১২. মি. পেগোটির খবর
মি. পেগোটির খবর
ড, স্ট্রং-এর বাড়িতে কাজ শেষে এক তুষার-ঝরা রাতে ঘরে ফিরছিলাম পায়ে হেঁটে। তুষারে ঢাকা পড়েছে রাস্তা। গাড়ির চাকা আর লোকের চলার শব্দ শোনা যাচ্ছে কম। পথ সংক্ষেপ করার জন্য সেন্ট মার্টিন লেন দিয়ে চলেছি। গলির মোড়ে একটি মেয়ের মুখ দেখলাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়েই অদৃশ্য হয়ে গেল। কিন্তু মুখটা আমি চিনতে পারলাম। ওটা মার্থা, মার্থা এনডেল, এমিলির বন্ধু। এ মেয়েটিকেই এমিলি একদিন টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল।
তারপর সেন্ট মার্টিনের গির্জার সিঁড়ির ওপর দেখলাম একজন মাথা নিচু করে একটা বোঝা ঠিকঠাক করে বেঁধে নিচ্ছে। বাঁধা শেষ করে লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়াল। আমি লোকটার মুখ দেখলাম, লোকটাও দেখল আমার মুখ। লোকটা হচ্ছে মি. পেপগাটি। হ্যাণ্ডশেক করলাম আমরা। দুজনই বাক্যহারা।
অবশেষে আমার বাহু আঁকড়ে ধরে তিনি বললেন, মাস্টার ডেভি। আপনাকে দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল, স্যার!
প্রিয় বন্ধু আমার! বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে না থেকে চলুন গরম কিছু পান করি। বাহুতে বাহু জড়িয়ে আমরা গিয়ে ঢুকলাম এক সরাইতে।
আলোর মধ্যে গিয়ে দেখলাম তার চুল আরও পেকেছে। মুখ আর কপালের বলিরেখা আরও গভীর হয়েছে। মি. পেগোটি বললেন এমিলির অনুসরণে তিনি পায়ে হেঁটে ফ্রান্স, ফ্রান্স থেকে ইতালি, ইতালি থেকে পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে সুইটজারল্যাণ্ড গেছেন। তিনি কথা বলে যাচ্ছেন, এমন সময় দরজা খুলে গেল। বাতাসের ঝাপটায় কিছু তুষার ঢুকল ভেতরে। দেখলাম মার্থা দরজার পাল্লা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর মুখে ক্লান্তির ছাপ। কান খাড়া, শোনার চেষ্টা করছে আমাদের আলাপ। আশা করলাম মি. পেগোটি ওকে দেখেননি। এমিলির সাথে মার্থার বন্ধুত্বকে তিনি কখনও অনুমোদন করেননি। ওকে দেখলে বুড়ো মানুষটির মন খারাপ হয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া, মার্থা হাতের ইশারায় আমাকে বলছে ওর উপস্থিতির কথা মি. পেগোটিকে না জানাতে।
এমিলি আমার জন্যে টাকা পাঠায় মিসেস গামিজের কাছে, কিন্তু ঠিকানা দেয় না, বললেন মি. পেগোটি কাঁদতে কাঁদতে। ওই টাকায় তিনি হাত দেননি। আমাকে তিনি এমিলির চিঠি ও টাকা দেখালেন। এখন আবার যাত্রা শুরু করবেন। এবার যাবেন জার্মানী। এমিলির শেষ চিঠিতে জার্মান পোস্টাফিসের সিলমোহর আছে।
হ্যামের কি খবর? সে কেমন আছে? জিজ্ঞেস করলাম।
মি. পেগোটি মাথা ঝাকিয়ে বললেন, কাজ করছে। কোন নালিশ নেই ওর। তবে মনে বড় আঘাত পেয়েছে।
চিঠিগুলো গুছিয়ে যত্নের সঙ্গে রেখে উঠে দাঁড়ালেন মি. পেগোটি। দরজায় তাকিয়ে দেখলাম মার্থা নেই। মি. পেগোটি চলে গেলেন। আমি সরাই থেকে বেরিয়ে দেখলাম সব পায়ের দাগ ঢাকা পড়েছে বরফে। আমার নতুন পায়ের। দাগই কেবল দেখা যাচ্ছে। সেগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।