ঠাকুমার গল্প
রঞ্জন বিমর্ষ মুখে উস্কোখুস্কো চুলে দাড়ি চুলকোতে চুলকোতে এসে ঘরে ঢুকল।
নবনীতাদি, ঠাকুমার–
কী হয়েছে ঠাকুমার? হাতের কাজ ঠেলে দিয়ে খাড়া হয়ে বসি।
রঞ্জনের ঠাকুমাটি আমাদের বড় প্রিয়জন। নব্বই ছুঁয়েছেন–এই বয়েসে তো একটু ভয়-ভয় করেই।
শরীর খারাপ করেছে? কী হয়েছে ঠাকুমার?
শরীর না। মাথাটা।
সে আর নতুন কী! মাথা তো অনেকদিনই নিজের খেয়ালখুশিতে চলছে।
এ অন্য পরিচ্ছেদ–ভীমরতি এখন ভয়াল পরিণতির দিকে! শনৈঃ শনৈঃ- রঞ্জনটাকে নিয়ে বড় ঝামেলা। দুটো কথা বিশ্বাস করি, তো পরের তিনটে করি না। মুখচোখ দেখলে কিছুতেই টের পাওয়া যাবে না সত্যি বলছে না গুল মারছে। দুটোই তো অবিকল একরকমভাবে। পরিবেশিত হয়। সত্যিটাকে মনে হবে গুল, আর গুলটা সত্যি। বিশ্বাস করতেও ইচ্ছে হয় না, আবার বিশ্বাস না-করলেও ঠকে যেতে পারি!
ঠিক করে বল তো দেখি কী হয়েছে! ঠাকুমার আমার প্রিয় মানুষ হবার বহু কারণ রয়েছে। তার কয়েকটা বলতে পারি। ধরুন, আপনি বনের মধ্যে হঠাৎ, একা, রাত্রিবাস করতে বাধ্য হয়েছেন। আপনার ভয় করছে। তখন যদি ঠাকুমা থাকতেন আপনার কাছে। তিনি আপনার বালিশে তিনবার থাবড়া মেরে একটা মন্ত্র পড়ে দিতেন। মন্ত্রটা জরুরি। শিখে রাখুন! আমার তো যাযাবর স্বভাব, এখানে সেখানে হট্টমন্দিরে শয়ন করার সময়ে এই মন্ত্রটা খুবই কাজে লাগে।
বালিশে তিন থাবড়ার পর, বলুন :
কপ ফোল! কপ ফোল! কপ ফোল!
সাপ-চোরা-বাঘা তিনে নিষ্ফল! নিষ্ফল! নিষ্ফল!
যদ্দুর যায় কপ ফোলের এই রা-ও
সাপ-চোরা-বাঘা তিনে না বাড়াও পা-ও,
যদি বাড়াও পা-ও, দোহাই আমার ওস্তাদের মাথা খাও
মন আমার গুরুদেবের পায়!!
ওম্ গুরু দেবঃ শিবঃ/গুরুদেবঃ শিবঃ/গুরুদেবঃ শিবঃ, ওঁ..ম ম ম!
পরবর্তী স্টেপ, তিনবার, তিনদিকে ঘুরে ঘুরে ভক্তিভরে নমস্কার নিবেদন।
সেই মন্তর অবশ্যই শুনতে পাবে জগতের যত সাপ, চোর আর বাঘের দল। তিন গুষ্টির কেউই আর পা বাড়াবে না এদিকে–ওস্তাদের বাঁধন দেওয়া আছে না? এক্কেবারে নিশ্চিন্দি!–শুধু আরশোলা আর মাকড়সার জন্যে ঠাকুমার কোনও মন্তর আছে কিনা জেনে নিতে হবে। এইটেই বাকি।
ঠাকুমার কীর্তিকাহিনি কি অল্প? খুব বিশিষ্ট মহিলা। এই সেদিন নীল আর্মস্ট্রং যে চাদে বেড়াতে গিয়েছিল, সেটাই টিভিতে আবার করে দেখাচ্ছিল। নাতিরা গিয়ে ঠাকুমাকে বলল,
ঠাকুমা শুনেছ, কী হয়েছে? কী দেখলাম টিভিতে? চাঁদে মানুষ নেমেছে!
কী? তুমি কী কইলা মনু? চান্দের কথাডা কী কইলা?
চান্দে গিয়া মানুষ নামসে ঠাকুমা–চান্দ আর দূরে নাই–
নামসে কও ক্যান? ওঠসে কইতে হয়। মানুষ আকাশে নামে কী কইর্যা? চান্দে ত ওঠা লাগে। এইয়া কি পুষ্করিণী? তা, সেই মানুষ করসে কীডা, চান্দে যাইয়া?
ওই তো, হাঁটাচলা করছে, মানে ভেসে বেড়াচ্ছে আরকি, পা ডুবে ডুবে যাচ্ছে। তো, ভালো করে হাঁটা যায় না চাঁদের মাটিতে–।
আহা রে। পা-ও তো ডুইব্যা যাইবই। বর্ষাকাল না? এক্কেরে ভাইস্যা বেড়াইতাসে বেচারা? আহা হা। তা অহন না যাইয়া শুখা সিজনে যায় নাই ক্যান? অহন তো আকাশেও মাঘ বিদ্যুৎ-চান্দে যাওন কি সহজ ভ্রমণ? পথখান কি কম? দেইখ্যা মনে হয় কাছেই–চান্দ কিন্তু বহুদূর! কতদূর জানো? এক্কেরে হিমালয় পর্বত-টবর্ত পার হইয়া কৈলাস পর্বতের কাছে…বলেই হাত জোড় করে নমস্কার!
ঠাকুমার অভিনবত্ব বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। সবাই মিলে গুলতানি করছে নাতিরা। ঠাকুমা গুটিগুটি উপস্থিত।
ও মনু তোমরা করো কী? সাড়ে তিনটার অ্যারোপ্লেলেন উইড়্যা গেল, অহন তরা চা খাইবি না? এইডা তো তগো চা খাওনের টাইম! খ্যাল করায়া দিতাসি। ঠাকুমা নিজে চা খান না।
বেলা সাড়ে তিনটের এরোপ্লেন! এরকমও হয় নাকি? আটটার মেল ট্রেন, দশটা পনেরোর প্যাসেঞ্জার, বড়জোর সাড়ে নটায় পাশের বাড়ির খুকুর স্কুলবাস–এসব হিসেব রাখতে পারে মানুষ। তাই বলে সাড়ে তিনটের এরোপ্লেন দেখে ঘরের কাজকর্মের টাইম শিডিউল বানানো! হ্যাঁ, সাড়ে তিনটের সময়ে আকাশ দিয়ে একটা জেট প্লেন যায় এবং ঠাকুমা তাই দিয়ে বিকেলটা শুরু করেন। লও লও সব তাস গুছাও এইবারে–চায়ের টাইম–সাড়ে তিনটার অ্যারোপ্পেলেন উইড়্যা গেসে গিয়া, সে-ই কখন…।
সেই ঠাকুমার কি ভীমরতি হয়? তবে হ্যাঁ, ওঁর মাঝে মাঝে খেয়াল চাপে। নানারকমের উদ্ভট খেয়াল। নাতিরাও তার মোকাবিলার জন্য সদাসর্বদা প্রস্তুত। ওই ঠাকুমারই নাতি তো তারা!
যেমন, একদিন ঠাকুমার মনে হল সকলেই তাকে গঙ্গাস্নান করাবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। যেমনই মনে হওয়া অমনই অ্যাকশন শুরু। একই কথা ননস্টপ রিপিট করে যাবার অদম্য ক্ষমতা অনেক ঠাকুমারই থাকে। ওঁরও আছে। সকাল থেকে যাকেই পাচ্ছেন তাকেই কথাটা একবার বলে নিচ্ছেন।
ও মনু তপন? ও বাপধন চন্দন? আরে আরে রঞ্জইন্যা, পলাও কোথায় তরা যে কইসিলা তোমারে গঙ্গাচ্ছান করাইতে লইয়া যামু ঠাকুমা, ত কই লয়্যা গেলি না তো?
ও বউমা। একবারডি গঙ্গাচ্ছানে লইয়া যাবা আমারে?
ও তারাপদ, তোমার মায়েরে একবার গঙ্গাচ্ছান করাইয়া আনবা না তুমি? লয়্যা চল না বাবা–গঙ্গায় দুইডা ডুব দিয়া আসি গা? বড় প্রাণে লয়–
অবশেষে নাতিরা ঠাকুমাকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে দুটো ঘর পার করে দাওয়ায় নিয়ে এসে সিঁড়ি দিয়ে উঠোনে নামিয়ে এনে বলল,
এই তো, গঙ্গা। গঙ্গায় এসে গেছি ঠাকুমা, স্নানটা তবে সেরে নাও চটপট।
ঠাকুমা চোখ বড় বড় করে রোদে খটখটে উঠোনের দিকে তাকিয়ে বললেন, বাপ রে! জোয়ার আইছে! ইশ..কী বড় বড় ঢেউ! সমুদ্রের মতো লাগে।
তারপর নাতিদের বললেন,আ-রে, তারা আমারে ধইর্যা থাক।…আমি তো স্রোতে ভাইস্যা যাইতাসি–গায়ে তো শক্তি নাই–ওঃ জলের কী টান…!
নাতিরা ঠাকুমাকে ধরে রইল। ঠাকুমা চোখ বুজে, নাক টিপে ধরে, গুনে গুনে তিনটি ডুব দিয়ে উঠলেন বিড় বিড় করে মন্ত্র আওড়াতে আওড়াতে। তিন নম্বর ডুবের পরেই হাত বাড়িয়ে দিলেন–গামছাখান দেহি, গামছা দেওয়া হল। তারপর জয় জয় দেবী সুরধুনীগঙ্গে গাইতে গাইতে গা মাথা মুছে ঠাকুমা আবার মহানন্দে নাতিদের কোলে চড়ে খাটে ফিরে এলেন। পুণ্যস্নান সারা!
আহ! কী আরাম! শরীলখান য্যান্ জুড়াইয়া গেল! গঙ্গাচ্ছান বলিয়া কথা।
.
এইটেকে ভীমরতি বলে ধরা হয়, তবে এরকমটা তো নতুন কিছুই ঘটনা নয়। আজ তাহলে রঞ্জনের এত বিচলিত লাগার কারণ কী?
কেন, ঠাকুমা নতুন করে কী করলেন আবার? এবার কি সমুদ্রস্নান? পুরীতে যাবেন?
রঞ্জন গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ল, জ্যাঠামশাইকে মেরে ফেলেছেন।
সে…কী…! আমার মাথাটা ঘুরে গেল। বিলেতের কাগজেই এসব পড়েছি কেবল! কী ভয়ানক!
সকালে উঠে দেখি ঠাকুমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। কাপড়ের খুঁটে নাকচোখ মুছছেন আর কাঁদছেন। রঞ্জন বলতে শুরু করল।
ক্যান, ঠাকুমা কান্দো ক্যানে?
আমার অমূল্যাডা আর নাই!
হ্যাট। যতো বাজে চিন্তা! কে কইল নাই! জ্যাঠা এক্কেরে ফিটফাট। ঠিকঠাক।
না। নাই। আমি জানি। সে নাই। তরা আমারে মিছা কথা কস। হা..রে…অমূল্যা…!
ঠাকুমা নাইবেন না, খাবেন না, কথা বলবেন না, একনাগাড়ে, হাপুস নয়নে, জ্বলজ্যান্ত জ্যাঠামশাইয়ের জন্য পুত্রশোকে কাঁদবেন। কার আর সেটা বরদাস্ত হয়। বাড়িসুদু লোকে তাকে বোঝাচ্ছি জ্যাঠা দিব্যি আছেন, ফুর্তিতেই আছেন। কোন্নগর থেকে তেমন ঘনঘন গড়িয়া এসে উঠতে হয়তো পারছেন না ইদানীং-তাই বলে এমন অমঙ্গুলে কান্না কাঁদতে হবে?
ঠাকুমা কারুর কথাই বিশ্বাস করছেন না। আমি জানি। তরা আমারে ভুলাস।
প্রত্যেকে চেষ্টা করে হার মেনে গেলাম। এদিকে ফোনে ঠাকুমা কথাবার্তা কিছুই শুনতে পান না। জ্যাঠার সঙ্গে ফোনে যে কথা বলিয়ে দেব, তার উপায় নেই। কিছুতেই বুঝ মানানো যাচ্ছে না ঠাকুমাকে। অথচ মায়ের চোখের জলে নাকি সন্তানদের অকল্যাণ হয়–এ অশ্রু অবিলম্বে থামানো দরকার। সমূহ বিপত্তির শান্তি করতে জ্যাঠামশাইকে কোন্নগর থেকে সোজা ট্যাক্সি ভাড়া করে গড়িয়াতে নিয়ে আসা হল। এবার ছেলেকে সশরীরে মায়ের সম্মুখে উপস্থিত করে দেওয়া হবে।
রবিবার সকালে জ্যাঠামশাই এলেন–হাসিখুশি। ট্যাক্সি ভাড়াটা এখান থেকেই দেওয়া হয়েছে–জ্যাঠামশাই হাতে করে কোন্নগর থেকে চমৎকার মাখা সন্দেশ এনেছেন ঠাকুমার জন্য। এবারে সমস্যার অবসান।
আমরা নাচতে নাচতে গিয়ে বলি :
ঠাকুমা, জ্যাঠামশাই এসেছেন?
কে আইল?
জ্যাঠামশাই।
কার জ্যাঠা?
আমাদের জ্যাঠামশাই।
হেইডা কেডা?
কেডা মানে? তোমার বড় ছেলে!
সে তো অমূল্যা আছিল।
হ্যাঁ, সেই তো। আছিল আবার কী কথা? জ্যাঠামশাই এসেছেন তোমার কাছে।
অমূল্যা আইছে?
হ্যাঁ-হ্যাঁ, বলছি তো।
অমূল্যা এই বাসাতে আইছে?
আজ্ঞে হ্যাঁ। তবে আর বলছি কী? এই বাসাতে আইছেন। আমাদের জ্যাঠামশাই। তোমার অমূল্য।
আইল কেমনে?
ট্যাক্সি করে।
টেকশি কইরা? বাপরে! খাড়াও দিনি, কাপড়খানা পালটায়া লই।
তাড়াতাড়ি তোরঙ্গ থেকে একটা তসরের কাপড় বের করেন। হুড়োহুড়ি করে সেটি গায়ে জড়িয়ে, সুতির কাপড়টা খুলে রেখে ঠাকুমা বললেন,
কই, কই গ্যাল অমূল্যা? দাও অরে ডাইক্যা দ্যাও। ঠিক কথা কও তো মনু?
জ্যাঠামশাই ঘরে ঢুকে যেই নীচু হয়েছেন প্রণাম করতে, ঠাকুমা ঠিকরে সরে গিয়ে হাঁ হাঁ করে উঠলেন।
আহাহা থাউকগ্যা, থাউকগ্যা, পরনামে কাজ নাই–এই যে হাত তুইল্যা এমনি এমনি করিয়া নমো নমো করো, নমো নমো করো–বলতে বলতে নিজের বুকের কাছে দুই হাত জড়ো করে ঠাকুমাও জ্যাঠামশাইকে ভক্তিভরে নমস্কার করলেন। প্রণাম করা, আশীর্বাদ করা, যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম বাদ। ঠাকুমার এহেন আধুনিকতা দেখে জ্যাঠামশাই একটু ঘাবড়ে গেলেন মনে হল। বিজয়ার সময়েও তো এটা ছিল না। জ্যাঠামশাই চেয়ারে বসলেন। ঠাকুমা চুপচাপ তাকে মেপে যাচ্ছেন। কথা নেই। জ্যাঠার অস্বস্তি হল। সাধারণত ঠাকুমার অনেক প্রশ্ন থাকে।
তা মা ভালো আছ তো?
হ। আমি তো আছি ভালোই। তুমি কেমন আছ শুনি!
ভালোই আছি।
আইলা কী করিয়া?
ট্যাক্সিতে।
টেকশি চলাচল করে?
তা করে। খরচা আছে।
খরচা তো থাকবই। এই পার-ওই পার বইলা কথা!
জ্যাঠা এবারে সন্দেশের বাক্স এগিয়ে দ্যান,
মা, তোমার ল্যাইগ্যা সন্দেশ আনছি।
থাউক। ওইখানেই রাইখ্যা দাও। সন্দেশও নাকি বানায়? বা-ব্বাঃ!
কেন বানাবে না? বেশ ভালো সন্দেশ। অন্যরকম। একটু খেয়ে দ্যাখো।
–থাউক। খাইয়া কাম নাই। ভালো না হইয়া পারে! কইথিক্যা আনছ! সহজ কথা? এক্কেরে ওইপার থিক্যা!
ওই নামেই এপার-ওপার। সবই এক, মা।
ঠাকুমা একটুখন চুপ করে থাকেন।
তা, খাও কী?
মানে?
মানে ভাতটাত খাইতে পারো?
হ্যাঁ…ভাতটাত খেতে পারব না কেন?
রান্ধিয়া দ্যায় কে?
কেন, তোমার বউমা?
আ-হাঃ! এইডা তুমি কী কইলা অমূল্যা! বউ-মা-ও?
ঠাকুমা ডুকরে ওঠেন।
বউমাও? হায় হায় রে, আমারে এই খবরডাও কেও দেয় নাই? আমারে কেও কিসসুই কয় না, বউমার খবরখান আমারে দিলই না–, ঠাকুমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দেন। জ্যাঠা এবারে মৃদু লাঠিচার্জের মতো মৃদু ধমক লাগান।
কী আবার খবর দিব? শুধু শুধু কাইন্দো না তো মা। তার যদি খবর কিছু হইত, তোমারে দিতই।
ছেলের বকুনি খেয়েই ঠাকুমার কান্না বন্ধ। নাক-চোখ মুছে,–তা কও, বউমা আছে কই?
ঘরেই? যাইব ক্যানে?
তা ভালো, তা ভালো। লগে লগেই আছ দুইজনায়। সেই ভালো। রান্ধিয়া বাড়িয়া দিতাসে। হেইখানে যাইয়াও সেবাযত্ন পাইতাসো বউমার। শুইন্যাও শান্তি!
জ্যাঠামশাই দিশাহারা। কিছুতেই ঠাহর পাচ্ছেন না। ঠাকুমার আসল সমস্যাটি তাকে জানানো হয়নি। ছেলেকে দেখতে চান, মন কেমন করছে ছেলের জন্য–এটুকুই বলা হয়েছে তাকে। জ্যাঠামশাইয়েরও নয় নয় করেও তো বয়েস পঁচাত্তরের ওপরে। ওসব অলুক্ষুণে কথা তাঁকে খুলে বলা যায় না। জ্যাঠামশাইয়ের মনে মনে নানারকম হোঁচট লাগছে, কিন্তু একটা জিনিস তিনি গিলতে পারছেন না।
মা, কও দেহি তুমি আমারে প্রণাম করতে দিলা না ক্যান? ঠিক কইরা কও
জিভ কেটে মাথা নেড়ে ঠাকুমা বলছেন, ছি, ছি, পরনাম করতে হয় নাকি। ওইপার থিক্যা আইস্যা তুমিই তো সক্কলের পরনাম নিবা। তা ভালো, আইছ আমারে দেখনের লেইগ্যাই আইছ, সন্দেশ লইয়া আইছ। খুব ভালো, কিন্তু তাও এট্টা কথা বুঝি না। তুমি আইলা কীভাবে?
তুমিই পরনাম–নিবা-টা জ্যাঠামশাই বুঝতে না পারলেও আলোচনা চালিয়ে যান মুখখানা যারপরনাই বিভ্রান্ত দেখাতে থাকে যদিও।
কইতাসি ত, ট্যাকসি কইরা! কয়বার কমু? শোন নাই?
টেকশি ওইপারেও যায়?
যাইব না ক্যান? যাইতে তো মানা নাই?
না, মানে…আচ্ছা তুমি নীচে আইলা কীভাবে? হেইডা কও। নাকি, টেকশি এককেরে উপর অবধি চলিয়া যায়?
জ্যাঠা এবার উদভ্রান্ত।
এইডা তুমি কী কইলা মা? ট্যাকসি তিনতলার উপ্রে উঠে নাকি? আমিই সিঁড়ি দিয়া নাইমা আইসা বড় রাস্তা থিক্যা ট্যাকসি ধরি।
সিঁড়ি! সিঁড়ি দিয়া উপর-নীচ করো?
না তো কি? তিনতালা বাসায় কি লিফট বানায় নাকি!
অসুবিধা হয় না?
না অহন পর্যন্ত তো হয় নাই। তবে ফিউচারের কথা কওন যায় না।
তাহলে মনে হয় সিঁড়িডা কমপ্লিট করসিল রাবণে? আমি তো জানি, আধা-খাচরা। হইয়া পইরা আছে, কমপ্লিট হয় নাই–তাই জিগাইসি, নীচে আইলা কেমনে?
রা-ব-ণের সিঁড়ি! আমি কি স্বর্গে আছি মা?
এই কথাটায় মা ফোঁস করে উঠলেন।
স্বর্গ না তো কী? তুমি হইলা গিয়া তোমার বাবার বড় পোলা। তুমি স্বর্গে যাবা না তো কি নরকে যাবা! তুমিও কও অমূল্যা–
জ্যাঠার আর ধৈর্য থাকে না।
কিন্তু মা, হেইডা তো বহু পরের কথা, আগে তো মরি? অহন তো আমি বাইচ্যা আছি, স্বর্গে যামু, না নরকে যামু, এই প্রশ্নটা কেও করে নাই আমারে। তুমিই কইলা ক্যাবল।
কী কইল্যা? তুমি বাইচ্যা আছ? অমূল্যা তুমি বাইচ্যা আছ? তুমি জীবিত? তুমি স্বর্গে যাও নাই? ওঃ হো-হো…আমার অমূল্যা মরে নাই রে..। আমার অমূল্যা বাইচ্যা আছে রে…ওঃ হো হো…ঠাকুমার আনন্দাশ্রু অঝোরধারায় ঝরতে লাগল। এবং গলা ছেড়ে ওঃ হো-হো-কান্নাটা অবিকল মড়াকান্নার মতো শোনাতে লাগল। এর চাইতে সেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে–অমূল্যা আর নাই-কান্নাটাই ছিল ভালো।
জ্যাঠামশাই এতক্ষণে সবটা বুঝতে পারেন। ঠাকুমাকে জড়িয়ে ধরে জ্যাঠামশাই বললেন, মাগো, আসো, তাইলে প্রণামডা অহন কইরা লই?
লও, লও, কর না পরনাম তোমার যত ইচ্ছা। তখন কি জানি? আমি তো জানি তুমি ওইপার থিক্যা…তাই তো হড়বড় করিয়া শুদ্ধা কাপড়খানা পরিয়া আইলাম।
জ্যাঠামশাইয়ের চিবুক ছুঁয়ে চুমু খেয়ে ঠাকুমা মিষ্টি করে হাসেন। তারপরে হাত বাড়ালেন, কই দ্যাও তো দেহি সন্দেশডা যে আনছিলা? জিনিসখান কেমুন, দেখি খাইয়া–
.
আমি হাঁপ ছেড়ে বলি, যাক! সব ভালো যার শেষ ভালো!
কিন্তু শেষটা ভালো কিনা সেটাই তো সংশয়। সেদিন, ঘণ্টেশ্বরের পৈতের দিনে সিরিয়াস কেলো করেছেন। রঞ্জন গুছিয়ে বসেছে।
এতক্ষণে আমার চায়ের কথা মনে পড়ল। চা খাবি তো? রঞ্জন?
আর কী আছে, সঙ্গে কী দেবে?
আজকে হয়েছে মাংসের ঘুগনি।
গ্রেট! লাগাও চা। ঘন্টের পৈতের দিনে বাড়িতে অত লোক, তার মধ্যে ঠাকুমা, বাবা, জ্যাঠা, কাকামণি প্রত্যেকের প্রেস্টিজ পাংচার করে দিয়েছেন। ব্যাপক কেলো।
ঠাকুমার কেলোর কীর্তিগুলো শুনতে আমি সর্বদাই আগ্রহী।
কী কেলো রে? কী কেলো?
বাড়িতে উৎসব, সবাই জড়ো হয়েছেন। জড়ো হওয়া মানেই সবার আগে ঠাকুমার কাছে যাওয়া। তিন ছেলেই একত্রে উপস্থিত। জ্যাঠামশাই বেচারি তখনও স্বর্গের সিঁড়ির স্মৃতির দ্বারা তাড়িত–তাই তিনিই ঠাকুমাকে প্রণাম করে বললেন :
মা, আমারে চিনো?
চিনুম না ক্যান?
আমার নাম কী? কও দেহি।
ঠাকুমা হঠাৎ জিব কেটে সলজ্জ ঘোমটা টেনে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তারপর চোখের কোণ দিয়ে মিটিমিটির হেসে, ফিসফিস করে জ্যাঠামশাইকে প্রায় কানে কানে বললেন,
কমু কী কইরা? তোমার নাম যে আমারে লইতে নাই মনু? ভাসুরঠাকুরের নামে তোমার নাম দিসি কিনা! তুমি হইলা আমাগো বড় পোলা! সক্কলের আগে তুমি!
শুনে তো সকলেই স্তব্ধ।
তার ভাসুরের নামে নাম? মোটেই না। তার ভাসুরঠাকুর তো ঠাকুর্দার দাদা-বাবাদের জ্যোঠামশাই হন, তার নাম তো ক্ষেত্রপ্রসাদ। জ্যেঠুর নাম অমূল্য। কেসটা কী হল! ঠাকুমাই। বললেন, আইচ্ছা, নামের গোড়ার অক্ষর কইয়া দিতাসি–স-য়ে ফয়ে আস্ফ দিয়া নাম শুরু! বাস! অইসে! ঘরসুন্ধু মানুষ বজ্রাহত! ক্ষেত্ৰপ্ৰসাদে স-য়ে ফয়ে আস্ফ কই? সে তো কেবল স্ফটিকেই থাকা সম্ভব? এ পরিবারে তো ওই নামের কোনও পূর্বসূরী আছেন বলে এখনও শুনিনি।
এই স-য়ে ফ-য়ে-আস্ফ শুনে অবধি চেয়ারের পিঠ ধরে সেই যে দাঁড়িয়ে উঠেছিলেন, জ্যাঠা আর বসেননি।
এবারে জ্যাঠা একা নন–বাবা, কাকা সকলেই বিচলিত হয়ে ঠাকমাকে চেপে ধরলেন।
ঠিক কইর্যা কও দিনি মা? তোমার কয়ডা পোলা? তাদের নাম কী কী?
কাকু বললেন, মা, আমার পানে চাইয়া দ্যাখো। –কও তো আমি কে? আমার নাম কী? কাকুর চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ে ঠাকুমাও মরিয়া। আর চালাকি চলছে না। এবার ঠাকুমা পুত্রের চোখে চোখে সোজাসুজি তাকালেন।
হঃ! তোমারে চিনি না? আমার পোলা, আমি চিনুম না। নাম শোনবা? ক্যান মনু, আপন আপন নামগুলো তগো মনে নাই? তবে শুইন্যা লও এই আমি কইয়া দিলাম।
তারপরেই হঠাৎ নামতা পড়বার মতো গড়গড় করে একঝাক নাম আবৃত্তি করে গেলেন
বনবিহারী-বিনোদবিহারী-বিমানবিহারী-পুলিনবিহারী-রাসবিহারী-তপন-স্বপন-চন্দন রঞ্জন-কাঞ্চন। লও। আমার সব কয়ডা পোলাপাইনের নাম। গইন্যা লও।
ঘরসুদ্ধ শ্রোতা নির্বাক।
ঠাকুমার তিন সন্তান। অমূল্য, তারাপদ, সদানন্দ। কেউ এই লিস্টে নেই। তাদের পুত্রেরা অবশ্য আছে। কিন্তু বাকি পাঁচজন বিহারীবাবুরা যে কারা, পরিবারের কেউই বলতে পারল না। ঠাকুমা নামগুলি পেলেন কোথায়? নাতিদের নাম না হয় বোঝা গেল,–ছেলেদের নাম বিস্মরণ, সেও না হয় কষ্টেসৃষ্টে বোধগম্য হল, কিন্তু ওই পাঁচটা উটকো নাম কাদের? ঠাকুমা যে ইষ্টমন্ত্রের মতো মুখস্থ আউড়ে গেলেন। বিরাট এক রহস্য সৃষ্টি করল ওই অচেনা নামাবলি। ওরা কারা?
.
রহস্যের মীমাংসা করলেন ঠাকুমারই ছোটভাই, আমাদের মামাদাদু। ঠাকুমার ওই একটিমাত্র ভাই। মামাদাদু বললেন, ওই পাঁচটিই তাদের পাঁচ দাদার নাম। মামাদাদুর জন্মের আগেই তারা গত হয়েছেন মা শীতলার কৃপায়, ঠাকুমার বয়স তখন চার বছর। এই কারণেই মামাদাদুর নাম হয়েছে শীতলাচরণ। ঠাকুমার বিয়ে হয়েছে ন বছরে। ঠাকুর্দাও দেখেননি এই সম্বন্ধীদের। কোথা থেকে যে তুলে এনেছেন ঠাকুমা শৈশবের বিস্মৃত নামগুলি, বসিয়ে দিয়েছেন নিজের সন্তানদের নামের সারিতে, তার অতিপ্রিয়জনদের তালিকায়। কিন্তু স-য়ে ফ-য়ে-আস্ফটার সমাধান মামাদাদুও জানেন না। ওটার কিনারা হল না।
.
এই ঘটনার উপসংহার বাকি আছে দিদি। এখানেই শেষ নয়। পরদিন সকালে উঠে ঠাকুমা মাকে ডেকে জিগ্যেস করলেন, বউমা, আমি কেডা? এ-হেন অস্তিত্ববাদী প্রশ্নে মা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে স্থাণুবৎ। কও দিনি? আমি কেডা?
প্রায় গোপন কথা বলাবলির মতো ফিসফিস করে মাকে জিগ্যেস করলেন ঠাকুমা, ষড়যন্ত্রের ভঙ্গিতে। অগত্যা তার বউমা বললেন, মা, আপনি আমার শাশুড়ি, এই বাড়ির কর্তামা, আনন্দমোহিনী।
ঠাকুমা মন দিয়ে শুনলেন। তারপর ভুরু কুঁচকে, সন্দিগ্ধ সুরে বললেন, আনন্দ মোহিনী? হেইডা আবার কেডা? বউমা? ওই নামখান কার?
মা-র প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা। তখন আমরা গেলাম অভয় দিতে। ওই লাইনেই নয়। ট্র্যাক বদল।
আরে! তুমি তো আমাদের ঠাকুমা, আমাদের চিনতে পারছ না?
আঃ হা। তাই ক। আমি তো রঞ্জন-চন্দনের ঠাকুমা। বাস বাস আর কইতে লাগব না। বুঝছি।
রঞ্জন থামল। এই গল্পের টীকা হয় না। আমি শুধু চায়ের কাপটা এগিয়ে দিই। রঞ্জন চা-টা শেষ করে আবার শুরু করল।
মেজদির নাতি হয়েছে। তাকে নিয়ে এসেছে ঠাকুমার কাছে। ঠাকুমা বসে আছেন বিছানায়, তার কোলে দেওয়া হল। ঠাকুমা তো পুতিকে কোলে করে খুব খুশি। অনেক আদর করছেন, ছড়া কাটছেন। ফরসা ধবধবে ছোট্ট বাচ্চাটা, মাসখানেক, মাস দেড়েকের হবে, তার পরনে কিছু নেই। কেবল কোমরে কালো ঘুনসিতে একটা তামার পয়সা বাঁধা। ঠাকুমা আদর করতে করতে জিগ্যেস করলেন, ভারি সোন্দর! এইডা কি হইসে? পোলা, না মাইয়া?
সবাই সমস্বরে বলে উঠেছি, কেন ঠাকুমা? ও তো তোমার কোলেই আছে; ছেলে না মেয়ে দ্যাখাই তো যাচ্ছে সেটা
ঠাকুমা কেমন লজ্জা পেয়ে গেলেন। আস্তে করে মাথা নেড়ে মৃদুস্বরে বললেন, অতশত আমার মনে নাই, তরাই কইয়া দে আমারে—
.
আমি এবারেও কী বলব, ভেবে পাই না, শেষে রঞ্জনই কথা বলে।
এ তো একরকম। কিন্তু গতকাল যা ঘটল সেটা ক্লাসিক। দুপুরের দিবানিদ্রার পর উঠে ঠাকুমার বেজায় ফুর্তি। ব্যাপক চেঁচামেচি জুড়ে দিলেন। সারা মুখ উল্লাসে ঝলমল করছে, কণ্ঠস্বরে বিয়েবাড়ির ব্যস্ততা।
কই রে তপইন্যা, রঞ্জইন্যা, আমার চন্দনবুড়াটা, কই গেলি তরা সব? আয়, আয়, শীঘ্র আইস্যা আমারে তোল, আমারে তোল, আমারে পুড়াও সদানন্দ, ও তারাপদ, ও অমূল্যা, দৌড়িয়া আসো বাবারা, আমারে পুড়াও! আমরাই দৌড়ে যাই।
ও ঠাকুমা, হল কী তোমার! ও কী আকথা-কুকথা বলছ?
আহা, আমারে পুড়াইবি আর কখন? আমি ত মসি। রাইতেই মইরা গিসি, তরা কেউ বোঝ নাই। আর বিলম্ব না, জলদি জলদি পুড়া আমারে-রাইত হইলে তো মোশকিল, –দিনে দিনেই লইয়া চল্
ছিঃ ঠাকুমা, অমন বলে না, তুমি মরবে কেন! ষাট! তুমি মরনি।
হ, হ, আমি মরসি, আমি মরসি। আমার পোলাগুলা গেল কই? ডাইক্যা দে, পুড়াইতে ক আমারে।
আরে না, ঠাকুমা, মরনি তুমি! এই দ্যাখো, মরলে কি ব্যথা লাগে? বলেই সাবধানে ঠাকুমার পায়ে এক রামচিমটি।
উঃ হু হু হু..ঈ..শ কী পাজি! মরা মানুষেরে ব্যথা দেয়। মরসি, তবু জ্বালাস? তগো লজ্জাশরম নাই?
আহা, মরা মানুষকে কি ব্যথা দেওয়া যায়! তাহলে তো পোড়ালেও তুমি ব্যথা পাবে। পাবে না? তুমি বেঁচেই আছ ঠাকুমা। জিন্দা মানুষ তুমি।
তরা পোলাপাইন, তরা কিসু বোঝে না। আমি বাসি য্যান মরসি। আর তরা কও মরি নাই। ল ল আমারে পুড়াইতে ল।
না গো ঠাকুমা। সত্যি বলছি, তুমি মরনি। তুমি স্বপ্ন দেখেছ। স্বপ্ন। চিমটিতে ব্যথা পেলে, দেখলে না?
স্বপন ছিল ওইটা?
হ্যাঁ ঠাকুমা। স্বপ্ন।
মরি নাই?
না, না, মরবে কেন?
ঠিকঠাক কইতাসো তোমরা?
ঠিকঠাকই কইতাসি ঠাকুমা, মর নাই তুমি। বাইচ্যা আছে। জিন্দা আছ। শ্বাসপ্রশ্বাস পড়তাসে তোমার। স্বপ্নই দেখসিলা তুমি।
তৃপ্ত, উজ্জ্বল মুখখানি মুহূর্তের মধ্যে বিবর্ণ, নিষ্প্রভ, মলিন হয়ে গেল ঠাকুমার।
যাঃ, খোয়াবই দ্যাখতাসি ক্যাবল? এইবারেও মরণ হইল না তাইলে?
খুব দুঃখী মুখে ঠাকুমা চোখ বুজে জপের মালা নাড়াচাড়া শুরু করে দিলেন। আপন মনেই বললেন, মরি নাই? দু-র ছাই!
.
রঞ্জন চুপ করে গেল। স্তব্ধতা ভেঙে আমি বলি, ঘুগনিটা খা। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তারপর? আজকে কী বলছেন ঠাকুমা? আজ কেমন মুড?
আজ? আজ যখন আমি বেরুচ্ছি আমাকে বললেন, রঞ্জইন্যা, তুমি কি নয়াপাড়ায় যাও? নয়াপাড়ার দাদুরে একবার দেইখ্যা আইস। ঘরদুয়ার সব বানের জলে ভাইস্যা গেসে, শিবমন্দিরের উচা চাতালে পইড়্যা আছে স্ত্রী-পুত্র লইয়া গরুছাগলের লগে। আমি বললাম, হ্যাঁ, দেখে আসব।
নয়াপাড়াটা কোথায়, রঞ্জন?
ঠাকুমার ভেসে যাওয়া বাপের বাড়ি। বিরাশি বছর আগেকার বন্যার খবর নিতে পাঠিয়েছেন আমাকে।
দেশ, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০২