জার্ড আর ফ্রের গল্প

জার্ড আর ফ্রের গল্প

ফ্রেয়ার ভাই ফ্রে ছিল ভানির দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। সে ছিল সুঠামদেহী ও অভিজাত দেখতে, একজন যোদ্ধা আর প্রেমিক পুরুষ, কিন্তু তার মনে সুখ ছিল না, তার কেবলই মনে হতো, তার জীবনে কিছু একটা নেই, কী নেই সেটা সে বুঝতে পারছিল না।

মিডগার্ডের মরণশীল মানুষেরা ফ্রেকে শ্রদ্ধা করত। তারা বলত, ফ্রে ঋতুবৈচিত্র্য তৈরি করেছিল। ফ্রে মাটিকে উর্বর করেছিল আর মৃত ভূমি থেকে জীবনের সৃষ্টি করেছিল। মানুষেরা ফ্রেকে ভালোবাসত আর পূজো করত, কিন্তু তাতেও ফ্রের মনের শূন্যতা পূরণ হচ্ছিল না।

ফ্রের কাছে অনেক মূল্যবান বস্তু ছিল-

তার কাছে একটা তলোয়ার ছিল, সেটা এতই চমৎকার আর শক্তিশালী ছিল যে, সেটা একাই যুদ্ধ করতে পারত। কিন্তু তাতেও ফ্রের মন ভরছিল না।

তার ছিল এক সোনালি লোমের বরাহ, নাম তার গুলিনবার্টি, যাকে বামন ব্রুক আর তার ভাই এইত্রি বানিয়েছিল। গুলিনবার্টি ফ্রের রথকে টেনে নিয়ে যেত। এটা বাতাসে আর পানির ওপর দিয়ে ছুটতে পারত, গতিতে ছিল যেকোনো ঘোড়ার চেয়ে দ্রুতগামী, এটার সোনালি লোম অন্ধকারে জ্বলজ্বল করত বলে এটা অন্ধকারেও ছুটতে পারত। কিন্তু গুলিনবার্টিও ফ্রেকে সন্তুষ্ট করতে পারছিল না। তার কাছে ছিল স্কিডব্লাডনির নামক জাহাজ, বামন ইভালদির তিন পুত্রের বানানো। এটা সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল না (সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল নেইগলফার, মৃত্যুতরী, যেটা মৃতদের না কাটা নখর দিয়ে তৈরি), কিন্তু সেটা সকল এসির দেবতাদের বহন করার মতো যথেষ্ট বড় ছিল। স্কিডব্লাডনির যখন পাল তুলে যাত্রা করত, পালে সর্বদা চমৎকার বাতাস থাকত, আর যেখানে দরকার সেখানেই এটাকে নিয়ে যাওয়া যেত। যদিও এটা দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ ছিল আর সকল এসির দেবতাকে বহন করতে পারত, ফ্রে স্কিডব্লাডনিরকে কাপড়ের মতো ভাঁজ করে একটা থলেতে ভরে রাখতে পারত। কিন্তু স্কিডব্লাডনিরও ফ্রের মন ভরাতে পারছিল না।

তার ছিল চমৎকার এক প্রাসাদ, যেটা এসগার্ডে ছিল না। এটা ছিল আলফহাইমে, আলফাইম হলো শুভ্র এলফদের জগত, যেখানে তাকে সর্বদা নেতা হিসেবে সাদরে বরণ করে নেওয়া হতো। কিন্তু তাতেও ফ্রে সন্তুষ্ট হতে পারছিল না।

ফ্রের ভৃত্য স্কিরনির ছিল একজন শুভ্র এলফ। সে ছিল দেখতে সুন্দর, ভালো পরামর্শদাতা আর খুবই ভালো ভৃত্য।

ফ্রে স্কিরনিরকে নির্দেশ দিল রথের সাথে গুলিনবার্ষ্টিকে জুড়ে নিতে। আর তারা দুজনে রথে চেপে এসগার্ডের দিকে রওনা হলো।

এসগার্ডে পৌঁছানোর পর তারা ভ্যালহালার দিকে হেঁটে গেল। ভ্যালহালা হলো বীরের মৃত্যু লাভ করা মানুষের আবাস। সময়ের শুরু থেকে যারা যুদ্ধের ময়দানে বীরের মৃত্যু লাভ করেছে, তারা এখানে বাস করার সৌভাগ্য অর্জন করে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাদের আত্মাকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসে নারী যোদ্ধার দল, যাদের বলা হয় ভ্যালকেরি, যারা ওডিনের নির্দেশে মহান মৃত্যুপ্রাপ্ত, যুদ্ধে মারা যাওয়া বীরদের তাদের চূড়ান্ত পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য ভ্যালহালায় নিয়ে আসে।

ওখানে নিশ্চয়ই অনেক লোক আছে,” বলল স্কিরনির, সে আগে কখনো ভ্যালহালায় আসেনি।

“হ্যাঁ, অনেক লোক আছে,” বলল ফ্রে, “কিন্তু আরো লোক আসবে। কিন্তু যখন আমরা নেকড়ের সাথে যুদ্ধ করব, আমাদের আরো লোক লাগবে।”

যখন তারা ভ্যালহালা সংলগ্ন মাঠে পৌঁছাল, তারা যুদ্ধের শব্দ শুনতে পেল, শুনতে পেল অস্ত্রের ঝনঝনানি আর অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার শব্দ।

তারা যখন কাছাকাছি পৌঁছাল, তারা দেখল, সকল বয়সের আর সকল স্থানের শক্তিশালী যোদ্ধারা তাদের যুদ্ধের পোশাকে প্রাণপণ যুদ্ধ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক যোদ্ধাকে মৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেল। “থামো,” একটা বজ্রকণ্ঠের ঘোষণা শোনা গেল। “আজকের মতো যুদ্ধ শেষ!”

এই ঘোষণা শুনে যারা তখনো দাঁড়ানো ছিল, মাটিতে পড়ে থাকা মৃতদের উঠতে সাহায্য করল, ফ্রে আর স্কিরনিরের চোখের সামনেই তাদের গায়ের আঘাতের চিহ্ন মিলিয়ে গেল আর তারা সবাই ঘোড়ায় চড়ে বসল। সকল যোদ্ধারা, বিজয়ী আর পরাজিত সবাই, যারা সেদিন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, ঘোড়া ছুটিয়ে ভ্যালহালায় ফিরে গেল।

ভ্যালহালা ছিল সুবিশাল, এর ৫৪০টি দরজা ছিল, প্রতিটি দরজায় একসাথে ৮০০ জন যোদ্ধা প্রবেশ করতে পারত। এতে এত লোক একসাথে বসতে পারে, সেটা কল্পনা করাও দুরূহ।

সুবিশাল হলে ভোজসভা শুরু হলো, যোদ্ধারা আনন্দে চিৎকার করল। বিশাল এক কড়াই হতে তারা বরাহের মাংস নিয়ে খাচ্ছিল। এই মাংস ছিল সেইরিমিনির নামক এক বিশাল বরাহের। প্রতি রাতে তারা এর মাংস খেত, আর প্রতি সকালে বরাহটি আবার জীবিত হয়ে যেত। তাকে দিনের বেলা আবার জবাই করা হতো আর মাংস বীরযোদ্ধাদের খাওয়ানো হতো। যত লোকই হত, মাংস কখনো কম হতো না, সকলকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট মাংস পাওয়া যেত।

তাদের খাওয়ানোর জন্য পানীয় আনা হতো।

“এত এত যোদ্ধাকে খাওয়ানোর জন্য এত এত পানীয়,” বলল স্কিরনির, “কোথা থেকে আসে এত পানীয়?”

এই পানীয় হেইড্রাম নামক এক ছাগল থেকে আসে,” তাকে বলল ফ্রে। “সে ভ্যালহালার ওপরে দাঁড়ানো আছে আর লেরাড নামক এক বৃক্ষের পাতা খাচ্ছে, লেরাড হলো বিশ্ববৃক্ষ ইগড্রাদিলের একটা শাখা। হেইড্রামের ওলান থেকে সবচেয়ে ভালো মানের পানীয় প্রবাহিত হচ্ছে। অনন্তকাল পর্যন্ত সকল যোদ্ধার জন্য পর্যাপ্ত পানীয় এখান থেকে পাওয়া যাবে, কখনো শেষ হবে না।”

তারা সিংহাসনের দিকে গেল, যেখানে ওডিন বসা ছিল। তার সামনে একটা বাটিতে মাংস রাখা ছিল, কিন্তু সে খাচ্ছিল না। সে মাঝে মাঝে ছুরি দিয়ে কিছু মাংস কেটে মাটিতে ফেলছিল, তার দুই নেকড়ে গেরি আর ফ্রেকিকে খাওয়ানোর জন্য।

দুটি দাঁড়কাক ওডিনের কাঁধে বসা ছিল, তারা অনেক দূরে কোথায় কী ঘটছে সেটা ওডিনের কানে কানে ফিসফিস করে শোনাচ্ছিল আর ওডিন মাঝে মাঝে মাংসের টুকরো নিয়ে তাদের খাওয়াচ্ছিল।

“তিনি তো কিছুই খাচ্ছেন না,” ফিসফিস করে বলল স্কিরনির।

“তার খাওয়ার দরকার হয় না,” বলল ফ্রে। “তিনি শুধু পান করেন। চল, আমাদের কাজ শেষ।”

“আমরা আসলে এখানে কেন এসেছি?” তারা যখন ভ্যালহালার ৫৪০ দরজার একটা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো স্কিরনির জানতে চাইল।

“কারণ আমি নিশ্চিত হতে চাইছিলাম যে, ওডিন যোদ্ধাদের সাথে ভ্যালহালায় আছেন, আর তার নিজের মহল ফাঁকা আছে।

তারা ওডিনের মহলে প্রবেশ করল। “এখানে অপেক্ষা করো,” বলল ফ্রে।

ফ্রে একা ওডিনের হলে প্রবেশ করল আর ওডিনের সিংহাসন লিসালফে গিয়ে বসল, সেখানে বসে ওডিন নয় দুনিয়ার কোথায় কী ঘটছে, সব দেখতে পায়।

ফ্রে নয় দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে তাকাল। সে দক্ষিণে তাকাল, পূর্বে তাকাল আর তাকাল পশ্চিমে, কিন্তু সে যা খুঁজছে, সেটা দেখতে পেল না।

কিন্তু সে যখন উত্তরে তাকাল, তার জীবনে সে যা খুঁজছে, সেটা দেখতে পেল।

স্কিরনির তার মনিবের জন্য দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। ফ্রের চেহারার দিকে তাকিয়ে স্কিরনির ভয় পেয়ে গেল, নিজের মনিবের চেহারায় এমন অনুভূতির ছাপ সে আর কখনো দেখেনি।

তারা দুজন কেউ কোনো কথা না বলে ওডিনের মহল ত্যাগ করে রথের দিকে চলল।

ফ্রে রথ চালিয়ে তার বাবা নর্ডের প্রাসাদে ফেরত গেল, কিন্তু সে কারো সাথেই কোনো কথা বলল না, না তার সমুদ্র দেবতা পিতা নর্ডের সাথে, না তার মাতা স্কাডির সাথে। সে তার মুখ অমাবশ্যার মতো কালো করে নিজের রুমে গিয়ে ঢুকল, সেখান থেকে আর বেরুল না।

তৃতীয় দিন নর্ড স্কিরনিরকে ডেকে পাঠাল

“ফ্রে এখানে তিন দিন তিন রাত আছে,” বলল নর্ড, “কিন্তু সে কিছুই খায়নি এমনকি কিছু পান পর্যন্ত করেনি।”

“আমরা কি তাকে কোনোভাবে মনোকষ্ট দিয়েছি?” জানতে চাইল নর্ড, “আমার পুত্র, খুবই ভদ্র ছেলেটা, যে সর্বদা নম্র ভাষায় বুদ্ধিদীপ্ত কিছু না কিছু বলত, কদিন ধরে কোনো কথাই বলছে না, শুধু আমাদের দিকে রাগী চোখে তাকায়। তাকে আমরা কীভাবে কষ্ট দিলাম?”

“আমি জানি না,” বলল স্কিরনির।

“তাহলে,” বলল নর্ড, “তুমি তার কাছে যাও আর জিজ্ঞেস করো তার কী হয়েছে। কেন সে এত রাগ হয়েছে যে, আমাদের সাথে কথাই বলছে না?”

“আমার যাওয়া উচিত হবে না,” বলল স্কিরনির, “কিন্তু আমি আপনার নির্দেশ অস্বীকার করতে পারব না, মহামান্য নর্ড। সে এমনই এক অদ্ভুত আর খারাপ মেজাজে আছে, আমি ভয় পাচ্ছি, আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে না কিছু করে বসে।”

“তাকে জিজ্ঞেস কর,” বলল নর্ড, “তার জন্য যা পারো করো। সে তো তোমার মনিব।”

শুভ্র এলফ স্কিরনির গিয়ে দেখল ফ্রে একা একা দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখ গম্ভীর আর বিষণ্ণ, স্কিরনির দ্বিধান্বিত হলো কী বলবে তাই ভেবে।

“ফ্রে,” ডাকল স্কিরনির।

ফ্রে কোনো জবাব দিল না।

“ফ্রে? আপনার কী হয়েছে? আপনাকে রাগান্বিত দেখাচ্ছে, মনমরাও লাগছে। কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে। কী হয়েছে আমাকে খুলে বলুন।”

“আমি শাস্তি পাচ্ছি,” বলল ফ্রে, তার কণ্ঠ উদাস আর বিষণ্ন শোনাল। “আমি বিশ্বপিতার সিংহাসনে গিয়ে বসেছিলাম, আর পৃথিবীর নানা দিকে তাকিয়েছিলাম। আমি ভাবতাম, ওডিনের সিংহাসনে বসার অধিকার আমার রয়েছে। সেই বসাই আমার জন্য কাল হলো, আমার জীবন থেকে সুখ জিনিসটা চিরজীবনের জন্য চলে গেছে। আমি আমার অপরাধের শাস্তি পেয়েছি আর পেয়ে যাচ্ছি।”

“মনিব,” বলল স্কিরনির, “আপনি সেখানে কী দেখেছেন?”

ফ্রে চুপ করে থাকল, স্কিরনির ভাবল ফ্রে বুঝি আবার ভাবনায় ডুবে গেল। কিন্তু কিছু সময় পর ফ্রে আবার কথা বলে উঠল, “আমি উত্তরে তাকিয়েছিলাম, সেখানে আমি একটা বাড়ি দেখতে পেয়েছি, একটা চমৎকার বাড়ি, আর সেখানে আমি এক নারীকে দেখেছি। এমন নারী আমি কখনো দেখিনি। তার মতো আর কেউ নেই। তার রূপের আলোয় চতুর্দিক আলোকিত হয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল তার উপস্থিতিতে দুনিয়াটা অনেক উজ্জ্বল আর সুন্দর। আমি অন্যদিকে তাকালাম, ফিরে তাকিয়ে তাকে আর দেখতে পেলাম না। মনে হলো আমার দুনিয়াটা অন্ধকার আর শূন্য হয়ে গেছে।”

“কে সেই নারী?” জানতে চাইল স্কিরনির।

“সে এক দানবী। তার পিতা জিমির, সমতলের দানব আর মাতা পাহাড়ি দানবী ওরবদা।”

“আর সেই সুন্দরী নারীর কী নাম?”

“তার নাম জার্ড,” বলেই ফ্রে আবার চুপ মেরে গেল।

স্কিরনির বলল, “আপনার জন্য আপনার বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। আমি কি আপনার জন্য কিছু করতে পারি?”

“তুমি তার কাছে আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাও, তার জন্য আমি আমার সবকিছু দিতে রাজি। তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। তাকে আমার স্ত্রী করে নিয়ে এসো, তার পিতা যে প্রস্তাব করবে, তাতেই আমি রাজি। আমি তোমাকেও উত্তম পুরস্কার দেব।”

“আপনি কি একটু বেশিই আশা করে ফেলছেন না?” বলল স্কিরনির।

“আমি তার জন্য যেকোনোকিছু করতে প্রস্তুত,” বলল ফ্রে দৃঢ়ভাবে।

স্কিরনির মাথা ঝোঁকাল, “আপনার জন্য কাজটা আমি করব,” বলে একটু কী যেন ভাবল, “ফ্রে, আমি কি আপনার তলোয়ারটা দেখতে পারি?”

ফ্রে তার তলোয়ারটি খাপ থেকে বের করল, আর স্কিরনিরকে সেটি দেখতে দিল। “এই তলোয়ারের মতো আর কোনো তলোয়ার দুনিয়ায় নেই। এটার হাতল কেউ ধরতে হয় না, এটা নিজেই যুদ্ধ করতে পারে। এটা সবসময় তোমাকে রক্ষা করবে। অন্য কোনো তলোয়ার, সেটা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, এর রক্ষাব্যূহ পেরিয়ে তোমার কাছে পৌঁছাতে পারবে না। লোকেরা এটাও বলে যে, সুরটারের আগুনের তলোয়ারের বিরুদ্ধেও এটি টিকে থাকতে পারবে।” স্কিরনির কাঁধ ঝাঁকাল, “এটা একটা চমৎকার তলোয়ার। আমি যদি আপনার ইচ্ছে পূরণ করে জার্ডকে আপনার কাছে নিয়ে আসতে পারি, এই তলোয়ারটি আমাকে পারিশ্রামিক হিসেবে দিতে হবে।”

ফ্রে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল। সে স্কিরনিরকে তার তলোয়ার আর একটা ঘোড়া দিল।

স্কিরনির উত্তর দিকে রওনা হলো। চলতে চলতে একসময় সে গিমিরের বাড়িতে পৌঁছাল। সে একজন অতিথি হিসেবে বাড়িতে প্রবেশ করল আর সে কে আর কে তাকে পাঠিয়েছে, ব্যাখ্যা করল। সে সুন্দরী জার্ডকে তার মনিব ফ্রে সম্পর্কে বলল। “তিনি দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর,” সে বলল জার্ডকে। “তিনি বৃষ্টি, আবহাওয়া আর রৌদ্রকিরণের দেবতা। তিনি মিডগার্ডের লোকেদের ভালো ফসল এবং শান্তিপূর্ণ দিন ও রাত উপহার দেন। তিনি মানব জাতির সুখ-সমৃদ্ধির দিকে খেয়াল রাখেন। সবাই তাকে ভালোবাসে আর পূজা করে।

সে জার্ডকে ফ্রের সৌন্দর্য আর শক্তিমত্তার কথা বলল। সে ফ্রের বুদ্ধিমত্তার কথা বলল। সবশেষে সে জার্ডকে বলল ফ্রে তাকে কেমন ভালোবেসে ফেলেছে, কীভাবে তার একনজর দর্শনে সে পাগলপারা হয়েছে, কীভাবে সে নাওয়া- খাওয়া-ঘুম বাদ দিয়ে তাকে স্ত্রীরূপে পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।

শুনে জার্ড মুচকি হাসল, আর তার চোখে খুশির ঝিলিক দেখা গেল।

“তাকে বলো আমি রাজি,” বলল জার্ড। “তাকে বলো, আজ থেকে নয় দিন পর বারির দ্বীপে আমি তাকে বিবাহ করার জন্য কনে হিসেবে তৈরি থাকব। যাও, আর তাকে গিয়ে বলো।”

স্কিরনির নর্ডের প্রাসাদে ফিরে এলো।

সে তার ঘোড়া থেকে নামার আগেই দেখল, ফ্রে তার জন্য অপেক্ষায় আছে। তাকে আরো ফ্যাকাশে আর উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।

“কী খবর নিয়ে এসেছ?” জানতে চাইল সে, “আনন্দের খবর নাকি দুঃখের?”

“আজ থেকে নয় দিন পর, বারির দ্বীপে সে আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে,” বলল স্কিরনির।

“তাকে ছাড়া একদিনই আমার কাছে অনেক দীর্ঘ মনে হয়, দুই দিন মানে আরো দীর্ঘ সময়। তাকে ছাড়া আমি কেমন করে তিন দিন কাটাব? চার দিন তো আমার কাছে এক মাসের মতো দীর্ঘ সময় মনে হবে। আর তুমি আমাকে নয় দিন অপেক্ষা করতে বলো?”

স্কিরনির তার মনিবের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাল।

নয় দিন পর, বারির দ্বীপে, জার্ড আর ফ্রে পরস্পরের দেখা পেল, তারা একটা বাতাসে দোলায়মান ফলন্ত বার্লি খেতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলো। জার্ড ছিল ফ্রের স্বপ্নের মতোই সুন্দর, কমনীয় আর মিষ্টিভাষী, যেমনটা ফ্রে আশা করেছিল। তাদের বিবাহটা ছিল স্বর্গীয় এবং অনেকে বলেন, তাদের ছেলে ফিওলনির সুইডেনের প্রথম রাজা হয়েছিল।

ফ্রের অত্যাশ্চার্য তলোয়ার, যেটি নিজে নিজেই যুদ্ধ করতে পারত, সেটি স্কিরনির নিয়ে নিল, ফ্রে তাকে সেটা দিয়ে দিয়েছিল। স্কিরনির সেটি আলফহাইমে নিয়ে গেল।

সুন্দরী জার্ডের সাহচর্যে ফ্রের জীবনের শূন্যতা পূরণ হলো, তার হৃদয়ও পূর্ণতা পেল। ফ্রে তার তলোয়ারটির জন্য একটুও মন খারাপ করল না, আর সে নতুন একটি তলোয়ারও সেটির স্থানে রাখল না। যখন যে দানব বেলির সাথে যুদ্ধ করেছিল, সে একটা পুং হরিণের শিং দিয়ে তাকে বধ করেছিল। ফ্রে ছিল খুবই শক্তিশালী, সে খালি হাতেই যেকোনো দানবকে পরাস্ত করতে পারত।

তবুও, তলোয়ারটি দিয়ে দেওয়া তার উচিত হয়নি।

রাগনারক আসছে। যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে আর মুসপেলের কালো শক্তিরা যুদ্ধযাত্রায় যাবে, ফ্রের মনে হবে, তার কাছে তলোয়ারটি থাকলে ভালো হতো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *