জসীমউদ্দীন-কে
Hinoo Hous
P.O. Hinoo
Ranchi
13.1.36
সোদর-প্রতিমেষু,
স্নেহের জসীম! আমার আন্তরিক শুভাশীর্বাদ নাও। আমি পরশু (বুধবার) সকালে মোটরে করে কলকাতা যাচ্ছি — সাথে ছেলেমেয়েরাও যাবে। বিষ্যুৎবার সকালে বা বিকালে তোমার সাথে গিয়ে দেখা করব। সেইবার গ্রামোফোন রিহার্স্যাল রুমে তোমাকে বলেছিলাম যে, আমি মক্তবের জন্য একখানা বই (মক্তব-সাহিত্য) পেশ করেছি approval-এর জন্য। তুমি ও বন্ধু মনসুর সাহেব selection committee-র মেম্বার। কাজেই আমি নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমার বই তোমরা পাস করবেই এই ভরসায়। তুমি আমার অনুজাধিক স্নেহভাজন, আশা করি, এর ব্যতিক্রম কোনো দিন দেখনি এবং দেখবেও না। খোদা তোমার দিন দিন উন্নতি করুন, এ আমি সর্বদা প্রার্থনা করি। তোমার যশ খ্যাতি যে আমার পক্ষে কত বেশি গৌরবের তা বোধ হয় তুমি নিজেও জান না। আমি সাহিত্যলোক হতে যাবজ্জীবন নির্বাসন দন্ড গ্রহণ করেছি — কাজেই আমাদের সমাজের সমস্ত সুনাম যশ গৌরব নির্ভর করছে তোমার কৃতিত্বের ওপর। তুমি তাতে নিরাশ করবে না এ বিশ্বাসও যথেষ্ট আছে আমার। — যাক যদি আমার বইটা পাস না হয়, তা হলে অত্যন্ত কষ্ট পাব অন্তরে — তুমি আমার সে দুঃখ দিতে পারবে না। তোমার বউদি ও ছেলে-মেয়েরা এখন একা বা অভিভাবক-বিহীন, নৈলে দু-চারদিন আগেই কলকাতা যেতাম শুধু তোমাদের ধরার জন্য। তোমার ওপর এত বেশি স্নেহের দাবি আছে বলেই তোমায় এই অনুরোধ করছি। এ বইটা যদি পাস না হয়, তাহলে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ও মর্মাহত হব। তা ছাড়া বইটা পড়ে দেখো, গতানুগতিক পন্থাকে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলে অভিনবত্ব দেবার চেষ্টা করেছি। ওটা সত্যিই আমার লেখা বা সম্পাদনাও আমার — আমি মিথ্যে বলছিনে — বিশ্বাস করো। ওর কবিতাগুলো ও কয়েকটা গদ্য লেখা পড়লেই বুঝতে পারবে। এর বেশি তোমায় লেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনে। বিষ্যুৎবার কি গ্রামোফোন রিহার্স্যাল রুমে আসবে, না আমি যাব তোমার কাছে? আল্লাহ্ তোমার মঙ্গল করুন। ইতি-
নিত্য শুভার্থী
কবিদা
(নজরুল ইসলাম)