তীর্থযাত্রী

টি. এস. এলিয়ট’-এর The Journey of the Magi-নামক কবিতার অনুবাদ
 
কন্‌কনে ঠাণ্ডায় আমাদের যাত্রা–
    ভ্রমণটা বিষম দীর্ঘ, সময়টা সব চেয়ে খারাপ,
        রাস্তা ঘোরালো, ধারালো বাতাসের চোট,
           একেবারে দুর্জয় শীত।
ঘাড়ে ক্ষত, পায়ে ব্যথা, মেজাজ-চড়া উটগুলো
           শুয়ে শুয়ে পড়ে গলা বরফে।
        মাঝে মাঝে মন যায় বিগড়ে
যখন মনে পড়ে পাহাড়তলিতে বসন্তমঞ্জিল, তার চাতাল,
    আর শর্বতের পেয়ালা হাতে রেশমি সাজে যুবতীর দল।
এ দিকে উটওয়ালারা গাল পাড়ে, গন্‌গন্‌ করে রাগে,
        ছুটে পালায় মদ আর মেয়ের খোঁজে।
    মশাল যায় নিভে, মাথা রাখবার জায়গা জোটে না।
        নগরে যাই, সেখানে বৈরিতা; নগরীতে সন্দেহ।
           গ্রামগুলো নোংরা, তারা চড়া দাম হাঁকে।
কঠিন মুশকিল।
           শেষে ঠাওরালেম চলব সারারাত,
               মাঝে মাঝে নেব ঝিমিয়ে
           আর কানে কানে কেউ বা গান গাবে–
                   এ সমস্তই পাগলামি।
 
                   ভোরের দিকে এলেম, যেখানে মিঠে শীত সেই পাহাড়ের খদে;
সেখানে বরফ-সীমার নীচেটা ভিজে-ভিজে, ঘন গাছ-গাছালির গন্ধ।
নদী চলেছে ছুটে, জলযন্ত্রের চাকা আঁধারকে মারছে চাপড়।
দিগন্তের গায়ে তিনটে গাছ দাঁড়িয়ে,
বুড়ো সাদা ঘোড়াটা মাঠ বেয়ে দৌড় দিয়েছে।
পৌঁছলেম শরাবখানায়, তার কপাটের মাথায় আঙুরলতা।
দুজন মানুষ খোলা দরোজার কাছে পাশা খেলছে টাকার লোভে,
        পা দিয়ে ঠেলছে শূন্য মদের কুপো।
           কোনো খবরই মিলল না সেখানে,
               চললেম আরো আগে।
                   যেতে যেতে সন্ধে হল;
        সময় পেরিয়ে যায় যায়, তখন খুঁজে পেলেম জায়গাটা–
           বলা যেতে পারে ব্যাপারটা তৃপ্তিজনক।
 
    মনে পড়ে এ-সব ঘটেছে অনেক কাল আগে,
           আবার ঘটে যেন এই ইচ্ছে, কিন্তু লিখে রাখো–
এই লিখে রাখো– এত দূরে যে আমাদের টেনে নিয়েছিল
        সে কি জন্মের সন্ধানে না মৃত্যুর।
           জন্ম একটা হয়েছিল বটে–
               প্রমাণ পেয়েছি, সন্দেহ নেই।
এর আগে তো জন্মও দেখেছি, মৃত্যুও–
        মনে ভাবতেম তারা এক নয়।
কিন্তু এই-যে জন্ম এ বড়ো কঠোর–
দারুণ এর যাতনা, মৃত্যুর মতো, আমাদের মৃত্যুর মতোই।
এলেম ফিরে আপন আপন দেশে, এই আমাদের রাজত্বগুলোয়
    আর কিন্তু স্বস্তি নেই সেই পুরানো বিধিবিধানে
যার মধ্যে আছে সব অনাত্মীয় আপন দেবদেবী আঁকড়ে ধ’রে।
           আর-একবার মরতে পারলে আমি বাঁচি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *