জাগ্রত হৃৎপিণ্ড
সত্য! মন আমার অশান্ত— অতি, অতিশয় অশান্ত! কিন্তু কেন তোমরা আমাকে পাগল মনে করবে? ব্যাধি আমার অনুভূতিকে নষ্ট করতে পারেনি, বরং প্রখর করে তুলেছে অধিকতর। আমার শ্রবণশক্তির তীক্ষ্নতা যথেষ্ট! স্বর্গের আর মর্তের সব কিছুই আমি শুনতে পাই। কানে শুনি নরকেরও অনেক কথাই। তবু কি বলবে আমি পাগল? শোনো! কেমন শান্তভাবে গুছিয়ে গুছিয়ে আমার কথা বলব তোমাদের কাছে।
আমার মগজে এমন কথা জাগল কেন, তার কারণ নির্দেশ করা অসম্ভব। কিন্তু কল্পনাটা আমাকে ভূতের মতো পেয়ে বসেছিল— কিবা রাত্রি, কিবা দিন! উদ্দেশ্য ছিল না কিছুই, ছিল না কোনো ক্রোধের উত্তেজনা।
বুড়োকে আমি ভালোই বাসতুম। কখনো সে আমার কোনো অপকারই করেনি। কখনো তার কাছে আমি অপমানিত হইনি। তার টাকাকড়ির ওপরেও আমার কোনো লোভ ছিল না।
কিন্তু একটা কারণ আছে বোধ হয়। তার ওই চোখটা! হ্যাঁ, তাই-ই বটে, তাই-ই বটে! তার একটা চোখ দেখতে ছিল শকুনের মতো এবং তার ওপরে ছিল ছানির মতো পাতলা পর্দা। সেই চোখটা দিয়ে যখন সে তাকিয়ে দেখত আমার পানে, তখন যেন জল হয়ে যেত আমার বুকের রক্ত! ক্রমে সেটা হয়ে উঠত অসহনীয়, মনে মনে আমি স্থির করে ফেললুম, বুড়োকে মেরে একেবারে ঘুচিয়ে দেব ওই চোখের ঝঞ্ঝাট!
কারণ আর কিছুই নয়। তোমরা আমাকে পাগল ভাবছ? কিন্তু তখন আমাকে দেখলেই বুঝতে পারতে যে, কতদিকে নজর রেখে কত সাবধানে আমি কাজ হাসিল করেছি কত বড়ো চালাকের মতো! হত্যাকাণ্ডের এক হপ্তা আগে থেকেই বুড়োর সঙ্গে কী মিষ্টি ব্যবহারই করেছি!
আমরা এক বাসাতেই থাকতুম। প্রতিদিন ঠিক রাতদুপুরে তার ঘরের দরজা ঠেলে খুলতুম; কিন্তু কত যে ধীরে ধীরে, তা আর কহতব্য নয়! দরজা অল্প একটু ফাঁক করে প্রথমে আস্তে আস্তে গলিয়ে দিতুম কেবল আমার মাথাটা। সমস্ত মুখখানা ঘরের ভেতরে নিয়ে যেতে আমার সময় লাগত ঝাড়া একঘণ্টা! পাগল কখনো এত সাবধান হতে পারে?
আমার হাতে থাকত একটা চোরা লন্ঠন। দরজার কাছে দাঁড়িয়েই লন্ঠনের খুব ছোট্ট একফালি আলো খুলে ফেলতুম বুড়োর সেই শকুন-চোখের ওপরে। কিন্তু উপরি-উপরি সাত-সাতটা রাত এই কাণ্ড করেও সেই শকুন-চোখটাকে খোলা অবস্থায় পেলুম না। চোখটা বন্ধ থাকলে আমি কাজ করি কেমন করে? হতাশ হয়েও আমার কিন্তু বুড়োর ওপরে একটুও রাগ হত না, খাপ্পা হয়ে উঠতুম কেবল সেই অপয়া চোখটারই ওপরে। কেন সে বন্ধ হয়ে থাকে, কেন?
রোজ সকালেই আবার যেতুম বুড়োর ঘরে। এমন ভালোমানুষটি সেজে তার সঙ্গে মন খুলে গল্প করতুম আর মন-রাখা কথা কইতুম, ঘুণাক্ষরেও সে সন্দেহ করতে পারেনি যে, প্রতি রাত্রে ঘরে ঢুকে আমি তাকে দেখি ঘুমন্ত অবস্থায়!
তারপর অষ্টম রাত্রি! সেদিন হয়েছিলুম আমি আরও বেশি সাবধান! এমন ধীরে ধীরে ঘরের মধ্যে ঢুকেছিলুম যে, ঘড়ির মিনিটের কাঁটার গতিও ততটা মন্থর হতে পারে না। একটু-একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি— পা মাটিতে পড়ছে কি জানি না!
তবু বুঝি বুড়ো শুনতে পেলে! সে যেন হঠাৎ ধড়ফড় করে জেগে উঠল!
ভাবছ তখুনি আমি পালিয়ে এলুম? মোটেই নয়! ঘরের ভেতরে কালো পিচের মতো অন্ধকার। ঠান্ডা লাগবার ভয়ে সব জানলা বন্ধ। বুড়ো ফাঁক-করা দরজাটা দেখতে পেল না। আমি চোরা-লন্ঠনের টিনের দরজাটা খুলি-খুলি করছ —বুড়ো হঠাৎ সশব্দে বিছানার ওপরে উঠে বসে সচমকে বললে, ‘কে, কে ওখানে?’
আমি চুপ! প্রায় ঘণ্টা খানেক সেইখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম। বুড়োও নিঃসাড়, আবার শুয়ে পড়ল বলেও মনে হল না। বোধ হয় সে বসে বসে কান পেতে শুনছে!
তারপরেই বুড়ো গোঁ-গোঁ শব্দ করে উঠল। সে হচ্ছে দারুণ আতঙ্কের শব্দ! তা দুঃখ বা যাতনার ধ্বনি নয়, মানুষ মারাত্মক ভয় পেলেই চাপাগলায় এমন আর্তনাদ করে এবং সে ধ্বনি আসে একেবারে অন্তরাত্মার ভেতর থেকেই। আমি ও ধ্বনিকে ভালো করেই জানি। বহু রাত্রে— ঠিক মধ্যরাত্রে, সারা পৃথিবী যখন ঘুমন্ত, আমার আতঙ্কগ্রস্ত অন্তরাত্মার ভেতর থেকে ঠিক ওইরকম আর্তধ্বনি ও তার ভয়াবহ প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছি— আমি শুনতে পেয়েছি! হ্যাঁ, ও-ধ্বনিকে আমি খুব চিনি! বুড়োর মনের ভাব বুঝতে আমার বিলম্ব হল না।
কিছু-একটা শব্দ শুনে সেই যে সে জেগে উঠেছে, এখনও আর ঘুমোতে পারেনি। বেড়ে উঠছে— ক্রমেই বেড়ে উঠছে তার আতঙ্ক! ‘যা শুনেছি, ভুল শুনেছি’— এই বলে সে নিজের মনকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না।
কখনো ভাবছে, ‘বোধ হয় বাতাসের শব্দ। নয়তো ইঁদুররা চলাফেরা করছে। হয়তো কোথা থেকে একটা ঝিঁঝিপোকা ডেকে উঠেছে!’
কিন্তু বৃথা— বৃথা! কোনো যুক্তিতেই সে মনকে বোঝাতে পারছে না। তা পারবে কেন? মৃত্যু যে তার শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছে— কালো ছায়াপাত করেছে তার মনের ভেতরে! তাই ঘরের ভেতরে যদিও সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না, কিছু শুনতে পাচ্ছে না, তবু সে অনুভব করতে পারে আমার উপস্থিতি।
বহুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন দেখলুম, আজ রাত্রে বুড়োর চোখে ঘুম আসা আর অসম্ভব, তখন স্থির করলুম চোরা লন্ঠনের টিন সরিয়ে একফালি আলো বাইরে ফেলা দেখা যাক, ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়! তাই করলুম, কিন্তু কত, কত চুপি চুপি যে করলুম তোমরা তা আন্দাজ করতে পারবে না। বাইরে বেরিয়ে এল একগাছি লতাতন্তুর মতো সূক্ষ্ম আলোকরেখা।
এবং সে আলোককণা গিয়ে পড়ল একেবারে বুড়োর শকুন-চোখের ওপরেই!
চোখটা আজ আর বন্ধ নয়, ড্যাব-ড্যাব করে তাকিয়ে আছে! সঙ্গে-সঙ্গে খাপ্পা হয়ে উঠলুম আমি। সেই ছানির মতো পর্দা-পড়া বিশ্রী শকুন-চোখ, যা দেখলেই আমার দেহের অস্থিমজ্জার ভেতর দিয়ে বয়ে যায় কনকনে তুষারস্রোত! বুড়োর মুখ বা দেহের কিছুই আমি দেখতে পাচ্ছিলুম না, কিন্তু আলো গিয়ে পড়েছে যথাস্থানেই!
সেইসময়ে আমার কানে এল একটা শব্দ। একটা নিম্ন, চাপা, দ্রুত ধ্বনি— ঘড়িকে তুলো দিয়ে ঢেকে রাখলে যেমন শব্দ হয়। ও শব্দও আমার অজানা নয়। ও হচ্ছে বুড়োর হৃৎপিণ্ডের দুপদুপুনি! দামামা বাজলে সৈনিক যেমন চাঙ্গা হয়ে ওঠে, আমাকেও তেমনি জাগ্রত করে তুললে সেই শব্দ!
কিন্তু তখনও আমি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম মূর্তির মতো। আমার হাত একটুও কাঁপছে না, স্থির হয়ে আছে শকুন-চোখের ওপরে নিক্ষিপ্ত আলোকরেখা। ইতিমধ্যে হৃৎপিণ্ডের সেই দুপ-দুপ শব্দ বেড়ে উঠেছে ক্রমে-ক্রমে— বোধ হয় চরমে উঠেছে বুড়োর আতঙ্ক! শব্দ বাড়ছে, আরও বাড়ছে মুহূর্তে-মুহূর্তে! গোড়াতেই বলেছি, মন আমার অশান্ত। সত্যই তাই। সেই নিশুত রাত, সেই পুরাতন বাড়ির নিদারুণ স্তব্ধতার মধ্যে হৃৎপিণ্ডের সেই অদ্ভুত শব্দ আতঙ্কে আচ্ছন্ন করে তুললে আমার প্রাণমনকেও। তবুও আরও কিছুক্ষণ আমি অপেক্ষা করলুম।
কিন্তু কী মুশকিল— দুপ-দুপ দুপ-দুপ দুপ-দুপ! শব্দ যে ক্রমেই উচ্চতর হয়ে উঠছে! এইবারে হয়তো ফেটেই যাবে ওর হৃৎপিণ্ডটা! একটা নতুন দুশ্চিন্তা আমাকে করলে আক্রমণ। যদি কোনো প্রতিবেশী শব্দটা শুনতে পায়? না, আর দেরি নয়! বুড়োর শেষমুহূর্ত উপস্থিত!
প্রচণ্ড চিৎকার করে চোরা-লণ্ঠনের আবরণ সরিয়ে ফেলে এক লাফে আমি বুড়োর বিছানার কাছে গিয়ে পড়লুম। বুড়োও বিকট চিৎকার করে উঠল— কিন্তু মাত্র একবার! পরমুহূর্তেই তাকে আমি টেনে এনে মাটির ওপরে পেড়ে ফেললুম, তারপর খাটের তোষক দিয়ে তার দেহটা জড়িয়ে চেপে ধরলুম প্রাণপণে। তারপর এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট এবং আরও কয়েক মিনিট ধরে বুড়োর কলিজাটা করতে লাগল দুপ-দুপ-দুপ! শব্দ এখন হোক-গে যাক, ঘরের দেওয়াল ফুঁড়ে তা বাইরের কোনো লোকের কানে গিয়ে পৌঁছোতে পারবে না তো!
তারপর, থেমে গেল শব্দ। বুড়ো মরেছে। তোষক সরিয়ে তার বুকের ওপরে হাত রাখলুম। স্থির বুক। বুড়ো মরে কাঠ হয়ে গিয়েছে। স্তব্ধ রাত। খণ্ড-খণ্ড করে ফেললুম মৃতদেহটা। মেঝেয় ছিল কাঠের পাটাতন। তারই খানিকটা সরিয়ে দেহের অংশগুলো নীচে রেখে ওপরে আবার রেখে দিলুম পাটাতনের কাঠ। তারপর এমন সাবধানে কাজ করলুম যে, ঘরের কোথাও রক্তের ছিটেফোঁটা পর্যন্ত রইল না। দেখছ তো, কী চালাক আমি? হাঃ হাঃ হাঃ!
ঘড়ি বেজে উঠল ঢং ঢং ঢং ঢং! রাত চারটে। আমার সব কাজ সমাপ্ত— আর আমাকে পায় কে?
ঘন ঘন সদর দরজার কড়া নাড়তে লাগল অত্যন্ত জোরে-জোরে!
নিশ্চিন্ত মনেই নীচে নেমে গিয়ে খুলে দিলুম সদর দরজা। পুলিশের লোক— ইনস্পেকটর ও পাহারাওয়ালা। ব্যাপার কী?
এরই মধ্যে পাড়ার কেউ থানায় গিয়ে খবর দিয়েছে যে এই বাড়ির ভেতর থেকে বিকট স্বরে কে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠেছে। পুলিশ কর্মচারীরা তাই তদন্ত করতে এসেছে।
শুনে আমার একটুও ভয় হল না। হাসতে হাসতে বললুম, ‘দুঃস্বপ্ন দেখে আমিই ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে উঠেছিলুম।’
‘এই বাসায় এক বৃদ্ধও থাকেন না?’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ। কিন্তু কী কারণে তিনি আজ মফসসলে গিয়েছেন।’
‘বাড়ির ভেতরটা আমরা দেখতে চাই।’
‘অনায়াসেই দেখতে পারেন। আসুন আমার সঙ্গে। এই পথে।’
নির্ভয়ে তাদের নিয়ে গেলুম একেবারে বুড়োর ঘরে। ঘরের চারদিক তন্ন-তন্ন করে খুঁজতে বললুম। ঘরে কোনো কিছু চুরি যায়নি বা তছনছ হয়নি, সেদিকেও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলুম। নিজের হাতে চেয়ার টেনে নিয়ে এসে তাদের সামনে এগিয়ে দিলুম। এবং পাটাতনের নীচে যেখানে বুড়োর খণ্ড-বিখণ্ড দেহ আছে, ঠিক তারই ওপরে একখানা চেয়ার নিয়ে এসে আমিও বসে পড়লুম।
আমার হাবভাব ব্যবহার নিশ্চয়ই তাদের কাছে সন্তোষজনক বলে মনে হল। তারা বসে বসে যে প্রশ্নই করে, আমি চটপট তার জবাব দিই। তারপর তাদের প্রশ্ন করা বন্ধ হল বটে, তবু সেইখানে বসে বসে তারা গল্প করতে লাগল।
কিন্তু এইবারে আমার মনে হতে লাগল, লোকগুলো এখান থেকে বিদায় হলেই বাঁচি। আমার কানের ভেতরে জেগে উঠল একটা শব্দ! ক্রমেই শব্দটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তার কথা ভোলবার জন্যে আমি তড়বড় করে কথা কইতে লাগলুম, তবু শব্দটা থামে না, পুলিশের লোকগুলোও নড়ে না। অবশেষে বুঝতে পারলুম যে,শব্দটার উৎপত্তি আমার কানের ভেতরে নয়।
আমার মুখ যে বিবর্ণ হয়ে গেল, তাতে আর সন্দেহ নেই। মনের ভাব ঢাকবার জন্যে মুখে যতই জোরে কথা কই, ততই উচ্চতর হয়ে ওঠে শব্দটা। সে এক নিম্ন, চাপা, দ্রুত ধ্বনি, ঘড়িকে তুলো দিয়ে ঢেকে রাখলে যেমন শব্দ হয়। রুদ্ধ হয়ে আসতে লাগল আমার শ্বাসপ্রশ্বাস, কিন্তু তবু পুলিশের লোকগুলো সে শব্দ শুনতে পেলে না!
শব্দ বাড়ছে, বাড়ছে, বাড়ছে। আমি উত্তেজিতভাবে হাত-পা নেড়ে যা-তা কথা বলতে শুরু করলুম, শব্দ তবু বাড়তে থাকে। ও আপদগুলো কি আজ আর বিদায় হবে না? হা ভগবান, কী করি, কী করি! ক্রমে আমি যেন পাগলের মতো হয়ে উঠলুম— কোথা থেকে আসছে ওই হৃৎপিণ্ডের দুপ-দুপ শব্দ? দুপদুপুনি বেড়ে ওঠে জোরে— জোরে— আরও জোরে!
লোকগুলো তখনও বসে বসে গল্প করে হাসিমুখে। নিশ্চয়ই ওরা শব্দটা শুনতে পেয়েছে! নিশ্চয়ই ওরা আমাকে সন্দেহ করেছে! নিশ্চয়ই ওরা আমার আতঙ্কগ্রস্ত মুখ দেখে ব্যঙ্গ করছে মনে মনে! যা হওয়ার হোক— এ যন্ত্রণা আর সহ্য করা অসম্ভব, আর আমি সইতে পারছি না ওদের ওই কপট হাসি! আমি হয় ভীষণ চিৎকার করে উঠব, নয় এই মুহূর্তে মারা পড়ব! ওই শোনো— আবার, আবার সেই শব্দ! জোরে! আরও জোরে! আরও জোরে! আরও, আরও জোরে—
সচিৎকারে বলে উঠলুম, ‘ওরে পাষণ্ডরা, আর তোদের ভণ্ডামি করতে হবে না! বুড়োকে খুন করেছি আমিই! পাটাতন তুলে দ্যাখ, এইখানেই আছে তার বীভৎস হৃৎপিণ্ড!’
* এডগার অ্যালান পো লিখিত ‘The Tell-Tale Heart’ অবলম্বনে।