সপ্তম অধ্যায়
সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙতে বিছানার উপরে উঠে বসল তুলি। কি সুন্দর সকাল! সে তাকাল জানালার দিকে। চমৎকার রোদ আসছে। মেঝের উপরে আলোছায়ার নকশা এঁকেছে রোদটা। তুলির মনে হল রোদটা যদি আর একটু বড় হত তাহলে ওর উপরে পা রেখে দিব্যি চু-কিতকিত খেলা যেত। রোদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বিছানার উপর তাকাল তুলি। একটু অবাক হল সে। কাল রাতে মালতীদিদির কাছে শুয়েছিল। আজ সকালে কীভাবে জানি নতুনদিদি শুয়ে পড়েছে পাশে। আরে! এই বিছানাতেই তো রাতে শোয়নি। মাঝরাতে কি তবে কেউ কোলে করে নিয়ে এল তাকে? নাঃ তুলির কোলে উঠতে একেবারে ভালো করে না। বাচ্চামেয়েরা কোলে ওঠে।
সুনন্দা পাশ ফিরে ঘুমিয়েছিল। তার মুখের দিকে আর একবার দেখে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে আসে তুলি। একবার জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মনটা নেচে ওঠে তার। কয়েকটা পাতি হাঁস মানুষে চলা পথ দিয়ে দুলে দুলে হেঁটে দীঘির দিকে রওনা দিয়েছে। কাল রাতের বৃষ্টিতে সমস্ত মাটি কাদায় ভরে গেছে। সেই মাটি পায়ে লেগে যাচ্ছে তাদের, বিরক্ত হয়ে হাঁসগুলো প্যাকপ্যাক করে ডেকে উঠছে বারবার। ভারী মজার ব্যাপার।
সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তুলির মনে হয় খুব খিদে পেয়েছে। নতুনদিদি যেভাবে ঘুমোচ্ছে তাতে এখন তাকে ঘুম থেকে তুলতে ইচ্ছা করল না তার। বরঞ্চ মালতীদিদিকে খুঁজে বের করতে হবে কোথাও থেকে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা একবার আঁচড়ে নিয়ে বারান্দায় চলে এল সে। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নেমে সাবধানে চাতাল পেরোল। দক্ষিণের প্রাসাদে একতলায় রান্নাঘর। কাদা ডিঙিয়ে সেদিকে চলে এল। কাল একবার উঁচু তাকে রাখা বিস্কুটের ডিবে দেখেছিল। সেইটা খেতেই এখন লোভ হয়েছে।
রান্নাঘরের দরজা খোলার আগেই কীসের যেন একটা গন্ধ এল নাকে। এ গন্ধটা আগে সে পায়নি কোনোদিন। রান্নাঘরের ঢোকার আগেই মধুবাবুকে চোখে পড়ল। তিনিও ঘুমচোখে এদিকেই আসছেন। তুলিকে দেখে তিনি একবার ভুরু নাচালেন। তুলি একগাল হেসে রান্নাঘরের দরজা খুলে ফেলল—
এত সকালে বাচ্চা মেয়েটাকে এখানে দেখবেন ভাবতেই পারেননি মধুবাবু ভোরবেলার চা-টা এখনও দিয়ে গেল না মালতী। সকালে উঠে বেশ খানিকটা বিরক্তই হয়েছিলেন। কিছুক্ষণ মালতীকে খুঁজলেন তারপর সনাতনকে। শেষে কাউকেই না পেয়ে নিজে বেরিয়ে এলেন চায়ের জল বসাবেন বলে। সারাক্ষণের ইউনিফর্মটা গায়ে গলানো হয়নি। শুধু একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি চাপালেন গায়ে। তুলিকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে তিনি একবার ভুরু নাচালেন
আজ মালতীর শরীরটা ভালো নেই। সে যে কালরাতে বাড়ি না ফিরে উত্তর মহলে থেকে গিয়েছিল সেটা সনাতন জানে। খানিকটা রাগ করেছে বাবা সেটা মুখ দেখে বুঝেছে মালতী। মাঝরাতে পায়েল আর সুনন্দা ফিরতে ঘুমন্ত তুলিকে সুনন্দার কাছে দিয়ে সুনন্দার পাশের ঘরেই শুয়ে পড়েছিল সে। তখন ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়েছে। তার উপরে বাইরে একটু একটু ঠান্ডা পড়েছে যেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে পড়ল মালতী। কে জানে বকা শুনতে হবে হয়তো মধুবাবুর কাছে
সনাতন যে ঘরে শোয় তার ছাদ থেকে বৃষ্টি হলে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে। ফলে কাল রাতে নিজের ঘরে শুতে পারেনি সনাতন। শশাঙ্ক নিজেই এসে ডেকে নিয়ে গেছিল তাকে। অনেকদিন পর কাল রাতে এ বাড়িতে থাকতে একেবারেই ইচ্ছা করেনি সনাতনের। নিজের বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করছিল। কাল রাত থেকেই মনটা কুডাক ডাকছে। কে জানে? এমনটা তো খুব একটা হয় না তার আজ তাহলে কী হল? শুয়ে শুয়ে এইসব ভেবেই উঠে পড়ে সনাতন
সকালের দিকে একবার ঘুম ভেঙেছিল শশাঙ্কের। আড়চোখ একবার সময় দেখল সে। সনাতনদার বিছানা খালি। পাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে
ক্ষেত্রমোহন বিছানা ছেড়ে উঠে এসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন, একবার। গিরিজা এখনও শুয়েই আছে বিছানায়। ঘুমোচ্ছে। ঘুমাক, যতক্ষণ চোখ বুজে থাকে ততক্ষণই শান্তি। কবে যে আপদ ঘাড় থেকে নামবে।
আশপাশ দেখেও ছেলেকে দেখতে পেলেন না ক্ষেত্রমোহন। সাতসকালে গেল কোথায়? অতীনকে খুঁজতে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি—
দরজা খুলেই ছিটকে বেরিয়ে এল তুলি। তার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে একটা ভয়ার্ত আর্তনাদ। দু’হাতে মুখ ঢেকে মাটির উপরেই পড়ে গেল সে। একটু ঘাবড়ে গেছিলেন মধুবাবু। দ্রুতপায়ে এগিয়ে এলেন তিনি, মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করলেন, “কী হয়েছে মা?”
তুলি কিন্তু উঠল না। সে একটু একটু করে পিছোতে শুরু করেছে। তার চোখ থেকে আহত পশুর মতো যন্ত্রণা ঝরে পড়ছে, “ভি… ভিতরে… ও মাগো…” ডুকরে কেঁদে উঠল তুলি। তারপর উঠে দাঁড়িয়েই দৌড় দিল বাইরে।
কৌতূহল হতে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন মধুবাবু। এতটা ভয় পেল কেন মেয়েটা? কিছু কি দেখেছে ভিতরে? আরশোলা জাতীয় কিছু? দরজাটা আড় করে খোলাই ছিল। এবার ঠেলা দিয়ে সেটা খুলে ফেললেন মধুবাবু। সঙ্গে সঙ্গে একটা বিদ্যুৎ তরঙ্গের ঝটকা তার পা দুটো কাঁপিয়ে দিল। কোনোরকমে নিজেকে সামলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি।
ঘরের ভিতর কাল রাতের এঁটো বাসনকোসনের মধ্যে মাথা গুঁজে পড়ে আছে একটা লাশ। মাথাটা থেঁতলে দিয়েছে কেউ। মুখটা আর চেনা যায় না। কোমর অবধি ঢেকে আছে টকটকে লাল রক্তে। জামাকাপড় আর চেহারা দেখে চেনা যায় লাশটা কার। ক্ষেত্রমোহনের ছেলে–অতীন।
*****
জমিদারবাড়ির সামনে যখন পুলিশের জিপটা থামল তখন বেলা প্রায় দশটা। একটু আগেই জামালপুর থানার পুলিশ এসে দেখে গেছে জায়গাটা। পোস্টমর্টেমের জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বডি। প্রবীণ ইন্সপেক্টার কেশব শর্মা দুটো হাত পিছনে রেখে ভালো করে দেখতে লাগলেন বাড়িটা। পিছনে একজন কনস্টেবল দাঁড়িয়ে ছিল, তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ছেলেটার বয়স কত বললে?”
“চোদ্দ কি পনেরো।” কনস্টেবল তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়।
“ওঃ, আর মার্ডারটা কীভাবে হয়েছে বললে।”
“মাথা থেঁতলে দিয়েছে কেউ। ব্লাজন কেস স্যার।”
“দিনদিন মানুষ শালা কেমন যেন শুয়োরের বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে। যাই হোক, চলো।”
কনস্টেবল আর শর্মা ভিতরে ঢুকে এলেন। আরও দু-একজন কনস্টেবল ও ডাক্তারকে চোখে পড়ল। সঙ্গে বাড়ির কয়েকজন লোককেও। শর্মাকে দেখে মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন। ভিতরের ঘর থেকে চিৎকার চেঁচামিচি কানে আসছে। সেই সঙ্গে কান্নার আওয়াজও। শর্মা হাতটা একবার “বুকের কাছে জড়ো করে বললেন, “কেশব শর্মা সি.আই.।”
কনস্টেবলের সঙ্গে ঘরের দিকে এগিয়ে যান শর্মা। এতক্ষণে সেটা সিল করে দিয়েছে পুলিশ। শর্মাকে দেখে বাকি দু’জন কনস্টেবল সরে দাঁড়ালেন। দরজার উপরের হলুদ ফিতে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে এলেন শর্মা।
বডিটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এতক্ষণে। মেঝের উপরে রক্তের দাগ অবশ্য এখনও চোখে পড়ে। সেখানে গিয়ে একটু থমকে দাঁড়ালেন শর্মা। তারপর মাটির উপরে উবু হয়ে বসে চকে আঁকা বডির অবস্থানটা দেখার• চেষ্টা করলেন।
“স্ট্রেঞ্জ!” ভুরু দুটো কুঁচকে উঠল তার।
“কী হয়েছে স্যার?” কনস্টেবল জিজ্ঞেস করল।
“সামওয়ান ব্যশড হিজ হেড। বাট দেয়ার ইজ নো সাইন অফ স্ট্রাগল।” রান্নাঘরের র্যাকের উপর রাখা থালা-বাসনগুলো দেখালেন তিনি, “বাসনগুলোও পরিপাটি করে সাজানো। বাইরে পায়ের দাগ দেখলে? দু-একটা আছে তবে সেগুলো বডি ডিস্কভার হওয়ার তুরন্ত পরে যারা বাইরে থেকে এসেছিল তাদের। স্পিকিং অফ হুইচ, তারা কারা? “
“সেটা আমি ঠিক জানি না স্যার।” কনস্টেবলটি মাথা নামিয়ে নেয়। মধুবাবু দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ইন্সপেক্টার তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “খুনটা প্রথম দেখে কে?”
“তুলি। আমিও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে ঢুকি। ও রক্ত দেখেই ছুটে পালিয়ে যায়। আমি দেখে চিৎকার করে বাকিদের জানাই।”
“সবার আগে কে আসে?”
“মালতী, তারপর সনাতন।”
“ততক্ষণ আপনি ডেডবডির সঙ্গেই ছিলেন?”
“না…” একটু ইতস্তত করেন মধুবাবু, “…মানে ঘরের বাইরে ছিলাম। অত রক্ত… ওইটুকু ছেলে…”
“পুলিশে কে খবর দেয়?”
“শশাঙ্ক। আসলে ওই এসব ব্যাপার দেখাশোনা করে।”
“কীসব ব্যাপার? কেউ মরে গেলে পুলিশে খবর দেওয়া?”
“অ্যা? না না। মানে ব্যাঙ্ক, থানা এসব জায়গায় ওই যায় সাধারণত।”
“তাকে একটু পাঠিয়ে দিন। এই ছেলেটা রাতে কার সঙ্গে ছিল?”
“ওর বাবার সঙ্গেই তো শোয় যতদূর জানি। “
“বেশ। তার কন্ডিশান কেমন? একটু কথা বলা যাবে?”
মাথায় একবার হাত বোলান মধুবাবু, “ব্যাটাছেলে তো, হয়তো বলতে পারবেন। তবে ছেলেটার মা খুব ভেঙে পড়েছে।”
“দ্যাটস ভেরি ন্যাচারাল।”
ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন ইন্সপেক্টার। তিনজনে পা বাড়ালেন সিঁড়ির দিকে। প্রাসাদের অন্য বাসিন্দারা বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে। পুলিশ দেখে অবশ্য পরপর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জানালাগুলো। শর্মার গায়ে ইউনিফর্ম নেই। তবে তার চেহারায় এমন একটা ভারিক্কি ভাব আছে যে আশেপাশে কনস্টেবল পরিবৃত হয়ে রীতিমতো গমগমে পরিবেশ সৃষ্টি করে।
“বডি নিয়ে প্রোভিশানালি কিছু বলেছে ফরেন্সিক?” পাশে হাঁটতে থাকা কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন শর্মা।
“মাল্টিপেল উন্ডস। সবই ফ্রন্টে। সম্ভবত মাথার চুল ধরে বারবার দেওয়ালে ঠুকেছে।”
‘সেটাই আমি ভাবছিলাম, কিন্তু একটা ছোট প্রবলেম হচ্ছে।”
“কীরকম প্রবলেম স্যার?”
“মুঠো করে চুল ধরে যদি বারবার দেওয়ালে ঠুকতে থাকে তাহলে কিছু চুল মাথা থেকে উপড়ে হাতে চলে আসার কথা। অর্থাৎ যেখানে ঠোকা হয়েছে মাথাটা সেখানে ঘরের মেঝেতে কয়েকটা চুল পাওয়া যাবেই। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা এবসেন্ড। অবশ্য বাচ্ছাছেলের চুল একটু বেশি শক্ত হয়…
কথাগুলো বলতে বলতেই ক্ষেত্রমোহনের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরেন মধুবাবু। পরদা সরিয়ে ভিতরে ঢুকে যান। কিছুক্ষণ কারও সঙ্গে কথা বলে বাইরে বেরিয়ে এসে চোখের ইশারায় ভিতরে ডেকে নেন শর্মাকে। ঘরের ভিতরে বাইরে কিছু লোকজন বসে শান্ত্বনা দিচ্ছিলেন ক্ষেত্রমোহনকে। তারা একে একে বাইরে বেরিয়ে যান। শর্মা কনস্টেবলদের বাইরে বসতে বলে ভিতরে ঢুকে যান।
ভিতরটা এখন মোটামুটি শান্ত। গিরিজাকে খানিকক্ষণ আগেই ঘর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষেত্রমোহনকে চোখে পড়ল ঘরের ঠিক মাঝে বিছানার উপরে বসে আছেন মাথা নিচু করে। চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে।
শর্মার কাছে অবশ্য এসব নতুন কিছু নয়। তিনি একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “এসময়ে কথা বলতে পারবেন না জানি। আমি জাস্ট একটু ফলো আপ করেই চলে যাব।”
উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়লেন ক্ষেত্রমোহন। এখনও মুখ তুলে তাকাননি তিনি। গলার কাছে অনেকক্ষণ ধরে রক্ত খাচ্ছে একটা মশা। সেদিকে খেয়াল পড়ছে না তার।
“আপনার ছেলে… আই মিন অতীন। কাল আপনার কাছেই শুয়েছিল?” আবার মাথা নাড়লেন ক্ষেত্রমোহন। তার কাঁধ ঝুঁকে পড়েছে। নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে খুব ধীরে ধীরে।
“সকালে কখন ঘুম ভাঙে আপনার?”
“সাড়ে সাতটায়।” ঘরঘরে গলায় জবাব দেন ক্ষেত্রমোহন।
“তার মাঝে একবারও ঘুম ভাঙেনি।”
উপরে নিচে মাথা নাড়েন ক্ষেত্রমোহন। সদর্থক। একটু নড়েচড়ে বসলেন শৰ্মা, “সময় দেখেছিলেন?”
“দরকার হয় না। আমি বাথরুম করতে উঠি একবার সাড়ে চারটেয়।”
“তখন ছেলেকে দেখতে পেয়েছিলেন?”
“শুয়ে ছিল আমার পাশে। তখনও যদি একবার জানতাম…” ক্ষেত্রমোহনের গলা বুজে আসে। চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে নিচে। পরমুহূর্তে সেটা মুছে নেন তিনি।
শর্মা বিড়বিড় করে বললেন, “তার মানে খুন দিনের বেলা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে নয়।” তারপর মধুবাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “বডি কখন দেখতে পান আপনারা?”
মধুবাবু একটু ভেবে বললেন, “ওই পৌনে আটটা ধরুন।”
“রক্ত যতদূর গড়িয়েছে তাতে অন্তত ঘণ্টাখানেক পড়ে ছিল বডি। মানে খুনটা হয়েছে প্রায় সাড়ে ছটা থেকে সাতটার মধ্যে।”
আবার একবার গলা খাঁকারি দিয়ে শর্মা বললেন, “অত সকালে অতীম রান্নাঘরে কেন গিয়েছিল বলতে পারবেন?”
দু’পাশে মাথা নাড়লেন ক্ষেত্রমোহন। বেশ কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখ করে বসে থাকলেন শর্মা। তারপর উঠে পড়ে বললেন, “ছেলেটা যে বিছানায় শুয়েছিল সেখানটা একটু দেখতে হবে আমাকে।”
“হ্যাঁ। আমি দেখাচ্ছি। এই ভিতরের ঘরটা।” বলে মধুবাবু উঠে পড়লেন। তারপর দ্রুত পায়ে ভিতরের ঘরের দিকে এগোতে এগোতে বললেন, “ও আর ওর বাবা এখানেই শোয়… মানে শুত।”
পরদা সরানোই ছিল। ভিতরে ঢুকে এলেন শর্মা। বিছানাটা এখন ফাঁকা পড়ে আছে। চাদরটা দেখে বোঝা যায় রাতে দুটো মানুষ শুয়েছিল তার উপরে। বারান্দার দিকে জানলাটা খোলা আছে সেদিকে একবার উঁকি দিলেন শর্মা। উলটো দিকের প্যাসেজটা চোখে পড়ছে। এখন সেখানটা ফাঁকা।
তিনি আবার বিছানার কাছে ফিরে এলেন। নিচু হয়ে বসে পড়লেন মেঝেতে। বিছানার নীচটা দেখার চেষ্টা করলেন। সেখানে চোখ রাখতেই কয়েকটা দোমড়ানো ছোট কাগজ চোখে পড়ল তার। ছোট, দলা পাকানো কাগজ। মাটির উপরে শুয়ে পড়ে সেটা বের করে আনলেন তিনি।
কাগজগুলো দেখে বোঝা যায় কেউ কিছু লেখার পর দলা পাকিয়ে ফেলে দিয়েছে। সম্ভবত যা লিখেছিল সেটা পছন্দ হয়নি।
হাতের চাপে কাগজটা সোজা করে নিলেন শর্মা। মন দিয়ে লেখাগুলো লক্ষ করলেন তিনি। কাঁপা কাঁপা হাতে কয়েকটা শব্দ লেখা আছে তাতে। শব্দগুলো পড়ে অবাক হয়ে গেলেন ইন্সপেক্টার— তার চোখের তারায়।”
সব ক’টা কাগজে একই শব্দ একই ভাবে লেখা আছে। একটা বছর বারোর ছেলে খামোখা এই তিনটে শব্দ বারবার লিখে ছিঁড়ে ফেলবে কেন? অবশ্য এমনও হতে পারে এ ঘরের অন্য কেউ লিখে ফেলে দিয়েছে।
তিনি মাটি থেকে উঠে পড়লেন। তারপর ঘরটা আর একবার খতিয়ে দেখে বেরিয়ে এলেন। মধুবাবু ক্ষেত্রমোহনের কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন, “এখানে আর একা একা বসে থাকবেন না। চলুন, বাইরে সবাই আছে।”•
“আমার ভালো লাগছে না। কে আমার ছেলেটার এমন করল বলুন তো, ওইটুকু বয়স। এত কষ্ট দিয়ে…”
গলা ধরে এল ক্ষেত্রমোহনের। মধুবাবুকে হাতের ইশারায় এখানে থাকতে বলে ক্ষেত্রমোহনের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন শর্মা। বাড়িটা গুঞ্জনে ভরে আছে। প্রাসাদের দিক থেকে খাসনবীশকে হেঁটে আসতে দেখলেন শর্মা মুকেশ খাসনবীশ জামালপুর থানায় নতুন সাবইন্সপেক্টারে বদলি হয়েছে বছর তিনেক হল। যদিও জুনিয়ার অফিসার তাও ঝকঝকে স্মার্ট চেহারার জন্যে এর মধ্যেই নাম কামিয়ে ফেলেছে। শর্মাও স্নেহ করেন তাকে।
শর্মাকে দেখে এগিয়ে এল মুকেশ। তারপর গম্ভীর গমগমে গলায় জিজ্ঞেস করল, “আপনাকেও এখানে ঠেলেছে?”
“সকালে মেয়েকে আঁকার স্কুলে দিতে গেছিলাম, জান? ফোন করে বলল একটা ব্রুটাল মার্ডার হয়ে গেছে। শালা কোন দেশে আছি।”
“তা যা বলেছেন, এখানে কোনো লিড পেলেন?” শৰ্মা আগেও লক্ষ করেছেন খাসনবীশ ডিউটিতে থাকলে অন্য কথা বিশেষ বলতে চায় না। এ স্বভাবটা ভালো লাগে শর্মার।
“লিড তো পরের কথা। একটা জিনিস ভেবে তো কুল পাচ্ছি না হে…“ “মোটিভ?”
“এক্সাক্টলি। মোটিভ। বারো বছরের একটা ছেলেকে নৃশংসভাবে মারা হল কিন্তু তার এপারেন্টলি কোনো কারণ নেই।”
খাসনবীশ একটু ভেবে বলল, “এসব ক্ষেত্রে দেখেছি একটা কমন মোটিভ থাকে। এলিমিনেটিং দ্য আই উইটনেস।”
“মানে ছেলেটা কিছু একটা ক্রাইম দেখে ফেলেছিল বলছ?”
“হতে পারে।”
“কিন্তু তেমন কোনো ক্রাইম এ বাড়িতে তো হয়েছে বলে শুনিনি।”
“হয়েছিল। তবে বছর দশেক আগে। একটা প্রিজিউমড সুইসাইড। তবে সেটারও কোনো মোটিভ ছিল না।”
“উঁহু…” একটু ভেবে মাথা দোলান শর্মা, “ধরে নিলাম সে ক্রাইমটা এ ছোকরা কোনোভাবে দেখে ফেলেছিল। তাহলে দশবছর পরে তাকে খুন করার দরকার পড়বে কেন? আর এ ছেলের যা বয়স তাতে ব্ল্যাকমেইলের থিওরিও লাগাতে পারবে না।”
“তা জানি না তবে মোডাস অপারেন্ডি দেখে মনে হচ্ছে এ খুনি যেই হোক না কেন, দিস ইজ নট হিজ ব্রেকিং।”
“মানে আগেও খুন করেছে বলছো?”
সিঁড়ি ধরে একতলায় নামতে থাকে দু’জনে। খাসনবীশ আড় হয়ে নামতে নামতে বলে, “ব্যাপারটা কমপ্লিকেটেড। এ বাড়ির এক মহিলা এক চরিলেভেন্ট কিন্তু ইন্টারেস্টিং তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলছেন বছর খানেক আগে শশিভূষণ সরকার নামে এক ভদ্রলোক এ বাড়িতে কিছু কাগজপত্র নিয়ে সম্পত্তি দেখাশোনার দাবি জানাতে আসেন। পয়েন্ট টু বি নোটেড, লোকটা সম্পত্তির দাবি জানাতে আসেনি, দিন কতক পরে তিনিও সাস্পিসিয়াসলি সুইসাইড করেন।”
“বাবা! এ তো সুইসাইডের লাইন লেগে গেছে। শুধু আজকের ব্যাপারটা হোমিসাইড। আচ্ছা এ বাড়িতে মোট কত লোক থাকে?”
“প্রায় জনা তিরিশেক। তবে তাদের বেশিরভাগই পিছনের বিল্ডিংয়ে। কিছু শরীক আছে। কিছু অস্থায়ী বাসিন্দা আছে। জ্ঞাতিগোষ্ঠি আর কি।”
“তার মধ্যে যে কেউ খুন করে থাকতে পারে…”
একতলায় নেমে এসেছিল দু’জনে। দুপাশে মাথা নাড়িয়ে খাসনবীশ বলে, “দ্যাট উড বি হাইলি এবসারড। কাল রাতে বৃষ্টি পড়ে চারিদিক কাদা হয়ে গেছিল। পিছনের দিক থেকে কেউ যদি এ বিল্ডিংয়ে আসে তাহলে মাটিতে
তার পায়ের ছাপ পড়বে। মজার কথা হল খুনের ধারে পাশে কোনো পায়ের ছাপ নেই।”
“মানে খুন এই বিল্ডিংয়ের ভিতরেই কেউ করেছে।”
“পাশের বিল্ডিং-এ কয়েকজন গেস্ট আছে। তাদের যাওয়া-আসার জন্যেও একটা প্যাসেজ আছে।”
“মানে আমাদের সাসপেক্ট এসে দাঁড়াচ্ছে প্রায় জনা দশেক। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কখন আসছে।”
“হাই প্রায়োরিটি দিয়েছিলাম। এতক্ষণে তো এসে যাওয়ার কথা।” বাইরে বেরিয়ে দু’জনে একতলার একটা ঘরের কাছে এসে দাঁড়ালেন। আগের থেকে এখন ভিড় খানিকটা কমেছে। ভিতরের ঘর থেকে কান্নার শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না। ঘরের ভিতরে একবার উঁকি দিলেন শর্মা। মাঝে যিনি বসে আছেন তাকে দেখে বোঝা যায় তিনি ছেলেটির মা। মহিলার মুখের দিকে তাকানো যায় না। পাশ থেকে কয়েকজন ধরে আছে তাকে। মাঝে মাঝেই কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন তিনি।
“উনি ঠিক আছেন তো?” পাশে বসে থাকা একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন শর্মা। মেয়েটি মাথা নেড়ে দিল। শর্মা উঠে এসে তাদের দিকে পিছন ফিরে খাসনবীশকে বললেন, “একে এখন ইন্টারোগেট করা ইনহিউম্যান হবে। এক কাজ কর, যে বাচ্চা মেয়েটি বডিটা দেখেছে তাকে ডেকে দিতে বল।”
মিনিট দশেকের মধ্যে তুলি এসে বসল দোতলার ঘরে। তাকে যারা নিয়ে এসেছিল তাদের হাতের ইশারায় বাইরে দাঁড়াতে বললেন শৰ্মা।
তুলির চোখ-মুখ থেকে এখনও আতঙ্কের দাগ মোছেনি। কিছু বলতে গেলেই বারবার ঠোঁট কেঁপে উঠছে তার। কচি মুখটা যেন এক ধাক্কায় অনেকটা বয়স বাড়িয়ে ফেলেছে।
তার কাঁধে একটা হাত রেখে অভয় দিলেন শর্মা, “তুমি না সাহসী মেয়ে। ভেঙে পড়লে চলবে?”
কিছু বলল না তুলি। কোলের উপর পড়ে থাকা একটা হাতের উপরে আর একটা হাত রেখে মাথা নিচু করে বসে থাকল।
“কাল রাতে কোথায় শুয়েছিলে তুমি?”
প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একটু থমকালো তুলি, তারপর একবার ঢোক গিলে বলল, “আগে দোতলায় মালতীদিদির কাছে। তারপর নতুনদিদির কাছে।
চোখ, তুলে একবার খাসনবীশের দিকে তাকালেন শর্মা। তারপর আবার মুখ নামিয়ে নরম গলায় বললেন, “মালতীদিদির কাছ থেকে কে নিয়ে এসেছিল তোমায়?”
“জানি না। আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।”
জিভ কাটলেন শর্মা, “তাও ঠিক, তাও ঠিক। বোকার মতো প্রশ্ন করছি। আচ্ছা সকালে তুমি কী করতে যাচ্ছিলে রান্নাঘরে?”
“আমার খিদে পেয়েছিল। বিস্কুট খেতে যাচ্ছিলাম।”
“ঘরে ঢোকার আগে কিছু দেখেছিলে?”
মাথা নাড়ে তুলি, তারপর বলে, “মধুকাকা আসছিলেন রান্নাঘরে। আমি ভয় পেয়ে যাই খুব।”
“তা তো পাবেই। আচ্ছা রাতে কোনো আওয়াজ শুনেছিলে তুমি? কাউকে দেখেছিলে?”
মাথা নাড়ে তুলি।
“আচ্ছা তুমি এসো এবার। ভয়ের কিছু নেই। একা একদম থাকবে না। বুঝেছ?”
মাথা দুলিয়ে তুলি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। শর্মা উঠে পড়ে খাসনবীশের দিকে তাকিয়ে বলেন, “রাতে মেয়েটাকে সরানো হয়েছিল ঘর থেকে। কিছু কারণ বুঝতে পারছ?”
“মালতী নামের মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলেই বোঝা যাবে।”
দু’জনে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। বারান্দায় এসে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন শর্মা। কি যেন ভাবতে ভাবতে বললেন, “আচ্ছা, তোমার প্রাইমারিলি কী মনে হয়? খুনি নারী না পুরুষ?”
“দুটোই হতে পারে। তবে যেভাবে বারবার মাথাটা ঠোকা হয়েছে তাতে রীতিমতো শক্ত হাতের কাজ মনে হচ্ছে।”
“প্লাস কোনো স্ট্রাগলের চিহ্ন নেই। যেন ছেলেটা কিছু বোঝার আগেই • তার মাথাটা খুনির হাতে চলে গেছে।”
“অথবা খুনি ছেলেটার কাছের কেউ। যার কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কা একেবারেই করেনি সে।”
“রাতে কেউ শব্দ শুনেছে কিছু?”
“উঁহু… নাথিং।”
শর্মা একটা হাত বুকের কাছে তুলে এনে আঙুল ফাটাতে থাকেন। অনেকগুলো প্রশ্ন উত্তরের অভাবে মাঝসমুদ্রে ভাসছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে যেটা বেশি করে ফুটে উঠছে সেটা হল মোটিভ। অন্তত সেটুকু যদি পাওয়া যেত তাহলেও এগোনোর একটা রাস্তা থাকত। আপাতত সব পথ বন্ধ।
পকেট থেকে কাগজটা বের করে আবার তার উপরে চোখ রাখলেন তিনি। খাসনবীশ সেটার উপর ঝুঁকে পড়ে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “এগুলো কোথায় পেলেন? “
“ছেলেটার ঘরে। ডায়েরির পাতা ছিঁড়ে এইসব লিখছিল কাল রাতে।”
“কাল রাতে কী করে বুঝলেন?”
রোজ বিকেলে ঝাঁট দেওয়া হয়। আশা করা যায় কাল রাতেই কোনো সময় এইসব লিখেছে সে। কিন্তু প্রশ্ন হল একটা বাচ্চা ছেলে হঠাৎ এই তিনটে শব্দ লিখতে যাবে কেন?”
“তার চোখের তারায়…” কথাগুলো উচ্চারণ করে একবার থেমে যায় খাসনবীশ। একটু দূরে শশাঙ্ককে হেঁটে আসতে দেখা যায়। দু’জনে এগিয়ে যায় তার দিকে
শশাঙ্ককে আগেই জেরা করেছে খাসনবীশ। সে পুলিশ দু’জনের কাছে এসে একটু ইতস্তত করে বলে, “একটা কথা আপনাদের আগে বলা হয়নি। আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম স্যার, মাফ করবেন।”
“কী কথা বলুন তো?” নিরুৎসাহিত গলায় জিজ্ঞেস করেন শর্মা। তিনি জানেন যে কথা শশাঙ্ক বলতে চলেছে তাতে ঘটনার মোড় ঘুরে যেতে পারে। তাও বেশি উৎসাহ দেখালে সে ঘাবড়ে গিয়ে আবার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।
“আসলে তেমন কিছু না। এ ঘটনার সঙ্গে কোনো যোগ নেই হয়তো তাও মনে হল বলা উচিৎ।”
“নিশ্চিন্তে বলুন।” খাসনবীশ বলল পাশ থেকে।
মাথা ঘুরিয়ে একবার চারপাশটা দেখে নিয়ে শশাঙ্ক বলল, “কাল ভোরের দিকে কেউ আমার দরজায় টোকা দিচ্ছিল।”
“মানে!” চেষ্টা করেও উত্তেজনাটা চাপা দিতে পারলেন না শৰ্মা, “কখন?”
“তা বলতে পারব না। তবে বার দুয়েক দিয়েছিল। আমি ঘুম চোখে গলা তুলে একবার জিগ্যেসও করি কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি।”
“তারপর?”
“আমি একবার ভেবেছিলাম উঠে দেখি। কিন্তু সারাদিন কাজ করি স্যার। রাতে বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না। দু’বার ডাকার পরে কেউ সাড়া দিচ্ছে না দেখে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”
“তারপর আর পাননি আওয়াজটা?”
“না। সকালে উঠে দেখি এই অবস্থা।”
শর্মার মুখ থমথমে দেখায়। কিছুক্ষণ পরে মুখ তুলে তিনি বলেন, “ঠিকাছে। আমরা দেখছি কী করা যায়। তবে এই কথাটা আর কাউকে বলবেন না। কেমন?”
“হ্যাঁ স্যার।”
শর্মা মাথা নেড়ে দিতে আবার ফেরার পথ ধরে হাঁটতে থাকে শশাঙ্ক। খাসনবীশ সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শর্মার দিকে তাকিয়ে বলেন, “তাহলে কি আগে শশাঙ্ক টার্গেট ছিল। তাকে না পেয়ে বাচ্চাটাকে…”
“কিন্তু কেন?”
“আমার তো সিরিয়াল কিলার মনে হচ্ছে। এভাবে রক্তারক্তি করে খুন, একজন ফস্কে যেতে আরেকজন… অ্যাবসেন্স অফ মোটিভ… দিস গট টু বি আ সিরিয়াল কিলার।”
শর্মা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় তার ফোনটা বেজে ওঠে। সেটা পকেট থেকে বের করে স্ক্রিনের দিকে দেখে নিয়ে চাপা গলায় বলেন, “ফরেনসিক….”
খাসনবীশ নিচে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। খুনের সমস্ত ইঙ্গিত একসঙ্গে করলে একটা ছাঁচ ফুটে উঠছে। খুনি সম্ভবত পুরুষ, শক্তিশালী, আগেও খুন করেছে এবং ভিক্টিমের সুপরিচিত। কে হতে পারে?
মাথাটা ঠান্ডা করে মুকেশ। যতই জটিল হোক না কেন তার মন বলছে এ কেস সল্ভ হতে বেশি সময় লাগবে না। বড় করে একটা দম নেয় সে। কতই বা জটিল হতে পারে?
এতক্ষণে ফোনটা রেখে দিয়েছেন শর্মা। তিনি ধীরে হেঁটে খাসনবীশের কাছে এসে দাঁড়ান। প্রশ্ন করতেও উত্তর দেন না। কি যেন একটা ভাবনায় ডুবে গেছেন। অভিজ্ঞ গোয়েন্দাকে এত চিন্তিত এর আগে দেখেনি খাসনবীশ।
বিড়বিড় করে উচ্চারণ করেন শর্মা, “ওই শশিভূষণ সরকারের ফাইলটা আজকের মধ্যে পাঠাও আমাকে। আই নিড দ্যাট রাইট নাও।”
“কেন স্যার? পোস্টমর্টেম কী বলেছে?” জিজ্ঞেস করে মুকেশ।
“পোস্টমর্টেম বলছে…” পরের কথাটা বলার আগে একটু থামেন শৰ্মা, “এটা হোমিসাইড নয়… সুইসাইড।”