জে. পি. মর্গান : একজন বিশিষ্ট ধনকুবের, যিনি ছিলেন অখ্যাত ও রহস্যময়
ঘটনাটি ঘটেছিল দুপুর বারোটা এক মিনিটে। তখন লোকজনের অফিস-আদালত থেকে বাড়ি যাবার পালা। সদর রাস্তার এক প্রাসাদের বিপরীত দিকে একটা পুরানো ঘোড়ার গাড়ি এসে থামল। গাড়িটা কারো মনোযোগ আকর্ষণ করে নি। হঠাৎ একটা সবুজ রংয়ের চোখ ঝলসানো আলোর ঝিলিক চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তারপর একটা দমকা বাতাসের সাথে সাথে প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণ ঘটল। ১০০ পাউন্ডের একটি টি.এন.টি. বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতেই অভাবনীয় ব্যাপার ঘটে গেল–বিশাল বিশাল ভবনগুলির ভীত নড়ে উঠল, জানলাগুলি ভেঙে টুকরো হয়ে গেল, কোথাও দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। রাস্তার প্রায় ত্রিশ ফুট উপরে জানালার ভিতর দিয়ে মানুষের হাত, পা মাথা ও ধড় নিক্ষিপ্ত হয়ে দেয়ালের গায়ে তাকের উপর পড়তে থাকল আর রক্তাক্ত দেহের পঙ্গু মানুষগুলো কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। অ্যাম্বুলেন্সের চিৎকার আর দমকলবাহিনীর সাইরেন সব মিলিয়ে ঘটনার বিভীষিকা আরো বাড়িয়ে দিল।
যখন সব শান্ত হল, দেখা গেল, যে ঘোড়ার গাড়িতে করে বোমা আনা হয়েছে তার চাকার একটি টুকরো, কয়েকটি স্তু ও কজা এবং ঘোড়ার খুরের দুটো নাল ছাড়া আর কিছুই সেখানে অবশিষ্ট নেই। কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে এ ঘটনা ঘটে গেল সেই জে. পিয়ারপন্ট মার্গান তখন ইউরোপে। মর্গান ঠিক করলেন এ বর্বর কাপুরুষোচিত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবেনই। এজন্য পঞ্চাশ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হল। পুলিশবাহিনী, ফেডারেল এজেন্ট, সিক্রেট সার্ভিস, প্রাইভেট ডিটেকটিভ নিয়োগ করে অভিযান শুরু করা হল। সমস্ত পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল, কিন্তু সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল। তারপর বহু বছর গত হয়ে গেছে কিন্তু আজো সেই রহস্য রহস্যই রয়ে গেছে।
জে. পিয়ারপন্ট মার্গনকে বলা হত অর্থ সম্পদের জগতে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি। কিন্তু ওয়াল স্ট্রিটের ডিক্টেটর মর্গান ছিলেন একজন অখ্যাত ও রহস্যময় লোক। তিনি সবসময় প্রচার এড়িয়ে চলতেন এবং ফটোগ্রাফারদের ভয়ে আতঙ্কিত থাকতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী ব্যক্তিত্ব। তাই কখনো কখনো তাকে ‘আমেরিকার সবচেয়ে অকূটনীতিজ্ঞ’ বলা হত।
মর্গানের ওজন ছিল ২০০ পাউন্ড আর উচ্চতা ছিল ছয় ফুট। অত্যন্ত নির্ভীক ছিলেন তিনি। একদিন এক পাগল তার বাড়িতে ঢুকে তাকে পিস্তল বাগিয়ে হত্যা করতে উদ্যত হল। মর্গান ইচ্ছে করলে পালাতে পারতেন। তা না করে তিনি সরাসরি লোকটার দিকে এগোতে থাকলেন, লোকটা তার তলপেটে গুলি করল।
তিনি তবুও দমলেন না বরং সরাসরি এগিয়ে এসে লোকটার হাত থেকে পিস্তলটা কেড়ে নিয়ে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন। বলা বাহুল্য তিনি সেবার বেঁচে গিয়েছিলেন।
একজন কোটিপতি হওয়া সত্ত্বেও জে.পি. মর্গানের জীবনটা অত্যন্ত সাদাসিধে ভাবেই কেটেছে। তিনি একটি হ্যাটকোট পরে চোখে-মুখে বৃষ্টির ঝাপটা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসতেন।