জঙ্গলের মধ্যে মন্দির
টর্চ, টর্চ কোথায়?
অতীশদা, টর্চ কোথায়? অতীশদা—
এক্ষুনি ড্রপ উঠবে। প্রথম দৃশ্য শুরু হবে। সভাপতির ভাষণ-টাসন শেষ। প্রথম দৃশ্যেই পোড়ো বাগানবাড়ি। জেল-ফেরত নায়ক এক গাল দাড়ি নিয়ে ছেঁড়া কোট পরে টর্চ হাতে ঢুকবে সেখানে তার অতীত দেখতে। সকলেই রেডি, নায়ক দাড়ি চুলকোনো সেরে নিয়েছে, কনসার্ট শেষ, কিন্তু টর্চঃ চার-পাঁচজন মিলে একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলেন, অতীশবাবু, অতীশদা—
অতীশ এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়েছিন, এগিয়ে এসে নিঃশব্দে হাত বাড়িয়ে দিলেন। চকচকে পাঁচ ব্যাটারির বিশাল লম্বা টর্চ। নায়ক সেটা হাতে নিয়ে প্রথম উইংসের পাশ দিয়ে ঝড়ের বেগে ঢুকে পড়তে যাচ্ছিল, এমনসময় পরিচালক তার কলার চেপে ধরলেন, জ্বেলে দেখুন মশায়, জ্বলে কি না। নাকি শেষটায়—
আশ্চর্য, সত্যিই টর্চটা জ্বলল না। পরিচালক চটাস করে কপালে একটা থাপ্পড় মেরে (নিজের) বললেন আপনাদের অফিস-টফিসের প্লে-তে এই এক ঝঞ্চাট! একটা জিনিস যদি ঠিক পাওয়া যায়! সেক্রেটারি মশাই কোথায়, দেখুন এখন কী করবেন? …ওরে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দে, মিউজিক দে, মাঝরাতের মিউজিক…লোকে চ্যাঁচাবে এক্ষুনি!—তিনি নিজেই গলা ফুলিয়ে প্যাঁচার ডাক দিতে লাগলেন।
সামনেই দোকান আছে দেখুন ঝটপট হয় কি না—যান না—
অতীশ চটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। খালি পায়েই গ্রিনরুম থেকে বেরিয়ে ট্রামলাইন পেরিয়ে দোকানে উপস্থিত হলেন। যে-করে হোক টর্চটা এক্ষুনি সারিয়ে দিন! দয়া করে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
দোকানদার টর্চটা হাতে নিয়ে বলল, বাঃ বেশ দামি জিনিস দেখছি! বিলিতি। আজকাল আর এসব পাওয়াই যায় না!
দেরি করবেন না। দয়া করে, প্লিজ। অ, প্লে বুঝি? কার বই?
কিন্তু দেরি হল না। বালবটা কেটে গিয়েছিল শুধু। অতীশ দোকান থেকে বেরিয়েই দেখলেন দুদিকে দুটো ট্রাম আর ডবল ডেকার। তার মধ্যে দিয়েই ছুটে এলেন। তখন পরিচালক শেয়ালের ডাক ডাকছেন কনসার্টে ঘোরতর ঝিঝির শব্দ। ফোকাস পড়তেই নায়ক ঢুকে গেল। আপনাদের না বলেছি ঠিক সময় গুছিয়ে রাখতে সবকিছু। কী করব, একটু আগেও জ্বলছিল! অতীশ লজ্জিতভাবে জানালেন।
দেখুন, পরেরগুলো ঠিক আছে কি না। এরপর লাগবে মদের গ্লাস, কম্বল, বালিশ রিভলভার, হুকো, কল্কে, বড় হাতপাখা, আতরদান…মিলিয়ে নিন গে যান!
অতীশ চলে গেলেন।
পরিচালক সেক্রেটারিকে একপাশে টেনে নিয়ে বললেন, প্লে জমবে! এই বই আমি পাঁচ জায়গায় করিয়েছি। কিন্তু মশায় ওই লেধরুসকে করছেন স্টেজ ম্যানেজার? কত বড় দায়িত্ব!
সেক্রেটারি একটু মুচকি হেসে বললেন, আস্তে, শুনতে পাবে। কী করব, ওকে যে অন্য কিছু আর দেওয়া গেল না। অথচ বিষম উৎসাহ। রোজ রিহারসালে এসে বসে থাকত। কিন্তু চাকরের পার্টও ওকে দেওয়া যায় না, এমন লাজুক মিনমিনে গলা।
বড় মিনমিনে গলা ঠিকই। বড় চাকরি করেন বুঝি?
মাঝামাঝি। অফিসারও না, কেরানিও না। আমাদের সুপারিন্টেন্ডেট এবার নতুন এসেছেন। ভদ্রলোক শিক্ষিত খুব—কিন্তু ওই যে মেনিমুখো।
তবু, চালু লোক না হলে কি স্টেজ ম্যানেজ করা যায়। রামের জিনিস না শেষপর্যন্ত রাবণের ঘাড়ে চাপায়।
না, আপনি একটু চোখ রাখবেন। বলে দিলে ঠিক পারবে। বোকা তো নয়। যে-সব লোক সবসময় মুখ বুজে থাকে আমি তাদের দুচক্ষে দেখতে পারি না। পৃথিবীতে জন্মেছিস, কথা বলবি না? …এই অতসী, শোন-শোন! ঠোঁটে অত টকটকে লাল মেখেছিস কেন? এটা তোর দুঃখের পার্ট…খানিকটা মুছে ফ্যাল!
এমন ছাই বই যে, অতসী আঁচলটা আঙুলে জড়িয়ে ঠোঁটে ঘষতে-ঘষতে বলল, আগাগোড়াই যে কান্না! আমার আবার অত কান্না আসে না। ও মশাই একটু সরুন তো, সরে দাঁড়ান।
অতীশ আয়নার সামনে ছিলেন, শশব্যস্তে সরে দাঁড়ালেন। অতসী আয়নার সামনে নিজের মুখটা ভালো করে দেখল। রুক্ষ চুল, কাজল লেপা ভুরু, ক্ষীণ সুর্মা, অল্প লাল ঠোঁট। কৃত্রিমতায় তার মুখখানি সত্যিই ঢলোঢলো দেখাচ্ছে। অতসী পরপর দেবতা ও মহাপুরুষদের ছবিগুলিকে। অনেকক্ষণ প্রণাম করল। গিরিশবাবুর ছবির মালা থেকে একটা গাঁদা ফুল ছিঁড়ে ব্লাউজের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বুকের মধ্যে ফেলে দিল। ওর ব্লাউজটা এত ছোট যে আধবাটি বুক দেখা যাচ্ছে, আবার পেটেরও খানিকটা। অথচ ফুলটা কোথায় আটকে গেল কে জানে!
তারপর মুখ তুলে বলল, মনুদা, (অর্থাৎ পরিচালক) পারব তো?
পরিচালক তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, তোর ভয় নেই রে বুলবুলি, পাঁচ-ছ জায়গায় তোর ক্ল্যাপ বাঁধা।
সিন ঘুরে গেছে। জমিদারের নায়েব ছুটতে-ছুটতে এসে বলল, চাবুকটা কোথায়? এর পরেই চাবুক মারার ব্যাপার আছে। স্টেজে চাবুক রাখা নেই! অতীশদা—
অতীশদাঠিক উইংসের পাশেই ছিলেন চাবুক হাতে দাঁড়িয়ে। থতমত খেয়ে বললেন, এই যে—
পরিচালক সত্যিকারের ধমক দিয়ে বললেন, এই যে কী মশাই! আপনার হাতে থাকলেই চলবে? তাহলে আপনিই ঢুকে পড়ুন না!
অতীশ লজ্জিত হলেন। তাঁর দোষ নেই। উইংসের পাশেদাঁড়িয়ে তিনি প্রত্যেকটি পার্ট মনে-মনে প্রতিধ্বনি করছিলেন। ছুটে আসা নায়েবের হাতে চাবুকটা তুলে দেওয়ার কথা তাঁর মনেই ছিল না।
এর পরের সিনের জন্যে মদের গ্লাস রেডি রাখুন। চাকরের হাতে থাকবে।
অতীশ যত্ন করে পাতলা কাচের গ্লাসে কোকাকোলা ঢাললেন, তারপর চাকর যেমনভাবে সেটা নিয়ে যাবে, অবিকল সেই ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাঁর মুড এখন চাকরের মতোই হয়ে গেছে। দর্শকদের মধ্যে চাপা হাসির গুঞ্জন। নাটকে হাসির কথা শুনে তারা সত্যিই হেসেছে। এটা কম কথা নয়। গ্রিনরুমে গর্বের হাওয়া খেলে গেল।
অতসী (ডাকনাম বুলবুলি) গ্রিনরুমের মধ্যে আলতোভাবে পায়চারি করছে মুখ নীচু করে। কারুর সঙ্গে কথা বলছে না। মুখটা থমথমে। কান্নার আগের মুহূর্তের মতো। অথচ ওই মেয়েটাই। রিহার্সালের সময় প্রত্যেক দিন কী হাসিঠাট্টা করেছে। ওর মুখ বড় আলগা, বড় অসভ্য কথা বলে। মেয়েদের মুখে অসভ্য কথা শুনলে অতীশের গা শিরশির করে। তবু মেয়েটার দিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না। তা ছাড়া ওর দাপট আছে। অ্যামেচারদের মধ্যে খুবই নাম। দু-একখানা। ফিল্মে চানস পেয়েছে বলে ওর অহঙ্কার থাকারই কথা। কিন্তু এখন মেয়েটাকে মনে হচ্ছে সত্যিকারের কোনও নির্যাতিত রমণী।
পরের দৃশ্য শেষ হতেই প্রথম অঙ্কের ড্রপ পড়ল। ঘোরানো মঞ্চ বলে একেবারে সময় পাওয়া যায় না। সব রেডি রাখতে হয়। তৃতীয় দুশ্যে তাঁর কাজ নিখুঁত, প্রত্যেকটি জিনিস ঠিক সময়ে লোকের হাতে তুলে দিয়েছেন ঠিকঠাক। সেজন্যে অবশ্য ধন্যবাদ মেলেনি।
অতসী কিন্তু বিরতির সময়েও হাসছেনা। চুপ করে বড় আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে। সে নির্যাতিতা নায়িকা, তাই কারুর সঙ্গে একটাও কথা বলছে না। অপর তিনটি মেয়ে-চরিত্র কলকল করছে ঠিকই, রেখা, পূর্ণিমা আর এই নাটকের বাঈজি অনুরাধা। অনুরাধা নামের মেয়েটি পারচেজ সেকশনের দীনেন বসুকে (নায়ক) বলল, এই আমার ব্লাউজের সেফটিপনটা একটু আটকে দিন তো। ও মা, ওকি হাত কাঁপছে কেন? …হি-হি-হি-হি।
সেক্রেটারি ঘুরে এসে বললেন, চমৎকার হচ্ছে, মৎস্যমন্ত্রী শেষপর্যন্ত থাকবেন বলেছেন। একটু আস্তে কথা বললা, বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে গ্রিনরুমের আওয়াজ। ভাড়াটে পরিচালক চায়ের ভাঁড়টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, এই এই ওদিকে না, ওদিকে না, পাশেরটায়, ওটা মেয়েদের বাথরুম, ডোবাবেন দেখছি! তারপর অতীশের দিকে ফিরে—এই যে অতীশবাবু, এবার আপনাকে আর উইংসের পাশেদাঁড়ালে চলবে না। স্টেজের মাঝখানের দরজার আড়ালে দাঁড়াতে হবে। আহম্মদজান একবার ঢুকবে মদ নিতে, বুলবুলি একটা কম্বল।
অতীশ জায়গায়টা দেখতে গেলেন। আগে কখনও কোনও মঞ্চের এই গোপন জায়গাগুলো তিনি দেখেনি। ঘোরানো মঞ্চের তিনটে দৃশ্যের সেট পরপর সাজানো। ওদিকে দর্শকদের সামনে ভাঙা বাড়িতে নায়ক-নায়িকা, আর পিছনে জমিদারের বৈঠকখানায় সোফা-সেটটিতে পা তুলে বসে শিফটার-ফিটাররা বিড়ি টানছে। অতীশকে দেখে তারা পা নামিয়েও বসল না, বিড়ি লুকোনো দুরের কথা। তৃতীয় সেট একটা জঙ্গলের দৃশ্য। এখানে কেউ নেই, আলো নেভানো। বিশাল বিশাল গাছ আঁকা, দূরে মন্দিরের চূড়া। হঠাৎ অন্ধকারে একসময় মনে হয় সত্যিকারের জঙ্গল।
অতীশের মনে হল, কোনও একদিন ওইরকম একটা জঙ্গলে হারিয়ে যেতে পারলে মন্দ হত না। এখানে কী তার কোনওদিন আসার কথা ছিল? অতীশ হাল্কা পায়ে সেই জঙ্গলের মধ্যে, পিপড়ে যেমন অনেক সময় নিজেরই চারপাশে ঘোরে, সেইরকম নিজের অস্তিত্বের চারপাশে ঘুরতে লাগলেন। ঘুরতে-ঘুরতে বদলে গেলেন। হাত-দুটো তাঁর উঠে এল মাথার ওপর মুষ্টিবদ্ধ, দুচোখে রাজ্যের শূন্যতা, ঠোঁট কুঞ্চিত, গলা দিয়ে ঠিক স্বর বেরুচ্ছে না। কিন্তু তিনি আপন মনে বলছেন, আমি ঈশ্বর মানি না, আমি নিজের পায়ে ভর দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে হেঁটে চলে যাব। আমি একা, মায়ের পেটের অন্ধকারে যেমন একা ছিলাম! মন্দিরের দেবতা, তুমি শুনে রাখো, আমি…। এর পরের দৃশ্যের নায়কের সংলাপ। চমকে অতীশ আপন মনে খুব লজ্জা পেলেন। চারিদিকে। তাকিয়ে দেখলেন, কেউ তাঁকে দেখেনি তো? ইস, কী ছেলেমানুষি করছিলেন তিনি।
ফু-র-র করে বাঁশি বাজতেই মঞ্চ ঘুরতে লাগল। অতীশ চমকে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন, তাড়াতাড়ি সামলে নিলেন। বিড়ি ফোঁকা শিফটার-ফিটার দুজন ঠিক সময়ে সরে গেছে। নইলে, দর্শকদের সামনে যদি দেখা যেত জমিদার-ঘরের সোফায় বসে লুঙ্গি পরা দুজন লোক পা তুলে বিড়ি। যুঁকছে, দৃশ্যটা তাহলে কেমন হত ভেবে অতীশের হাসি পেল।
এই দৃশ্যে অতীশের কিছু কাজ নেই। মঞ্চের ওপরই বসে আছেন বলা যায়। সামনেই দেওয়াল। এইরকম একা মঞ্চের ওপর বসে থাকলে অনেক কিছু মনে পড়ছে না। এসো অনুপমা, জঙ্গলের কাঠ কুড়িয়ে আমরা এখানে, এই ভাঙা মন্দিরের সামনে আগুন জ্বেলে নিই, আমরা দেবতাকে। সাক্ষী রেখে বলি, আমাদের মিলন হোক, জন্মান্তরেও আমাদের বিচ্ছেদ হবে না। পরের দৃশ্যের নায়ক এই কথাগুলো বলবে নায়িকাকে, পুরোটা শেষ করতেও পারবে না, তার আগেই এসে যাবে জমিদারের লাঠিয়ালের দল। এক দঙ্গল ক্রাউড সিনে যাঁরা নামতে চেয়েছে, তাঁরা সবাই। নায়কের এই কথাটা অতীশের মনে পড়ছে, কিন্তু এখনও তিনি অতীশ রায়চৌধুরী। কেমব্রিকের পাঞ্জাবি পরনে, পায়ে কানপুরের চটি, অসুন্দর নন কিন্তু খুব মাঝারি ধরনের চেহারা, একটু পুরু চশমা, সুপারিন্টেন্ডেন্টের চাকরি। অর্থাৎ কেরানিও নন, অফিসারও নন, কেরানিও তাঁকে। আপনজন মনে করে না, অফিসাররাও নিজেদের সমান দেখে না। জীবনের উনচল্লিশ বছর কেটে গেল, একজন মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা গেল না। আজ এই একা মঞ্চের ওপরে বসেও তাঁর নিজের কোনও কথাই মনে পড়ল না। কিছুই মনে পড়ে না, অথচ যেন অনেক কিছু বলার ছিল, কোনও একজনের যেন খুব কাছাকাছি বসে না বললে জীবনটা ব্যর্থ হয়ে যাবে। কিন্তু কী কথা? অনবরত তাঁর কানে আসছে প্রম্পটারের একঘেয়ে ফিসফিসানি। অতীশ অল্প হেসে ভাবলেন, আমারও বোধহয় ওরকম একজন প্রম্পটারের প্রয়োজন ছিল জীবনে। সব পার্ট মুখস্থ হয়ে যায়, তবু আজ পর্যন্ত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারিনি তো।
দরজার ফাঁকে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে অতীশ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। এখনও দর্শকদের দেখা যায়। কিন্তু তিনি আর দর্শকদের দিকে তাকাচ্ছেন না। দেখছেন অতসীকে। কী করে অমন কাঁদছে মেয়েটা, গ্লিসারিন দেয়নি চোখে, তবু? ভেতরে, এদিকটায় জঙ্গলের ও মন্দিরের সেট। অতসীর এখানে কম্বলটা নিতে আসার কথা। বোধহয় দেখতে পায়নি এই ভেবে অতীশ ওর হাতে কম্বলটা এগিয়ে দিলেন। বললেন, এই যে— কম্বলটা নিয়ে অতসী আবার কেঁদে ফেলল। অতীশ ভাবলেন, মাথা খারাপ হয়ে যায়নি তো মেয়েটার? তিনি চরম দুঃসাহসের সঙ্গে অতসীর। একটা হাত ধরে মৃদু টান দিয়ে বললেন, চলুন! অতসী বলল, না! তারপর অতীশের বুকের ওপর মাথা রেখে বলল, আমি আর পারছিনা। অতীশের মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। কিছুই বুঝতে পারছেন না। তাঁকে না জানিয়েই অন্য একটা ভূমিকায় নামিয়ে দেওয়া হয়নি তো? মেয়েরা যে কোথা থেকে এত দুর্বোধ্যতা নিজেদের মধ্যে জমিয়ে রাখে। একটু পরে অতসী স্টেজে ঢুকে গেল। হাজার চোখের সমানে।
বুলবুলি,—আজ যা করেছিল, জবাব নেই। পরিচালক অতসীর পিঠ চাপড়ে দিলেন। সেক্রেটারি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করছিলেন। মৎস্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন সবাই। অতসী মেক আপ তোলেনি। একটা রসকদম্ব খেয়ে আঙুলের রসটা চাটতে-চাটতে বলল, মনুদা কীরকম টাইমিংটা দিয়ে দিলুম বলো না!
মনুদা বললেন, দারুণ। তুই এবার পরিচালনা করতেও শুরু করে দে।
অতসী বলল, ওই টাইমিংটা দিয়েই তো কান্নাটা তৈরি করে নিলুম।
অতীশ এসে অতসীর পাশেদাঁড়ালেন।
আলতোকাঁধ-ছুঁয়ে বললেন, অতসী।
অতসী অনুরাধার সঙ্গে কথা বলছিল, চমকে অশ্লীল একটা শব্দ করে বলল, গায়ে হাত দিয়ে কথা বললেন যে? অতীশ শান্তভাবে বললেন, না, কিছু না। আপনার অভিনয় খুব ভালো হয়েছে। এ তো একটা সামান্য কথা অতসী বলল।
অতীশকী ভেবে পকেটে হাত ঢোকালেন। চাবিটা নেই। দ্বিতীয় অঙ্কের মাঝখান থেকে সারাক্ষণ চাবিটা হাতেই রেখেছিলেন, তবু কখন হারিয়ে গেল? ইস! এখন আর সব সেটে খোঁজা চলে না। বাড়িতে গিয়ে এই রাত্রে আবার নিজের ঘরের তালা ভাঙতে হবে!