জগন্নাথদেবের গুপ্তকথা
কলিঙ্গ, উৎকল, উড়িষ্যা—একই দেশের তিনটি নাম।
কলিঙ্গ অতি প্রাচীন ও ইতিহাস-প্রসিদ্ধ স্থান এবং বিশেষ করে সম্রাট অশোকের জন্যে তার নাম হয়ে থাকবে চিরস্মরণীয়। কলিঙ্গ নিজের বুকের রক্ত ঢেলে সম্রাট অশোকের রক্তপিপাসা দূর করেছিল। কলিঙ্গের রণক্ষেত্রে রক্তসাগরের ঢেউ দেখে অশোকের মনে এমন তীব্র অনুতাপের উদয় হয়েছিল যে, জীবনে আর কোনওদিন তিনি অস্ত্রধারণ করেননি। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রহণ করেন তিনি অহিংসামন্ত্র এবং তাঁর বিপুল সাম্রাজ্যে নিষিদ্ধ হয় জীবহত্যা। বিলাতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক এইচ. জি. ওয়েলস সাহেব বলেন, সারা পৃথিবীর ইতিহাস খুঁজলেও এমন আর একটি দৃষ্টান্তও সংগ্রহ করা অসম্ভব।
উড়িষ্যার পুরী শহরের নাম তোমরা সকলেই শুনেছ। এরও আর দুটি নাম আছে—নীলাচল ও শ্রীক্ষেত্র। লোকে এখানে দুটি জিনিস সঞ্চয় করতে আসে—পুণ্য ও স্বাস্থ্য। এখানকার প্রধান দ্রষ্টব্যও হচ্ছে দুটি—প্রকৃতির হাতেগড়া সমুদ্র এবং মানুষের হাতেগড়া জগন্নাথদেবের মন্দির। এই দুটি দ্রষ্টব্যই তাদের বিশালতায় ও সৌন্দর্য্যের ঐশ্বর্যে মনকে একেবারে অভিভূত করে দেয়। অধিকাংশ বাঙালির মতো আমিও জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখেছিলুম পুরীধামে গিয়ে। সে এক আশ্চর্য অনুভূতি! জগন্নাদেবের মন্দির দেখেও কম বিস্মিত হইনি, কারণ তার আগে আর কখনও দেখিনি অমন মেঘচুম্বী মন্দির!
জগন্নাথের মন্দির ও সমুদ্রের মাঝখানে শহরের অসংখ্য ঘরবাড়ির ব্যবধান। কিন্তু মন্দির সর্বদাই দেখতে পায় নীলসাগরকে এবং সমুদ্রের সামনেও সর্বদাই বিরাজ করছে ওই মহামন্দির, তার নীলাব্জনীল স্বচ্ছ জলে নৌকা ভাসালে তোমরাও স্বচক্ষে তা দেখতে পাবে! সে এক বিচিত্র দৃশ্য! প্রকৃতির সৃষ্টি ও মানুষের সৃষ্টি যেন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে সবিস্ময়ে।
গঙ্গাবংশীয় অনন্তবর্মণ চোড়গঙ্গা সুদীর্ঘ একাত্তর বৎসর কাল রাজত্ব করেছিলেন—অর্থাৎ ১০৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এতদিন রাজত্ব করবার সৌভাগ্য পৃথিবীর আর কোনও রাজার হয়েছে কিনা জানি না। এই অনন্তবর্মণ ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাশালী নৃপতি, তাঁর বিশাল রাজ্য বিস্তৃত ছিল গঙ্গাতীর থেকে গোদাবরীর তীর পর্যন্ত। তাঁরই আদেশে জগন্নাথের মন্দির নির্মিত হয়।
স্থাপত্যের জন্যে বিখ্যাত হলেও এই মন্দির ভাস্কর্যের জন্যে খ্যাতি অর্জন করতে পারেনি। অথচ শুনতে পাই, জগন্নাথের মন্দিরের গায়েও ভাস্করের হাতে খোদা কারুকার্য আছে, কিন্তু বিশেষ কোনও কারণে সে সব নাকি চূর্ণ-বালির প্রলেপ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। পুরীর মন্দির তোমরা অনেকেই দেখেছ, সুতরাং এখানে তার বর্ণনা না দিলেও চলবে।
জগন্নাথদেবের মহিমায় পুরী আজ সমগ্র হিন্দু-জাতির তীর্থ হয়ে উঠেছে বটে, কিন্তু আসলে তিনি যে খাঁটি হিন্দু দেবতা, ঐতিহাসিকরা তা স্বীকার করেন না।
জগন্নাথদেবের গুপ্তকথা
সম্রাট অশোক বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার পর থেকেই ভারতবর্ষে ওই ধর্মের প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। শকজাতীয় সম্রাট কণিষ্কও বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হয়ে বৌদ্ধদের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তোলেন।
সম্রাট অশোকের সময়ে বুদ্ধদেবকে একজন মহাপুরুষ বা মহামানবরূপে দেখা হত, কিন্তু সম্রাট কণিষ্ক প্রদান করেন তাঁকে দেবতার আসন। তারপর গুপ্তবংশীয় হিন্দু সম্রাটদের শাসনকালে হিন্দুদের প্রতিপত্তি আবার বাড়তে থাকে বটে, কিন্তু বৌদ্ধরা তখন পর্যন্ত কম প্রবল ছিল না, কারণ গুপ্ত-সম্রাটরা ভিন্ন ধর্মের উপরে হস্তক্ষেপ করতেন না।
সপ্তম শতাব্দীতেও দেখি, আর্যাবর্তের শেষ হিন্দু সম্রাট হর্ষবর্ধন ছিলেন বৌদ্ধধর্মেরও পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু এই সময়েই ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম-বিরোধী রাজাদেরও নাম শুনি—যেমন উত্তর-পূর্ব ভারতের (বর্তমান বিহার, ভাগলপুর ও উত্তরবঙ্গ) অধিপতি শশাঙ্ক। চিনদেশীয় পর্যটক হিউয়েন সাঙ বলেছেন, শশাঙ্ক বুদ্ধদেবের পাথরের পদচিহ্ন গঙ্গাজলে ফেলে দিয়েছিলেন এবং বুদ্ধগয়ার পবিত্র বটগাছ বা বোধিদ্রুম কেটে ফেলেছিলেন। তিনি বৌদ্ধদের উপরে অত্যন্ত অত্যাচার করতেন।
প্রত্নতাত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রমাপ্রসাদ চন্দ্র প্রমুখ শশাঙ্কের দোষক্ষালনের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সে সব কথা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাবার দরকার নেই। তবে এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, মহারাজাধিরাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পরেও বৌদ্ধধর্ম নিতান্ত নির্জীব হয়ে পড়েনি।
এই বৌদ্ধধর্মের প্রভাবের সময়ে পুরী বা শ্রীক্ষেত্র হিন্দুদের তীর্থরূপে বিখ্যাত ছিল না,—পুরী ছিল তখন বৌদ্ধদেরই মহাতীর্থ। জগন্নাথের মন্দিরের বদলে তখন সেখানে ছিল বৌদ্ধদের এক মন্দির এবং তার মধ্যে ছিল বুদ্ধদেবের পবিত্র দন্ত। ভক্তরা খুব ঘটা করে সেই দন্তকে পূজা করত এবং বৎসরের এক নির্দিষ্ট সময়ে (সম্ভবত আষাঢ় মাসেই) পবিত্র দন্তকে রথের উপরে স্থাপন করে রীতিমতো সমারোহের সঙ্গে নগরের পথে পথে ঘুরিয়ে আনা হত! সেই উৎসবের নাম ছিল ‘দন্তযাত্রা’।
ঐতিহাসিকরা অনুমান করেন : হিন্দুধর্ম যখন আবার প্রবলতর হয়ে ওঠে, তখন নানা অত্যাচারে নিস্তেজ হয়ে পড়লেও উড়িষ্যায় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বড় অল্প ছিল না। হিন্দুরা তাদের দলে টানবার জন্যে চমৎকার এক উপায় অবলম্বন করলেন।
বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের তিনটি প্রতীকচিহ্নকে বৌদ্ধরা ‘ত্রিরত্ন’ বলে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। এই ত্রিচিহ্নের আদর্শে হিন্দুরা এমন তিনটি মূর্তি গড়ল যা কতকটা মানুষের মতো দেখতে হলেও প্রতীক বলেও গ্রহণ করা যায়। এই তিনটি মূর্তির নাম দেওয়া হল জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা।
তারপর দন্তমন্দির থেকে বুদ্ধদেবের দন্ত সরিয়ে বেদির উপরে স্থাপন করা হল সেই তিন মূর্তিকে। দন্তযাত্রা পরিণত হল রথযাত্রায় এবং দন্তহীন রথের উপরে চড়ে বসলেন ভাই-বোনকে নিয়ে জগন্নাথ ঠাকুরই। বৌদ্ধরা জাতিভেদ মানে না, অতএব মন্দিরের ভিতর থেকেও তুলে দেওয়া হল জাতিভেদপ্রথা, ওখানে চণ্ডালের পাশে বসেও প্রসাদী অন্ন ভক্ষণ করতে পারে নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ।
এই অনুমানের স্বপক্ষে কী কী যুক্তি আছে, অতঃপর তাও দেখা যাক। প্রথমত: জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি কেবল হস্তপদহীন নয়, তাদের মুখে-চোখেও মানুষী ভাব নেই বললেও চলে। দেখলেই মনে সন্দেহ হয়, কয়েকটি চিহ্নকে যেন জোর করে মানুষের আকার দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এমন সন্দেহ যে অমূলক নয়, তা ভালো করে বোঝাবার জন্যে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র তাঁর উড়িষ্যা-সম্পর্কীয় বিখ্যাত ইংরেজি গ্রন্থে বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের তিনটি চিহ্নের সঙ্গে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার ছবি প্রকাশ করে দেখিয়েছেন, ত্রিচিহ্নের সঙ্গে ত্রিমূর্তির সাদৃশ্য আছে কতখানি! সত্যসত্যই সেই সাদৃশ্য বিস্ময়কর।
দ্বিতীয়ত পুরীতে জগন্নাথদেবের পূজা প্রচলিত হওয়ার আগে রথযাত্রার মত উৎসব হিন্দুদের আর কোনও পর্বে দেখা যায়নি। দন্ত নিয়ে রথযাত্রা বৌদ্ধদেরই নিজস্ব উৎসব।
তৃতীয়ত জাতিভেদহীনতা। হাড়ি-মুচি-ডোমের সঙ্গে পাত পেতে বসে বামুনরা ভাত খাচ্ছে, এমন অদ্ভুত দৃশ্য শ্রীক্ষেত্র ছাড়া আর কোনও হিন্দু তীর্থক্ষেত্রেই দেখা যায় না।
বৌদ্ধদের কৌশল করে দলে টানবার জন্যে হিন্দুরা যে চেষ্টার কোনও ত্রুটি করেননি, তার আর একটা বড় প্রমাণ, অহিন্দু বুদ্ধদেবও পরিণত হয়েছেন হিন্দুদের দশমাবতারে।
যারা পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ ঠাকুরকে পূজা দিতে যায়, তাদের ভিতরে খুব কম লোকেই জানে যে আজও ওখানকার সঙ্গে বুদ্ধদেবের সম্পর্ক একেবারে লোপ পায়নি! আজও পুরীর মন্দিরের ভিতরে বুদ্ধমূর্তির অস্তিত্ব আছে, তবে লোকচক্ষুর অগোচরে। পান্ডারা সেই মূর্তিটিকে একটি ঘরের ভিতরে লুকিয়ে রেখেছে। যাঁদের কৌতূহল হবে, তাঁরা কিছু ঘুষ দিলেই পান্ডারা গোপনে সেই মূর্তি দেখাতে পারে।
পুরীর মন্দির এক অদ্ভুত ঠাঁই। এখানে কেবল বৌদ্ধদের ত্রিরত্নই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রায় পরিণত হয়নি, এখানে কেবল বুদ্ধমূর্তিই অজ্ঞাতবাস করছে না, এখানে অহিংস বৈষ্ণবদের দেবালয়েও উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন শাক্তদের বিমলা দেবী এবং তাঁর খাতিরে জগন্নাথদেব কেবল ‘ভৈরব’ বলে আত্মপরিচয়ই দেন না, কেউ পাঁঠা বলি দিলেও আপত্তি করেন না! আবার ওই মন্দিরের ভিতরেই গোপনে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে একটি সূর্যমূর্তিও। কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, একসময়ে ওই সূর্যমূর্তিটিই কোনারকের মন্দিরের ভিতরে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কোনারকের পরমসুন্দর অরুণ স্তম্ভটিও আজ পুরীর মন্দিরের প্রবেশ পথের শোভাবর্ধন করছে।
পুরোনো দিল্লি না দেখলে যেমন দিল্লি দেখা সার্থক হয় না, সারনাথ না দেখলে যেমন কাশী দেখা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তেমনি কোনারকের মন্দির না দেখলে পুরী জেলার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কোনারকের সূর্যমন্দির কেবল পুরীর নয়, সমগ্র ভারতের একটি অপূর্ব সম্পদ। কোনও কোনও কারণে তাকে সারা পৃথিবীতেই অতুলনীয় বলা চলে।
একদিকে জগন্নাথের মন্দির, আর একদিকে কোনারকের মন্দির, মাঝখানে ধূ-ধূ করছে আঠারো মাইল ব্যাপী বৃক্ষশূন্য মরু-প্রান্তর। বালি আর বালি আর বালি, মাঝে মাঝে দেখা যায়, বড় বড় বালির পাহাড়। এই দিগন্তবিস্তৃত বালুকারাজ্যের অপরিসীম শুষ্কতাকে সরস করবার চেষ্টা করে ছোট একটি নদী। আগে এখানে ধ্রুপদ গান গাইত বঙ্গোপসাগরের তরঙ্গদল, এখন তারা দূরে সরে গিয়ে পৃথিবীর উপরে নিজেদের স্মৃতির মতো রেখে গিয়েছে এই রাশি রাশি বালি।
মরুপ্রান্তরের প্রান্তে দেখা যায় কবির মনোরম স্বপ্নদৃশ্যের মতো একটি তরুশ্যামল কুঞ্জবন। তারই ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে কোনারকের দেবতাহীন ভাঙা মন্দির। ভাঙা বটে, কিন্তু কত সুন্দর!
তেরো শতাব্দীর মন্দির। শোনা যায়, এই মন্দির গড়তে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল উড়িষ্যার দ্বাদশ বর্ষের রাজস্ব! এ অঞ্চলের অনেক দেবালয়ের মতো এটিও ছিল তিন ভাগে বিভক্ত। প্রধান মন্দিরের অধিকাংশ ভূমিসাৎ হয়েছে, নাটমন্দিরের নীচের দিকটা বর্তমান। অটুট আছে কেবল একটি অংশ। সেটিকে দেখতে ঠিক একটি রথের মতো-এমনকি চাকাগুলি পর্যন্ত বাদ যায়নি! আকার ধারণ করেছে যেন শিল্পীর অপূর্ব মনোরথ!
ভাঙা-অভাঙা যে অংশেই চোখ পড়ে, সেখানেই দেখা যায় অতি সূক্ষ্ম কারুকার্য। এমন সুচাগ্র পরিমাণ জায়গা নেই, যা শিল্পীর হাতের স্পর্শ পায়নি। এই আগাগোড়া অলঙ্কৃত মন্দিরের দিকে দিকে দৃষ্টিগোচর হয় কত পুরুষ, কত নারী, কত জীবজন্তু। মোহনীয় গঠন, বিচিত্র ভঙ্গিমা, কল্পনাতীত পরিকল্পনা। হুনুরির শক্তির কাছে হার মেনে কঠিন পাথরও যেন হয়ে পড়েছে ফুলের মতো কোমল!
জগন্নাথের মন্দিরের বিশেষত্ব তার বিশালতায়, এ কথা আগেই বলেছি। কোনারকের সূর্যমন্দিরের বিশেষত্ব—ভাস্কর্য এখানে যেন স্থাপত্যের সঙ্গে এক হয়ে মিশে যেতে চেয়েছে। শ্রীমতী স্টেলা ক্র্যামরিস বলেন, উড়িষ্যায় স্থাপত্য বলতে বুঝায় বিশাল আকারে ভাস্কর্য! স্বর্গীয় কুমারস্বামী বলেছেন, কোনারক ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও ভাস্কর্যের সঙ্গে স্থাপত্যের এমন অঙ্গাঙ্গি যোগ দেখা যায় কিনা সন্দেহ। মন্দিরের কাঠামোর ভিতর থেকে মূর্তিগুলিকে কোথাও বিচ্ছিন্ন করা চলে না।
কোনারকের পরিকল্পক নিশ্চয়ই ছিলেন কবিমনের অধিকারী। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এমন জায়গায়, যেখানে অসীম সাগর তার বিপুল তরঙ্গবাহু তুলে অহরহ ঝাঁপিয়ে পড়ে, আর ঝাঁপিয়ে পড়ে নতি নিবেদন করতে আসত সূর্যদেবতার চরণে। কিন্তু পরিকল্পকের সেই ভাবপ্রবণতা উপভোগ্য হলেও মন্দিরের পক্ষে শুভঙ্কর হয়নি। মহাসাগরের গভীর উচ্ছ্বাসই হয়েছিল অকালে মন্দিরের পতনের কারণ।
নিরালায় পড়ে থাকে মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সূর্যদেবতা নির্বাসিত। আজও রোজ সূর্য ওঠে, কিন্তু দেউলের ভিতরে আর খুঁজে পায় না নিজের প্রতিমা। আজও দূর থেকে ভেসে আসে মহাসাগরের স্তোত্রপাঠ! কিন্তু দেবতার বেদির সামনে আর জ্বলে না পূজার প্রদীপ।