চতুর্থ খণ্ড (স্নেহের দীপঙ্কর আচার্য এবং সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়)
পঞ্চম খণ্ড (বন্ধুবর স্নেহপ্রতিম শ্রী নিতীশ রায় ও বউদিকে)
4 of 6

টেকনিক

টেকনিক

টেকনিক আর টেকনোলজির যুগ। তাহলে শান্তিতে বাঁচার উপায় তো একটা বের করতে হয়। জ্বলে পুড়ে বৃষকাষ্ঠ হয়ে মরাটা কী খুব গৌরবের, না বুদ্ধিমানের কাজ? দেখা যাক, ইহুদি প্রবাদ কী নির্দেশ দিচ্ছেঃ

He who spares his words has true wisdom;

And he who holds his temper is a man of sense.

 যে চোটপাট উত্তর না দিয়ে গুম মেরে থাকে, সেই জ্ঞানী। আর বিচক্ষণ মানুষ রাগেন না। তাহলে গৃহসুখের প্রথম টেকনিক হল, স্ত্রীর মুখে মুখে তর্ক না করা। আর দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগকে সংযত রাখা। কথা আর রাগ হল কুরুক্ষেত্রের মশলা। বলেছ, কি মরেছ!

A forbearing man is better than a warrior

He who rules his temper better than one who takes a city.

যে সহনশীল, যার সহ্যশক্তি বেশি সে যেকোনও যোদ্ধার চেয়ে শক্তিশালী। যেমন ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ বলে গেছেন—শ, ষ, স, সহ্য করো, সহ্য করো, সহ্য করো। যে সয় সে রয়, যে না সয় সে নাশ হয়। প্রায় একই উপদেশ। তারপর? যে তার মেজাজকে শাসনে রাখতে পারে, সে যেকোনও নগরশাসকের চেয়ে ভালো। অনেক বেশি ক্ষমতাশালী।

এরপর? আরও আছে,

Even a fool counted wise if he keeps silent,

intelligent if he shuts his lips.

পিড়েতে টোপার মাথায় যে বসেছে, সে-ই বোকা। দেখুন তুলসীদাসজি কী বলছেন?

বেহা বেহা সবকোই কহে, মেরা মনমে এহি ভায়।

চড় খাটোলি ধো ধো লগড়া জেহেল পর লে যায়।।

 সে কী আনন্দ! আমার বিয়ে, বিয়ে। চৌদোলায় চড়ে, বাদ্য বাজনা করে বর চলেছে। তুলসী দেখছেন আর ভাবছেন, হায় রে! আমৃত্যু জেলখানায় বন্দি করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছে। মুর্খ সেজে হাজতে চলেছে, রোশনাই করে। ডবল মুর্খ! তা সেই মুর্খকেও জ্ঞানী বলা যাবে, যদি সে চুপ করে থাকে। আর সে-ই বুদ্ধিমান যে নিজের ঠোঁট বন্ধ রাখতে জানে। পরিবার ওসকাবে? কিন্তু কোনও ট্যাঁফোঁ করব না, এই হল বুদ্ধিমানের ধর্ম।

সেই একই রকমের নির্দেশ তুলসীদাসজির,

রাজা করে রাজ্য বশ, যোদ্ধা করে রণ জই।

আপনা মনকো বশ করে সো, সবকো সেরা ওই।

রাজ্য বশ করতে পারলেই রাজা, যুদ্ধ জয় করলেই যোদ্ধা, আর দুর্দান্ত মনকে জয় করতে পেরেছে যে, তার কাছে, রাজাও লাগে না। যোদ্ধাও লাগে না। তিনিই হলেন সবচেয়ে বড় জয়ী। আমায় যতই নাচাও নাচব না, এই হোক মন্ত্র।

।। পরিবার কেন রাগেন ।।

তিনি হলেন প্রভু। অতএব কাজে ফাঁকি দিলে, কী আলস্য করলে, তিনি রাগতেই পারেন। রাগার হক আছে। কাজের তালিকাঃ

১) সকালে সময় মতো বাজার। নিজের মনোমতন নয়, তাঁর মনের মতো।

২) ফ্যুয়েলের চাহিদা মতন জোগার, যেমন গ্যাস ও কেরোসিন।

৩) ফাই-ফরমাশ খাটা। হাসিমুখে, বিরক্ত না হয়ে।

৪) যখন যেখানে যেতে বলবেন, বিনা প্রতিবাদে যাওয়া এবং নিয়ে যাওয়া।

৫) জল, জলখাবার, বারেবারে চা না চাওয়া।

৬) সকালের প্রথম চা করে দিতে পারলে অতি উত্তম।

৭) রাতে বিছানা করা, মশারি টাঙানো, সকালে পরিপাটি করে তোলা।

৮) মাঝে মাঝে বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়া।

৯) কাজের লোক না এলে বাসন মাজা, ঘরদোর পরিষ্কার করা।

১০) রাতে শুতে যাওয়ার আগে দরজা বন্ধ করা, সব আলো নেবানো ও ভোরে কাজের লোককে খুলে দেওয়া।

এই হল টেন কম্যান্ডমেন্টস। পালনে সুখ। অবহেলায় অশান্তি। শয়নের আগে একবার অন্তত বলা, ‘সকলি তোমারি ইচ্ছা। ইচ্ছাময়ী তারা তুমি।’ অথ গৃহসুখ সমাপ্ত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *