ঝিলিমিলি

ঝিলিমিলি
প্রথম দৃশ্য

[মির্জা সাহেবের দ্বিতল বাড়ির উপর-তলার প্রকোষ্ঠ। মির্জা সাহেবের ষোড়শী মেয়ে ফিরোজা রোগশয্যায় শায়িতা। সব জানালা বন্ধ, শুধু পশ্চিম দরজা খোলা। বাহিরে বৃষ্টি হইতেছে। পার্শ্বে বসিয়া মির্জা সাহেবের পত্নী হালিমা বিবি মেয়েকে পাখা করিতেছেন। বাদলায় ও বেলাশেষের অন্ধকারে ঘরের আঁধার গাঢ়তর হইয়া উঠিতেছিল। হালিমা বিবি উঠিয়া হারিকেন জ্বালিলেন।]

ফিরোজা :
মা!
হালিমা :
(ছুটিয়া আসিয়া ফিরোজার মুখের কাছে মুখ রাখিলেন) কী মা! সোনা আমার!
ফিরোজা :
বাতি নিবিয়ে দাও!
হালিমা :
কেন মা? বড্ড আঁধার যে! ভয় করবিনে।
ফিরোজা :
উঁহুঁ। তুমি আমায় ধরে বসে থাকো। (মা-কে জড়াইয়া ধরিল) বাতি বিশ্রী লাগে।
হালিমা :
তা তো লাগবেই মা‌! (দীর্ঘশ্বাস গোপন করিলেন) আচ্ছা, আমি কাগজ আড়াল করে দিই। কেমন?
ফিরোজা :
না। তুমি নিবিয়ে দাও। (রোগশীর্ণ কণ্ঠে চিৎকার করিয়া উঠিল) দাও শিগগির!
হালিমা :
কেঁদো না মণি, মা আমার! এই আমি নিবিয়ে দিচ্ছি। (বাতি নিবাইতে গেলেন। ততক্ষণে কতকগুলো বাদলা পোকা আসিয়া বাতি ঘিরিয়া নৃত্য করিতেছিল। ফিরোজা তাহাই এক মনে দেখিতে লাগিল।)
ফিরোজা :
নিবিয়ো না, মা! আমি বাদলা পোকা দেখব!
হালিমা :
(হাসিয়া ফিরিয়া আসিলেন) খ্যাপা মেয়ে! আচ্ছা নিবাব না। পোকা যে গায়ে মুখে এসে পড়বে মা, বাতিটা একটু সরিয়ে রাখি।
ফিরোজা :
(চিৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিল) না! আমি বলছি, বাদলা পোকা দেখব!
হালিমা :
(কন্যাকে চুমু দিলেন) লক্ষ্মী মা আমার! অত জোরে কথা কোয়ো না! ওতে অসুখ বেশি হয়! আমি বাতি সরাচ্ছি নে।
ফিরোজা :
(চুপ করিয়া বাদলা পোকা দেখিতে লাগিল) মা, আমায় একটা বাদলা পোকা ধরে দাও না!
হালিমা :
ছি মানিক! পোকা ছুঁতে নেই! তুই আজ অমন করছিস কেন ফিরোজা?
ফিরোজা :
(কান্নার সুরে) দাও বলছি। নইলে চেঁচিয়ে রাখব না কিছু।
হালিমা :
লক্ষ্মী, মা! কেঁদো না। এই দিচ্ছি। (একটা বাদলা পোকা ধরিয়া মেয়ের হাতে দিলেন। ফিরোজা হাতে করিয়া এক মনে বাদলা পোকা দেখিতে লাগিল।)
ফিরোজা :
এই যা! পাখা খসে গেল! আ-হা-রে! আচ্ছা মা! বাদলা পোকার খুব লাগল?
হালিমা :
তা লাগল বইকী!
ফিরোজা :
তা হলে ছেড়ে দিই ওকে। মা, তুমি ওকে নীচে রেখে এসো (হালিমা বাদলা পোকা নীচে রাখিয়া আসিলেন) … মা, বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে, না?
হালিমা :
হাঁ মা, খুব বৃষ্টি। শুনছ না ঝমঝমানি?
ফিরোজা :
আমার খুব ভালো লাগে ওই বৃষ্টির শব্দ। … মা, আব্বা কোথায়?
হালিমা :
বাইরে, দহলিজে বোধ হয়।
ফিরোজা :
এখন যদি আমি খুব জোরে কাঁদি, আব্বা শুনতে পাবেন?
হালিমা :
ছি মা, কাঁদবে কেন? ওঁকে ডেকে পাঠাব?
ফিরোজা :
না, না, ডেকো না। মা খুব লক্ষ্মী মেয়ে! আচ্ছা মা, তুমি যদি এখন গান কর, আব্বা শুনতে পাবেন?
হালিমা :
ওরে দুষ্টু! বুঝেছি তোমার মতলব। … না, মা, এখন কি আর গান করে, তোর আব্বা শুনলে রাগ করবেন।
ফিরোজা :
এত বৃষ্টিতে শুনতে পাচ্ছেন কিনা! মা, লক্ষ্মী মা, সোনা-মা, আস্তে আস্তে গাও না! সেই বৃষ্টি ঝরার গানটা।
হালিমা :
আচ্ছা, গাচ্ছি আস্তে আস্তে। এখন কি আর গান আসে রে ফিরোজা। সেই কখন ছেলেবেলায় গেয়েছি গান। এখানে এসেই তা ভুলতে চেষ্টা করেছি। তোর আব্বা বড্ডো রাগ করেন গান শুনলে।
ফিরোজা :
আচ্ছা মা, গান শুনেও কেউ রাগে? আব্বা আচ্ছা মানুষ যা হোক!
হালিমা :
আগে কিছুদিন রাগ করতেন না। … গান তো প্রায় ভুলেই যাচ্ছিলাম। কেবল তোর জন্যেই আজও দু-একটা মনে আছে।
ফিরোজা :
আব্বা আগে রাগ করতেন না মা, তুমি গান করলে?
হালিমা :
না! ………. তুই এখন গান শোন।

ঝরে ঝরঝর কোনো গভীর গোপন-ধারা এ শাঙনে।
আজি রহিয়া রহিয়া গুমরায় হিয়া একা এ আঙনে॥
ঘনিমা ঘনায় ঝাউ-বীথিকায় বেণু-বন-ছায় রে
ডাহুকিরে খুঁজি ডাহুক কাঁদে রে আঁধার গহনে॥
কেয়া-বনে দেয়া তূণীর বাঁধিয়া
গগনে গগনে ফেরে গো কাঁদিয়া
বেতস-বিতানে নীপ-তরুতলে
শিখী নাচ ভোলে পুছ-পাখা টলে।
মালতী লতায় এলাইয়া বেণি কাঁদে বিষাদিনী রে,
কাজল-আঁখি কে নয়ন মোছে তমাল-কাননে॥

ফিরোজা :
মা! জানলাটা খুলে দাও। আমি মেঘ দেখব!
হালিমা :
লক্ষ্মী মা! জানলা খোলে না। ঠান্ডা লাগবে। আমি বরং একটা গান করি, তুমি শোনো।
ফিরোজা :
না মা। আর গান আমি সইতে পারব না। খোলো না মা, জানলাটা। (হালিমা দক্ষিণের জানালা খুলিতে গেলেন) ওটা না মা, ওই পুব-দিককার জানলাটা খোলো। পুবের হাওয়ায় কদম ফোটে, না মা?
হালিমা :
ও-দিককার জানলা খুললে তোর আব্বা আমায় আর জ্যান্ত রাখবেন না, ফিরোজ! এই দক্ষিণের জানলাই খুলি। (দক্ষিণের বাতায়ন খুলিলেন। দূরে বনের আভাস দেখা যাইতেছে। বৃষ্টিধারায় বন ঝাপসা হইয়া আসিতেছে।)
ফিরোজা :
(দীর্ঘশ্বাস মোচন করিয়া পাশ ফিরিল। আবার পাশ ফিরিয়া আগেকার মতো করিয়া শুইয়া জানালার দিকে তাকাইয়া থাকিল। বোধ হয় সে কাঁদিতেছিল।) মা!
হালিমা :
মা আমার! তুই কাঁদছিস ফিরোজ?
ফিরোজা :
আচ্ছা মা, আব্বা তোমায় খুব ভালোবাসেন?
হালিমা :
জানি না। (চক্ষু মুছইলেন)
ফিরোজা :
আগে খুব ভালোবাসতেন?
হালিমা :
বাতিটা এখন সরিয়ে রাখি? তোর চোখে লাগছে, না?
ফিরোজা :
আচ্ছা রাখো। কিন্তু তুমি বলো …
হালিমা :
(বাতি সরাইয়া রাখিলেন।) এখন একটু চুপ করে ঘুমাও তো ফিরোজা। বকলে আবার অসুখ বাড়বে।
ফিরোজা :
আচ্ছা, তুমি না-ই বললে। আমি সব বুঝি। আব্বা কক্ষনো কাউকে ভালোবাসেননি। নইলে মানুষ কখনো এমন নীরস আর নিষ্ঠুর হয়!
হালিমা :
তুই কি থামবি নে ফিরোজা? লক্ষ্মী মা আমার, কেন মন খারাপ করছ এত, বল তো! আজ যে তোকে চুপ করে থাকতে বলে গেছে ডাক্তার।
ফিরোজা :
আচ্ছা মা, কাল থেকে ওই পুব-দিককার জানলাটা খুলবে তো, তখন তো আর আব্বা বকবেন না?
হালিমা :
(শিহরিয়া উঠিলেন। কান্নায় তাঁহার গলা ভাঙিয়া আসিল।) ও কী কথা বলছিস ফিরোজ?
ফিরোজা :
কাল আর ও-জানলা খুলতে বলব না মা! (বালিশে মুখ লুকাইল।)
হালিমা :
(হঠাৎ পাথরের মতো স্থির হইয়া গেলেন। কণ্ঠ তাঁহার অশ্রুবিকৃত হইয়া উঠিল।) বুঝেছি রে হতভাগি, সব বুঝেছি। তুই আমাদের বড়ো শাস্তি দিয়ে যাবি। … মা, এই আমি খুলে দিচ্ছি পুব-জানলা, তুই অত অধীর হসনে। (পুব-জানালা খুলিয়া দিতেই সম্মুখের বাড়ির মৃদু-আলোকিত বাতায়ন দেখা গেল। বাতায়নপথে কে যেন ছটফট করিয়া ফিরিতেছে। দূর হইতে তাহাকে ছায়ামূর্তির মতো দেখাইতেছিল। ছায়ামূর্তি নিশ্চল হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। মনে হইল যেন এই বাতায়ন-পানেই সে অচঞ্চল দৃষ্টিতে তাকাইয়া আছে। হালিমা আড়ালে চক্ষু মুছিলেন।)
ফিরোজা :
(ব্যাকুল দৃষ্টিতে বাতায়ন-পথে তাকাইয়া রহিল।) মা, বাঁশি বাজছে না? উঁহুঁ কে যেন কাঁদছে! (অস্থির হইয়া) বাইরে কে কাঁদে মা? মা, মা, শোনো!
হালিমা :
কই মা, কিছু না। ও বৃষ্টির ঝরঝরানি। … হুঁ … না …হাবিব বুঝি গান করছে এসরাজ বাজিয়ে।
ফিরোজা :
আহ! বৃষ্টিটা যদি থামত, গানটা শুনতে পেতাম … বৃষ্টি থেমে আসছে – না মা?
হালিমা :
হাঁ মা, বৃষ্টিটা ধরে এল।
ফিরোজা :
মা – মা! এইবার শুনতে পাচ্ছি গান। আহ! একটু শব্দ না হয় যেন। মা তুমি চুপ করে শোনো। (বাতায়ন হইতে গান ভাসিয়া আসিতেছিল।)

গান

হৃদয় যত নিষেধ হানে নয়ন ততই কাঁদে।
দূরে যত পলাতে চাই, নিকট ততই বাঁধে॥
স্বপন-শেষে বিদায়-বেলায়
অলক কাহার জড়ায় গো পায়,
বিধুর কপোল স্মরণ আনায়
ভোরের করুণ চাঁদে॥
বাহির আমার পিছল হল কাহার চোখের জলে।
স্মরণ ততই বারণ জানায় চরণ যত চলে।
পার হতে চাই মরণ-নদী
দাঁড়ায় কে গো দুয়ার রোধি,
আমায় – ওগো বে-দরদি –
ফেলিলে কোন্ ফাঁদে॥

[গান শেষ হইলে বাতায়নের আলো উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিল। সেই আলোকে এক প্রিয়দর্শন তরুণের মূর্তি স্পষ্ট হইয়া দেখা দিল। সে স্থির দৃষ্টিতে এই দিকেই তাকাইয়া আছে।]

ফিরোজা :
মা – মা-মণি! ঘরের বাতিটা খুব উজ্জ্বল করে দাও। যেন আমায় খুব ভালো করে দেখা যায় ও-বাড়ি হতে। (বাহিরে কাহার পদশব্দ শোনা গেল।)
হালিমা :
ওরে ফিরোজ! বন্ধ কর, বন্ধ কর, পুব-জানালা। তোর আব্বা আসছেন। (মির্জা সাহেব গৃহে প্রবেশ করিতেই একটা দমকা হাওয়ায় প্রদীপ নিবিয়া গেল। হালিমা আবার বাতি জ্বালাইলেন।)
মির্জা সাহেব :
আর জানলা বন্ধ করতে হবে না। আমি বহুক্ষণ থেকেই তোমাদের কীর্তি দেখছি। দেখ, আর যা-ই কর, ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে চেষ্টা, কোরোনা। (হালিমা নিরুত্তর) … আর ওই বাঁদর ছোঁড়াটাকেই বা কী বলি! এক গাছা কাঁচা বেত নিয়ে বেতিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত … (ক্রোধে বদ্ধমুষ্ঠি হইয়া দাঁত কড়মড় করিয়া উঠিলেন।) দিনরাত গান আর গান! বাঁশি আর এসরাজ! স্থিরচিত্তে একটু ‘কোরান তেলাওত’ করবার কী নামাজ পড়বার জো নেই। হতচ্ছাড়া পাজি কোথাকার! ওই বিশ্ব-বখাটে আবার বলে, পাশ করবে বি.এ.। ও তো ফেল করেই আছে। ওই রত্নের সঙ্গে দেব মেয়ের বিয়ে!
হালিমা :
দেখো, তোমার পায়ে পড়ি, আজ একটু আস্তে কথা কও, আজ ফিরোজা কেমন যেন করছে!
মির্জা সাহেব :
(পুব-দিককার জানালাটা বন্ধ করিতে করিতে) হুঁ। … তা এমন করে জানলা খুলে তাকিয়ে থাকলে যে-কোনো আইবুড়ো মেয়েরই অসুখ করে।…দেখ, তুমিই ফিরোজার মাথা খেলে। আর ওই বুড়ো বয়সেও তোমায় গান গাওয়া অভ্যেস গেল না। কী ভুলই করেছি স্কুলে-পড়া মেয়ে বিয়ে করে!
হালিমা :
সত্যি, এ ভুল না হলে দুইজনই বেঁচে যেতাম। আমি এ কথা-ভাবতেও পারিনে যে, কোনো কোনো গ্র্যাজুয়েট গোঁড়ামিতে কাঠ-মোল্লাকেও হার মানায়।
মির্জা সাহেব :
শরিয়তের বিধি-নিষেধ মানাকে তুমি গোঁড়ামি মনে কর, এ অভিযোগ তো বহুবার শুনেছি, হালিমা। আর কোনো নতুন কথা শোনাবার থাকে তো বলো।
হালিমা :
আছে। তোমার মতো শরিয়তের টিন-বাঁধানো হৃদয়ে তা কি লাগবে? …একটু আগে গানের খোঁটা দিচ্ছিলে। কিন্তু তুমি ভুলে যাচ্ছ যে,আমি গান গাইতে পারি জেনেই তুমি আমায় বিবাহ করে কৃতার্থ হয়েছিলে!
মির্জা সাহেব :
ভুলিনি সেকথা। কিন্তু তখন জানতাম না যে তোমার গান শুধু চোখের জল, শুধু ব্যথা। কেন গান শরিয়তে নিষিদ্ধ, তা আমার চেয়ে কেউ বেশি বুঝবে না! শরিয়তে যিনি সংগীত নিষিদ্ধ করেছিলেন, তিনি জানতেন এর ব্যথা দেওয়ার পীড়া দেওয়ার শক্তি কত।
হালিমা :
আমি এও জানি, যিনি এই শরিয়তের স্রষ্টা, তিনি গান শুনে আনন্দও পেয়েছেন। যাক, তর্ক করবার স্থান এ নয়। মেয়েটাকে একটু শান্তিতে মরতে দেবে কি?
মির্জা সাহেব:
দেখ, জীবনে হয়তো শান্তি দিইনি তোমাদের। আমার বিশুষ্ক জীবনে তোমাদের জন্যে হাসির ফুল ফোটাতে পারিনি, শুধু কাঁটাই ফুটিয়েছি। কিন্তু মরণেও তোমাদের অশান্তি হানব, এত বড়ো গালি আমায় না-ই দিলে!

(হালিমা চমকিয়া উঠিলেন, ফিরোজা পাশ ফিরিয়া জলসিক্ত চোখে তাহার বাবার দিকে তাকাইল – মির্জা সাহেব পায়চারি করিতে লাগিলেন।)
ফিরোজা :
আব্বা! আমার পাশে এসে বসো।
মির্জা সাহেব :
(কাঁপিয়া উঠিলেন)…হালিমা! তুমি ফিরোজাকে দেখো, আমি ডাক্তার ডাকতে চললাম।
ফিরোজা :
আব্বা! আব্বা! দেখছ না কীরকম ঝড়-বৃষ্টি শুরু হল আবার। তুমি যেয়ো না। আমি আর ওষুধ খাব না। একটু কাছে এসে বসো আজ লক্ষ্মীটি।
মির্জা সাহেব :
(হঠাৎ শুষ্ক হইয়া উঠিলেন।) কিন্তু আমি থাকলে তো তোমার অসুখ আরো বেড়ে উঠবে মা!
ফিরোজা :
না, আজ আর বাড়বে না। তুমি এসো (মির্জা সাহেব তাহার শয্যাপার্শ্বে বসিয়া তাহার ললাটে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিলেন) … আব্বা, আজ আমি খুব যা-তা বকব, তুমি কিছু বলবে না বলো।
মির্জা সাহেব :
আচ্ছা মা, বলো।
ফিরোজা :
তুমি ওই পুব-জানলাটা খুলতে দাও না কেন?
মির্জা সাহেব :
(হঠাৎ কঠোর হইয়া উঠিলেন) ও ব্যাটা পাজি, নচ্ছার, বাঁদর!…কিন্তু মা, তুমি ভালো হয়ে ওঠো। ও যদি বি. এ. পাশ করতে পারে এবার, তাহলে ওই বাঁদরের গলাতেই মোতির মালা দেব – এও তো বলে রেখেছি।
ফিরোজা :
কিন্তু আমি তো আর ভালো হব না আব্বা।
মির্জা সাহেব :
(শিহরিয়া উঠিলেন) না, মা, ভালো হবে। এখনই তো ডাক্তার আসবে।
ফিরোজা :
উঁহুঁ, কিছুতেই ভালো হব না আমি।…আচ্ছা আব্বা, তুমি ওকে এ-বাড়ি আসতে দাও না কেন?
মির্জা সাহেব :
(হঠাৎ বিছানা হইতে উঠিয়া চিৎকার করিয়া) আমি ওকে খুন করব। শয়তান আমার মেয়েকে খুন করেছে।
(বাহির দ্বারে করাঘাত শোনা গেল)
হাবিব :
আমি এসেছি। আমায় খুন করুন। … মা, একটিবার দোর খুলে দিন।
মির্জা সাহেব :
খবরদার! কেউ দোর খুলো না। বেরোও পাজি এখান থেকে।
হাবিব :
পাশের খবর বের হয়েছে।
মির্জা সাহেব :
পাশ করেছ?
হাবিব :
এখনও খবর পাইনি। তার করেছি। হয়তো এখনই খবর আসবে।
মির্জা সাহেব :
মিথ্যাবাদী! আগে খবর আসুক, তারপর এসো। এখন বেরোও। মেয়ের অসুখ বেড়েছে।
হালিমা :
আহা, দাও না বাছাকে আসতে। একটু দেখে যাবে বই তো নয়! কদিন থেকে ছেলেটা যেন ছটফটিয়ে মরছে।
মির্জা সাহেব :
হাঁ, আর সেই দুঃখে নতুন নতুন গান গাওয়া হচ্ছে। চুপ করো তুমি। (চিৎকার করিয়া) এখনও দাঁড়িয়ে আছ?
হাবিব :
আছি। আমায় খুন করবেন বলেছিলেন। খুন করুন, তবুও একবার দোর খুলুন মির্জা সাহেব।
মির্জা সাহেব :
দেখেছ ব্যাটার মতোলব। নিশ্চয় সাথে পুলিশ নিয়ে এসেছে। আমায় বলিয়ে নিতে চায় যে, আমি খুন করব বলেছি। আমি কখখনো খুন করব বলিনি, তুমি লক্ষ্মী-ছেলের মতো বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়ো।
ফিরোজা :
কেন এত অপমান সইছ আমার জন্যে, তুমি যাও। আমি তোমায় পেয়েছি।
হাবিব :
পেয়েছ?
ফিরোজা :
হাঁ, পেয়েছি।
হাবিব :
কিন্তু, আমি তো পাইনি।
ফিরোজা :
কাল পাবে। আমি আজ তোমার উদ্দেশে যাব পুব-জানলা দিয়ে। তুমি তোমার বাতায়নের ঝিলিমিলি খুলে রেখো।
হাবিব :
কিন্তু তোমার বাতায়ন তো রুদ্ধ।
ফিরোজা :
যখন যাব তখন আপনি খুলে যাবে।
হাবিব :
তবে যাই আমি।
ফিরোজা :
যাও। যাওয়ার কালে আমার ঝিলিমিলি-তলে সেই যাওয়ার গানটা শুনিয়ে যাও।
[হাবিবের গাহিতে গাহিতে প্রস্থান]
শুকাল মিলন-মালা, আমি তবে যাই।
কী যেন এ নদী-কূলে খুঁজিনু বৃথাই॥
রহিল আমার ব্যথা।
দলিত কুসুমে গাঁথা,
ঝুরে বলে ঝরা পাতা –
নাই কেহ নাই॥
যে-বিরহে গ্রহতারা সৃজিল আলোক,
সে-বিরহে এ-জীবন জ্বলি পুণ্য হোক।
চক্রবাক চক্রবাকী
করে যেমন ডাকাডাকি,
তেমনই এ-কূলে থাকি
ও-কূলে তাকাই॥
ফিরোজা :
মা! মা! আমার কেমন করছে! মাগো, তুমি আমায় ধরো! আব্বা, তুমি যাও। তোমায় ভালো লাগে না। … মা! মা! এত বাতি জ্বলে উঠল কেন! (মূর্ছিত হইয়া পড়িল)
হালিমা :
ওগো, তোমার পায়ে পড়ি, যাও ডাক্তারকে দেখ একটু! মা! সোনা মা আমার! লক্ষ্মী মা! ফিরোজ!
মির্জা সাহেব :
ফিরোজ! মা! তুই ফিরে আয়! আমি হাবিবকে ফেরাতে যাচ্ছি।
[বিদ্যুৎবেগে বাহির হইয়া গেলেন।]

দ্বিতীয় দৃশ্য

[স্থান স্বপ্নপুরি। সাদা মেঘের পাল-টাঙানো সপ্তমী চাঁদের পানসিতে চড়িয়া হাবিব ও ফিরোজা ভাসিয়া চলিতেছে। শ্বেত-মরালীর সারি ডানা দিয়া দাঁড় টানিতেছে। তাহাদের ভিড় করিয়া ঘিরিয়াছে চকোর-চকোরী। ময়ূরকণ্ঠী আলোতে হাবিবের মুখ এবং ফিরোজার মুখ রাঙিয়া উঠিয়াছে। সারা আকাশ যেন জুঁই-বাগানের মতো বিকশিয়া উঠিয়াছে।]

ফিরোজা :
এ আমরা কোথায় এসেছি, হাবিব?
হাবিব :
(হাসিয়া) ছি, নাম ধরে ডাকতে নেই এখানে! এখানে আসতে হয় নাম ছারিয়ে, সকল নামের দিশা ছড়িয়ে। এখানে হাবিবও আসতে পারে না, ফিরোজাও আসতে পারে না।
ফিরোজা :
তবে যে আমরা এসেছি।
হাবিব :
একবার চাঁদের জ্যোৎস্না-মুকুরে ভালো করে নিজের মুখ দেখো দেখি।
ফিরোজা :
(সভয়ে) এ কী, আমি যে আমায় চিনতে পারছিনে! এ আমি কে?
হাবিব :
(হাসিয়া) কার মতো বোধ হয়?
ফিরোজা :
এ যেন – এ যেন সকলের মুখ! এ যেন শকুন্তলার, এ যেন মালবিকার, এ যেন মহাশ্বেতার মুখ! এ যেন লায়লির, এ যেন শিরীর মুখ!
হাবিব :
সত্যিই তাই, তোমার মুখে আজ নিখিল-বিরহিণী ভিড় করেছে। এখানে আসতে হয় শুধু ‘প্রিয়’ আর ‘প্রিয়া’ হয়ে। এখানে নর-নারী অ-নামিক। এ লোকে নর-নারীর পরিচয়-সংকেত ‘প্রিয়’ আর ‘প্রিয়া’। এখানে ডাকতে হয় শুধু ‘প্রিয়তম’ বলে।
ফিরোজা :
(লজ্জায় রাঙিয়া উঠিল, চাঁদকে ঘিরিয়া রামধনুর সাত-রঙা শোভা বিজলির মতো খেলিয়া গেল!) যাও! (কানে কানে) চকোর-চকোরী শুনতে পাবে যে!
হাবিব :
শুনুক। ধরায় আমাদের যে কথা কানাকানি হয়ে আছে, তারায় তারায় আজ তারই জানাজানির হুল্লোড় পড়ে গেছে। দেখছ না প্রিয়তম! কত নব নব তারা জন্ম লাভ করল সৃষ্টির নীহারিকা-লোকে, শুধু ওই কানে-কথাটি শুনবার লোভে। ওই কানে-কথা শুনবে বলেই তো চন্দ্রলোকে এত চকোর-চকোরীর ভিড়!
ফিরোজা :
এ কোন লোক, প্রিয়তম? (চাঁদ দুলিয়া উঠিল)
হাবিব :
দেখলে? চাঁদ দুলে উঠল তোমার ‘প্রিয়তম’ ডাকের নেশায়! …এ স্বপ্ন-লোক।
ফিরোজা :
স্বপ্ন-লোক! তাহলে এ-স্বপ্ন টুটে যাবে? আবার তোমায় হারাব?
হাবিব :
হয়তো হারাবে, হয়তো হারাবে না; জানিনে। তো … এ স্বপ্ন-লোক এত ক্ষণিক বলেই এত সুন্দর।…না, না, এ স্বপ্ন-লোক চিরদিনের, এ সুন্দরের আকাঙ্ক্ষা-লোক, এর কি মৃত্যু আছে? এর কি শেষ আছে?
ফিরোজা :
তবে ভয় হয় কেন? এখনই এর শেষ হয়ে যাবে মনে করে?
হাবিব :
ওই শেষের ভয় – ওই হারাবার ভয় আছে বলেই এত মধুর এ-লোক। তাই তো এমন জড়িয়ে ধরে আছি পরস্পরকে। চোখের পাতা ফেললেই এ স্বপ্ন টুটে যাবে ভয়েই তো এমন পলক-হারা হয়ে চোখে চোখে চেয়ে থাকি। ওই হারাবার ভয়েই তো চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র এমন বিপুল আবেগে পরস্পর পরস্পরের দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে না – পায়ে পায়ে ঘুরে ফিরছে।
ফিরোজা :
তাহলে এই বেহেশ্‌ত?
হাবিব :
এই বেহেশ্‌ত।
ফিরোজা :
তাহলে আর যারা বেহেশ্‌তে এসেছে তারা কই? শিরী, লায়লি, জুলেখা? আর ফরহাদ, মজনু, ইউসুফ?
হাবিব :
আমাকে ভালো করে দেখো দেখি।
ফিরোজা :
(সভয়ে হাবিবকে জড়াইয়া ধরিল) ওগো, একী! তোমার এত বিপুলতা আমি সইতে পারব না। তুমি যেন নিখিল-পুরুষ, তুমি যেন অনন্তকাল ধরে কাঁদছ।
হাবিব :
(হাসিয়া ফিরোজার কপোলে তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়া মৃদু আঘাত করিতে লাগিল) ভয় নেই, প্রিয়তম! আর একবার দেখো, তুমি যাকে দেখতে চাইবে তাকেই দেখতে পাবে আমার মুখে।
ফিরোজা :
(তাকাইয়া স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিল) আচ্ছা বেহেশ্‌তের হুরপরি কই?
হাবিব :
তুমি ইচ্ছা করলেই তারা আসবে। এখানে বাসনা দিয়ে তাদের সৃজন করতে হয়।
ফিরোজা :
তারাও সব তাহলে আমাদের মধ্যে?
হাবিব :
হাঁ, এখানে – এই স্বর্গলোকে – শুধু দুটি নরনারী – তুমি আর আমি – অনন্তকাল ধরে মুখোমুখি বসে আছে। তাদের চোখে পলক নেই। বুঝি পলক পড়লেই বিশ্ব কেঁদে উঠবে। হারিয়ে যাবে সুন্দর এ স্বর্গলোক। হারিয়ে যাব আমি আর তুমি।
ফিরোজা :
(হাবিবকে জড়াইয়া ধরিল) প্রিয়তম!
হাবিব :
(ফিরোজার কপোলে কপোল রাখিয়া) প্রিয়তম!
[চন্দ্র সাথে দোল খাইতে লাগিল। চকোর-চকোরী উন্মত্ত হইয়া উঠিল। হাবিব ও ফিরোজ চাঁদের সাথে দোল খাইতে খাইতে অস্ত গেল।]

তৃতীয় দৃশ্য

[মির্জা সাহেবের অন্দরমহল। ফিরোজা পালঙ্কে মূর্ছিতা। ঘরে ডাক্তার, হালিমা, মির্জা সাহেব। … ভোর হইয়া আসিয়াছে। আকাশ তখনও মেঘাচ্ছন্ন! মেঘলা আকাশ চিরিয়া ‘বউ কথা কও’ পাখির স্বর দূর হইতে দূরান্তরে মিশিয়া গেল। প্রদীপ-শিখা ম্লান হইয়া উঠিয়াছে। হালিমা বারে বারে অঞ্চলে চক্ষু মুছিতেছেন ও কন্যার মুখের দিকে তাকাইয়া দেখিতেছেন। মির্জা সাহেব অস্থিরভাবে পায়চারি করিয়া ফিরিতে ফিরিতে হঠাৎ পুবের জানালাটা পরিপূর্ণরূপে খুলিয়া দিলেন। হাবিবদের বাড়ি প্রেতমূর্তির মতো দাঁড়াইয়া রহিয়াছে দেখা গেল। হাবিবদের কামরার বাতায়ন রুদ্ধ। শুধু ঝিলিমিলি খোলা। ঝিলিমিলির ফাঁক দিয়া নিবু-নিবু দীপশিখার মলিন আলো কান্নার মতো করুণ হইয়া দেখা দিতেছে। ভিতরের আর কিছু দেখা যাইতেছে না। ডাক্তার বারে বারে নাড়ি দেখিতেছেন । শেষে হাতে একটা ইঞ্জেকশন দিয়া ডাক্তার কাহাকেও কিছু না বলিয়া চোখ মুছিতে মুছিতে বাহিরে উঠিয়া গেলেন।]

ফিরোজা :
(নড়িয়া উঠিল) মাঃ!
হাবিব :
(ছুটিয়া গিয়া ফিরোজার উপর যেন হুমড়ি খাইয়া পড়িয়া গেলেন) মা! মা আমার! ফিরোজ! ফিরে এসেছিস! মানিক আমার! জাদু আমার!
মির্জা সাহেব :
ফিরোজ! মা! আবার চললুম খুঁজতে তাকে। ওই সকাল হয়ে এল। আল্লাহ। এবারটি আমায় মাফ করো। আমি তোমার ইঙ্গিত বুঝেছি হালিমা। মাকে আমার ধরে রেখো। আমি হাবিবকে খুঁজতে চললাম। (ঝড়ের বেগে বাহির হইয়া গেলেন)
ফিরোজা :
মা-মণি খুব কেঁদেছ বুঝি? ও কী! পুব-জানলা খুললে কে?
হালিমা :
(ললাটে গভীর চুম্বন আঁকিয়া দিলেন) তোমার আব্বা।
ফিরোজা :
মা, আব্বাকে ডাক।
হালিমা :
তিনি যে হাবিবকে ডাকতে গেলেন, মা! আজ তোদের বিয়ে (মা ম্লান হাসি হাসিলেন)।
ফিরোজা :
(উজ্জ্বল হাসি হাসিয়া) মা, তুমি আব্বাকে খুব ভালোবাস?
হালিমা :
(হাসিয়া) আজ তোর সাথে সাথে প্রথম ভালোবাসলুম। (মুখ ফিরাইলেন)।
ফিরোজা :
(মার হাতে চুমু খাইল) দুষ্ট মেয়ে। তাহলে তোমাদেরও আজ বিয়ে হল। তাহলে আমি তোমাদের কে হলাম।
হালিমা :
খ্যাপা মেয়ে। তুই আমাদের মা হলি। হল তো?
ফিরোজা :
(হঠাৎ সোজা হইয়া উঠিয়া হাবিবের ঝিলিমিলির পানে তাকাইয়া থাকিল) মা! মা! ও জানলা বন্ধ কেন?
হালিমা :
অভিমানী ছেলে – রাত্রে কোথায় চলে গেছে। যাবে আর কোথায়? এক্ষুণি হয়তো আসবে। তোমার আব্বা ওকে না নিয়ে ফিরছেন না।
ফিরোজা :
(শয্যায় ছিন্নকণ্ঠ কপোতীর মতো লুটাইয়া পড়িল) মা! মা গো! সে আর ফিরবে না। আমার স্বপ্নই তাহলে সত্য হল। ওই অস্তচাঁদের চোখে তার অশ্রু লেগে রয়েছে। মা! মা! ও কী? ও কার গান?

(দূরে হাবিবের ক্লান্ত কণ্ঠের করুণ বিলাপ-গীতি শোনা যাইতেছিল।)

গান

স্মরণ-পারের ওগো প্রিয় তোমায় আমি চিনি যেন!
তোমার চাঁদে চিনি আমি, তুমি আমার তারায় চেন॥
নতুন পরিচয়ের লাগি
তারায় তারায় থাকি জাগি
বারে বারে মিলন মাগি
বারে বারে হারাই হেন॥
নতুন চোখের প্রদীপ জ্বালি চেয়ে আছি নিরিবিলি,
খোলো প্রিয় তোমার ধরার বাতায়নের ঝিলিমিলি।
নিবাও নিবু-নিবু বাতি,
ডাকে নতুন তারার সাথি,
ওগো আমার দিবস-রাতি
কাঁদে বিদায়-কাঁদন কেন॥
ফিরোজা :
মা! মা! চাঁদের পার হতে ভেসে আসছে ও-গান। ও-গান স্বপন-লোকের, ও-গান বেহশ্‌তের। মা – গো – !
হালিমা :
হাবিব! হাবিব! ছুটে আয় বাপ আমার! তোর ফিরোজা চলে যায়। মা! মা আমার রে! (লুটাইয়া পড়িলেন)
হাবিব :
(ঝড়ের বেগে দ্বারে করাঘাত হানিয়া) মির্জা সাহেব। দোর খুলুন! খোলো দ্বার! ‘তার’ পেয়েছি। আমি বি. এ পাশ করেছি। খোলো দ্বার। (দ্বারে পদাঘাত করিল, দ্বার ভাঙ্গিয়া পড়িল।) মা! মা! ফিরোজ কই, আমি পাশ করেছি। এই দেখো ‘তার’ – পারদর্শিতার সহিত পাশ!
হালিমা :
হাবিব! হাবিব! ফিরোজ আমার চলে গেছে।
হাবিব :
(ক্রন্দন-উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে চিৎকার করিয়া উঠিল) চলে গেছে?
হালিমা :
চলে গেছে – ওই পুব-জানলা দিয়ে। বললে, চললাম ওই জানলার ঝিলিমিলি খুলতে।
হাবিব :
মা! আমি তাকে খুঁজতে চললাম। ওই অস্ত-চাঁদের চোখে তার ইঙ্গিত দেখতে পেয়েছি। [ঝড়ের বেগে চলিয়া গেল।]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *