জানলা পড়ল মাথায়
ঘটনাটা সত্যি ঘটেছিল কি না তা আমি হলফ করে বলতে পারব না, কারণ গল্পটা আমি গঙ্গারামের কাছে শুনেছিলাম।
গঙ্গারামের এক সহকর্মী বাগুইআটিতে একটি বাড়ি করেছেন। অফিস থেকে গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়ে কষ্টেসৃষ্টে বাড়িটি বানিয়ে দিয়েছেন এক ঠিকাদার।
গৃহপ্রবেশের নিমন্ত্রণ গঙ্গারামও পেয়েছিল, সহকর্মী সুকুমারবাবু গঙ্গারামের মুখোমুখি উলটো টেবিলে বসেন, সেই থেকে হৃদ্যতা, বন্ধুত্ব।
গৃহপ্রবেশের দিন আত্মীয়-বন্ধু অনেকেই এসেছেন, ঠিকাদারবাবুও। তাঁকে দেখে সবাই মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন, এমনকী সুকুমারবাবু পর্যন্ত।
বাড়িটা বড় দায়সারাভাবে বানিয়েছেন। দোতলায় দক্ষিণমুখী বেশ বড় একটা ঘর রয়েছে। সেই ঘরে বন্ধুদের নিয়ে গেলেন সুকুমারবাবু। ঘরের সামনের দিকের দুটো জানলাই বন্ধ। কাঁচা রং শুকিয়ে আটকে গিয়েছে। অনেক টানাটানির পর সুকুমারবাবুর কেমন রোখ চেপে গেল। সেখানে ঠিকাদারবাবু দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে সমস্যাটা বলতে তিনি নির্লিপ্তভাবে বললেন, ‘আপনার টাকা কম হয়ে গেল, ভাল রং দিতে পারলাম না, শস্তার রং কাঁচা অবস্থায় লেগে গিয়ে একটু টাইট হয়, ভাল করে শুকোলেই খুলে যাবে। তবে খুব টানাটানি করবেন না। সিমেন্টও কাঁচা রয়েছে।’ এসব কথা সুকুমারবাবুর কানে ঢুকল না। একটু কড়াভাবে তিনি সিঁড়ির এক পাশ থেকে একটা আধলা ইট তুলে নিয়ে আবার দোতলার ঘরে ঢুকলেন। সে-ঘরে এখনও নিমন্ত্রিতদের জটলা। জানলা বন্ধ ঘরের মধ্যে গুমোট বলে, ঘরের বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
এদিকে ঘরের মধ্যে এখনও একজন জানলা ধরে টানাটানি করছে। তাকে সরিয়ে দিয়ে সুকুমারবাবু হাতের ইটটা দিয়ে পর পর দু’বার সর্বশক্তি দিয়ে জানলার পাল্লায় দুমদাম আঘাত করলেন, মনোভাব, ভাঙে তো ভাঙুক।
জানলা ভাঙল না, খুললও না।
কিন্তু তার চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটল, দেয়াল থেকে খুলে গিয়ে জানলাটা অনেকটা ইট, পলেস্তারা সমেত দড়াম করে নীচে পড়ল।
দুর্ভাগ্যক্রমে ওই সময়ে ওই জানলার সরাসরি নীচে ঠিকাদার ভদ্রলোক আপনমনে সিগারেট টানছিলেন। জানলা তাঁর মাথায় পড়ে। ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
এরপরে কী হয়েছিল গঙ্গারাম আমাকে বলেনি। এ-গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কেও আমি কিছু বলতে পারব না। গৃহপ্রবেশ সমাসবদ্ধ পদ, গৃহে প্রবেশ গৃহপ্রবেশ, বোধহয় তৎপুরুষ সমাস।
অবশ্য গৃহপ্রবেশ মানে গৃহে প্রবেশ—একথার কোনও মানে নেই, ভারী অস্পষ্ট। স্পষ্ট কথাটা হল গৃহপ্রবেশ মানে নবনির্মিত গৃহে গৃহমালিকের বসবাসের জন্য প্রথম প্রবেশ।
পাঁজিতে গৃহপ্রবেশের তারিখ থাকে। বছরে অন্তত দশ-বারো দিন থাকে। এ ছাড়া গৃহারম্ভ, দেবগৃহারম্ভ, দেবগৃহ প্রবেশের তারিখ পাঁজিতে পাওয়া যায়।
মানুষ এক জীবনে আর কটা বাড়ি করে? সুতরাং নতুন ঠিকানায় প্রবেশের দিনে অনুষ্ঠান সে তো ভালই। সাহেবদেরও হাউস ওয়ার্মিং পার্টি আছে। নতুন বাড়িতে প্রবেশ করে আনন্দফুর্তি, পান-ভোজন এই উপলক্ষে পুজো তথা উৎসব সবারই পছন্দ।