একাদশ অধ্যায়
লাফ দিয়ে খোপ থেকে নেমে সিঁড়ির দিকে দৌড় দিল পায়েল। তার মিলিয়ে আসা গলা সিঁড়ির কাছ থেকে শোনা গেল, “তুমি মুখে মুখ দিয়ে হাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করো। আমি দেখছি কারও ইনহেলার আছে কিনা, আর শুইয়ে রেখো না।”
দৌড়ে অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে এল পায়েল। এক ছুটে চলে এল দক্ষিণের প্রাসাদের কাছে। চাতালটা পেরিয়েই সিঁড়ির কাছে মালতীকে দেখা গেল। পায়েলকে এভাবে বিভ্রান্তের মতো ছুটে আসতে দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে গেছিল সে, হতচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে দিদি? দৌড়াচ্ছ কেন?”
“এবাড়িতে কারও হাঁপানি আছে? মানে তুলি ছাড়া?”
কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে ভাবল মালতী, তারপর একবার থেমে জবাব দিল, “অতীনদাদার ছিল।”
“ওর ইনহেলারটা কোথায় আছে জানো?”
“টেবিলের ড্রয়ারে রাখত।”
আবার হরিণের মতো দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে উঠে এল পায়েল। ক্ষেত্রমোহন তাকে দেখে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলেন, পায়েল শুনল না। ঝড়ের মতো ঢুকল পাশের ঘরে।
জানালার ঠিক নিচেই টেবিলটা। সেটার কাছে গিয়ে ড্রয়ারটা খুলতেই একটা আতঙ্কের স্রোত পায়েলের ভাবনা চিন্তায় তালা লাগিয়ে দিল – ইনহেলার এখানেও নেই।
মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ল পায়েল। ওদিকে মেয়েটা এখন কী অবস্থায় আছে কে জানে। তার কপাল দিয়ে দর করে ঘাম পড়তে লাগল। কান গরম হয়ে উঠল ক্রমশ।
মাটিতে বসে বিছানার তলায় মেঝের উপরে চোখ পড়তেই আশঙ্কার মেঘটা কেটে গেল তার। বিছানার একটু নিচের দিকেই পড়ে আছে ইনহেলারটা। সাপের মতো মাটিতে শুয়ে পড়ে সেটা তুলে আনতে গিয়ে একটা কাগজ হাতে লাগল পায়েলের। অনেকটা ফেলে দেওয়া ওয়েস্ট পেপারের মতো। কাগজটা সরিয়ে ফেলতে গিয়েও ফেলল না পায়েল। ইনহেলারের সঙ্গে সেটাও একহাতে ধরে তেমনই দ্রুত বেগে আবার দৌড় দিল বাইরের দিকে। সিঁড়ির উপর দিয়ে নামতে গিয়ে উত্তেজনায় তার পা কেঁপে গেল।
এতক্ষণে তুলিকে নিয়ে অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে এসেছে সুনন্দা। পায়েল তাদেরকে দেখেই ইনহেলারটা এগিয়ে দিল। সুনন্দা একহাতে তুলির মাথাটা ধরে আর একহাত দিয়ে ইনহেলারটা পাম্প করতে লাগল তার মুখে।
মেয়েটা এতক্ষণে অবশ হয়ে এসেছে। সুনন্দার কাঁধের উপরে নেতিয়ে পড়েছে তার শরীরটা। মুখটা রক্ত জমে লাল হয়ে ফুলে আসছে। ফাঁকা হাওয়ার শব্দ আসছে গলার ভিতর থেকে।
কিছুক্ষণ পাম্প করার পর আওয়াজটা বন্ধ হল। মুখের রঙটা একটু ফ্যাকাশে হয়ে এল। পায়েল তার মাথায় একটা হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আর কষ্ট হচ্ছে?”
খুব অল্প মাথা নাড়ল তুলি। দু’দিকে। যদিও বেশ বোঝা যাচ্ছে তার শরীরটা এখনও যন্ত্রণায় কুঁকড়ে আছে। বুকের কাছটা খামচে ধরার মতো ব্যথা ছিঁড়ে নিচ্ছে তাকে।
“কীসের জন্যে করছে এরকম?” সুনন্দার মুখ রাগে লাল হয়েছিল পায়েলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সে।
“যেই করে থাকুক সে কাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকালের মধ্যে তোমার ঘরে ঢুকেছিল।”
“সেতো অনেকেই ঢুকেছিল…”
একটু ভেবে সুনন্দা বলে, “মালতী, মধুবাবু, শশাঙ্কদা… আরও কেউ ঢুকতে পারে। আমি সব সময় ছিলাম না ঘরে।”
“অর্থাৎ বোঝার উপায় নেই কে নিয়েছে। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা হল, কেন? কে তুলির ক্ষতি করতে চায়? করেছেটা কী ও?”
চাতাল পেরিয়ে এগিয়ে আসে দু’জনে। পায়েল প্রাসাদের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “অতীনের সঙ্গে এ বংশের একটা তাও সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তুলি একেবারেই অজানা। তার ক্ষতি করে লাভ কিছু কারও হবার নেই। আনলেস…”
“আনলেস কী?”
“আচ্ছা এই যে তুলির বাবা-মা, তাদের বয়স কেমন বলতো?”
“কত হবে, ছেচল্লিশ-সাতচল্লিশ।”
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে থেমে গেল পায়েল, “তুলির বয়স দশ। অর্থাৎ তুলি যখন হয় তখন ওর বাবা মায়ের বয়স ছত্তিরিশের কাছাকাছি। ওয়াইল্ড গেস, তাও মনে হচ্ছে তুলি ওর বাবা-মার অ্যাডাপ্টেড চাইল্ড।”
“মানে বলছ সন্তান না হওয়ার জন্যে নিজেদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে দেখে অ্যাডাপ্ট করেছিল ওকে?”
সুনন্দার কোল থেকে তুলিকে নিজের কোলে নেয় পায়েল। মেয়েটা এখন চোখ বুজে আছে। সম্ভবত ঘুমাচ্ছে। তার কপালে একবার হাত বুলিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দেয় পায়েল, “হয়তো এ বংশের সঙ্গে কোনো সম্পৰ্ক আছে ওর। যার জন্যে খুনির রাগ গিয়ে পড়েছে ওর উপরে।”
“কিন্তু এ বংশের সঙ্গেই ওর সম্পর্ক, আবার ঘুরে ফিরে এই জমিদারবাড়িই লিজ নিলেন নাথবাবু। ব্যাপারটা কেমন কাকতালীয় মনে হচ্ছে না?”
“বা এমনও হতে পারে যোগেন্দ্র নিজেও এ বাড়ির ব্যাপারে কিছু জানেন এবং তুলিকে এখানে পাঠানোটাই তার উদ্দেশ্য ছিল। বিদেশ যাত্রাটা ছল।”
“তাহলে তুলির এখানে বিপদ আছে বুঝেই পাঠানো হয়ছে তাকে?” একটা অজানা আশংকায় সুনন্দার মুখ ভরে উঠল।
“আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে এই নাথ ফ্যামিলি ততটা ইনোসেন্ট নয় যতটা আমি মনে করছি।”
“সে যাই হোক না কেন আমাদের আর জানার উপায় নেই। “
প্রাসাদে ঢোকার মুখে ক্ষেত্রমোহনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ওদের। তিনি একটু এগিয়ে এসে তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে বলতো? ওইভাবে ঘরে ঢুকলে…”
“আসলে তুলির একটু শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, ওর ইনহেলারটা হারিয়ে গেছে আবার। এইটা আপনার ছেলের…” হাতের ইনহেলারটা ক্ষেত্রমোহনের দিকে বাড়িয়ে দিল পায়েল।
হাত তুলে বাধা দিলেন ক্ষেত্রমোহন, “থাক ওটা আপনারাই রাখুন। অতীনের তো আর লাগবে না।”
“তাও… আপনার ছেলের স্মৃতি…” কথাটা শেষ না করেই থেমে গেল সুনন্দা। ক্ষেত্রমোহন হাসলেন, “স্মৃতি নিয়ে আর কী করব বলুন। এ বাড়িটাও তো ছেড়ে দিচ্ছি।”
“সে কি!” আঁতকে উঠল পায়েল, “ছেড়ে দিচ্ছেন কেন?”
“এখানে থাকতে আর ভালো লাগছে না। গিরিজাকে দেখে ডাক্তার বলছে ওকে এখান থেকে দূরে নিয়ে যেতে….”
পায়েল সুনন্দার দিকে একবার তাকিয়ে প্রায় অস্ফুট চাপা স্বরে বলল, “চা, চা অফার করো।”
সুনন্দা চকিতে ইশারাটা বুঝে নিয়ে বলল, “আপনি চা খাননি তো সকালে। এদিকে আসুন না।”
ক্ষেত্রমোহন খুব একটা আপত্তি করলেন না। প্রাসাদের দিকে পা বাড়ালেন। সুনন্দা পায়েলের দিকে ফিরে বলল, “কাজটা ভালো করলে না।”
“কী কাজ?”
“উনি ওদিকের রান্নাঘরে যেতে চান না কেন তুমি জান। সেই সুযোগে চায়ের নেমন্তন্ন করলে। সুযোগ নিলে।”
“তাতে কী এমন ক্ষতি হল?”
“ক্ষতি কিছু হত না, যদি তুমি নিঃস্বার্থভাবে ডাকতে। তুমি ওঁর থেকে কিছু জানতে চাও, তাই ডাকলে।”
“বেশ, তাহলে কাল তুলির ইনহেলার কে সরিয়েছিল সেটা তুমিই খুঁজে বের করো।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুনন্দা, বলে, “তা আর হবে না। আজ একটু পরেই নীলাদ্রি আসবে। তখন আর এত সময় পাব না তোমাকে দেওয়ার।”
পায়েল আর কিছু বলল না। তিনজনে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে সুনন্দার ঘরে চলে এল। ক্ষেত্রমোহনকে ঘরের ভিতর ঢুকতে বলে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিল সুনন্দা। হঠাৎ পায়েল তার একটা হাত ধরে থামিয়ে দিল।
ঠিক এই মুহূর্তে চমকে পায়েলের চোখের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল সুনন্দা। অসহ্য উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চোখ দুটো। কীসের আগুনের যেন ধিকিধিকি জ্বলছে তারা। মেয়েটাকে এভাবে এর আগে দেখেনি সুনন্দা হতবাক গলায় বলল, “কী হল তোমার?”
“একটা কথা ছিল।” থমথমে গলা। একফোঁটা আবেগের চিহ্ন নেই। “হ্যাঁ। বল।”
কেটে কেটে উচ্চারণ করল পায়েল, “আমার মনে হয় যে শশিভূষণ সরকার আর অতীনকে খুন করেছে, যে তুলির শ্বাস আটকে তাকে খুন করতে চেয়েছে সে একই লোক। সে যদি সত্যি ধরা পড়ে, পুলিশই ধরুক অথবা অন্য কেউ তুমি তার কী শাস্তি চাও?”
“আইন যা বলবে…”
“যে লোকটা তোমার মেয়েকে চাপা দিয়ে গেছিল, তাকে পুলিশে ধরতে পেরেছিল। কয়েকমাস জেল আর কিছু টাকা ফাইন হয়েছিল তার। তুমি খুশি ছিলে তাতে?”
মাথা নামিয়ে নেয় সুনন্দা। একটু একটু করে মাথা নাড়ে।
“তাহলে কী চাও তুমি?” একই রকম শুকনো গলায় জিজ্ঞেস করে পায়েল। উত্তর দেয় না সুনন্দা, পায়েল আবার ঝাঁকুনি মারে তার হাতে, “বল কী চাও?”
“মৃত্যু।” অস্ফুটে কথাটা বলে একছুটে রান্নাঘরের দিকে চলে যায় সুনন্দা।
পায়েল সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ঘরে ঢুকে এল। তারপর ক্ষেত্রমোহনের পাশে বসে পড়ে বলল, “আপনার স্ত্রী কেমন আছেন এখন?”
“খুব একটা ভালো নেই।” দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা দোলালেন ক্ষেত্রমোহন, “কান্নাকাটিটা করছে না বটে কিন্তু কথা বলছে না কারও সঙ্গে, খাওয়া দাওয়াও একরকম ছেড়ে দিয়েছে।”
“ঠিক হয়ে যাবে। একটু সময় দিন। ওঁর মা-বাবা বেঁচে আছে?”
“না। আমার বিয়ের আগেই মারা গেছেন তারা।”
“আর আপনার?”
“তারাও মারা গেছেন।”
“আচ্ছা এ বংশের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ মায়ের দিক থেকে না বাবার দিক থেকে?”
“মা। চাণক্য দত্তের স্ত্রী আশারানি দত্ত আমার মায়ের কোনো এক পূর্বপুরুষ ছিলেন। পরে আমার কোনো এক পূর্বপুরুষকেই এ বাড়িতে নায়েব নিযুক্ত করা হয়।”
পায়েল দু’হাতে ভর দিয়ে একটু পিছনে হেলে পড়ে বলল, “দত্ত বংশের সব দিক থেকেই বংশধর পাচ্ছি শুধু কন্দর্প দত্ত ছাড়া। বড় ছেলের কী হল বলুন তো?”
‘সে অত সংসারি ছেলে ছিল না। শুনেছি ভূপতি দত্ত বেঁচে থাকতে থাকতে, কন্দর্পকে একবার ত্যাজ্য করতে চেয়েছিলেন।”
“কেন?”
“লোকে বলে সে নাকি বদ সঙ্গে পড়ে উইচক্রাফট শিখেছিল।”
“বাবা!” পায়েল অবাক হবার ভান করে, “সেই সময়ে উইচক্র্যাফট! কী ডেঞ্জারাস।”
“সেসময় ওসবের আরও বেশি চল ছিল বাংলায়। কন্দর্প লেখাপড়া শিখেছিল কিছু। ইংরাজি বইপত্র পড়ে তার মাথাটা ওইদিকে চলে যায়। বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াত। মানুষের সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তাও বলতো না। লোকে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতে দেখে বাড়ি দিয়ে যেত। জমিদারবাড়ির তাতে মান যায়।”
“তো এই কন্দর্পের কী হল?”
“সেটা জানা যায় না। অবাক করা ব্যাপার হল ওই আঠেরোশ সাল থেকে আস্তে আস্তে নানা কারণে জমিদারদের বংশ কেমন যেন ছোট হয়ে আসতে থাকে। কন্দর্পের পাগলামি, নৃপতি দত্তের হত্যা, জমিদারগিন্নিদের বন্ধ্যা হয়ে যাওয়া, লোকে বলাবলি করত বংশে অভিশাপ লেগেছে।”
“কীসের অভিশাপ বলুন তো?”
“ধুর, অভিশাপ টভিশাপ বলে কিছু নয় না।” ক্ষেত্রমোহন মৃদু হাসার চেষ্টা করলেন।
“না না আমি অভিশাপটা নিয়ে ভাবছি না। তবে লোকে যখন অভিশাপের কথা বলাবলি করত তখন বাড়িতে এমন কিছু একটা ঘটেছিল যাতে লোকের মনে অভিশাপের কথাটা আসতে পারে।”
ঘরে চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকছিল সুনন্দা। সে টেবিলের উপরে প্লেট রাখতে রাখতে বলল, “আপনাকেও জেরা করা শুরু করেছে। এই মেয়েটা পুলিশের থেকেও ভয়ানক। “
“না না, জেরা কোথায়? ওর এসবে আগ্রহ একটু বেশি। ভারি ভালো মেয়ে।”
লাজুক হাসল পায়েল। তারপর কি মনে পড়তে ব্যাগ থেকে সেই কাগজটা বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এইটা একটু দেখুন তো, আপনি লিখেছিলেন?” কাগজটা দেখলেন ভালো করে ক্ষেত্রমোহন। তারপর ঠোঁট উলটে মাথা নাড়িয়ে বললেন, “নাতো! কী কাগজ এটা?”
“আপনার ছেলের বিছানার তলায় পড়েছিল ইনহেলারের সঙ্গে। তাহলে কি ওই লিখেছে? কিন্তু ‘তার চোখের তারায়’ মানে কী?”
এক সেকেণ্ড পরেই ক্ষেত্রমোহন মুখে একটা বিদ্যুৎ রেখা দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল, “এটা কবে একটা শুনলাম যেন… ও হ্যাঁ আপনিই তো সেদিন…”
ক্ষেত্রমোহনের আঙুলটা সুনন্দার দিকে। সুনন্দা নিজেও এতক্ষণে দেখছে সে কাগজটা, এবার সেটা ফেরত দিয়ে বলল, “হ্যাঁ। এ কথাটা আমি সেদিন বলছিলাম বটে কিন্তু সেখানে তো আমি আপনি আর শশাঙ্কদা ছাড়া আর কেউ ছিল না। অতীন তো নয়ই।”
“তাহলে কথাগুলো লিখল কী করে?”
“তাহলে নিজের খেয়ালে লিখে থাকবে হয়তো… ও একটু ওরকমই ছিল।”
“কিন্তু এই কথাটার তো একটা…” কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল সুনন্দা। পায়েল চোখের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিল। তারপর মাথা নামিয়ে বলল, “এতে হয়তো আপনার মনের সব প্রশ্ন যাবে না। তবে আপনার একটা প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারি।”
“কী? বল।” পায়েলের দিকে ঘুরে তাকান ক্ষেত্রমোহন।
“সেদিন রাতে অতীন কেন বাইরে গেছিল সেটা বলতে পারি।”
ক্ষেত্রমোহন আর কিছু বলেন না। তার কপালের রগগুলো দপদপ করে ওঠে। সুনন্দা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পায়েলের দিকে। সে ধীরে ধীরে বলতে শুরু করে, “সম্ভবত ভোর রাতের দিকে অতীনের হাঁপানির টান ওঠে। ওইসময়ে শ্বাসকষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেই সময়ে সে ইনহেলারটা খুঁজে পায় না। ফলে বেশ কিছুক্ষণ দম বন্ধ হয়ে যায় তার। শেষে যখন খুঁজে পায় তখন তার শ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে। ঠিক আজকে তুলির যেমন হয়ছিল। ইনহেলারটা নেবার পর তার হাত থেকে খসে বিছানার পাশে পড়ে গড়িয়ে নিচে ঢুকে যায় সেটা।
খানিকটা দম নেবার পর ঘরের বাতাসটা বদ্ধ মনে হয় অতীনের। ফলে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং সেই সময়ে রান্নাঘর থেকে কিছুর আওয়াজ শোনে সে। সম্ভবত বাসন বা ওই জাতীয় কিছুর।”
“তার মানে তখনই কিছু দেখে ফেলেছিল বলে…” কথাটা বলতে গিয়ে থেমে যান ক্ষেত্রমোহন।
কয়েকটা নিস্তব্ধ মুহূর্ত কাটে। চা খেতে খেতে কেউ কোনো কথা বলে না। চা শেষ হতে উঠে পড়েন ক্ষেত্রমোহন। বাইরে দিকে এগোতে এগোতে বলেন, “ওকে একা রেখে এসেছি, চলি। আবার পরে কথা হবে না হয়।”
তিনি বেরিয়ে যেতে পায়েলের কাছে সরে আসে সুনন্দা। তারপর নামানো মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “বাকিটা বিশ্বাস করলাম, শেষটা করতে পারলাম না।”
“মানে? বাসনের আওয়াজের ব্যাপারটা?”
“হ্যাঁ। এত জায়গা থাকতে খুনি রান্নাঘরে কী করছিল? আর তার থেকেও বড় কথা ফরেনসিক রিপোর্টে তাহলে আত্মহত্যা বলছে কেন? “
“ধর খুনি মাথার কাছটা না ধরে ঘাড়ের দিকটা ধরেছিল। তাই মাথার চুল ছেড়েনি।”
“কিন্তু কেন? খুনি তো এখানে একবারও প্রমাণ করতে চায়নি যে এটা আত্মহত্যা। তা যদি করতে চাইত তাহলে দড়ি দিয়েই ঝুলিয়ে দিত। বরঞ্চ ফরেনসিক বলছে উলটোটা।”
প্রশ্নটার উত্তর দিল না পায়েল। উলটে নতুন একটা প্রশ্ন করল, “আচ্ছা সুনন্দাদি, তুমি ভূতে বিশ্বাস করো?”
প্রথমে কিছু উত্তর দিল না সুনন্দা, তারপর ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল, “ভগবানে বিশ্বাস করি যখন ওটা জোর করেও অস্বীকার করতে পারি না।”
“আর অভিশাপে?”
“অভিশাপ! কীসের অভিশাপ?”
“এই যে লোকে বলে কিছুর একটা অভিশাপে নাকি জমিদার বংশ শেষ হয়ে গেছে? এরকম কি সত্যি হতে পারে?”
“কি জানি। আমি এসব এত ভেবে দেখি না।”
“আমিও ভাবতাম না। কিন্তু আজ ওই ঘরটায় ঢোকার পর থেকে মনটা কেমন জানি হয়ে আছে।”
“কোন্ ঘর?”
“ওই খোপের মধ্যে দিয়ে একটা ঘরে যাওয়া যায়। সম্ভবত কিছু একটা লুকানোর জন্যে তৈরি করা হয়েছিল ওটা। তেমন কিছু নেই শুধু দেওয়ালে কয়েকটা চেরা দাগ আর সমস্ত ঘরের দেওয়াল জুড়ে আগুনের দাগ।”
“আগুন!”
“হ্যাঁ, আগুন। মনে হয় বহুবছর আগে ওখানে আগুন জ্বলেছিল। সেই আগুনে হয়তো পুড়ে মারা গিয়েছিল কেউ। কেউ ঘরে ঢুকিয়ে জ্বেলে দিয়েছিল আগুনটা এবং তার ফলেই জমিদারবাড়ির উপর অভিশাপ নেমে আসে।”
“কিন্তু কেন? খামোখা একটা মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে কার কি লাভ?”
“জানি না। তবে একটা কথা আমার মনে হচ্ছে।”
“কীরকম কথা?”
“উত্তরের ওই অন্দরমহলটা তৈরি হয়েছিল অনেক আগে। মানে এই প্রাসাদগুলো তৈরি হবার বহু আগে এবং বিশেষ কোনো কারণে তৈরি হয়েছিল। শুধু কয়েকটা মানুষের থাকার জন্যে নয়। সম্ভবত এমন কিছু হত ওখানে যেটা লোকসমাজে রটে গেলে বড়সড় সমস্যা হতে পারত।”
ঘরের বাতাস ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে। একটা চাপা অস্বস্তি শুরু হয়েছে সুনন্দার। সে নিচু গলায় বলে, “কী হত বলে মনে হয় তোমার?”
“এমন একটা কিছু যার সন্ধান পায় কন্দর্প। সম্ভবত ওই ঘরে সে নিজে ও ঢুকেছিল। কিছু একটা আন্দাজ পেয়েছিল। কিছুর একটা খোঁজ করছিল সে যেটাকে লোকে উইচক্র্যাফট বলে ভুল করে। পেয়েছিল কিনা, তারপর খুঁজে পেতে কী হল সেটা আর জানতে পারছি না। তবে আঠেরোশো তিরিশে কুড়িজন এসাসিনেটারের শরীর দীঘির জলে যখন ভেসে ওঠে তখন সে পাড়ে দাঁড়িয়েছিল।”
থমথমে গলায় উত্তর দেয় সুনন্দা, “মানে বলতে চাইছ উইচক্র্যাফট শিখেই সে অতগুলো ডাকাতকে কাবু করে?”
“না। সে নিজে প্রায় কিছুই করেনি। করেছিল সেই নারীমূর্তি। যাকে তুলি দেখেছে, অতীন দেখেছে এবং এই বাড়িতে এর আগে চারজনের মৃত্যুর পিছনেও তারই হাত ছিল।”
“কিন্তু সেটা অসম্ভব। কন্দর্প যদি সত্যি উইচক্র্যাফট শিখেও থাকে তাহলেও এটুকু নিশ্চিত যে আজ সে বেঁচে নেই। তাহলে?”
“এমনও হতে পারে কন্দর্পের পদ্ধতি অন্য কেউ অবলম্বন করছে। কোনোভাবে হয়তো সেটা জানতে পেরেই খুনগুলো করেছে সে।”
“এগুলো বড্ড বেশি অবাস্তব হয়ে যাচ্ছে পায়েল। তুমি নিজেও জানো উইচক্র্যাফট বলে কিছু হয় না। অন্তত এ যুগের মেয়ে হয়ে কয়েকটা মৃত্যু এক্সপ্লেন না করতে পেরে উইচক্র্যাফট বলে চালানো তোমার সাজে না।”
পায়েলের গম্ভীর হয়ে আসা মুখে এবার এক টুকরো হাসি খেলে যায়, পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে সেটা ধরিয়ে বলে, “ঠিক বলেছ, উলটোপালটা ভাবতে শুরু করেছি। আসলে এতগুলো প্রশ্ন এমন ঘেঁটে দিয়েছে না, যে কিছুই ভেবে উঠতে পারছি না। আর ভেবে কাজ নেই অবশ্য। আমার যাবার ডাক এসে গেছে।”
“সেকি! বাড়ি চলে যাবে!”
“ইয়েস।” সিগারেটে আরামের লম্বা টান দিল পায়েল, “বাবা আজই ফোন করেছিল। বলল দিন তিনেকের মধ্যে ব্যাক টু শান্তিনিকেতন।”
“যাঃ, তারপর আর তোমার সঙ্গে দেখা হবে না।”
“তাতে তোমার কি, তুমি সংসারী মানুষ। আজ তো আবার তিনি চলেও আসছেন।”
“সে আসুক। কাউকে দিয়ে কাউকে রিপ্লেস করা যায় না।”
সুনন্দার মনটা খারাপ হয়ে গেছিল। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকল সে। এই ক’দিনে পায়েলের সঙ্গে বেশ একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল। এখানে সবাই তার অচেনা। এমনকি পায়েল নিজেও। তা সত্ত্বেও এক-একজন মানুষ থাকে যাদের ভিতরে তাড়াতাড়ি কাছে চলে আসার একটা অলৌকিক ক্ষমতা থাকে। তারা যে খুব মিশুকে তা নয়, খুব যত্নশীল তাও নয় তবু। তবে তাদের হাসিটা অনেক অন্ধকারের মধ্যেও ভরসা জোগাতে পারে।
সনাতন খাবারের থালা নিয়ে ঘরে ঢুকেছিল। সে তুলির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “দিম্মনির কী হয়েচে?”
“তেমন কিছু না। একটু শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।”
টেবিলের উপরে দুটো প্লেট রেখে সনাতন বলে,”আপনারা অন্দরমওলের দিকে গেচিলেন?”
একটা ছোটোখাটো কম্পন অনুভব করে সুনন্দা বুকের মাঝে। মুখ তুলে বলে, “হ্যাঁ। ওই একটু দেখার ইচ্ছা হয়েছিল ভিতরে কী আছে।”
“রমেনবাবুও খুব যেতেন। শেষে আমি মানা করতে আর যাননি।”
“রমেন কে?” পায়েল প্রশ্ন করে।
“ওই যে চার্চে যিনি আছেন এখন।”
“চার্চের ফাদার?” দু’জনে প্রায় একসঙ্গে প্রশ্ন করে।
“আজ্ঞে হ্যাঁ। একদিন রাতের বেলা ঘুম ভেঙি গেল, তো একতলায় পেসাপ করতে গে দেখি বাবু একটা আলোয়ান জড়িয়ে প্রাসাদের ফাঁক দি বেরিয়ে আসচেন। আমি ভাবলাম জোরে ডাকি, শেষে তার পিচু পিচু গেলাম। দেকি তিনি চোরের মতো মহলের দিকে যাচ্ছেন। আমি তকন দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরতে তিনি ঘাবড়িয়ে গেলেন। প্রথমে টাকা দিতে চাইলেন। আমি বললুম আর যদি কোনোদিন ওভাবে চোরের মতো ওখানে না যায় তাহলে কাউকে। আজকেরের কথা বলব না।”
“তাহলে আমাদের বললে যে।”
সনাতন হাসল। তারপর ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে বলল, “আপনারা আজ গেছিলেন যে। আমার ভারী জানতে ইচ্ছা করে ওখানে কী আছে যে সবাই যায়।”
পায়েল আর সুনন্দা একবার দু’জনে চোখাচোখি করে নেয়। তারপর বলে, “তেমন কিছু নেই। কিছু পুরনো সিন্দুক আছে। সবাই ভাবে তার ভিতরে হয়তো এখনও রত্ন-টতু আছে।”
“ও…”
উত্তরটা খুব একটা যে পছন্দ হয় না সনাতনের সেটা বোঝা যায়। আর কিছু জিজ্ঞেস না করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে।
পায়েল একবার দরজাটা দেখে এসে বলে, “মালটা কি ঘাঘু দেখেছ? আমাদের দেখে ফেলেছে সেটা চেপে রেখেছিল পেট থেকে কথা বের করবে বলে।”
“তুমি তার থেকে বড় ঘাঘু, বের করলে কোথায়?”
বিজয়ীর হাসি হাসে পায়েল, তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বলে, “কিন্তু ফাদার ওখানে কী ধান্দায় যেত বলতো? কিছু জানতে পেরেছিল নাকি?”
“জানাটা অস্বাভাবিক নয়। চার্চের নিজস্ব কিছু রেকর্ড বুক থাকে। সেখান থেকে অতীতের কিছু ঘটনা জেনে থাকতে পারে। ঘরটার কথাও হয়তো জানে।”
“তাহলে আজ একবার দেখা দিয়ে আসি? কি বল?”
“বেশ। বিকেলের দিকে যেও। এখন খেয়ে নাও।”
বিছানা থেকে উঠে একবার প্লেটের দিকে উঁকি মারে পায়েল। তারপর হতাশ হয়ে বলে, “ধুর… শুকনো রুটি, পেঁয়াজকলি ভাজা আর চাটনি। এই নাকি শালা জমিদারবাড়ির খাওয়া।”
“মাত্র দু’শো বছর লেট করে ফেলেছো জন্মাতে। তখন এ বাড়িতে থাকে দেখতে খাওয়া কাকে বলে।”
বিরক্তি ভরা মুখে প্লেটটা টেনে নিয়ে একটুকরো রুটি মুখে দেয়। তারপর সেটা চেবাতে চেবাতে বলে, “যাই বল তুমি। এই সনাতন বুড়োটার রান্না হাত একেবারে যাচ্ছেতাই। সবজি খাইয়ে খাইয়ে পেটে গ্রিন রিভোলিউশান ধরিয়ে দিল শালাটা।”
“তা তোমার কী খেতে ভালো লাগে?”
হাতে করে রুটি মুখের কাছে তুলে এনেছিল পায়েল। সেটা নামিয়ে রেখে খুশি খুশি মুখে বলল, “কোল্ড কফি।”
“ধুর, ওসব এখানে কোথায় পাব?”
পায়েল চোখ বড়বড় করে বলে, “এই, পাবে মানে? তুমি কি আমাকে খাওয়াবে ভাবছ নাকি? “
“ধর যদি খাওয়াই?” সুনন্দা চাটনি চাটতে চাটতে বলে, “মানে তুমি চলে যাবার আগে ভাবছি একদিন রান্না করে খাওয়াবো তোমাকে।
“তাহলে…” পায়েল কয়েক সেকেণ্ড ভেবে নেয়। তারপর বলে, “ফ্রায়েড রাইস বানাতে পারো? আর ঝাল ঝাল করে চিলি চিকেন? “
“হুঃ, ওসব তো বাচ্চারাও পারে।”
“ব্যস। ওই খাইয়ে দাও। তোমাকে আশীর্বাদ করে যাব।”
“বাবা! তা কী আশীর্বাদ করবেন গুরুদেব?”
‘সেটা আগে খাওয়াও তারপর বলে দেব না হয়।”
“বেশ।”
এবার বেশ খুশি মনে খেতে লাগল পায়েল। সুনন্দা তার মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প হাসল।
তুলি এতক্ষণে উঠে বসেছে। সে দুহাতে চোখ রগড়ে সুনন্দার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার তো খিদে পেয়েছে।”
সুনন্দা মাটি থেকে উঠে নিজের প্লেট থেকে একটু রুটি ছিঁড়ে তার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, “এখন আর কষ্ট হচ্ছে না তো?”
“না।” তুলি চিবাতে চিবাতে বলল, “আমি আর ওখানে যাব না। খুব ধুলো।”
“না না। পাগল নাকি? আর যাই ওখানে?”
পায়েল তার দিকে ফিরে বলল, “হ্যাঁরে বাবু। সেদিন তুই যাকে দেখতে পেয়েছিলি, সেই যে একটা মেয়ে, তাকে আর কোনোদিন দেখতে পেয়েছিস?” তুলির ফ্যাকাসে মুখে একটা অস্বস্তির রেখা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে উপরে নিচে মাথা নাড়ায় সে।
“কবে?” সুনন্দা জিজ্ঞেস করে।
“আজ একটু আগে। ওর ভিতরে।” আঙুল দিয়ে অন্দরমহলটা দেখিয়ে দেয় তুলি।
সুনন্দা আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল। পায়েল চোখের ইশারায় বারণ করে তাকে। তুলির পাশে বসে তাকে খাওয়াতে থাকে সুনন্দা।
উলটো দিকে ঘুরে বসে কি যেন বিড়বিড় করে পায়েল। অস্পষ্ট হলেও শব্দগুলো শুনতে পায় সুনন্দা,
“পাঁচটা খুন। চারটে আলাদা দশকে। যেন সব ক’টাই হয় দুর্ঘটনা না হয় আত্মহত্যা। একজন সিঁড়ি থেকে পড়ে, একজন জলে ডুবে, একজন কুয়োতে পড়ে আর বাকি দু’জন গলায় দড়ি… এদের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই… নাকি আছে? আছে… নিশ্চয়ই আছে… কী হতে পারে? কী… কী…
আচমকাই প্লেট বিছানায় রেখে প্রায় লাফিয়ে ওঠে পায়েল, “আছে, একটা ভয়ানক মিল আছে। ইশশ্… এতক্ষণ দেখতে পাইনি! কত বড় গাধা আমি… সুনন্দা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সুনন্দার দিকে ফেরে সে, “সুনন্দাদি, বড়বাজারের শশীবাবুর কীসের দোকান ছিল?”
“মশলার।” সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় সুনন্দা।
“মশলার…” পায়েলের চোখ দুটো মুহূর্তে নিষ্প্রভ দেখায়, “মশলা হলে তো…’
“কী ব্যাপার বলতো? কিছু হয়েছে?”
“নাঃ, একটু এক্সাইটেড হয়ে গেছিলাম। “
কথাটা বলে খাবারে মন দেয় পায়েল। অস্বাভাবিক রকম হতাশ দেখায় তাকে।