জীবনের রংমশাল – দীপান্বিতা রায়

জীবনের রংমশাল – দীপান্বিতা রায়

শাড়িটা পরা হয়ে গেছে ৷ বেড়ার গায়ে ঝোলানো ফাটা আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে দ্রুতহাতে বিনুনি বাঁধছিল পারুল ৷ আয়নার সামনে দাঁড়ানোটা অবশ্য খানিকটা অভ্যাসের মতো ৷ কাচের পিছনে জায়গায় জায়গায় পারা উঠে গেছে ৷ তাই মুখটা দেখায় ঝাপসা, যেন জলে ভিজে ধেবড়ে যাওয়া ছবি ৷ তবে পারুলের যে তাতে খুব কিছু আসে-যায় তা নয় ৷ সিঁথিটা ঠিক রেখে চুলগুলো শুধু টান করে বেঁধে রাখা বই তো নয় ৷ মুখের ওপর চুল এসে পড়লে স্কুলের দিদিরা বকেন ৷ ওইটুকু আয়না ছাড়াই করে নেওয়া যায় ৷ আয়নাটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় বরং ওর দিদি বকুলের একটু দুঃখ আছে ৷ আরশির সামনে দাঁড়িয়ে নিজের একঢাল কালো চুল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে বকুল ভালোবাসে ৷

 চুল বাঁধতে বাঁধতেই এসব এতাল- বেতাল কথা মনে হচ্ছিল পারুলের ৷ যদিও এসব কথা ভাবার আজকে সময় নয় ৷ বুকের ভিতরটা গুড়গুড়িয়ে উঠছে মাঝেমাঝেই ৷ এমন সময় বাইরে থেকে মঞ্জুর গলা শোনা গেল, পারুল হল তোর৷ তাড়াতাড়ি কর ৷

 বিনুনির নীচে গার্টারটা টাইট করে লাগাতে লাগাতে বেরিয়ে আসে পারুল ৷ দরজার চৌকাঠ পেরোলে মাটির দাওয়া ৷ তার ওপর খড়ের চাল ৷ গত দুবছর ছাওয়া হয়নি ৷ খড় আলগা হয়ে এসেছে ৷ দাওয়ার এখানে-ওখানে খড়ের কুটি পড়ে আছে ৷ অন্যদিন বকুল সকালবেলা একপ্রস্থ ঝাঁট দিয়ে দেয় ৷ আজ বোধহয় কোনও কারণে পেরে ওঠেনি ৷ দাওয়ার ওপাশে রান্নাঘর ৷ প্লাস্টিকের চটিটা পায়ে গলাতে গলাতে পারুল গলা তোলে, মা আসছি ৷

 দাঁড়া, দাঁড়া, দুদণ্ড দাঁড়া, মা ৷ বলতে বলতে রান্নাঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এসেছে কাকিমা ৷ পিছনে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে মা ৷

 কাকিমার হাতে একটা ছোট বাটি ৷ বাটিতে আঙুল ডুবিয়ে পারুলের কপালে দই-হলুদের ফোঁটা দেয় কাকিমা ৷ পারুল জানে, কাল সন্ধেবেলা কাকিমা চেয়ে-চিন্তে ওই আধবাটি দুধ জোগাড় করে এনেছে ৷ তেঁতুলগুলে তাতেই দই পাতা হয়েছে ৷ সকালে এই ফোঁটাটুকু দেওয়ার জন্য এত আয়োজন ৷ ফোঁটা নিয়ে কাকিমাকে প্রণাম করে পারুল, মাকেও ৷ শীর্ণ হাতটা মাথায় রেখে মা অস্ফুটে কী যেন বলে ৷ কাকিমার গেলায় দুগগা দুগগা শুনতে শুনতে দাওয়া থেকে নেমে পড়ে পারুল ৷ মঞ্জু অপেক্ষা করছিল ৷ দুজনে মিলে জোরপায়ে স্কুলের দিকে দৌড় ৷ আজ রেজাল্ট বেরোবে মাধ্যমিকের ৷

 রাস্তা অনেকটা ৷ পিচ বাঁধানো নয় ৷ শীত-গরমে সমস্যা নেই ৷ বর্ষায় কষ্ট হয় ৷ তবে বৃষ্টি শুরু হয়নি এখনও ৷ শুকনো রাস্তায় যতটা সম্ভব পা চালিয়ে হাঁটছিল দুজনে ৷ বেশ কিছুটা দূরে আরও চার-পাঁচজন মেয়ের একটা দল যাচ্ছে ৷ তাদের ধরে ফেলতে পারলে ভালো হয় ৷ কিন্তু তার আগেই জোড়ের কালভার্টের পাশে দেখা গেল মূর্তিমান দাঁড়িয়ে আছে বাইক নিয়ে ৷

 ওই দ্যাখ, আবার এসেছে ৷ ফিস ফিস করে বলে মঞ্জু ৷

 তাকাস না ৷ পাশ কাটিয়ে চলে যাব ৷ কথা বলতে বলতে আঁচলটা কোমরে গুঁজে নেয় পারুল ৷

 এই এক উৎপাত চলছে বেশ কিছুদিন ৷ গোবর্ধন মণ্ডলের ছেলে পরেশ ৷ দ্যাখ না দ্যাখ পারুলের পিছনে লেগে রয়েছে ৷ যখন-তখন পারুলদের বাড়ির সামনে দিয়ে চক্কর ৷ স্কুল যাওয়া-আসার পথে তো রোজ দাঁড়িয়ে থাকা বাঁধা ৷ গোবর্ধন মণ্ডল এলাকার নাম-ডাকওলা বড়লোক ৷ বিঘের পর বিঘে ধানিজমি ৷ চালকল, লরির ব্যবসা ৷ কী নেই! এককথায় টাকার কুমির ৷ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বিশাল বাড়ি ৷ আগে পার্টির লোকেদের সঙ্গেও ভালো ওঠা-বসা ছিল ৷ পালাবদলের পর সেটা কমেছে ৷ কিন্তু ক্ষমতা কমেনি বিশেষ ৷ পয়সার জোর থাকলে ক্ষমতা তো থাকবেই ৷ লোকে বলে এলাকার কুখ্যাত গুন্ডা পোটকাও নাকি গোবর্ধনের বশ ৷ গোবর্ধন তাকে নিয়মিত মাসোহারা দেয় ৷ সেজন্যই এলাকার কোনও পাঁচুর সাহস নেই মণ্ডলবাবুর মুখের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার ৷

 এহেন গোবর্ধন মণ্ডলের একমাত্র ছেলে পরেশ ৷ অনেক ঠাকুরের দোরধরা, শিবরাত্তিরের সলতে ৷ ছেলে চাইলে গোবর্ধন বোধহয় আকাশের চাঁদটাও পেড়ে এনে দিতে পারে ৷ এমন ছেলের হঠাৎ দিনমজুরি খেটে খাওয়া হারাধন গড়ুইয়ের মেয়ে পারুলকে কেন পছন্দ হল ভগবানই জানে ৷ পারুলকে অবশ্য দেখতে মন্দ নয় ৷ মাজা রং ৷ ছিপছিপে গড়ন ৷ মুখখানাও দিব্যি মিষ্টি ৷ কিন্তু তাদের চালের ফুটো দিয়ে বর্ষার জল পড়ে ৷ বাবা-কাকার কাজ না থাকলে অনেকসময়ই একবেলা উপোস দিতে হয় ৷ আসলে ওই যে সেই কথায় বলে না, যার সঙ্গে যার মজে মন, ব্যাপারটা বোধহয় অনেকটা সেরকমই ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে মন মজার ব্যাপারটা পুরোপুরি একপক্ষীয় ৷ পারুলের মন মজেনি ৷ সত্যিকথা বলতে পরেশ যে তারজন্যই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে সেটা পারুল প্রথমটায় ভাবেওনি, বুঝতেও পারেনি ৷ পরে বুঝতে পেরে ভয়ে সিঁটিয়ে যায় ৷ তারপর যতদিন গেছে অবস্থাটা ক্রমশ বিরক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ৷ এদিকে পারুলের যে তাকে পছন্দ না-ও হতে পারে সেটা সম্ভবত পরেশের কল্পনার অতীত ৷ তাই সেও পিছনে লেগে আছে ৷

 আজ অবশ্য পরেশকে নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো মনের অবস্থা ছিল না পারুলের ৷ কোনওরকমে পাশ কাটিয়ে দ্রুত এগিয়ে যায় দুজনে ৷ পিছন থেকে রোজকার মতোই অশ্লীল টিপ্পনি উড়ে আসে ৷ কান না দিয়ে জোরে পা চালায় ৷ আরও খানিকটা এগিয়ে বাঁক নিতেই স্কুলবাড়ির নিচু পাঁচিল ৷ ধারে একটা মস্ত পেয়ারা গাছ ৷ জালি এসেছে অনেক ৷ হজমিওয়ালা তেকোণা বাঁশের খাঁচাটা নামিয়ে জিনিসপত্র গোছাচ্ছে ৷ পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢোকে পারুল আর মঞ্জু ৷ সোজা বড়দির ঘরে ৷ সেখানে ততক্ষণে জড়ো হয়েছে তাদের ক্লাসের আরও অনেকে ৷ বড় টেবিলটার সামনে দাঁড়িয়ে বড়দি আর অঙ্কের সবিতাদি কাগজপত্র গোছাচ্ছিলেন ৷ পারুল আর মঞ্জু ঘরে ঢুকতেই বড়দি মুখ তুলে তাকিয়ে হেসে বললেন, এই তো, এসে গেছে ৷ এবার তাহলে খবরটা দিয়ে দেওয়া যাক ৷ হেসে ঘাড় নাড়লেন সবিতাদিও ৷

 শোনো মেয়েরা, আমাদের সরলাবালা হাইস্কুলের মাধ্যমিকের রেজাল্ট এবার খুব ভালো হয়েছে ৷ তোমরা বাহান্ন জন পরীক্ষা দিয়েছিলে ৷ সবাই পাশ করেছ ৷ মেয়েদের গলা থেকে একটা সমবেত উল্লাস ধ্বনি বেরিয়ে আসে ৷ সেটাকে থামতে সময় দিয়ে ফের বড়দি বলেন, ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছে দশ জন ৷ আর সবচেয়ে আনন্দের কথা হল এবছর আমাদের এক ছাত্রী চারটে বিষয়ে লেটার নিয়ে স্টার পেয়েছে ৷ সে কে জানো তোমরা? পারুলবালা গড়ুই ৷ আমাদের পারুল ৷

 কাঁচা মাটির রাস্তাটা ধরে ছুটতে ছুটতে আসছে পারুল ৷ পায়ের প্লাস্টিকের চটিটা কখন ছিটকে গেছে, খেয়াল নেই ৷ কাঁটায় দু-চারবার শাড়ি আটকেছে, ভ্রুক্ষেপ করেনি ৷ তাদের মাটির বাড়িটা দেখা যাচ্ছে ৷ চালের খুঁটিটা ধরে মা দাঁড়িয়ে আছে ৷ হাতের ঝাঁটাটা ছুড়ে ফেলে এগিয়ে আসছে কাকিমা ৷ বোনের দিকে ছুটে আসছে বকুল, মা মা আমি স্টার পেয়েছি ৷ চারটে লেটার ৷ স্কুলে ফার্স্ট হয়েছি মা… আমি ফার্স্ট হয়েছি…

– – –

গল্পটা তো এরকম হতেই পারত ৷ হলে হয়তো আমরা অনেকেই খুশিও হতাম ৷ কিন্তু মেয়েটার নাম যে পারুলবালা গড়ুই ৷ পরিচয়, জনমজুর খাটা হারাধন গড়ুইয়ের মেয়ে ৷ তার জীবনটা এরকম সরলপথে এগোনো যে বড় কঠিন ৷ তাই কল্পনার পারা উঠে যাওয়া ঝাপসা আয়না থেকে এবার চলুন দৃষ্টি ফেরানো যাক চোখধাঁধানো বাস্তবে ৷

 মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে ৷ কাকিমার বাপের বাড়ি উরালি গ্রামে ৷ পারুলদের মাচানতলা থেকে বাসে যেতে সময় লাগে আধঘণ্টা ৷ তবে বাস তো সেই হাইরোডে ৷ বাড়ি থেকে হেঁটে বাসরাস্তা পৌঁছতে প্রায় চল্লিশ মিনিট ৷ ভ্যানরিকশা চলে ৷ কিন্তু তাতে তো আবার পাঁচটা করে টাকা নেবে ৷ আবার বাসভাড়াও দিতে হবে চারটে টাকা ৷ পারুল, তার মা আর কাকিমা তাই হেঁটেই বাসরাস্তা চলে গেছিল ৷ বকুল যায়নি ৷ বাবা-কাকার ভাত-জল করতে হবে ৷ কাকার ছেলে-মেয়ে দুটো ছোট ৷ ওদেরকেও সঙ্গে নেয়নি কাকিমা ৷ নিলেই ভ্যানে চাপতে হবে ৷ অতখানি পথ হাঁটতে পারবে না ৷ তার থেকে বকুলের কাছে একটা রাত দিব্যি থাকবে ৷ বাপের বাড়ি যাওয়াটা জরুরি ৷ একে তো বুড়ি মায়ের সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি ৷ তার ওপর একটা জমি বিক্রির কথা হচ্ছে ৷ ডাক-খোঁজ না করলেই ভাইরা বোনেরা ভাগটুকু মেরে দেওয়ার ধান্দা করবে ৷ কিন্তু এসব কাজে একলা গেলে ঠিক জোর পাওয়া যায় না ৷ তাই পারুল আর তার মাকে সঙ্গে নেওয়া ৷ বরকে বলে লাভ নেই ৷ একে তো সে অনেকদিন বাদে খানতিনেক ঘর ছাওয়ার কাজ পেয়েছে ৷ ঠিকঠাক করলে দুটো পয়সা ঘরে আসবে ৷ তার ওপর সে একটা মেনিমুখো গাঁজাখোর ৷ শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কোথায় গাঁজা খেয়ে উল্টে পড়ে থাকবে ৷ তখন তার খোঁজ নেওয়াটাই একটা মস্ত কাজ হয়ে দাঁড়াবে ৷ তার চেয়ে বড় জা সঙ্গে থাকা ভালো ৷ রোগা- সোগা ছোটখাটো মানুষটি হলে কী হবে, বুদ্ধি ধরে খুব ৷ মাথাটিও ঠান্ডা ৷ আর পারুলকে তো নিতেই হবে ৷ সে তো তাদের বাড়ির সব থেকে বড় বল-ভরসা ৷ লেখাপড়া-জানা মেয়ে ৷

 কাজ-টাজ মিটল ভালোভাবেই ৷ পরদিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে উরালি থেকে বেরোল তিনজনে ৷ মাচানতলা মোড়ে যখন বাস পৌঁছল, বেলা তখন প্রায় চারটে ৷ বাসরাস্তার পাশেই মস্ত হাট বসেছে ৷ বকুলের চুলের ফিতে আর ছোট বোনের লাল রিবন কিনতে কাকিমা দাঁড়াল মনিহারি জিনিস বিক্রির চালাটার সামনে ৷ মা এদিকে পদির ঠাকুমার সঙ্গে কথা বলছে ৷ একটু বিরক্ত লাগছিল পারুলের ৷ তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছতে হবে ৷ প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের নার্স দিদির মেয়েটাকে সপ্তাহে ছ’দিন তাকে পড়াতে যেতে হয় ৷ ক্লাস ওয়ানে পড়ে মেয়েটা ৷ কিন্তু ভয়ানক বিচ্ছু ৷ এক জায়গায় বসিয়ে রাখাই কঠিন ৷ একদিন পারুল না গেলেই মুখ ভার হয় দিদিমণির ৷ মাস গেলে দুশোটা টাকা দেয় ৷ না গিয়ে কী করে পারুল! টাকা ক’টা যে তার বড্ড দরকার ৷

 ওই ক’টা টাকা ছিল বলে তো পরীক্ষার সময় অন্তত খাতা-টাতা কিনতে পেরেছে ৷ বইয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেছিল ৷ কিন্তু উত্তর লেখা প্র্যাকটিস করতে হলে তো খাতা লাগবে ৷ পারুল পাবে কোথায়? তাও তো মঞ্জু ছিল তাই ৷ ওর বাবার পোস্টাপিসে চাকরি ৷ পুরোনো কাগজ এনে দিত আপিস থেকে ৷ হলদে হয়ে যাওয়া কাগজ ৷ তাতে কী? মঞ্জু আর পারুল তাতেও অঙ্ক কষত ৷ পারুলের বাড়িতে তো আর কারেন্ট নেই ৷ সুয্যি ডুবল তো বই-খাতার পাট চুকল ৷ কেরোসিন থাকলে হ্যারিকেন জ্বালানো যায় ৷ কিন্তু গত দু-বছর বাবা-কাকা কেউই তেমন জন খাটার কাজ পায়নি ৷ ভাত জোটানো যেখানে কঠিন, সেখানে কেরোসিন কে কিনবে? মঞ্জুর বাড়িতেই রাত পর্যন্ত পড়ত পারুল ৷ পড়া শেষ হলে ওর বাবা টর্চ নিয়ে পৌঁছে দিয়ে যেত ৷

 এসব কথা বাবা-কাকা জানে কিনা সন্দেহ আছে পারুলের ৷ কাকা তো সন্ধেরাত্তির থেকেই গাঁজার আড্ডায় ৷ বাড়ি যখন ফেরে আগু-পিছু জ্ঞান নেই ৷ বাবার ওসব দোষ নেই ৷ সংসারের জন্য ভূতের খাটনি খাটে ৷ তারপর সন্ধে না লাগতে যা হোক কিছু পেটে দিয়ে মোষের ঘুম ৷ পারুল যে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল, সেটা বাবা জানে কিনা সন্দেহ ৷ ভরসা শুধু মা আর ওই কাকিমাটি ৷ পাখির ছানার মতো আগলায় পারুলকে ৷ কাকিমার পোষা মুরগি আছে গোটা কয়েক ৷ তাদের একটা ডিমও নিজের ছেলেকে পর্যন্ত দেয় না কাকিমা ৷ পারুল খাবে ৷ পড়াশোনা করছে না! ভালো খেতে হবে ওকে ৷ বড় ভরসা তার ওপর কাকিমার ৷ মনে মনে ভাবে পারুল ৷ পরীক্ষা তো ভালোই হয়েছে ৷ এদের আশা পূরণ করতে পারবে তো?

 ভাবতে ভাবতেই মনের কোণে তিতকুটে ভাব ৷ হরি ময়রার দোকান পেরিয়ে যেখানে রাস্তাটা বাঁক নিয়েছে মোটরসাইকেলে হেলান দিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে পরেশ ৷ বড়লোকের বখা ছেলে ৷ ক্লাস সেভেনে উঠে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে ৷ তারপর থেকে সারাদিন শুধু ফুলবাবুটি সেজে টো-টো কোম্পানি ৷ আজ এ মেয়ের পিছনে, কাল ও মেয়ের পিছনে হিড়িক দেওয়া ৷ আগে সাইকেল চড়ত, এখন আবার বাইক কিনেছে একখানা ৷ কী কুক্ষণে যে পারুলকে চোখে ধরেছে! নাহোক মাস ছয়েক পিছনে লেগেই আছে ৷ পারুলের একেকদিন ইচ্ছে করে পায়ের চটিটা খুলে দু-চার ঘা দিয়ে দেয় ৷ কিন্তু মঞ্জু বারণ করে, ওসব করতে যাস না ৷ ওরা বড়লোকের ছেলে ৷ কী করতে কী করে দেবে, কোথায় ফাঁসিয়ে দেবে তার ঠিক আছে? তার চেয়ে চুপচাপ থাক ৷ পাত্তা না দিলে এমনিই কেটে যাবে ৷

 মঞ্জুর কথাটা মাথায় রেখেই আজও এগোল পারুল ৷ দেরি করা যাবে না ৷ কাল পড়াতে যাওয়া হয়নি ৷ আজও না গেলে নার্স দিদিমণি চারটে কড়া কথা বলতে ছাড়বে না ৷ তবে একবার পিছন ফিরে দেখে নিল ৷ কাকিমার কেনাকাটি হয়ে গেছে ৷ মা-কাকিমা দুজনেই আসছে গুটিগুটি ৷

 রাস্তার বাঁকে মোটরসাইকেলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল পরেশ ৷ পারুলকে একা দেখেই এগিয়ে এল ৷ চোয়াল শক্ত করে দেখেও না দেখার ভান করছিল পারুল ৷ কিন্তু পরেশ ছাড়ার পাত্র নয় ৷ রাস্তার মাঝখানে দু-পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে বলল, একটা কথা ছিল ৷

 উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পারুল ৷ কিন্তু রাস্তার প্রায় সবটা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে পরেশ ৷ ফের বলে, বললাম যে একটা কথা ছিল ৷ একমিনিট দাঁড়িয়ে শুনে গেলে ভালো হয় ৷

 আমার সময় নেই ৷ রাস্তা ছাড়ুন ৷— হিস হিসিয়ে ওঠে পারুল ৷

 এত ব্যস্ত কীসের, হ্যাঁ? বড় যে গুমোর দেখছি ৷

 এবার আর সামলাতে পারে না পারুল ৷ সোজা তাকিয়ে বলে, আপনার মতো রাস্তার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর সময় আমার নেই ৷ সরুন, নাহলে এবার চেঁচিয়ে লোক ডাকব ৷ কয়েক সেকেন্ড একটু থতিয়ে যায় পরেশ ৷ তারপর সরে যেতে যেতে দাঁতে-দাঁত ঘষে বলে, কাজটা ভালো করলি না, পারুল ৷

 কোনওদিকে না তাকিয়ে সামনে এগোয় পারুল ৷ মাথার ভিতরটা যেন আগুন হয়ে আছে ৷ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে প্রায় দৌড়চ্ছে ৷ মা-কাকিমা যে অনেকটা পিছনে পড়ে গেছে সে খেয়াল নেই ৷ এমনকী মোটরসাইকেলের জান্তব আওয়াজটা যে ক্রমশ কাছে চলে আসছে সেটাও খেয়াল করেনি ৷ যখন করল তখন আর সময় নেই ৷ ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া মেয়েটাকে পিষে দিয়ে চলে গেল পরেশ ৷ গোবর্ধন মণ্ডলের শিবরাত্তিরের সলতে ৷

.

 আপনারা বলছেন, এটা অ্যাক্সিডেন্ট নয়, খুন? আপনারা দেখেছেন? নিজের চোখে দেখেছেন?

 হ্যাঁ, হ্যাঁ দেখেছি গো ৷ নিজের চক্ষে দেখেছি ৷ গোবর্ধন মণ্ডলের ছেলে আমাদের মেয়েটার ওপর দিয়ে ভটভটিটা চালায়ে দিল ৷ আমাদের মেয়েটা মরে গেল গো ৷ মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মরে গেল ৷

 থানার বড়বাবুর সামনে দাঁড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদছিল পারুলের কাকিমা ৷ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে পারুলের মা ৷ ভাষাহীন চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ হাত-পায়ে কোনও বশ নেই ৷ মঞ্জুর মা তাকে শক্ত করে ধরে না থাকলে যে-কোনো সময় বোধহয় মাটিতে লুটিয়ে পড়বে ৷

 পারুলের বাবা আর কাকা হাঁটুতে মুখ গুঁজে মাটিতে বসে ৷

 খুনের অভিযোগই লেখা হল ৷ মা আর কাকিমার টিপছাপ নিলেন বড়বাবু ৷ সেদিন রাতেই পরেশকে গ্রেফতার করল পুলিশ ৷ গোবর্ধন মণ্ডল বোধহয় ভাবতেই পারেননি যে জনমজুর হারাধন গড়ুইয়ের সাহস হবে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে এফ আই আর করার ৷ পরেশ তাই বাড়িতেই ছিল ৷

.

 পরদিন তাকে আদালতে তোলা হলে জজসাহেব বারো দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন ৷ সন্ধে হয়ে গেছে ৷ পারুলকে দাহ করে এসে দাওয়ায় পাতা ছেঁড়া দড়ির খাটিয়াটার ওপর বসে ছিল পারুলের বাবা ৷ কাকাও বসে আছে মাটিতে ৷ বকুল এসে দু-কাপ চা দিয়ে গেল ৷ কালকের ঘটনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত একবিন্দু জলও খাওয়ানো যায়নি পারুলের মাকে ৷ একটি কথা ফোটেনি মুখে ৷ কাকিমার কোলে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে আছে শুধু ৷

 মোটরসাইকেলের আলোটা দেখা যাচ্ছিল দূর থেকেই ৷ কিন্তু সেটা তাদের বাড়ির কাছে এসে দাঁড়াবে ভাবেনি কেউই ৷ পরপর দুটো বাইক ৷ গোবর্ধনবাবু আর তার দুই শাগরেদকে আসতে দেখে একটু সামলে বসে হারাধন ৷ চাপা গলায় বলে, বকুল, তুই ভিতরে যা ৷

 ঘর থেকে দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার বার করে দিয়ে নিঃশব্দে ভিতরে চলে যায় বকুল ৷ দাওয়ায় উঠে গোবর্ধনবাবু একটা চেয়ারে বসেন ৷ শাগরেদরা দাঁড়িয়ে থাকে ৷ একটা অস্বস্তিকর নীরবতা ৷ তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে গোবর্ধন মণ্ডল বলেন, দ্যাখ হারাধন, যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে ৷ তোদের মেয়ে তো আর ফিরে আসবে না ৷ খামোখা আমার ছেলেটা জেলের ঘানি পিষবে ৷ আমার একমাত্র ছেলে ৷ তোরা বাবু মামলাটা তুলে নে ৷ আমি তোদের পুষিবে দেব ৷ মেয়েটা আমার মরে গেছে দাদা ৷ ওর মা একফোঁটা জল খাচ্ছে না ৷ — এর বেশি আর কিছু বলতে পারে না হারাধন ৷

 জানি রে, জানি ৷ আমিও তো ছেলেপিলের বাপ ৷ আমার বাড়িতেও তো একই অবস্থা ৷ ওর মা শুধু মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে আর বলছে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দাও ৷ তোদের তো আরও দু-পাঁচটা আছে ৷ আমাদের তো ওই একটিই ৷ আমি কথা দিচ্ছি হারা তোদের কোনও অভাব রাখব না ৷

 কীসের অভাব রাখবেন না, বাবু? আমাদের মেয়ের অভাব পুরায়ে দেবেন? আপনি কি ভগবান?

 পারুলের কাকিমার আলগা আঁচল মাটিতে লুটোচ্ছে ৷ দু-চোখ যেন দু-খণ্ড আগুনের গোলা ৷

 আঃ, তুই ঘরে যা ৷ মেলা কথা বলিস না ৷— ধমকে ওঠে পারুলের কাকা ৷

 গোবর্ধন মণ্ডল কিন্তু মিছরিমাখা গলায় বলেন, ছেড়ে দে বাবা ৷ কিছু বলিস না ৷ ওরা মায়ের জাত ৷ কিন্তু আমার কথাটা শোন কিছু করতে হবে না ৷ থানায় গিয়ে কিছু বলতেও হবে না ৷ শুধু কেস যেদিন উঠবে সেদিন সাক্ষী দিতে যাসনি ৷ বাড়িতে একটা বড় মেয়ে আছে ৷ আর একটা বড় হচ্ছে ৷ ছেলেটাকে মানুষ করতে হবে ৷ এসব কথাও তো মাথায় রাখতে হবে ৷

 আরও কিছুক্ষণ ধানাই-পানাই করে চলে যান গোবর্ধনবাবু ৷ কিন্তু তার পরের দিন আবার আসেন ৷ তার পরের দিনও ৷ রোজই ৷ কখনও তিনি নিজে ৷ কখনও তাঁর চেলারা ৷ পারুলের বাবা-কাকার হাতে টাকা গুঁজে দেয় ৷ চালের বস্তা ঢুকিয়ে রাখে রান্নাঘরে ৷ নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে বাড়াতে থাকে টাকার অঙ্ক ৷ নাকের ডগায় গাজরের মতো ঝোলাতে থাকে একটা শ্যামলা মেয়ের জীবনের বিনিময়ে সারা পরিবারের নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ৷

 কেস ওঠে বারো দিন পরে ৷ বাদী পক্ষের কেউ সাক্ষী দিতে আসেনি ৷ কিন্তু তবু তো খুনের মামলা ৷ তাই আবার দু সপ্তাহের পুলিশ হেফাজত হয় পরেশের ৷

 রাস্তায় একদিন পারুলের বাবাকে দেখে চমকে ওঠে মঞ্জু ৷ পরিষ্কার ধুতি-শার্ট পরা ৷ ক্ষৌরি করা গাল ৷ তবে কি লোকে যা ফিসফাস করছে সবই সত্যি? গোবর্ধন মণ্ডল পয়সা দিয়ে কিনে নিয়েছে পারুলের বাড়ির লোকজনকে? পরেশের ছাড়া পাওয়া এবার শুধু সময়ের ওয়াস্তা ৷

 আরও দুবার কেস ওঠে ৷ সাক্ষী না থাকায় হেফাজতের মেয়াদ বাড়ে ৷ থানা থেকে খবর নেন গোবর্ধন মণ্ডল ৷ এবার কেস যখন উঠবে বাদী পক্ষের সাক্ষী না থাকলে জামিন হয়ে যাবে পরেশের ৷ মামলা অবশ্য চলবে ৷ কিন্তু তাতে কী? ছেলে ঘরে ফিরলে বড় উকিল লাগিয়ে ও মামলা যে শেষ পর্যন্ত খারিজ করাতে পারবেন, এমন বিশ্বাস গোবর্ধন মণ্ডলের নিজের ওপর আছে ৷ দশ লক্ষ টাকা আর পাঁচ বিঘে জমি হারাধনদের দুই ভাইয়ের নামে লিখে দেবেন ৷ কাগজপত্র সব তৈরি ৷ সহজে অবশ্য হয়নি ৷ দুই ভাই-ই বেগড়বাঁই করেছে অনেক ৷ মেয়ের জন্য দরদ উথলে দিয়েছে ৷ পাঁচ লাখে হয়ে যাবে ভেবেছিলেন ৷ দশ লাখ পর্যন্ত উঠতে হল ৷ সঙ্গে চাপা শাসানি ৷ জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করার ফল যে ভালো হয় না তার নানারকম উদাহরণ ৷

 শেষকালে একদিন পোটকা গিয়ে বড় মেয়েটার সঙ্গে খানিক গল্প-গাছা করে আসার পর সব ঠান্ডা হয়ে গেল ৷ পার্টি ক্ষমতায় থাকলে অবশ্য এত ঝামেলা পোহাতে হত না ৷ পাশা উলটে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে ৷ ব্যবসাপত্তরগুলো সময়মতো গুছিয়ে নেওয়া গেছিল বলেই বাঁচোয়া ৷

 ২৪ জুন ৷ আজ আবার পরেশের কেস উঠবে আদালতে ৷ এবারটা সামলানো গেলেই জামিন ৷ সকালেই নেতাইকে হারাধনের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন গোবর্ধন মণ্ডল ৷ অ্যাটাচিতে দশ লাখ টাকা আর জমির দানপত্র ৷ পরেশের জামিন হয়ে গেলেই মোবাইলে খবর দেবেন নেতাইকে ৷ ব্যাঙ্কে সব ফিট করা আছে ৷ কাগজপত্র হাতে দিয়ে নেতাই নিজে দুই ভাইকে বাইকে চাপিয়ে ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে আলাদা আলাদা নামে টাকা জমা করে দেবে ৷ গোবর্ধন নিজে আদালতে থাকবেন ৷ একেবারে ছেলেকে নিয়ে ফিরবেন ৷

 কী ভেবে বেরোনোর আগে নেতাইকে ডেকে গোবর্ধন বলে দিলেন, মেশিনটা সঙ্গে নিয়ে যা ৷ গরিব লোক তো ৷ হঠাৎ মাথা গরম হয়ে যেতে পারে ৷ একবার জামাটা তুলে দেখিয়ে দিবি, ঠান্ডা হয়ে যাবে ৷

 সকাল সকালই চলে এসেছে নেতাই ৷ বারান্দায় প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে আরাম করে ৷ বাড়ির কেউই আজ ঘর থেকে বেরোয়নি ৷ দাওয়ায় বসে একটার পর একটা বিড়ি খেয়ে যাচ্ছে হারাধন ৷ বকুলের কাকা চা খেয়ে আবার কাঁথামুড়ি দিয়েছে ৷ ছোট ভাই-বোনদুটো বই-শেলেট নিয়ে বসেছে ৷ রান্নাঘরের সামনে কুটনো কুটছে বকুল ৷ উনুনে ভাতের হাঁড়ি বসিয়েছে কাকিমা ৷ রান্নাঘরেরই একপাশে বসে আছে পারুলের মা ৷ চোখে ভাষা নেই ৷ শুধুই বোবা কান্না ৷ ভয় আর অপরাধবোধের একটা গুমোট কম্বল যেন ঢেকে আছে গোটা বাড়িটাকে ৷

 বসে বসে ঢুল আসছিল নেতাইয়ের ৷ হঠাৎ পায়ের শব্দে চটকা ভাঙল ৷ ভাঙা বেড়ার গেটটা পেরিয়ে ছুটে ঢুকছে একটা মেয়ে ৷ নীলপাড় শাড়ি পরা ৷ মেয়েটাকে চেনে নিতাই ৷ পোস্টাপিসের বাবুর মেয়ে ৷ মঞ্জু না কী যেন নাম….মরা মেয়েটার বন্ধু ছিল…এ আবার কী ঝামেলা পাকাতে এল…. ভাবতে ভাবতেই চিৎকার করে ওঠে মঞ্জু, কাকিমা…আ…কাকিমা গো …, পারুল ফার্স্ট হয়েছে, ফার্স্ট হয়েছে, স্টার পেয়েছে কাকিমা…. চারটে লেটার পেয়েছে… আমাদের সবার থেকে বেশি নম্বর পেয়েছে গো পারুল…সব থেকে বেশি… ৷

 ছুটে বেরিয়ে এসেছে পারুলের কাকিমা ৷ বিদুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠেছে মা ৷ বঁটি ফেলে উঠে দাঁড়িয়েছে বকুল৷

 আমি ভ্যান রিকশা নিয়ে এসেছি কাকিমা, মঞ্জুর গলা কাঁপছে ৷

 দিদি চলো ৷—আঁচলটা কোমরে গুঁজে নিয়ে পারুলের মায়ের হাত ধরে টানে কাকিমা ৷ কোন এক অমিতশক্তিতে ভর করে এগিয়ে আসে মা-ও ৷

অ্যাই অ্যাই, কেউ কোথথাও যাবে না ৷ অ্যাই ছুঁড়ি, ভাগ এখান থেকে…নইলে… ৷ — লাফ দিয়ে এগিয়ে এসেছে নিতাই ৷ কোমরে লুকিয়ে রাখা মেশিনটা মূহূর্তে হাতের মুঠোয় ৷

 কাকে মারবে তুমি? ক’জনকে মারবে?—কোমরে হাত দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মঞ্জু ৷

 চমকে উঠে নেতাই দ্যাখে বেড়ার ধারে নীল পাড় সাদা শাড়ির ভিড় ৷ শ্যামলা মুখ, শক্ত চোয়াল ৷ আরও আসছে ৷ অনেকে ৷ দূরের আলপথ ধরে ধেয়ে আসছে ৷

 বাড়ির সামনে রাখা ভ্যান রিকশায় ততক্ষণে চেপে বসেছে পারুলের মা ৷ উঠতে গিয়েও থেমে যায় কাকিমা ৷ নেতাইয়ের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, তোর মালিককে গিয়ে বলিস, আমাদের মেয়ে ফার্স্ট হইছে রে…লেটার পেইছে ৷ এসব কথার মানে জানে না তোর মালিক ৷ মানেটা শিখে নিতে বলিস ৷

 ভ্যান রিকশা ছেড়ে দেয় ৷ নীলপাড় সাদা শাড়ির নিরাপত্তারক্ষীদের পাশ কাটিয়ে এগোতে থাকে শহরের দিকে ৷ ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে আবার নতুন করে বুনতে শেখায় শক্তি সংগ্রহ করতে ৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *