ডুবিবে না আশাতরি

ডুবিবে না আশাতরি

তুমি ভাসাইলে আশাতরি, প্রভু, দুর্দিন ঘন ঝড়ে,
ততবার ঝড় থেমে যায়, তরি যতবার টলে পড়ে।
তুমি যে-তরির কাণ্ডারি তার ডুবিবার ভয় নাই,
তোমার আদেশে সে তরির দাঁড় বাহি, গুন টেনে যাই।
আসে বিরুদ্ধশক্তি ভীষণ প্রলয়-তুফান লয়ে
কাঁপে তরণির যাত্রীরা কেহ নিরাশায় কেহ ভয়ে।
নদীজল কাঁপে টলমল যেন আহত ফণীর ফণা,
দমকে অশনি চমকে দামিনী – ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝনা।
অন্ধ যামিনী, দেখিতে পাই না কাণ্ডারি তুমি কোথা?
তোমার জ্যোতিতে অগ্রপথের দূর করো অন্ধতা!
তোমার আলোরে আবৃত করে ভয়াল তিমির রাতি,
দূর করো ভয়, হে চির-অভয়, জ্বালায়ে আশার বাতি!
হে নবযুগের নব অভিযান-সেনাদল, শোনো সবে,
তোমরা টলিলে তুফানে তরণি আরও চঞ্চল হবে।
এ তরির কাণ্ডারি আল্লাহ্‌ সর্বশক্তিমান,
বিশ্বাস রাখো তাঁর শক্তিতে, এ তাঁহার অভিযান।
ভয় যার মনে যুদ্ধ না করে তার পরাজয় হয়,
ভয় যার নাই মরিয়াও সেই শহিদের হয় জয়।
অগ্রপথের সেনারা করে না পৃষ্ঠপ্রদর্শন,
জয়ী হয় তারা জীবনে, অথবা মৃত্যু করে বরণ!
জীবন মৃত্যু সমান তাদের, ঘুম জাগরণ সম,
এক আল্লাহ্‌ ইহাদের প্রভু, বন্ধু ও প্রিয়তম।
আল্লার নামে অভিযান করি, আমাদের ভয় কোথা,
দুবার মরে না মানুষ, তবুও কেন এ দুর্বলতা।
ডুবে যদি তরি, বাঁচি কীবা মরি, আল্লা মোদের সাথি,
যেখানেই উঠি তাঁর আশ্রয় পাব মোরা দিবারাতি।
মোদের ভরসা একমাত্র সে নিত্য পরম প্রভু,
দুলুক তরণি, আমাদের মন নাহি দোলে যেন কভু।
পাব কূল মোরা পাব আশ্রয় – রাখো বিশ্বাস রাখো,
তাঁর কাছে করো শক্তি ভিক্ষা, তাঁরে প্রাণ দিয়া ডাকো।
পূর্ণ ধৈর্য ধারণ করিয়া থির করো প্রাণমন,
দূর হবে সব বাধা ও বিঘ্ন,আসিবে প্রভঞ্জন।
হয়তো প্রভুর পরীক্ষা ইহা, ভয় দেখাইয়া তিনি
ভয় করিবেন দূর আমাদের, জ্ঞাতা একক যিনি!
পার হইতেছি মোরা নিরাশা ও অবিশ্বাসের নদী,
ডুবিবে তরণি, যদি ভয় পাই অধৈর্য আসে যদি!
হে নবযুগের নৌসেনা, রণতরির নওজোয়ান!
আল্লারে নিবেদন করে দাও আল্লার দেওয়া প্রাণ।
পলাইয়া কেহ বাঁচিতে পারে না মৃত্যুর হাত হতে,
মরিতে হয় তো মরিব আমরা এক-আল্লার পথে।
পৃথিবীর চেয়ে সুন্দরতর কত যে জগৎ আছে,
সে জগৎ দেখে যাব আনন্দধামে আল্লার কাছে।
– আমাদের কীবা ভয় –
আমাদের চির চাওয়া-পাওয়া এক আল্লাহ্‌ প্রেমময়!
তাঁর প্রেমে মোরা উন্মাদ, তাঁর তেজ হাতে তলোয়ার,
মোদের লক্ষ্য চির-পূর্ণতা নিত্য সঙ্গ তাঁর।
দুলুক মোদের রণতরি, যেন মনতরি নাহি দোলে,
যেখানেই যাই মোরা জানি ঠাঁই পাব, পাব তাঁর কোলে।
থেমে যাবে এই দুর্যোগ-ঘন প্রলয় তুফান ঝড়,
‘কওসর-অমৃত’ পাব, করো আল্লাতে নির্ভর!
মোদের অপূর্ণতা ও অভাব পূরণ করিবে সে,
অসম্ভবের অভিযান-পথে সৈন্য করেছে যে!
তাঁরই নাম লয়ে বলি, বিশ্বের অবিশ্বাসীরা শোনো,
তাঁর সাথে ভাব হয় যার, তার অভাব থাকে না কোনো।
তাঁহারই কৃপায় তাঁরে ভালোবেসে, বলে আমি চলে যাই,
তাঁরে যে পেয়েছে, দুনিয়ায় তার কোন চাওয়া-পাওয়া নাই।
আর বলিব না। তাঁরে ভালোবেসে ফিরে এসে মোরে বলো,
কী হারাইয়া কী পাইয়াছ তুমি, কী দশা তোমার হল!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *