তাবেয়ীদের হাদীস সাধনা
নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবীদের যুগ সূচিত হয়। সাহাবায়ে কিরাম যেভাবে নবী করীমের নিকট হইতে কুরআন-হাদীস তথা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষালাভ করিয়া বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন, সাহাবায়ে কিরামও ঠিক সেইভাবে তাঁহাদেরই পরবর্তী পর্যায়ের লোক তাবেয়ীদিগকে কুরআন-হাদীস এবং ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা দিয়াছেন। নবী করীম (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় ইসলামী জ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং নবীর যে মর্যাদা ছিল, নবী করীমের অন্তর্ধানের পর সাহাবায়ে কিরাম (রা) অনুরূপ দায়িত্বপূর্ণ মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। তারাও ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত চেষ্টার মারফতে তাবেয়ী যুগের মুসলিম জনগণকে ইসলামী জ্ঞানধারায় পরিষিক্ত করার জন্য কুরআন ও হাদীস জ্ঞানের অধিকতর পারদর্শী করিয়া তুলিবার কাজে ব্রতী হন। নবী করীম (ﷺ) যেভাবে মদীনায় প্রাথমিক পর্যায়ে এক বিরাট জ্ঞান-কেন্দ্র স্থাপন করিয়াছিলেন, উত্তরকালে সাহাবীদের অধিকাংশই ব্যক্তিগতভাগে ও নিজস্ব পরিমণ্ডলে এক-একটি জ্ঞান-চক্র রচনা করিয়াছিলেন এবং তাঁহাদের নিকট হইতে তাবেয়ী যুগের মুসলিমগণ কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জন করেন। কিন্তু তাবেয়ী কে? এ সম্পর্কে মৌলিক আলোচনা এখানেই হওয়া আবশ্যক। ঐতিহাসিক খতীব বাগদাদী এই সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
তাবেয়ী তিনি,যিনি সাহাবীরে সংস্পর্শে রহিয়াছেন।
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী সাহাবীর সহিত নিছক সাক্ষাৎ লাভই তাবেয়ী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়; বরং সাহাবীর একত্রে কিছুকাল অতিবাহিত করাও জরুরী। কিন্তু বহুসংখ্যক মুহাদ্দিসের মত অন্যরূপ। তাঁহাদের মতেঃ
******************************************************
‘তাবেয়ী’ তিনি , যিনি কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পাইয়াছেন, যদিও তাঁহার সংস্পর্শে থাকেন নাই।
ইবনে হাব্বান এই ব্যাপারে সাহাবীর সহিত সাক্ষাতকালে তাবেয়ী’র মধ্যে বুদ্ধি ও ভালমন্দ জ্ঞানের উন্মেষ হওয়ার শর্ত আরোপ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেনঃ
******************************************************
সাক্ষাতের সময় যদি সে অল্প বয়স্ক হইয়া থাকে এবং যাহা কিছু শুনিয়াছে তাহার পূর্ণ হেফাযত ও সংরক্ষণে সমর্থ হইয়া না থাকে, তাহা হইলে সাহাবীর সহিত তাহার নিছক সাক্ষাৎলাভের কোন মূল নাই।
[**************]
সাহাবীদের পর তাবেয়ীদের উচ্চমর্যাদা কুরআন মজীদেও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। বলা হইয়াছেঃ
******************************************************
এবং মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যাহারা ইসলাম কবুল করার ব্যাপারে অগ্রবর্তিতা লাভ করিয়াছে এবং যাহারা ঐকান্তিক আত্মোৎসর্গ ও সন্তোষ সহকারে তাহাদের অনুসরণ করিয়াছেন, আল্লাহ তাহাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তাহারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এবং আল্লাহ তাহাদের জন্য বাগান তৈরী করিয়া রাখিয়াছেন, যাহার নিম্নদেশ হইতে ঝরনাধারা প্রবাহিত রহিয়াছে।
[সূরা আত-তাওরা, ২য় রুকূ, ১০০ নং আয়াত।]
কুরআনের এই আয়াতে মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের পরেই তাবেয়ীদের কথা বরা হইয়াছে। ইহারা ঈমান ও আমলের ব্যাপারে যেমন সাহাবায়ে কিরামরে অধীন, অনুরূপভাবে কালের দিক দিয়াও তারা সাহাবদের উত্তরসূরী। এই কারণেই প্রচলিত পরিভাষায় তাঁহাদিগকে ‘তাবেয়ীন’ (পরবর্তী বা অনুসারী) বলা হইয়াছে।
তাবেয়ীদের কথা হাদীসেও বিশেষ মর্যাদা সহকারে বলা হইয়াছে। রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করিয়াছেনঃ
******************************************************
আমার সমকালীন লোকগণ (সাহাবী) আমার উম্মতের মধ্যে উত্তম। তাহাদের পর তাহারা, যাহারা তাহাদের সহিত মিলিতকালে অবস্থিত (তাবেয়ী’ন) তাহাদের পর তাহাদের সহিত মিলিতকালের লোকগণ (তাবে-তাবেয়ীন)।
[মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ফাজায়েল পৃষ্ঠা ৩০৯।]
বস্তুত সাহাবাদের পরবর্তী সময়ের মুসলিম জামা’আত- তাবেয়ীন মোটামুটিভাবে সাহাবীদেরই প্রতিবিম্ব ছিলেন। তারা একদিকে যেমন রাসূলের সাহাবীদের নিকট হইতে কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কিত যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করেন, অপরদিকে তারা তদানীন্তন বিরাট মুসলিম সমাজের দিকে দিকে কোণে কোণে উহার ব্যাপক প্রচারাকার্য় সম্পাদন করেন। ইসলামী ইলমে সাহাবীদের নিকট হইতে গ্রহণ ও পরবর্তীকালের অনাগত মুসলিমদের নিকট উহা পৌঁছাইবার জন্য কার্যত তারাই মাধ্যম হইয়াছিলেন।
[তাবেয়ীন-শাহ মুয়ীনউদ্দীন প্রণীত, ভূমিকা, পৃষ্ঠা ২-৩।]
এই তাবেয়িগণ সংখ্যায় ছিলেন অনেক- তাঁহাদের সংখ্যা নির্ভূলভাবে নির্ধারণ করাও সম্ভব নয়। কেননা নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কিরাম দুনিয়ার বিভিন্ন দিকে ছড়াইয়া পড়েন এবং-
******************************************************
সাহাবীদের মধ্য হইতে একজনের সঙ্গেও যাঁহার সাক্ষাৎ ঘটিয়াছে, তিনিই একজন তাবেয়ী।
[****************]
এই কারণে সারা মুসলিম জাহানে বিশেষভাবে এবং সারা দুনিয়ায় সাধারণভাবে কত সংখ্যক তাবেয়ী হইয়াছিলেন, তাহা নিরূপণ করা বাস্তবিকই অসম্ভব। কিন্তু হাদীস সংকলনের ইতিহাসে কেবল সেইসব তাবেয়ীই উল্লেখযোগ্য, যাঁহারা নবী করীম (ﷺ)-এর পরবর্তী যুগে হাদীস শিক্ষা, হাদীস কণ্ঠস্থকরণ ও লিখনের সহিত কোন না কোন দিক দিয়া জড়িত ছিলেন। তাবেয়ীদের হাদীস সাধনা পর্যায়ে আমরা কেবল এই শ্রেণীর প্রখ্যাত তাবেয়ীদের সম্পর্কেই আলোচনা করিব।
তাবেয়ীদের যুগে হাদীস শিক্ষার যে ক্রমিক পদ্ধতি ছিল, তাহা নিম্নোক্ত বাক্যাংশ হইতে প্রমাণিত হয়ঃ
******************************************************
ইলমে হাদীস শিক্ষার পদ্ধতি এইরূপ ছিল যে, প্রথমে শ্রবণ করা হইত, পরে উহাতে মনোযোগ স্থাপন করা হইত, তাহার পর উহা মুখস্থ করা হইত, অতঃপর তদনুযায়ী আমল শুরু করা হইত এবং উহার পর তাহা প্রচার করার জন্য বাস্তব কার্যক্রম গ্রহণ করা হইত।
[**************]
বস্তুত ঠিক এই পদ্ধতি ও ক্রমিক অনুযায়ীই সাহাবায়ে কিরাম (রা) তাঁহাদের শিষ্য- শাগরিদদিগকে হাদীসের শিক্ষা দান করিতেন এবং নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকালের পর ইসলামী সমাজকেন্দ্রে জ্ঞান বিস্তারের আলোক-স্তম্ভ রচনা করিয়াছিলেন। ফলে এই যুগে বিপুল সংখ্যক লোক হাদীস শিক্ষা লাভ করার ও তদনুযায়ী নিজেদের জীবন গড়িয়া তুলিবার সুযোগ লাভ করেন। হাদীস মুখস্থ করা, হাদীস লিখিয়া রাখা এবং হাদীস গ্রন্হ সংকলন করা প্রভৃতি সকল কাজেই তারা পূর্ণমাত্রায় উদ্যোগী ও উৎসাহী হইয়াছিলেন। সেই সঙ্গে এই সকল বিষয়ে তারা পূর্ণ ব্যুৎপত্তি, কৃতিত্ব, যশ ও খ্যাতি লাভ করেন।
তাবেয়ী যুগে হাদীস চর্চার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে এখানে স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করা যাইতেছে।
হাদীস মুখস্থকরণ
সাহাবায়ে কিরামের ন্যায় তাবেয়িগণও হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ ও মুখস্থকরণের ব্যাপারে পূর্ণ উদ্যম, উৎসাহ, অপরিসীম আগ্রহ এবং নিষ্ঠা প্রদর্শন করিয়াছেন। তাঁহাদের নিকট কুরআন মজীদের পরে পরেই দ্বিতীয় জ্ঞন-উৎস ছিল এই হাদীস। কুরআনে তারা যেখানে ইসলামের মূল নীতি ও বিধানের পাঠ গ্রহণ করিতেন, হাদীসের মাধ্যমে তারা লাভ করিতেন ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান ও তথ্য।
তাবেয়ী যুগের মুসলমানগণ প্রথম পর্যায়ে হাদীস মুখস্থ করার প্রতিই সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন। যে হাদীসেই শুনিতে পাইতেন, তাহাই তারা মুখস্থ করিয়া ফেলিতেন। এই সময় পর্যন্ত আরব জাতির স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তির উপর পূর্ণমাত্রায় নির্ভরতা ছিল, কোন কিছু আয়ত্ত করিতে হইলে প্রথমত উহাকে মুখস্থ করাই ছিল তাঁহাদের চিরন্তন অভ্যাসগন রীতি। বিশেষত তখন পর্যন্ত লিখন-শিল্প তাহাদের মধ্যে বিশেষ বিস্তার, প্রসার ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করিতে পারে নাই।
কিন্তু এতদসত্ত্বেও হাদীস যে একেবারেই লিখিত হইত না, কেবল মুখস্থ করার উপরই সকলে নির্ভর করিতেন এমন কথাও নহে। বরং প্রকৃত অবস্থা এই ছিল যে, অধিকাংশ লোকই তখন মুখস্থ করিতেই অভ্যস্ত ছিলেন।যদি কেহ লিখিতেনও, তবুও তাহা লিখিতেন মুখস্থ করারই উদ্দেশ্যে, মুখস্থ না করিয়া কেবল লিখিয়া রাখার কোন রীতিই সেখানে ছিল না একথা বলা চলে। ইমাম মালিকের নিম্নোদ্ধৃত উক্তি হইতে এই সংক্রান্ত কাজের প্রকৃত অবস্থা জানা যায়। তিনি বলেনঃ
******************************************************
তখনকার লোক সাধারণত লিখিতে অভ্যস্ত ছিলেন না, তারা সাধারণত মুখস্থ করিতেই অভ্যস্থ ছিলেন। তাঁহাদের কেহ কোন জিনিস লিখিয়া লইলেও কেবল মুখস্থ করার উদ্দেশ্যেই লিখিতেন, আর মুখস্থ হইয়া গেলে পর উহাকে মুছিয়া ফেলিতেন।
[***************]
মুহাম্মদ ইবনে সিরীন তাবেয়ী সম্পর্কে বলা হইয়াছে যে, প্রথমে হাদীস লিখিয়া লইয়া উহা মুখস্থ করা এবং মুখস্থ হওয়ার পর লিখিত জিনিস বিনষ্ট করাই ছিল তাঁহাদের হাদীস শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি।
[********************]
ঐতিহাসিক ইবনে আসাকির মুহাদ্দিস ইসমাঈল ইবনে উবায়দার একটি উক্তি উদ্ধৃত করিয়া এই যুগের হাদীস মুখস্থ করার গুরুত্ব সুস্পষ্ট করিয়া তুলিয়াছেন। মুহাদ্দিস ইসমাঈল বলিতেনঃ
******************************************************
আমারা যেভাবে কুরআন মুখস্থ করি, হাদসকেও ঠিক সেইভাবে মুখস্থ করা আমাদের কর্তব্য।
[****************]
ঐতিহাসিক যাহবী প্রখ্যাত হাফেজে হাদীস ইবনে খুজায়মা সম্পর্কে লিখিয়াছেনঃ
******************************************************
একজন কুরআন পাঠক যেমন করিয়া কুরআনের সূরাসমূহ মুখস্থ করেন, ইবনে খুজায়মাও ঠিক তেমনিভাবে ফিকাহ সম্পর্কিত হাদীসসমূহ মুখস্থ করিতেন।
[****************]
খালিদ-আল-হাযযা তাবেয়ী বলিয়াছেনঃ আমি প্রথমে বড় বড় হাদীস লিখিয়া লইতাম এবং ********************************** যখন উহা মুখস্থ করিয়া লইতাম, তখন উহা মুছিয়া ফেলিতাম।
[************]
তাবেয়ী ইসমাঈল ইবনে ইউনুসের জীবনী বর্ণনা প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক যাহবী লিখিয়াছেন যে, তিনি বলিতেনঃ
******************************************************
আমি কুরআনের সূরা যেভাবে মুখস্থ করিতাম ঠিক সেইভাবেই আবূ ইসহাক বর্ণিত হাদীসসমূহ মুখস্থ করিতাম।
[**********************]
তাবেয়ী শহর ইবনে হাউসাবের জীবনী আলাচনা প্রসঙ্গে লিখিত হইয়াছে যে, আহমাদ আবদুল হামীদ ইবনে রহমানের নিকট তাঁহার (শহর) বর্ণিত সমস্ত হাদীস সংগৃহীত ছিল এবং
******************************************************
তিনি হাদীস এমনভাবে মুখস্থ করিতেন যে, মনে হইত তিনি কুরআনের কোন সুরা পাঠ করিতেছেন।
[**************]
প্রখ্যাত মুসনাদ গ্রন্হ সংকলনকারী মুহাদ্দিস আবূ দায়ূদ তায়ালিসি দাবি করিয়া বলিতেনঃ
******************************************************
আমি ত্রিশ সহস্র হাদীস ‘ফর ফর’ করিয়া মুখস্থ পড়িতে পারি; অবশ্য ইহা আমার অহংকারের কথা নয়।
[***********]
প্রসিদ্ধ তাবেয়ী কাতাদাহ মুহাদ্দিস সায়ীদ ইবনে আরারাহকে সূরা বাকারার প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত মুখস্থ পড়িয়া শোনাইলেন, তাহাতে একটিও ভূল হইল না। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ
******************************************************
হযরত জাবির সংকলিত হাদীস গ্রন্হ (সংকলন) সুরা বাকারা অপেক্ষাও অধিক মাত্রায় আমার মুখস্থ রহিয়াছে।
[*****]
এই যুগে হাদীস শিক্ষাদান কার্য কিভাবে সম্পাদিত হইত, তাহা নিম্নলিখিত বিবরণ হইতে বুঝিতে পারা যায়।
উরাওয়া ইবনে জুবাইর হযরত আয়েশা (রা)-এর বোনপো এবং ছাত্র ছিলেন। তাঁহার পুত্র হিশাম ইবনে উরওয়া বলেন যে, আমার পিতা আমাকে ও আমর অন্যান্য ভাইদের হাদীস শিক্ষা দিতেন। আবার আমাদের কাছে তাহা শুনিতে চাহিতেন এবং বলিতেনঃ
******************************************************
তোমরা যাহা পড়িয়াছ, তাহা আমাকে বারবার পড়িয়া শোনাও।
ইহার পর তিনি বলেনঃ
******************************************************
আমার পিতা আমার মুখস্থ করার শক্তির পরিচয় পাইয়া অত্যন্ত বিস্মিত এবং খুশী হইতেন।
[*****************]
ইবরাহীম নাখারী তাবেয়ী তাঁহার হাদীসের ছাত্রদিগকে উপদেশ স্বরূপ বলিতেনঃ
******************************************************
তুমি যখন কোন হাদীস শ্রবণ করিবে, তখন উহা অপরের নিকট বর্ণনা করিবে।
[***************]
তাবেয়ী যুগের প্রসিদ্ধ হাদীস সংগ্রহক ইমাম ইবনে শিহাব জুহরী সম্পর্কে বর্ণিত হইয়াছে, তিন এশার নামাযের পর অযু করিয়া হাদীস মুখস্থকরণ ও হাদীস আলোচনায় বসিয়া যাইতেন এবং ফযরের নামায পর্যন্ত একই বৈঠকে আসীন থাকিয়া হাদীস চর্চা করিতেন।
[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৭৯।]]
এই ইমাম জুহীর বলিয়াছেনঃ
******************************************************
উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহকে যখন আমি কোন হাদীস জিজ্ঞাসা করিতাম, তখন তিনি এমনভাবে হাদীস বর্ণনা শুরু করিতেন যে, তখন মনে হইত যেন একটি সমুদ্র ফুটিয়া বাহির হইয়াছে।
[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৮০।]
বস্তুত প্রথম হিজরী শতকের প্রায় শেষ পর্যন্তই আবর জাহানের মুসলিম আলিমগণ সাধারণত কোন কিছু লিখিয়া রাখার প্রতি মনোযোগী ছিলেন না, লিখিয়া রাখার পরিবর্তে মুখস্থ করিয়া রাখাই ছিল তাঁহারদের নিকট সহজতর কাজ।
এইরূপ পরিবেশ একালের সকল হাদীসবিদ তাবেয়ী কর্তৃক যে ব্যাপকভা হাদীস লিখিত হইবে, তাহা ধারণা করা যায় না। এই কারণে প্রথম হিজরী শতকে হাদীস লেখকদের তুলনায় হাদীস মুখস্থকারীদের সংখ্যা অনেক বেশী। এই যুগের এমন অসংখ্য মনীষীর নাম জীবনী গ্রন্হসমূহে উল্লিখিত হইয়াছে, যাহারা বিপুল সংখ্যক হাদীস- হাদীসের বিরাট বিরাট সংকলন- সম্পূর্ণ মুখস্থ করিয়া রাখিয়াছিলেন এবং তারা তাহা এমনভাবেই মুখস্থ পড়িয়া শোনাইতে পারিতেন যে, কোথাও একটি ভূলও পরিলক্ষিত হইত না।
হাদীস লিখন
সাহাবায়ে কিরাম যেমন হাদীস সংরক্ষণের জন্য উহা কেবর মুখস্থ করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, অনেক সাহাবী উহা লিখিয়া রাখার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করিয়াছেন। অনুরূপভাবে তাবেয়িগণও হাদীস কেবল মুখস্ত করাকেই হাদীস সংরক্ষণের দায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট মনে করেন নাই, সেই সঙ্গে তাঁহাদের মধ্যে এমন লোকও ছিলেন, যাঁহারা উহাকে লিখিয়া রাখার গুরুত্ব পূর্ণমাত্রায় অনুভব করিয়াছিলেন। এক কথায় বলা যায়, সাহাবা ও তাবেয়ী- এই উভয় যুগে হাদীস কেবলমাত্র মুখস্থ করাই যদি যথেষ্ট মনে করা হইত এবং কেহই উহা লিপিবদ্ধ করার দিকে মনোযোগ না দিতেন, তাহা হইল রাসূলের হাদীসের বিরাট অংশের বিলুপ্ত হইয়া যাওয়ার আশংকা ছিল। এইজন্য মুখস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে হাদীস লিখিয়া লওয়ার দিকেও যে এই উভয় যুগের বিশেষ বিশেষ লোকের দৃষ্টি নিবদ্ধ হইয়াছিল, ইহাকে মুসলিম জাতির প্রতি আল্লাহর এক অপরিসীম অনুগ্রহই বলিতে হইবে।
বস্তুত তাবেয়ীদের মধ্যে বহু লোক সাহাবীদের নিকট হইতে হাদীস শ্রবণ ও শিক্ষা লাভ করিয়া তাহা যথাযথ সতর্কতা, লক্ষ্য ও মনোযোগ সহকারে লিপিবদ্ধ ও সংকলিত করিয়াছেন। নিম্নোক্ত বর্ণনা হইতে তাহার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যাইবে।
১। বশীর ইবনে নুহাইক তাবেয়ী হযরত আবূ হুরায়রার হাদীসের ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেনঃ আমি হযরত আবূ হুরায়রার নিকট যত হাদীস শুনিতাম, তাহা সবই লিপিবদ্ধ করিয়া লইতাম। শেষকালে তাঁহার নিকট হইতে বিদায় লওয়ার সময় তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া লিখিত হাদীস-সমষ্টি তাঁহার নিকট পেশ করিলাম এবং তাহা সবই আদ্যোপান্ত পড়িয়া তাঁহাকে শোনাইলাম। বলিলামঃ- ********************* ‘ইহা সেই সমস্ত হাদীসের সমষ্টি, যাহা আমি আপনার নিকট হইতে শুনিয়াছি’। জওয়াবে হযরত আবূ হুরায়রা (রা বলিলেনঃ হ্যাঁ, ‘ঠিক আছে’।
[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৬৮।]
২। হযরত আবূ হুরায়রার অপর একজন ছাত্র হইতেছেন হাম্মাম ইবনে মুনাববাহ ইয়ামানী। তিনিও শ্রুত হাদীসসমূহ লিখিত আকারে সুসংবদ্ধ করেন। এই সংকলন ‘সহীফায়ে হাম্মাম ইবনে মুনাব্বাহ’ নামে খ্যাত। ইহাতে প্রায় একশত চল্লিশটি হাদীস সন্নিবেশিত রহিয়াছে। এই গ্রন্হের পাণ্ডুলিপি আজিও দামেশক ও বালিনের লাইব্রেরীতে সুরক্ষিত রহিয়াছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত গবেষক ও অনুসন্ধান-বিশারদ ডক্টর হামীদুল্লাহ ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে প্রথম ইহার সন্ধান লাভ করেন। উহার ঠিক বিশ বৎসর পর ১৯৫৩ সনে দামেশকের আবরী পত্রিকা **************** তে উহাকে চার কিস্তিতে প্রকাশ করেন। ডক্টর হামীদুল্লাহর ঘোষণা হইতে ইহাও জানা গিয়াছে যে, তুরস্কের আনকারা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে হাম্মাম ইবনে মুনাববাহর ছাত্র মা’মর ইবনে রাশেদ সংকলিত অপর একখানি হাদীস গ্রন্হের পাণ্ডুলিপিও বর্তমান রহিয়াছে।
মা’মর ইবনে রাশেদের ছাত্র এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের উস্তাদ আবদুর রাজ্জাক ইবনে হাম্মাম আস-সানয়ানী আল-ইয়ামনী (১২৫-২১১ হিঃ} সংকলিত এক হাদীস গ্রন্হও পাওয়া গিয়াছে। ইহা ‘মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক’ নামে খ্যাত।
এই হাদীস সংকলনসমূহ একদিকে যেমন নবী করীম (ﷺ)-এর জীবনকাল ও খিলাফতে রাশেদার আমলের হাদীস সংকলিত হওয়ার জীবন্ত নিদর্শন এবং প্রাচীনতম গ্রন্হসমূহের মূল উৎস।
[এই সমস্ত বিবরণ ডঃ হামীদুল্লাহ সম্পাদিত ‘সহীফায়ে হাম্মাম ইবনে মুনাব্বাহ’র ভূমিকা হইতে গৃহীত।]
৩। সায়ীদ ইবনে জুবাইর তাবেয়ী বলেনঃ
******************************************************
আমি ইবনে উমর ও ইবনে আব্বাসের নিকট রাত্রিবেলা হাদীস শুনিতাম ও সওয়ারীর উপর বসিয়া তাহা লিখিয়া রাখিতাম।
[সুনানে দারেমী, পৃষ্ঠা ৬৮।]
তাঁহার অপর এক উক্তি হইতে জানা যায়, তিনি হযরত ইবনে আব্বাসের সাথে কোন এক রাত্রিবেলা মক্কার পথে চলিতেছিলেন। এই সময় ইবনে আব্বাস (রা) হাদীস বর্ণনা করিতনে এবং তিনি উহা লিখিয়া রাখিতেন। এইভাবে সকাল বেলা পর্যন্ত চলিতে থাকিত।
[ঐ]
৪। তাবেয়ী সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা সম্পর্কে মুবারক ইবনে সায়ীদ বলেনঃ
******************************************************
সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাত্রিবেলা হাদীস শ্রবণ করিয়া প্রাচীরগাত্রে লিখিয়া রাখিতেন, সকাল বেলা উহার অনুলিপি তৈয়ার করিয়া উহা মুছিয়া ফেলিতেন।
[সুনানে দারেমী।]
৫। হুজর ইবনে আদী’র সম্মুখে একদিন পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা করা সম্পর্কে একটি প্রশ্ন পেশ করা হয়। তিনি বলিলনঃ আমার সহীফাখানা লইয়া আস।
******************************************************
উহা আনা হইলে তিনি বিসমিল্লাহ বলিয়া পড়িতে লাগিলেন এবং বলিলেনঃ ইহা আমি হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব হইতে শুনিয়াছি, তিনি বলিতেছিলেন যে, ‘পবিত্রতা হইতেছে অর্ধেক ঈমান’।
[তাবাকাতে ইবনে সায়াদ ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৪।]
ইহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আলীর নিকট হইতে হাদীসসমূহের কোন লিখিত সংকলন হুজর ইবনে আদীর নিকট বর্তমান ছিল এবং কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হইলেই তিনি উহা খুলিয়া হাদীস পাঠ করিয়া তাহা হইতে জওয়াব শোনাইতেন।
৬। আবদুল আ’লা ইবনে আমরের নিকটও একখানি লিখিত হাদীস সংকলন রক্ষিত ছিল। তাঁহার সম্পর্কে বলা হইয়াছেঃ
******************************************************
আবদুল আ’লা যত হাদীস ইবনুল হানাফীয়া হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, আসলে তাহা সবই লিখিত পুস্তক আকারে পাওয়া একটি সমষ্টি ছিল। তিনি উহা তাঁহার নিকট হইতে পাইয়াছিলেন; কিন্তু হাদীসসমূহ তাঁহার জবানীতে শ্রবণ করেন নাই।
[তাবাকাতে ইবনে সায়াদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৪।]
৭। ইমাম বাকের –এর নিকটও হাদীসের এক সংকলন গ্রন্হ বর্তমান ছিল। হযরত জা’ফর সাদেক বলেনঃ আমি আমার পিতার নামে যত হাদীস বর্ণনা করিঃ ************** তাহা সবই তাঁহার সংকলিত গ্রন্হে লিপিবদ্ধ পাইয়াছি ও তাহা হইতেই গ্রহণ করিয়াছি’।
[তাহযীবুত তাহযীব, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৪।]
৮। হযরত মুয়াবিয়ার শাসন আমলে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণিত হাদীসসমূহের কয়েকটি সংকলন তৈয়ার করা হয। মারওয়ান ইবনে হাকাম হযরত যায়দ ইবনে সাবিত বর্ণিত হাদীস সমূহের সংকলন করেন।
[সুনানে দারেমী।]
বস্তুত তাবেয়িগণ সাহাবীদের নিকট হইতে নানাভাবে হাদীস সংগ্রহ করিতেন। দূরবর্তী কোন সাহাবীর নিকট হইতে হাদীস জানিবার উদ্দেশ্যে তারা পত্রালাপও করিতেন এবং পত্রের মারফতে তারা রাসূলের হাদীস জানিয়া লইতেন। হযরত সায়াদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রা) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসে উহার সুস্পষ্ট প্রমাণ রহিয়াছে। আমের জুহরী আল-করশী (মৃত্যুঃ ১০৪ হিঃ) বলেনঃ
******************************************************
আমি হযরত জাবির (রা)- এর নিকট আমার গোলাম নাফে’র হস্তে এক পত্র প্রেরণ করিয়াছিলাম। তাহাতে লিখিয়াছিলাম যে, আপনি রাসূলের নিকট হইতে শুনিয়াছেন এমন কোন জিনিস আমাকে লিখিয়া পাঠান। উত্তরে তিনি (জাবির) আমাকে লিখিলেন যে আসলামীকে যে শুক্রবার ‘সংগেসার’ করা হয় সেই দিনের বৈকালে আমি রাসূলে করীমকে বলিতে শুনিয়াছিঃ দ্বীন-ইসলাম কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম থাকিবে; কিংবা বলিয়াছেনঃ যতদিন তোমাদের উপর কুরায়শ বংশের বারোজন খলীফা নিযুক্ত না হইবে (ততদিন পর্যন্ত দ্বীন ইসলাম কায়েম থাকিবে)।
[সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, কিতাবূল ইমারাত, পৃষ্ঠা ১১৯।]
১০। রাজা ইবনে হায়াত বলেন যে, খলীফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিক আমার নিকট একটি হাদীস জিজ্ঞাসা করিয়া তাঁহাকে লিখিয়া পাঠাইবার জন্য তাঁহার এক কর্মচারীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু-
******************************************************
উক্ত হাদীস আমার নিকট লিখিত না থাকিলে আমি উহা ভুলিয়া যাইতাম।
[সুনানে দরেমী, পৃষ্ঠা ৬৯।]
১১। তাবেয়ী হাদীসবিদগণ পারস্পরিক পত্রালাপের মারফতে একজন অপরজনকে হাদীসের কথা জানাইতেন। ইয়াযিদ ইবনে আবূ হাবীব বলেনঃ
******************************************************
তাবেয়ী আতা আমাকে লিখিয়াছিলেন যে, তিনি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা)- কে বলিতে শুনিয়াছেন যে, রাসূলে করীম (ﷺ)-কে মক্কা বিজয়ের দিন (মক্কায় থাকিয়া) বলিতে শুনিয়াছি যে, নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূল মদ্য, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি ক্রয়-বিক্রয় হারাম করিয়া দিয়াছেন।
[*******************]
এই হাদীস লিখনে তাবেয়িগণও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করিতেন, যাহার তাহার নিকট হইতে তারাও হাদীস লিখিয়া লইতেন না। ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ীন তাবেয়ী বলেনঃ
******************************************************
আমাকে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবদুর রাজ্জাক বলিলেনঃ আমার নিকট হইতে কোন কিতাব ছাড়া অন্ততঃ একটি হাদীস হইলেও তাহা লিখিয়া লও।
তিনি হাদীসের বড় হাফেজ ছিলেন বটে। কিন্তু এই সময় (শেষ জীবনে) তিনি অন্ধ হইয়া গিয়াছিলেন। এইজন্য আমি তাঁহার নিকট হইতে কোন হাদীস লিখিয়া লইতে রাযী হইলাম না, কেননা তাঁহার হাদীস ভূলিয়া যাওয়ার আশংকা ছিল ও কি বলিতে কি বলেন তাহারও ভয় ছিল। এইজন্য আমি তাঁহাকে স্পষ্ট ভাষায় বলিলামঃ *************** ‘না, একটি অক্ষরও আপনার নিকট হইতে শুনিয়া লিখিয়া লইব না’।
[মুসনাদে ইমাম আহমদ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৪।]
আহলি বায়াত-এর হাদীস সংকলন
ইমাম হুসাইন (রা)-এর দৌহিত্র ও আলী ইবনুল হুসাইনের পুত্র ইমাম যায়দ ৮০ হিজরী সনের কোন এক সময় মদীনা-তাইয়্যেবায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আহলি বায়াত- এর লোকদের নিকট হইতে সুন্নাত ও হাদীসের যাবতীয় ইলম সংকলন করেন। তাঁহার সংকলিত হাদীস গ্রন্হের নাম ************** ইহাতে বিপুল সংখ্যক হাদীস সংকলিত হইয়াছিল। এই হাদীসমূহের অধিকাংশই হযরত আলী (রা)-এর সূত্রে নবী করীম (ﷺ)-এর নিটক হইতে বর্ণিত। কিছু সংখ্যক হাদীসের সূত্র হযরত আলী (রা) পর্যন্ত পৌছিয়া *********** হইয়া গিয়াছে। ইমাম হুসাইন ও হযরত আলী (রা) ছাড়াও অন্যান্য বহু সূত্রে বিপুল সংখ্যক হাদীস তাঁহার নিকট হইতে বর্ণিত হইয়াছে। তাঁহার পিতা আলী ইবনুল হুসাইন বহু সংখ্যক তাবেয়ী হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। সেই বর্ণনাসমূহ ইমাম যায়দ তাঁহার বড় ভাই ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকের এর নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছিলেন। কেননা তাঁহার পিতা আলী ইবনুল হুসাইন ৯৪ সনে ইন্তেকাল করেন। তখন তিনি মাত্র চৌদ্দ বৎসর বয়সের বালক ছিলেন। ইমাম আবূ হানীফা (র) ও অন্যান্য ফিকহী ইমামগণ তাঁহার নিকট হইতে হাদীস গ্রহণ ও বর্ণনা করিয়াছেন।
[**********************]