০৬. নতুন জীবন
নতুন জীবন
মিস বেটসি অপেক্ষা করলেন কয়েক সপ্তাহ আমার শরীর-মন সবই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্যে। তারপর এক সন্ধ্যায় মি. ডিকের সাথে পাশা খেলতে খেলতে আমার দিকে ফিরে বললেন, ট্রট, তোমার শিক্ষার কথা ভুললে আমাদের চলবে না। তুমি ক্যান্টারবেরিতে যাবে? স্কুলে পড়তে?
আমার খুবই ইচ্ছে যাওয়ার। জায়গাটা এখান থেকে বেশ কাছেই, জবাব দিলাম।
পরদিন সকালে ঘোড়ার গাড়িতে আমরা যাত্রা করলাম ক্যান্টারবেরির উদ্দেশে। পথে দাদী বললেন যে তিনি আমাকে তার উকিলের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। তার উকিল মি. উইকফিল্ড বলতে পারবেন কোন স্কুল সবচেয়ে ভাল হবে আমার জন্যে।
মিস বেটসি একটা অত্যন্ত পুরানো বাড়ির সামনে গাড়ি থামালেন। বাড়িটা মনে হলো ঝুঁকে আছে রাস্তার দিকে। একটা বছর পনেরো বয়সী লালচুলো ছেলে দরজা খুলে দিল। ওর মুখটা মুর্দার মুখের মত ফ্যাকাসে। হাড্ডিসার দেহটা কালো পোশাকে ঢাকা। কপালে বলতে কিছুই নেই। চোখের পাতায় নোমও নেই।
উরিয়া হীপ, মি. উইকফিল্ড আছেন? জিজ্ঞেস করলেন দাদী।
আমাদেরকে ভেতরে যেতে ইঙ্গিত করে সে বলল, আছেন, ম্যাডাম।
মি. উইকফিল্ড একজন সুশ্রী বুড়ো ভদ্রলোক। অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানালেন আমাদেরকে। তার মুখের লালচে রঙ আর মোটা কোমর দেখে। আমার মনে পড়ল, পেগোটি বলত যারা বেশি মদ খায় তাদের ওরকম হয়। ভাবলাম, মি. উইকফিল্ডও কি বেশি মদ খান?
বলুন, মিস ট্রটউড, কি মনে করে এলেন এদিকে? জিজ্ঞেস করলেন মি. উইকফিল্ড হাসিমুখে।
এটা হচ্ছে আমার নাতি, ডেভিড কপারফিল্ড, বললেন মিস বেটসি। আমি ওকে একটা ভাল স্কুলে দিতে চাই, যেখানে ওকে ভাল শিক্ষা দেয়া হবে এবং ওর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হবে। স্কুল বাছাইয়ের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ চাই।
মি. উইকফিল্ড ডক্টর স্ট্রং-এর স্কুলে ভর্তি করতে বললেন। ওটা বোর্ডিং স্কুল নয়। তিনি আমাকে সপ্তাহের ছয় দিন তার বাড়িতে থাকার প্রস্তাব দিলেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনটা আমার ইচ্ছা অনুযায়ী দাদীর কাছে থাকতে পারব।
এর পরে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো মি. উইকফিন্ডের মেয়ে অ্যাগনেস-এর সঙ্গে। আমার বয়সী হাসিখুশি উজ্জ্বল চেহারার মেয়ে। বাপকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে।
আমি যে ঘরটিতে থাকব তা আমাকে দেখিয়ে দিল অ্যাগনেস। ঘরটা অ্যাগনেসের মতই উজ্জ্বল এবং সুন্দর। দাদী বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বাক্স-বিছানা খুলে সেখানে বসবাস শুরু করতে ব্যস্ত হলাম।
রাতে শোবার আগে উরিয়া হীপের সঙ্গে দেখা হলো। সে অফিস বন্ধ করছিল। আমি বন্ধুভাবে হাত বাড়িয়ে দিলাম। কি ঠাণ্ডা চটচটে ওর হাত! ও চলে যাবার পর হাতটা ঘষতে লাগলাম-চেষ্টা করলাম হাতে লাগা ঠাণ্ডাটা, আর ওর চটচটে স্পর্শটা ঘষে তুলে ফেলতে। ওর ভেতর এমন একটা কিছু রয়েছে যা আমার মনে ভয় ধরিয়ে দিল।
পরদিন সকালে আবার প্রবেশ করলাম স্কুল জীবনে। মি. উইকফিল্ড আমাকে নিয়ে গেলেন স্কুলে। পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার নতুন মাস্টার ডক্টর স্ট্রং এবং একজন সুন্দরী তরুণী মহিলার সঙ্গে। মহিলাটিকে ডক্টর স্ট্রং অ্যানি বলে ডাকেন। আমি ভাবলাম তরুণীটি তার মেয়ে। কিন্তু মি, উইকফিল্ড মহিলাটিকে মিসেস স্ট্রং বলায় খুবই বিস্মিত হলাম। কারণ, ডক্টর স্ট্রং-এর বয়স ষাটের কোঠায়।
ডক্টর স্ট্রং তাঁর অবসর সময়ে একটি নতুন অভিধান রচনার কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমার এক ক্লাসমেট অঙ্কে খুব ভাল। সে বলল, ডক্টর যে গতিতে অভিধান রচনার কাজ করছেন তাতে ওর হিসেব মতে কাজটা শেষ করতে তার এক হাজার ছয়শো উনপঞ্চাশ বছর লেগে যাবে! স্কুলটি চমৎকার। মি. ক্রীক্লকলএর স্কুলের তুলনায় স্বর্গ। শিক্ষক হিসেবে ড. স্ট্রং দারুণ ভাল। সব ছেলের প্রতি সদয়। ছেলেরাও তাকে ভালবাসে, সম্মান করে এবং মন দিয়ে লেখাপড়া করে।
আমার এ-সময়কার একমাত্র অস্বস্তির কারণ ছিল উরিয়া হীপের নিত্য উপস্থিতি!