চতুর্থ খণ্ড (স্নেহের দীপঙ্কর আচার্য এবং সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়)
পঞ্চম খণ্ড (বন্ধুবর স্নেহপ্রতিম শ্রী নিতীশ রায় ও বউদিকে)
4 of 6

জীবন এক সার্কাস

জীবন এক সার্কাস

হঠাৎ চোখে পড়ে গেল সাইনবোর্ড। সাবেক কালের পুরোনো একটা বাড়ির দোতলায় হেলে আছে। পাশ দিয়ে পাতা মেলেছে বটের চারা। অদ্ভুত সাইনবোর্ড:

স্বামী শিক্ষা কেন্দ্রে

বিবাহিত জীবনে

সুখী হইতে হইলে।

সাক্ষাত করুন

সময় : সূর্যোদয় হইতে মধ্যরাত

মাঝারি মাপের গলিতে নির্জন একটি দোতলা বাড়ি।

সামনে খোলা বারান্দা। কাঠের রেলিং। জায়গায়-জায়গায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। তেমন স্বাস্থ্যবান মানুষ নীচে কি হচ্ছে ঝুঁকে দেখতে চাইলে ভেঙে পড়ে যাবে। তার খাটানো রয়েছে, কাপড়-জামা শুকোতে দেওয়ার জন্যে। কাপড় কী তোয়ালের বদলে ঝুলছে খালি একটা খাঁচা। হয়তো এক সময় পাখি ছিল। সদর দরজা বেশ বড় মাপের। মজবুত দরজা। দীর্ঘকাল রং পড়েনি। কটা চেহারা। এক সময় খুব কায়দার বাড়ি ছিল। যত্ন আর পরিচর্যার অভাবে প্রাচীন।

বিবাহিত জীবনে কে না সুখী হতে চায়! আমিও চাই। চাইলেই কী আর সুখী হওয়া যায়! কুঁজোর চিৎ হয়ে শোওয়ার বাসনার মতো দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার ইচ্ছে। স্ত্রী আর পায়ের কড়া একই অভিজ্ঞতা। ভালো তো ভালো। মনের সুখে হাঁটা চলা। আউড়ে উঠল তো লেংচে বেড়াও। ঘসা মাজা ছাড়া কোনও দাওয়াই নেই। ঝামা দিয়ে ঘষে দাও দিন কতক, বাগে এল। আবার তেড়ে উঠল। বিবাহিত জীবনের ধরনধারণ আহার জানা হয়ে গেছে। অনেকটা ষড় ঋতুর মতো। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, বসন্ত। যখন যেমন তখন তেমন। সহ্য করার নামই বিবাহ। যখন যে মূর্তিতে আবির্ভাব, সেইভাবেই আরাধনা স্ত্রী যেন দশমহাবিদ্যা কালা ছিন্নমস্তা ধুমাবতী বগলা। কখনও শ্বেত, কখনও পীত, কখনও শূন্যাকারা হে!

বাড়িটাকে বড় ভালো লেগে গেল। যেন ইতিহাস। যেন কত কথা বলার জন্যে মুখিয়ে আছে। কড়া নাড়লুম বারকতক। ভেতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এল।

খোলাই আছে। দয়া করে ঠেলুন।

ঠেলতেই দরজা খুলে গেল। বাইরে থেকে বোঝা যায় না। ভেতরে একটা বাগান আছে। আহা মরি কিছু নয়। তবে বাগান। কিছু ফুলও ফুটে আছে। নাম বলতে পারব না। ফুলের জ্ঞান আমার খুবই কম।

ডান পাশেই একট ঘর। এক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন। বেঁটে-খাটো, কুস্তিগিরের মতো চেহারা। চলার ধরন লাফিয়ে-লাফিয়ে যেন স্প্রিঙের মানুষ। ফরসা টুকটুকে গায়ের রং। মুখটি ভারী মিষ্টি। অথচ গলার স্বর বেশ গমগমে যেন মেঘ ডাকছে।

”কী চাই?”

”আজ্ঞে দাম্পত্য জীবনে…।”

”সুখ?”

”হবে না।”

”কোন সময়ে এলে হবে?”

”কোনও সময়েই নয়।”

”সে কী বাইরের সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে…।”

”ভুল কিছু লেখা নেই। আপনি সুখী হবেন না।”

”কেন?”

”আপনি কিঞ্চিৎ খেয়ালি ধরনের মানুষ। এই যে ভেতরে এলেন সদর দরজাটা খোলাই রয়ে গেল। কোথাও ঢোকার নিয়ম কী? দরজা ঠেলে ঢুকবেন এবং ঢোকার পর সে দরজা বন্ধ করবেন। আপনি তা করেননি। তার মানে আপনি আপনার স্ত্রীর অন্তরে প্রবেশ করেছেন, কিন্তু যে পথে প্রবেশ করেছেন সে পথ খোলা রেখেছেন। বেড়াল ঢুকবে, এখন এই খোলা পথে কুকুর ঢুকবে, গরু ঢুকবে, আপনার সাজানো বাগান তছনছ করে দেবে।”

”আমি খেয়াল করিনি। যাচ্ছি, সদরটা দিয়ে আসছি।”

”আপনি ভেতরে বসুন। আমি দিয়ে আসছি।”

বেশ মজার ঘর। মেঝেতে ফরাস পাতা। গোটা তুই তাকিয়া। বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। গোট চারেক অ্যাশট্রে আর কোথাও কিছু নেই। এক দিকের দেওয়ালে চোখের ডাক্তারের চেম্বারে যে ধরনের গোল নকশা, অ-আ ক-খ, এ বি সি ডি ঝোলে সেই রকম ঝুলছে। ভদ্রলোক কি চোখের ডাক্তার? সন্দেহ হল।

”একী, দাঁড়িয়ে কেন? বসুন-বসুন। আপনার নাম?”

”আমার নাম সুতপন।”

”আমার নাম জানেন?”

”আজ্ঞে না।”

‘আমার নাম গদাধর রায়। সংক্ষেপে জি ডি আর।” ভদ্রলোক তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসলেন। যেন ওস্তাদের গান শুনতে বসেছেন। চওড়া ফুলপাড় ধুতির কোঁচা সামনে ছড়ানো। গায়ে ফিনফিনে গিলে হাতা পাঞ্জাবি! এতক্ষণ পরে আমি ”নমস্কার” বলে হাতজোড় করলুম। ভদ্রলোক হেসে বললেন, ”ভুলে গিয়েছিলেন!”

অপ্রস্তুত হয়ে বললুম, ”সুযোগ পাইনি।”

”তাই কী? না ভদ্রলোক ভাবছিলেন সমস্যা কী না!”

”ঠিক তা নয়।”

”হ্যাঁ তাই। আপনি একটু অবিশ্বাসী ধরনের। আর অবিশ্বাসী ‘মানুষেরা’ দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারে না।”

ভদ্রলোকের কথায় আমার ভুরুর কাছটা কুঁচকে গেল। এত সমালোচনা সহ্য করা যায় না। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ভদ্রলোক বললেন,

”অল্পেই অসন্তুষ্ট হওয়া আপনার স্বভাব। তাই না?”

”তা বলতে পারি না। মনের মতো না হলে আমি বিরক্ত হই। মনের মতো রান্না, মনের মতো বিছানা, মনের মতো আবহাওয়া, মনের মতো মানুষ।”

”মনের মতো কথা।”

”মনের মতো রোজগার।”

”মনের মতো বাড়ি!”

”মনের মতো সাজ-পোশাক।”

”মনের মতো শরীর।”

”মনের মতো ব্যবহার।”

”মনের মতো মানসম্মান।”

”মনের মতো শহর।”

”মনের মতো শাসন ব্যবস্থা।”

”মনের মতো চেহারা।”

”মনের মতো মাথার চুল।”

দুজনেই কোরাসে বলে উঠলুম ‘মনের মতো, মনের মতো’। ভদ্রলোক বললেন, ‘আপনার মনের মতো, তাই না’ সুতপন বাবু? আপনি নিজে কতটা কার মনের মতো একবার ভেবে দেখেছেন?’

”আজ্ঞে না।”

”তার মানে নিজেকে নিয়েই মশগুল হয়ে আছেন। আপন নাভির গন্ধে মৃগ পাগল।”

”সংসারের কথাও ভাবি। স্ত্রী, পুত্র, পরিবারের কথা।”

”আপনি তাই মনে করেন, কিন্তু! হ্যাঁ, একটা প্রশ্ন করি, কী করেন আপনি?”

”চাকরি।”

”তার মানে সকালে বেরনো রাতে ফেরা?”

”হ্যাঁ।”

”তার মানে আপনার দিন খুবই ছোট। বারো চোদ্দো ঘণ্টা বাইরে। আট ঘণ্টা ঘুম। পরিবার পরিজনের জন্যে রইল মানে দুই কী তিন ঘণ্টা।”

”হিসেবে তাই দাঁড়াচ্ছে।”

”অর্থ চিন্তা আছে?”

”খুব আছে। এদিক টানলে ওদিক খালি যায়। ওদিক টানলে এদিক।”

”রোজগার আর একটু বাড়লে ভালো হয়, তাই না?”

”একটু কেন? তিন-চার গুণ বাড়লে তবে যদি নিশ্চিন্তে রাতে একটু চোখ বুজনো যায়।”

”বাড়বে কীভাবে? চাকরির উন্নতি? তাই না?”

”হ্যাঁ প্রাোমোশান। তা না হলে আমাদের রোজগার আর বাড়বে কী করে! ব্যবসাদার হলে, যা হয়, হিঁয়া কা মাল হুঁয়া করে হয়ে যেত।”

”তার মানে, পরিবার-পদরিজনের ভজনা নয়, ঈশ্বরের ভজনা নয়, চাকরির ভজনই চলছে। চলছে চলবে যদ্দিন না রিটায়ার করছেন। কিছু না দিলে কি কিছু পাওয়া যায় মশাই? দাম্পত্য জীবনে সুখী হবেন কীভাবে। গাছ পুঁতলে তবেই না ফল! সুখের চারা পুঁততে হবে, সার দিয়ে, জল দিয়ে, বেড়া দিয়ে ঘিরে বড় করতে হবে। এ যুগের কজন তা করে মশাই!”

”আপনার এই পাঠশালা তাহলে খুলেছেন কেন? অকারণে সময়ের অপব্যয়।”

”আপনারা আসবেন বলে।”

”এসে কি ঘোড়ার ডিম হবে!”

”কিছুই হবে না, তবে একটা কাজ হবে, আয়নায় মুখ দেখা।”

”সে তো রোজ দেখি দাড়ি কামাবার সময়।”

”সে তো আসল মুখ নয়, মুখোশ। শুনুন, ভেতরটা ঠিক-ঠিক দেখতে পেলেই সুখী হবেন। সেই চেষ্টাই করুন।”

”আপনার সম্পর্কে আমার জানার কৌতূহল হচ্ছে। কে আপনি? কে আপনি? কেন আপনার কাছে সবাই আসবে।”

”আসবে সাইনবোর্ডের জন্যে। একটা জিনিস দেখেছেন নিশ্চয়, পয়সার শব্দে সবাই ফিরে চায়। এই যে বললে সবাই ঘাড় ঘোরায়। সুখের আশা সবাই করে। সেই আশাতেই মানুষ আসবে।”

”আপনি কে?”

”আপনার মতোই একজন মানুষ, তবে একটু রকমভেদ আছে, আপনি বিবাহিত, আমি অবিবাহিত।”

”কী করে বুঝলেন আমি বিবাহিত।”

”তাহলে এলেন কেন?”

”অদ্ভুত সাইনবোর্ড আর বাড়িটা দেখে।”

”তা ভালোই করেছেন। তবে দাম্পত্য জীবন মানে। স্বামী-স্ত্রীর জীবন নয়। দুজন মানুষের সম্পর্কও দাম্পত্য জীবনের মধ্যে পড়ে। সেখানে শুধু আমি সেখানে ঝামেলা।”

জি. ডি. আর হাসলেন, ”সবাই চলে গেলেন। নতুন কেউ আর থাকতে আসেননি।”

বাঁ-দিকে বারান্দা। ডানপাশে সার-সার ঘর। প্রথম ঘরটাতেই জি, ডি, আর ঢুকলেন। বড় মাপের হলঘর। সুন্দর সাজানো। দেখলেই মনে হবে আসর চলছিল। এইমাত্র শেষ হল। শ্রোতারা এইমাত্র উঠে চলে গেছেন। চার দেওয়ালে পূর্বপুরুষদের ছবি ঝুলছে।

একটি ছবির সামনে দাঁড়িয়ে জি, ডি, আর বললেন, ”কম। আমি আর তুমি হলেই যত গণ্ডগোল।”

”তা ঠিক। দুটো মানুষ এক ঠাঁই হলেই লাঠালাঠি।”

”আর সেই কারণেই আমি দর্শক। দেখে দেখেই জীবনের ষাটটা বছর কাটিয়ে দিলুম। আর দশটা বছর, বাস, মার দিয়া কেল্লা।”

”ঠিক বুঝলুম না।”

”আরে মশাই, আর দশটা বছর বাঁচব।”

”সে তো বুঝলুম। দর্শক মানে!”

”খেলার মাঠে গেছেন কোনওদিন?”

”ছাত্রজীবনে গেছি।”

”গ্যালারিতে যারা বসে তারা মাঠে যারা খেলছে তাদের চেয়ে অনেক বেশি খেলা জানে। তাদের মন্তব্য শুনলেই বোঝা যায়। তার অর্থ কী? খেলার মধ্যে থাকলে খেলা বোঝা যায় না। ভুলভ্রান্তি ধরা যায় না। দূরের চোখেই ধরা পড়ে। আচ্ছা, আমার সঙ্গে আসুন।”

”কোথায়?”

”আসুন না। বলছিলেন বাড়ির আকর্ষণে এসেছিলেন। চলুন দোতলায়।”

দোতলায় ঢাকা বারান্দা। রঙিন কাঁচ বসানো ওই ধরনের রঙ-বেরঙের কাচ আর পাওয়া যায় না।, বহুকাল আগে ইংরেজ আমলে পাওয়া যেত। চওড়া বারান্দা মোজাইক করা। এখনও ঝকঝক করছে।

”এ বাড়িতে আর কেউ থাকেন না?”

এই আমার পিতামহ। সেকালের বিখ্যাত মানুষ। এর নামে কলকাতার একটা রাস্তা। আমার পিতামহী ছিলেন উন্মাদিনী। সারাদিন চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হত। ছাদের ঘরে। রাতে পিতামহ এসে চেন খুলে দিতেন। মুক্ত পিতামহী প্রথমে খুব খানিকটা ভাঙচুর করতেন। পিতামহ হো হো করে হাসতেন। পিতামহী তারপর পিতামহের গলা টিপে ধরার জন্যে সারা বাড়িতে ছুটে বেড়াতেন। শুরু হত চোর-চোর খেলা। পিতামহের কাছে সেও ছিল মহানন্দের! তারপর এক সময় ধরে ফেলতেন। ধরেই বেধড়ক ঠ্যাঙাতেন। বাকি রাত ঘরের মেঝেতে পড়ে হাউ-হাউ করে কাঁদতেন। আমরা জানলা দিয়ে দেখতুম। দু’হাত মাটিতে। মাথা ঝুলছে সামনের দিকে। দু’পাশ দিয়ে চুল ঝুলছে। পিতামহী কাঁদছেন। আর পিতামহ বারান্দায় চেয়ারে আরামে বসে পোর্ট খাচ্ছেন চুমুকে-চুমুকে। এই হল এ বাড়ির দম্পতি নম্বর একের ইতিহাস।”

দ্বিতীয় আর একটি ছবির সামনে দাঁড়ালেন। ”আমার পিতা। বড় বদরাগি মানুষ ছিলেন। চেহারা দেখেই বুঝতে পারছেন। একটি মাত্রই কথা তাঁর মুখে নিয়ত শুনে এসেছি, কেন, কী হয়েছে? সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না। কোনও বাধা মানতেন না। পাহাড়ি নদীর মতো। বাধা পেলেই প্রবল। পাশেই আমার মায়ের ছবি। ছবি হয়েই কাছাকাছি আসতে পেরেছেন, নয় তো দুজনের ব্যবধান ছিল উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরুর। শেষের দিকে দুজনের বাক্যালাপ প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। কোনওক্রমে আমিই হতে পেরেছিলুম তাঁদের একমাত্র সন্তান।”

”কিছু মনে করবেন না, আপনার জীবিকা?”

”ঈশ্বরের কৃপায় আমার অর্থের অভাব নেই। পূর্বপুরুষ অঢেল টাকা রেখে গেছেন। একমাত্র ছেলে, ফলে বিষয়-সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে অশান্তি হয়নি। কোর্ট-কাছারি করতে হয়নি।”

”হঠাৎ ওই সাইনবোর্ডটা বাইরে ঝোলালেন কেন? আপনার তো কিছুই করার নেই।”

”খুব আছে। সাইনবোর্ড দেখে আপনার মতো অনেকেই ঢুকে পড়েন। আর সঙ্গে সঙ্গে আমি তাঁদের মগজ ধোলাই করেছি, যাঁরা বিবাহিত, তাঁদের আমি স্পষ্ট বলেছি—ঝগড়াকুটে বউয়ের সঙ্গে এক ছাদের তলে বাস করার চেয়ে ফুটপাথে রাত্রিবাস ঢের ভালো। আরও বলি দাঁতের যন্ত্রণার একমাত্র দাওয়াই দাঁতটিকে সমূলে তুলে ফেলা। আর আপনার মতো যাঁরা অবিবাহিত তাঁদের বলি, দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার একমাত্র পথ—বিবাহ না করা।”

”এ তো আপনার অস্বাভাবিক চিন্তা।”

”অবশ্যই অস্বাভাবিক। পৃথিবীতে সুখ বস্তুটাই তো অস্বাভাবিক। সন্তান প্রসবের বেদনাটাই তো স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হল কাঁচি কাটা করে বের করা। আমাকে সবাই পাগল বলে, কেন জানেন, আমি পৃথিবীটাকে উলটে দেখি। পৃথিবী তো পালটাবে না, আমি নিজেই উলটে যাই।”

মেঝেতে দু’হাত পেতে ভদ্রলোক টুক করে শীর্ষাসন করে ফেললেন। তারপর সেই অবস্থায় দুহাতে হাঁটতে লাগলেন সারা ঘরময়।

আমি আর এক মুহূর্তও নয়। ঊর্ধশ্বাসে রাস্তায়! পাশেই পান-বিড়ির দোকান। ভদ্রলোক জিগ্যেস করলেন, ‘কী হল মশাই?”

হাঁপাতে-হাঁপাতে বললুম, ”সাংঘাতিক।”

ভদ্রলোক বললেন, ”জি ডি আরের নাম শোনেননি? বিখ্যাত দল ছিল সার্কাসের। দলের একটি মেয়েকে ভালোবেসেছিলেন। ট্র্যাপিজের খেলা দেখাত। ট্র্যাপিজের খেলা দেখাত আর একটি ছেলে। সেও মেয়েটিকে ভালোবাসত পাগলের মতো। একদিন রাতে ছেলেটি ট্র্যাপিজের দড়ি ছুরি দিয়ে আধকাটা করে রাখল, যাতে ভার পড়লেই ছিঁড়ে যায়। সে রাতে বিরাট শো। গ্র্যান্ড নাইট। গভর্নর দেখতে এসেছেন। আরও বড় বড় লোক। মেয়েটি একটার থেকে উড়ে আসছে পরির মতো। ছেলেটি সময়মতো এগিয়ে দেবে আর একটি দড়ি। দিলও তাই। উড়ন্ত দেহের ভার পড়ামাত্রই ট্র্যাপিজ ছিঁড়ে মেয়েটি পড়ল গিয়ে গ্যালারির ওপরে। ঘাড় ভেঙে সঙ্গে-সঙ্গে মৃত্যু। জি ডি আর সেই থেকে পাগল। কখনও স্বাভাবিক, কখনও অস্বাভাবিক।”

”নিন ঠান্ডা জল খান—”

হাত বাড়িয়ে কোল্ড ড্রিংকসের বোতল নিলুম। টুকটুকে লাল জল। কানের কাছে সার্কাসের ব্যান্ড বাজছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *