ঝন্টুমামার ছিপ
মাখন স্যার আজ আসেননি। শেষ পিরিয়ডটা তাই হল না। বিল্টুকে একধারে টেনে এনে বললাম, ফুটবল পিটবি না বাড়ি যাবি? ঝন্টুমামা
আর বলতে হল না। বিল্টুর চোখ দুটো নেচে উঠল, সেই ভালো। ঝন্টুমামা নিশ্চয় এতক্ষণে ফিরে এসেছে।
চুপিসারে দু-জনে সটকে এলাম ফুটবলের মাঠ ছেড়ে। বিল্টুর ঝন্টুমামার কথা আমরা বন্ধুদের কাছে বলিনি। সবাই তো সব জিনিসের কদর বোঝে না। হঠাৎ যদি দুম করে কেউ বেফাঁস কিছু বলে বসে বা হাসি চাপতে না পারে–কেলেঙ্কারির একশেষ হবে। ঝন্টুমামার গবেষণাকক্ষে ঢোকাটাই হয়তো তখন চিরকালের মতো বরবাদ হয়ে যাবে। কতদিন ধরে কত পরীক্ষা দিয়ে তবে না আমরা দু-জন ওই ঘরে ঢোকার ছাড়পত্র। পেয়েছি। এ তো জানা কথাই যে, সব প্রতিভাধর মানুষেরই একটু-আধটু পাগলামি থাকে। কিন্তু সেটা নিয়ে হাসাহাসি আহাম্মকেরাই করে। না না, আহাম্মক বলা ঠিক নয়। তাহলে আবার বিল্টুর মামার বাড়ির লোকেরা চটে যাবে। কারণ বিল্টুর মামার বাড়িতেও কেউ ঝন্টুমামার কদর বোঝেনি। ভাগ্যিস বিল্টুর বাবা ঝন্টুমামাকে নিজের বাড়িতে এনে গবেষণাগার তৈরি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। না হলে কি আর মামা থাকত এ দেশে! নিশ্চয় নাইরোবি কি কুয়ালা লামপুর চলে যেত। হ্যাঁ তা-ই। আমেরিকা-ইংল্যান্ডে যাবার পাত্র নয় ঝন্টুমামা। ভারত যদি ছাড়তেই হয় তো ভারতের মতোই কোনও গরিব দেশের উপকারে লাগবার চেষ্টা করবেন। না, ঝন্টুমামা নিজের মুখে এ কথা বলেননি। তিনি তো গড়ফার স্কুলে মাস্টারিটা ছাড়বার কথাও চিন্তা করতে পারেন না। তবে সব কথাই কি আর মানুষকে বলতে হয়? ঝন্টুমামা পুঁথির পাতা আর কাগজে-কলমে বিজ্ঞান নিয়ে মেতে থাকার লোক নন। তাঁর মতে আমাদের দেশের প্রতিটি বিজ্ঞানীকে কারিগরও হতে হবে। ফলিত বিজ্ঞানী হতে হবে–বিজ্ঞান যাতে সাধারণ মানুষের জন্য ফল ফলাতে পারে।
বিল্টুদের বারান্দায় বসে আছি দু-জনে। মুড়ির বাটি কখন খালি হয়ে গেছে। দু-তিনবার জানলা দিয়ে উঁকি মেরেছি মামার ঘরের মধ্যে। ওহ–এমন ইন্টারেস্টিং ঘর আর হয় না। কত রকমের সাজসরঞ্জাম, কলকবজা। শিশি-বোতল-ব্যাটারি-ফানেল-কুপি। পুলি-গিয়ার শেকল-দড়ি। হাতুড়ি-কাতুড়ি-তাতাল-তুরপুন। গবেষণাগারের সবই অভিনব। এখানে সময় মাপা হয় জলঘড়িতে। টপটপ করে জল পড়ছে বালতিতে, আর জল যত বাড়ছে, তত ঠেলে তুলছে একটা ফাঁপা পেতলের চোঙা। এই চোঙার গায়ে লাগানো দাঁতকাটা ডান্ডাটা ঘোরাচ্ছে একটা গিয়ার। আর গিয়ারের কেন্দ্রে জোড়া রয়েছে মিনিটের কাঁটা। সব মামার হাতে তৈরি। মোমের চোঙা লাগানো কলের গান-ওটা দেখবার মতো। গলাটা একটু খোনা শোনায়, তা ছাড়া ঘড়ি মোটরের স্প্রিংটা নরম হয়ে গেছে বলে দমটা একটু কম নেয়। তা হোক–এটি ছাড়া আর কি কেউ আছে যে, টেপ রেকর্ডারের সঙ্গে কমপিট করতে পারে! ও হ্যাঁ, মামার গবেষণাগারে অ্যাসিটিলিনের আলো জ্বলে। কখনও সখনও আর্ক ল্যাম্পও।
জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বেমালুম দু-তিন ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু মামা আবার উঁকি-মারা কৌতূহল পছন্দ করেন না।
ব্যাপার কী বল্ তো সন্তু, এখনও ফিরছে না কেন? বিল্টুও দেখছি অধৈর্য। ফুটবল খেলাটাও
কথা শেষ করতে হল না। মামা আসছেন। কিন্তু এ কী চেহারা! হাতে বিকারটা না থাকলে চিনতেই পারতাম না (মামা বিকারেই চা খান এবং ওটা মোড়ের দোকানেই জমা থাকে)। উশকোখুশকো মাথার চুল–পাঞ্জাবির ডান হাতটা এমনভাবে ছিঁড়ে গেছে, যে কোনও মুহূর্তে টিকটিকির লেজ-খসার মতো একটা কাণ্ড ঘটতে পারে।
হনহন করে আসছিলেন মামা। আমাদের লক্ষ করেননি। চা ভরতি বিকারটা বাঁ হাতে নিয়ে পকেট থেকে চাবি বার করলেন। আমরা গুড বয়ের মতো চুপটি করে পেছনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এক হাতে চাবিটা নিয়ে কিছুতেই আর তালার ফোকরটাকে ম্যানেজ করতে পারছেন না। চাবি আর তালা চোর-পুলিশ খেলতে শুরু করেছে। এ তো আর যে-সে তালা নয়, ষোড়শ শতাব্দীর পারসিয়ান তালার ডুয়িং অনুযায়ী মামা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পিটিয়ে তৈরি করে এনেছেন হিমু কামারের দোকান থেকে।
বিল্টু এক পা এগিয়ে এসে বলল, মামা, ধরব বিকারটা? কে মামা চমকে পেছন কিরলেন। অ! দুই মক্কেলই হাজির। ধরবি না তো কী করবি? এতক্ষণ মজা দেখছিলি নাকি?
বিল্টুর হাতে বিকারটা দিয়ে তালায় চাবি ঘোরাতেই–ওরে, গেছে গেছে গেছে– মামা ডান পা শূন্যে তুলে বাঁ পায়ের ওপর দু-তিন লাফ নেচে নিয়ে মেঝের ওপর বসে পড়লেন। মুঠো করে পায়ের বুড়ো আঙুলটা চেপে ধরেছেন। আগেই বলেছি–অসাধারণ তালা। চোর যদি কায়দা করে কখনও তালাটা খুলেও ফেলে, তবু নির্ঘাত জখম হবে। চাবি ঘোরানোমাত্র তালা নামে পাঁচসেরি বিশুদ্ধ লৌহখণ্ড সড়াৎ করে খসে পড়বে। সাধারণ তালার একদিকের পাটিতে যেমন কবজা থাকে, এখানে তা নেই।
মামার জখম খুবই সামান্য। ঘরে ঢুকেই তিন ঢোকে চা শেষ করে ফেললেন। তারপর নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, বুঝলি তো–চোরেদের আঘাত করার ব্যবস্থা করলে নিজেদেরও ব্যথা পেতে হয়। এটাই ন্যাচারাল–আফটার অল, চোরও তো মানুষ। বল?
ঠিক বলেছেন। আমরা একযোগে বলে উঠলাম।
কিন্তু তোরা এমন অসময়ে যে? জানিস তো, সন্ধে ছ-টা থেকে আমার কাজের সময়।
আমরা সেই চারটে থেকে–, পাছে বিল্টুর কথা শুনে মামা আবার খেপে ওঠেন তাই কথাটা ঘুরিয়ে দিলাম, ঝন্টুমামা, আপনার পাঞ্জাবি যে ফর্দাফাঁই—
অ্যাঁ! ছিঁড়ে গেছে? তা-ই তো! দেখেই মামার ভুরু কুঁচকে গেল, কেন ছিঁড়বে না শুনি? ছেঁড়াই তো উচিত। সেইটাই তো ন্যাচারাল। আফটার অল, সুতিদ্রব্যের শিয়ারিং বা টেনসাইল স্ট্রেংথ যা, তাতে বাসের ভিড়ে–ওফ!
সত্যি, বাসে যা ভিড় বাড়ছে দিন দিন। নিশ্চয় সেই জন্যেই আপনার ফিরতে এত দেরি হয়ে গেল, তা-ই না? বিল্টু বলল।
হ্যাঁ, সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।
আচ্ছা মামা, আপনি তো ইচ্ছে করলেই রকেটগাড়ির মতো একটা কিছু তৈরি করে ফেলতে পারেন। হঠাৎ আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ল।
কী বললে? মামার মুখের চেহারা দেখে ভয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে খরগোশ। বেশ বুঝতে পারছি, বিটা মনে মনে হাসছে। রকেটের তুমি কী বোঝ হে? মামা চেপে ধরলেন। জান কে রকেট তৈরি করেছিল?
জানি মামা। গডার্ড সাহেব। বিল্টুটা এমন বিচ্ছু, আমার মুখের কথাটা কেড়ে নিল।
গডার্ড সাহেব! সবই সাহেবরা করেছে, না? তোদের এডুকেশন সিস্টেমকে গঙ্গাজলে চান করিয়ে আনা দরকার।
মামার ধমক শুনে কী ভালো যে লাগল। বি আড়চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। ঠিক হয়েছে, ফলাও আরও বিদ্যে।
হঠাৎ মামার গলার সুর পালটে গেল, যাক গে, তোদের আর বকে লাভ কী। তবে জেনে রাখ, আমাদের টিপ সুলতানও যুদ্ধে রকেট ব্যবহার করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে সেই প্রথম রকেটের ব্যবহার।
আমি নিচু গলায় বললাম, না, মানে, বাসে-ট্রামে বড় ভিড় তো, তাই আপনি যদি কোনও নতুন ধরনের গাড়ি তৈরি করেন–
বুঝেছি, আর বলতে হবে না। তোমাদের মাথায় এখন সুপারফাস্ট যানবাহনের কথা ঘুরছে। এই জন্যে বলি, মেলাই বিদেশি সিনেমা দেখিসনি। লিনিঅর রেল জেট প্রোপালশন –আজ্ঞে না, আমি ও পথ মাড়াব না। এটা তো জাপান বা আমেরিকা নয়। তবে হ্যাঁ তোরা শুনলে খুশি হবি, আমিও এই পরিবহণ সমস্যা নিয়ে চিন্তা ও কর্ম শুরু করেছি। তবে সেটা সুপারফাস্ট নয়, সুপারচিপ। অতি দ্রুতর বদলে অতি সস্তা। বুঝলি না? ওই দেখু—
মামার আঙুল বরাবর তাকিয়ে দেখি উত্তরের দেওয়ালে একটা বিরাট গজাল পোঁতা। তার থেকে একটা হ্যাঁঙারে মামার পাঞ্জাবি ঝুলছে আর ঝুলছে একটা দড়ি-বাঁধা সাইকেলের চাকা। টায়ার-টিউব সমেত রিমটা। শুধু চাকাটা দেখে কিছুই মাথায় ঢুকল না।
মেটিরিয়াল সংগ্রহ শুরু করেছি, বুঝলি? হ্যাঁ, ভালো কথা, এই বিল্টে, তোর প্যারাম্বুলেটরটা কোথায় রে?।
আমি অবাক হয়ে বিল্টুর দিকে তাকাই। চোদ্দো বছর বয়সেও বি প্যারাম্বুলেটর চড়ে, জানতাম না। বিল্টুরও দেখছি মুখ হাঁ।
তুই যে একেবারে আকাশ থেকে পড়লি। প্যারাম্বুলেটর তো চড়তিস একদিন, না কী? জিজ্ঞেস করছি, সেটা গেল কোথায়?
বিল্টুর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল, আছে! আছে! মনে পড়েছে। চিলেকোঠায় ঠাকুমার ঠাকুরঘরের মাথায় চাতালটার ওপর তোলা আছে।
আস্তে আস্তে। চেঁচাচ্ছিস কেন? একবার যদি কানে যায়–শোন্ এই বেলা ছুটে ওপরে চলে যা। কেউ নেই এখন। নিয়ে আয় ওটা। মামা নির্দেশ দেন।
আমি দেখলাম, মামা উঠে দাঁড়িয়ে দাবার বোর্ডে খুঁটি সাজাচ্ছেন। ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলাম, বিল্টু, একা পারবি তো?।
উঁহু! উঁহু! তোমার যাবার কোনও দরকার নেই। ও আসুক–ততক্ষণে একহাত হয়ে যাক আমাদের। শোন, পুরো প্যারাম্বুলেটরটা আনা দরকার নেই। যে কোনও একটা চাকা খুলে আনবি। বেশ মজবুত দেখে একটা।
বিল্টু মুচকি হেসে পালাল। শুরু হয়ে গেল খেলা। খেলা তো নয়–শিক্ষা। আর শিক্ষা মানেই ধমক–মাথা খাটাও, মাথা খাটাও। মামার মতে দাবা না খেললে মনের একাগ্রতা আসে না, আর একাগ্রতা ছাড়া বিজ্ঞানচর্চা অসম্ভব।
পরের দিন উদগ্রীব হয়ে ছিলাম বিল্টুর জন্য। গাড়ি তৈরির খবর নিতে হবে। কিন্তু বিল্টু বাবাজি এলেনই না। পরের দিনও তার পাত্তা পাওয়া গেল না। হঠাৎ মনে হল, মামা নিশ্চয় বিল্টুটাকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছে। আর বিটাও হিংসুটের মতো আমার কাছ থেকে সেটা চেপে রেখেছে। পরের দিনই স্কুলে। আসার পথে চলে এলাম বিল্টু দের বাড়ি।
ভেতরে ঢুকে দেখি, বিল্টু সিঁড়ির পাশে একটা ছোট্ট টুল আর টেবিল নিয়ে বসে আছে। আমায় দেখেই তাড়াতাড়ি একটা বই চালান করে দিল টেবিলের তলায়। তারপর বলল, ও! তুই! মা ভেবেছিলাম।
ফেলুদা পড়ছিলি নিশ্চয়?
না রে। শঙ্কু।
কিন্তু তোর ব্যাপারটা কী? বিল্টু গবেষণাগারে ঢুকতে পায়নি দেখেই আমার রাগটা পড়ে এসেছিল।
এই দেখ না–বিল্টু টেবিলের ওপর চাপা দিয়ে রাখা একটা কাগজ দেখাল। লাল ফেল্ট পেন দিয়ে বড় বড় ছাঁদে লেখা দুটো নম্বর–১০১ আর ২৪-২২২২।
কাগজটা নিয়ে হাঁ করে বসে আছিস কেন? আর সিঁড়ির ধারে—
বাবা বলেছেন। যতক্ষণ মামা সাইকেলের ফ্রেম বানানোর জন্যে ওয়েল্ডিং-এর কাজ করবে, একজনকে রেডি থাকতে হবে। বাবা অফিসে বেরিয়ে গেছে তাই আমি আছি। এই জন্যেই তো দু-দিন স্কুলে যেতে পারিনি। এখানে বসে গবেষণাগারের ওপর ভালোভাবে নজর রাখা যায়।
কী বলছিস, কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
বুঝলি না? ও দুটো ফায়ার ব্রিগেডের নম্বর। দরকার পড়লেই যাতে ছুটে গিয়ে ফোন করে দিতে পারি।
অ্যাঁ!
নয়তো কী! ওয়েল্ডিং কি সোজা কাজ! তবে যা-ই বল–সাইকেলটা যা হচ্ছে না, হয়েই গেছে বলা যায়। একবার উঁকি মেরে যেতে পারিস! তবে খুব সাবধান, মামার মুখোমুখি পড়ে গেলে কিন্তু সব বানচাল হয়ে যাবে। তিন জায়গায় হাত পুড়েছে–বুঝতেই পারছিস তো কত ধকল।
-কিন্তু কী যেন বানচাল হবার কথা বলছিলি?
ও হ্যাঁ, ওইটাই তো আসল কথা। এই রবিবার আমরা সাইকেল অভিযানে বেরচ্ছি। বুঝলি তো? বাবা পারমিশন দিয়েছে। তুইও ম্যানেজ করে নিস। বারাসাতে আমাদের দেশের বাড়িতে যাব। তোর তো সাইকেল আছেই। মামা যাবে নতুন সাইকেলে। ট্রায়াল রান।
বারাসাত এমন কিছু দূর নয়। আরও ঘণ্টা দুয়েক বাদেও আমরা যাত্রা শুরু করতে পারতাম, কিন্তু মামা কিছুতেই রাজি হননি। বারাসাতে পৌঁছেই তিনি মাছ ধরতে বসবেন পুকুরঘাটে। আগেই খবর পাঠানো হয়েছে বারাসাতে। ভোর পাঁচটায় রওনা হতে হবে শুনে রাগ ধরে গিয়েছিল, কিন্তু এখন বুঝছি, এতে মঙ্গলই হয়েছে। মামার সাইকেলটা যেভাবে আমাদের আকর্ষণ করছে, তাতে দিনের বেলায় হলে রাস্তায় কীরকম লোক জমত, বেশ বুঝতে পারছি। ভোর হবার আগেই কলকাতা ছাড়তে না পারলে বিপদ আছে। শহরতলির লোকেও অবাক হবে, কিন্তু খাঁটি কলকাতাবাসীরা অবাক হলেই যেরকম সব কিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে, সেরকম করবে না নিশ্চয়। মামার সাইকেলের সামনের চাকাটা প্রমাণ সাইজের, কিন্তু তারপরেই সাইকেলের ফ্রেমটা পেছনের দিকে লেজের মতো সরু হয়ে ঝুলে পড়েছে, আর সেই লোহার লেজের এক্কেবারে নিচে রয়েছে ছোট্ট একটি চাকা বিল্টুর প্যারাম্বুলেটর থেকে সেটা খুলে নেওয়া হয়েছে। ঝন্টুমামা চড়ে বসেছেন সামনের বড় চাকাটার কাছ ঘেঁষে ফিট করা সিটটার ওপর। সাইকেলের প্যাডেলজোড়াও সামনের বড় চাকাটার সঙ্গে লাগানো। ফলে, চেন স্ট্রকেটের কোনও বালাই নেই। সাইকেলের চেহারা আরও খুলেছে হ্যাঁণ্ডেলের বদলে খেলনা-গাড়ির স্টিয়ারিং লাগানোয়। অনেকবার কাকুতিমিনতি করলাম আমরা দুজনেই, কিন্তু মামার হৃদয় বলে কোনও বস্তু নেই। চড়তেই দিল না। ভেরি রিস্কি। অভ্যাস না থাকলে– এই বলে নিজের পাজামা টেনে ধরল। দেখি পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটুর নিচে অবধি ব্যান্ডেজ বাঁধা। আমাদের মুখের অবস্থা দেখে ঝন্টুমামা আবার রেগে গেল, আজ্ঞে না মশায়, পায়ে আমার কিছুই হয়নি। এটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বুঝলেন? সস্তার সাইকেল তৈরি করতে হলে ফ্রি হুইল ব্যবহার করা যায় না। তাই এই সাইকেলে যতক্ষণ চাকা ঘুরবে, তার সঙ্গে সঙ্গে প্যাডেলও ঘুরবে। সাইকেল এগবে আর তুমি পা না নাড়িয়ে সেটি প্যাডেলে চেপে রাখবে তা হচ্ছে না। চাকা ঘুরবে, প্যাডেল ঘুরবে আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পা চালাতে হবে। না হলেই ঝটকা। ব্রেক কষার সময় পা দুটো ফাঁক করে সরিয়ে নিতে হবে প্যাডেল থেকে, তারপর এই সুতো ধরে টান লাগালেই
পয়সা বাঁচানোই মামার উদ্দেশ্য তাই ব্রেকের সঙ্গে লোহার লিভার না জুড়ে স্রেফ সুতো দিয়েই কাজ সেরে নিয়েছেন। হ্যাঁন্ডেলের নিচে সাইকেল ফ্রেমের কাছে সুতোর শেষ মুখে একটা আংটা পরানো আছে। সেই কলের সুতোর খালি লাটিমের গুলির ওপর দিয়ে দুটো মোড় নিয়ে সুতোটা ব্রেক-জুতোর কাছে পৌঁছেছে।
দেখতে দেখতে দমদমে এসে গেলাম। আমরা চলেছি মামার পেছনে। নয়ন ভরে দেখছি, যত দেখছি, তত মুগ্ধ হচ্ছি। আমাদের শ্রদ্ধা আর বিস্ময়ের ভাব দেখে মামাই জানিয়েছেন যে, আমরা যতটা প্রশংসা করছি, তার সবটাই তাঁর একার প্রাপ্য নয়। একশো বছর আগেই এরকম বেমানান চাকার সাইকেল তৈরি হয়েছিল। লোকে বলত পেনি-ফার্দিং। পেনি বলতে বড় চাকাটা বোঝাত আর ফার্দিং বলতে ছোটটা। পেনি-ফার্দিং না বলে আমরা টাকা-পয়সা বলতে পারি। তবে এটা ঠিক যে, ইতিহাসের অন্ধকার ঘেঁটে ঠিক সময়মতো এই রত্নটি উদ্ধার করার কৃতিত্ব ঝন্টুমামারই প্রাপ্য।
হঠাৎ দুটো কুকুর গাঁক গাঁক করে তেড়ে এল মামার সাইকেল লক্ষ্য করে। মামা!–চিৎকার করে সতর্ক করে দেবার আগেই দেখি, মামা প্যাডেলের ওপর দাঁড়িয়ে পড়েছেন।
মামা চেঁচিয়ে উঠলেন, এইবার স্পিড টেস্টা
মামার বেপরোয়া মনোভাব দেখে অবাক হইনি। সাচ্চা বৈজ্ঞানিক এমনই হয়। কিন্তু দিনরাত্তির বোয়িং ৭৪৭ দেখে অভ্যস্ত কুকুরগুলো এই নতুন ধরনের সাইকেল দেখে এত উতলা হয়ে পড়ল কেন, বোঝা গেল না।
কুকুর ছুটছে, সাইকেল ছুটছে–হঠাৎ দেখা গেল, সামনেই একটা হৃষ্টপুষ্ট মোষ রাস্তা পেরতে গিয়ে একটু উদাসীন হয়ে পড়েছে। রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়েছে। মামা ব্রেকের সুতোয় টান লাগিয়েই আর্তনাদ করে উঠলেন–ব্রেক ফেল! ধর ধর–হেল্প!
মামা এখন প্যাডেল থেকে দু-পা সরিয়ে নিয়েছেন। কুকুরদের কামড় এড়াবার জন্য পা দুটোকে উঁচু করে রাখতে হয়েছে। সাইকেল ছুটছে টলমলিয়ে। আমরা জোরসে পা চালিয়ে মামার পাশে চলে এলাম। বিল্টু ধরল মামার সাইকেলের হ্যান্ডেল, আমি ধরলাম সিট। তারপরে আমরা দুজনে ব্রেক কষতেই, তিনজনে মিলে তালগোল পাকিয়ে গড়িয়ে পড়লাম।
ঝেড়েঝুড়ে উঠে দেখলাম–ব্যাপার বেগতিক বুঝে কুকুররা ফিরে গেছে, মোষও সরে গেছে। আমাদেরও ছোটখাটো আঁচড়ের বেশি ড্যামেজ হয়নি। মামা ব্রেকের ছেঁড়া সুতোয় গিঁট বাঁধতে বাঁধতে জানালেন, গুলু ওস্তাগরের দোকানে খবরদার জামা তৈরি করতে দিবি না। ও পচা সুতোয় সেলাই করে। না হলে কখনও ছিড়ত না। ওর কাছ থেকেই নিয়েছিলাম এই সুতোটা।
বারাসাতে পৌঁছে শুধু চা খাবার সময় দিয়েছে ঝন্টুমামা। মুড়ি-নারকেল পুকুরঘাটেই হবে। বিল্টুর জ্যাঠামশাই ঠাট্টা করে বললেন, ওহে সায়েন্টিস্ট, নিদেনপক্ষে একটা পুঁটিমাছ কিন্তু ধরতেই হবে। না হলে কলকাতার বদনাম।
মামা হেসে বললেন, মাছ ধরাটা আমার কাছে অত ইমপর্ট্যান্ট নয়, বড় কথা হল ছিপ নিয়ে বসা।
সে কী!
চুপ করে বসে চিন্তা করার এমন সুযোগ। মনের একাগ্রতা আসে। দাবা খেলা ছেড়ে এবার থেকে মাঝে মাঝে ছিপ নিয়ে বসব ভাবছি। যতই হোক, দাবা একটা বিদেশি অ্যামিউজমেন্ট।
হু! সায়েন্টিস্ট মাছ ধরতে পারবে না তাই… জ্যাঠামশাইয়ের ঠোঁটের কোণের হাসি সাদা দাড়িতে ঢাকা পড়েনি।
ঝন্টুমামা গুরুজনকে সম্মান দিয়েই বললেন, আজ্ঞে, মাছ ধরাটা কিন্তু থিয়োরি অব রিলেটিভিটি আয়ত্ত করার মতো কঠিন নয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিটাই আসল কথা। এটা যার আছে, তার কাছে কোনও কাজই—
জ্যাঠামশাই হাবু-হাবু! বলে হাঁক পাড়তেই খালি গায়ে কোমরে দড়ির বেল্ট-আঁটা হাফপ্যান্ট-পরা একটা বছর দশেকের ছেলে ছুটে এল। জ্যাঠামশাই বললেন, হাবু, দাদাবাবুরা এখন মাছ ধরতে যাবে। তুই ছিপ নিয়ে যা ওদের সঙ্গে। দেখিস–দাদাবাবুদের হাতে যেন বঁড়শি দিসনি, ফুটেমুটে গেলে–।
জানা গেল, আমাদের মাছ ধরার কাজে সাহায্য করার জন্যই হাবুকে আনা হয়েছে। পুঁচকে হাবুর সামনে আমাদের এমন অপমান করা হল, অথচ ঝন্টুমামা কোনও প্রতিবাদ করলেন না। এ কীরকম বৈজ্ঞানিক নিরাসক্তি! মনে মনে রাগ হচ্ছিল। ঝন্টুমামা বোধহয় সেটা আন্দাজ করেছিলেন তাই পুকুরঘাটে পৌঁছে বললেন, আসলে এ অঞ্চলের মাছেদের খাদ্যাভ্যাস তো আমাদের জানা নেই, তাই হাবুই আমাদের গাইড করবে।
বঁড়শিতে কেঁচো গাঁথছে দেখেই আমার গা শিউরে উঠল। পেয়ারা ডালের ছিপটা ঝন্টুমামার হাতেই আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর দৃষ্টি বঁড়শিকে বর্জন করে আর সব দিকেই ঘুরছে। হাবুই টোপসুদ্ধ বঁড়শিটাকে পুকুরজলে ছুঁড়ে দিয়ে ছিপটা আবার মামার হাতে তুলে দিল। ঝন্টুমামা মৌজ করে বসে বললেন, মাছ যদি থাকে তো তার নিস্তার নেই। বুঝলি সন্তু, মনে রাখিস কিন্তু, জীবনে এই আমি প্রথম ছিপ ধরছি। দেখবি কেমন এক্সপার্টের মতো কুড়ি ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে খেঁচকা মেরে
হাই দেখ– হাবু ফাতনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করায়। কুপ কুপ করে খাবি খাচ্ছে। দাঁড়াও–দাঁড়াও, হাবু টান লাগাতে বারণ করল, কিন্তু মামা সে কথায় কান না দিয়ে কুড়ি ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে লাগিয়ে দিল সায়েন্টিফিক হ্যাঁচকা। ফাতনা ও বঁড়শি সমেত ছিপের সুতো
পুকুরপাড়ে বাঁশ গাছের গায়ে চড়ে বসল।
যাঃ–গেল তো ফসকে! হাবু ছুটে গেল বঁড়শি ছাড়াতে।
ঝন্টুমামা বেজার হয়ে বললেন, ফসকে মানে? ধরেই তো ছিলাম। টানটা জোর হয়ে গেছে বলে মাছের মুখ ছিঁড়ে বঁড়শি খুলে এল। না হলে—
পরের বার তাহলে অত জোরে টানবেন না। এখানকার স্থানীয় মাছেদের ঠোঁটের টিয়ারিং স্ট্রেংথ–।
চোপ! মামা বিল্টুকে থামিয়ে দিলেন। আমি কি ইচ্ছে করে জোরে টেনেছি! মশাটা এমন কটাস করে কামড়ে দিল মোক্ষম সময়ে! জায়গাটা যা আস্তাকুঁড় করে রেখেছে সবাই মিলে! হবে না মশা।
মামা ছিপ ফেলে উঠে পড়ছে দেখে আমরা হতাশ হয়ে পড়লাম। আমাদের মুখের অবস্থা দেখে করুণা হল মামার, হবে হবে! ঘাবড়াচ্ছিস কেন। এবার ঘরে বসে ছিপে করে মাছ ধরব, বুঝলি? হ্যাঁ
মামা বাড়ির দিকে রওনা হলেন। আমাদের দুজনের অবস্থা রামভক্ত হনুমানের মতো।
মামার কথায়-কাজে ফারাক নেই। বিকেল তিনটের মধ্যে সব আয়োজন সম্পূর্ণ। একটা মোটাসোটা ফাতনার মাথায় ছোট্ট একটা চুম্বক জুড়ে দেওয়া হয়েছে ফেভিকল দিয়ে। ফাতনাটা এখন মাথায় চুম্বক নিয়ে পুকুরজলে ভাসছে। ফাতনার ওপর দিয়ে যে লোহার রিংটা গলিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা একটা গাছের ডাল থেকে সুতো বেঁধে ঝোলানো। ফাতনার যা কিছু নাচানাচি, সবই এই লোহার রিং-এর ফোকরের মধ্যে। গাছের ডালটা পুকুরের জলের ওপর হাত বাড়িয়ে ঝুলে পড়েছিল বলে রিংটা টাঙাতে খুব সুবিধে হয়েছে। লোহার রিংটায় পাকিয়ে পাকিয়ে জড়ানো হয়েছে এনামেল-করা সরু তার। এই এনামেল করা তারের দুটো প্রান্ত গাছের ডালে ডালে চড়ে জানলা গলে বাড়ির দোতলায় এসে ঢুকেছে। ওইখানেই জড়ো হয়েছি আমরা সবাই। বিদ্যুৎপ্রবাহ মাপার মিটারের সঙ্গে ওই তার দুটো জুড়ে দিয়েছেন ঝন্টুমামা। তার-পাকানো লোহার রিং-এর মধ্যে ফাতনার চুম্বক এখন জলের ওপরকার মৃদু ঢেউয়ে অল্প অল্প নড়ছে এবং ওই সামান্য নড়াচড়াও ফ্যারাডের বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় আবেশের তত্ত্ব অনুসারে মিটারের কাঁটাকে এপাশ-ওপাশ কাঁপাচ্ছে। মাছ যখন টোপ গিলবে–ফাতনাটা ঝটাস করে নড়ে উঠবে আর মিটারের কাঁটাও যে তখন বেজায় লাফ মারবে–এ বিষয়ে এখন আমরা নিঃসন্দেহ। জ্যাঠামশাই অবধি তাজ্জব। আশপাশের সব বাড়ি থেকেও লোক জড়ো হয়েছে। ছিপের সুতোটাও দু তিনটে গাছের ডালের ওপর দিয়ে টেনে এনে দোতলার ঘরে ঢোকানো হয়েছে। যেই মিটারের কাঁটা ঝিলিক মারবে, অমনি মামা টিপবেন সুইচ-সঙ্গে সঙ্গে একটা বৈদ্যুতিক চুম্বক জ্যান্ত হয়ে উঠে হ্যাঁচকা টান লাগাবে লোহার আংটায়। এই আংটার সঙ্গেই বাঁধা আছে ছিপের সুতো। কাজেই মাছ বাবাজির ঠোঁটে বঁড়শি না গেঁথে কোনও উপায় নেই। তারপর তো স্রেফ সুতো ধরে মার টান–মাছটাকে টেনে তোলা।
হাবুকে সহজ করে বোঝাচ্ছিলেন ঝন্টুমামা, বুঝলি–একেই বলে রিমোট কন্ট্রোল। মানে, দূরে বসেই কাজ সারা। এই যে মিটারের কাঁটা দেখছিস, এটাই এখন ফাতনা হয়ে গেছে। আমাকে অবশ্য অনেক তার টানাটানি করতে হয়েছে, কিন্তু বিনা তারেও ব্যাপারটা করা যায়। বেতার ব্যবস্থার সাহায্যে–বুঝলি না? রেডিয়ো শুনিস তো, তা তোর রেডিয়োর সঙ্গে কি রেডিয়ো স্টেশন তার দিয়ে
ঝন্টুমামা কথা শেষ করার আগেই ঘরের মধ্যে শোরগোল। নড়েছে–ফাতনা নড়েছে– মানে, কাঁটা নড়েছে। মামা খপ করে বৈদ্যুতিক চুম্বকের সুইচ টিপে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে টান পড়ল ছিপের সুতোয়। আমরা সবাই ঝুঁকে পড়েছি জানলা দিয়ে। ঝন্টুমামা দু-হাতে এবার ছিপের সুতো ধরে টানছেন।
আবার চিৎকার। উঠেছে–উঠেছে–পেয়ারা গাছের ডালের নিচে বঁড়শি থেকে ঝুলছে আধহাতি একটা মাছ।
এমনি সময়ে ঘটে গেল অঘটন। আমাদের চোখের সামনে একটা পুঁচকে ছোঁড়া এক লাফ দিয়ে বঁড়শি সমেত মাছটাকে সুতো থেকে ছিঁড়ে নিয়ে জলে পড়ল। তারপর হাঁকপাক করে পাড়ে উঠেই ছুট! ব্যাপারটা আমাদের চোখের সামনে ঘটল, কিন্তু কিছুই করা গেল না, কারণ ঘটনাস্থল রিমোট। ছেলেটার এত বড় আস্পদ্দা যে, পালাবার সময় আবার আমাদের কলা দেখিয়ে গেল। শুধু তা-ই নয়। এতক্ষণে আমরা বুঝতে পেরেছি যে দুষ্কৃতকারী স্বনামধন্য হাবু। কখন যে দোতলা থেকে ভেগেছে, উত্তেজনার মধ্যে আমরা খেয়ালই করিনি।
আমরা মর্মাহত। কারও মুখে কোনও কথা নেই, হঠাৎ জ্যাঠামশাই হাততালি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, ভো কাট্টা–ভো কাট্টা-হাবুকে বাদ দিয়ে তোমরা মাছ ধরতে গিয়েছিলে তো! কেমন কলা দেখাল!
ইচ্ছে না থাকলেও আমি আর বিল্টু হেসে ফেলেই তারপরে ভয়ে ভয়ে তাকালাম ঝন্টুমামার দিকে। কিন্তু তাজ্জব কাণ্ড–ঝন্টুমামা একটুও রাগেননি। শুধু মাথা ঝাঁকাচ্ছেন আর বিড়বিড় করে বলছেন, হবে না, হবে না, হতে পারে না
কী বলছ সায়েন্টিস্ট? কী হবে না? জ্যাঠামশাই জিজ্ঞেস করলেন।
বলছি–এ দেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্ভব নয়। কী করে হবে বলুন। লোকের পেটে এত খিদে থাকলে কাজ হবে কী করে? এই যে হাবুটা–নিশ্চয় বহুদিন ওর ভাগ্যে মাছ জোটেনি, তাই না বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর সাফল্য ওকে এতটুকু নাড়া দিল না। মাছটা ছিনিয়ে নেওয়াই বড় হয়ে উঠল।
[প্রথম প্রকাশ: কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, জানুয়ারি ১৯৮২]