জনক

জনক

মতির সম্প্রতি কফের দোষ হয়েছে। দিনে কম থাকে, রাতে বেড়ে যায়। ঘুমের মধ্যেও বিকট শব্দে সে কাশে। কাশির জন্যে মতির নিজের ঘুমের কোন অসুবিধা হয় না, অসুবিধা হয় তার শিশুপুত্রের। শিশুপুত্রের নাম মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন। মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেনের বয়স ২ মাস ১১ দিন। বাবার কাশির শব্দে সে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। যতবার মতি কাশে, ততবারই সে জেগে ওঠে কাঁদতে শুরু করে। তার শরীর অপুষ্ট কিন্তু গলায় ভাল জোর আছে। নিজের কাশির শব্দে মতির ঘুম না ভাঙলেও পুত্রের কান্নার শব্দে সে জেগে ওঠে। অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বলে, সমস্যা কি? আঁ, সমস্যাটা কি? বউ, দেখোত কেঁথা ভিজা কি না।

মতির স্ত্রী জয়গুন মরার মত ঘুমায়। সে কিছুই দেখে না। সন্তান প্রসব করার প্রচণ্ড ধকল সে এখনো সামলে উঠতে পারেনি। ছেলে যত না ঘুমায়, জয়গুন ঘুমায় তারচেয়েও বেশি। কাজেই মতিকেই হাত বাড়িয়ে ছেলের কথা পরীক্ষা করতে হয়। না, কাঁথা শুকনাই আছে। হঠাৎ ছেলের বিকট কান্নায় মতি বড়ই বিস্মিত হয়। সে গভীর মমতায় ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, কিরে ব্যাটা কান্দ কেন? নটি বয়। ভেরী নটি বয়। ঘরে সারা রাতই একটা হারিকেন জ্বলে। হারিকেনের আলোতে নটি বয়ের চোখ জ্বলজ্বল করে। সে বাবার কথা শুনে কান্না বন্ধ করে ঠিকই তবে ঠোঁট বাঁকিয়ে রাখে। পুত্রের বাঁকা ঠোঁট দেখতে মতির বড়ই ভাল লাগে।

ঠোঁট বাঁকা কেনরে ব্যাটা? ক্ষুধা লাগছে? হাঙ্গার?

ছেলের সঙ্গে ইংরেজীতে দুএকটা কথা বলতে মতির ভাল লাগে। অল্প কিছু ইংরেজী কথা মতি জানে। সংগ্রামের সময় শিখেছিল। বাবার ইংরেজী শুনে ছেলের বাঁকা ঠোঁট আস্তে আস্তে ঠিক হয়। সে হাত বাড়িয়ে কি যেন খোঁজে। মাকে খোঁজে বলেই মতির ধারণা। মতি চাপা স্বরে ডাকে, জয়গুন, জয়গুন। জয়গুন ঘুমের মধ্যেই পাশ ফেরে। স্ত্রীর পাশ ফেরা দেখে মতির ভয়ে শরীর কাঁপে। বেহুঁশের মত পাশ ফেরা। কোনদিন না ছেলে চাপা পড়ে। ঘুমকাতুরে মায়ের কারণে অনেক সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

ও জয়গুন। জয়গুন।

কি?

উঠ দেখি। উঠ।

 কি হইছে?

মতি গম্ভীর গলায় বলে, মোহম্মদ মনোয়ার হোসেনের মুখে মাই দেও। ব্যাটার বেজায় ভুখ লাগছে।

ছেলেকে ভাল নামে ডাকতেই মতির ভাল লাগে। জয়গুন মাঝে মাঝে টুনা মিয়া ডাকে। মতি বড়ই বিরক্ত হয়। সুন্দর একটা নাম থাকতে টুনা মিয়া ফুনা মিয়া আবার। কি? কিন্তু সে স্ত্রীকে কিছু বলে না। কষ্ট করে সন্তান প্রসব করেছে। সামান্য হলেও তার একটা দাবি আছে। তবে কোন একদিন বুঝিয়ে বলতে হবে।

জয়গুন। ও জয়গুন।

কি?

মনোয়ার হোসেনের ভুখ লাগছে। মুখে মাই দেও। ব্যাটা ক্ষিধার চোটে অস্থির হইছে। কাইন্দা বাড়ি ভাঙতাছে, তোমার কোন খুঁজ নাই। তুমি কেমন মাতা, বল দেখি।

জয়গুনের ঘুম ভাঙে। সে ছেলের মুখে দুধ দেয়। মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেনের চুকচুক করে দুধ খাওয়ার দৃশ্যটা মতি মিয়া দেখতে পারে না। কারণ জয়গুন ছেলের মাথা শাড়ির আঁচলে ঢেকে দিয়েছে। মতি গজগজ করে। শাড়ি দিয়া এমন পেচাইছ ক্যান? দম-ফুটা লাইগ্যা না মরে।

জয়গুন স্বামীর কথায় অসম্ভব বিরক্ত হয়। বেআক্কেল একটা মানুষ। সে কি জানে।, মনের ভুলেও ছেলেমেয়ের মৃত্যু সংক্রান্ত কোন কথা বলা বাপমা’র জন্যে নিষেধ। কঠিন নিষেধ। জয়গুন গুজগুজ করে, ছিঃ দম ফুটা লাইগ্যা মিত্যু এইটা কেমন কথা। আল্লাহ নারাজ কথা। আল্লাহপাকের কাছে মাপ চান।

মতি লজ্জিত ও বিব্রত হয়। সে তৎক্ষণাৎ আল্লাহ পাকের কাছে মনে মনে ক্ষমা চায়।

জয়গুন।

উঁ।

দুধ খাইতেছে?

হুঁ।

তোমার বুকে দুধ আছে কেমুন?

কি সব কথা যে আফনে কন। শরমে বাঁচি না। ছিঃ!

শরমের কিছু নাই। দুধ শিশুর খাদ্য। এই নিয়া কথা বলায় কোন শরম নাই। কালা-জিরা ভর্তা বেশী কইরা খাইবা। দুধ বেশী আসবে। মায়ের দুধ ভাইটামিনে ভর্তি। প্রতি ফোঁটায় ভাইটামিন।

আইচ্ছা অখন চুপ যান। টুনি মিয়ারে ঘুমাইতে দেন।

ঘুমাইতাছে?

ঘুম ঘুম ভাব।

শাড়ির অঞ্চল সরাও, ব্যাটারে একটু দেখি।

দেখনের দরকার নাই। আফনে সইরা বসেন।

আহারে, একটু সরাও না।

জয়গুন নিতান্তই অনিচ্ছায় শাড়ির আঁচল সরালো। মোহম্মদ মনোয়ার হোসেন চোখ বড় বড় করে তাকালো তার বাবার দিকে। মতি মুগ্ধ গলায় বললো, চউখ কেমন সুন্দর দেখছ বউ? জয়গুন বিরক্ত গলায় বলল, নজর দিয়েন না। বাপমা’র নজর বেশি লাগে। মনে মনে বলেন, মাশাল্লাহ। মাশাল্লাহ বললে নজর কাটা যায়।

মতি মনে মনে কয়েকবারই বলল, মাশাল্লাহ।

মোহম্মদ মনোয়ার হোসেনের দুধ খাওয়া শেষ হয়েছে। জয়গুন ছেলেকে পাশ ফিরিয়ে পিঠে চাপড় দিচ্ছে ঘুম পাড়ানোর জন্যে। চাপড়টা অনেক জোরে হচ্ছে বলে মতির ধারণা। ব্যথা পাচ্ছে হয়তো। অবোধ শিশু ব্যথার কথা বলতে পারছে না।

মতি বলল, কেঁথাটা ভিজা কিনা দেখ দেখি।

ভিজা না।

আহা হাত দিয়া দেখ না। এরা দুধের শিশু। মিনিটে মিনিটে এরার কেঁথা পরীক্ষা করা দরকার। একবার ঠান্ডা লাগলো কি, বুকে কফ বইস্যা দম শেষ।

আবার মরণের কথা? আইচ্ছা, আফনের মাথাটা কি খারাপ? তওবা করেন।

মতি মনে মনে তওবা করলো। জয়গুন ছেলের গায়ে থুক দিল। এতেও অনেক দোষ কাটা যায়। মতি বালিশের নিচ থেকে বিড়ির প্যাকেট বের করে বিছানা থেকে নামলো। পর পর দুবার ছেলের মৃত্যু সংক্রান্ত কথা বলে তার মনটা খুবই খারাপ হয়েছে। বিড়ি ধরিয়ে মন খারাপ ভাবটা একটু যদি কাটানো যায়। বারান্দায় বসে বিড়িতে টান দিতেই কাশি শুরু হল। ভয়াবহ কাশি। ফুসফুস বের হয়ে আসতে চায়। এমন অবস্থা। কাশির শব্দে মোহম্মদ মনোয়ার হোসেন আবার চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। জয়গুন না না কাঁদে না, কাঁদে না, বলে পুত্রের কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। থামাতে পারছে না। মতি বিড়ি হাতে দূরে সরে গেল। হাতের বিড়িটা ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে না। পয়সার কেনা জিনিস ফেলতে মায়া লাগে। বিড়ি শেষ করে মতি ফিরে এলো।

মোহম্মদ মনোয়ার হোসেন ঘুমিয়ে পড়েছে। জয়গুনও ঘুমুবার আয়োজন করছে। স্বামীকে ফিরতে দেখে সে ক্লান্ত গলায় বলল, আফনে কাশির একটা চিকিৎসা করেন। যে কাশি হইছে, শুনলে ডর লাগে।

কাশির চিকিৎসার কথা যে মতি ভাবছে না তা না–ভাবছে। টাকা-পয়সার কথা চিন্তা করেই সময় নিচ্ছে। সংসারে শিশু এসেছে। তার কত খরচা আছে। এখন আর হুটহাট করে টাকা খরচ করা যায় না। সে কতই বা আর পায়? ইসমাইল কন্ট্রাক্টর সাহেবের সঙ্গে সে আছে গত দশ বছর ধরে। দশ বছরে ইসমাইল কন্ট্রাক্টার নেত্রকোনার বড় ধনী হয়েছে। আর মতি আগে যা ছিল এখনও তাই আছে–লেবার সর্দার। রোজ হিসাবে বেতন। কিছু টাকা জমেছিল। মনোয়ার হোসেনের জন্মের সময় ডাক্তার-হাসপাতাল করে সব শেষ। জমা কিছু টাকা ছিল বলে রক্ষা। টাকা না থাকলে সর্বনাশ হয়ে যেত। শেষ বয়সে সন্তান হওয়া যে এমন জটিল, কে জানত। মতি ধরেই নিয়েছিল তাদের ছেলেপুলে হবে না। আল্লাহ পাকের কি কুদরত। তার পঞ্চাশ বছর বয়সে পুত্র সন্তান।

জয়গুন ঘুমাইছ?

না।

তোমার ছেলে কার মত হইছে বল দেখি।

জয়গুন হাই তুলতে তুলতে বলল, আফনের মত হইছে। এইটা বলাবলির কিছু। তয় স্বভাবচরিত্র কেমন হয় এইটা হইল কথা।

ইনশাল্লাহ ভাল হইব। স্বভাবচরিত্র নিয়া চিন্তা করবা না।

 জয়গুন ক্লান্ত গলায় বলল, রাইত মেলা হইছে, অখন ঘুমান।

মতির ঘুম আসছে না। গল্প-গুজব করতে ইচ্ছে করছে। ছেলের জন্মের পর থেকে জয়গুনের সঙ্গে তাঁর গল্পই হয় না। জয়গুন এত ক্লান্ত থাকে। সে নিজেও অবশ্যি খুব ব্যস্ত থাকে। সকাল সাতটার সময় কাজে চলে যায়। ঘরে ফিরতে কোন দিন রাত দশটা বাজে, কোন দিন বাজে এগারোটা। কাজে যাবার সময় দেখে ছেলে ঘুমুচ্ছে, ফিরে এসেও দেখে ঘুমুচ্ছে। জয়গুন অবশ্যি ঘুম ঘুম চোখে জেগে থাকে। তাকে চারটা ভাত বেড়ে দিয়ে ছেলের কাছে চলে যায়। মতির খুব ইচ্ছা করে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করতে। সগ্রামের সময়ের গল্প। পনেরো বছর আগের কথা মনে হয় গতকালের ঘটনা।

মতির আবার কাশির বেগ আসছে। বহু কষ্টে সে কাশির প্রবল ঝাপটা গলা খাকারিতে এনে সামাল দিল। নরম স্বরে ডাকলো, ও জয়গুন। জয়গুন।

উঁ

তোমার ছেলে স্বাধীন দেশে জন্মাইছে, এইটা একটা ঘটনা। কি বল?

 হুঁ।

স্বাধীন খুব সহজ ব্যাপার না।

হুঁ

ছেলে যখন সেয়ানা হইব স্বাধীন বিষয়টা কি বুঝাইয়া বলবা।

আইচ্ছা।

ছেলে যখন শুনব তার পিতা স্বাধীনের জন্যে যুদ্ধ করছে তখন আনন্দ পাবে। বড়ই আনন্দ পাবে। অহংকারও করতে পারে; যদিও অহংকার করা ঠিক না। তবে ছেলে মানুষ একটু-আধটু অহংকার করলে দোষ হয় না।

অখন ঘুমান, রাইত মেলা হইছে।

এই যে তোমার সঙ্গে গল্প করতেছি, এইটা আল্লাহর একটা নেয়ামত। বাঁচার কথা ছিল না। মুরাদখালি ফাইটে আমরা সতেরোজন ছিলাম। জীবন নিয়া ফিরছি মাত্র তিনজন। আমি, বাঁশখালির ইরতাজ ভাই আর গৌরাঙ্গ। গৌরাঙ্গের কথা মনে আছে? বিবাহের পরপর তোমারে দেখতে আসল। তোমার জন্যে একটা শাড়ি আনল। তারপর আমারে জড়াইয়া ধইরা কি কান্দন। সে কান্দে, আমি কান্দি। যুদ্ধের সময়ের বন্ধন। বড় কঠিন বন্ধন। রক্তের বন্ধনের চেয়েও কঠিন। ঘুমাইয়া পড়লা, ও জয়গুন, জয়গুন।

না ঘুমাই নাই।

মতি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বলল, মুরাদখালি ফাইটের ঘটনাটা শোন। সে এক বিরাট হিস্টোরী।

জয়গুন ক্লান্ত গলায় বলল, অনেকবার তো শুনছি, আর কত?

এইসব ঘটনা পুরান হয় না। লক্ষ বার শোনা যায়। ভালমত জানা থাকলে তোমার জন্যে সুবিধা। ছেলেরে ঠিকঠাক বলতে পারবা।

আফনে নিজে ঠিকমত বলবেন।

নিজের কথা নিজের বলা ঠিক না। তাছাড়া বেশী দিন বাঁচব না। শরীর হইছে নষ্ট। চিকিৎসার সামর্থ্য নাই।

দেশ স্বাধীন কইরা তাইলে আফনের লাভটা হইছে কি?

এইতো একটা ভুল কথা বলো বউ। দেশ স্বাধীন কি আর কোন ব্যবসাবাণিজ্য যে লাভ-লোকসান হইব। স্বাধীন অনেক বড় ব্যাপার। স্বাধীনের কথা বলতে গিয়া এই দেখ গায়ের লোম খাড়া হইয়া গেছে। হাত দিয়া দেখ বউ।

মতি হাত বাড়িয়ে দিল। জয়গুন স্বামীর হাতের লোম খাড়া হয়েছে কি না তা দেখতে হাত বাড়ালো না। সে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার বড় বড় নিঃশ্বাস পড়ছে। মতি এবার কাশির বেগ সামলাতে পারল না। প্রবল বেগে কাশতে থাকলো। জয়গুনের ঘুম ভাঙল না। ঘুম ভাঙলো মোহম্মদ মনোয়ার হোসেনের। সে কাঁদতে শুরু করলো। মতি উঠে এসে ছেলেকে কোলে তুলে নিল। আশ্চর্য কাণ্ড! কোলে উঠেই ছেলে শান্ত। চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। মতি বলল, নটি বয়। নটি বয়। আরে, ব্যাটা দেখি হাসার চেষ্টা করে।

মতি ছেলেকে কোলে নিয়ে বসলো। ছেলে যেন কেঁদে মা’র ঘুম না ভাঙায় এই জন্যেই ছেলের সঙ্গে গল্প শুরু করলো। গল্প কিছু বুঝবে না। শব্দ শুনবে, ঠোঁট নাড়া দেখবে। এতে মজা পেয়ে কান্না ভুলে থাকবে।

ব্যাটা শোন, সংগ্রামের সময়ের কথা শোন। কইলজা ঠান্ডা হইয়া যাইব অমন অবস্থা…প্রথম যুদ্ধ করলাম বোয়ালখালি বাজারে। সংবাদ আসছে চাইর-পাঁচজন রাজাকার আসছে বোয়ালখালি বাজারে। কুদ্দুসের পাট গুদামে থাকে। মদ, গাঁজা খায় আর পাবিলিকরে খুব অত্যাচার করে। আমরা দশজন নৌকা নিয়া রওনা হইলাম। আমরার কমান্ডার হইলেন মনু ভাই। ইউনির্ভাসিটির ছাত্র। কি সুন্দর চেহারা। কি ভদ্র ব্যবহার। শিক্ষার গুণ, আর কিছু না। আসছেও খুব বড় পরিবার থাইক্যা। যাই হোক, ঘটনা শোন। সইন্ধ্যাকালে বোয়ালখালি বাজারে নাইম্যা পাট গুদামের তিনদিকে পজিশান নিলাম। রাজাকার ভাইব্যা গুলি শুরু করছি। রাজাকারের মজা হইল—-গুলি শুনলেই এরা বন্দুক ফালাইয়া দৌড় দেয়। এইখানে দেখি ঘটনা অন্য। কথা নাই বার্তা নাই, পাট গুদামের ভিতর থাইক্যা মেশিনগানের গুলি শুরু হইল। ট্যাকট্যাক ট্যাকট্যাক ট্যাকট্যাক। মিলিটারি ছাড়া মেশিনগান পাইব কে? আমরার কইলজা গেল শুকাইয়া। মিলিটারির সাথে প্রথম যুদ্ধ।

রাইফেল হাতে কাঁপতাছি আর দোয়া ইউনুস পড়তাছি–তখন ডাইন পায়ে গুলি খাইলাম। আমার দুনিয়া আন্ধাইর হইয়া গেল। বুঝলি ব্যাটা, তখন মনু ভাই কি করল শুন–এই আমারে পিঠের মইদ্যে নিয়া মনু ভাই পাক্কা তিন মাইল দৌড়াইল। আমার জীবন রক্ষা হইল। মনু ভাই আমারে ফালাইয়া চইল্যা আসতে পারতো। তখন সবের ঘোর বিপদ। ফালাইয়া আসে নাই। মনু ভাইয়ের ঋণ শোধ করতে পারি নাই। এর একমাস পরে মুরাদখালি ফাইটে মনু ভাই মারা গেলেন। মনে হইলেই কইলজা কামড়ায়। বুঝলিরে ব্যাটা, মনু ভাইয়ের নামে তোর নাম রাখছি। মোহম্মদ মনোয়ার হোসেন। নামের ইজ্জত রাখন চাইরে ব্যাটা। নামের ইজ্জত রাখন চাই। বড়ই ইজ্জতদার নাম।

.

গল্প বলতে বলতে মতি মিয়ার চোখ জলে ভর্তি হয়ে আসে। চোখ ভর্তি অশ্রুর কারণেই বোধহয় শিশু পুত্রটিকে তার অন্যরকম মনে হয়। তার বড় মায়া লাগে।

মতি মিয়ার শিশুপুত্র চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। মনে হয় বাবার গল্পটা সে বুঝতে পারছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *