জল চুরি

জল চুরি

বিকেল থেকেই আমি আর প্রদীপ বসে রইলুম নদীর ধারে৷ আমাদের সঙ্গে একটা ঝোলায় রয়েছে স্যান্ডউইচ, কমলালেবু৷ আর ফ্লাস্ক ভর্তি চা৷ হয়তো আমাদের সারা রাত জাগতে হবে৷

গ্রীষ্মকাল৷ নদীর ধারে বসে থাকতে বেশ ভালো লাগবারই কথা৷ বিরাট চওড়া নদী, নামটিও চমৎকার৷ এই নদীর নাম ডায়না৷ শীতকালে এই ডায়না নদী প্রায় শুকিয়ে যায়, হেঁটেই ওপারে যাওয়া যায়৷ অনেক ট্রাক এই নদীর বুকে বেয়ে আসে পাথর আর বালি নিয়ে যাবার জন্য৷

কিন্তু বৃষ্টি নামলেই এই নদীর চেহারা বদলাতে শুরু করে৷ পাহাড়ি নদী, যখন ঢল নামে, তখন স্রোত হয় সাঙ্ঘাতিক৷ জল যেন একেবারে টগবগ করে ফুটতে থাকে৷

এখন ডায়না নদীর সেই রকম অবস্থা৷

প্রদীপ বলল, দ্যাখ সুনীল, রাত্তিরে হয় তো সেই ব্যাপারটা হতে পারে, না-ও হতে পারে৷ হয়তো সারা রাত জেগে থাকা এমনি এমনিই হবে৷ তখন কিন্তু আমায় দোষ দিতে পারবি না৷

আমি বললুম, দেখাই যাক না৷

প্রদীপ তবু বলল, তুই ইচ্ছে করলে একটু ঘুমিয়ে নিতেও পারিস৷ যদি সত্যি সেই ব্যাপারটা আরম্ভ হয়! আমি তোকে ডেকে তুলব৷

আমি বললুম, একটা রাত জেগে থাকতে আমার কষ্ট হয় না৷

সন্ধের পর থেকেই চারদিক একেবারে নিঝুম হয়ে এল৷ এ এমনিই নিস্তব্ধতা যে গাছ থেকে একটা শুকনো পাতা খসে পড়লেও সে শব্দ শোনা যায়৷

প্রদীপ ওর রাইফেলটা ঠিকঠাক করে পাশে রাখল৷

আমরা যা দেখতে এসেছি, তার জন্য অবশ্য রাইফেল দরকার হয় না৷ কিন্তু এদিকে চোর-ডাকাতের ভয় আছে৷ সেই জন্যেই একটা কিছু অস্ত্র রাখা হয়েছে সঙ্গে৷

আর একটা উপদ্রবের কথাও শোনা যাচ্ছে কয়েকদিন ধরে৷ একটা হাতি নাকি পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ হাসিমারার কাছে সেই পাগলা হাতিটা নাকি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা যাত্রীবোঝাই বাস উল্টে দেবার চেষ্টা করেছিল৷

উত্তরবঙ্গে হাতির উপদ্রব লেগেই থাকে৷ এদিকের জঙ্গলে হাতিও আছে৷ কিন্তু এখানকার বাঘেরা সেরকম কোনো ঝামেলা করে না! নিজেদের মনে জঙ্গলেই থাকে৷ হাতিরাই হামলা করে বেশি৷ দল বেঁধে হাতিরা যখন রাস্তা পার হয়, তখন দু’দিকের গাড়ি-ঘোড়া সব থেমে থাকে৷ চা-বাগানেও হাতিরা ঢুকে পড়ে ঘর-বাড়ি ভেঙে দেয়৷ তাদের সামনে কোনো মানুষজন পড়লে চেপ্টে মেরে ফেলে৷ হাতিরা হাজার হাজার বছর ধরে একই রাস্তায় চলে৷ তাদের চলার পথে কেউ ঘর-বাড়ি বানালে তারা সহ্য করতে পারে না৷ ভেঙে দেবেই৷

আর কোনো হাতি যদি হঠাৎ পাগল হয়ে যায় তা হলে তো আর কথাই নেই৷

আমরা যেখানে বসে আছি, তার পেছনেই জঙ্গল৷ এ জঙ্গল অবশ্য খুব ঘন নয়৷ পাতলা পাতলা, এখানে বাঘ কিংবা হাতি থাকে না৷ কিন্তু পাগলা হাতির কথা তো বলা যায় না৷

সেইজন্যই আমরা বারবার পেছনে তাকাচ্ছি৷ প্রদীপ অবশ্য খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে পাগলা হাতিটাকে গতকাল দেখা গেছে পঞ্চাশ মাইল দূরে৷ সুতরাং আজ এখানে দেখতে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ অবশ্য হাতিরা ইচ্ছে করলে একদিনে অনায়াসে পঞ্চাশ মাইল রাস্তা পেরিয়ে আসতে পারে৷ যদিও হাতিদের সেরকম ইচ্ছে কদাচিৎ হয়৷

এখান থেকে বারো মাইল দূরে একটা চা-বাগানের ম্যানেজার হলেন প্রদীপের বাবা৷ প্রদীপের ছেলেবেলা কেটেছে এই অঞ্চলেই৷ তারপর ও কলকাতার কলেজে পড়তে গেছে৷ প্রত্যেক ছুটিতেই প্রদীপ এই চা-বাগানে আসে৷ এবারে ওর সঙ্গে আমি এসেছি৷

কথায় কথায় প্রদীপ একদিন বলেছিল ডায়না নদীর এই অদ্ভুত ঘটনার কথা৷ আমি শুনে বিশ্বাস করিনি৷ উত্তরবঙ্গ তো কলকাতা থেকে বেশি দূরে নয়৷ ওখানকার ডায়না নদীতে এরকম একটা ব্যাপার হলে নিশ্চয়ই খবরের কাগজে-টাগজে ছাপা হত৷

প্রদীপ রেগে গিয়ে বলেছিল, কোনো কাগজের লোক ওই নদীর ধারে সারা রাত জেগে থাকতে পারবে? না হলে দেখবে কী করে?

আমি জিজ্ঞেস করেছিলুম, তুই কি নিজের চোখে দেখেছিস? না অন্য কারুর কাছে শুনেছিস?

প্রদীপ বলেছিল, আমি নিজের চোখে সবটা দেখিনি বটে, তবে এর আওয়াজ আমি নিজের কানে শুনেছি৷ আর আমি অন্তত পাঁচজন অতি বিশ্বাসী লোককে জানি, যারা নিজের চোখে সবটা দেখেছে৷

আমি বলেছিলুম, আমি নিজের চোখে না দেখলে এসব কিছুই মানতে পারব না৷ সে যত বিশ্বাসী লোকই বলুক!

সেই জন্যই পরশুদিন এই চা-বাগানে পৌঁছবার পর থেকেই আয়োজন হচ্ছিল এই নদীর ধারে এক রাত কাটাবার৷ প্রদীপ অবশ্য বারবার আমাকে সাবধান করে দিয়েছে প্রত্যেক রাত্রে যে এরকম ঘটবেই, সেরকম কোনো কথা নেই৷ আমাদের লাক ট্রাই করতে হবে৷

আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ আর অল্প অল্প জ্যোৎস্না, আমি টর্চের আলোয় ঘড়ি দেখলুম৷ মোটে সওয়া ন’টা বাজে, এখনো অনেক রাত বাকি৷

আমি জিজ্ঞেস করলুম, আচ্ছা প্রদীপ, তুই আওয়াজটা শুনেছিস, সেটা ঠিক কীরকম?

প্রদীপ বলল, অবিকল কামানের গর্জনের মতন৷ ঠিক আধ মিনিট কি এক মিনিট অন্তর অন্তর বুম বুম করে শব্দ৷ দশবার থেকে বারোবার৷ এ আওয়াজ আমার বাবা শুনেছেন, চা-বাগানের অনেকেই শুনেছেন৷

তুই কি ছেলেবেলা থেকেই এরকম আওয়াজ শুনছিস?

না, না, আগে কিছু না৷ এটা তো শুরু হয়েছে শুধু গত বছর থেকে৷ আগে ডায়নার ধারে প্রায়ই হরিণ দেখতে পাওয়া যেত৷ আমরা ছেলেবেলায় কতবার এখানে শিকার করতে এসেছি৷ আজকাল শুনছি ডায়নার তীরে এদিকটায় শব্দের পরে ভয়ে আসে না৷

আওয়াজের পরে কী হয়?

জল তোলপাড় হতে থাকে৷ ঠিক সমুদ্রের ঢেউ-এর মতন৷ না, না, এটা ঠিক হল না৷ আমাদের বাগানের সর্দার শিবু শোরেন দেখেছে৷ সে বলেছিল, ঠিক যেন একটা বিরাট প্রাণী মাথা তোলার চেষ্টা করছে৷

হাতি-টাতি নয় তো? হয়তো পাহাড় থেকে কোনো হাতি ধেয়ে এসেছিল৷

ডায়নার জলে হাতি নামবে? তুই একটুখানি চেয়ে দ্যাখ না কী দারুণ স্রোত! দশটা হাতিকেও একসঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে৷ তারপর কী হয় যেন! কিছুক্ষণ জল ওইরকম তোলপাড় হবার পর অনেকখানি জল গোল হয়ে লাফিয়ে ওঠে ওপরে৷ সেইরকম ভাবে উঠতেই থাকে৷ কলকাতার মনুমেন্টের মতন উঁচু হয়ে যায়৷

এই জায়গাটাই আমার গাঁজাখুরি লাগে৷ জল কখনো অত উঁচু হয়ে দাঁড়াতে পারে? মাধ্যাকর্ষণকে জয় করবে কী করে?

তুই বুঝি জলস্তম্ভের কথা শুনিসনি?

তা শুনব না কেন? কিন্তু জলস্তম্ভ মোটেই অত উঁচু হয় না৷ দু-দিকের বিপরীত স্রোতে ধাক্কা লেগে জল অনেক সময় খানিকটা উঁচুতে উঠে যায়৷ বড় জোর এক মানুষ, তারপর ঘুরতে ঘুরতে আবার নীচে পড়ে৷ পুরোটাই ফোর্সের ব্যাপার৷ আমার মনে হয় সে-রকম কোনো জলস্তম্ভকেই এখানে এরা মনুমেন্টের আসন করে দিয়েছে৷ আমাদের দেশে লোকেরা সব কিছুই বড্ড বাড়িয়ে বলে!

আর ওই কামানের মতো আওয়াজ কেন হয়? এ সম্পর্কে তোর কী ধারণা?

ঠিক বলতে পারব না৷ তবে আমার বাবার মুখে ‘বরিশাল গান’ বলে একটা ব্যাপার শুনেছি৷ বরিশাল শহরের পাশে যে নদী আছে, কী নদী নাম মনে নেই৷ সেই নদীতেও নাকি ওঁরা মাঝে মাঝে এইরকম গুম গুম শব্দ শুনেছেন৷ ঠিক কামানের মতনই৷ তাই সেই আওয়াজের নাম ‘বরিশাল গান’৷ সাহেবদের ধারণা ছিল, সেই নদীর গর্ভে কোথাও একটা বিরাট গর্ত আছে৷ সেই গর্তে জল ঢুকবার সময় ওই আওয়াজ হয়৷ এই ডায়না নদীতেও নিশ্চয়ই সেরকম কোনো গর্ত-টর্ত আছে৷

আমি শীতকালে এই ডায়না নদী অনেকবার হেঁটে পার হয়েছি, কোনো গর্ত দেখিনি৷ সেরকম গর্ত থাকলে এখানকার সবাই জানত৷

আরে সে কি আর সাধারণ গর্ত হবে? সাধারণ গর্ত হলে সে গর্ত আগেই ভরে যাবে জলে৷ নিশ্চয়ই সে গর্ত পাথর-টাথরের আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে৷ কখনো সেই পাথর সরে গেলেই সেখানে হুড় হুড় করে জল ঢোকে৷

তুই খুব সহজ ব্যাখ্যা দিয়ে দিলি তো!

দ্যাখ না! আজ যদি ওই ব্যাপারটা হয়, আমি ঠিক প্রমাণ করে দেব যে ওটা খুবই সাধারণ প্রকৃতির ব্যাপার৷ মনুমেন্টের মতন জলস্তম্ভ না হাতি! হুঁঃ৷ যত সব গাঁজা৷

একটু আগেই আমরা স্যান্ডউইচ আর কমলালেবু খেয়ে নিয়েছি৷ তবু আবার খিদে পাচ্ছে৷ কিন্তু করার না থাকলেই শুধু খেতে ইচ্ছে করে৷

ফ্লাস্ক থেকে ঢেলে চা খেলুম৷ আকাশে জ্যোৎস্না কমে আসছে, ঘন হয়ে জমাট বাঁধছে মেঘ৷ বৃষ্টি নামলেই মুশকিল৷ আমরা বসে আছি খোলা জায়গায়, হঠাৎ জোরে বৃষ্টি নামলে আশ্রয় নেবার মতন কোনো জায়গাও নেই৷

একসময় আমাদের পেছনের জঙ্গলের খচর-মচর শব্দ হতেই আমরা চমকে উঠলুম৷ প্রদীপ বন্দুকটা তুলে নিল৷

শব্দটা একবার হয়েই থেমে গেল৷ প্রদীপ ফিসফিস করে আমাকে বলল, ভয় নেই, খুব সম্ভবত শেয়াল৷ কিংবা হরিণও হতে পারে৷

আমরা কান খাড়া করে রইলুম, যদি আর কোনো শব্দ শোনা যায়৷ এইরকম সময় এক একটা মুহূর্তকেও মনে হয় অনেক সময়৷ তবু আমরা বেশ কিছুক্ষণ উৎকর্ণ হয়ে থাকলুম, কিছু শোনা গেল না৷

তারপরেই বৃষ্টি নামল৷ প্রদীপ বলল, আজকের মতন অ্যাডভেঞ্চার শেষ৷ যা মেঘ করেছে, এখানে আর থাকা যাবে না৷

আমি ব্যাগে জিনিসপত্রগুলো ভরে নিতে লাগলুম৷ প্রদীপ পাট করতে লাগল সতরঞ্চিটা৷ একটু দূরে রাস্তার ওপরে আমাদের জিপ গাড়িটা রাখা আছে, সেখানেই ফিরে যেতে হবে৷

সেই সময় ধুম করে এমন জোরে শব্দ হল যে আমরা দুজনেই কেঁপে উঠলুম৷ শব্দটা এসেছে নদীর বুক থেকে৷ কামানের গর্জনের মতনই বটে৷

সেই শব্দটা হওয়া মাত্র বনের মধ্যে দারুণ চাঞ্চল্য পড়ে গেল৷ কী যেন একটা বড় জানোয়ার ভয় পেয়ে ছুটে গেল হুড়মুড় করে৷ তারপরই আবার একবার ওই শব্দ৷ যেন কানে তালা লেগে যায়৷ প্রদীপ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এবার বিশ্বাস হল তো?

আমি এমনই হতচকিত হয়ে গেছি যে কোনো কথাই বলতে পারলুম না৷ কোনো গর্তে জল ঢোকার জন্য তো এত শব্দ হতে পারে না!

আকাশে আলো এত কম যে নদীর বুকটা ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না৷ কিন্তু শব্দটা যেন একই জায়গা থেকে উঠছে মনে হয়৷ যেন ঠিক আধ মিনিট সময় নিয়ে একটা বিরাট কামান দাগা হচ্ছে৷ ঠিক এগারোবার শুনলুম সেই শব্দ তারপর নদীতে জল তোলপাড় হতে লাগল৷ সেটা আমরা চোখে ঠিক দেখতে পেলুম তা নয়৷ কিন্তু জলের মধ্যে যে সাঙ্ঘাতিক কিছু ঘটছে তা আওয়াজ শুনেই বোঝা যায়৷ প্রদীপ বলল, ওই দ্যাখ সুনীল, ওই দ্যাখ৷ আবছা অন্ধকারেও বেশ দেখা গেল যে নদী থেকে ঠিক একটা মোটা গাছের গুঁড়ির মতন জল উঠে আসছে ওপরের দিকে৷ ক্রমশ তা উঁচু হতে লাগল৷ শুধু আমাদের কলকাতার মনুমেন্ট কেন, দিল্লির কুতুবমিনারের চেয়েও উঁচুতে উঠতে লাগল ওই জল৷ ওপরের দিকে তাকিয়ে মনে হল, সেই জল যেন আকাশ ছুঁতে চলেছে৷

আমি যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছি না৷ এ কখনো হতে পারে? মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম ব্যর্থ করে দিচ্ছে জল? চাঁদের টানে আমাদের পৃথিবীর জল ফুলে ফেঁপে ওঠে, সেইজন্য নদীতে বান হয়৷ জোয়ারভাটা হয়৷ কিন্তু সে আর কতটুকু?

প্রদীপ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি আর দেখতে পারছি না৷ চল, এখান থেকেই পালাই!

অজানা একটা ভয়ে আমার বুক কাঁপছে৷ যুক্তি দিয়ে যা মানতে পারি না, তা নিজের চোখে দেখলে তো ভয় হবেই৷

আর একবার তাকিয়ে দেখলুম, সেই জলের স্তম্ভ যেন সত্যিই আকাশে পৌঁছে গেছে৷

প্রদীপ আমার হাত ধরে টেনে দৌড় লাগাল৷ আমরা জিপ গাড়িটার কাছে পৌঁছে হাঁপাতে লাগলুম৷ এখান থেকেও সেই জলস্তম্ভটা দেখা যাচ্ছে৷ সেই দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলুম৷ জলস্তম্ভ একসময় শেষ হয়ে গেল বটে, কিন্তু সেটা আর নীচে পড়ল না, মিলিয়ে গেল আকাশে৷

এর একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে৷ আকাশ থেকে কেউ এসে আমাদের নদীর জল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে৷

কিন্তু কে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *