তর্পণ

তর্পণ
(স্বর্গীয় দেশবন্ধুর চতুর্থ বার্ষিক শ্রাদ্ধ উপলক্ষে)

  
    − আজিও তেমনই করি
আষাঢ়ের মেঘ ঘনায়ে এসেছে
    ভারত-ভাগ্য ভরি।
আকাশ ভাঙিয়া তেমনই বাদল
    ঝরে সারা দিনমান,
দিন না ফুরাতে দিনের সূর্য
    মেঘে হল অবসান!
আকাশে খুঁজিছে বিজলি প্রদীপ,
    খোঁজে চিতা নদী-কূলে,
কার বয়নের মণি হরায়েছে
    হেথা অঞ্চল খুলে।
বজ্রে বজ্রে হাহাকার ওঠে,
    খেয়ে বিদ্যুৎ-কশা
স্বর্গে ছুটেছে সিন্ধু –
    ঐরাবত দীর্ঘশ্বসা।
ধরায় যে ছিল দেবতা, তাহারে
    স্বর্গ করেছে চুরি;
অভিযানে চলে ধরণির সেনা,
    অশনিতে বাজে তূরী।
ধরণির শ্বাস ধূমায়িত হল
    পুঞ্জিত কালো মেঘে,
চিতাচুল্লিতে শোকের পাবক
    নিভে না বাতাস লেগে।
শ্মশানের চিতা যদি নেভে, তবু
    জ্বলে স্মরণের চিতা,
এ-পারের প্রাণ-স্নেহরসে হল
    ও-পার দীপান্বিতা।
  
    − হতভাগ্যের জাতি,
উৎসব নাই, শ্রাদ্ধ করিয়া
    কাটাই দিবস রাতি!
কেবলই বাদল, চোখের বরষা,
    যদি বা বাদল থামে –
ওঠে না সূর্য আকাশে ভুলিয়া
    রামধনুও না নামে!
ত্রিশ জনে করে প্রায়শ্চিত্ত
    ত্রিশ কোটির সে পাপ,
স্বর্গ হইতে বর আনি, আসে
    রসাতল হতে শাপ!
হে দেশবন্ধু, হয়তো স্বর্গে
    দেবেন্দ্র হয়ে তুমি
জানি না কী চোখে দেখিছ
    পাপের ভীরুর ভারতভূমি!
মোদের ভাগ্যে ভাস্কর-সম
    উঠেছিলে তুমি তবু,
বাহির আঁধার ঘুচালে,
    ঘুচিল মনের তম কি কভু?
সূর্য-আলোকে মনের আঁধার
    ঘোচে না, অশনি-ঘাতে
ঘুচাও ঘুচাও জাতের লজ্জা
    মরণ-চরণ-পাতে!
অমৃতে বাঁচাতে পারনি এ দেশ,
    ওগো মৃত্যুঞ্জয়,
স্বর্গ হইতে পাঠাও এবার
    মৃত্যুর বরাভয়!
ক্ষূণ শ্রদ্ধার শ্রাদ্ধ-বাসরে
    কী মন্ত্র উচ্চারি
তোমারে তুষিব, আমরা তো নহি
    শ্রাদ্ধের অধিকারী!
শ্রদ্ধা দানিবে শ্রাদ্ধ করিবে
    বীর অনাগত তারা
স্বাধীন দেশের প্রভাত-সূর্যে
    বন্দিবে তোমা যারা!
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *