জিনে, ক্রোমজমে
দিলাম জলে গুলে
রাজা উঠল ফুলে
পেটের ভিতর মিছা।
বল দেখি কিছা?
এটা ছোটোবেলার ধাঁধা! উত্তর হল চিতই পিঠে। দেখতে বেশ ফুলো ফুলো, কিন্তু পেটের ভিতর মিছা। মানে হাওয়া। বার্গার দেখেও ওরকমই মনে হয়। দেখতে বিরাট বড়ো। এক তলা দুই তলা তিন তলা…ঠাকুর যাচ্ছে বড়োতলা। ফাঁপা ফাঁপা পাউরুটি, ফাঁকে ফাঁকে একটু কাঁচা পাতা। ওরা বলে লেটুস। পাতলা জালি টমেটো আর শশা। মাংস কি থাকে বোঝা যায় না। ওটি খেতে হয়। কে আবার রান্নাবান্না করবে?
বেল বাজল। বাজনা শুনেই বোঝা যায় কে এল। কিকোতে। খুলবে না কোকিলা। বাজাক। বারবার বেল বাজলে পাশের ঘরে অসুবিধা হয় বলে চেয়ারে উঠে ফিউজটাই খুলে নেয় কোকিলা। এরপর শুনতে পায় হাই খোকি… খোকি…ওপেন ওপেন ইয়োর ডোর। কয়েকবার দরজা ধাক্কা দিয়ে চলে যায় কিকোতে।
ওর পুরো নাম কিকোতে পুনারা ওয়াতু। ওদের সহিলি ভাষায় ওয়াতু মানে ক্রীতদাস। শ্লেভ। ওর পূর্বপুরুষ ছিল শ্লেভ। ও এখনও ওর নামের সঙ্গে ওটা বহন করছে। কোকিলা বলেছিল এখনও কেন এই ওয়ার্ডটা ক্যারি করছ তুমি, মুছে দাও। ও বলেছিল, কেন মুছে দেব ইতিহাস? এত সহজে?
কোকিলা অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট ডক্ করছে। ওর গবেষণাটা গন্ধ নিয়ে। গন্ধ এক আশ্চর্য ব্যাপার। কোনও কোনও পদার্থের গন্ধ নেই। ওদের অণুগুলো খুব ঘন ভাবে আটকানো। যেমন সোনা, রুপো, বালি, পাথর, জল। কিন্তু কোকিলাদের গাঁয়ের মহাদেব কাকু বলত জোছনার গন্ধ পাই। আজ খুব বড়ো চাঁদ উঠেছে, নারে? মহাদেব কাকু অন্ধ ছিল। মহাদেব কাকু নাকি আলাদা মানুষেরও আলাদা আলাদা গন্ধ পেত। বলতে কে এলি, কোকিলা? অন্ধ মানুষদের গন্ধ-বোধ বেশি থাকে। ওরা বলে পাথরেরও গন্ধ হয়। সাদা পাথরের আলাদা গন্ধ, কালো পাথরের আলাদা। পদার্থের অণু নাকের ভিতরে যায়, নাকের ভিতরে লক্ষ লক্ষ অলফ্যাক্টরি রিসেপটারে ঐ অণুগুলো আলাদা আলাদা ভাবে সাড়া দেয়, সেটা আবার স্মৃতিতে আটকে থাকে, আমরা বলি এটা বিড়ির গন্ধ, এটা দুধের। এই তথ্য তো সবাই জানে। কোকিলা জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে মানুষের ভালো লাগা বা না-লাগা গন্ধ। ও দেখেছে ধাঙড় পাড়ার লোকেরা যখন শুকনো মাংস রান্না করত, ওদের সেই গন্ধ ভালো লাগত না। নাকে কাপড় দিত। শুটকি মাছও ভালো লাগত না। কিন্তু ধাঙড়দের ঐ গন্ধে অসুবিধে হত না। কেউ কেউ হিং-এর গন্ধ ভালোবাসে, কেউ সহ্যই করতে পারে না। আবার যে হিং-এর গন্ধ ফুলকপিতে ভালো লাগে, কিংবা কচুরিতে ভালো লাগে, সেই হিং-এর গুঁড়ো যদি কোনো মানুষ মাখে, ধরা যাক হিংয়ের গুঁড়ো মেশানো ট্যালকম পাউডার মেখে দাঁড়াল কেউ। ভালো লাগবে সেটা? খুব কষা করে খাসির মাংস রান্না করা হয়েছে। একদম ভুরভুর করছে গন্ধ। বলা হচ্ছে দারুণ গন্ধ। কিন্তু সেই গন্ধ যদি কারুর গা থেকে বেরোয়? ঘরে ফিনাইলের গন্ধ মন্দ লাগে না। পায়েসে কি দু’ফোঁটা ফিনাইল ফেলে দেয়া যায়? যে বডি লোশন গায়ে মাখলে কেউ বলবে বা কী ভালো গন্ধ, সেটা ভাতে ছড়িয়ে দিলে বমি পাবে না? গন্ধেরও কতরকম ভাঁজ। কালচারের সঙ্গে, অভ্যাসের সঙ্গে, মনের সঙ্গে গন্ধ মিশে আছে। একজন বইপড়ুয়ার কাছে নতুন বইয়ের গন্ধ যে আনন্দ এনে দেবে, না-পড়ুয়াকে সে আনন্দ দেবে না। ক্ষিদের পেটে মাছভাজার গন্ধ সুখ দেয়। ভরা পেটে বিরক্তি আনে। এইসব গন্ধ–অণু লিম্বিক সিসটেমের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। মস্তিষ্ক ঠিক করে গন্ধটা ভালো না খারাপ। গন্ধ নিজেও কি মস্তিষ্কের ঐ অংশকে প্রভাবিত করতে পারে? গন্ধ কি মানুষের মুড পালটে দিতে পারে, অনুপ্রেরণা কিংবা সাহস? গন্ধ কি ভালোবাসাও এনে দিতে পারে। যদি পারে, তবে কীভাবে? এই ব্যাপারটা বোঝা গেলে অ্যারোমাথেরাপিটা ঠিকঠাক বোঝা যাবে।
আর কিকোতের কাজ হিউম্যান ফেরোমন নিয়ে। অনেক জীব জন্তু শরীর থেকে ফেরোমন নিঃসরণ করে। এটা একটা কেমিকাল-বার্তা। পুরুষ বাঘেরা বলে আমি এসেছি। বলে এই এলাকা আমার। স্ত্রী বাঘেরা ঐ বার্তা পায় গন্ধ বিধুর সমীরণে।
শুধু বাঘ কেন বহু প্রাণীই ফেরোমন নিঃসরণ করে। পতঙ্গও। শুধু ভালোবাসার বার্তা নয়, আরও নানারকম বার্তা পাঠায় শরীর গন্ধ। বিপদের বার্তা, খাদ্য সম্পর্কিত বার্তা…। মানুষ যখন কথা শেখেনি, মানুষেরও ফেরোমন বের হত। মানুষের ঘামে কি এখনও সেই ফেরোমনের অংশ আছে? তবে কি সেই রাসায়নিক? কিকোতে এখন এই কাজটা করছে। ওদের দুজনেরই গাইড যোসেফ মুর বিখ্যাত অ্যাল্ফ্যাকসন সায়েন্টিস্ট। গন্ধ-বৈজ্ঞানিক। ওরা পি এইচ ডি করেছিল একই ল্যাবরেটরিতে।এখন ল্যাব দুটো আলাদা হয়ে গেছে।
কিকোতের আদিপুরুষ থাকত টাঙ্গানিকায়। এখন টাঙ্গানিকা আর জাঞ্জিবার দেশ দুটো মিলে তানজানিয়া হয়ে গেছে। জাঞ্জিবার একটা বিখ্যাত বন্দর।শুধু এলাচ লবঙ্গ জয়ত্রি জায়ফল নয়, জাঞ্জিবার বন্দর থেকে মানুষও রপ্তানি হত। কালো মানুষ। এখান থেকে মানুষ কিনে নিত সস্তায় বা লুঠ করে নিত আরব বণিকরা।
আলেকজান্দ্রিয়াতে নিয়ে যেতে পারলে দাম বেড়ে যায়। ব্যবসা তো একেই বলে। যেখানে যা সস্তা, ওখান থেকে কিনে নাও, যেখানে দাম বেশি, সেখানে গিয়ে বিক্রি করো। তখন তো সুয়েজ খাল ছিল না। ফায়েদ পর্যন্ত জাহাজ, তারপর মরুভূমির ভিতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া। আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কেউ যেত ইয়োরোপে, কেউ বা জাহাজের খোলে ঠাসাঠাসি হয়ে আমেরিকা। পথে মরে যেত কেউ কেউ। মরে গেলে কালো মানুষদেরই পরিষ্কার করতে হত, মানে মড়াটাকে চ্যাংদোলা করে সমুদ্রে ফেলে দিতে হত। অনেক মানুষই মরে যেত যাবার পথে। মানুষ-মাংসের লোভে এইসব জাহাজের পিছন পিছন ছুটত হাঙর। এইসব গল্প বলেছে কিকোতে। ওদের সহিলি ভাষায় হাঙরের একটা নাম আছে চর্বিডকোতা। মানে সমুদ্রের চিতা। কিকোতে কোকিলা বলতে পারে না। গত কয়েক পুরুষে ওর ইংরেজি উচ্চারণে আমেরিকান অ্যাক্সেন্ট এসে গেছে। ও বলে খোকিল্লা। কোকিলা বলেছে আমাকে বরং খোকি বলেই ডাকো। কিকোতে একদিন উইকিপিডিয়ায় দেখিয়েছিল শ্লেভ ট্রেডের রুট। দেখিয়েছিল মরোক্কো থেকে, কঙ্গো থেকে, ঘানা থেকে কীভাবে মানুষ রপ্তানি হত আমেরিকার আখের খেতে, ভুট্টার খেতে।এসব ছেলেটা ভুলতে পারে না কিছুতেই।
কোকিলা রায় বাঁকুড়া জেলার মেয়ে। ও হল খয়রা জাতের। ওর মায়ের কাছে শুনেছে ওরা হল চিড়াকুটা খয়রা। মল্লরাজাদের সৈন্যবাহিনীতে নাকি অনেক বাগদি, ডোম এবং খয়রা ছিল। খয়রাদের একটা অংশ ছিল লেঠেল। লাঠির যুগ শেষ হয়ে গেছে কবে। ওরা কেউ হল চিড়াকুটা, কেউ হল মাছমারা। কোকিলার ঠাকুরমা বাবুদের বাড়িতে ধানভানা চিঁড়ে কোটার কাজে যেত। উঠোন, ঢেঁকিঘর, আর বারান্দা পর্যন্তই ঢুকবার অধিকার ছিল ওর। ঘরে যেতে পারত না। ওঁর দাদু ছিল কাশীপুরের নায়েববাড়ির মাইন্দর। মাইন্দর মানে তো দাস। সারা বছরের জন্য সবরকমের কাজ করতে হত। তার বদলে বছরে কয়েক মন চাল আর সামান্য কিছু টাকা। কোকিলার বাবা কি করে যেন পুরুলিয়া সার্কিট হাউসের দারোয়ানের চাকরি পায়। পূর্বপুরুষ লেঠেল ছিল কর্তৃপক্ষের এরকম কোনো বোধ কাজ করেছিল কিনা কে জানে!
সার্কিট হাউসে কোয়ার্টার ছিল কোকিলার বাবার। ছোটোবেলা থেকেই কোকিলা দেখত গাড়ি করে বড়োমানুষরা আসছে, গাড়ি ঢুকলেই কোকিলার বাবাকে সেলুট মারতে হত। গাড়ি বেরুলেও। কত ম্যাডামও আসত–ওদের পোশাক ঝুলত ‘বেলকোনি’তে। জুঁইলতার ফাঁকে–ঝুলত ‘বেসিয়ার’ ওদের জন্য কিচেন-এ চিকেন রান্না হত, সুবাস আসত ওদের ঘরে। কোকিলা ভেবেছিল ও এরকম ম্যাডাম হবে। ম্যাডাম হতে গেলে ভালো করে ‘নেকাপড়া’ করতে হবে।
ইস্কুলে সত্যি ভালো রেজাল্ট করত। স্বর্ণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের ফার্স্ট গার্ল। কাছেই ডি এম সাহেবের বাংলা। ডি এম সাহেবের বউ কি করে জেনেছে এখবর। ওর সময় কাটে না। বলেন আমার কাছে আসবি তুই। ঐ বনানী ম্যাডামের অঙ্কে খুব মাথা। খুব ভালো অঙ্ক করাত, ইংরাজিটাও। কী অবাক কাণ্ড, মাধ্যমিকে পুরুলিয়া জেলার ফার্স্ট কোকিলা।
কোকিলার ঠাকুরমা তখনও বেঁচে ছিল। ঠাকুরমা এত কিছু না বুঝলেও এটুকু বুঝেছিল লাতনীটা খুব ডক্কাবাজা মেয়া হয়েছে। খুব হাত বুলিয়েছিল মাথায়। টুসু গানের কায়দায় বলেছিল
লাতিন আমার সরস্বতী
বল তুকে আজ কী দিব
ময়রা দুকান লিয়ে গিয়ে
লাল জিলিবি খাওয়াব।
সত্যি সত্যি কয়েন দিয়েছিল ঠাকুরমা, জিলিপি খাওয়ার জন্য।
মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট হল বলে কোকিলার মা-বাবার খুব কদর হল। ইস্কুলের দিদিমণিরা বাড়ি এল। ঐ ইস্কুলেই ভর্তি করিয়ে দিল এগারো ক্লাসে। কোকিলার বাবা বলত আমার কেমন যেন কানের ভিতরে ভোঁ ভোঁ করে। ছিনছাতুর লাগে। সব্বাই কি বুলাবুলি করছে, মেয়েটা কী হবে! ডাগদার, ইনজেনিয়ার, না বিডিও, না ডি এম? মাথাটো ঠিক রাখতে লারছি।
কোকিলা স্কলারশিপ পেল, এম-এস-সি করল, এখানেও স্কলারশিপ পায়, সব খরচ হয় না। বাড়িতে টাকা পাঠায়। আরও দুটো ভাই আছে, অত ভালো হয়নি, পড়াশুনো করে। ঠাকুরমা মারা গেছে। ফাংগাস লাগা একটা বিশেষ কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে কোকিলা ওর ঠাকুরমার গায়ের গন্ধ পেয়েছিল।
কিন্তু কী আশ্চর্য, কিকোতে প্রায়ই বলত খোকি, তোমার গায়ে আমি আমার ঠাকুরমার গায়ের গন্ধ পাই। খুব ঘন করে গায়ের গন্ধ নিত। কিন্তু কিকোতের গায়ের গন্ধ কোকিলার ভালো লাগত না। কিকোতে রাগ করত। জিজ্ঞাসা করত কেন ভালো লাগে না তোমার? এতো তোমার পূর্বপুরুষের গায়ের গন্ধ। ঘামের সঙ্গে ইলেকট্রোলাইট্স ছাড়া যা যা অ্যারোমেটিক্স বেরোয়–তা পূর্বপুরুষের দান। জিনেটিক। কোকিলা, তোমার রং কালো, তোমার নাক সাহেবদের মতো শার্প নয়, তোমার চোখের মণির রং নীল নয়। তুমি তো আমাদেরই আত্মীয় কোকিলা, আমি জানি, অনেক অনেক বছর আগে ভারতবর্ষ আর আফ্রিকা এক সঙ্গে ছিল। জড়াজড়ি করে ছিল। গণ্ডোয়ানা ল্যাণ্ড। তোমার মধ্যে নেগ্রয়েড রক্ত আছে, আমি রক্তের গন্ধ পাচ্ছি। তুমি পাচ্ছ না কেন? আরও একটু ভালোবাসো, তাহলে পাবে।
যখন স্কলারশিপ পেয়েছিল এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে, আসতে চায়নি কোকিলা। কোকিলার মা বাবা তো আরও নয়। ওদের সাহস দিয়েছিল স্বর্ণবালা ইস্কুলের বড়ো দিদিমণি। এসে এসে বলত আমাদের মেয়ে আমেরিকায় স্কলারশিপ পেয়েছে, ওখানেই যাবে। আমেরিকায় পৌঁছোবার আগে সিডিতে দেখেছিল ইউনিভাসিটিটা, শহরটাও। কিন্তু প্রথমে নেমে একটা তো শক্ হবেই। এত চওড়া রাস্তা, পরিষ্কার, এত সুন্দর ফুটপাথ, পরিষ্কার, এত সব গাড়ি, পরিষ্কার, শব্দ নেই, ঘাবড়াবার কথা নয়?
তবে অ্যারিজোনার সঙ্গে পুরুলিয়ার একটু মিল আছে। যেখানে মাটি দেখা যায়, মাটির রং লাল, ধুলো ওড়ে, দিনের বেলায় বেশ গরম লাগে। ক্যাম্পাস থেকে পাহাড় দেখা যায়।
ব্রেকফাস্টের টেবিলে কিকোতেই আলাপ করে ওর সঙ্গে। বলে এত কম মাখন নিচ্ছ কেন, নাও। খাও। ওটা গুয়াভা জ্যাম। ওটা স্ট্রবেরি।
কিকোতের সঙ্গে টেবিলে বসেছিল ও। কিকোতে বলেছিল এই যে দেশটা কালারোডো নদী ঘেরা দেশটা, এটা ইন্ডিয়ানদেরই ছিল। আমার স্টেট হল টেক্সাস। ওখানেও একসময় ইন্ডিয়ানরা ছিল। স্প্যানিশরা এসে ওদের শেষ করে দিয়েছে।
কোকিলা বলছিল–ওরা তো অন্য ইন্ডিয়ান। রেড ইন্ডিয়ান। উই আর অ্যানআদার ইনডিয়ান। উই আর অ্যাকচুয়াল ইনডিয়ান। ও বলতে চাইছিল কলম্বাস এই ইন্ডিয়ার খোঁজেই তো অভিযানটা করেছিল, তারপর ভুল করে… বলতে গেলে তো অনেক বলতে হবে। বোঝাতে পারবে তো। ইংরিজিটাতো ভালো করে বলতে পারে না…।
কিকোতে বলেছিল–আই নো, আই নো।ইউ আর নেগ্রায়েড ইনডিয়ান। নেটিভ আমেরিকানস ওয়ার প্রবাবলি মোঙ্গলায়ডস্। বাই মিসটেক দে কলড দেম ইনডিয়ান্স্। প্রথম দিনেই কোকিলাকে নেগ্রিটো বলতে শুরু করেছিল ও। ওর মনে হয়েছিল ও কি সত্যিই এত কালো? ওকে কি নিগ্রোদের মতো দেখতে? কিন্তু বেশ তর্ক করেনি। অত তর্ক করার মতো ইংরিজির দখল ছিল না।
পরদিনই কোকিলার হাতের উপরের দিকে একটা উল্কি দেখে ফেলেছিল ও! গরম ছিল, ছোটো হাতার শার্ট পরেছিল। অন্য মেয়েরা তো আরও ছোটো পরে। উল্কিটা দেখেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল কিকোতে। ওয়াও… ট্যাট্টু…। উল্কিটার উপরে হাত রেখেছিল। পরে ওখানেই চুমু খেয়েছিল। উল্কিটার উপরেই প্রথম চুমু। বলেছিল তুমি তো আমাদেরই মতো। আমাদের ট্রাইবে ছোটোবেলায় ট্যাটু করা হত। যেন নজর না লাগে। আফ্রিকা থেকে এ দেশে শ্লেভ হয়ে এসেও আমরা আমাদের সেই অভ্যেস ছাড়তে পারিনি।এই দ্যাখো আমার শরীরেও তোমার মতো। ARIZONA লেখা গেঞ্জিটা উঠিয়ে দিলে দেখল ওর বাঁদিকের বুকের উপর একটা উল্কি, একটা মাকড়সার ছবি।
কোকিলার হাতের উপরেও, যেখানে আগে বসন্তের টিকার দাগ থাকত, ওখানে ও তো মাকড়সাই। ছোটোবেলায় করিয়ে দিয়েছিল, যেন নজর না লাগে। এতদিন তো খেয়ালই করেনি কোকিলা ওর হাতে কোনো ট্যাটু আছে। কিকোতে বলল–তোমার ট্যাটুও আমারই মত। ছোটোবেলায় করা। এখনকার ছেলেমেয়েদের স্টাইলের ট্যাটু নয় যে এক মাসেই উঠে যাবে। এগুলো আমাদের চামড়ার ভিতরে গাঁথা।
ও যত বলত তুমি আমাদেরই লোক, কোকিলা মানতে চাইত না। কী করে এক হবে? ও তো ইতিহাসে পড়েছিল ভারতীয়রা আর্য জাতির বংশধর। তবে এটাও জানে ও এস সি–সিডিউল কাস্ট। এজন্য কিছু সুযোগ সুবিধাও পেয়েছে, কিন্তু এটাও জানত কোকিলার দাদু ঠাকুরমা বামুন-কায়েতদের বাড়িতে ঢুকতে পারত না।
কোকিলা ওর অলস সময়ে শুয়ে শুয়ে ভেবেছে দেশে ওর বাবা কাগজে বিজ্ঞাপন দেবে বিদেশ ফেরত বৈজ্ঞানিকের জন্য উপযুক্ত সুপাত্র চাই। উচ্চ অসবর্ণে আপত্তি নাই। তখন সিডিউল কাস্ট কেন, বামুন কায়েতের ঘরের ছেলের বাপরা চিঠি লিখবে।ওর বাবাকে বামুনরাও তেল মারবে, বলবে দিন, আপনার মেয়েকে দিন।ওর বাবা বলবে আরও তো অনেক পাত্র আছে, ভেবে দেখছি।
দেশের ফেরার কথা এখন আর ততটা ভাবে না। ও জানে এখানেই চাকরি পাবে, ভালো চাকরি। আরও গবেষণার সুযোগ পাবে। দেশে বড়ো বাড়ি করবে, মাঝেমধ্যে যাবে, বামুন কায়েতের বাচ্চারা হা করে থাকবে।
কিকোতে দরজা ধাক্কা দিয়ে ফিরে গেছে। ও কি বুঝছে না ওকে এখন আর পাত্তা দিচ্ছে না কোকিলা? ওর সঙ্গে একটু বন্ধুত্ব হয়েছিল ঠিকই, একটু শরীরও। ঘন ব্রাশের মতো কোঁকড়া চুলে ভরা ওর মাথাটা শরীরে ঘষতে ভালো লাগত কোকিলার, তাই বলে কী করে ভাবছে, ওর সঙ্গে ঘর করবে, একসঙ্গে থাকবে, বিয়ে করবে? ও তো কালো। নিগ্রো। কোকিলা কি এতটা কালো নাকি।ও হল শ্যামলা। শ্যামবর্ণ। এই রংটা সাহেবরা খুব ভালোবাসে। কোকিলার হাতে মাকড়সার আঁকা উল্কি রয়েছে তো কী হয়েছে? কোকিলারও ঠোঁট মোটা তো কী হয়েছে? ওর নামের সঙ্গে কিকোতে নামের মিল আছে তো কী হয়েছে? ওর তো বোঝা উচিত কোকিলা ওকে পাত্তা দিচ্ছে না। গতকাল ও দেখেছিল পেড্রোর সঙ্গে। পেড্রো চুমু খাচ্ছিল। পেড্রো বলেছিল তোমার ঠোঁটটা মোটা বলে চুমু খেতে ভালো লাগে আমার।
ও বোধ হয় আজ একটা কিছু হেস্তনেস্ত করতে এসেছিল।কিকোতে চলে গেছে। কোকিলা ব্যালকনি থেকে ঈষৎ কুঁজো হয়ে, ঘাড় গুঁজে চলে যাওয়া দেখল।
পেড্রো অ্যালভারেজ একই ইউনিভার্সিটির ছেলে। অন্য ডিপার্টমেন্টের। জিনোমিক্স এর। ও স্প্যানিশ আমেরিকান। কিকোতে ওকে দু’চক্ষে দেখতে পারত না। কারণ স্প্যানিশরাই প্রথম আমেরিকা এসেছে, আমেরিকান আদিবাসীদের শেষ করেছে। শ্লেভ বানিয়েছে। শ্লেভ খাটিয়েছে। কোকিলা বলেছে–এখন তারাখচিত আমেরিকান ফ্লাগের তলায় সবাই এক। দাসরা মুক্ত। এখনও ওসব রাগ পুষে রাখে নাকি?
বলেছিল,কিন্তু কোকিলা নিজে কি এখনও একটুও রাগ পুষে রাখেনি? নইলে বামুন ছেলেদের হ্যাটা করার কথা ভাবে কেন?
পুরুলিয়া সার্কিট হাউসের ছোট্ট কোয়ার্টারটা ফুল-পাতায় সাজানো। আজ কোকিলার ছেলের মুখে ভাত। গত তিন মাস হল এখানেই আছে। এখনও নতুন বাড়ি কেনা হয়নি, কিছুদিন চাকরি করে ডলার জমিয়ে পাঠিয়ে দেবে, তখন বাড়ি হবে।
কোকিলা পেড্রোকেই বিয়ে করেছিল। বামুন। মানে সাহেব আর কি। লালচে গায়ের রং। খুব একটা লম্বা নয়। নীলচে চোখ।
পেড্রো কয়েক পুরুষের আমেরিকান। এখনও মাঝে মাঝে দু-চারটে স্প্যানিশ বলে।কোকিলার কাজটা নিয়ে বলেছিল ত আদোরো। তোমায় আদর করির মতো শোনালেও মানেটা হচ্ছে তোমায় অ্যাড্মায়ার করি বা আডোর করি। ওটাই পালটে গিয়েছিল তে ক্যুইরোতে। মানে আই লাভ ইউ।
এই পরিবর্তনটা হতে মাস ছয়েক লেগেছিল।ওরা দুজনেই আলাবামাতে চাকরি পেয়ে যায়। ওরা চলে যায়। ওরা আলাবামা গিয়ে বিয়ে করে। কোকিলার মা বাবা চেয়েছিল পোয়াতী মেয়েটা দেশে ফিরে বাপের বাড়ি আসুক।এসে থাকুক, সাধভক্ষণ হোক–উঁচু জাতের মেয়েদের যেমন হয়। ওরা চায়নি। বাচ্চাটা ওদেশের মাটিতে জন্মালে সিটিজেন বাই বার্থ হয়ে যাবে। আমেরিকার নাগরিক। বাচ্চাটা ওদেশেই ভূমিষ্ঠ হল। কিন্তু স্প্যানিশ বরকে নিয়ে পুরুলিয়া এসেছিল কোকিলা। ডি এম সাহেব, বিডিও সাহেব, স্কুলের হেড দিদিমণি, তৃণমূল এবং সিপিএম নেতারা কোকিলার সাহেব বর দেখতে এসেছিল।সবাইকে কালাকান্দ আর মেচা সন্দেশ খাওয়ানো হয়েছিল। সেবারই বাড়িতে কম্পিউটার বসিয়ে দিয়ে যায়। সঙ্গে স্কাইপ। কম্পিউটারের উপরে একটা ওয়েব ক্যাম বসানো আছে। কোকিলার মা-বাবা কোকিলাকে দেখতে পাবে, কথা বলতে পারবে। কোকিলা ভাইদের স্কাইপ অপারেশন শিখিয়ে দিয়েছে। কোকিলার গন্ধ-সম্পর্কিত যে কাজটা, যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত ভালো লাগা না-লাগার সঙ্গে জেনেটিক্স কোনো সম্পর্ক সন্ধানের জন্য ওরা দুজনে কাজ করবে ভেবেছে। পেড্রো জেনেটিক্স ভালো বোঝে। ছেলেটা কাজপাগল। কোকিলার কাজের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটাকে ভালো লেগে গিয়েছিল পেড্রোর।
ওদের ছেলেটা কিন্তু ফর্সাই। মায়ের রং পায়নি। অবশ্য বাচ্চারা ছোটোবেলায় ফর্সাই থাকে। নাম রাখা নিয়ে একটু সমস্যা ছিল। ওদের নাম হবে, নাকি এদিকের নাম।সমাধান করেছিল কোকিলাই। একজন স্প্যানিশ অভিনেতা–নাম গোবিনো নিরো। গোবিনো নামটা শুনতে গোবিন্দের মতোই লাগে। কিন্তু মাস দুই পরে গোবিন্দর মাথায় যখন চুল গজাল তখন সেই চুলে ঝুঁটি বাঁধা সম্ভব হল না।
চুলগুলোর ধরন অন্যরকম হচ্ছিল। লম্বা নয়, কোঁকড়া, ব্রাশের মতো। গত তিন মাসে বাচ্চাটার মাথার চুলটা এমন হয়ে গেল যেন কিকোতের মত।
পেড্রো সামনাসামনি দেখেনি বাচ্চাটাকে অনেক দিন। তিন মাসের বাচ্চাটাকে নিয়ে কোকিলা চলে এসেছিল একাই। মুখে ভাত হলে ফিরে যাবে।
ওর এরকম চুলের ছবি পেড্রোর কাছে নেই। এই চুল পেড্রো দেখেনি। আফ্রিকানদের এই ধরনের চুল হয়। আফ্রোটেক্সচারের। সাহেবরা এই চুলকে বলে কিংকি হেয়ার।
কী করে হল? কিকোতের কোনো জিন শারীরিক ভাবে প্রবেশ করেনি, এটা নিশ্চিত। পেদ্রোর সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্বের পর কিকোতের সঙ্গে কোনোদিনই শারীরিক মিলন হয়নি। ওর জিন কোকিলার সন্তানের মধ্যে আসা অসম্ভব। তবে কি অন্য জিন? যে জ্বিন-এর কথা ইসলামিক কেতাবে থাকে।
পেড্রোর সঙ্গে মিলনের সময় কি কিকোতের কথা মনে পড়েছিল?
পড়েছিল তো পড়েছিল, তাতে কি জিন আসে নাকি? তবে কী করে হল?
তবে কি কিকোতের কথাই ঠিক! কোকিলার শরীরেও নিগ্রোয়েড অস্তিত্ব রয়ে গেছে? কোনো-এক জিনের গভীরে গোপনে রয়ে গেছে এক কণা আফ্রিকা?
কোকিলার মা তো এই চুলে খুব খুশি। মাথায় হাত বুলোচ্ছে খুব। কোকিলার বাবা বলছে ওদের কোনো জ্যাঠামশাইয়ের এরকম চুল ছিল।
তার মানে ক্রোমোজোমের ভিতরে জিনের মধ্যে রয়ে গেছে কোনো এক ট্রেইট, যা চোখের মণির রং, চুলের চরিত্র, নাকের গড়ন এসব বহন করে।নারী পুরুষের মিলন তো কোটি কোটি জিনের সঙ্গে কোটি কোটি জিনের র্যাণ্ডম মিলন। র্যাণ্ডম শব্দটা খুব ইমপর্টেন্ট এখানে। পেড্রো বুঝবে তো? যখন আরিজোনাতে পেড্রোর সঙ্গে থাকতে শুরু করেছিল, কিকোতে তো ওখানেই ছিল। এই জিন মাহাত্ম্য কথা বুঝবে তো পেড্রো?
বাড়িতে উৎসব। কোয়ার্টার ছোটো। লোকজন সার্কিট হাউসেই খাবে। ডি.এম. সাহেব আজকের জন্য দিয়েছেন। কোকিলার বাবা অনেক দিন ধরেই আর ছিনাথ নয়। শ্রীনাথ রায়। আজ ধুতি আর টেরিকটের জামা পরেছে। পুরুলিয়ার তপশিল জাতি সমিতি ওকে জোর করে ওদের সংগঠনের সহ সভাপতি করে দিয়েছে। খয়রা সমাজের কেউ কেউ নিমন্ত্রিত। গ্রামের বাড়িরও। ওরা সার্কিট হাউসের গদি আঁটা চেয়ারে বসতে ভয় পেয়েছে। ওরা বাইরের বাগানে। পিছন দিকটায়। দু বোতল ‘ইংলিশ’ কিনে দিয়েছে শ্রীনাথ। ওখানে ওরা গাইছে, নাচছে। ওদের সমাজের একটা মেয়ের সাহেব ছানা হয়েছে। শ্রীনাথ বেশি নয়, দু’ঢোক মেরে এসেছে।
কোকিলার মায়ের গরদের শাড়ি। মাথায় ঘোমটা। কপালে অনেকটা সিঁদুর। সবাই বলছে আপনি রত্নগর্ভা।
অন্নপ্রাশনে যজ্ঞ হয়েছিল। বামুন এসে যজ্ঞ করেছে। খয়রাদের ঘরে বামুনরা কাজ করত না। স্কাইপে সেই যজ্ঞ, মুখে ভাত তুলে দেয়া, ছেলের মাথায় মুকুট পরানো, সবই স্কাইপে দেখেছে পেড্রো। বলেছে ওয়ান্ডারফুল। আই মিস ইট।
যাগ-যজ্ঞ পুজো সব দুপুরেই হয়ে গেছে। এখন সন্ধা। আলো জ্বলে উঠেছে। বাগানের পিছন থেকে ফিরে এসে শ্রীনাথ রায় বলল–অন্নপ্রাশন দিলাম, এবার পৈতেও দেব। আর আমরা আর একুশ দিনে নয়, এগারো দিনে শ্রাদ্ধ করব। মা কোকিলা, তুই সাহেব বে করে আমাদের বামুন বানিয়ে দিলি।
কোকিলা বাচ্চাটাকে ধুতি পরিয়েছে,পাঞ্জাবিও। গলায় মালা। একটু পরই লোকজন আসতে শুরু করবে। সব মান্যজন, গণ্যজন। তখন সময় পাবে না। খুব ইচ্ছে হল–কিকোতের সঙ্গে কথা বলে। বাচ্চাটা একবার কিকোতেকে দেখায়। মেল করল।
সঙ্গে সঙ্গেই জবাব পেল। ও এখন কম্পিউটারেই আছে।
কিকোতেকে প্রত্যাখ্যান করেছে কোকিলা, কিন্তু কিকোতে খারাপ ব্যবহার করেনি কখনো। ক্রিসমাসে কার্ড, ফ্রেণ্ডশিপ ডে তে-ও। মাঝে মাঝে মেল–হাউ ইজ লাইফ।
কোকিলা বলল স্কাইপটা খোলো, তোমার ভালো লাগবে।
বাচ্চাটাকে ক্যামেরার তলায় ধরল কোকিলা, যেন চুলটাকে ভালো করে
দেখতে পায় ও।
তালি দিয়ে উঠল কিকোতে। হা হা করে উঠল। বলল শুকে দেখ, শুকে দেখ বেবি, তোমার সন্তানের গায়ে আমার গায়ের গন্ধ পাবে।
বলল–দেখলে তো, আমি আছি। তোমাকে গত দু বছর স্পর্শ না করেও তোমার শরীরে গভীরে আমি গোপনে ছিলাম। স্যালুট, স্যালুট টু দি মিসটেরিয়াস ডি.এন.এ.।
কিকোতে বলল ওয়ান সেকেন্ড। গিটারটা নিয়ে আসতে দাও।
ঝং করে উঠল গিটার, যেন হঠাৎ জলপ্রপাত।
ও গাইছে। কথাগুলো ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না।
এক নদী জল, এক গাছ ফুল, এক আকাশ বৃষ্টি…।
বোঝা যাচ্ছে শুভেচ্ছা গীতি গাইছে কিকোতে। ও গাইছে তোর জন্য খোলা মাঠ, তোর জন্য একপাল শুয়োর… শুয়োর চরাতে গেলে কড়া রোদ্দুরে তোকে ছায়া দিক এক বাওবাব গাছ…।
গানটার ভাষা ইংরিজি, কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে ওদের ফেলে আসা জীবনের গান। কয়েক পুরুষ আগেকার আফ্রিকার, নইলে বাওবাব গাছের কথা আসে কেন?
গানও কি গোপনে থাকে, নিজের মতো!
আর, সার্কিট হাউসের পিছনের কাঁঠাল তলায় দেশ থেকে আসা ওদের জ্ঞাতি-আত্মীয়রা গাইছে–
তঁকে যেরে দেখেছিলি শুয়ার বাগালি
শুয়ার টুয়ার ছাড়ে বরা বর সাজে আলি…।
…সেই কবেকার ছেড়ে আসা পশুপালক জীবনের গান যা রক্তের ভিতরে বয়ে গেছে।
রাত হয়। জ্ঞাতিরা টলোমলো পায়ে ফিরে যায়। যাবার সময় আশীর্বাদ করে যায় এ ছেলে কাশীপুরের রাজা হবে ফের। কে বলে এম্পি হবেক, এম্পি। একজন বড়োলোকের ব্যাটা লো বলে থেমে যায়।তারপর বলে খাংলা খাংলা চুল, তুয়ার গায়ে বাইয়ে পড়ুক হলুদ কদম ফুল।