জিনিয়াস মাইন্ড

জিনিয়াস মাইন্ড

স্প্যানিশ একটা যুবকের সঙ্গে সম্প্রতি পরিচয় হয়েছে। মাদ্রিদ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। আমেরিকায় এসেছে পিএইচডি করতে। তার গবেষণার বিষয় রোবটিকস। আমি অর্গানিক কেমেস্ট্রির গবেষক। বিজ্ঞানের বহু শাখার গবেষণা নিয়ে আমার গভীর জ্ঞান নেই। তবে বিভিন্ন শাখার তরুণ গবেষকদের সঙ্গে কথা বলতে সব সময় পছন্দ করি। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বিজ্ঞানের বহু শাখার সৌন্দর্যটুকু উপলব্ধি করার চেষ্টা করি।

ছেলেটার সঙ্গে পরিচয়ের পর মজা করে বলল, সে ফড়িং (ড্রাগনফ্লাই) নিয়ে গবেষণা করে। তার কথা শুনে অবাক হয়েছিলাম। ফড়িং নিয়ে কী গবেষণা করে বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম বায়োলজি নিয়ে কাজ করে। পরে যখন জানলাম সে রোবটিক ইঞ্জিনিয়ার, তখন আরও ধাঁধায় পড়ে গেলাম। রোবটিকসের সঙ্গে ড্রাগন ফ্লাইয়ের সম্পর্ক মুহূর্তেই খুঁজে বের করতে পারিনি

তার কাছ থেকে ফড়িং নিয়ে দারুণ সব তথ্য আমি জানলাম। ফড়িং যে তার চারটি ডানাকে যুগপৎ ভিন্ন ভিন্ন দিকে (Direction) ঘোরাতে পারে, সেটা জেনে খুব অবাক হয়েছিলাম। ফড়িং ওড়ার সময় খুব দ্রুত তার দিক পরিবর্তন করতে পারে। পেছনে, সামনে, ওপরে ও নিচে উড়তে পারে। একটা ফড়িংয়ের যাবতীয় সব বিষয় তারা গভীরভাবে জেনে ড্রাগনফ্লাই ন্যানো রোবট তৈরির গবেষণা। করছে। কী দারুণ কাজ!

উন্নতমানের ড্রাগনফ্লাই ন্যানো রোবট বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজে বহার করা যাবে। বিভিন্ন দুর্যোগে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্ধারণে পাপন তথ্য সংগ্রহে এবং আরও অনেক কাজে। তার কথা হলো কীটপতঙ্গদের চলাফেরা যদি গভীরভাবে স্টাডি করা যায়, তাহলে মাইক্রো রোবট হবে একুশ শতকের এক শক্তিশালী টুলস

তার কথা শুনতে শুনতে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। ভাবলাম, মানব সভ্যতার অনন্যসাধারণ সৃষ্টিগুলো এসেছে প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে। প্রকৃতির বহু ঘটনা দেখে মানুষ প্রশ্ন করেছে। ভিন্নভাবে ভেবেছে। সেগুলোকে মিমিক (Mimic) বা ইমিটেইটু (Imitate) করে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়েছে। জিনিয়াস মাইন্ডগুলো কখনো শুধু বই পড়ে মেধাবী হয়নি। তারা বইয়ের বাইরে প্রশ্ন করেছে। আউট অব বক্স (Out of Box) চিন্তা। করেছে। আশপাশের প্রকৃতি থেকে জ্ঞান লাভ করেছে।

আমাদের শিশু-কিশোররা আউট অব বক্স চিন্তা করতে পারে না। তারা প্রশ্ন করতে পারে না। তাদের ভিন্নভাবে ভাবতে। উৎসাহিত করা হয় না। ভয় ও সংকোচের সংস্কৃতি তাদের গ্রাস করেছে। আমাদের কয়টা ছেলেমেয়েকে স্কুল ফেরার পর জিজ্ঞেস করা হয় ক্লাসে তুমি আজ কী প্রশ্ন করেছ? ভিন্ন চিন্তাকে আমরা উদ্ভট বলে অবহেলা করি। বই মুখস্থ করে ভালো রেজাল্ট করা মেধাবী নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকি। কেউ যদি ভালো জিপিএ না পায় তাকে আর মেধাবী বিবেচনা করা হয় না। অথচ, এদের ভিড়ে কত জিনিয়াসদের আমরা হত্যা করি, সেটা কি কখনো উপলব্ধি। করি? আইনস্টাইন বলেছিলেন,-Everybody is genious. But if you try to judge a fish by its ability to climb a tree, it will spend its life believing that its stupid.

ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরে, শিশু-কিশোরদের প্রশ্ন করতে বলুন। যেকোনো বিষয়ে তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করুন। তাদের ভিন্ন ভাবনাকে উদ্ভট না বলে উৎসাহিত করুন, প্লিজ! আমাদের দেশটাকে বাঁচিয়ে রাখতে বহু জিনিয়াস মাইন্ড প্রয়োজন।