তার চোখের তারায় – ১৯

ঊনবিংশ অধ্যায়

সুনন্দা আর কিছু বলার আগেই এক ঝটকায় মেঝে থেকে উঠে তুলিকে প্রায় ছিনিয়ে নিল মালতী। তারপর তার মাথার পিছনে একটা হাত রেখে শুইয়ে দিল মাটিতে। মেয়েটার মাথাটা এখন তার হাতের একপাশে ঝুলে রয়েছে। কোনো সাড় নেই তাতে। মালতীর হাত ছাড়িয়ে দু’পাশে ঝুলে রয়েছে অসাড় হাতদুটো।

“কেন করলে এরকম?” ঘর ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল সুনন্দা। পায়েল তার কাঁধে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, “তুমিই তো বলেছিলে খুনের শাস্তি মৃত্যু, আমি তো শুধু তাই করেছি।”

মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল সুনন্দা। ঘরের সবাই উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছিল। একটা ছোটোখাটো গোলমাল শুরু হয়েছে ঘরময়। কেউ কেউ পায়ের উপরে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তুলির মুখটা দেখার চেষ্টা করছে, কেউ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে পায়েলের দিকে। এটা কী করল মেয়েটা। নীলাদ্রি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তেড়ে এসেছিল পায়েলের দিকে। মুকেশ খাসনবীশ তাকে শক্ত হাতে আটকে দিল। এদের মধ্যে একমাত্র কেশব শর্মাকে একটু শান্ত দেখাচ্ছিল। তিনি মুখ তুলে পায়েলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি কি বলছেন ও খুন করেছে অতীনকে?”

উপরে নিচে মাথা নাড়ায় পায়েল। কোনো কথা ফোটে না তার মুখে। “মিথ্যেবাদী। কি ভাব কি নিজেকে? ওইটুকু মেয়ে কাউকে খুন করতে পারে না।” সুনন্দা হিংস্র গলায় আবার চেঁচিয়ে ওঠে।

“আমি আপনাকে ঠিক দশ মিনিট সময় দিচ্ছি মিস রায়চৌধুরী। তারপরেও যদি আপনি এনাদের কনভিন্স না করতে পারেন তাহলে আমার আর কিছু করার থাকবে না।” কথাটা বলে চোখ নামিয়ে নিলেন শর্মা। তারপর বাকিদের দিকে ফিরে বললেন, “আপনারা প্লিজ একটু শান্ত হয়ে বসুন। আমরা ওনাকে দশ মিনিট দিচ্ছি। তারপর যা হোক করবেন আপনারা।”

যারা দাঁড়িয়ে পড়েছিল তাদের বসিয়ে দিল মুকেশ খাসনবীশ। তারপর আবার নিজের চেয়ারে এসে বসে পড়ল। পায়েল প্রায় একমিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল ঘরের মাঝখানে। তারপর একহাতে মুখ মুছতে মুছতে চেয়ারের কাছে ফিরে গিয়ে কাঁধের ব্যাগটা তুলে নিয়ে তার ভিতর থেকে একটা পুরনো কাগজে মোড়া প্যাকেট বের করে আনল। সেটা খুলে ভিতরের জিনিসটা সামনের টেবিলের রেখে দিয়ে ধরা গলায় বলল, “এটা এলিজাবেথ মসগ্রুপের ডায়েরি। আমরা পেয়েছি এখানকার কবরস্থানে তারই সমাধি থেকে।”

“আমরা মানে?”

“আমি আর সুনন্দাদি। এখানে আসার পরদিন আমি তুলি আর সুনন্দাদি গিয়েছিলাম সেখানে। তারপরেও একদিন গেছিলাম।” কারও দিকে না তাকিয়েই বলল পায়েল।

“মানে আপনারা সমাধিতে…” শশাঙ্ক বলতে যাচ্ছিল কথাটা পায়েল হাত ঘড়িটার দিকে ইশারা করে থামিয়ে দিল তাকে। দশ মিনিটের ভিতর সময় নষ্ট করতে চায় না সে।

“এই ডায়েরিটা ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে আপনারা একটা বিশেষ ছবি দেখতে পাবেন। একটা বাচ্চা মেয়ে বারবার স্বপ্নে একটা কালো গর্ত দেখত। আসলে সেটা ছিল একটা সুড়ঙ্গের মুখ। সে সুড়ঙ্গটা কোথায় ছিল তা আমি একটু পরে বলছি, তবে আপাতত শুধু এটুকু বলে রাখি সেই স্বপ্নটা ছিল আসলে তার পূর্বপুরুষের স্মৃতি। তার পূর্বপুরুষের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িয়ে আছে ওই গর্তটা। কিন্তু কে এই পূর্বপুরুষ?

সুনন্দাদিকে আমি মনে করতে বলব… আমরা মসক্রপ পরিবারের কবরের ভিতরে ঢুকে খেয়াল করি যে সেখানে তিনটে ক্রিপ্ট আছে। অথচ তাদের পরিবারের সদস্য ছিল চারজন। তাহলে বাকি একজনকে রাখা হল না কেন? এবং সে কে?

কয়েকটা ছেঁড়া সুতো এক করতে পারলেই আমরা এই প্রশ্নের উত্তর পাব, এক, এই ডায়েরিতে আমরা দেখেছি যে জর্জ মসক্রপকে ইংল্যান্ড থেকে চিঠি দিয়ে কিছু একটা কাজের জন্যে ভৎর্সনা করা হয়, কী সেই কাজ?

দুই, এলিজাবেথ মসক্রপ এমন কারও থেকে ইংরেজি অ্যালফাবেট শিখেছিল যে ভারতীয় এবং সম্ভবত বাঙালি।

তিন, মসক্রপ পরিবারের সমাধিতে একটি ক্রিপ্ট অনুপস্থিত,

‘অর্থাৎ’, ঘরের নীরবতা অসহ্য বেড়ে উঠেছে এবার, “জর্জ মসত্ৰুপ বিয়ে করেছিলেন একটি বাঙালি হিন্দু মেয়েকে। সেই হল এলিজাবেথ মসগ্রুপের মা ও তার পূর্বপুরুষের স্মৃতিই স্বপ্নে দেখতে পেত আমাদের এলিজাবেথ মসক্রপ। অর্থাৎ সেই প্রাচীন ধর্মের উপাসকদের রক্ত মায়ের দিক থেকে পারসিলা ও এলিজাবেথ মসক্রপের শরীরেও বইত। এ জন্যেই পারসিলা এত সহজে দেবতাকে আহ্বান করতে পেরেছিল, শশাঙ্কদা।

কিন্তু প্রশ্ন হল আমাদের এই গল্পে এলিজাবেথ মসক্রপ এবং তার পরিবার এল কী করে? সুনন্দাদি, বলছি যদি খুব রাগ না কর একটা কথা ভেবে দেখবে?— সমাধিতে আমরা পৌঁছালাম কী করে? কে ছুটে গেছিল সেদিকে? কার কথা শুনে আমাদের প্রথম মনে হয়েছিল তার ভিতর কিছু থাকলেও থাকতে পারে?”

“আমাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা কর না।” হাত দিয়ে মুখ ঢেকে উত্তর দিল সুনন্দা।

“কিন্তু এসব করে ওর লাভ কী?” জিজ্ঞেস করল মুকেশ।

“বলছি, কারণ এলিজাবেথ মসগ্রুপের ডায়েরিটা দরকার ছিল ওর। সেই দেবতাকে জাগানোর পদ্ধতিটা লেখা আছে ওতে। চার্চের ফাদারের কাছে পাওয়া লীলাবতী দত্তের ছবিটা থেকে আমরা জানতে পারি ছবিটায় সাংকেতিকভাবে কেউ রেসারেকশানের কথা বলেছে। প্রাচীন মত অনুসারে দেবতাকে জাগিয়ে তোলাকেই রেসারেকশান বলা হয়। মানুষের জেগে ওঠা নয়। আসলে দেবতাকে জাগিয়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কন্দৰ্প দত্ত ও পারসিলা মসক্রপের উত্তরসূরিদের। পারসিলা মসক্রপের কোনো এক বংশধর যেকোনো কারণেই হোক উত্তরসূরি রেখে যেতে পারেনি। ফলে সে অন্য শাখার বংশধরদের ডায়েরিটা কোথায় রাখা আছে সেই সংকেত দিয়ে যেতে চেয়েছিল। কোথায় গেলে নির্দেশ লেখা ডায়েরিটা পাওয়া যাবে। সেভাবেই পারসিলার আর এক বংশধর কাশীনাথ পায় ডায়েরিটা, তার কাছ থেকে ডায়েরিটা পায় মতীন – কাশীনাথের ছেলে, এবং মতীনের কাছ থেকে তার মেয়ে…” মেঝেতে পড়ে থাকা তুলির শরীরের দিকে তাকায় পায়েল

“তুলি তাহলে পারসিলার বংশধর?… মানে মতীনের… সন্তান?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ। মতীন এখান থেকে চলে যায় কোনো চাকরি পেয়ে নয়। কঠিন রোগে ধরে তাকে। এদিকে সে জানে সে মরে গেলে পারসিলা মসক্রপের বংশের শেষ বাতি নিভে যাবে। তার বাড়িতে মাস তিনেকের একটি মেয়ে হয়েছে ততদিনে। কতগুলো ভাবনা ভাবিয়ে তোলে তাকে। যেভাবেই হোক মেয়েটিকে জমিদারবাড়ির ভিতরে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে তার হাতে তুলে দিতে হবে ডায়েরিটাও। বুদ্ধি খাটিয়ে একটা উপায় বের করল সে। পারসিলা মসক্রপের বংশধররা পূর্বপুরুষের স্মৃতি বহন করে। মেয়েটাও স্বপ্নে দেখতে পায় এলিজাবেথ মসক্রপের সমাধি। তাই সে জন্মগতভাবে এলিজাবেথ মসক্রপের সমাধিটা চিনবে। মতীন মরার আগে ডায়েরিটাকে তার প্রাচীন ঠিকানায় রেখে আসে। অর্থাৎ এলিজাবেথ মসক্রপের সমাধিতে।

সে জানতে পারে জমিদারবাড়ি যিনি লিজ নিয়েছেন তিনি নিঃসন্তান। একটি সদ্যজাত ফুটফুটে মেয়েকে দরজার কাছে পড়ে থাকতে দেখলে তিনি ফেলে দিতে পারবেন না। যেমন ভাবা ঠিক তেমনই কাজ করে মতীন।

যেহেতু তুলি অ্যাবান্ডান্ড চাইল্ড এবং নাথবাবুও বিবাহিত। তাই তাকে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না।

তুলির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু বিশেষ দৃশ্য ফুটে উঠতে থাকে তার চোখের সামনে। কখনও কখনও স্বপ্নের মধ্যে সমাধিটা দেখতে পায়। সে বুঝতে পারে কিছু একটা কাজ বাকি আছে তার। আমাদের জন্মের পর কেউ আমাদের হাসতে শেখায় না, কাঁদতে শেখায় না। কিন্তু আমরা হাসি কান্না নিজে থেকেই পারি। পূর্বপুরুষের অভিশাপ, যন্ত্রণা বা ভয়ানক কোনো ঘটনার ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতি আমাদের স্বপ্নে ফিরে আসতে পারে কোনো রহস্যময় উপায়ে। একে বলে এপিজেনেটিক মডিফিকেশান।

যাই হোক, মতীন জানত বড় হবার পর একদিন না একদিন তুলি নাথবাবুর মেয়ে হিসেবে এই জমিদারবাড়িতে ফিরে আসবেই। কিন্তু মতীনের হিসেব অনুযায়ী যতটা বড় হবার কথা ততটা বড় হবার আগেই একটা দুঃসংবাদ আসে। তুলি তার বাবার থেকে শুধু পারসিলা মসক্রপের রক্তই পায়নি। সেই সঙ্গে আরও একটা মারণ রোগের জীবাণু কন্দর্প দত্তের রক্তের দাগ ধরে এসেছিল তার শরীরে। বড় হওয়া অবধি সে বাঁচবে না, এদিকে ভূপতি দত্তের বংশধরকে খুন করতে হবে তাকে। সেটা দূর থেকে সম্ভব নয়। জানতে পারার পরেই তুলি এখানে আসার জন্যে মা-বাবাকে চাপ দেওয়া শুরু করে। তারা রাজিও হয়ে যান।

তুলি জানে অতীনকে সে খুন করবে। এই অবস্থায় খুনের দায় কারও ঘাড়ে চাপানো দরকার। ক্ষেত্রমোহনের ব্যাপারে কোনোভাবে জেনে সে সুনন্দার খোঁজ পায়। এবং ঠিক সেই কারণেই অন্যদের ছেড়ে সুনন্দার সঙ্গে এখানে আসতে সে রাজি হয়।”

“একটা ওইটুকুন মেয়ে এতকিছু ভাবল!” সনাতন এতক্ষণ পরে প্রথম প্রশ্ন করল।

পায়েল তার দিকে ঘুরে বলল, “আমাদের সবার ভিতরে একটা ছায়া আছে। তুলি যা করত সেটা তার সহজাত প্রবৃত্তি। তার শরীরের বয়স দশ হলেও যে ছায়াটা তার জিনের ভিতরে প্রোথিত আছে সে বেঁচে আছে কয়েক শতাব্দী ধরে।”

“কিন্তু সে অতীনকে খুন করল কেমন করে?”

“আমরা সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার পর মালতীর কাছ থেকে ওকে নিয়ে আসি। সে সময়েই ওর ঘুমটা ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতে ও বুঝতে পারে ডায়েরিটা আছে আমাদের কাছে। সুনন্দাদির কাছে ছিল তুলি। ওঘরেই ছিল ডায়েরিটা। সেটা খুঁজে বের করে নির্দেশগুলো পড়ে তুলি। আগেই বলেছি সেগুলোর ভাষা ওর কাছে অচেনা নয়। তারপর ঘর থেকে কয়েকটা দলা পাকানো কাগজ নিয়ে বেরিয়ে আসে। নির্দেশ মতো সেই প্রাচীন দেবতাকে জাগিয়ে তোলে, এবং অতীনের ঘরের জানালা দিয়ে সেই কাগজ ছোঁড়ে অতীনের গায়ে। সে জেগে উঠে জানালার দিকে তাকিয়ে তুলিকে দেখতে পায়। তুলি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। সে ঘর খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাইরে এসে তুলির পিছন পিছন রান্নাঘরে যায় সে। সম্ভবত কিছু একটা দেখাবে বলেছিল তুলি। অতীনকে রান্নাঘরের কোনো একটা বাসনের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে, সেখানে প্রতিফলনে নিজের বদলে সেই ছায়াঢাকা মুখ দেখতে পায় অতীন। সেটা ভালো করে দেখতে গিয়েই একটু একটু করে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সে। নিজের আত্মার উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। বাকিটা আপনারা জানেন।”

এতক্ষণ প্রথম উঠে দাঁড়ায় সুনন্দা। তার মুখে একটু আগের হিংস্রতাটা কমে আসছে একটু একটু করে। পায়েলের দিকে না তাকিয়েই সে বলে, “আর ওর ইনহেলারটা তবে কে লুকালো?”

“ও নিজে… অন্দরমহলের কাছ থেকে কেউ ডাকেনি ওকে। সেদিন ঘরে কোনো নারীমূর্তিকে দেখতে পায়নি ও। কথাগুলো বলে ও শুধু এটা আমাদের মনে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিল যে আমরা এলিজাবেথ মসগ্রুপের সমাধি খোলার আগেও দেবতা এ বাড়ির আনাচে কানাচেই ছিল। রেসারেকশানটা ঠিক কখন হয়েছে সেটা কেউ জেনে ফেললেই এ রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।”

“কিন্তু তুমি এসব জানলে কেমন করে?”

খোলা জানালার দিকে সরে এসে দাঁড়ায় পায়েল। বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলে, “তুলির উপর সন্দেহ হয়নি আমার। হবার কথাও নয়। আমার একটা খটকা লেগেছিল রেসারেকশানের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার পর। ইতিহাসের আড়াল থেকে কেউ কোনো একটা গন্তব্যে আমাদের পৌঁছে দিতে চায় সংকেতের মাধ্যমে। অথচ একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে সে যেন থেমে গেছে। ডায়েরির লেখা যদি আমরা নাই পড়তে পারি তাহলে সেটা আমাদের হাতে পৌঁছে দিয়ে কার কী লাভ হল?

আমার প্রথম মাথায় আসে যে এও হতে পারে ডায়েরিটা আমাদের হাতে নয়, অন্য কারও হাতে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে দেওয়া ছিল সংকেতগুলো। কে সে?

আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে জানতে পারি যে প্রাচীন ধর্মের ক্ষেত্রে রেসারেকশান মানে মানুষকে জাগিয়ে তোলা না। কোন অপূর্ণ কাজ শেষ করার জন্যে ঈশ্বরকে সমন করা।

ঠিক এই সময়ে পুরনো কতগুলো কথা আমার মাথায় আসে। ডাকাতদের যেদিন হত্যা করা হয়েছিল সেদিন এক নারীমূর্তিকে দেখতে পাওয়া গেছিল। সেই কি তবে সেই প্রাচীন দেবতা? হতে পারে, কিন্তু সেখানেও একটা সমস্যা আছে। সত্যি যদি এলিজাবেথ মসক্রপের সমাধির সঙ্গে রেসারেকশানের কোনো সম্পর্ক থাকে তাহলে আমরা সমাধি খোলার আগে তুলি এই জমিদারবাড়িতে তাকে দেখতে পেল কী করে?

এক্ষেত্রে প্রথমে যে কথাটা আমার মাথায় আসে তা হল তুলি ভয়ে ভুল দেখেছে। সুনন্দাদির থেকে জানতে পারি যে এখানে আসার দিনই উত্তরের অন্দরমহল থেকে কেউ ডাকছিল তুলিকে। সেটা তো ভুল দেখা হতে পারে না।

আমার প্রথম তুলির উপরে সন্দেহ হয় একটা কাগজ দেখে। অতীনের ঘরের মেঝেতে যে কাগজটা পড়েছিল তার উপর তিনটে শব্দ লেখা ছিল— তার চোখের তারায়। অর্থাৎ তুলির বলা এবং সেই ডাকাতদের বলা, নারীমূর্তির কথা বোঝাতে চেয়েছে কেউ। কে হতে পারে? সুনন্দাদি? লেখাটা তুমি লিখেছিলে তো?”

এই প্রথম মাথা তোলে সুনন্দা। মাথাটা উপরে নিচে নড়ে ওঠে অল্প, বলে, “হ্যাঁ। ওনাদের সামনে কথাটা বলার পর নিজেই ভাবছিলাম কথাটা নিয়ে। সে জন্যেই হয়তো একফাঁকে লিখেছিলাম কথাটা খাতায়। পরে যখন দেখলাম ওটা অতীনের ঘরে পাওয়া গেছে তখন মনে হল পুলিশ যদি জানতে পারে ওটা আমার লেখা তাহলে সন্দেহটা আরও বেশি করে আমার উপরে পড়বে।”

“অর্থাৎ কেউ সমস্ত সন্দেহটা সুনন্দাদির উপরে এনে ফেলতে চাইছে। এক মুহূর্তের জন্যে সন্দেহ আমিও করেছিলাম। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটা কথা মাথায় আসে। ‘তার চোখের তারায়’ এই কথা তিনটে সুনন্দাদি বলেছিলেন শশাঙ্কদা এবং ক্ষেত্রমোহনবাবুকে, এবং সেই কথাটা অতীনের ঘরে পাওয়া যাওয়ার মানে কেউ আবার সেই নারীমূর্তির মিথটাকে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছে। সেজন্যেই সুনন্দাদির লেখা কাগজ থেকে লেখাগুলো ছিঁড়ে সেগুলো দলা পাকিয়ে ডেকেছে অতীনকে। সুনন্দাদির ঘাস কার অবাধ গতিবিধি?

বারবার সূত্রগুলো তুলির দিকে নির্দেশ করছিল। আমরা কফিন খোলার আগেই যে সেই দেবতার অস্তিত্ব জমিদারবাড়িতে ছিল সেটা রেকলেসলি বোঝাতে চেয়েছে তুলি। কারণ মসক্রপের সমাধিটা যে এই খুনগুলোর সঙ্গে যুক্ত সেটা সবাই জেনে যাক এটা সে চায়নি। আবার যেহেতু তার নিজের পক্ষে সমাধি খোলা সম্ভব নয় তাই কারও সাহায্যেই খুলতে হবে। দুটো দিক রাখতেই এই ব্যবস্থা।”

এতক্ষণে সবার চোখ গিয়ে পড়েছে মালতীর দিকে। সে তুলিকে মেঝের উপরে শুইয়ে তার মাথার কাছে বসে একটা ক্ৰমাগত আঙুল বুলিয়ে চলেছে তুলির কপালে। মালতীর নাক থেকে নেমে আসছে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত। বারবার ক্লান্তিতে অথবা যন্ত্রণায় চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে তার। সবাই চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে গিয়েছিল সেদিকে। সনাতন প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল তার উপরে। পায়েল একবার পিছন ফিরে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “একটাই অনুরোধ আছে শুধু, আজ এই ঘরে আপনারা যা দেখছেন, তা বাইরে গিয়ে আর মনে রাখবেন না। এখানে কেউ দোষী নয়। কেউ কারও কোনো ক্ষতি করতে চায়নি। মালতী যদি সফল হয় তাহলে আমরা আবার তুলিকে ফিরে পাব হয়তো। এটা করতে ও প্রথমে রাজি হয়নি। শেষে শুধুমাত্র তুলির কথা ভেবেই করছে।

“কিন্তু কী করছে ও?” শশাঙ্ক কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে।

“ওর পূর্বপুরুষের জিনও ওকে এক আশ্চর্য উপহার দিয়ে গেছে। সেটা যে সবসময় কাজ করবে তার মানে নেই। যদি করে তাহলে আপনাদের সঙ্গে সঙ্গে আমিও টোয়েন্টিফাস্ট সেঞ্চুরির সব থেকে বড় ওয়ান্ডারটা দেখে যাব এখান থেকে।”

“ওর পূর্বপুরুষ মানে?” শশাঙ্ক জিজ্ঞেস করে।

“মানে সেই প্রাচীন উপাসকরা। সে ধর্মের উপাসনা নিষিদ্ধ ছিল বলে ইংরেজ আগ্রাসনের পরেই জমিদারবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয় তাদের। তবে সবাই পালাতে পারেনি। পুকুরের নিচের সুড়ঙ্গের ভিতরে সমাধি হয় তাদের। পূর্বপুরুষের সমাধিক্ষেত্র সেই অন্ধকার সুড়ঙ্গটাই স্বপ্নে দেখতে পেত মসক্ৰপ বোনেরা। মালতীও সেই উপাসকদেরই বংশধর।”

রুদ্ধশ্বাসে মালতীর দিকে তাকিয়ে থাকে সবাই। এই সুযোগে সুনন্দার দিকে একটু সরে আসে পায়েল। তারপর নিচু গলায় বলে, “চল বাইরে যাই।”

“না আমি তুলিকে উঠে বসতে না দেখে যাব না।” হাত দুটো বুকের কাছে জড়ো করে বলে সুনন্দা।

“তুমি এখানে থাকলে ক্ষতি বই লাভ হবে না। ওকে ওর কাজ করতে দাও। বাইরে এসো।”

তুলির শরীরটা এখনও আগের মতোই পড়ে আছে। সেদিকে আর একবার দেখে নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে দু’জনে। এতক্ষণে বাইরে গ্রীষ্মের বিকেলের আকাশের কনে দেখা রঙে সেজেছে জমিদারবাড়ি। বহুদূর থেকে সন্ধের ঘণ্টা বাজার শব্দ ভেসে আসছে। বাইরে থেকে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল ওরা দু’জনে। পায়েল পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরাল। তারপর সুনন্দার দিকে ফিরে বলল, “চিন্তা করো না। মালতী কিছু একটা করবে।”

“ওকে বিষ দেওয়ার কী দরকার ছিল?” ভারি গলায় বলে সুনন্দা।

“ওর ভিতরে যা আছে সেটাকে টেনে বের করে ফেলতে গেলে এ ছাড়া উপায় ছিল না। মালতী এই বাড়িতে কিছুর একটা উপস্থিতি অনুভব করে।  অনেকটা ছায়া জাতীয়। আমার মনে হয় সে ছায়াটাকে তুলির ভিতর থেকে একমাত্র ওই মুক্ত করতে পারবে। কি অদ্ভুত ব্যাপার, তাই না?”

“কীসের অদ্ভুত?”

“পারসিলা মসক্রপ আর মালতী দু’জন একই পূর্বপুরুষের বংশধর, অথচ একজন দুশো বছর আগে জাগিয়ে তোলা অভিশাপকে মুক্তি দিচ্ছে আর একজন…।”

“আর তোমার পূর্বপুরুষ?” সুনন্দা মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করে।

সিগারেটে বড়সড় একটা টান দেয় পায়েল, “জানি না। একটা পাঁচ বছরের মেয়েকে বন্ধ ঘরে আটকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মেরে ফেলার মতো পাপ করেও অনুশোচনা হয়নি তার। আমার শরীরে তার রক্ত অস্বীকার করি কী করে? কিন্তু আমার মনে হয় আমরা ইতিহাসকে বড্ড বেশি পারসোনালি নিয়ে থাকি। সমস্ত সাদা চামড়ার মানুষ আমার দেশের শত্রু, মীরজাফরের সমস্ত বংশধর বিশ্বাসঘাতক, রবীন্দ্রনাথের সব উত্তরপুরুষ ভালো কবিতা লিখতে পারে, এসব আমাদের সোশ্যাল ট্যাবু। আমার মতে কারও রক্তে তার পূর্বপুরুষের নাম লেখা থাকে না। রক্ত হল একধরনের লাল তরল, যা ক্রমাগত শরীর থেকে বেরোতে থাকলে মানুষের মৃত্যু হয়।”

এতক্ষণে একটু শান্ত হয় সুনন্দার মনটা, সে কিছু ভেবে বলে, “তাহলে টেবিলের উপরে সংকেতগুলো কে এঁকেছিল বলতো?”

“যতদূর সম্ভব পারসিলা মসক্রপের কোনো বংশধর। একটা বংশের যে কোনো জিন সব সিরিংসের উপর প্রভাব ফেলে না। এক ভাইয়ের কুড়ি পেরোতেই টাক আর এক ভাই বুড়ো বয়স অবধি কেশধর। যার উপর এই জিনের প্রভাব আছে সে সম্ভবত কিছু দৃশ্য দেখত পেত। স্বপ্নের মতো। এই এলিজাবেথ মসক্রপের সমাধিটা, মৃত্যুদিন, চিহ্নগুলো। সেগুলো এই ছবিতে দেখতে পেলেই সে সমাধিটার সন্ধান পাবে। সে জন্যেই সমাধির ভিতরে রাখা হত ডায়েরিটা। এক পুরুষ আর একপুরুষকে না দেখে, নে জেনে, না চিনে, তার জন্মের আগে থেকেই সন্ধান দিয়ে যায় ডায়েরিটার। তুলি শুধু আমাদের ব্যবহার করে ডায়েরিটা অবধি পৌঁছাতে চেয়েছিল। তাকেই চাবিটার সন্ধান দেওয়া ছিল উদ্দেশ্য। আমাদের দেওয়া নয়।”

“কিন্তু ওর হাঁপানিটা?”

“তুলি শুধু পারসিলা মসক্রপের সন্তানই তো নয়, সেই সঙ্গে কন্দর্প দত্তের বংশধর। তার বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে ধরা পড়বেই এতে আর আশ্চর্য কি?”

ভিতর থেকে একটা চাপা শব্দ শুনতে পায় দু’জনে। সুনন্দা পায়েলের হাত ধরে টান দেয়। পায়েল যেতে চায় না। সিগারেটরা দেখিয়ে বলে, “আমি যাব না। তুমি দেখে এসো।”

ঘরের ভিতর ঢুকে মিনিট তিনেক পরেই বেরিয়ে আসে সুনন্দা। একা নয়। তার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে একটা বছর দশেকের মেয়ে। তার মুখ চোখে ক্লান্তির ছায়া নেমেছে। অন্য কোনো ছায়া নেই সেখানে।

চারপাশে একবার চোখ মেলেই সে বন্ধ করে নেয়। হাতটা ভাঁজ করে সুনন্দার গলাটা জড়িয়ে ধরে আবার।

তার পিছন পিছন সনাতনকে আর মধুবাবুকে দেখা যায়। তিনজনেই এগিয়ে আসে পায়েলের দিকে। পায়েল তুলির মাথায় একটা হাত রেখে সনাতনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “মালতী ঠিক আছে?”

“শুয়ে পড়েছে। শরীররটা ভালো লাগছে না।”

“লাগার কথাও নয়।”

কথাটা বলে তুলির দিকে তাকায় পায়েল, তারপর আদুরে গলায় বলে, “কিরে শরীর ঠিক লাগছে তো?”

“আমি জল খাব।” বিড়বিড় করে বলে তুলি। কথাটা শুনেই হেসে ফেলে পায়েল। তারপর ভিতরের ঘর থেকে একটা সবুজ বোতল তুলে এনে দেয় তার হাতে। লাল রং লেগে নেই সেটায়।

“আমার মনে হয় আর সমস্যা হবে না। তবে সেকথা নিশ্চিত করে। একজনই বলতে পারবে।”

“কে?” সুনন্দা জিজ্ঞেস করে।

“মালতী।”

আবার ঘরের ভিতরে গিয়ে ঢোকে পায়েল। মেঝের একপাশে পড়ে আছে মালতী। চোখ দুটো বন্ধ। বুকটা একটু বেশি জোরেই ওঠানামা করছে। তার পিঠে একটা হাত রেখে মিহি স্বরে ডাকে পায়েল, “মালতী, শুনছো?”

চোখ খোলার চেষ্টা করেই আবার বন্ধ করে নেয় মালতী। তারপর ধীরে সুস্থে মাথা নাড়ায়। দু’পাশে।

একটা অমলিন হাসি খেলে যায় পায়েলের মুখে। নরম গলায় বলে, তোমার একটু সুস্থ লাগলে শশাঙ্কদার সঙ্গে উঠে এসো। আমরা আপাতত সুনন্দাদির ঘরে আছি।”

মালতী মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানাতে পায়েল উঠে আসে। তারপর ফাঁকা বারান্দাটা পেরিয়ে উলটোদিকে সুনন্দার ঘরে চলে আসে। প্রায় সবাই এখন এখানেই জড়ো হয়েছে। ঘরে ঢুকেই আগে আয়নার দিকে এগিয়ে যায় পায়েল। তারপর টেবিল থেকে চিরুনি তুলে নিয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে, “বাবা রে বাবা! আজ তিনদিন হল আয়নায় নিজের মুখ দেখতে পাইনি। এভাবে থাকা যায়? শালা মুখ ছিল, না রাফ খাতার পিছন পাতা?”

“ও! ওই জন্যে মুখ চোখের ওরকম দশা ছিল। আমি ভাবলাম ভেবে ভেবে ওরকম করেছো।” মজার গলায় বলল সুনন্দা।

বিছানার উপরে একটা বালিশ রেখে তার উপরে হেলান দিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে তুলিকে। সে চারপাশে চোখ মেলে সবাইকে দেখে এতক্ষণ কী হল সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে। তবে কতটা বুঝতে পারছে সেটা সবার ধারনার বাইরে। মাঝে মাঝে একটা দুটো প্রশ্ন করছে মধুবাবুকে। তিনি যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ক্ষেত্রমোহন আর গিরিজা ফিরে গেছেন নিজেদের ঘরে। যাই হোক না কেন এ বাড়িতে আর থাকতে চান না তারা। সুনন্দা মধুবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুলির বাবা-মা’কে আর এসব বলার দরকার নেই।” মধুবাবু সম্মতি জানান।

“কী জানাবে না?” তুলি অবাক গলায় প্রশ্ন করে।

তার থুতনিতে একটা হাত রেখে সুনন্দা বলে, “এই যে তুমি এখানে এসে একটুও পড়াশোনা করনি, শুধু দাবা খেলে কাটিয়েছ। সেটা বলব না আমরা।”

কথাটা শুনে খুশিই হল তুলি। পায়েল তার দিয়ে সরে এসে ভুরু কুঁচকে বলল, “এখন একদান হবে নাকি রানিমা? নাকি রানি ক্লান্ত আছে বলে সেনাবাহিনী মাঠে নামবে না?”

“খেলব।” এক কথায় উত্তর দেয় তুলি। পায়েল নিজেই দাবার বোর্ডটা তুলির সামনে দিয়ে সুনন্দার কানে কানে ফিসফিস করে বলে, “ভুলভাল চাল দিয়ে জিতিয়ে দিও। রেপুটেশান খারাপ করার মানে হয় না।”

তুলি আজ সাদা নেয়। সনাতন পায়েলের দিকে এগিয়ে এসে চাপা গলায় বলে, “আমার মেয়েটার কী হবে দিদি?”

‘কী হবে আবার! ওতো ঠিকই আছে।” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে পায়েল।

“এরপর লোকে যদি জানতে পেরে যায়?”

তাকে আশ্বস্ত করে পায়েল, “কেউ জানতে পারবে না। এখানে যারা আছে কেউ কিছু বলবে না। তবে ওসব আর করতে না যাওয়াই ভালো। ওর শরীর হয়তো নিতে পারবে না।”

“তোমাকে আমি যতটা ভেবেছিলাম তার থেকে তুমি অনেক বেশি বুদ্ধিমান।” পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে নীলাদ্রি। সেই লাজুক হাসিটা খেলে যায় পায়েলের মুখে। চকচক দাঁতগুলো সরু ঠোঁটের ফাঁকে একবার দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায়। হালকা সুরে বলে, “আপনি যাকে যা ভাবেন তার অনেকেই আসলে তার থেকে অনেকটা বেশি।”

আড় চোখে তার দিকে একবার তাকায় সুনন্দা। একবার নীলাদ্রির দিকে। তারপর আবার মন দেয় দাবার বোর্ডে।

তুলি এতক্ষণে মন্ত্রী এগিয়ে দিয়েছে। সুনন্দা ইচ্ছা করেই সামনের একটা বোড়ে বেশ কিছুটা সরিয়ে ফেলছে রাজার সামনে থেকে। সেদিক লক্ষ করেই মন্ত্রী আর ঘোড়া একসঙ্গে এগিয়ে দেয় তুলি। তার সব ক্লান্তি মুহূর্তে মুছে যায় মুখ থেকে–“চেকমেট।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *