দ্যাখবান অখনই। এই বাবার থানেই পড়ি আছে। রাতেও ভিটেয় আসে না! গেল সনের বর্ষায় চালাটা হুম্‌ড়ি খায়ি পড়ি গ্যালো। ভুরুক্ষেপ নাই।

হয়তো লোকটা আরও কিছু বলত। বাধা পড়ল। ঘরের ভিতর থেকে এগিয়ে এল এক  প্রৌঢ়া। লালপাড় মলিন শাড়ি। হাতে শাঁখা, নোয়া। মুখটা দেখা যায় না। ঘোমটায় ঢাকা দু-হাতে ধরা আছে একটা কাঁসার থালা। তার উপর দু-ঘটি গরম দুধ। দুটি শালপাতায় দু-টুকরো খেজুড় গুড়।

–এ আবার কী?

—গোয়ালা-মনিষ্যি আজ্ঞে। আর কী করি বামুনসেবা করি কন?

প্রৌঢ়া ফিস-ফিস্ করে মঞ্জরীকে প্রশ্ন করে, ইখান থনে কই যাবেন?

মঞ্জরী বলে, ত্রিবেণী।

নৌকাতেই গায়ত্রীজপ সেরে নিয়েছেন। রূপেন্দ্র ইতস্তত করলেন না। নিতাই ঘোষের ব্রাহ্মণসেবায় অন্তরায় হলেন না। এক হিসাবে ভালই হল। এখানে দোকানপাট তো কিছু নজরে পড়ছে না। সারা দিনে কী জুটবে, আদৌ জুটবে কিনা, তা বাবা তারকেশ্বরই জানেন।

প্রৌঢ়ের কাছে আরও কিছু সংবাদ পাওয়া গেল। শিবলিঙ্গটি আবিষ্কৃত হয়েছে কয়েক বছর আগে। আকৃতি শিবলিঙ্গের মতো নয়। ধরিত্রীর মাতৃগর্ভ থেকে শিশু ভোলানাথ হঠাৎ মাথা তুলে ঐ আরণ্যক শোভাকে দেখতে চেয়েছিলেন। বিজন অরণ্য তো? কেই বা ওঁকে লক্ষ্য, করছে? ভেবেছিলেন টুক করে এক নজর দেখেই ধরিত্রীমায়ের পেট-কোঁচড়ে লুকিয়ে পড়বেন। কিন্তু তা হল না। জগৎটাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি! ব্যথিতও! তাঁর ভক্তদের কত দুঃখ, কত কষ্ট! বাবা বজ্রাহত হয়ে পাষাণ হয়ে গেলেন। নিটোল কষ্টিপাথর। না, নিটোল নয়, মাথায় একটা গর্ত মতো আছে। কেউ বলে, দশ-বিশ পুরুষ আগে জায়গাটা এমন বিজন অরণ্য ছিল না। এখানে ছিল এক গোপভূম। গাঁয়ের মেয়েরা ঐ পাথরখানির উপরে ধান ভানতো, গান গেয়ে-গেয়ে। তাতেই হয়েছে ঐ গর্ত।

মুকুন্দ খুড়ো অবশ্য সে কথা মানে না। বলে, সমুদ্রমন্থনকালে বাবা যখন দেবতাদের বাঁচাতে হলাহলের পাত্রটা এক চুমুকে খেয়ে ফেলেছিলেন—‘সেই যে গ, যখন তেনার গলকণ্ঠটি নীলবরণ হয়ি গেল’—তখন বারেকের জন্য তাঁর মাথা ঘুরে ওঠে। টাল সামলাতে পারেন না। মন্দারের পাথরে—‘মন্দার’বুঝলে তো হে? সেই যি পাহাড়টো মন্থনদণ্ড হইছিল, তারই গায়ে আছাড়ি পড়িছিলেন। ওটি সেই টক্করের দাগ! বুয়েছ?”

জঙ্গলের মাঝখানে অনেকটা জায়গা হাসিল করা হয়েছে। বড় বড় গাছ কেটে নামানো হয়েছে; আগাছা কেটে সাফা করা। প্রায় বিশ হাত চওড়া, পঞ্চাশ হাত লম্বা। তার মাঝখানে ঐ কালো পাথরের মেদিনীবিদীর্ণ কৌতূহল—ভূতাত্ত্বিকের ভাষায় ‘আউটক্রপ’। পাথরখানির চারদিকে খুঁটি—বাঁশ আর আধলা তাল। তার উপর শুকনো ডালপালার একটা আচ্ছাদন—রৌদ্রনিবারণ মানসে। অদূরে প্রকাণ্ড একটা বেল গাছ। পাথরটা ঘিরে আকন্দের জঙ্গল—অজস্র ফুল ফুটে আছে। বেলগাছতলায় বসে আছেন একজন সন্ন্যাসী। বয়স আন্দাজ করা শক্ত—তিন কুড়ি নির্ঘাৎ পাড়ি দিয়েছেন। উদাম গা—বুকের লোম পর্যন্ত সাদা, চুল-দাড়ি তো বটেই। নিম্নাঙ্গে একটি কৌপীন। আসনপিড়ি হয়ে বসেছিলেন মাটিতে; দূর থেকে ওঁদের দেখতে পেয়েই চমকে উবু হয়ে উঠে বসেন। ডান হাতখানা ভূর উপর রোদ-আড়াল করা ভঙ্গিতে ধরে একদৃষ্টে লক্ষ্য করতে থাকেন। কাছাকাছি এসে রূপেন্দ্রনাথ যুক্তকরে কিছু বলার আগেই সন্ন্যাসী বলে ওঠেন, আসুন রাজামশাই! এত দেরী হল যে?

ওঁরা স্বামীস্ত্রী পরস্পরের দিকে তাকিয়ে দেখেন। রূপেন্দ্রনাথের জীবনে এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, কিন্তু সেবার প্রশ্নকর্ত্রী ছিল বিকারগ্রস্তা—এ তো তা নয়। বললেন, আমার কি আরও আগে আসার কথা ছিল?

—ছিল নি? এক মাস হয়ি গেল! বাবা বলিছিলেন,—হপ্তাখানেকের ভিৎরিই আসপেন!

এই বৃদ্ধের পিতৃদেব জীবিত? তিনি ওঁকে এমন একটা আজব প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন! বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর মস্তিষ্ক-বিকৃতির লক্ষণ নাকি এটা?

বৃদ্ধ পুনরায় বলেন, আপনে বরা-আজা বটে তো?

—আজ্ঞে না, আমি আসছি বর্ধমান থেকে। আমার নাম শ্রী রূপেন্দ্রনাথ দেবশর্মা!

বৃদ্ধ নিরাশ হলেন। আবার পা-বিছিয়ে বসলেন। বললেন, অ! দামোদর বেয়ে আলেন নিচ্চয়—বাহিরগড়ের বরা-আজার নাওটা দেখিছেন গাঙে?

এবার বুঝতে পারেন—‘বরা-আজা’ বলতে উনি ভারামল্ল বা বরাহমল্ল রাজার কথা বলছেন। এবার জানান যে, সেই বরাহমল্ল রাজার একটি প্রকাণ্ড মহাজনী নৌকা আজ সকালেই এসে ভিড়েছে রামীধোপানির ঘাটে। সেটা ইট-পাথরে বোঝাই, উনি সেই নৌকাতেই এসেছেন বটে।

বৃদ্ধ সন্ন্যাসী আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন। হঠাৎ ওঁদের দিকে পিছন ফিরে ঐ নিকষ কালো পাথরখানাকে সম্মোধন করে বলে ওঠেন, তবে তো ছলনা করিনি বাবা! ইট-পাথর তো এয়েছে! এবার তোর মন্দির হয়ি যাবে!

তারপর হঠাৎ উবুড় হয়ে পাথরখানার কানে-কানে যেন বলেন, তা হ্যারে, মন্দির হয়ি গেলি তার একটেরে মোরে ঠাঁই দিবি তো? আম্মো তো তোরই মতো রোদে জলে পড়ি আছি? বল্‌। হক কতা কি না?

প্রায় একটি বেলা গেল ঐ অর্ধোন্মাদের কাছ থেকে প্রকৃত তথ্যটা উদ্ধার করতে। উন্মাদ উনি নিশ্চয়ই, তবে ঐ—যাকে বলে ‘ভাবের ঘরে পাগল’। সমকালীন আর এক ‘মন-মাতাল’ পাগলকে যেমন ‘মদ-মাতালেরা’ ‘পাগল’ বলে! উনি আদৌ সন্ন্যাসী নন, এই বিজন জঙ্গলে কে ওঁকে সন্ন্যাস দেবে, মন্ত্রদীক্ষা দেবে? তাই পূর্বাশ্রমের অভিধাতেই ওঁর পরিচয় : মুকুন্দরাম ঘোষ।

সম্পন্ন গৃহস্থ ছিলেন একদিন। নিতাই ঘোষ ভুল বলেনি কিছু। তিন-জোড়া দুধেলা গাই—দৈনিক আধমনটাক দুধ ‘হতেন’। একা মানুষের সংসার; স্ত্রীবিয়োগ হয়েছে অনেক দিন দুটি কন্যার বিবাহ দিয়েছেন। পুত্রটি ছিল লাঠি খেলায় ওস্তাদ-সে রাজসরকারের পাইক। তবু একদিন ছেলে ফিরে আসবে এই আশা বুকে নিয়েই বৃদ্ধ পড়েছিলেন ভিটে আঁকড়ে। দুধ বেচে কপর্দক সঞ্চয় করতেন। কড়ি-কড়ি-কপর্দক-সিক্কাটাকা! মাটির হাঁড়িতে পুঁতে রাখতেন ঘরের মেঝেতে গর্ত করে। দুটি রাখাল কিশোর গো-মাতাদের দেখভাল করত। বৃদ্ধ তখনো কর্মক্ষম। ঝাঁকে ঝুলিয়ে দুধটা বেচে দিয়ে আসতেন নিকটবর্তী ভারামলপুরের সম্পন্ন গৃহস্থবাড়িতে। তারপর একটা অদ্ভুত ঘটনা! রাতারাতি দুধের যোগান হয়ে গেল আধাআধি। কী ব্যাপার? রাখাল সহকারী দুজনে জানালো, কপিলার দুধ বেমক্কা ‘থমকে গেছে’!

কপিলা ওঁর সবচেয়ে ভালো জাতের গাই। একাই দিনে দশসের দুধ দেয়। সদ্য সন্তানবতী সে। দেখ্‌-না-দেখ তার বাঁটের দুধ ‘থমকে যাবে’ কেন? মুকুন্দরাম প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তে এলেন—রাখাল কিশোর দুটি দুধ চুরি করছে। গোপনে বেচে দিয়ে আসছে অন্য কোনও ঘোষের-পোকে। কিন্তু ছেলে দুটি দীর্ঘদিন আছে ওঁর কাছে। এ জাতীয় তঞ্চকতা কখনো করেনি। বিশ্বাস করতে মন চায় না। সরেজমিন তদন্ত করবার সিদ্ধান্ত নিলেন।

গাঙের কিনার ঘেঁষে বিস্তীর্ণ গোচারণভূমি। জমিদারের খাশ লাখেরাজ। চাষ করা বারণ। গো-চারণ ক্ষেত্র। পাঁচ ঘোষের-পো তাদের গো-মাতাগুলিকে সকাল বেলা ছেড়ে দিয়ে আসে সেই গোচারণ ভূমিতে। বাছুরদের মুখে জাল-বাঁধা। শাঁখে-ফুঁ-পড়া সন্ধ্যায় সার বেঁধে নিজে-নিজেই ফিরে আসে গরুর পাল—ঐ যাকে বলে গোধূলি লগ্নে। এ জঙ্গলে শেয়াল আছে, খটাশ আছে, কিন্তু দিনের বেলা যূথবদ্ধ গরুর পালকে তারা আক্রমণ করতে সাহস পায় না।

মুকুন্দরাম সেদিন তক্কে তক্কে থাকলেন। দেখলেন, সূর্য পশ্চিম দিগ্বলয়ের দিকে ঢলে পড়তেই কপিলা দলছুট হয়ে গেল। ঢুকে পড়ল জঙ্গলের ভিতর। প্রায় পঞ্চাশ হাত ব্যবধানে মুকুন্দও অনুসরণ করলেন তাকে। কাঠুরিয়াদের যাতায়াতে যে বনপথের সৃষ্টি হয়েছে সে পথ ধরে কপিলা বেশ কিছুটা অগ্রসর হয়ে গেল। কিন্তু তারপর হঠাৎ বেমক্কা ঢুকে পড়ল এক নিবিড় অরণ্যে। গিয়ে থামল একখানা কালো কষ্টিপাথরের উপর। স্থির হয়ে দাঁড়ালো। তারপর ঊর্ধ্বমুখে ডাক দিল : হা–ম্বা—!

ঠিক যে স্বরে সে ডাকে তার বাছুরকে। কিন্তু কী আশ্চর্য? কপিলার বকনা-বাছুর মুংলি তো এ দিগড়ে নেই। ‘তাইলে ও ডাকে কারে’? প্রায় বিশ হাত দূরে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে চুপিসারে লক্ষ্য করছিলেন মুকুন্দরাম : দ্যাখাই যাক্, ব্যাবারডা কোন বাগে ডাঁড়ায়!

যা ‘ডাঁড়ালো’ তাতে তাঁর সারাদেহের রোমকূপও ‘ডাঁড়িয়ে’ ওঠে।

কপিলের ঐ স্তনভারনম্র আহ্বান শুনে বেল গাছের মগডাল থেকে নেমে এল এক-জোড়া গোক্ষুর সাপ। ফণায় তাদের খড়মের চিহ্ন। লিক্‌ক্লিক করছে চেরা জিব! মুকুন্দরাম ঘোষের পো; গোরুর হক্-হদিস তাঁর নখদর্পণে। অথচ কী আশ্চর্য! কপিলা না দিল দৌড়, না করল ফোঁস-ফোঁস

একটা কালনাগ পাকে পাকে জড়িয়ে ধরল তার পিছনের ঠ্যাঙ জোড়া, বাঙলা ‘৪’-অঙ্কের নক্‌শা ছকে। কপিলা কোন প্রতিবাদ করল না, স্থির হয়ে রইল। আর নাগিনী পাকে-পাকে জড়িয়ে ধরে তার পালান। নিষ্পেষণ করতে থাকে ওর।অমৃতরসভাণ্ডার। ফিনকি দিয়ে দুধ বার হয়ে এল বাঁট থেকে, যেন পিচকারি! কালো কষ্টিপাথরখানা হয়ে গেল শ্বেতপাথর।

দুগ্ধভাণ্ডার নিঃশেষিত হয়ে যাবার পর নাগদম্পতি মুক্তি দিল কপিলাকে। রুদ্ধশ্বাসে কপিলা দৌড়ালো তার বাথানপানে। মুকুন্দরাম অপেক্ষা করলেন, সমঝে নিতে চান—নাগদম্পতি এরপর কী করে।

দেখলেন, শ্রাবণের ধারার মতো দুগ্ধস্রোত সর্পিল গতিতে এসে সঞ্চিত হল একটি প্রাকৃতিক গর্তে। নাগ-নাগিনী সেই ডোবা থেকে মুখ ডুবিয়ে যেন বাবার চরণামৃত পান করল। মুকুন্দরাম ফিরে এলেন ভিটেতে। তখন আঁধার ঘনিয়েছে। প্রত্যক্ষ সত্যকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। এমনটা কী করে হয়?

সে-রাত্রেই স্বপ্নাদেশ পেলেন। বাবা ওকে ডাকছেন। সেই বিচিত্র আহ্বান, যা কয়েক দশক বাদে শুনবেন লালাবাবু—পাইকপাড়ার দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দের পৌত্র কৃষ্ণচন্দ্ৰ সিংহ : ‘বেলা যে যায় রে! বানায় আগুন দিবি না?’

যদি বল—‘পাগল’, তবে তাই। মুকুন্দরাম ঘোষ সন্ন্যাস নেননি। তবে সংসার ত্যাগ করেছিলেন। কপনিসার সাধক বাকি জীবন কাটিয়ে গেছেন সেই বেলগাছ তলায়। কী শীত, কী গ্রীষ্ম, কী বর্ষা। শুরু করে দিলেন নির্জন সাধনা। গুরু? ঐ তো—ঐ কালো পাথরখানা। ধরিত্রীর গর্ভ থেকে মুখ-বার-করা ঐ শিশু ভোলানাথ। তিনি যা স্বপ্নাদেশ দেন তাই শোনেন, যেভাবে চালান সেভাবেই চলেন। এক হাতে বনজঙ্গল সাফা করে বাবার মাথায় বেঁধে দিলেন লতাপাতার একচালা : আহা! রোদে-জলে তোর বড় কষ্ট।

বাবা স্বপ্নে দেখা দিলেন। বলেন, তোরও তো বড় কষ্ট যাচ্ছে, মুকুন্দ! র, বরা-রাজাকে বলে দিচ্ছি, একখান পাকা ঘর বানিয়ে দিতে। বাপ-বেটায় থাকব।

সত্যই স্বপ্নাদেশ পেলেন হুগলীজেলার বাহিরগড়ের ক্ষত্রিয় নৃপতি বরাহমল্ল। লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে চাইলেন—স্বপ্নে যা প্রত্যক্ষ করেছেন তা কি বাস্তব? এল রাজার লোক, খোঁজ-খবর নিয়ে ফিরে গিয়ে জানালো রামীধোপানির ঘাটের কয়েক রসি দূরে সত্যই বসে আছে এক নেংটিসার পাগলা সাধু। বেলগাছ তলায়। আর একখণ্ড কালো-পাথরের উপর বেঁধেছে লতাপাতার এক চালা।

রাজার প্রতিভূ এসে মুকুন্দরামকে জানিয়ে গেল অচিরেই মন্দির বানানো হবে; রাজামশাই রানীমাকে নিয়ে স্বয়ং আসবেন তীর্থদর্শনে। তাই রূপেন্দ্র আর মঞ্জরীকে দেখে ওঁর ধারণা হয়েছিল—ওঁরাই বুঝি সেই রাজারানী।

‘আজা-আনির মতোই সোন্দর তো! তাই ভেরম হই গেল, আজ্ঞে!’

.

আড়াই শ বছর কেটে গেছে তারপর। সহস্রাব্দীর এক পাদ। আমূল বদলে গেছে সব কিছু। শুধু বাস্তবে নয়, মানচিত্রেও আজ খুঁজে পাবে না ভারামলপুর গাঁ-খানি। এখন ওর নাম তারকেশ্বর। নিবিড় অরণ্যানী নিশ্চিহ্ন। রামীধোপানি ঘাটও এক গলা ঘোমটা টেনে সরে গেছে অন্যত্র। গাঙই যে দেশান্তরী, তা ঘাট পড়ে থাকবে কোন সুবাদে? দামোদর-নদের সাথেই না বাঁধা ছিল ঘাট, অচ্ছেদ্যবন্ধনে? কানা-দামোদর—তার যে ক্ষীণ রেখাটুকু ঐ অভিধা বহন করে—তা সরে গেছে ভিন-দেশে। মরাগাঙের অশ্বখুর দহগুলো ভরাট হয়ে গেছে; সেখানে উঠেছে শালখুঁটির বনিয়াদ-নির্ভর দ্বিতল-ত্রিতল মোকাম। খুঁজলে এখন সেখানে সন্ধান পাবে ভি. ডি. ও ক্যাসেট পার্লার।

বাঙলা মায়ের আঁচলের খুঁট খুলে আচমকা ভেসে গেল—চন্দ্ৰনাথ; একমুঠো ধুতরো ফুলের মতো। আজ তাই মায়ের এই পুব-আঁচলে তারকেশ্বরই শ্রেষ্ঠ শৈবতীর্থ।

কিন্তু সব কিছু হারায়নি। হারায় না। খোঁজ নিলে দেখতে পাবে মন্দিরের গা-সইসই সেই পাগলা সাধুর সমাধি : ‘মুকুন্দ ঘোষের থান’। দুধ-পুকুরটাও আছে—এখন তাতে বাঁধানো ঘাট—সেই যে ডোবাটায় সেকালে সঞ্চিত হত কপিলার স্বতঃ-উৎসারিত অমৃতরস। তাই তো ওর নাম—‘দুধপুকুর’।

আরও একটি জিনিস খোয়া যায়নি এই আড়াই শ’ বছরে—মানুষের ধর্মবিশ্বাস। মুকুন্দ ঘোষের মতোই কাঁধ থেকে বাঁকে ঝুলিয়ে বিশ্বাসবারি নিয়ে চলেছে নিরন্ন মানুষের মিছিল : ‘ভোলেবাবা পার করে গা’।

তোমাদের ‘গপ্পো’ শুনিয়েছি, কিন্তু আপনাদের কাছে কিছু কৈফিয়ৎ দেবার আছে! হুগলী জেলার প্রামাণিক ইতিহাস রচয়িতা সুধীরকুমার মিত্র মশায়ের মতে তারকেশ্বরের মঠের প্রতিষ্ঠা হয় 1729 খ্রীষ্টাব্দে। তার পূর্বেও হয়তো এখানে কোন শৈবমন্দির ছিল; কারণ তারকনাথের মন্দিরের ভিতর একটি প্রস্তরখণ্ডে খোদাই করা আছে—‘শুভমণ্ড শকাব্দ ১৫৪৩’—অর্থাৎ 1621 খ্রীষ্টাব্দ। সম্ভবত নিকটবর্তী কোন মন্দির থেকে ঐ পাথরটি সংগৃহীত। মিত্র-মশাই বলছেন, ‘মুকুন্দ ঘোষ হতেই তারকনাথের প্রথম প্রকাশ’; ‘বালিগড়ি পরগণার রাজা ভারামল্ল তারকনাথের প্রথম মন্দির নির্মাণ করে দেন এবং দেবতার সেবার জন্য এক হাজার তেইশ বিঘা জমি দান করেন।’

ভূসম্পত্তি! ভক্তদের দান! অন্নদামঙ্গলের সেই ভিক্ষাজীবী ভবঘুরেটা না তার সঙ্গিনীকে বলেছিল—‘সাধ হয় একদিন পেট পুরে খাই’? সেই সর্বত্যাগী শিবের সম্পত্তি ক্রমে হয়ে উঠল কুবের-ঈর্ষিত। গুটি গুটি এসে জুটলেন মোহান্ত বাবাজীরা। মুকুন্দ ঘোষের দেহান্তের পরে এসে জাঁকিয়ে বসলেন দশনামী সম্প্রদায়ের গিরি উপাধিকারী সন্ন্যাসীরা। তাঁদের ‘শৈবমঠ বিবরণে আছে—‘স্থাপিত প্রধান গদী শ্রীতারকেশ্বরে। মল্লের ভূভাগ রাজ্য খণ্ড খণ্ড করে।

লেখা নেই, ‘প্রধান গদী’ প্রতিষ্ঠিত হবার পর সেই ভারতচন্দ্র বর্ণিত ভবঘুরেটা তার জীবনসঙ্গিনী ‘অন্নরিক্তা’র হাত ধরে কোন পথে নিরুদ্দেশ যাত্রা করল ভিক্ষার সন্ধানে। সহদেব গোস্বামী বিরচিত ‘ধর্মমঙ্গল’ পুঁথিতে আছে আর একটি কৌতুককর বার্তা। রাজা বরাহমল্ল প্রথমবার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এবং সরেজমিনে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ঐ কষ্ঠিপাথরখানি এই বিজন অরণ্য থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবেন। নিজ রাজধানী রামনগরে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে এক মন্দির নির্মাণ করবেন। রাজাদেশে এল শ্রমিকদল। পঞ্চাশ হাত মাটি খুঁড়েও তারা বাবার তলদেশের সন্ধান পায়নি। কেন পায়নি তার যে ব্যাখ্যা সহদেব গোস্বামী দিয়েছেন—তার সঙ্গে ভূতত্ত্ববিজ্ঞান-এর সম্পর্ক নেই। ‘জিওলজিকাল আউট-ক্রপের তলদেশের সন্ধান যে ওভাবে পাওয়ার নয় এ-কথা বলেননি। বরং বলেছেন—রাজা বরাহমল্ল পুনরায় স্বপ্নাদেশ পেলেন। বাবা বলছেন :

তারকেশ্বর শিব আমি কাননে বসতি।
অবনী ভেদিয়া বাছা আমার উৎপতি।।
অকারণ দুঃখ পায়া মোরে কেন খোঁড়?
গয়া-গঙ্গা-বারাণসী আদি মোর জড়।।

রাজা বরাহমল্লের আদিম মন্দির ভগ্ন হলে বর্ধমানের মহারাজা সে মন্দির পুনর্নির্মাণ করে দেন। কিন্তু সে মন্দিরটিও আয়তনে ছোট বলে যাত্রীদের অসুবিধা হত। তাই অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে তারকনাথের স্বপ্নাদেশ পেয়ে পাতুল সন্ধিপুর নিবাসী গোবর্ধন রক্ষিত বর্তমান ‘আটচালা শৈলীর’ বৃহদায়তন মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন।

মন্দিরের প্রবেশ পথের স্তম্ভ এবং খিলনত্রয়ী অলঙ্কৃত—নানান পৌরাণিক দৃশ্য, পুষ্পস্তবক ও নক্শা। আটচালা মন্দিরের কমনীয় বক্রাকৃতি নয়নাভিরাম। কিন্তু সংস্কারের নামে মাঝে মাঝে আধুনিক প্রয়োগকৌশলের প্রবণতা এ-কালীন স্থপতিবিদদের বিপথে পরিচালিত করেছে। মন্দিরের দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে চুনবালির আস্তরের উপর ফুল-ফোটানোর প্রচেষ্টায় আদিম পোড়ামাটি-অলঙ্করণের মুখখানি ম্লান হয়ে গেছে। সব চেয়ে দাগা দেয় মন্দিরের নিচের অংশে মানুষভর উচ্চতায় চীনামাটির রঙিন টালি। এই ‘বেলবটম’ পোশাকে মন্দিরের সৌন্দর্যহানি হয়েছে। বালুচরী শাড়ির সঙ্গে ‘ম্যাচ’ করেনা ‘স্লিভলেস জ্যাকেট’! এ যেন রতনচূড়ের গা-ঘেঁষে ডিজিটাল ঘড়ি অথবা নবরত্নের টায়রা-পরা সীমন্তিনীর ‘বয়েজকাট’ কেশবিন্যাস!

মন্দিরের সমুখে নাটমন্দিরটি তৈরী করে দেন চিন্তামণি দে–1801 খ্রীষ্টাব্দে। ইতিমধ্যে শিবের পাশাপাশি নির্মিত হয়েছে প্রত্যাশিত শক্তিমন্দির : দশভুজা, চতুর্ভুজা। কায়েমী স্বার্থ ততদিনে সব কিছু কব্জা করে ফেলেছে। বিশ্বাসপ্রবণ যাত্রীদের মাথায় হাত বুলিয়ে এবং সেই মস্তকেই পনস বিদীর্ণ করে লুটে-পুটে খাবার আয়োজন : ‘এখানে পেন্নাম কর—পয়সা দাও; ওখানে ফুল ফেল,—পয়সা দাও; সেখানে চরণামৃত পান কর—পয়সা দাও।’ পূজাবিধি নানান প্রকার, ভক্তি-সঙ্গীতে নানান সুর-তান-লয়; কিন্তু মূল ধুয়োটা অপরিবর্তিত : ‘পয়সা দাও’!

এল অর্থলোলুপতার অনিবার্য অনুষঙ্গ : কামবিকার! মোহান্ত মহারাজদের কৃপায় অবলুপ্ত হল মুকুন্দ ঘোষের সেই আদিম স্বপ্নটা। এক সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন পর্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা মহাসন্ন্যাসী প্রণবানন্দ মহারাজজীর কাছে। গৃহী ও সন্ন্যাসী ‘পরস্পরং ভাবয়ন্ত মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সে পাপ মোচন করেছিলেন।

তারকেশ্বর মন্দিরে যদি যাও—আমার পরামর্শ—হাতে একটা ছোট টর্চ রেখ। টিপবাতি জ্বাললে আজও একটা জিনিস দেখতে পাবে। মেঝের তল থেকে এক হাত নিচে বাবার মাথায় আজও দেখতে পাবে সেই ক্ষতচিহ্নটা।

: ভুলি গ্যালে নাকি হে? গরল পান করি বাবা যে টলি পড়িছিলেন মন্দার পাহাড়ের গায়ে, সেই টক্করের দাগটো গ!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *