জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৫৬–১৯৫০) – যিনি প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন
জর্জ বার্নার্ড শ (George Bernard Shaw) তাঁর জীবদ্দশায় এমনই বিখ্যাত আর জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে, তাঁর পুরো নামটাও উল্লেখ করার প্রয়োজন হতো না। শুধু নামের আদ্যাক্ষর অর্থাৎ জি. বি. এস. (G. B. S.) বললেই একডাকে সবাই তাঁকে চিনত।
আয়ারল্যান্ডের রাজার নাম বাদ দিলে শ-র মতো খ্যাতিম্যান পুরুষ আর কেউ ছিলেন না তখন। এককথায় তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতিম্যান সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব।
বার্নার্ড শ-র জন্ম ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই।
শ-র জীবন ছিল হাজারো বৈচিত্র্যে পূর্ণ। পরবর্তী জীবনে যিনি এতবড় লেখক- নাট্যকার হয়েছিলেন, সেই তিনি প্রচলিত অর্থে ছিলেন একজন অশিক্ষিত মানুষ। বিদ্যালয়ে পড়াশোনার করেছিলেন মাত্র পাঁচ বছর। এরপর আর লেখাপড়া করেনেনি, বলা যায়, সে সুযোগই হয়ে ওঠেনি তাঁর। অথচ সেই তিনিই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, সাত হাজার পাউন্ডের এই অর্থ তিনি গ্রহণ করতেও অস্বীকার করে বলেছিলেন, সম্মান বা অর্থের আমার প্রয়োজন নেই। অবশেষে বিশেষভাবে অনুরুদ্ধ হয়ে এই শর্তে তিনি পুরস্কারের অর্থ গ্রহণ করতে স্বীকৃত হয়েছিলেন যে, মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য তিনি এক হাতে টাকাগুলো নেবেন আর হাতে সেগুলো দান করে দেবেন সুইডিশ সাহিত্য একাডেমিকে।
বার্নার্ড শ-র বাবা ছিলেন একজন আইরিশ। তাঁর নাম ছিল জর্জ কার শ এবং মায়ের নাম ছিল লুসিন্ডা গারলি। কার শ যৌবনে পরিবারের অন্যদের অমতে বিয়ে করায় পারিবারিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। ফলে শ-র বাবা ছিলেন ভয়ানক অর্থসংকটে। তাই বার্নার্ড শ-কে মাত্র পনেরো বছর বয়সে চাকরি নিতে হয়েছিল।
ষোল থেকে বিশ বছর পর্যন্ত তিনি মাত্র সাপ্তাহিক ৩৫ শিলিং বেতনে চাকরি করেন খাজাঞ্চির পদে। দরিদ্র হলেও শয়ের পিতা ছিলেন বিদ্যানুরাগী। বাড়িতে ছিল বিশ্বের বিখ্যাত সব লেখকের গ্রন্থসমুদ্ধ এক পাঠাগার। কৈশোর পেরুনোর আগেই এখান থেকে বই নিয়ে তিনি পড়ে ফেলেন বায়রন, ডিকেন্স এবং শেলির গ্রন্থাবলি। বিশ বছর পার হবার আগেই তাঁর পরিচয় হয় স্টুয়ার্ট মিল ও হারবার্ট স্পেন্সারের মতো মনীষীদের রচনার সঙ্গে সঙ্গে।
ফলে বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও তিনি বাল্যকাল থেকেই হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত। আগেই বলা হয়েছে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন দশ বছর বয়সে ডাবলিনের ওয়েসলেয়ান কনেক্সনাল স্কুলে। সেখানে তিনি মাত্র কয়েক বছর পড়াশোনা করেন। শ ছিলেন স্কুলের সবচাইতে খারাপ ছাত্র, একেবারে অলস। কোনোদিন খেলাধুলায় অংশ নেওয়া তো দূরে থাক, খেলার মাঠে পর্যন্ত যেতেন না।
তবে তাঁর একটি গুণ ছিল। খুঁটিনাটি সব বিষয়ে ছিল তাঁর অপার কৌতূহল। কোনোকিছুই তিনি পরীক্ষা না করে গ্রহণ করতেন না।
এ ছাড়া সাহিত্যে ছিল তাঁর অসম্ভব দক্ষতা। যে বয়সে অন্য ছেলেমেয়েরা বর্ণমালা শেখে সেই বয়সে তিনি রীতিমতো গল্প-কবিতার বই পড়তে পারতেন। একথা তিনি পরবর্তী সময়ে নিজেই বলেছেন, “আমি মাত্র দশ বছর বয়সেই বাইবেল এবং শেপিয়ারের নাটক-কবিতা পড়তে পারতাম। ”
এরপর তিনি তাঁর ২০তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন এই বলে, মানুষের জীবন তো শুধু একবারে জন্যই। তাই অফিসের ঝঞ্ঝাটের যাঁতাকলে পিষে মরার মধ্যে জীবনের সার্থকতা কোথায়? জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করতেই হবে। এরপর থেকেই শুরু হলো তার সাহিত্যিক-জীবন। ১৮৭৬ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন লন্ডনে। এখানে মায়ের কাছে এসে আমগ্ন ডুবে যান সাহিত্যসাধনায়, যে সাধনা তাঁকে পরবর্তীকালে অভূতপূর্ব সম্মান আর খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
এই দীর্ঘ নয় বছরের সাহিত্যসাধনায় রচনা করেন তিনি পাঁচটি বড় বড় উপন্যাস। তারপর এগুলোর পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দেন তিনি ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় বড় বড় প্রকাশকের কাছে। কিন্তু সবখান থেকেই সেগুলো ফেরত এল। কেউ তাঁর বই প্রকাশ করতে রাজি হলেন না।
তখন শ-র চলছে চরম অর্থসংকট। বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাঠাবার জন্য ডাকটিকিট কেনার পয়সা পর্যন্ত ছিল না। সাহিত্যসাধনার নয় বছরে তিনি মাত্র ছয় পাউন্ড উপার্জন করেছিলেন। তাও সাহিত্য করে নয়, পাঁচ পাউন্ড পেয়েছিলেন একটি ওষুধের বিজ্ঞাপন লিখে, আর এক পাউন্ড পেয়েছিলেন নির্বাচনের ভোট গণনা করে দিয়ে। এ সময়ে তাঁর পরনে থাকত ছেঁড়া জামা। পরবর্তী সময়ে শ নিজেই এ সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, “আমাদের অবস্থা এমন শোচনীয় হয়ে পড়েছিল যে, আমার উচিত ছিল পরিবারের অর্থসংকট মোচনে যথাসাধ্য চেষ্টা করা, কিন্তু আমি কিছুমাত্র চেষ্টা করিনি।”
অবশেষে ১৮৮৫ সাল থেকে তিনি পত্রপত্রিকায় লিখে কিছু উপার্জন করার চেষ্টা করতে লাগলেন। ‘পলমল গেজেট’ পত্রিকায় পুস্তক সমালোচনা, ‘ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকায় শিল্প সংস্কৃতি এবং ‘স্টার’ পত্রিকায় সঙ্গীত বিষয়ে আলোচনা লিখতে শুরু করেন। এতে করে হাতে দুটো পয়সা এল এবং নামও ছড়াল চারদিকে। এরপর তিনি ১৮৯৫ থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত এক নাগাড়ে ‘স্যাটারডে রিভিউ’ পত্রিকায় মঞ্চে অভিনীত নাটকের ওপর আলোচনা লিখে যান। মজার ব্যাপার, এই নাটকের ওপর আলোচনা লিখতে লিখতে খেয়াল চাপে নিজেই নাটক লিখবেন। তাঁর প্রথম ট্র্যাজি-কমেডি নাটক ছিল ‘উইডোয়ার’স হাউস’ (Widower’s House)। এটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৮৯২ সালে ৯ ডিসেম্বর।
তাঁর দ্বিতীয় নাটকের নাম ‘মিসেস ওয়ারেন’স প্রফেশন’ (Mrs. Warren’s Profession)। এটি ছিল একজন বারবনিতার জীবন নিয়ে লেখা। কিন্তু অশ্লীলতার অভিযোগে নাটকটি সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন পায়নি।
কিন্তু প্রথম দিকের কোনো নাটকেই তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া এসব নাটক লিখে তিনি কোনো পয়সাও পাননি।
এরপর ১৮৯৪ সালে এক প্রযোজক বন্ধুর অনুরোধে তিনি ‘আর্মস অ্যান্ড দি ম্যান’ নামে একটি নাটক লেখেন (Arms and the Man)। এটাই ছিল বার্নার্ড শ-এর প্রথম মঞ্চসফল নাটক। ‘আর্মস অ্যান্ড দি ম্যান’-এর সফলতার পরই উৎসাহ বেড়ে যায় শ- এর। এর পরপরই তিনি রচনা করেন ‘ক্যানডিডা, ইউ নেভার ক্যান টেল’ (Candida, You Never Can Tell) এবং ‘দি ডেভিল’স ডিসাইপল’ (The Devil’s Disciple)।
তাঁর এই ‘দি ডেভিল’স ডিসাইপল’ রম্য নাটকটি যখন ১৮৯৭ সালে নিউ ইয়র্কে মঞ্চস্থ হয়, তখন চারদিকে দারুণ সাড়া পড়ে যায়। এই নাকটির জন্য বার্নার্ড শ মোট সম্মানী পান তিন হাজার পাউন্ড। নাটক লিখে শ-এর আগে আর কখনও কোনও নাট্যকার এত টাকা একসঙ্গে পাননি। এটা ছিল তাঁর জীবনে এক অভাবনীয় অর্থপ্রাপ্তির ঘটনা।
বার্নার্ড শ পরবর্তী জীবনে লাভ করেছিলেন এক অতুলনীয় ক্ষমতা। আর সেটা ছিল বক্তৃতা দেয়ার মাধ্যমে বিশাল সব সমাবেশকে মোহিত করার ক্ষমতা। তিনি তাঁর এসব ভাষণের মাধ্যমে প্রকাশ্যে সামাজিক বিধি-ব্যবস্থা, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মীয় মতবাদ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করতেন। অথচ এই বার্নার্ড শ-ই এককালে ছিলেন অবিশ্বাস্যরকমের লাজুক এবং ভীতুপ্রকৃতির আর ছিলেন চরম হীনম্মন্যতাবোধের শিকার।
বন্ধুবান্ধবের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে শ-এর মানসিক অবস্থা কতটা শোচনীয় হতো, তাঁর নিজের কথা থেকেই শোনা যাক সে কথা, ‘লজ্জার ব্যাধি আমাকে এমন মারাত্মকভাবে পেয়ে বসেছিল যে, আমি এর থেকে মুক্তি কামনায় অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। আমার মতো ভীতু, কাপুরুষ ও লাজুক মানুষ আর একজনও ছিল কি না, আমার জানা নেই।
অবশেষে এই ভীরুতা ও লজ্জাহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি একটি বক্তৃতার স্কুলে ভর্তি হন। এখানে কয়েকটি বিতর্কসভায় খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বক্তৃতা দেন। পরবর্তী কয়েকটি সভায় তাঁকে সভাপতিও মনোনীত করা হয়। কিন্তু তখনও তিনি কোনও সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে ভেতরে ভেতরে বেশ ঘাবড়ে যেতেন। এমনকি কার্যবিবরণী বইতে স্বাক্ষর করতে গিয়েও পড়ে যেতেন বেকায়দায়। এই ভয়কে জয় করার জন্য, তিনি আবদ্ধ হলেন কঠোর প্রতিজ্ঞায়। এই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তিনি যেখানেই জনসভা হতো, সেখানেই যেতেন, সুযোগ পেলেই বক্তৃতা দিতেন।
একবার তিনি কার মুখে শুনলেন সার্থক বক্তৃতা করতে হলে কার্ল মার্কসের ‘দাস ক্যাপিটাল’ নামক গ্রন্থখানি পড়তে হবে। তিনি তৎক্ষণাৎ বইখানা পড়ে ফেললেন। আর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জীবনের ভিতও আমূল বদলে গেল, যার প্রভাব সারাজীবনে কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এ সম্বন্ধে শ বলেছেন, “ক্যাপিটাল বইখানি আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল। পরে যদিও মার্কসের দুর্বোধ্য অর্থনৈতিক মতবাদ আমার কাছে ভ্রান্ত বলে মনে হয়েছে, তথাপি এ মতবাদই যে আমার জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনে সহায়ক হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।”
পরবর্তী বারো বৎসর রাস্তার মোড়ে, জটলায়, খোলা চত্বরে, বিশাল জনসভায় সমাজতন্ত্রের পক্ষে প্রচারকাজে কেটেছে তাঁর অধিকাংশ সময়। এ-সময় লোকজনের ব্যঙ্গবিদ্রূপকে তিনি কোনো আমলই দিতেন না। এভাবেই তিনি ধীরে ধীরে সমসাময়িককালের সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তারূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।
১৮৯৭ সালে সার্লটে পেইন টাউনশেন্ড নামের আইরিশ বংশোদ্ভূত এক মহিলার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। শ-এর তখন ৪০ আর মহিলার ৩৯ বছর বয়স। শার্লটে ছিলেন প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারিণী। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ-এর একটি নাটক অত্যন্ত সাফল্য লাভ করে। এর ফলে তিনি বিশ হাজার পাউন্ড লাভ করেন। আদর্শগত ঐক্যের জন্যই শ-এর প্রতি শার্লটে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কিন্তু শ এ ব্যাপারে ছিলেন একেবারেই নিস্পৃহ।
এতে শার্লটে মনে দারুণ আঘাত পান এবং শ-কে হৃদয়হীন স্বার্থপর বলে সমালোচনা করতেও ছাড়লেন না। এ-ভাবেই কেটে গেল দুবছর। শ-এর মনে তখনও বিয়ের কল্পনা স্থান পায়নি। অবশেষে শার্লটে নিরাশ হয়ে মিউনিসিপ্যাল সংস্থা সম্পর্কে পড়াশোনা করার জন্য চলে যান রোমে। সেখানে যাওয়ার পর পরই তাঁর কাছে একটা টেলিগ্রাম পৌছুলো : শ ভয়ানক অসুস্থ। ভদ্রমহিলার আর রোমে থাকা হল না, সোজা চলে এলেন লন্ডনে। অত্যধিক খাটুনির জন্য শ-এর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। তাঁর অবস্থা দেখে শার্লটে খুবই ব্যথিত হলেন।
শ যে ঘরে থাকতেন সে ঘরের অবস্থা সম্পর্কে শ-এর মুখের স্বীকারোক্তি হল, ‘আমার কামরার জঞ্জাল পরিষ্কার করা কোনো মানুষের কর্ম নয়, একমাত্র বারুদের একটি
· ফিতাই ওটা পরিষ্কার করতে পারে। সাতজন যুবতী মেয়ে এবং সাতজন যুবক ছেলে যদি অর্ধশতাব্দী ধরে কামরাটা পরিষ্কার করতে থাকে তবু এর কূলকিনারা করতে পারবে না। অবশেষে সার্লটের চাপে তিনি কামরাটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। সার্লটের সাথে শ তাঁর গাঁয়ের বাড়িতে যেতে বাধ্য হয়ে বললেন, তার আগে বাজার থেকে একটি আংটি এবং বিয়ের লাইসেন্স নিয়ে এসো।
সার্লটের সাথেই বিয়ে হয়েছিল শ-র এবং তাঁরা বিবাহিত জীবনের ৪৩টি বছর কাটিয়েছিলেন অত্যন্ত হাসিখুশি এবং সুখশান্তির মধ্য দিয়ে। ১৯৪৩ সালে ১২ সেপ্টেম্বর মিসেস সার্লট দেহত্যাগ করেন।
শ-এর ঐতিহাসিক নাটকগুলোর মধ্যে ‘সিজার অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা’ (Caesar and Cleopatra) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নাটকটি দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। শ আরও বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক এবং জীবনীভিত্তিক নাটক রচনা করেছিলেন।
১৮৯৭ সালে থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত শ সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি সেন্ট প্যানক্র্যাস থেকে ফ্যাবিয়ান (Fabians) সোসাইটিরও কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯০৪ সালে থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত তাঁর রচিত নাটক একটানা অভিনীত হতে খাকে লন্ডনের কোর্ট থিয়েটার মঞ্চে। এই সময় তাঁর যেসব নাটক রচিত হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘জন বুল’স আদার আইল্যান্ড’ (John Bull’s Other Island), ‘ম্যান অ্যান্ড সুপারম্যান’ (Man and Superman ), ‘মেজর বারবারা’ (Major Barbara), “দি ডক্টর’স ডিলেমা’ (The Doctor’s Dilemma) ও ‘ক্যাপটেন ব্রাসবাউন্ড’স কনভার্সন’ (Captain Brassbound’s Conversion) ইত্যাদি। এগুলো ছিল নতুন লেখা নাটক। তাঁর অপর দুটি উল্লেখযোগ্য ও সাড়াজাগানো নাটকের নাম ‘পিগম্যালিয়ন’ (Pygmalion) এবং ‘ফ্যানি’স ফার্স্ট প্লে’ (Fanny’s First Play)।
প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় নাটকের বাজারে একটু মন্দাভাব দেখা দেয়। চারদিকে যুদ্ধের বিভীষিকা এবং অস্থিরতার মধ্যে নাটক নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো হয়তো সময় ছিল না কারও। তবু তিনি দেখা দেয় সময় দেশাত্মবোধক কিছু নাটক রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে আছে ‘হার্টব্রেক হাউস’ (Heartbreake House), ‘ব্যাক টু মেথু সেলাহ্’ (Back to Methu Selah) এবং ‘আউটলাইন অব হিস্টোরি’ (Outline of History) ইত্যাদি।
যে নাটকটির জন্য তিনি সারা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে স্বীকৃতিলাভ করেন, সেটি হলো ‘সেন্ট জন’ (St. John)। এটি প্রথম অভিনীত হয় ১৯২৪ সালে। এই ‘সেন্ট জন’ নাটকের জন্যই তিনি ১৯২৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি প্রধানত নাটক এবং কয়েকটি উপন্যাস রচনা করা ছাড়াও বেশ কিছু গদ্য রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘দি অ্যাডভেঞ্চার্স্ অব এ ব্ল্যাক গার্ল ইন হার সার্চ ফর গড’ (The Adventures of a Black Girl in Her Search for God) এবং ‘দি ইন্টেলিজেন্ট উইমেন’স গাইড টু সোসিয়ালিজম’ (The Inteligent Woman’s Guide to Socialism) ইত্যাদি।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ৯৪ বছর বয়সেও তিনি ঘোষণা করেন, “আমি খুবই ব্যস্ত। এত ব্যস্ত যে মৃত্যু সমন্ধে চিন্তা করার ফুরসত পর্যন্ত আমার নেই।” অথচ এই বছরেই শ-এর মৃত্যু হয়।