তাপ্পিমামার অপেক্ষায় – হিমানীশ গোস্বামী
ধুঃ যাঃ লোকটা কেটে পড়ল। আমি অনিন্দ্যকে বললাম। অনিন্দ্য কথাটা শুনে ফেটে পড়ল। বলল, ওর মাথায় ডাণ্ডা মেরে ফেলে দিবি কোথায়, তা-নয় এসে বলছিস কেটে পড়ল! আমি তো দেখলাম লোকটা বাসে উঠতে যাচ্ছে আর তুই ঠিক তার দুহাত পেছনে…
দুহাত নয় তিন হাত। আমি ভ্রম সংশোধনের চেষ্টা করলাম।—তাও ভাই কয়েক সেকেন্ডের জন্য। বরাবরই ও আমার থেকে চার-পাঁচ হাত এগিয়ে ছিল। দূর থেকে ঠিক পারসপেকটিভ হয়নি, দেখেছি কম লোকেরই হয়।
অনিন্দ্য বলল, একটু পা চালালেই ঠিক ধরে ফেলতে পারতি। আর একটু কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে যেত।
আমি তখন বানিয়ে বানিয়ে বললাম, আরে ওই লোকটাই যে আমাদের টারগেট, সে ব্যাপারে আমার একটু সন্দেহ ছিল। পেছন থেকে মনে হচ্ছিল বটে উনিই তাঞ্জিমামা, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না শিওর হচ্ছি, ততক্ষণ তো আর দুম করে মাথায় ঘা দিতে পারিনে, তাও আবার দিনে দুপুরে।
অনিন্দ্য বলল, হুঁ—তোর দ্বারা কিসসু হবে না। অত হিসেব টিসেব করতে গেলে বারোটা বাজবে তোর। আরে আগে মেরে পরে দেখবি ঠিকমত লোকের মাথায় ঘা পড়ল কিনা। এখন কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে। দুপুরের শোয়ে বায়স্কোপে যাব বলে রেখেছি গোবর মামাকে। গোবর মামা কাল কলকাতায় এয়েছে, দুদিন ফুতি-টুর্তি করে আবার চলে যাবেন।
—কোথায় চলে যাবেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
—যেখান থেকে এসেছেন। অনিন্দ্য বলল।
আমি মাথা চুলকোতে লাগলাম।
—এতক্ষণ সময় কি করে কাটানো যায়, তাই ভাবছি। তা যে লোক বাড়ি থেকে গিয়ে বাসে উঠল, সে নিশ্চয় ফিরে আসবে। কিন্তু কখন আসবে? অনিন্দ্য জিজ্ঞেস করল।
—তা আমি জানব কেমন করে? আমি বললাম।
—মুশকিলে ফেলে দিলি। আচ্ছা, একজন ভদ্রলোক বাড়ি থেকে বেরিয়ে কতক্ষণ বাইরে থাকে? তুই তো খুব ভদ্র লোকদের সঙ্গে মিশিস-টিশিস, বল না দেখি? অনিন্দ্য বলল।
—কে জানে! আমি বললাম।
অনিন্দ্য পকেট থেকে পুরনো হয়ে-যাওয়া ছোট্ট একটা নোটবই বার করে পাতাগুলোকে ওল্টাতে লাগল। বলল, ধারে কাছে একটা চেনা লোকের বাড়ি নেই যে, সেখানে গিয়ে একটু বসা-টসা যায়। আর রোয়াকগুলোও যে কোথায় সব বে-পাত্তা হয়ে আছে কে জানে? পাঁচ বছর আগেও এই কলকাতা শহরে বসবার জায়গা ছিল কত!
তারপর একটু চুপ করল। আমি দেখলাম অনিন্দ্যর খোঁচা খোঁচা দাড়ি বার-হওয়া মুখ। চোখ দুটো কেমন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। উঁচু, অস্বাভাবিক চোয়াল। মাঝে মাঝেই ঢোঁক গিলছে আর বিরাট কণ্ঠা দেখা যাচ্ছে উঠছে, নামছে। ওকে দেখে আমার কেমন মায়া হল। চাকরি-টাকরি করত কোথায় কয়লা খনি অঞ্চলে, মধ্যপ্রদেশের কোথায়। তার পর চাকরি ছেড়ে দেয় ও সামান্য কারণে। খুব সম্ভবত, ম্যানেজার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার কাকে যেন চড় মেরেছিল একদিন রাগ করে। ব্যস! ওকে দশ টাকা ফাইন করে। ফাইন না দিয়ে সে চাকরিই ছেড়ে দেয়। তারপর একটু-আধটু ডাকাতি শুরু করে। কিন্তু সেখানে দারুণ দলাদলি। এ-ডাকাতের সঙ্গে ও-ডাকাতের বনে না—যাই হোক, বছর দশেক ডাকাতি করবার পর সে বিলাসপুরে একটা পানের দোকান করে। সেখানে দু-এক বছর হল বিয়ে-টিয়ে করে বেশ ছিল, কিন্তু ইতিমধ্যে তার এক পুরনো সহকর্মী—ভোন্টুং তাকে দেখতে পায় এবং তাকে আবার ডাকাত দলে যাবার জন্য সাধাসাধি করে। ও রাজি হয় না। তখন ভোন্টুং তাকে বলে তাকে একটা কাজ করতে হবে। কাজে সফল হলে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার। সফল না হলে অনিন্দ্যকে মেরে লাশ করে দেবে। কাজটা হল তাপ্পিমামার মাথায় লাঠির ঘা বসানো। একেবারে মেরে ফেলার দরকার নেই, কেবল মাথায় একটা লাঠির ঘা। তাতে যদি তিনি মারা পড়েন, তার আর কি করা যাবে।
কিন্তু কয়েক বছর ডাকাতি না করে করে অনিন্দ্য প্রায় ভদ্রলোকের মতো হয়ে গেল। কয়েকবারই সে তাপ্পিমামাকে মারতে গিয়ে মারতে পারেনি। এখন আমাকে এসে ধরেছে—ভাই, এই কাজটা করে দিতে হবে—বুঝলি? আমি লেখক মানুষ। কাগজে কলমে অনেক মৃত্যু ঘটিয়েছি, —আহত করেছি বহু লোককেই, কিন্তু ডাণ্ডা দিয়ে একজন জলজ্যান্ত ভদ্রলোকের মাথা ফাটাই কেমন করে? আমি বলেছিলাম, না রে অনিন্দ্য, ওসব আমার দ্বারা হবে টবে না। অনিল তখন বলেছিল, সাবধান! আর একবার আপত্তি করেছিস কি তোকে ধরে গঙ্গায় ফেলে দেব আর মাছেরা তোকে ঠুকরে ঠুকরে খাবে, যেমন তুই এতদিন ওদের খেয়েছিস।
আমি তখন ভয়ে চুপ। কি করি—এইসব ডাকাতদের কথার সবটাই তো আর মিথ্যে নয়। তাছাড়া ও বলেছিল সফল হলে ও আমাকে পঁয়ত্রিশ টাকা দেবে। বহুদিন হল একটা ভাল ফাউনটেন পেন কিনব ভাবছিলাম, তা ওই টাকা আর কিছু টাকা হলেই কিনে ফেলতে পারব ভেবে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু আসলে করতে গিয়ে দেখি কাজটা দারুণ শক্ত। হাত-পা কেমন ঠাণ্ডা হয়ে আসে। যদিও আমি জানি আমি তাপ্পিমামাকে মারব না, মানে, তেমন ভাবে তো নয়ই। ভোন্টুং-এর সঙ্গে তাপ্পিমামার কিরকম ধরনের শত্রুতা তাও জানি না। আমি ভোন্টুংকে জীবনে দেখিনি। তার শত্রু তাপ্পিমামাকেও পরশুদিন কেবল দেখেছি। আমি আর অনিন্দ্য তাঁকে চিনবার জন্য এই পাড়ার চায়ের দোকানে দিন পাঁচেক এসেছি—চারদিন দেখা মেলেনি। পরশুদিন অনিন্দ্য বলল, ওই হলেন তাপ্পিমামা। দেখি একজন রোগা পটকা লোক একটা ছেঁড়া ছেঁড়া ছাতা মাথায় দিয়ে একটা ছোট্ট বাজারেব থলি হাতে নিয়ে চলেছেন। সেই থলের ভেতর থেকে সবুজ, সুন্দর চকচকে একগাছা পুঁইশাকের ডগা বেরিয়ে আছে, আর একটা চিলতে করে কাটা কুমড়োর একটু অংশ। প্রথমে ভয় হয়েছিল তাপ্পিমামার বুঝি বেজায় চেহারা হবে— দারোয়ান, পুলিশ কিংবা মিলিটারির মতো। ভেবেছিলাম আমি কিছুতেই দারুণ জোরও কাউকে মারতে টানতে পারব না। আমার খুব ভয় হয়েছিল মনে মনে। কিন্তু এই লোকটিকে দেখে আমার আরও কেমন কেমন করতে লাগল। ওই নিরীহ দেখতে রোগা ছেঁড়া ছাতাওলা লোকটিকে আমি মারব? কেন? কেন? হত যদি কোনও গুণ্ডা তাহলে দেখা যেত। অবশ্য মনের গহনে এটাও জানতাম যে গুণ্ডাই হন আর যেই হোন মারতে পারতাম না কাউকেই।
আসলে ভোন্টুং-এর নাকি সম্মান চলে যাচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে ততই নাকি তার প্রেসটিজ কোথায় যেন কর্পুরের মতো উবে যাচ্ছে। কিছু দিন আগে নাকি তাপ্পিমামাকে ভোন্টুং চিঠি লিখেছিল, সাবধান! তোর মাথায় লাঠি মারা হবে। তখন ভোন্টুং-এর ধারণা হয়েছিল যে তাপ্পিমামা সেই চিঠি পেয়েই একেবারে নার্ভাস হয়ে ভোন্টুংকে একটা পিস্তল আর পনেরোটা গুলি পাঠিয়ে দেবে। ডোন্টুং-এর কাছ থেকে নাকি এক হাজার টাকা আগাম এজন্য নিয়েছিলেন তাপ্পিমামা। তাপ্পিমামার আসল নাম বিশেষ কেউ জানে না। ইনি নাকি অন্ধকার বাজারে গোপনে বন্দুক পিস্তলের বে-আইনি ব্যবসা করেন। পিস্তল আর গুলি না পাঠালেও অন্তত একটা চিঠি লিখে দেবেন এটা ভোন্টুং ধরে নিয়েছিল। কিন্তু একমাসেও কোনও জবাব না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অনিন্দ্যকে পাঠিয়েছে। আর অনিন্দ্য আমাকে…কিন্তু এসব কথা আগেই বলা হয়েছে।
কাল রাত্তির বেলা আমি তাপ্পিমামার সঙ্গে দেখা করে সব অবশ্য বলে দিয়েছি। বলেছি, দাদা— আমার ওপর ভার পড়েছে আপনাকে জখম কিংবা খতম করা। আপনি যদি আমাকে এবং আপনাকে দুজনকেই বাঁচাতে চান তাহলে কেটে পড়ুন। তাপ্পিমামা তা শুনে একেবারে বাঘের মতো গর্জন করে বললেন, ‘কি! আমাকে শাসানো? কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে শুনি?” তারপর হঠাৎ একেবারে থেমে অতি আস্তে আস্তে বললেন, জানেন মশাই—আমি ওসব ছেড়ে ছুড়ে দিয়েছি। এখন কালীঘাটে আমি জনসাধারণের হাত দেখি। আমি পিস্তল ফিস্তল কোথায় পাব। তাও আবার ভোন্টুং-এর চাই মশার-পিস্তল!
আমি বললাম, মশা মারার পিস্তল হয় নাকি?
তাপ্পিমান বললেন, মশা মারার পিস্তল নয়—মশার পিস্তল। মশার একটা কোং-এর নাম। কোং বোঝেন তো?
আমি বললাম, তা বুঝি। কিন্তু দাদা আপনি এত জল ঘোলাটে করলেন কেন তাহলে? একটা চিঠি লিখে দেন তো ভোটুংকে? তাঁর টাকা নিয়ে গাপ্ করে বসে আছেন সেটাও তো দেখতে হবে?
তা শুনে তাপ্পি মামা বললেন—কে এসব কথা বলে, অ্যাঁ? আমি ওর টাকা নিয়েছি এটা ঠিক। আমি নিইনি, আমার একটা কোং ছিল, সেই কোং-এর হয়ে আমি নিয়েছি অগ্রিম। সেটা ঠিক—তা এখন তো তার সেটা ফেরত দেওয়া যায় না!
আমি বললাম, কেন?
তাপ্পিমামা বললেন, কেন না সে কোং উঠে গেছে। কোং লালবাতি জ্বেলেছে। এখন আপনিই বলুন লালবাতি জ্বলছে এমন কোং-এর কাছ থেকে কোনও জিনিসের সাপ্লাই পাওয়া গেলে সেটাকে কি বলা যাবে!
আমি বললাম, মিরাকল?
তাপ্পিমামা বললেন, কি বললেন, গ্যাঁড়াকল? আমি জীবনে গ্যাঁড়াকল করিনি। আমি চিরকালই সাধু প্রকৃতির লোক। হঠাৎ করেক বছর মনটা অন্যরকম হয়েছিল, এখন আবার ঠিক হয়ে গেছে।
আমি বললাম, শুনুন এখন আমার পোজিশন। কাল আমি আপনার মাথায় লাঠি মারতে আসব। আপনি যদি ইতিমধ্যে কেটে পড়েন তাহলে বেঁচে যাবেন। আমার মাথায় লাঠি মারা পছন্দ নয়।
তাপ্পিমামা আমার দিকে অনেকক্ষণ কটকট করে তাকালেন, তারপর বললেন, কাল দেখা যাবে কার মাথা কে লাঠি মারে!
কিছুক্ষণ চুপচাপ। খানিক পর বললেন, কোথায় কেটে পড়ি বলুন তো?
আমি বললাম, তার আমি কি জানি?
তাপ্পিমামা বললেন, ঠিকই বলেছেন, কিছুদিন কোথাও কেটে পড়ব। মানে এ পাড়া ছেড়ে অন্য পাড়ায় চলেটলে যাব। আপনি খবরদার কিন্তু খোঁজ করবেন না। তা ছাড়া কক্ষনও কালীঘাটে গিয়ে গণকটনক খুঁজবেন না— তাঁদের মধ্যে আমাকে পেয়ে যেতে পারেন।
আমি বললাম, পাগল?
কিন্তু তিনি যে পালাননি তা কেমন করে জানব? আমি তো অনিন্দ্যকে খুব বলেছি—তাপ্পিমামাকে একদম শেষ করেই দেব। আমার কি তেজ! সকালে এসে দেখি তিনি গুটি গুটি বাসের দিকে যাচ্ছেন। আমিও তাঁর পেছন পেছন যাচ্ছি আর চাপা গলায় বলছি—যান মশাই, যান। পালান! কিন্তু তিনি এমন আস্তে আস্তে পালাচ্ছিলেন যে ইচ্ছে করছিল দিই এক ঘা মাথায়—তখন বুঝবেন ঠ্যালাখান।
যাই হোক, তিনি বাসে গিয়ে উঠলেন। আমিও বেঁচে গেলাম। স্বস্তির নিশ্বাস পড়ল। অনিন্দ্য সেটাকেই ভাবল দীর্ঘনিশ্বাস। তা ভাবুক গে। কিন্তু মুশকিল হল এই যে অনিন্দ্য ওখানেই অপেক্ষা করতে চায়। অনিন্দ্যর মত এই যে তাপ্পিমামা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন তখন নিশ্চয় বাড়িতে ফিরবেন। তা তিনি দশ মিনিটেও ফিরতে পারেন আবার দশ ঘণ্টাও লেগে যেতে পারে। অথচ আমি জানি তাপ্পিমামা আজ অন্তত আর ফিরবেন না। কিন্তু তা তো আর অনিন্দ্যকে বলতে পারি না।
সময় কাটানোর যে কি অসুবিধে তা বুঝলাম, যখন পনের মিনিটের মধ্যে আমার হাই উঠতে লাগল। একটা চায়ের দোকানে গিয়ে তিন কাপ করে চা খেলাম। কিছু সময় কাটল। আর মাত্র আধ ঘণ্টা। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আমরা কতকগুলো করে সিগারেট টানলাম। তাও এক ঘণ্টার বেশি কাটল না। এদিকে পা টন টন করছে।
একটা জায়গায় গ্যারাজ। সেখানে গোটা দশেক ভাঙা গাড়ি রয়েছে। আমরা সেদিকে এগুলাম। আমার চেহারাটা বোধ হয় কোনও একটা গাড়ির মালিকের মতো হবে। একজন মেকানিক ছুটে এসে বলল, দেরি হয়ে গেছে স্যার। কিছু মনে করবেন না। হর্ন মেরামত হয়ে গেছে—কিন্তু আসল ব্যাপার কি জানেন?
—কি ব্যাপার? অনিন্দ্য জিজ্ঞেস করল।
—আসল ব্যাপার হল, আপনার ক্লাচ ঠিক নেই। তা ছাড়া ব্রেকেবও বারোটা বেজে গেছে, ওটাও নতুন করাতে হবে। আপনার ডিসট্রিবিউটারও অক্ষত নেই। তা ছাড়া মোটরটা জ্বলে গেছে। নতুন ব্যাটারি দরকার।
আমি বলতে যাচ্ছিলাম, ও গাড়ি আমার নয়। কিন্তু আমাকে চুপ করতে বলে অনিন্দ্য বলল—আর কিছু?
মেকানিক বলল, গাড়ির বডিতেও কয়েকটা মেরামতির কাজ আছে। হেডলাপ দুটোই নতুন করতে হবে। তা ছাড়া সামনের কাঁচটা এমন বিবর্ণ হয়ে গেছে যে…।
অনিন্দ্য নিশ্চিন্তভাবে বলল, সব কাল করে দেবেন। খরচের জন্য ভাববেন না। ভাল কথা—সব সমেত কিরকম খরচ হতে পারে?
মেকানিক বলল, দাঁড়ান হিসেব করে দেখি। তারপর অনেক কি সব হিজিবিজি লিখে বলল, আঠারো হাজার!
—বেশ তো! অনিন্দ্য বলল।
আমি বললাম, গাড়িতে যেন কোনও ত্রুটি না থাকে!
তারপর বেরিয়ে এলাম।
দিন সাতেক পর হঠাৎ অনিন্দ্য বলল, আর ভয় নেই। তাপ্পিমামাকে মারবার কোনও প্রয়োজন নেই—ভোন্টুং আমাকে টেলিগ্রাম করেছে। আমি বললাম, কেন? অনিন্দ্য বলল, তা আমি কি জানি। টেলিগ্রামে কিছু ওসব নেই। বোধহয় তাপ্লিমামা সব মিটিয়ে টিটিয়ে নিয়েছে। কথা বলছি আর খবরের কাগজ ওল্টাচ্ছি। হঠাৎ দেখি তাতে লেখা উত্তর কলকাতার গ্যারাজে দক্ষযজ্ঞ! কি ব্যাপার?
পড়ে দেখি, সেই গ্যারাজে, যে গ্যারাজে আমরা উদারভাবে কার না কার গাড়িকে মেরামত করবার অঢেল অনুমতি দিয়ে এসেছিলাম সেখানে কাস্টমারের সঙ্গে গ্যারাজ কর্তৃপক্ষের বচসা হয় এবং ক্রমে তা হাতাহাতি এবং পরে দক্ষযজ্ঞে পরিণত হয়। তিনটি দমকল এবং পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্যে অবস্থা আয়ত্তে আনা হয়। খবর পরে অনিন্দ্য বলল, কলকাতাতে আর ভদ্রলোকের থাকা চলবে না দেখছি!
২৫ জুন ১৯৭২