তারি লাগি যত
সব মহিলাই পুরুষ বিরোধী নয়। সব পুরুষই মহিলা বিরোধী নয়।
সবাই বাদী বা বিবাদীও নয়। নরবাদী কিংবা নারীবাদী, নরবাদিনী কিংবা নারীবাদিনী এদের সংখ্যা যত তার হাজার গুণ বেশি মানুষ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।
এ বিষয়ে আমাকে কেউ প্রশ্ন করলে আমি ব্যাপারটা কায়দা করে এড়িয়ে যাই। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় গোঁজামিল দিয়ে বলি,
‘তারি লাগি যত ফেলেছি অশ্রুজল,
নারীবাদিনীর শতদলতলে
করিতেছে টলমল।’
এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এত হালকাভাবে নেয়া আমার উচিত হচ্ছে না, আমি আশঙ্কান্বিত বোধ করছি। বরং স্বামী-স্ত্রীর পুরনো গল্পে ফিরে যাই।
আদালত দিয়ে শুরু করি।
এক মহিলা বিচারালয়ের শরণাপন্ন হয়েছেন, তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকবেন না, বিবাহ বিচ্ছেদ চান।
কিন্তু আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের একটা কারণ দর্শাতে হবে। আদালত সে প্রশ্ন তোলায় মহিলাটি বললেন, ‘আমার স্বামী আমার প্রতি বিশ্বস্ত নন।’
আদালত যথারীতি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তার প্রমাণ কী?’
একটু ইতস্তত করে মহিলা বললেন, ‘দেখুন গত বছর আমার যে ছেলে হয়েছে, আমার ধারণা আমার স্বামী তার বাবা নয়।’
আদালতে আর একটা বিবাহ বিচ্ছেদের গল্প পুরনো এবং বহু কথিত। খুবই গোলমেলে গল্প। বলাও যায় না আবার না বলে থাকাও যায় না।
বিবাহ বিচ্ছেদ মঞ্জুর হওয়ার পর স্বামী ও স্ত্রীর সমস্ত সম্পত্তি চুলচেরা ভাগ হল। বাড়ি, ঘর, টাকা-পয়সা, সোনা-গয়না সব কিছু সমান সমান।
কিন্তু গোলমাল বাধল মোক্ষম জায়গায়। এই দম্পতির তিনটি ছেলে। তিনটি মানবশিশুকে তো আর সমান ভাগে ভাগ করা সম্ভব নয়।
চিন্তিত বিচারক ভ্রূ কুঞ্চন করে দুই পক্ষের উকিলকে বললেন, ‘কী করব বলুন তো? আপনারা কোনও পরামর্শ দিতে পারেন?’
দুই উকিল নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে তারপর বাদিনী ও বিবাদীর সঙ্গে পরামর্শ করলেন, তারপর বাদিনীর উকিল আদালতকে বললেন, ‘হুজুর, একটা সমাধান হয়েছে।’
আদালত খুশি হয়ে বললেন, ‘কী সমাধান?’
উকিলবাবু বললেন, ‘আপনি এই বিবাহবিচ্ছেদ এক বৎসর স্থগিত রাখুন। এরা দু’জনে এখন একসঙ্গে বাড়ি ফিরে যাবে। এক সঙ্গে থাকবে। সামনের বছর এই সময়ে এরা তিনটের স্থলে চারটে সন্তান নিয়ে এখানে আসবে। তখন আপনি ন্যায়সংগতভাবে বাচ্চাদের দু’জন-দু’জন করে ভাগ করে দেবেন।’
এর পরের কাহিনী রেলস্টেশনে। একেবারে রেলের কামরার মধ্যে।
লেডিস কামরা। এক প্রৌঢ়া বসে আছেন। কামরার দরজায় পরস্পরের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ এক যুগল। ট্রেন ছাড়তে বন্ধন বিচ্ছিন্ন হল। ছেলেটি প্ল্যাটফর্মে ছুটতে ছুটতে হাত নেড়ে বিদায় বার্তা জানাতে লাগল।
অবশেষে প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে ট্রেনটি বেরিয়ে আসার পর মেয়েটি চোখ মুছতে মুছতে এসে সিটে বসল। কপালে, সিঁথিতে ডগমগ করছে সিঁদুর। গায়ে নতুন গয়না নিশ্চয় অল্পদিন আগে বিয়ে হয়েছে।
মেয়েটি আসনে বসার পর তাকে ওই প্রৌঢ়া বললেন, ‘বাবা কাঁদাকাটি করতে নেই। বরের সঙ্গে তো আবার দেখা হবে। জীবনে বরকে ছেড়ে কত থাকতে হয়।’
চোখ মুছে, গম্ভীর মুখে নবোঢ়া মেয়েটি বলল, ‘আপনি ভুল করেছেন, আমি বরকে ছেড়ে যাচ্ছি না, বরের কাছে যাচ্ছি।’