ডাকটিকিটে গান্ধীজি – কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

ডাকটিকিটে গান্ধীজি – কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

রাজা না হয়েও যিনি রাজসম্মানে সারা পৃথিবীর ডাকটিকিটে বন্দিত হয়েছিলেন তিনি আমাদের অতি প্রিয় স্বাধীনতাসংগ্রামী মহাত্মা গান্ধীজি। ডাকটিকিটের জন্ম ১৮০ সালে ব্রিটিশ সরকারের আনুকূল্যে। সেখানে দেখেছি রাজারানীর ভিড়। ব্যতিক্রমের দলে যাঁরা পড়েন, তাঁরাও ছিলেন রাজানুগৃহীত, রাজসম্মানে সম্মানিত অথবা বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা প্রভৃতি বিষয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দিকজয়ী। ডাকটিকিটে তাঁরা বন্দিত হয়েছেন। কিন্তু নিজের নিজের দেশের ডাকটিকিটেই আমরা তাঁদেরকে দেখেছি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিজেতা দেশগুলি শ্রদ্ধা—সম্মান জানাল রুজভেল্ট, স্তালিন এবং চার্চিলকে তাঁদের ডাকটিকিট প্রকাশ করে। তখনও দেখা গেছে পরাজিত গোষ্ঠী দেশগুলি বিমুখ বাসনায় তাঁদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন। অথচ গান্ধীজী, তিনি এক মহা ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব। শ্রেণীনির্বিশেষে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ তাঁর প্রতি সম্মানের ডালি উপহার দিয়েছে। যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে উচ্ছেদ করাই তাঁর একমাত্র স্বপ্ন, ছিল, সেই গ্রেট ব্রিটেনও তাঁর ডাকটিকিটের প্রকাশে কার্পণ্য করেননি। তিনি বন্দিত হয়েছেন আমেরিকায় আবার রাশিয়ায়। অথচ এ দুই দেশ অন্তত নীতির দিক দিয়ে দুই মেরুপ্রান্তের অধিবাসী। কিসের জোরে তিনি সকলের মন জয় করলেন? সে কোন মন্ত্র, যার দ্বারা সাদাকালোর সব বিভেদকে দূর করে, সমস্ত ইজম—এর ঊর্ধ্বে উঠে, তিনি সমগ্র দেশবাসীর হৃদয়কে সমসূত্রে গ্রথিত করতে পারলেন? সে ওই সত্য, অহিংসার তথা সত্যাগ্রহের এই নীতিতে আস্থাবান হয়ে আপন উদ্দেশ্যসাধনে অগ্রবর্তী হলে যে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়, তার উদাহরণ তিনি নিজেই। তাঁর নীতির প্রতিধ্বনি শুধু দেশের মধ্যেই সীমায়িত থাকেনি পরন্তু দিগবিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী রাজতন্ত্রের করেছিল সমাধি রচনা। বিনা রক্তপাতে যে কেমন করে অভিলষিত বস্তু লাভ করা যায়, তার অপূর্ব কৌশল দেখে এমনকি আমেরিকা, রাশিয়া এবং ব্রিটেনও চমৎকৃত হয়ে গিয়েছিলেন। তাই এই অদ্ভুতকর্মা মানুষটির আশ্চর্য কৌশলটিকে তাঁর শতবর্ষপূর্তি দিবসে অভিনন্দিত না জানিয়ে তাঁরা থাকতে পারেননি।

গান্ধীজি আজ আর আমাদের মধ্যে নাই। কিন্তু পৃথিবীর এই বিরাট গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, আজও এই ঋষিকল্প মানুষটির আশীর্বাদ নিয়েই উচ্চচাশার অগ্রশীর্ষে আরোহণ করে চলেছে।

পৃথিবীর উনচল্লিশটি দেশ গান্ধীজির উপর ৭৪টি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার মিনিয়েচার সীট, বিশেষ ধরনের ওভারপ্রিন্ট, আকর্ষণীয় প্রথম দিবসের আবরণ, তাঁর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সম্বলিত খাম, পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড, এয়ারোগ্রাম ইত্যাদি প্রকাশ করে এই মহামানবকে শ্রদ্ধা—সম্মান নিবেদন করেছেন। ভারত (আগস্ট ১৫, ১৯৪৮) স্বাধীনতার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির জনকের ৮টি ডাকটিকিট প্রকাশ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে। চারটি সাধারণ টিকিট। চারটি সার্ভিস টিকিট। সার্ভিস টিকিটগুলি সরকারী কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেগুলি অল্পসংখ্যক ছিল, তাই ওগুলি এখন দুষ্পাপ্য টিকিটের মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে ১০ টাকার টিকিটখানির বাজার দূর বর্তমানে হাজার টাকার কাছাকাছি। গান্ধী—স্মারক ডাকটিকিট চারটির মুদ্রামান ছিল যথাক্রমে ১ ১/২ আনা, ৩ ১/২ আনা, ১২ আনা এবং ১০ টাকা। সার্ভিস টিকিটগুলির মুদ্রামানও ঐ একই রকম। ছবির ও রঙেরও কোন হেরফের ছিল না। শুধু টিকিটগুলির উপর ‘Service’ কথাটি যুক্ত ছিল। চারটি টিকিটেই গান্ধীজির আবক্ষমূর্তি অঙ্কিত। কেবল ১০ টাকার টিকিটির আকৃতি অপেক্ষাকৃত বড়। প্রতিটি টিকিটের বাঁদিকে হিন্দিতে এবং ডানদিকে উর্দুতে ‘বাপু’ কথাটি লিখিত। টিকিটের নীচে ইংরেজীতে লেখা ‘Mahatma Gandhi’, ২ অক্টো ১৮৬৯—১৯৪৮।

১৯৬১ সালে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা চ্যাম্পিয়ান অব লিবার্টি সিরিজের ডাকটিকিটের মধ্যে গান্ধীজিকে স্থান করে দেন। আমেরিকার ডাকবিভাগ এই উপলক্ষে চার সেন্ট এবং আট সেন্টের দুটি ডাকটিকিট গান্ধীজির উপর প্রকাশ করেন। পৃথিবীর সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে গান্ধীজিকে একাসনে ঠাঁই করে দিয়ে সেদিন আমেরিকা তাঁর যথার্থ উদার মনেরই পরিচয় দিয়েছিলেন। সেই টিকিট দুটিতে মুদ্রিত ছিল ‘মহাত্মা গান্ধী ১৮৬৯—১৯৪৮ অ্যাপসল অব ননভায়োলেন্স’। ভারতীয় শিল্পী আর এল, লেখি—র অঙ্কিত ছবিকে অবলম্বন করে এই এই ডাকটিকিট দুটি প্রকাশ করা হয়।

ডাকটিকিট

গান্ধীজির শতবর্ষে যত ডাকটিকিট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়েছে তার সমস্ত বিবরণ কারো একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ যদি সম্যকরূপে অনুসন্ধান করেন, তবে সেই সমস্ত ডাককিটিটে এই মহামানবের জীবন, চিন্তা ও কার্যক্রমের মহামূল্যবান প্রতিফলন দেখে চমৎকৃত হবেন। এখানে আমি কয়েকটি বিশেষ দেশের কার্যক্রম নিয়েই আলোচনা করব।

মরিসাস দেশ গান্ধীজির উপর ছুটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। প্রতিটি টিকিটই আকারে বড় এবং চমৎকারভাবে মূদ্রিত। ২ সেন্টের ডাকটিকিটে দেখান হয়েছে ১৮৮৭ সালের গান্ধীজিকে তখন তিনি লন্ডনে আইন পাঠরত ছাত্র। তৎকালীন ইংরেজী পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে। আইন পাঠের জন্য গান্ধীজি লন্ডনে চার বছর ছিলেন। তখন তিনি বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসেন এবং এই সত্যই আবিষ্কার করেন যে, জিহ্বা নয় মনই হচ্ছে আস্বাদ গ্রহণের প্রকৃত অধিকর্তা। ১৫ সেপ্টেম্বর টিকিটে গান্ধীজিকে আমরা পাই ১৯০৬ সালের জুলু রিবেলিয়ানের সার্জেন্ট মেজর ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায়। ডারবানে বসবসকারী ২৪ জন ভারতীয়কে নিয়ে তিনি গঠন করলেন ইন্ডিয়ান অ্যাম্বুলেন্স কোর। যেখানে বিপদ—সংকেত দেখা গেছে সেখানেই তিনি এবং তাঁর বাহিনী স্ট্রেচার নিয়ে পদব্রজে ছুটে গেছেন। সময়ে সময়ে ৪০ মাইল পর্যন্ত হাঁটতে হয়েছে। কিন্তু গান্ধীজি বলেছেন, ‘এই সময়েই আমার জীবনের স্বর্ণোজ্জ্বল—মূহূর্তটি রচিত হয়েছিল।’ তাঁর এই অতন্দ্র সেবা শত্রু ও বন্ধু নির্বিশেষে সকলেরই প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছিল।

৫০ সেন্ট ডাকটিকিটে দক্ষিণ আফ্রিকার সত্যাগ্রহী হিসাবে গান্ধীজিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটাই তাঁর জীবনের প্রথম সত্যাগ্রহ অভিযান। বর্ণবিদ্বেষের বিষকে উগড়ে ফেলবার জন্য সুদীর্ঘ সাত বছর ধরে একটানা অভিযান চালিয়ে গেছেন গান্ধীজি। পরিশেষে শত্রুকেও (Smuts Government) বন্ধুতে পরিণত করে আপন পরিশ্রমের ফলভোগী হয়েছিলেন।

৬০ সেন্টের ডাকডিকিটে গান্ধীজিকে পাচ্ছি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর লন্ডনস্থিত বাসভবনে। ১৯৩৯ সালের দ্বিতীয় গোল টেবিল কনফারেন্স—ভারত—স্বাধীনতার প্রাথমিক কথাবার্তা ওখানেই হয়েছিল। গান্ধীজি সেখানে গিয়েছিলেন ধুতি আর চাদরখানি মাত্র পরে। ভারতের যা একান্ত নিজস্ব তারই স্বীকৃতিতে অঙ্গে ধারণ করে লন্ডনের আসরেও তিনি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। বাইরে তিনি অর্থ—উলঙ্গ ফকির কিন্তু অন্তরে তাঁর সমুদ্রের গতিকে স্তব্ধ করে দেবার দুদমনীয় শক্তি।

১ টাকার ডাকটিকিটে মরিসাসে অবস্থিত গান্ধীজিকে আমরা দেখতে পাব। ১৯০১ সাল, মরিসাসের অবস্থাও তখন দক্ষিণ আফ্রিকার মতো। গান্ধীজি ভারতে ফেরার পথে সেখানে নেমেছিলেন এবং মরিসাসবাসীদের আত্মশক্তিকে বর্ধিত করতে সহায়তা করেছিলেন। এই টিকিটে গান্ধীজীকে ইউরোপীয় পোশাকে কিন্তু মাথায় ভারতের বিশেষ ধরনের শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় আমরা দেখতে পাই।

২ টাকা ৫০ সেন্টের টিকিটে গান্ধীজির চমৎকার আবক্ষমূর্তি। সত্য ও অহিংসার দিব্য প্রতিমূর্তিই সেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে। এই সঙ্গে মরিসাস ডাকবিভাগ এই ছখানি ডাকটিকিটের একটি সুন্দর মিনিয়েচার সীটও প্রকাশ করেছেন। তার চারদিকের অঙ্গসজ্জায় উদাহৃত হয়েছে ভারতীয় জীবনধারার বিভিন্ন রূপকল্প।

গ্রেনাডা গান্ধীজির উপর চারখানি ডাকডিকিট এবং সেগুলির সমবায়ে একটা মিনিয়েটার সীট প্রকাশ করেছেন। সেখানে ৬ সেন্ট টিকিটে দেকা যাচ্ছে, গান্ধীজি ধুতি—চাদর পরে অনবত মস্তকে হেঁটে চলেছেন, তাঁর মুখমণ্ডলে ফুটে উঠেছে এক বৃহত্তর বেদনার ছাপ। ১৯৪৬ সালের নোয়াখালিতে যে হিংসানল প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছিল তাকে প্রশমিত করতেই তাঁর এই পদযাত্রা। সেটাই এই টিকিটেই মুখ্য আলোচ্য বিষয়। ১৫ সেন্টের টিকিটে একটি জনসেবায় বক্তৃতা দেবার কালে প্রশান্ত মূর্তিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে। ২৫ সেন্টের টিকিটে গান্ধীজিকে দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনীয় কাগজহস্তে প্রার্থনা সভায় ছুটে যেতে। ১ ডলার টিকিটে পাচ্ছি চিন্তাক্লিষ্ট গান্ধীজিকে। দেশের সমস্যার কথা চিন্তা করে তিনি বিশেষ ব্যাকুল। সেই ব্যাকুলতা তাঁর কুঞ্চিত কপালে সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত।

২৫ পয়সার টিকিটে গান্ধীজি

শতবার্ষিকীতে ভারতে গান্ধীজির ২০ পঃ ৭৫ পঃ, ১ টাকা ও ৫ টাকা—এই চারখানি ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। ২৫ পয়সার টিকিটে গান্ধীজি রয়েছেন তাঁর যোগ্য সহধর্মিণী কস্তূরবার সঙ্গে। টিকিটটির ডিজাইন তৈরি করেন দিল্লীর শ্রীসুরজসাধন। মাত্র তের বছর বয়সে তাঁরা বিবাহিত হয়েছিলেন। সুখে—দুঃখে বিপদে—সম্পদে ৬২ বছর তাঁরা একত্র ছিলেন। গান্ধীজি— সহধর্মিণীর মহাপ্রয়াণ ঘটে ১৯৪৪ সালে। এই মহায়সীর স্মরণকালে ভারতের ডাকবিভাগ ১৯৬৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৫ পয়সার একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। ৭৫ পয়সার ডাকটিকিটটির ডিজাইন তৈরি করেন ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেসের শ্রী পি বি চিটনী। ডাকটিকিটটি বড় সুন্দর। সহাস্য গান্ধীজির শুচিশুভ্র মূর্তিটি এখানে চমৎকার ফুটেছে। বর্ণ নির্বাচনেও বিশেষ মুন্সিয়ানা দেখা গেছে। ১ টাকার টিকিটের মূর্তিটি সংগ্রহ করা হয়েছে সুবিখ্যাত শিল্পী নন্দালাল বোসের অঙ্কিত ডান্ডী অভিযানের গান্ধী অবলম্বনে। ৫ টাকার টিকিটের ডিজাইন তৈরি করেছেন দিল্লির শ্রী সি আর, পাকরাশী। এখানে গান্ধীজি প্রচলিত পদ্ধতিতে চরকায় সুতো কাটাছেন। টিকিটের ডানদিকে অঙ্কিত রয়েছে সূর্য আর পদ্ম। সূর্য সত্যের প্রতীক পদ্ম অহিংসার। চারটি টিকিটই নাসিকের সিকিউরিটি প্রেস থেকে ফটোগ্রেভার পদ্ধতিতে ১৯৬৯ সালের ২রা অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছিল।

দক্ষিণ আমেরিকার একটি ছোট দেশ ডোমিনিকা। তাঁরাও তিনটি আকর্ষণীয় ডাকটিকিট প্রকাশ করে গান্ধীজিকে সম্মান জানিয়েছিলেন। ৬ সেন্টের টিকিটে গান্ধীজিকে সুতো কাটতে দেখা যাচ্ছে, বামদিকে লন্ডনের বিগ বেন। ৩ সেন্ট ডাকটিকিটের পণ্ডিত নেহরুর সঙ্গে পরামর্শরত গান্ধীজি, বামদিকে আকবরের সমাধি—মন্দির। ১ পাউন্ড ১০ সেন্টের ডাকটিকিটে প্রসন্নচিত্ত গান্ধীজি বামদিকে শোভা পাচ্ছে আগ্রার তাজমহল।

গ্রেট বিটেন গান্ধীজির ১ শিলিং ৬ প্রেন্সের একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। বহুরঙা এই টিকিটটিতে গান্ধীজির আবক্ষ প্রশান্ত মূর্তি অঙ্কিত। পশ্চাদপটে ভারতের জাতীয় পতাকা, ঊর্ধ্বদেশে দক্ষিণকোণে ক্ষুদ্রাকারে ইংলন্ডের রানির মূর্তি। এই টিকিটের ডিজাইন তৈরি করেন ভারতীয় সুবিখ্যাত ডিজাইনার শ্রীবিমান মল্লিক। ৩৫টি দেশের ৬০টি ডাকটিকিটের মধ্যে এই টিকিটটিই সর্বশ্রেষ্ঠ বলে এক প্রদর্শনীতে বিবেচিত হয়। ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে কলকাতায় এই আন্তর্জাতিক গান্ধী ডাকটিকিট প্রদর্শনীর আয়োজন হয়।

আরেবিয়ান রিপাবলিক সিরিয়া গান্ধীজির উপর দুখানি ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। একটি ১২ ১/২ পি, ২৭ ১/২ পি। টিকিট দুটিতে গান্ধীজির প্রসন্ন মূর্তি আরেবিক প্রতিলিপিতে সুন্দরভাবে উদাহৃত হয়েছে।

ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো—ও গান্ধীজীর দুখানি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছেন। একখানি ১০ সেন্টের আর একখানি ৩০ সেন্টের। ১০ সেন্টে গান্ধীজির দণ্ডায়মান স্ট্যাচুর প্রতিমূর্তি, ৩০ সেন্টের টিকিটে গান্ধীজির আবক্ষ মূর্তি। দক্ষিণ দিকের ঊর্ধ্বকোণে ভারতের জাতীয় পতাকা।

সোমালিয়ার তিনখানি ডাকটিকিট যথাক্রমে ০—৩৫স এবং ১—৮০স। প্রথম ডাকটিকিটখানিতে গান্ধীজির আবক্ষ প্রসন্ন মূর্তি; দ্বিতীয়খানিতে আবক্ষ গান্ধীর বামপার্শ্বে উড্ডীয়মান শান্তির দূত পায়রা, পশ্চাদপটে ভূগোলক এবং তৃতীয়খানিতে পুস্তকহস্তে গান্ধীজি বসে রয়েছেন আনন্দিত চিত্তে।

ব্রাজিলের ২০ সেন্টের গান্ধী টিকিটটিতে কাল এবং হলদে এই দুটি রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। বাঁদিকে গান্ধীজির ছবি, ডানদিকে ব্রাজিল সূতাকাটা কল।

সরাজা (sharjah) স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। তখন আব্রাহাম লিংকন, জন এফ কেনেডি, মার্টিন লুথার প্রভৃতির সঙ্গে গান্ধীজির ডাকটিকিটও তাঁরা প্রকাশ করেন। আবার বিশ্বশান্তির ডাকটিকিট প্রকাশ কালেও গান্ধীজিকে পুনর্বার স্মরণ করেন। প্রত্যেক বারই ৩৫ ডি এইচ, ৬০ ডি. এইচ ও ১ আর এল—এর তিনখানি করে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়।

মাল্টা ভূমধ্যসাগরের এক ক্ষুদ্রতম দ্বীপ। সেখানেও কালো এবং সোনালী রঙের ১ শিলিং ৬ পেন্সের একটি চমৎকার গান্ধী ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। সেখানে গান্ধীজি নিজস্ব পোশাকে পরিপূর্ণ মূর্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে। ডানদিকের কোণে শোভা পাচ্ছে পবিত্র অশোকচক্র।

এছাড়া গান্ধী—বন্দনায় যে সমস্ত দেশ এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁরে মধ্যে রয়েছেন রাশিয়া, কঙ্গো, ক্যামেরুন, সাইপ্রাস, গ্যাবন, মৌরিটানিয়া, নাইজার,আপারভল্টা, চাদ (Tchad), সেনেগাল, খোর ফাক্কন, মালি, চিলি, মেক্সিকো, টোগো, মরক্কো, ইউ এ আর, ভুটান, গায়েনা, হাঙ্গেরী, আয়ারল্যান্ড, ইরান, সুনিরনাম, সাউদার্ন ইয়েমেন, উরুগুয়ে, ওয়েস্ট জার্মানী, গ্রীস এবং আরও অনেকে।

ভারতের এই একটিমাত্র মনীষী ভারতের গৌরবকে যে তুঙ্গশীর্ষে উত্তীর্ণ করে দিয়েছেন ভারতবাসী হিসাবে তার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *