ছোড়দির বড়দি

ছোড়দির বড়দি

আমার ছোড়দি দিল্লি থেকে আসবে, আমি তাকে আনতে গিয়েছি হাওড়া স্টেশনে। ছোড়দি একাই আসছে। দিল্লিতে আমার বড়মামা থাকেন, তিনি ছোড়দিকে ট্রেনে তুলে দিয়েছেন।

ছোড়দির খুব সাহস, একা একা যে কোনো জায়গায় যেতে ভয় পায় না। একবার ছোড়দিকে একটা চাকরির পরীক্ষার জন্য মাদ্রাজ যেতে হয়েছিল। তখন মা বলেছিলেন দাদাকে সঙ্গে যেতে। কিন্তু ছোড়দি বলেছিল, কিচ্ছু দরকার নেই! আমি কি কচি খুকী যে আমায় হাত ধরে নিয়ে যেতে হবে!

মা বলেছিলেন, ওমা, কোনো মেয়ে আবার একলা একলা অত দূরের রাস্তায় যায় নাকি?

ছোড়দি বলেছিল, আজকাল বাঙালি মেয়েরা একলা প্লেন চালায় তা জানো না? তোমাদের সময়কার মতন কি সবাই এখনো অত ভীতু আছে?

ছোড়দির দারুণ জেদ। শেষ পর্যন্ত ঠিক একলা গেল। তার পরদিনই মাদ্রাজ মেলের দুর্ঘটনার কথা শোনালো রেডিওতে। আমাদের বাড়িতে তো কান্নাকাটি পড়ে গেল। মা খাওয়া—দাওয়া বন্ধ করলেন। দাদা আর বাবা ছোটাছুটি করতে লাগলেন খবর জানবার জন্য। শেষ পর্যন্ত দাদা প্লেনে করে চলে গেলেন মাদ্রাজ। তার পরদিনই মাদ্রাজ থেকে ছোড়দির টেলিগ্রাম এলো, ঠিক সময়েই চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি। চিন্তার কিছু নেই।

দুর্ঘটনা হয়েছিল মাদ্রাজ শহর থেকে সাত মাইল দূরে। ইঞ্জিন আর সামনের দিকে দুটো কামরা ভেঙে গিয়েছিল। ছোড়দির কিছু হয়নি, ছোড়দি মাথা ঠাণ্ডা রেখে ট্রেন থেকে নেমেই কাছাকাছি একটা দোকান থেকে সাইকেল ভাড়া নিয়ে সেই সাইকেল চালিয়ে চলে গিয়েছিল চাকরির জায়গায়। তখন সবাই ছোড়দিকে ধন্য ধন্য করেছিল।

মাদ্রাজে চাকরি পেয়েও ছোড়দি অবশ্য বেশিদিন সেই চাকরি করেনি, এক জায়গায় ওর মন টেকে না। ছোড়দি এখন চাকরি করে দিল্লিতে। চার মাস বাদে কলকাতায় বেড়াতে আসছে।

ট্রেন এক ঘণ্টা লেট, আমি প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করেছিলুম। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়ে গেল। কোথাও একটু বসবার জায়গা নেই। বসবার বেঞ্চিগুলোতে লোকেরা শুয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে।

তারপর একসময় প্ল্যাটফর্ম কাঁপিয়ে ঝমঝমিয়ে ট্রেন এলো। লোকজনের ঠেলাঠেলি আর হৈ—চৈ। আমি গিয়ে মেয়েদের কামরার সামনে দাঁড়ালাম।

মেয়েদের কামরায় ছোড়দি আর একজন বৃদ্ধা মহিলা ছাড়া আর কেউ নেই। দিল্লি থেকে এত ফাঁকা এসেছে, বিশ্বাসই করা যায় না। ওরা দু—জনে নিশ্চয়ই খুব আরামে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসেছে। ছোড়দি সেই বৃদ্ধা মহিলার হাত ধরে খুব সাবধানে তাঁকে নামতে সাহায্য করলো। আমি ততক্ষণে ছোড়দির সুটকেস বেডিং নামিয়ে ফেললাম।

ছোড়দি আমাকে বললো, এই নীলু, এঁকে প্রণাম কর। ইনি আমার বড়দি। আমি একটু অবাক হলাম। আমার একটাই মোটে দিদি। তাছাড়া, ছোড়দির যদি কোনো বড়দি থাকেন, তাহলে তিনি তো আমারও বড়দি হবেন। কিন্তু কোনোদিন এঁর কথা তো শুনিনি।

বৃদ্ধা মহিলার গায়ের রং টুকটুকে ফরসা, মাথার চুলগুলো ধপধপে সাদা, মুখে একটা মিষ্টি হাসি। ইনি নিশ্চয়ই খুব বড় পরিবারের কেউ, দুজন খাকি পোশাক পরা লোক ওঁর জিনিস পত্তর নিতে এসেছে। ওঁর হাতে একটা সুন্দর কারুকার্য—করা বেতের বাক্স, সেটা উনি কারুকে দিলেন না। নিশ্চয়ই ওই বাক্সে ওঁর গয়না—টয়না আছে।

আমি ছোড়দির কথামতো ওঁকে প্রণাম করলাম, উনি আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে বললেন, বেঁচে থাকো, সাহসী হও! তারপর উনি ছোড়দির দিকে ফিরে বললেন, তোমরা আমার সঙ্গেই চলো না। আমার জন্য তো গাড়ি এসেছে। আমিও বাবার অফিসের গাড়ি নিয়ে এসেছি। তাড়াতাড়ি সেই কথাটা বললাম। উনি তখন বললেন, আচ্ছা, তাহলে চলি!

ছোড়দিকে বললেন, যা বলেছি সব মনে থাকবে তো?

ছোড়দি বললো, হ্যাঁ বড়দি, সব মনে থাকবে। আপনি আবার দিল্লি এলে আপনার সঙ্গে দেখা করবো।

গাড়িতে উঠেই ছোড়দিকে জিজ্ঞেস করলাম, ছোড়দি, উনি কে?

ছোড়দি শুধু বললো, আমার বড়দি।

তারপরই ছোড়দি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, হ্যাঁ রে নীলু, কেউটে সাপ কোথায় কিনতে পাওয়া যায়, তুই জানিস?

আমি চমকে উঠলাম, প্রথমে মনে হলো ভুল শুনেছি। তাই জিজ্ঞেস করলাম, কি বললে?

ছোড়দি বললো, কেউটে সাপ।

কেউটে সাপ? কি হবে?

কিনবো, কিনে পুষবো!

তুমি সাপ পুষবে?

ছোড়দি একগাল হেসে বললো, হ্যাঁ। খুব ভালো জিনিস!

আমার সন্দেহ হলো, ছোড়দির বোধহয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে! কিংবা আমারই কান দুটো একেবারে খারাপ হয়ে গেছে নাকি? দু’কানে আঙুল ঢুকিয়ে আমি ঝাঁকাতে লাগলাম।

বাড়ি পৌঁছোবার পর মা ছোড়দিকে জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তায় খাবারটাবার ঠিকমতো পেয়েছিলি তো? কোনো অসুবিধে হয়নি?

ছোড়দি বললো, না মা, কোনো অসুবিধে হয়নি। তবে মোগলসরাই পর্যন্ত গাড়িতে বড্ড ভিড় ছিল। তারপর থেকে অবশ্য গাড়ি একদম ফাঁকা।

মোগলসরাইতেই সবাই নেমে গেল?

ছোড়দি মুচকি হেসে বললো, নামবে না কেন? গাড়িতে ডাকাত পড়েছিল যে।

মা একেবারে আঁতকে উঠে বললেন, অ্যাঁ, কি বললি? গাড়িতে ডাকাত পড়েছিল? কি সর্বনাশের কথা! তুই তখন কি করলি?

ছোড়দি বললো, আমার তো ভয়ের কিছু ছিল না! আমার সঙ্গে যে বড়দি ছিল।

বড়দি আবার কে রে? সেই—বা ডাকাতের সঙ্গে কি করলো?

বড়দিই তো ডাকাতদের তাড়িয়ে দিল!

ছোড়দির বড়দিকে তো আমি দেখেছি। অন্তত সত্তর বছরের বুড়ি, তিনি আবার কি করে ডাকাত তাড়াবেন?

আমি আর থাকতে না পেরে বললাম, মা ছোড়দি আজ বড্ড উলটোপালটা কথা বলছে!

ছোড়দি তখন হাসতে হাসতে বললো, বলছি, বলছি, সব বুঝিয়ে বলছি। খাবার—টাবার দাও, খিদে পেয়েছে যে। ততক্ষণে হাত—মুখ ধুয়ে আসি!

খাবার টেবিলে সবাই ছোড়দিকে গোল হয়ে ঘিরে বসেছে। পাশের বাড়ি থেকে এসেছে ছোড়দির বন্ধু খুকুদি আর মিনুদি। বউদি আর থাকতে না পেরে বললো, কি হয়েছিল, বলো না ছোটন। সত্যি সত্যি ডাকাত?

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ছোড়দি বললো, একজনের হাতে পিস্তল ছিল, আর একজনের হাতে ছোরা, ছোরা—হাতে লোকটার মুখ ভর্তি দাড়ি!

সবাই ভয়ে শব্দ করে উঠলো।

মা জিজ্ঞেস করলেন, কি করলো মুখপোড়া ডাকাতগুলো? গভর্নমেন্ট কিছু করতে পারে না এদের? লোকে কি রেলে চাপবে না?

ছোড়দি বললো, আমার আর কোনোদিন ডাকাতের ভয় হবে না।

খুকুদি বিরক্ত হয়ে বললো, বাবারে বাবা! ছোটনটা কোনো কথাই খুলে বলে না। আগে বল না, বড়দি কে?

ছোড়দি বললো, বড়দি যে সে নয়। আসামের এক রাজার কাকীমা, এত বয়সেও কি সুন্দর দেখতে। বাংলা তো ভালো জানেনই, ইংরেজি, হিন্দি, ফরাসি—অনেক ভাষা জানেন। একা একা সারা দেশে ঘুরে বেড়ান, বিলেত—টিলেতেও একা একা গেছেন। একটুও ভয় পান না।

মা জিজ্ঞেস করলেন, তোর সঙ্গে আগে আলাপ ছিল?

ছোড়দি বললো, না, একবারেই আলাপ হলো। ভাগ্যিস আমি ঠিক ওঁর পাশে গিয়ে বসেছিলাম। উনি প্রথমে আমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলেননি। বার বার আমার দিকে শুধু তাকিয়ে দেখলেন। তারপর একবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি দিনের বেলা ঘুমোও?

আমি বললাম, কেন বলুন তো?

উনি বললেন, যারা ট্রেনে উঠে দিনের বেলায় ঘুমোয়, তাদের আমার ভালো লাগে না।

আমি তখন হেসে বললাম, না, আমি দিনের বেলা ঘুমোই না।

উনি তখন খুশি হয়ে আমার সঙ্গে অনেক গল্প করতে লাগলেন। খুব চমৎকার গল্প বলতে পারেন উনি। সেই গল্প শুনতে শুনতে কি করে যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল।

মিনুদি বললো, কি গল্প বললেন, দু—একটা গল্প বল না আমাদের।

বউদি বললো, না না, সেই ডাকাতের কথা বলো। ডাকাতরা কখন এলো?

ছোড়দি বললেন, আচ্ছা বড়দির গল্পগুলো পরে এক সময় বলবো। এখন ডাকাতের কথাই বলে নিই। আমাদের মেয়ে—কামরায় আট—দশজন মেয়ে ছিল মোটে, বাকী সবাই পুরুষ!

বউদি বললো, ওমা, মেয়ে—কামরায় পুরুষেরা ওঠে নাকি?

ছোড়দি বললো, অনেকদিন তো ট্রেনে চাপোনি, তাই কিছু জানো না। আজকাল আর নিয়মকানুন কেউ মানে না। আমি একবার একজন টিকিট চেকারকে ডেকে বলেছিলুম, এতগুলো লোক এখানে উঠেছে কেন, এদের নামিয়ে দিন না! তিনি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, আমি কি করবো বলুন, এদের তো অনেকের টিকিটই নেই।

বড়দি বললেন, দিনের বেলা থাকতে চায় থাক, রাত্তির হলেই আমি ওদের নামিয়ে দেবো।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলুম, বড়দি, আপনার কথা ওরা শুনবে?

বড়দি বললেন, শুনবে না কেন? ভালো করে বললেই শুনবে। অনেক পুরুষ মানুষেরই নাক ডাকে। রাত্তিরে নাক ডাকা শুনলে আমার একটুও ঘুম হয় না বলে আমি পুরুষদের কামরায় উঠি না।

দেখতে দেখতে রাত্তির হয়ে গেল। বড়দি তখন নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে গিয়ে রাজরানীর মতন হুকুমের সুরে সব কটা ছেলেকে বললেন, এই তোমার এবার নেমে যাও। অনেকক্ষণ তোমাদের বসতে দিয়েছি।

যেন পুরো রেলটাই বড়দির নিজের। কাকে কখন কোথায় বসতে দেবেন, সেটা ওঁর ইচ্ছের ওপরেই নির্ভর করছে।

আশ্চর্য ব্যাপার কিন্তু, বড়দির কথা শুনে অনেকেই সুড়সুড় করে নেমে গেল। কেউ একটু তর্ক পর্যন্ত করলো না। ওদের মধ্যে দুজন বাঙালী ছেলে ছিল। আমি ভেবেছিলাম, বাঙালী যখন তর্ক করবেই। তারাও নেমে গেল মুখ বুজে।

শুধু তিনজন লোক খুব কাঁচুমাচুভাবে বড়দিকে বললো, আমরা আর দু’স্টেশন পরেই নেমে যাবো। আমাদের একটু বসতে দিন। ট্রেনে আর কোথাও একটুও জায়গা নেই!

বড়দি বললেন, ঠিক তো?

তারা জিভ কেটে বললো, নিশ্চয়ই!

এরপর আর একটা স্টেশন পেরিয়ে গেল। বড়দি নিজের শোবার জায়গা—টায়গা ঠিক করলেন। একটা সুন্দর ছোট বেতের তৈরি গয়নার বাক্স রাখলেন মাথার কাছে। তারপর আমাকে বললেন, আমার জিনিসপত্তর একটু দেখো, আমি বাথরুম থেকে আসছি।

বড়দি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসবার আগেই পার হয়ে গেল দ্বিতীয় স্টেশন। বড়দি ফিরে এসে নিজের জায়গায় আসনপিঁড়ি হয়ে বসলেন। কড়া গলায় সেই লোক—তিনটিকে বললেন, এই, তোমরা নেমে গেলে না যে?

লোক তিনটি উঠে দাঁড়ালো…

বউদি বললো, ওরাই বুঝি ডাকাত?

খুকুদি বললো, বউদি থামো, ওকে বলতে দাও।

ছোড়দি বললো, হ্যাঁ, ওরাই ডাকাত। ওরা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, আমরা তো স্টেশনে নামি না। চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়াই আমাদের অভ্যেস। তার আগে যার কাছে যা আছে বার করুন তো!

ডাকাত—তিনটে পিস্তল আর ছোরা উঁচিয়ে ধরতেই কামরার অন্য মেয়েরা চিৎকার আর কান্নাকাটি শুরু করে দিল। আমারও বুকের মধ্যে ধাপুস—ধুপুস করছিল। কিন্তু বড়দির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন ওদের দিকে। বড়দি আমাকে বললেন, ভয় নেই, চুপ করে বসে থাকো, তারপর আমার কানে কানে আর একটা কথা বলে দিলেন।

সব মেয়েরা তাদের গয়নাগাটি টাকা—পয়সা দিয়ে দিল। একজন মহিলা তাঁর গলার হারটা কিছুতেই দিতে চাচ্ছিলেন না, কান্নাকাটি করছিলেন। দাড়িওলা ডাকাতটা সেটা ছিঁড়ে নিল গলা থেকে।

তারপর তারা এল আমাদের সামনে। যার চেহারা সর্দারের মতন, সেই ডাকাতটা বললো, এই যে দিদিমা, যা আছে সব দিন।

বড়দি বললেন, আমি কারুর দিদিমা নই!

ডাকাতটা বললো, দিদিমা বা ঠাকুমা যাই হন, গয়নাগাটিগুলো চটপট বার করুন তো!

বড়দি আমার দিকে ফিরে বললেন, আজকালকার ডাকাতগুলো কি অসভ্য! মেয়েদের দিকেও ছুরি—ছোরা তোলে। আগেকার দিনে কত ভালো ভালো ডাকাত ছিল। আমাদের বাড়িতে কতবার ডাকাত পড়েছে, কোনোদিন তারা মেয়েদের ভয় দেখায়নি। রঘু ডাকাতের ছেলে মধু ডাকাত একবার আমাদের বাড়িতে এসেছিল ডাকাতি করতে। কি ভালো ছেলে। আমার সামনে হাত জোড় করে বলেছিল, মা জননী…।

ডাকাত—তিনটে বললো, আঃ, আমাদের এখন গল্প শোনার সময় নেই, কোথায় কি আছে দেখি।

বড়দি বললেন, ঠিক আছে বাপু দাঁড়াও! খবরদার গায়ে হাতটাত দেবে না। আমার সব গয়না এই বেতের বাক্সে রয়েছে। আমি খুলে দিচ্ছি।

বড়দি বেতের বাক্সটা খুললেন, আর ডাকাত—তিনটে ব্যস্তভাবে মুখ ঝুঁকিয়ে দাঁড়ালো। বাক্সের ডালা খুলতেই ভেতর থেকে ফোঁস করে মাথা তুললো একটা মস্ত বড় কেউটে সাপ!

মা, বউদি, খুকুদি, মিনুদি, আমি সবাই মিলে এক সঙ্গে বললাম, স্প্রিং—এর সাপ?

ছোড়দি বললো, স্প্রিং—এর সাপ আবার কি? সে তো সিনেমায় থাকে। এটা সত্যি সত্যি একটা বিরাট কেউটে, এত বড় ফনা। ডাকাত—তিনটে বাপরে বলে তিন—পা পেছিয়ে গেল। সাপটা তাদের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলাতে লাগলো।

বড়দি তাঁর হাতব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট বাঁশি বের করে ফুঁ দিতেই সাপটা বাক্স থেকে বেরিয়ে সরসর করে নেমে পড়লো। তারপর তাড়া করে গেল ডাকাতদের দিকে।

ডাকাত—তিনটে হঠাৎ সাপটাকে দেখে এত ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে কি করবে ভেবে পায়নি। তার আগেই সাপটা সবচেয়ে বড় ডাকাতটার একটা পা পেঁচিয়ে ধরে ফণা তুলে রইলো।

বড়দি বললেন, এবার আমি আর একবার বাঁশি বাজালেই সাপটা ছোবল বসাবে, বাজাবো?

ডাকাতটা হাউমাউ করে কেঁদে বললো, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান!

বড়দি বললেন, কিন্তু আমার যে খুব বাঁশি বাজাতে ইচ্ছে করছে!

তিনটে ডাকাতই তখন হাত থেকে গয়নাটয়না আর টাকা পয়সা ছুঁড়ে ফেলে দিল। বললো, আমরা নাকে খত দিচ্ছি!

বড়দি বললেন, আমার সঙ্গে একটা গোখরো সাফ আছে। তাও তো সেটাকে এখনো ছাড়িনি। সেটা বড় রাগী! দেশে দুষ্টু লোকের তো অভাব নেই। আমি সব সময় সেইজন্য পোষা সাপ দুটোকে সঙ্গে রাখি।

বড়দি ডাকাত তিনটেকে সত্যি নাকে খত দেওয়াতেন। কিন্তু ট্রেন একটু আস্তে হতেই ডাকাত—তিনটে ঝুপ ঝুপ করে লাফিয়ে নেমে পালালো।

পরের স্টেশনে অন্য সব মেয়েরাও নেমে গেল। তারা বড়দিকে ধন্যবাদ জানালো বটে কিন্তু সাপের সঙ্গে এক কামরায় থাকতে চাইলো না। আমি আর বড়দি আরাম করে শুয়ে শুয়ে এলাম। বড়দি আমাকে শেখাতে লাগলেন, কি করে সাপ পুষতে হয়। ভালো করে শেখালে পোষা—সাপ কুকুরের চেয়েও বেশি কথা শোনে।

গল্প শেষ করার পর সবাই বলতে লাগলো, তারা একদিন ছোড়দির বড়দিকে দেখতে যাবে। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, ছোড়দি, সাপ দেখে তোমার একটুও ভয় করেনি?

ছোড়দি বললো, ভয় করবে কেন? বড়দি যে আগেই আমার কানে কানে বলে দিয়েছিলেন, সাপ দুটোর বিষ—দাঁত ভাঙা। বিষ—দাঁত থাকলে পোষা—সাপকেও কেউ বিশ্বাস করে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *