দ্বাদশ অধ্যায়
বারান্দায় রাখা ছোট চেয়ারে বসেছিলেন মধুবাবু। মাঝে মাঝে হাতটা তুলে কপালের ঘাম মুছছেন তিনি। বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছে তাকে। সামনের চেয়ারে বস কেশব শর্মা আর তার পাশে বসা মুকেশ খাসনবীশ একদৃষ্টে চেয়ে আছেন তার দিকে। এর আগে মধুবাবু পুলিশের জেরার সামনে পড়েননি কোনোদিন। বিশেষ করে বাড়ির সবাইকে ছেড়ে পুলিশ যে কেন তাকে নিয়ে পড়েছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।
“আপনার নাম মধুসূদন বাগ?”
“আজ্ঞে হ্যাঁ, স্যার।”
“না না, স্যার ট্যার বলার দরকার নেই।” হাত তুলে বাধা দিলেন কেশর শর্মা, “আমরা একরকম দরকারেই আপনার কাছে ছুটে এসেছি। আপনি সাহায্য না করলে আমাদের ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”
“এই খুনের ব্যাপারে আমি আর কী সাহায্য করব বলুন। সবই তো বলেছি আপনাদের। আমি একটু চায়ের খোঁজে রান্নাঘরের দিকে….”
“এই খুনের ব্যাপারে নয়।” এবার মুকেশ বলে ওঠে, “অন্য একটা খুনের ব্যাপারে সাহায্য দরকার আপনার।
“কোন খুন?” মুকেশের মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকান মধুবাবু। “ঠিক খুন নয়। শশিভূষণ সরকার আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন একবার প্রায় দশ বছর আগে। মনে আছে?”
আর একবার কপালের ঘাম মুছে মাথা নাড়লেন মধুবাবু। তারপর ভীরু চোখে তাকালেন শর্মার দিকে, “সেই ভদ্রলোক এখান থেকে ফেরার কয়েক মাসের মধ্যে খুন হন। আমাদের মনে হচ্ছে অতীনের মৃত্যুর সঙ্গে শশিভূষণ সরকারের খুনের কোনো লিঙ্ক আছে।”
“কিন্তু আমি তাকে ভালো করে চিনতাম না স্যার। একদিন এসেছিলেন। প্রথমে শশাঙ্কের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শশাঙ্ক বলেছিল নাথবাবুর সঙ্গে কথা বলতে। নাথবাবুকে আমি ফোন করতে তিনি আমাকেই বললেন ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে। আমি একতলাতেই বসাই। সেখানেই কথা হয়।”
“ঠিক কী নিয়ে কথা হয় বলুন তো?”
একটু ভাবলেন মধুবাবু। আলপটকা কিছু বলে ফেলে মোটেই বিপদে পড়তে চান না তিনি। কোন কথার যে কি মানে বেরিয়ে যায়, মাথা তুলে তিনি বলেন, “একটা কাগজ দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন ওঁর কাছে নাকি এ বাড়ি দেখাশোনা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে।”
“সে কাগজ দেখেছিলেন আপনি?”
‘সেরকম ভালো করে নয়। আসলে নাথবাবু আগে থেকেই আমাকে বলে রেখেছিলেন যে কাগজ যাই হোক না কেন আমি যেন লোকটাকে নাথবাবু এখানে থাকাকালীন আসতে বলি। তাই বলেছিলাম, কিন্তু আর আসেনি। এখন বুঝতে পারছি…”
“শুধু কাগজ দেখালেন? আর কিছু বললেন না শশিভূষণ?”
“হ্যাঁ। একবার নলীনি ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে চান।”
“তিনি কে?”
“এখানকার গেস্ট ছিলেন। তার কিছুদিন পরে উনি সুইসাইড করেন।”
“এগেইন।” দু’জন পুলিশ অফিসার একবার চোখাচোখি করে। তারপর বলেন, “তারপর করেছিলেন দেখা?”
“হ্যাঁ। আমিই ওর ঘরটা দেখিয়ে দিয়েছিলাম। তবে ভিতরে কী কথা হয়েছিল সেটা জানি না।”
টেবিলের উপরে ঝুঁকে পড়ল মুকেশ। থুতনির তলায় হাতের তালু রাখল, “সেদিনের পর আর শশিবাবুর সঙ্গে দেখা হয়নি আপনার?”
“না। উনি আমাকে না জানিয়েই চলে যান।”
“আর নলিনী ঘোষের সঙ্গে?”
“কথা সেরকম হয়নি। তবে ওকে দেখে মনে হত একটু যেন ভয় পেয়েছে। ঘর থেকে খুব একটা বেরোতে চাইত না। “
“এর ঠিক কতদিন পরে সুইসাইড করেন তিনি? “
“মাস দুয়েক হবে।”
“আপনি নিজেই লাশ উদ্ধার করেন?”
“হ্যাঁ।”
সেসময়ে আপনি ছাড়া এ বাড়িতে আর কে কে ছিল?”
একটু ভাবেন মধুবাবু, তারপর ধীরে ধীরে বলেন, “তখন যারা ছিল এখনও তারাই আছে। শুধু মতীন বলে একটি সিকিউরিটি গার্ড ছিল। যেদিন রাতে ভদ্রলোক সুইসাইড করেন সেদিন প্রায় সারারাতই আমি তার সঙ্গে গল্প করছিলাম।”
“তা এই মতীন ছেলেটি হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিল কবে?”
“তা ওই আত্মহত্যার ঘটনাটা ঘটার পর পরই।”
“সেকি! ভয় পেয়েছিল নাকি?”
হাসলেন মধুবাবু। তারপর ঘাড়ে হাত ঘষতে ঘষতে বললেন, “আজ্ঞে না না, সেরকম ছেলে সে ছিল না। তবে ভারী পড়াকু ছোকরা ছিল। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি ভালো লাগত না। চাকরির পরীক্ষা দেবে বলে রাতদিন ওর ঘরে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছিল। পেয়ে যেতেই ছেড়ে দিল।”
“সে ছাড়া আর কেউ সেদিন রাতে আপনাকে দেখেছিল?” উত্তরটা দেওয়ার আগে একটু থমকান মধুবাবু। দু’জনের মুখের দিকেই একবার দেখে নিয়ে বলেন, “আপনারা কি আমাকে সন্দেহ করছেন স্যার?”
“আরে না না।” হো হো করে হেসে ওঠেন শর্মা, “আসলে অন্য কেউ যদি দেখে থাকে তাহলে এটা বোঝা যাবে যে সে রাতে আপনারা দু’জন ছাড়া- আর কেউ জেগে ছিল কিনা।”
“না আর কাউকে দেখতে পাইনি আমি। সকাল চারটে নাগাদ আমি ফিরে আসি আমার ঘরে। কিন্তু ঘুম আসে না।”
“তা সেদিন হঠাৎ অত রাত অবধি গল্প করলেন যে? মানে রোজ তো করতেন না নিশ্চয়ই?”
“না তা করতাম না। সেদিন বোধহয় শরীরটা খারাপ হয়েছিল। তো বাইরে বেরিয়ে একটু খাওয়া খেতে বেরিয়েছিলাম। দেখলাম মতীন সিকিউরিটি গার্ডের শোবার ঘরে বসে আলো জ্বালিয়ে পড়াশোনা করছে। তার পাশে গিয়ে খানিক বসলাম। তারপর তার পড়াশোনা শেষ হতে গল্প শুরু হল।”
“তাও ক’টা থেকে ক’টা অবধি?”
একটু ভেবে চিনতে মধুবাবু বললেন, “এই ধরুন রাত দেড়টা নাগাদ আমি তার ঘরে যাই। আর ফিরি ওই চারটে নাগাদ।”
সময়টা একটা ছোট ডায়েরিতে লিখে নিয়ে ডায়েরিটা আবার পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন শর্মা। সময়টা পেন দিয়ে গোল করে রাখলেন। তারপর আবার চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন, “বেশ। এবার অতীনের কথায় আসি। সে যেদিন মারা যায় সেদিন রাতে আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন?”
“হ্যাঁ, ভালো ঘুম এসেছিল।”
“মাঝরাতে একবারও ভাঙেনি?”
“না” বলতে গিয়েও একবার থেমে গেলেন মধুবাবু। তারপর বারান্দার রোদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “একবার মনে হচ্ছে ভেঙেছিল ঘুমটা। তবে…”
“কোনো আওয়াজ শুনে?” কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রশ্ন করে মুকেশ। মধুবাবু কিন্তু মাথা নাড়ান
“উঁহু, একটা দুঃস্বপ্ন দেখে। এত ভয় পেয়ে গেছিলাম যে ধড়ফড় করে উঠে বসি বিছানায়। তারপর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে মুখে চোখে জল দিয়ে আসি। বিছানায় শুতে আবার ঘুমিয়ে পড়ি।”
“ক’টা নাগাদ মনে আছে?”
“নাঃ, ওইসময়ে ঘড়ি দেখার কথা কি মনে থাকে?”
“যখন উঠেছিলেন তখন কারও দরজায় টোকা দিয়েছিলেন? “
“টোকা! হঠাৎ টোকা দিতে যাব কেন?” আকাশ থেকে পড়লেন মধুবাবু। “হতেই পারে আপনি ভয় পেয়েছিলেন বলে কাউকে জাগিয়ে সঙ্গ পেতে চাইছিলেন।” মুকেশ স্বাভাবিক গলায় বলে।
মধুবাবুর মুখে অমায়িক হাসি ফুটে ওঠে, তিনি বলেন, “আপনি কি আমাকে বাচ্চাছেলে ভাবেন দাদা যে মাঝরাতে ভয় পেয়ে লোক ডাকব? ভয় পেয়েছিলাম বটে কিন্তু কাউকে ডাকাডাকি করিনি একবারও। মুখে জল দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি।”
“বেশ।” একটা বড়সড় নিশ্বাস নিয়ে বলেন কেশব শর্মা, “এবার আপনি আসতে পারেন। এতক্ষণ ধরে রাখলাম বলে আমরা ভীষণ দুঃখিত।”
“কি যে বলেন স্যার। যার যা কাজ। এবাড়িতে যদি এত বড় একটা কাণ্ড না ঘটত তাহলে আপনারা কি আর বেঁচে পড়ে এসব করতেন?” দেঁতো হাসি হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন মধুবাবু। তিনি বিদায় নেওয়ার পর কেশব পাশের দিকে ঘুরলেন, “লোকটাকে কেমন দেখলে?”
“যতটা ভীতু ও নিজেকে দেখাচ্ছে ততটা ভীতু নয়। তবে স্যার স্বপ্নটা কি দেখেছিল সেটা খুব জানতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু জিজ্ঞেস করা হল না। এত বড় বয়সে নিশ্চয়ই ভূতের স্বপ্ন দেখেননি।”
“যাই দেখুন না কেন, তার সঙ্গে আমাদের তদন্তর ‘যোগ নেই।”
“কে বলতে পারে, হয়তো কিছু যোগ পেলেও পাওয়া যেতে পারে।”
হেসে মাথা দোলালেন শর্মা, “ওসব ছাড়ো। তুমি বরঞ্চ এই নলিনী ঘোষের, মৃত্যুর টাইমটা কনফার্ম কর। ঠিক কখন দড়ি গলায় দিয়ে ঝোলেন তিনি?” ডায়েরিতে লেখা সময়টা দেখালেন শৰ্মা।
“সেটা হয়ে যাবে স্যার। বেশি সময় লাগবে না। এ থানারই কেস যখন।”
“আর এই মতীন বলে ছেলেটির খোঁজ কর একটু। সব যদি ঠিক থাকে। তাহলে মধুবাবুর বয়ানটা একটা ঠেকনা পাবে।”
“আপনি কি ওকে সন্দেহ করছেন?”
গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবতে ভাবতে শৰ্মা বললেন, “সন্দেহ নয়। তবে মুশকিলটা হল আমরা এখন অন্য কেসের রেফারেন্সে ঘটনাটাকে খুন বলে ভাবছি কিন্তু সেই সময়ে পুলিশ হয়তো সুইসাইড কেস বলেই ট্রিট করেছিল। ফলে সেরকম তদন্ত হয়নি। দেখা যাক কুড়িয়ে বাড়িয়ে যদি কিছু পাওয়া যায়।”
******
চার্চের ভিতরে ঢুকে আজ বেশ কয়েকজন লোককে দেখতে পেল পায়েল। আগের দিনের থেকে আর একটু বেশি সাজানো হয়েছে ভিতরটা। কাল রবিবার গেছে। প্রার্থনার দিন ছিল হয়তো। চার্চে ঢোকার আগেই হাতের সিগারেটটা বাইরে ফেলে দিয়েছে। তারপর বেশ কিছুক্ষণ একটা চিউইং গাম চিবিয়ে সেটাও ফেলে দিয়েছে।
আপাতত তার গায়ে একটা গোলাপি কুর্তি আর হালকা নীল জিনস। সবসময়ের সঙ্গী কাঁধের ব্যাগটা নেই। একটু আগেই স্নান করেছে বলে চুলগুলো পুরোপুরি শুকোয়নি।
প্রেয়ার রুমে ঢুকে একটা বেঞ্চে বসে পড়ল পায়েল। শান্তিনিকেতনে থাকতেও বেশ কয়েকবার চার্চে গেছে সে। এমনিতে ঈশ্বরে একেবারেই বিশ্বাস নেই তার। তবে এই প্রেয়ার রুমের ভিতরটা অনেক বড় আর ঠান্ডা। মনে হয় যেন ঠিক মানুষের শরীরের জন্যে বানানো হয়নি ঘরটা। হয়েছে এমন কিছুর জন্যে যা মানুষের শরীরের থেকে ঢের বড়, ঢের বেশি উঁচু। এইটুকু ভাবনা মাঝে মাঝে ভারি শান্তি দেয় ওকে।
বেঞ্চে বসে সামনের দেওয়ালে ঝুলন্ত যিশুর দিকে তাকাল সে। একটা মাঝবয়সী লোক পিয়ানোর ওপারে বসে আছে। কোনো একটা গসপেল বাজিয়ে চলেছে। সেটা ভালো করে শোনার চেষ্টা করল পায়েল। সুরটা চিনতে পারল। ‘গসপেল অফ জন’ বাজছে। গানের মধ্যে দিয়ে যিশুর কীর্তিকাহিনী তুলে ধরছে লোকটা। তার জলের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, জলকে সুরায় বদলে দেওয়া, জন্মান্ধ মানুষকে হাতের ছোঁয়ায় দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া, মৃত লাযারুসকে জাগিয়ে তোলা…”
একটু থেমে যায় পায়েল। প্রেয়ার রুমের আইল দিয়ে ফাদার রমেন এগিয়ে আসছেন। পায়েলের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হন তিনি। পায়েল একবার চোখের পাতা ফেলে, অল্প হাসে। ফাদার এগিয়ে আসেন তার দিকে, “আজ কীসের সন্ধানে? নতুন কোনো গ্রেভ?”
“না।” লাজুক হাসে পায়েল। “আজ ঈশ্বরের সন্ধান।”
“বাঃ, ধর্মে মতিগতি আছে তার মানে। সে যে ধর্মেই হোক না কেন। বিশ্বাসটাই আসল কথা।”
পায়েলের থেকে একটু দূরে বসে পড়েন ফাদার। তারপর সামনে মুখ ফিরিয়ে এক মনে গসপেল শুনতে থাকেন। পায়েলও সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ শোনার পরে বলে, “আচ্ছা, এই বিশ্বাস ব্যাপারটা কী থেকে আসে বলুন তো? মানে হঠাৎ করে কোনো কিছুকে বিশ্বাস করতে শুরু করব কেন আমি?”
“হঠাৎ করে কেন? তোমার মনের ভিতরই ঈশ্বর সংকেত দিয়ে যাবেন তোমাকে শুধু খুঁজে নিতে হবে।”
“কিন্তু যাদের সেই সংকেত চিনে নেওয়ার ক্ষমতা নেই তাদের তো কিছু ডেমন্সট্রেট করে দেখাতে হয়।”
“তুমি কীসের কথা বলতে চাইছ?” মুখ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে ফাদার।
পায়েল আবার অমায়িক হেসে বলে, “মানে মানুষ তো বেসিক্যালি সন্দেহপ্রবণ প্রাণী। তাকে কোনো কিছু বিশ্বাস করানো সোজা কথা নয়। কিছু একটা মিরাকল করে দেখাতে হয়।”
ফাদার এতক্ষণ মন দিয়ে গসপেল শুনছিলেন। সেটার মধ্যে এখন একটু বিরতি চলছে। তিনি একটু ঘুরে বসে বললেন, “যেমন এই লাযারুসের কথাই দেখ না…”
একচোট হেসে নিল পায়েল। সে আর কোনো পদ্ধতি জানুক না জানুক মানুষকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের ইচ্ছামতো প্রসঙ্গে এনে ফেলতে পারে।
“লাযারুসের কথা আমিও সিলেবাসে পড়েছি। কিন্তু এখন মনে পড়ছে না।” পায়েল জিভ কেটে বলল।
ফাদারকে দেখে মনে হল পায়েল ব্যাপারটা ভুলে যাওয়াতে খুশিই হয়েছেন তিনি। গল্পটা তার আদ্যপ্রান্ত জানা। হাতের ঘড়িটা একবার দেখে নিয়ে বলতে শুরু করলেন তিনি, “লাযারুস জন্মেছিল জেরুজালেম থেকে মাইলখানেক দূরে বেথানি নামের এক গ্রামে। সেখানে দুই বোনেদের নিয়ে সে থাকত। তো একদিন সে ভারি এক অসুখে পড়ল। এমন কঠিন অসুখ যে তা থেকে বেঁচে ওঠার কোনো সম্ভাবনাই রইল না।
এই সময়ে লাযারুসের অসুখের কথা যিশুখ্রিস্টের কানে গেল। তিনি শোনা মাত্র বললেন যে লাযারুস যত কঠিন রোগেই পড়ুক না কেন তিনি লাযারুসকে ভালো করে দেবেন। তিনি এক সঙ্গীকে পাঠালেন এই খবর লাযারুসের ফ্যামিলিকে জানাতে। কিন্তু মুশকিল হল কোনো কারণে যিশুর সেখানে পৌঁছোতে দিনতিনেক দেরি হয়ে গেল। এর মধ্যে লাযারুস গেল মরে এবং তার বোনেরা মিলে তাকে কবর অবধি দিয়ে দিল।
চতুর্থদিন যিশু সেখানে পৌঁছে লাযারুসের খোঁজ করতে তাকে পেলেন না। তার বোনেরা জানাল যে চারদিন হল সে মারা গেছে এবং তাকে আর কোনো ভাবেই ভালো করা যাবে না। কিন্তু যিশু বললেন একবার যখন ঈশ্বর চেয়েছেন লাযারুস বেঁচে উঠুক তখন সে উঠবেই।
যিশু লাযারুসের কবরের সামনে গিয়ে মনে মনে কিছু বললেন এবং প্রার্থনা করলেন। তার কিছু সময় পরেই লোকে অবাক হয়ে দেখল, যে কাপড় পরিয়ে লাযারুসকে কবরে দেওয়া হয়েছিল সেটা পরেই অক্ষত শরীরে হেঁটে কবর থেকে বেরিয়ে আসছে লাযারুস।
লাযারুসের বোনেরা সেইখানেই যিশুকে ঈশ্বরের সন্তান বলে মেনে নেন এবং এই ঘটনার পরেই যিশুর নাম মূলত ছড়াতে শুরু করে। তার কথা রাজার কানে যায় এবং তুমি যে মিরাকেলের কথা বলছ সেই মিরাকেলটি ঘটে।
দুটো হাত বুকের উপরে আড়াআড়ি রেখে মন দিয়ে শুনছিল পায়েল। এবার সে হাত খুলে কয়েক সেকেণ্ড সিলিঙের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, “তার মানে মরা মানুষকে জাগিয়ে তোলা এত বড় একটা মিরাকেল যা মানুষকে রাতারাতি ঈশ্বরে পরিণত করতে পারে?”
“তা ঠিক নয়, তবে যারা মনের চোখ দিয়ে মিরাকেল দেখতে পায় না তাদের জাগতিক চোখকে খোলার জন্যে মিরাকেল তো দরকার হয়।”
কয়েকে সেকেণ্ড চুপ করে থাকে পায়েল। কীসের হিসেব করে নেয়। একটু দম নেয়, আচমকাই উজ্জ্বল চোখে ফাদারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “রাতে সেই মিরাকেল উদ্ধারের জন্যেই আপনি জমিদারবাড়ি যেতেন। আর সেটা একজন মানুষের জাগতিক চোখ দেখে ফেলেছে জানার পর থেকে আর যাচ্ছেন না, তাই তো?”
ফাদারের চোখে ছায়া নামতে বেশি সময় লাগল না। কয়েক পলকের জন্যে তার মুখের উপর রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। দুটো হাত মুঠো হয়ে এল। গলাটা তবু শান্ত রাখলেন তিনি
“তোমাকে কে বলেছে এসব?”
“ধরে নিন ঈশ্বর। সামনা-সামনি নয়। ঠিক যেভাবে মনের ভিতর সংকেত দেন তিনি, সেইভাবে।”
“বুঝতে পেরেছি…” চাপা গলায় গরগর করলেন ফাদার, “কী চাও তুমি?”
“প্রথম দিন যা জানতে চেয়েছিলাম আজও তাই চাই। শুধু আজ আপনার মিথ্যে বলার লাইফ লাইনটা নেই। লেভিক্বীকাস মনে আছে আপনার? ১৯; ১১? ডু নট স্টীল, ডু নট লাই, ডু নট ডিসিভ ওয়ান এনাদার। লেটস নট ডিসিভ ওয়ান এনাদার…”
“আমি চাইলে তোমাকে এখান থেকে বের করে দিতে পারি।”
“না, পারেন না, এটা আপনার বাড়ি নয় স্যার। আমি জানি আপনি • জমিদারবাড়ির ইতিহাসের খানিকটা অন্ধকার অধ্যায় জানেন। সেই জ্ঞানের আলো একটু আমার উপরেও ছড়িয়ে দিন।”
“যদি না বলি কী করবে তুমি?”
“আপনি ব্যাপটিস্ট চার্চের ফাদার হয়েও অকাল্টের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। ব্যাপারটা লোক জানাজানি হলে ভালো হবে কি?”
এবার একটু নিস্তেজ দেখায় ফাদারকে। চারপাশটা একবার দেখে নেন তিনি। তারপর বেঞ্চ থেকে উঠে পড়ে বলেন, “ঠিক আছে। যা জানতে চাইছ সবই বলব, তবে এখানে এসব বলা উচিৎ হবে না। এ জায়গাটা পবিত্র। বাইরে এসো।”
চার্চ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে দু’জনে। রোদে রাঙা ঘাসের জমি ছাড়িয়ে অনেকটা দূর চলে আসে। লোকজন প্রায় চোখে পড়ে না এখানে।
একটা বেঞ্চের উপরে এসে বসে পড়ে ওরা। পায়েল সিগারেট ধরায়। এতক্ষণ খেতে ইচ্ছা করলেও ধরাতে পারেনি। এবার আরাম করে একটা ধরিয়ে মুখে দিয়ে সে বলে, “আমার যদ্দুর মনে হয় আপনি পুরানো কিছু কাগজপত্রের রেকর্ড খুঁজে পেয়েছিলেন।”
“কী করে বুঝলে?” ফাদারের মুখে একটু আগের ছায়াটা মিলিয়ে এসেছে এতক্ষণে। তার বদলে রোদ এসে পড়েছে।
“এখানে যে গ্রেভগুলো আছে তার অনেকগুলো দেখে বোঝা যায় সেগুলো ব্যাপটিস্ট ক্রিশ্চানদের। সাধারণত বাচ্চাদের ব্যাপটিসজম হবার পরে তাদের নামধাম, পরিবারের খতিয়ান চার্চের কাছে ধরা থাকে। অথচ আপনি বললেন আপনার কাছে কিছুই নেই। এতদিন আগের ব্যাপার বলে বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম কিন্তু কাল আপনার গতিবিধি জানার পর বুঝলাম সেটা গল্প দিয়েছিলেন।”
ভুরু কুঁচকে মাথা নাড়েন ফাদার, বলেন, “কাগজটা যখন প্রথম পাই তখন ভেবেছিলাম অসঙ্গতিটা মুছে ফেলব। কী দরকার? দুটো শতাব্দী কেটে গেছে, এরকম কত দগদগে ক্ষতই কালো কাপড়ে ঢেকে রাখে ইতিহাস। সেভাবেই একসময় মিলিয়ে যাবে হয়তো। কিন্তু মানুষ তো জন্মত পাপী। অলৌকিক শক্তির টান তাকে রাতারাতি নরকের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আমাকেও তাই নিয়ে গেল।
একদিন রাতে মনে হল একবার না হয় গিয়ে দেখে আসি। সত্যি সেরকম কিছু আছে কিনা। সত্যি কি মৃত মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায়? কী তার নিয়ম? কীভাবে সম্ভব হয় সেই মিরাকেল?
কাগজপত্র যা ছিল তা থেকে বুঝতে পারি জমিদারবাড়ির ভিতরে কোনো একটা ঘরে কিছু একটা লুকানো আছে। যা উদ্ধার করতে পারলেই সেই ভয়ানক কাজটি করা যাবে। কে লুকিয়েছে, কীভাবে লুকিয়েছে তার খানিকটা সংকেতও দেওয়া ছিল বটে তবে খুবই অস্পষ্ট। সম্ভবত যে লুকিয়েছিল সে কথাটা বিশেষ কাউকে জানাতে চেয়েছিল। সবাইকে নয়।”
“কিছু পেয়েছিলেন আপনি?” উৎসুক গলায় জিজ্ঞেস করে পায়েল।
ফাদার মাথা নাড়েন, “নাঃ। হয়তো পেতাম। ও বাড়িতে যেতে যেতে এমন একটা নেশা হয়ে গেল যে সাপের ভয় করত না একটুও। এমন কি যখন চার্চে প্রার্থনা হত তখনও ওই বাড়ির ঘরগুলোর কথা ভাবিয়ে তুলত আমাকে। আমি যা অন্যায় করেছি তা ঈশ্বর হয়তো ক্ষমা করবেন না। তবে এই কথাগুলো তোমাকে বলতে পেরে আজ বেশ হালকা লাগছে নিজেকে।”
কথাগুলো বলে একটু থামেন ফাদার। তারপর পায়েলের মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলেন, “তোমার বয়স অল্প। কিন্তু তা সত্ত্বেও তোমার মধ্যে এমন কিছু আছে যাতে অপরাধ স্বীকার করতে ইচ্ছা করে। অনেক বড় হবে তুমি একদিন।” শেষ কথাগুলো বলতে গিয়ে ফাদারের গলায় আবেগের রেশ এসে যায়। সেটা তড়িঘড়ি মুছে ফেলেন তিনি।
হেসে মাথা নামিয়ে নেয় পায়েল, ধীরে ধীরে বলে, “সে কাগজগুলো লাগবে আমার। আমার অকাল্টের উপরে কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু বাড়িতে যে খুনগুলো হয়েছে তার সঙ্গে আমার মনে হয় এর কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে।”
“বেশ, দিচ্ছি তোমাকে। ওগুলো আর ফেরত দিতে হবে না। দরকার মিটে গেলে ফেলে দিও না হয়।”
দু’জনে উঠে পড়ে। পায়েলের সিগারেট এতক্ষণে ছোট হয়ে এসেছিল। বাকিটুকু শেষ না করেই সেটা ফেলে দেয় সে। তারপর ফাদারের পিছন পিছন এসে ঢোকে চার্চের ভিতরে।
এখন ‘গসপেল অফ জন’ শেষ হয়ে গেছে। তার জায়গায় অন্য কিছু একটা শুরু হয়েছে। এটা চেনে না পায়েল।
আবার আগের দিনের মতো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে দু’জনে। আগের দিনের ছোট ঘরটা ফেলে আরও কিছুটা বাঁদিকে চলে আসে ওরা। এখানে চার্চের দরকারি কাগজপত্র রাখা থাকে।
একটা বড় বই-এর র্যাক চোখে পড়ল পায়েলের। তার সামনে কাচের পাল্লা দেওয়া। ভারী ভারী বই রাখা আছে তার ভিতরে। বাইবেলের অনেকগুলো ভারসান। কোনোটা কিং জেমসের ইংলিশ আবার কোনোটা ল্যাটিন। এছাড়া আরও কয়েকটা গবেষণামূলক বইপত্র। কিছু হাতে লেখা ম্যানুস্ক্রিপ্টও চোখে পড়ল।
সেগুলো ছাড়িয়ে এসে একটা বড় ড্রয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন ফাদার। তারপর আলখাল্লার পকেট থেকে একটা চাবি বের করে খুলে ফেললেন সেটা। উপরে কয়েকটা চকচকে সাদা কাগজ সাজিয়ে রাখা আছে। সেগুলো উপরে সরিয়ে রেখে নিচের কাঠের তক্তাটার উপরে চাপ দিলেন ফাদার। সঙ্গে সঙ্গে তার একটা দিক উঠে এল। পায়েল বুঝল এভাবেই কায়দা করে কাগজগুলো এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন ফাদার।
কতগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া হলদে খাম। বইয়ের মতো কিছু একটাও দেখা যাচ্ছে সেই সঙ্গে। সেগুলো হাতে নিয়ে একবার ফিরেও তাকালেন না ফাদার। পায়েলের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “মাই চাইল্ড টাইল্ড বলে নাটক করব না। তবে তোমার জায় গায়ন্যে কেউ হলে এগুলো তা হাতে দিতে সাহস করতাম না। পড়, যা করতে চাইছ করো। তারপর বিদায় করে দিও। কেমন?”
পায়েল বাধ্য শিশুর মতো মাথা নাড়ে। তার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দিয়ে একটু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে যান ফাদার। পায়েল পিছনে তাকিয়ে বসার মতো কিছু নেই দেখে একটা কোণে গিয়ে মেঝের উপরেই বসে পরে। তারপর ভীষণ সাবধানে একটা একটা করে পাতা উলটে দেখতে শুরু করে।
বইটা মূলত এখানে যাদের সেই আমলে ব্যাপটাইজ করা হয়েছিল তাদের নাম ধাম এবং পরিবারের বর্ণনা। তাছাড়া ছোটোখাটো দরকারি কিছু ঘটনার বিবরণ।
সেগুলো রেখে খামটা খোলে পায়েল। তার ভিতরে আছে সেই সময়ে চার্চে আসা কিছু চিঠি। বেশিরভাগই এসেছে বিদেশ থেকে। পড়ে শেষ করতে আজ সারাটা দিন লেগে যাবে। কয়েকটা আবার সময়ের ছাপে এতটাই অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে যে হরফগুলো পর্যন্ত চেনাই যাচ্ছে না।
সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে উঠতে যাচ্ছিল পায়েল। এমন সময়ে একটা পাতায় চোখ আটকে গেল তার। এতক্ষণে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসেছিল সে। এবার সোজা হয়ে উঠে বসল।
জর্জ মসক্রপ! নামটা চোখে পড়েছে তার। এবং তার পরিবার সম্পর্কে কিছু তথ্য। ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাজপরিবার থেকে বেশ কয়েকটি গোপন সিলড চিঠি পেয়েছিলেন তিনি। সেগুলোর কিছু কিছু অংশ লেখা আছে তার নিজের জবানবন্দীতে।
মিনিট কুড়ি পরে অনেকগুলো জটিল প্রশ্নের উত্তর জলের মতো পরিষ্কার, হয়ে উঠল তার চোখের সামনে। একটা অচেনা গোলাপি রং ফুটে উঠতে লাগল পায়েলের মুখ। এও কি সম্ভব!
*****
থানা থেকে বেরোতে যাচ্ছিলেন কেশব শর্মা। রাত বেশ বেড়ে গেছে। সারাটাদিন দৌড়াদৌড়িও কম যায়নি। এই বয়সে আর আগের মতো প্রেশার নিতে পারেন না। বাড়ি থেকে ফোন আসে মাঝে মধ্যেই। ওষুধ খেয়েছেন কিনা তদারকি, সিগারেট খেয়েছেন কিনা জেরা ইত্যাদি।
আজ কিন্তু উঠতে গিয়েও ওঠা হল না। দরজা দিয়ে হস্তদন্ত হয়ে ঢুকে এল খাসনবীশ। তার মুখ চোখ দেখে মনে হল বড়সড় কিছু একটা ঘটেছে। কেশব সেই মুখ দেখেই চেয়ারে বসে পড়লেন।
মুকেশ তার সামনে রাখা চেয়ারে বসতে বসতেই বলল, “মনে হয় ব্যাপারটার একটা কিনারা করতে পেরেছি স্যার।”
“কিনারা! মোটিভটা তো জোগাড় কর আগে তারপর কিনারা।”
“মোটিভ স্যার। ওইটাই পেয়েছি। আর এই কেসে যা মোটিভ তাতে বাকি কাজ মাখনের মতো হয়ে যাবে।”
“দেখো আবার বেশি মাখনে ডায়াবেটিস না হয়ে যায়।”
“মানে?”
“মানে ডোন্ট রাস ইট। আগে খুলে বল কী হয়েছে। গোড়া থেকে।”
“নলিনী ঘোষ আত্মহত্যাটা দুটো থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে করেছিলেন। ফরেনসিক কনফার্ম করেছিল।”
“মানে আমাদের মধুবাবু আর মতীন যতক্ষণ গল্প করছিল তার মধ্যেই। দু’জনেরই করস্পন্ডেন্ট এলিবাই আছে।”
একটু গলা খাঁকারি দিয়ে সময় নিল খাসনবীশ। তারপর সামনে রাখা জলের গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “দেয়ার ইজ দ্যা ক্যাচ… মতীন বলে ছেলেটার খোঁজ নিয়েছি আমি স্যার। এন্ড হি ইজ ডেড।”
“মানে? সে আবার কবে মরল?” চমকে উঠলেন শর্মা।
“এখান থেকে ফেরার পরপরেই। কিছু একটা ক্রনিক রোগে ভুগে। এস্ত গেস ওয়াট, ও কোনো চাকরি টাকরি পায়নি।”
“মানে মধুবাবু আমাদের মিথ্যে বলছেন। যাঃ, লোকটাকে দেখে বোঝা যায়নি মিথ্যে বলছে।”
কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে ব্যাপারটা মাথার ভিতরে সাজিয়ে নিলেন শর্মা। তারপর মুখ তুলে বললেন, “কিন্তু এর মধ্যে তুমি অতীনের খুনের মোটিভ কোথায় দেখছ?”
একটু বাঁকা হাসি হেসে খাসনবীশ বলে, “সে মোটিভটা আলাদা।”
“কীরকম?”
“আপনি যদিও বলেননি তাও আমি একবার ও বাড়িতে যারা যারা আছে তাদের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করতে দিয়েছিলাম। আই মিন যাদের সঙ্গে অতীনের পরিচয় ছিল।”
“বেশ। কর্মঠ ছেলে তুমি। তারপর?”
“সেটা হাতে আসার পর একটা জিনিস দেখে একটু চমকে যাই। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে এই ক্ষেত্রমোহন সেন মানে আমাদের অতীনের বাবা কিছু একটা কারণে ক্রিমিনাল কনভিকশানে জড়িয়েছিলেন।”
“বল কি! জেলে গেছিলেন নাকি!”
“মাসখানেক, হিট এণ্ড রান কেস। তখন কিছুদিন উনি কলকাতায় একটা এজেন্সির হয়ে ক্যাব ড্রাইভিং করতেন। তো একদিন ভোরের দিকে একটি বাচ্চা মেয়েকে গাড়িতে চাপা দেন। পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পরে পুলিশে ধরে ফেলে। তবে ইচ্ছাকৃত নয় বলে খুব একটা কিছু ঝামেলা হয়নি।”
মাথাভরা টাকে একবার হাত বোলালেন শর্মা, ভুরু তুলে বললেন, “গো অন। আই এম ওয়েটিং ফর ইয়োর নেক্সট পয়েন্ট। কারণ মোটিভ আমি এখনও পাইনি।”
“পাবেন। সেই মেয়েটির মায়ের নাম জানলেই পাবেন।”
“মেয়েটির মা? কে সে?”
“সুনন্দা সান্যাল।” টেবিলের উপরে একটা চাপড় মেরে বলল মুকেশ খাসনবীশ।