জলের মতো স্বচ্ছ জলের মতো সরল নয় জল
জল আর জলপাই, খাসা জল, তোফা জল, মামাবাড়ি ঘুমড়ির জল, কলের জল, নদীর জল, ঝর্নার জল, পুকুরের জল, কুয়োর জল…। সুকুমার রায়ের অবাক জলপান নাটকে যে জলের লিস্টি আছে, বিষ্টির জল, ডাবের জল, নাকের জল, চোখের জল, জিভের জল, হুকোর জল… তালিকার শেষ নেই। জলের মতো স্বচ্ছ, জলের মতো সরল, সোজা কিন্তু নয় জল। জলই তো জীবন। জলের অভাব না হলে জীবনের এই চিহ্নটিকে বুঝবে কে? জলে না ডুবলে জলের অন্ধকার টের পাবে কে? বন্যায় না ভাসলে, জল যে কতখানি মৃত্যু বয়ে আনে তাই বা টের পাবে কে? এই খর রৌদ্রের দিনে, পুবের গাঁ থেকে পশ্চিমে হেঁটে এলে তেষ্টায় ছাতি ফাটবে যখন, জলের অপর নামটি মনে করাবে কে?
নদীর ধারে বাস, দুঃখ বারোমাস। নদী মানে জল। বছর বছর বন্যায় দুঃখের অন্ত থাকে না। ঝড়-বাদলায় জমির ধান-পান সব শেষ হয়ে যেত। হ্যাঁ, এখনো তা হয়, সুন্দরবনের নদী বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম ভেসে যায়, ফসলের জমি নষ্ট হয়ে যায় নোনা জলে। তো নদী আর জলের এই কথা আমি মায়ের কাছে শুনতাম। মায়ের বাপের বাড়ি জলের ধারে, কপোতাক্ষ নদের কুলে। সেই জলের ধার থেকে নির্বাসিত হলেন রাধারানি উত্তর কলকাতার টালার জলাধারের প্রায় কোলেই বলা যায়। ২৪ ঘন্টা জল। তার আগে যে বেলেঘাটায় থাকা হতো, সেই ১৯৫১-৫২-র সময়, সেখানে খুব জলের কষ্ট ছিল, জল নিয়ে কাড়াকাড়ি হতো। টালা-বেলগাছিয়ায় এসে সেই কষ্ট গেল। শতাব্দী প্রাচীন জলাধার, যেন একখন্ড গভীর কালো মেঘ ভেসে আছে পশ্চিমে। সেই মেঘ সব সময়ই জল দেয়। আমাদের উত্তর কলকাতায় এখন জলের তেমন অভাব ঘটে না। যদি বা ঘটে আমাদের এই মেঘপুঞ্জ ধারণ করা জলাধারের এলাকায় ঘটেই না। শোনা যায় টালার ভূগর্ভ-জলাধার উঁচু ট্যাঙ্ক নির্মাণের জমি পাইকপাড়ার রাজা দিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভাকে বিনা মূল্যে। শর্ত ছিল এলাকার মানুষের জন্য ২৪ ঘন্টা জল। ২৪ ঘন্টা জল এখনো থাকে, কিন্তু তার সেই উচ্চ চাপ কমেছে। এখন এই জল বিধান নগরে যায়, নিউ টাউনে যাচ্ছে শীঘ্রই। কলকাতা বদলেছে অনেক। বহুতলের পেটের ভিতরে এখন অনেক মানুষ, সুতরাং জল চাই জল। আমাদের গৃহ পরিচারিকা রুকসানা মাসি বলছিলেন, এই গরমে তাঁদের বস্তিতে বেলা বারোটা অবধি জল থাকে তারপর জল আসে সেই রাত আটটায়। কত মানুষ বস্তিতে! জল নিয়ে চুলোচুলি হয় অবিরাম। বস্তিবাসির জল বারো ঘর এক উঠোন, কমন বাথরুমের মতো। মহল্লার মাঝে জলের কল। সেখানে ভোর থেকে কলসি, বালতির লাইন। কলকাতা থেকে ২০০ কি.মি. দূরে বাঁকুড়ার শালতোড়ায় এমন দৃশ্য এই গ্রীষ্মের দিনে কত দেখেছে টালা জলাধারের নিকট-বসতির এই ভাগ্যবান। তবে হ্যাঁ, রমজান মাসে কলকাতার পুরসভা রুকসানা মাসিদের মহল্লায় জল দেয় বারে বারে, তাও সত্য।
আমাদের এই শহর থেকে পঞ্চাশ কি.মি. গেলে সমুদ্রের মুখ, মোহনা। জলের অভাব নেই গঙ্গা থাকতে। নদীই তো নগর গড়ে তুলেছে বাণিজ্যতরী বয়ে এনে। কলকাতার জন্য উত্তর ২৪ পরগণার পলতায় যে জলের প্রকল্প আছে সেখানে দৈনিক ২৬০০ লক্ষ গ্যালন জল তুলে পরিশুদ্ধ করে পাইপ লাইনে টালায় পাঠানো হয়। আর কলকাতার নানা রাস্তায় কিছু গঙ্গাজলের লাইন আছে। অবিরাম ঘোলাটে জল পড়ে যায়। সেই অপরিশুদ্ধ জলে নগরের প্রান্তবাসীরা স্নান করেন। সারাদিন ভার বয়ে সন্ধে বেলায় সস্তার সাবান মেখে যে স্নান, তার সুখ কত তা সেই মানুষটির মুখের দেহাতি গান শুনলেই টের পাওয়া যায়।
সারাদিন জল। গ্রীষ্মে সেই জলে কিঞ্চিৎ ক্লোরিন মেশান হতো। গন্ধ পেতাম। বাল্যকালে শুনতাম কলিকাতার কলের জলে গাত্র বর্ণ উজ্জ্বল হয়। আমাদের একটা বাড়ি আছে বসিরহাটের লাগোয়া দন্ডীরহাটে। খুড়তুতো দিদিরা কলকাতার বেলগাছিয়ায় এসে টালার জলে উজ্জ্বল শ্যাম কিংবা গৌরী হয়ে উঠত। ৫০-৫৫ বছর আগের কথা বলছি। তখন গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল করার এত প্রসাধন সামগ্রী আসেনি বাঙালি জীবনে। তবে একটা কথা তো সত্য, গাঁয়ের পুকুরে দাপানো আর ঘাটলায় রোদের নিচে বসে গল্পগুজবে, দুপুরে আম কুড়িয়ে সেই কন্যা কীভাবে গৌরী হয়ে ওঠে? কলিকাতায় বদ্ধ ফ্ল্যাটে গায়ে রোদ না লাগিয়ে ফ্যাকাশে ইটচাপা ঘাসের মতো হয়ে যেতে তো বাধা নেই। অবশ্য এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে, কলিকাতার কলের জল অতি মধুর। কলিকাতার কলের জলে কাঁচা হলুদ মেশানো, হিমানী স্নো, সুরভিত অ্যান্টি সেপ্টিক ক্রিম জড়ানো ছিল সেই ৫০ বছর আগে। অঘ্রানে তার বিয়ে, ভাদ্র থেকে সে টালা-বেলগাছিয়ার বাসা বাড়িতে রয়েছে, কেন মেয়েটি ফর্শা হবে না সেই জল গায়ে মেখে? আমার এই শহর গঙ্গার পূর্বকুলে। আমাদের সব নদীই গঙ্গা। গঙ্গার জল ব্যতীত কোনো পুজোপাঠ, পুণ্যকর্ম সম্পন্ন হয় না। মায়ের দরকার হতো গঙ্গাজল। একটি পেতলের ঘটিতে তা ভরা থাকত। সেই জল নিয়ে আসত কে, না বিহারের মধুবনি জেলা থেকে কলকাতায় কাঁসার বাসন ফেরি করা এক ব্যক্তি। সে থাকত গঙ্গার কাছে। পনের দিন অন্তর গঙ্গাজলের কলসি মাথায় নিয়ে আসত বাসনের সঙ্গে। মা একা নন, পাড়ার অনেক বাড়িতেই গঙ্গাজল পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তার। মা চলে গেলেন, তারপরও সে আসত। গঙ্গাজল আর দরকার হয় না, সে দশটি টাকা নিয়ে যেত জলের জন্য মা তাকে যা দিতেন। অনেকদিন সেই লোকটি আর আসে না। কী হলো তার? তার নির্মল জলের মতো হাসি আর কথায় তো অন্তরের তৃষ্ণা মিটত। গঙ্গা থেকে দূরে সরে গেছি আমরা। আর কলিকাতার কলের জলে গৌরী হতে বাসাবাড়িতে গাঁয়ের মেয়েটি আর আসে না। বিজ্ঞাপিত প্রসাধন সামগ্রী পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত গ্রাম দেশেও, স্নান আর পানীয় জল না থাক, কসমেটিক্স আছে। আর আছে জলের বোতল।
হ্যাঁ, টালা-বেলগাছিয়ায় এত সুখের ভিতরে বিপদ ছিল অন্য। বর্ষায় ইন্দ্র বিশ্বাস রোড একটি বেসিন। এই অঞ্চলে জল সরত না দিনের পর দিন। অতি বৃষ্টিতে জল ঢুকে পড়ত একতলার ফ্ল্যাটের ভিতর। মনে আছে সন্ধে থেকে বৃষ্টি আরম্ভ হলো, ক্রমশ তার বেগ বাড়তে লাগল, মাঝরাতে মা ডেকে তুললেন, জল ঢুকছে। মা শাঁখ বাজাতে আরম্ভ করলেন। এই রীতি নদীর ধারের মানুষের বহুদিনের অভ্যাস। মধ্য রাতে বানের সাড়া পেলে গ্রাম জাগিয়ে তোলা। শাঁখ বাজিয়ে সতর্ক করে দেওয়া নদীর ধারের মানুষকে। এখন সেই ভয় গেছে। জল আর জমেও না সেই রাস্তায়, ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে জল ঢোকে না। বস্তিবাসীকে উদ্ধার করে ইস্কুলবাড়িতে নিয়ে যেতে হয় না। খোদ কলকাতা শহরে যে কত বন্যা দেখেছি। সন তারিখ স্পষ্ট মনে আছে, ১৯৮৫ সালের ৫ এবং ৬-ই মে, আচমকা বৃষ্টি নামল, ৪৮ ঘন্টা এক নাগাড়ে। জল ঢুকল ঘরের ভিতর। জলের সঙ্গে ব্যাঙ, আরো কত কিছু…। তখন অতি বৃষ্টিতে উত্তর শহরতলীর বাঙ্গুর, লেকটাউনের একতলা বাড়ির অর্ধেকের বেশি জমা জলে ডুবে থাকত। কলকাতা শহরের ঠনঠনে কালীবাড়ির সমুখের বিধান সরণি, রামমোহন সরণি জমা জলের জন্য কুখ্যাতি পেয়েছিল কম না। রামমোহন সরণিতে নৌকোও নেমেছে কতবার। এখন সেই চিত্র বদলেছে। ১৯৭৮-এ বন্যার্ত হয়েই কবি নীরেন্দ্রনাথের কবিতা ‘হ্যালো দমদম’।
আমার হাতের মধ্যে টেলিফোন;
আমার পায়ের কাছে খেলা করছে
সূর্যমণি মাছেরা।
পিচ-বাঁধানো সড়কের উপর দিয়ে
নৌকো চালিয়ে আমি
পৃথিবীর তিন-ভাগ জল থেকে এক-ভাগ ডাঙায় যাব।
সেই নৌকোর জন্যে আমি বসে আছি;
আর, পাঁচ মিনিট পরপর
ডায়াল ঘুরিয়ে চিৎকার করছি:
হ্যালো দমদম…হ্যালো দমদম…হ্যালো…
… … …
আমার জুঁইলতা এখন
পাঁচ ফুট জলের তলায় ফুল ফোটাচ্ছে।
১৯৭৮-এর বন্যায় শহর কলকাতার রাস্তায় কোমর সমান জল, সেই জলে পা হড়কে ডুবে মারা গেলেন একজন। জলের ভয়ানক চেহারা দেখেছি ১৯৭৮-সালের বন্যায়। প্লাবন। একের পর এক নদী, সুবর্ণরেখা, ডুলুং, কংসাবতী, শিলাবতী, কেলেঘাই, হলদি নদী, রূপনারায়ণ, দামোদর, উঠে আসছে স্থলভূমিতে। জল দখল করে নিয়েছিল সভ্যতা। দুর্গাপুর ব্যারেজে ধরেছিল ফাটল। আমি তখন মেদিনীপুরে। বন্যার পরে বাড়ি ফিরেছিলাম তিন মাস বাদে। ১৯৬৮ সালে তিস্তার জল প্রবেশ করেছিল জলপাইগুড়ি শহরে। সেই বন্যার কথা কত শুনেছি। তিস্তার বাঁধ সেই কারণে দেওয়া। নদীবাঁধ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যহত করে। তিস্তার জল নিয়ে বাংলা দেশের ক্ষোভ, ওদেশে এই নদী শুকিয়ে শুধুই বালুচর। দেখেছি তা। একই অভিযোগ ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে, চিন বাঁধ দিয়েছে তার উজানে। আমাদের এদিকে জল আসছে কম। গঙ্গার জল ক্যানেল কেটে চুরি করে তুলে নিচ্ছে উজানের মানুষ, আমরা জল পাচ্ছি কম। আবার ফারাক্কা ব্যারেজ নিয়ে বাংলাদেশের অভিযোগ কম নয়। শুখা সিজিনে জল চাই, বর্ষায় জল দিলে বন্যায় ভাসে দেশ। দামোদর ব্যারেজের ছাড়া জলে প্রতি বছর হুগলি হাওড়া ভাসে। অসম্পূর্ণ নির্মাণই তার কারণ। আর জল নিয়ে দাঙ্গাও দেখেছি। চাষের সিজিনে জমিতে জল পাঠান নিয়ে তা হয়। বড় বড় দিঘিতে জলের ভাগ নিয়ে লাঠালাঠিও দেখেছি কত। ভাগ কত, এক পয়সা, দু পয়সা, এক গণ্ডা দুই গণ্ডা, এক কড়া দুই কড়া… মোট ভাগ এক টাকা বা ষোল আনা হলে এই রকম হয় এক এক শরিকের অংশ।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলি জলাভাবে মরে যাচ্ছে। আমাদের বেতনা, কপোতাক্ষ নদ তো বালুচর মাত্র। তিস্তা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্রের কথা তো বলেইছি। দক্ষিণ ২৪ পরগণার কত নদী যে মরে গেছে হিসেব নেই। আর আমরাও শেষ করছি যত জলের সূত্র। পুকুর, দিঘি বুঁজিয়ে জল মেরে দিয়ে অগ্নিকুন্ডের ভিতর বসিয়ে দিচ্ছি সভ্যতাকে। আমাদের জল আছে, তা শেষ করে দিচ্ছি। যাদের জল নেই, মরুদেশে, রাজস্থানে, দশ মাইল হেঁটে জল মাথায় করে ফেরে বাড়ির মেয়েরা। স্বাধীনতার ৭২ বছর বাদেও শুদ্ধ জলের ব্যবস্থা করে উঠতে পারিনি আমরা। নেতা মন্ত্রীদের তা জানা নেই। হ্যাঁ, জল নেই বটে, শীতল পানীয় আছে গঞ্জে গঞ্জে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পশ্চিম প্রান্তে সুবর্ণরেখার কুলের এক গ্রামে তখন ছিল বাস। সেই ১৯৭৬ হবে। গ্রীষ্মের দিনে জল কই? কুয়োর জল তলানিতে। জঙ্গল থেকে একটি ঝোরা নেমে এসে চলে গিয়েছিল নদীর দিকে, সেই ঝোরার বালি খুঁড়ে যে জল উঠত তা ছেঁকে নিয়ে কলসে ভরা হতো। সেই জলই ছিল পানীয় জল। স্নানের জল সেই বালি খুঁড়ে তৈরি করা বড় বড় খোদল, চুইয়ে চুইয়ে যে জল জমত সেখানে তা দিয়েই অবগাহন। সেই জল হতো স্বচ্ছ, বিশুদ্ধ। গরমের দিনে খুব ঠান্ডা। বংশীধরপুরের কথা এখনো মনে পড়ে, জলের অভাব কি মিটেছে সেখানে? মানুষের চাওয়া কত সামান্য যে তা গ্রামদেশে না ঘুরলে বুঝব না। অন্ন, একখানি বস্ত্র, আর জল। বিশুদ্ধ জল। জঙ্গল মহল যে তিন জেলায়, সেই জেলার গ্রামদেশে জলের জন্য হাহাকার দেখেছি কম না। জলের সূত্র তো পাতাল। কুয়ো আর জঙ্গলের ঝোরা, ঝর্না, জোড়-এসব শুকোতে থাকে মাঘ মাস থেকে। ফাল্গুনের পর কুয়োর জল তলানিতে গিয়ে পৌঁছয়। একদিন বালতি নামল নিচে, ঠং করে আওয়াজ হলো। ভয় পেল বউটি। জল ফুরিয়ে এল! একদিন জলের সঙ্গে বালি, মানে জল শুকিয়ে এল। হায়! সামনে কী দিন অপেক্ষা করে আছে!
শালতোড়া ব্লক বাঁকুড়ার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে। পাহাড়ি জনপদ। কিছু গেরস্তর বাড়ির কুয়ো বাদ দিয়ে জনসাধারণের জন্য বড় একটিই কুয়ো চড়াই থেকে নেমে রাস্তার ঢালে। শেষ রাত থেকে সেখানে বালতির পর বালতির লাইন। তখন জল আছে। আর কদিন বাদে সারাদিন বালি ওঠে জলের সঙ্গে। ভোরে, কত ভোরে যেতে পারে মানুষ জল তুলতে তার প্রতিযোগিতা চলে যেন। সারারাত চুঁইয়ে চুঁইয়ে যে জল উঠে আসে কুয়োর তলদেশে তা থাকে স্বচ্ছ। সেই জলটুকুর জন্যই শেষ রাতে ছোটা। আমি টালার জলাধারের পাশে বড় হয়েছি, জলের কষ্ট পাইনি কখনো। বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের পশ্চিমভাগে দীর্ঘদিন বসবাসে বুঝেছি জলের জন্য হাহাকার কী? জলের কত দাম। জল ফুরিয়ে আসে, গঞ্জের হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ মেঘ আর বৃষ্টির জন্য আকাশে তাকিয়েই থাকে। ২৪ প্রহর হরিনাম আরম্ভ হয়। হরিনামে আকাশের দেবতা সন্তুষ্ট হবেন। জল নামবে আকাশ থেকে। খরা এবং বন্যা, দুই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গেই জলের সম্বন্ধ। বন্যা আসে জানান দিয়ে, অবিশ্রান্ত বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বন্যা নিয়ে আসে। আর খরা আসে একটু একটু করে। জানান দেয় না। নিঃশব্দ চরণে আসে সে। মানুষ একদিন টের পায় বহুদিন আকাশে মেঘ আসেনি, বৃষ্টি নেই বহুদিন। সব শুখা হয়ে যাচ্ছে। জলের অভাবে মানুষের মাথা বিগড়ে যায়। একটা লোকের সঙ্গে বেলিয়াতোড়ে দেখা হয়েছিল, বিকেলের দিকে আমাকে এসে বলে, ‘আকাশটা দেখুন, আগুনে তেতে বেঁকে গেছে কেমন, জল না নামলে আর উপায় নাই’। আমি বৈশাখ, জৈষ্ঠের আকাশ দেখি। হ্যাঁ, তাই। তালগাছের মতো লোকটা যা বলছে, তাই। জল না নামলে উপায় নাই। এস মেঘ এস।