৭
যতদিন ডালিয়া মামা বাড়িতে ছিল ততদিন শফিকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারে নি। মামাবাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরে এসেও শফিকে মন থেকে সরাতে পারছে না। মামার মুখে শফি খুব ধার্মিক শোনার পর থেকে ভেবেছে সেও ধার্মীক হবে। তাই ঢাকায় এসে ধার্মীক হবার সাধনা করছে। সেই সাথে শফির চিন্তা তাকে পাগল করে তুলেছে। ভালো করে পড়াশোনা করতে পারছে না, ঘুমাতে পারছে না, খেতেও পারছে না। ঘুমাবার সময়। চোখ বন্ধ করলেই মনের পাতায় শফির ছবি ভেসে উঠে। তার চোখের দৃষ্টি প্রেম সাগরে সাঁতার কাটার জন্য ডাক দেয়। তখন তার তনুমনুতে আনন্দের শিহরণ বইতে থাকে। মহসিন ভাইরের ফাঁইন্যাল পরীক্ষার পর তার সঙ্গে বিয়ে হবার কথা পাকা হয়ে আছে জেনেও শফিকে মন থেকে তাড়াতে পারছে না। এক এক সময় ভাবে, কী ঝকমারি করে এবারে মহসিন ভাইয়ের সঙ্গে তাদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। যদি না যেত, তা হলে শফি নামে ছেলেটার সঙ্গে দেখাও হত না, আর তার দেহদৌষ্ঠব ও চোখের দৃষ্টি আমাকে পাগলও করত না। হঠাৎ তার মনে হল, আচ্ছা আমি যে শফিকে নিয়ে এত চিন্তা করছি, সেও কী আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে? তখন তার মন বলে উঠল, নিশ্চয় করছে। তা না হলে মোবাইল সেট নিতে এসে কেন বারবার আমার মুখের দিকে চেয়ে দেখেছে? আমার বিশ্বাস সেও আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে। শুধু তাই নয়, আমাকে পাওয়ার জন্য কোনো না কোনো প্ল্যান প্রোগ্রামও করেছে। কথাটা ঠিক কিনা তা তার মোবাইল নাম্বারে রিং করে দেখলেই হয়। কথাটা মনে হতে ভাবল, এতদিন কথাটা মনে হয়নি কেন? মনকে বলল, ফোন করলে যদি হিতে বিপরীত হয়? মন বলল, ওটা তোর দুর্বলতা, ফোন করেই দেখ। যা ভাবছিস তা কিছুই নয়।
ডালিয়া রাতে ঘুমাবার সময় এইসব চিন্তা করছিল। দেয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল, রাত পৌনে বারটা। ভাবল, পাড়াগাঁয়ে দশটা এগারটা বাজলেই গভীর রাত মনে হয়। পৌনে বারটা পর্যন্ত কী শফি জেগে আছে। আর যদি জেগেও থাকে, ধার্মিক ছেলে হিসাবে আমার ফোন পেলে কী কথা বলবে অথবা অন্য কিছু কী ভাববে? মন বলল, যাই ভাবুক না কেন, তুই ফোন কর। দোনো মনো করে ডালিয়া ফোন করল।
.
শফি প্রতিদিন রাত দশটায় খাওয়া দাওয়া করে ঘন্টা দেড় দুই পৃথিবীর সমস্ত ইসলামিক রাষ্ট্রপতিরা কেন একতায় আসতে পারছে না তার কারণের উপর একটা থিসিস লিখে। আজও লিখছিল। মোবাইল বেজে উঠতে ঘড়ির দিকে চেয়ে ভাবল, এতরাতে কে আবার ফোন করল? অচেনা নাম্বার দেখে মনে করল, হয়তো কেউ রং নাম্বারে ফোন করেছে। কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল, কে আপনি? এতরাতে ফোন করেছেন কেন?
শফির গলাচিনতে পেরেও ডালিয়া সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা কি শফি সাহেবের নাম্বার?
ডালিয়ার সঙ্গে মোবাইল সেট হারিয়ে যাওয়া ও সেটটা নিতে গিয়ে অল্পক্ষণ আলাপ হলেও শফি তার গলা চিনতে পারল। ভাবল, এতদিন পর এতরাতে ফোন করল কেন? তা হলে কী আমার অনুমানই ঠিক? কথাটা মনে হতে সারা শরীরে আনন্দের স্রোত বইতে শুরু করল। কিছু না বলে চুপ করে রইল।
কী হল, কিছু বলছেন না কেন?
আপনি নিশ্চয় ডালিয়া?
শফির মুখে তার নাম শুনে ডালিয়ার হার্টবিট শতগুন বেড়ে গেল। ভাবল, শফি হার্ট বিটের শব্দ শুনতে পাচ্ছে না তো? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সামলে নিয়ে কাঁপা গলায় বলল, কী করে বুঝলেন?
আল্লাহর মেহেরবানীতে আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি। কেমন আছেন?
বললে বিশ্বাস করবেন?
অফকোর্স। কারণ আল্লাহর মুমিন বান্দা-বান্দি কখনও মিথ্যা বলে না।
আমি এখনও আল্লাহর মুমিন বান্দি হতে পারিনি।
হওয়ার যখন চেষ্টা করছেন তখন আল্লাহ আপনাকে খুব শিগ্রী মুমিন বান্দি হওয়ার তওফিক দেবেন।
ডালিয়া অবাক কণ্ঠে বলল, আমি চেস্টা করছি আপনি জানলেন কেমন করে?
এক্ষুনি বললাম না, আল্লাহর রহমতে আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি? এবার বলুন, এতরাতে এই হতভাগাকে কেন ফোন করেছেন?
আপনি ও আপনার চোখের দৃষ্টি আমার সবকিছু কেড়ে নিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছেন একথা বলতে না পেরে ডালিয়া অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।
শফি বলল, আপনি সারারাত চুপ করে থাকলে, আমিও কিন্তু আপনার কথা শোনার জন্য ফোন ধরে সারারাত অপেক্ষায় থাকব।
আরও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ডালিয়া কান্নাজড়িত স্বরে বলল, আপনি আমার মনে প্রেমের যে তুফান বইয়ে দিয়েছেন। তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে শফি বলল, আপনার মুখ থেকে এই কথা শোনার জন্য এতদিন প্রহর গুনেছি। আল্লাহ আজ আমার আশা পূরণ। করলেন। সেজন্য তাঁর পাক দরবারে আবার হাজারবার শুকরিয়া জানাচ্ছি।
শফিও তাকে ভীষণ ভালবাসে বুঝতে পেরে ডালিয়ার হার্টবিট আবার বেড়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সামলে নিয়ে বলল, আপনার কথা শুনে তুফানের গতি আরও অনেক বেড়ে গেছে। সহ্য করার উপায় বলে দিন।
শফি বলল, ইংরেজিতে একটা প্রবাদ বাক্য আছে, লাভ অলওয়েজ টিয়ার্স,” কথাটা নিশ্চয় জানেন। এবার বিখ্যাত উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের একটা বয়েৎ বলছি,
জফা জো ইস্ক মে হোতা হ্যায়,
উহ জাফা হি নেহী,
সিতম না হোতো মুহব্বত মে
কুছ মজা হী নেহী।
এই বয়েতের অর্থ জানেন?
জি, না। আপনি বলে দিন।
এর অর্থ হল—
প্রেমে পড়লে যে জুলুম হয়,
সেটা জুলুমই নয়।
প্রেমে পড়ে অত্যাচারিত না হলে
কোনো মজাই পাওয়া যায় না
এবার নিশ্চয় তুফানের বেগ সহ্য করতে পারবেন?
জুলুম ও সীতম সহ্য করার ক্ষমতা কি সবার থাকে?
থাকে, তবে কম আর বেশি।
আমার খুব কম আছে। তা দিয়ে তুফানের বেগ সহ্য করা সম্ভব নয়।
প্রেমের ব্যাপারে অসম্ভবকে সম্ভব করতেই হয়। কারণ প্রেমের সমুদ্র পাড়ি দিতে হলে অনেক রকম জুলুম ও সীতম সহ্য করতে হয়। যারা সত্যিকার প্রেমিক প্রেমিকা তারা কোনোরকম জুলুম ও সীতমকে ভয় পায় না। বরং সানন্দে সহ্য করে যায় প্রেমাস্পদকে পাওয়ার জন্য। সেটা জাগতিক প্রেম হোক অথবা আধ্যাত্বিক প্রেম হোক। এবার একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।
করুণ।
করলে মাইন্ড করবেন না বলুন।
না, করব না।
মহসিনের ফাঁইন্যাল পরীক্ষার পর তার সঙ্গে আপনার বিয়ে হবে। এতে আপনাদের ও ওনাদের কারও এতটুকু মতবিরোধ নেই, তবু কেন এই বিপদ সংকুল পথে পা বাড়ালেন?
ডালিয়া খুব অবাক কণ্ঠে বলল, এসব কথা জানলেন কেমন করে?
যেমন করে জানি না কেন, কথাটা তো সত্য?
হ্যাঁ, সত্য।
তা হলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
আমি পা বাড়াইনি, আপনি বাড়াতে বাধ্য করেছেন।
জেনেও না জানার ভান করে শফি অবাক কণ্ঠে বলল, উদোরপিন্ডী বুদোর ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কেন?
কথাটা ঠিক বলেন নি।
তা হলে ঠিক কথাটা বলুন।
“লাভ এট ফার্স্ট সাইট।”
কিন্তু যারা ফাস্ট সাইটে লাভে পড়ে, তাদের সেই লাভ খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বলছিলাম, এই পথ থেকে সরে দাঁড়ান আপনার উচিত।
এ কথাটাও ঠিক বলেন নি।
তা হলে এবার ও ঠিক কথাটা বলুন।
আলাপের শুরুতে বলেছি না আপনিও আপনার দৃষ্টি আমার সবকিছু কেড়ে নিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছেন?
তা অবশ্য বলেছেন।
এখন আরও বলছি শুনুন। আপনি আমাকে ঘায়েল করে প্রেমের সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছেন। সেই সমুদ্রে কতদিন সাঁতার কাটতে পারব জানি না। আপনি যদি উদ্ধার না করেন, তা হলে হয়তো ক্লান্ত হয়ে একদিন তলিয়ে যাব।
ছি ডালিয়া, এমন কথা মুখে উচ্চারণ করাও পাপ।
মূমুর্ষজনের পাপ পুন্যের জ্ঞান থাকে না। একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন!
জানা থাকলে নিশ্চয় দেব।
মহসিন ভাই ও আমার ব্যাপারটা জেনেও কেন এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন?
এটা আমার তক্বদির।
আমিও যদি ঐ একই কথা বলি?
শফি কিছু না বলে অনেক্ষণ চুপ করে রইল।
চুপ করে আছেন কেন? আমার কথার উত্তর দিন।
আপনি ঠিক কথা বলেছেন, তারপর শফি আবার বলল, এবার আমাদের লাইন কেটে দেয়া উচিত।
কেন? আমার সঙ্গে কথা বলতে আপনার ভালো লাগছে না বুঝি?
সারারাত, সারাদিন, সপ্তাহ, মাস ও বছরের পর বছর যদি আপনার সঙ্গে কথা বলি তবুও পিয়াস মিটবে না।
তবে লাইন কেটে দেয়ার কথা বললেন কেন?
ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখুন কটা বাজে।
দেড়টা বেজে গেছে দেখে ডালিয়া বলল, সরি, এক্সট্রিমলি সরি, সত্যিই আর সময় নেয়া উচিত নয়। তবু আর একটা মাত্র কথা বলে লাইন কেটে দেব।
বলুন,
লেঠেল সর্দার মোবারককে চেনেন?
না, চিনি না। হঠাৎ তার কথা বলছেন কেন?
আমার মামা সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান তাকে অনেক টাকা দিয়ে বলেছেন, আপনার হাত পা ভেঙ্গে লুলা করে দিতে। আপনি খুব সাবধানে থাকবেন।
শফি হেসে উঠে বলল, তাই নাকি?
ডালিয়া বলল, হ্যাঁ, তাই। আমি খুব বিশ্বস্তসূত্রে কথাটা জানতে পেরেছি। তারপর জিজ্ঞেস করল, হাসলেন কেন?
হাসবার কারণ আছে তাই হাসলাম।
কারণটা বলবেন তো?
এখন বলা যাবে না। তবে কিছুদিনের মধ্যে এমনই জানতে পারবেন। তারপর বলল, সাবধান করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আর সময় দিতে পারছি না। রাখি আসোলামু আলাইকুম।
ডালিয়া ওয়া আলাইকুম সালাম বলে বলল, মাঝে মাঝে ফোন করার অনুমতি চাই।
দিলুম বলে শফি লাইন কেটে দিল
.
চাচা জাকির হোসেনের সঙ্গে শফি কয়েকদিন ঘুরে ঘুরে বাবার জমি জায়গা, আগান-বাগান, পুকুর-ডোবা দেখে বলল, এত দেখছি প্রচুর বিষয় সম্পত্তি। প্রতি বছর এসব থেকে আয়ও হয় সেরকম। মনে হয় দাদির কাছে বহু টাকা পয়সা জমেছে, তাই না চাচা?
জাকির হোসেন ভাইপোর কথা শুনে প্রমাদ গুণলেন। ভাবলেন, ও যদি সব কিছু একবছর দেখাশোনা করে, তা হলে ফসল বিক্রি করে কত টাকা মেরেছি ধরা পড়ে যাবে।
ওনাকে চুপ করে থাকতে দেখে শফি বলল, আমার কথার জবাব দেবেন না?
জাকির হোসেন তাড়াতাড়ি বললেন, তা তো জমেছেই। কত জমেছে জানি না, তুমি তোমার দাদিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিও।
চাচাকে চুপ করে ভাবতে দেখে শফি যা বোঝার বুঝে গেল। বলল, ঠিক আছে, তাই জেনে নেব।
.
একদিন মাতব্বর সাহেব বেঠকখানায় কয়েকজন লোকের সঙ্গে শফির ব্যাপারে আলাপ করছিলেন। তাকে আসতে দেখে একজন বলল, ঐ তো শফি আসছে।
মাতব্বর সাহেব সেদিকে তাকিয়ে তাদেরকে চলে যেতে বললেন। তারপর শফি কাছে এলে হাসি মুখে বললেন, দাদুর কথা তা হলে মনে আছে?
শফি সালাম বিনিময় করে বলল, নাতি কী দাদুর কথা ভুলতে পারে? কেমন আছেন বলুন।
আল্লাহ যে অবস্থায় রেখেছেন তাতেই শোকর আদায় করছি। তারপর তাকে বসতে বলে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
তা বাবার জমি জায়গা চাষবাস করবে নাকি?
শুধু ফসলী জমিগুলো চাচাকে ভাগে করতে বলেছি। খরচ বাদে অর্ধেক ফসল দেবেন। আর অন্যান্য সবকিছু আমি দেখাশোনা করব।
মাতব্বর সাহেব বললেন, ভালো- খুব ভালো।
আচ্ছা দাদু, লেঠেল সর্দার মোবারককে চেনেন?
মাতব্বর হেসে উঠে বললেন, তাকে আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ চেনে। তা হঠাৎ তার কথা জিজ্ঞেস করলে কেন?
শফি বলল, আমিও শুনেছি। তাই জিজ্ঞেস করলাম। উনি খুব বিখ্যাত লেঠেল?
হ্যাঁ, ওর বাবাও খুব বিখ্যাত লেঠেল ছিল। মোবারকের মতো লেঠেল পাঁচ দশ গ্রামে নেই। শুধু তাই নয়, আগ্নেয় অস্ত্র চালাতেও ওস্তাদ। আজ পর্যন্ত লাঠিখেলায় ও আগ্নেয় অস্ত্র চালনায় কেউ হারাতে পারেনি।
আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে মাঝে মধ্যে লাঠিখেলা ও আগ্নেয়অস্ত্রের প্রতিযোগীতা হয়?
হ্যাঁ, হয়। প্রতি বছর সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান তাদের গ্রামে প্রতিযোগীতার আয়োজন করেন। প্রতিযোগীতায় যে জীতে তাকে দশ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। অবশ্য এই পর্যন্ত মোবারকই প্রতি বছর পুরস্কার পেয়ে আসছে। কারণ কেউ-ই তাকে হারাতে পারেনি।
এ বছর আমাদের গ্রামে আপনি প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করবেন।
কথাটা শুনে মাতব্বর সাহেব খুব অবাক হয়ে শফির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শফি বলল, মনে হচ্ছে আমার কথা শুনে আপনি খুব অবাক হয়েছেন?
হ্যাঁ, হয়েছি। কী ব্যাপার বলতো ভাই, হঠাৎ এরকম কথা বললে কেন?
বলব, তবে তার আগে আপনি বলুন, যা বললাম করবেন?
করতে পারব না কেন? কিন্তু এসব করতে গেলে অনেক টাকার দরকার। চেয়ারম্যান করেন তার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। আমি কেন শুধু শুধু এতটাকা খরচ করতে যাব? তা ছাড়া এটা অপব্যয়। আল্লাহ কুরআন পাকে বলেছেন, “নিশ্চয় অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।” [সূরা-বনি ইসরাইল, আয়াত-২৭, পারা-১৫]
তা আমিও জানি এবং মানিও। কিন্তু এই আয়োজন করার পিছনে বিশেষ কারণ আছে। আর এজন্য যত টাকা লাগবে আমি দেব।
তা হলে এবার নিশ্চয় কারনটা বলবে।
জি বলব,তারপর চেয়ারম্যান কীভাবে তার হাত পা ভেঙ্গে লুলা করার জন্য মোবারক লেঠেলকে ভাড়া করেছে শফি সবকিছু বলল।
মাতব্বর সাহেব কথাটা শুনে মোটেই অবাক হলেন না। বরং মৃদু হেসে বললেন, আমি তার চরিত্র জানি। ছেলের হয়ে বাপ প্রতিশোধ নিতে চান। এরকমই কিছু একটা আশা করেছিলাম; কিন্তু তুমি একথা জানলে কী করে?
শফি বলল, আমি খুব বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি?
কিন্তু চেয়ারম্যান অত কাঁচা লোক নন যে, ওনার প্ল্যান প্রোগ্রাম অন্য কেউ জানতে পারবে। তা ছাড়া শোনা কথা যাচাই না করে বিশ্বাস করতে নেই। এটা হাদিসের কথা।
তা আমিও জানি। যার কাছ থেকে জেনেছি, সে জীবন গেলেও মিথ্যা বলতে পারবে না।
তার পরিচয় বল।
ডালিয়ার কথা বলা ঠিক হবে কিনা শফি চিন্তা করতে লাগল।
চুপ করে আছ কেন? তার পরিচয় বলবে তো?
বিশেষ কারণে তার পরিচয় বলতে পারছি না। সেজন্য মাফ চাইছি। তবে আমি হ্যাঁন্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর কথাটা সত্য।
ঠিক আছে তার পরিচয় বলার অসুবিধা থাকলে বলো না; কিন্তু তুমি কি মোবারক লেঠেলের সঙ্গে পারবে? না পারলে সে তো এই সুযোগে তোমাকে মেরে হাত পা লুলা করে দেবে? তার শরীর স্বাস্থ্য তোমার দ্বিগুণ, তোমার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। তা ছাড়া তোমার মা, দাদি, চাচা এবং তোমার নানাবাড়ির কারও কাছে মুখ দেখাতে পারব না।
শফি বলল, আপনি ওসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। আমি নিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ আমি কামিয়াব হব। আর মোবারক লাঠিয়াল ভবিষ্যতে যেন কখনও কোনো প্রতিযোগীতায় নামতে না পারে এবং লেঠেলগিরী করে কারও ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যবস্থাও করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আপনি শুধু দোয়া করবেন।
তাতো করবই কিন্তু তবু ভাই আমার বিবেক সাড়া দিচ্ছে না। আল্লাহ করুক যদি তুমি কামিয়াব হতে না পার, তা হলে তার পরিণতি কী হবে ভেবে পাচ্ছি না।
শফি মাতব্বরের দু’পা জড়িয়ে ধরে বলল, তদিরের উপর কারও হাত নেই। তবু আবার বলছি, ইনশাআল্লাহ আমি কামিয়াব হব। আপনি কি চান, মোবারক লেঠেল গোপনে আচানক হামলা করে আমার হাত পা লুলা করে দিক?
না, তা চাই না বলে মাতব্বর সাহেব তার হাত ধরে তুলে বসতে বলে বললেন, ঠিক আছে, তোমার কথামতো সবকিছু কবর, তবে তুমি ওর সঙ্গে লড়বে সবার শেষে, তুমি যে লড়বে, সে কথা প্রথমে প্রচার করা হবে না।
শফি বলল, বেশ, তাই হবে। এবার হিসাব করে বলুন, কত টাকা লাগবে। দু’একদিনের মধ্যে দিয়ে যাব। আর একটা কথা, আপনি কি রবিউলকে চেনেন?
কোন রবিউল? আমাদের গ্রামে তো তিন পাড়ায় তিনটে রবিউল আছে।
আমি চৌধুরী পাড়ার জহীরুদ্দিন চাচার ছেলে রবিউলের কথা বলছি। ও কলেজে প্রফেসারী করছে নিশ্চয় শুনেছেন?
হ্যাঁ, শুনেছি। ওদের বাপ চাচা সবাইকে চিনি।
ঐ রবিউল আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। ও যেন এই লড়াই-এর কথা জানতে না পারে। আমি মোবারক লাঠিয়ালের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করব শুনলে কিছুতেই আমাকে তা করতে দেবে না।
কিন্তু ঘোষক যখন ঘোষণা দেবে তখন তো জানতে পারবে এবং বাধাও দেবে।
তা জানুক, প্রতিযোগীতায় নামার সময় জানলে ও বাধা দেয়ার চান্স পাবে না।
মাতব্বর সাহেব বললেন, বেশ তাই হবে। আর তুমি যে টাকা পয়সার হিসাবের কথা বললে, সেসব পরে করা যাবে। আগে প্রতিযোগীতা হোক তারপর না টাকার হিসাব।